১৫২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৩
عَنْ أَبِىْ مُوسى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «أَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيْضَ وَفُكُّوْا الْعَانِىْ» . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্ষুধার্তকে খাবার দিও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেও, বন্দী ব্যক্তিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করো। [১]
রোগী দেখার আদাব বা বৈশিষ্ট্যঃ
১। রোগীর পাশে বেশিক্ষণ অবস্থান না করা যাতে সে বিরক্ত হয় অর্থাৎ তার পরিবারের কষ্ট হয় আর যদি অবস্থান করা জরুরী হয়ে পড়ে তাহলে বাধা নেই।
২। রোগীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিবে এবং নম্র্ভাবে কথা বলবে ও সান্ত্বনা দিবে হতে পারে এর মাধ্যমে রোগী নিজেকে প্রাণবন্ততা ও নবশক্তি অনুভব করবে।
বন্দীকে মুক্ত করঃ মুসলিম বন্দীকে কাফিরের হাত থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা অথবা অন্যায়ভাবে আটককৃত বন্দীকে মুক্তির ব্যবস্থা করা। কারো মতে বন্দী মুক্তির ব্যবস্থা করা ফারযে কিফায়াহ্। কারো মতে অর্থ হল দাসমুক্ত করা।
১৫২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৪
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيْضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَعْوَةِ وَتَشْمِيْتُ الْعَاطِسِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিমের ওপর আর এক মুসলিমের পাঁচটি হাক্ব বর্তায়। (১) সালামের জবাব দেয়া, (২) রোগ হলে দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় শামিল হওয়া, (৪) দা’ওয়াত গ্রহণ করা ও (৫) হাঁচির জবাব দেয়া। [১]
১৫২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৫
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ» . قِيلَ: مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللّهِ؟ قَالَ: «إِذَا لَقِيتَه فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَه وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللّهَ فَشَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হাক্ব (অধিকার) আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, (১) কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, (২) তোমাকে কেউ দা’ওয়াত দিলে, তা কবূল করবে, (৩) তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, (৪) হাঁচি দিলে তার জবাব ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলবে, (৫) কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, (৬) কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শারীক হবে। [১]
১৫২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৬
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: أَمَرَنَا النَّبِيُّ ﷺ بِسَبْعٍ وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ أَمَرَنَا: بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ وَتَشْمِيتِ الْعَاطِسِ وَرَدِّ السَّلَامِ وَإِجَابَةِ الدَّاعِىْ وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ وَنَصْرِ الْمَظْلُومِ وَنَهَانَا عَنْ خَاتَمِ الذَّهَبِ وَعَنِ الْحَرِيرِ والْإِسْتَبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ وَالْمِيْثَرَةِ الْحَمْرَاءِ وَالْقَسِّيِّ وَانِيَةِ الْفِضَّةِ وَفِىْ رِوَايَةٍ وَعَنِ الشُّرْبِ فِي الْفِضَّةِ فَإِنَّه مَنْ شَرِبَ فِيهَا فِي الدُّنْيَا لَمْ يَشْرَبْ فِيْهَا فِي الْاخِرَةِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি আদেশ ও সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- (১) রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, (২) জানাযায় শারীক হতে, (৩) হাঁচির আলহামদুলিল্লা-হ’র জবাবে ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলতে, (৪) সালামের জবাব দিতে, (৫) দা’ওয়াত দিলে তা কবূল করতে, (৬) কসম করলে তা পূর্ণ করতে, (৭) মাযলূমের সাহায্য করতে। এভাবে তিনি আমাদেরকে (১) সোনার আংটি পরতে, (২) রেশমের পোশাক, (৩) ইস্তিবরাক [মোটা রেশম], (৪) দীবাজ [পাতলা রেশম] পরতে, (৫) লাল নরম গদীতে বসতে, (৬) ক্বাস্সী ও (৭) রূপার পাত্র ব্যবহার করতে। কোন কোন বর্ণনায়, রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রূপার পাত্রে পান করবে আখিরাতে সে তাতে পান করতে পারবে না। [১]
১৫২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৭
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا عَادَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ لَمْ يَزَلْ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتّى يَرْجِعَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে ৷ [১]
এখানে উদ্দেশ্য হল রাস্তা তথা রুগীকে দেখতে যাওয়া ব্যক্তি এমন এক রাস্তায় হাঁটছে যে রাস্তা তাকে জান্নাতে পৌঁছাবে।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে রোগীকে দেখতে যাওয়া ব্যক্তি জান্নাতের বাগানে রয়েছে যতক্ষণ না ফিরে।
১৫২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৮
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُوْلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: يَا ابْنَ ادَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِىْ قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُوْدُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَّا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِىْ فُلَانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَه لَوَجَدْتَنِىْ عِنْدَه؟ يَا ابْنَ ادَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِىْ قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِىْ فُلَانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذلِكَ عِنْدِىْ؟ يَا ابْنَ ادَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِىْ قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِىْ فُلَانٌ فَلَمْ تَسْقِه أَمَا إِنَّك لَوْ سَقَيْتَه لَوَجَدْتَ ذلِكَ عِنْدِىْ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে বনী আদাম! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে দেখতে যাব? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে। হে আদাম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে খাবার দিতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল? তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, সে সময় যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে? হে বনী আদাম! আমি তোমার কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম। তুমি পানি দিয়ে তখন আমার পিপাসা নিবারণ করোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কিভাবে তোমার পিপাসা নিবারণ করতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সে সময় তাকে পানি দিতে, তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। [১]
(يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي) ‘‘আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে আসোনি।’’
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ পীড়িত দ্বারা বান্দার পীড়িত উদ্দেশ্য নিয়েছেন আর আল্লাহ তা‘আলা নিজের দিকে সম্বোধনের উদ্দেশ্য হল ঐ বান্দার সম্মানের জন্য, অতঃপর তাকে নিজের মর্যাদার সাথে জড়িত করেছেন। মুদ্দা কথা যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় সে যেন আল্লাহরই সাক্ষাৎ করে।
(كَيْفَ أَعُوْدُكَ) আপনি কিভাবে অসুস্থ হবেন আর আমি দেখতে যাব। অথচ আপনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক আর প্রতিপালক তো তিনিই যিনি বাদশা, নেতা, ব্যবস্থাপক, প্রতিপালক এবং নি‘আমাত দানকারী আর এ গুণাবলীগুলো অসুস্থতা, ক্ষতি, প্রয়োজন হওয়া, ধ্বংস হওয়া ইত্যাদীর বিপরীত।
(أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَه لَوَجَدْتَنِي عِنْدَه) তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে নিশ্চয় আমাকে তার নিকট পেতে। তথা তুমি পেতে আমার সন্তুষ্টি, প্রতিদান ও করুণা। অনুরূপ সম্পূর্ণ হাদীসের অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, তুমি যদি খাওয়াতে আমার নিকট প্রতিদান পেতে। ত্বীবী বলেন, হাদীসের এ অংশ ইঙ্গিত করে যে, রোগীকে দেখতে যাওয়া অধিক পুণ্যের কাজ খাওয়া ও পান করানোর চেয়ে।
১৫২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫২৯
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ دَخَلَ عَلَى اعْرَابِيٍّ يَعُودُه وَكَانَ إِذَا دَخَلَ عَلى مَرِيضٍ يَعُودُه قَالَ: «لَا بَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَآءَ اللّهُ» فَقَالَ لَه: «لَا بَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَآءَ اللّهُ» . قَالَ: كَلَّا بَلْ حُمّى تَفُوْرُ عَلى شَيْخٍ كَبِيْرٍ تَزِيْرُهُ الْقُبُوْرُ. فَقَالَ: «فَنَعَمْ إِذَنْ» . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার একজন অসুস্থ বেদুইনকে দেখতে গেলেন। আর কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, ‘ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘ভয় নেই, তুমি ভালো হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। [১]
(لَا بَأْسَ) তথা তোমার ওপর এ অসুস্থে কোন আশংকা ও দুর্বলতা নেই। ইবনু হাজার বলেন, নিশ্চয় অসুস্থতা গুনাহকে মিটিয়ে দেয় যদি সুস্থতা অর্জিত হয় তাহলে দু’টি উপকার হয় আর তা না হলে গুনাহ মিটানোর মাত্রা আর বেশী অর্জিত হয়। (طَهُوْرٌ إِنْ شَآءَ اللّهُ) শব্দ দ্বারা দু‘আ প্রমাণিত হয় সংবাদ হয় না।
(فقا له) বেদুঈন লোকটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বলল, আপনি কি বলছেন পবিত্রতার কারণে হবে। (كَلَّا) কখনও না তথা পবিত্রতার কারণ হবে না। মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, বিষয়টি তেমন যা তুমি বল অথবা তুমি বলবে না যে তার কথা কুফরী হওয়া ও কুফরী না হওয়া উভয় সম্ভবনা রয়েছে। এর সমর্থনে বলা যায় যে, গ্রামটি বেদুঈন লোকটি কঠিনপ্রকৃতির ছিল তার ইচ্ছা ছিল না মুরতাদ হওয়া বা মিথ্যা বলার। আর সে হতাশা বা নিরাশার সীমানায় পৌঁছেনি।
(تَفُوْرُ عَلى شَيْخٍ كَبِيْرٍ) গরমের তীব্রতা প্রকাশ পাচ্ছিল তার শরীর যেন টগবগ করছিল যেমন পাতিল টগবগ করে। إِذًا হ্যাঁ তবে (তোমার জন্য) তা হবে।
ত্বীবী বলেন, আমি তোমাকে আমার এ বক্তব্য (لا بأس عليك) (তোমার কোন ভয় বা আশংকা নেই) দ্বারা পথ দেখাচ্ছি যে, তোমার জ্বর তোমাকে তোমার গুনাহ হতে পবিত্র করাবে, সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং এর জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অতঃপর তুমি অস্বীকার করলে কিন্তু নিরাশা ও কুফরী ব্যক্ত করলে তেমনটি হবে যেমনটি তুমি ধারণা করেছ। এটা দ্বারা নিজকে যথেষ্ট মনে করলে না বরং আল্লাহর নি‘আমাতকে প্রত্যাখ্যান করলে আর তুমি নি‘আমাতের মধ্যে ছিলে তাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগতস্বরে বললেন ইবনু তীন বলেনঃ সম্ভবত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ স্বরূপ বলেছেন।
আবার কেউ বলেছেন, হতে পারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পেরেছেন যে, এ অসুখে মারা যাবে, সুতরাং তিনি দু‘আ করছিলেন এই জ্বর যেন তার গুনাহ দূরীভূত হওয়ার কারণ হয়; অতঃপর সে মারা গেল। হতে পারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে বেদুঈন লোকটি এমনটি জবাব দিবে। ত্ববারানীতে অতিরিক্ত শব্দ এসেছে-
أَنَّ النَّبِيَّ - ﷺ - قَالَ لِلْأَعْرَاِبِيِّ إِذَا أَبَيْتَ فَهِيَ كَمَا تَقُوْلُ قَضَاءُ اللهِ كَائِنٌ فَمَا أَمْسى مِنَ الْغَدِ إِلَّا مَيِّتًا.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুঈন লোকটিকে বললেন, যখন তুমি প্রত্যাখ্যান করলে তেমনটি হবে যেমনটি তুমি ধারণা করেছ পরের দিন সন্ধায় লোকটি মারা গেছে।
হাদীসের শিক্ষাঃ
* বাদশার জন্য তার প্রজার কোন ব্যক্তি রুগী হলে তাকে দেখতে যাওয়া সম্মানহানী নয়, ‘আলিমের জন্য সম্মানহানী নয়, অজ্ঞ রুগী ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বরং তাকে শিক্ষা দিবে স্মরণ করাবে যা তার উপকার আসবে এবং তাকে ধৈর্যের শিক্ষা দিবে যাতে আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত ভাগ্যের প্রতি তার রাগ না জন্মে এর জন্য আল্লাহও রাগ না করে তার প্রতি এবং তাকে সান্ত্বনা দিবে ব্যথা হতে। বরং তাকে ঈর্ষা করাবে তার রোগের জন্য অন্যের প্রতি তার এবং তার পরিবারের ওপর মুসীবাত আসাতে।
* আর রুগী ব্যক্তির উচিত হবে সে সাক্ষাৎ প্রার্থীর উপদেশ ভালভাবে গ্রহণ করবে এবং যে এ সমস্ত উপদেশ দিবে চমৎকার জবাব তাকে দিবে।
১৫৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩০
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ إِذَا اشْتَكى مِنَّا إِنْسَانٌ مَسَحَه بِيَمِينِه ثُمَّ قَالَ: «أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سَقَمًا». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের কারো অসুখ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত রুগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দিন৷ তাকে নিরাময় করে দিন৷ নিরাময় করার মালিক আপনিই৷ আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই৷ এমন নিরাময় যা কোন রোগকে বাকী রাখে না৷ [১]
১৫৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩১
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ إِذَا اشْتَكَى الْإِنْسَانُ الشَّيْءَ مِنْهُ أَوْ كَانَتْ بِه قَرْحَةٌ أَوْ جُرْحٌ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ بِأُصْبُعِه: «بِسْمِ اللّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفى سَقِيْمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَا». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ স্থানে তাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন, “বিসমিল্লা-হি তুরবাতু আরযিনা- বিরীক্বাতি বা’যিনা- লিইউশ্ফা- সাক্বীমুনা- বিইযনি রব্বিনা-” (অর্থাৎ আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারো মুখের থুথুর সাথে মিশে আমাদের রোগীকে ভালো করবে, আমাদের মহান রবের নির্দেশে) ৷ [১]
ইমাম নাবাবী বলেন, এখানে আমাদের জমিন দ্বারা উদ্দেশ্য জমিনের সমষ্টি তথা যে কোন জমিন।
কারও মতেঃ মাদীনার জমিন নির্দিষ্ট কর খাস তার বারাকাতের জন্য। থুথু বলতে সামান্য থুথু।
(بَعْضُنَا) আমাদের কেউ বলতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য তাঁর থুথু শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য, সুতরাং এটা তাঁর জন্যই খাস। এ বক্তব্যটিতে আপত্তি আছে।
নাবাবী বলেনঃ হাদীসের ভাষ্যমতে যে নিজের থুথু শাহাদাত আঙ্গুলে নিবে, অতঃপর তা মাটিতে রাখবে এবং তা হতে কিছু আঙ্গুলের সাথে মিশাবে, অতঃপর তা দ্বারা ক্ষতস্থানে বা পীড়িত স্থানে মাসাহ করবে আর মাসাহের সময় এই বাক্যগুলো (... بِسْمِ اللّهِ) পড়বে।
আমি ভাষ্যকার বলিঃ এটা মাদীনার মাটি বা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নির্ধারিত না বরং পৃথিবীর যে কোন জমিন ও সামান্য থুথু যে ঝাড়ফুঁক করবে। সুতরাং এমনটি করা বৈধ বরং এটা করা মুস্তাহাব ঝাড়ফুঁকের সময় প্রত্যেক স্থানে। কুরতুবী বরেন, হাদীসে দলীল হবার প্রমাণ করে যে কোন ব্যাখ্যায় ঝাড়ফুঁক বৈধ।
১৫৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩২
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا اشْتَكى نَفَثَ عَلى نَفْسِه بِالْمُعَوِّذَاتِ وَمَسَحَ عَنْهُ بِيَدِه فَلَمَّا اشْتَكى وَجَعَهُ الَّذِىْ تُوُفِّيَ فِيهِ كُنْتُ أَنْفِثُ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ الَّتِىْ كَانَ يَنْفِثُ وَأَمْسَحُ بِيَدِ النَّبِيِّ ﷺ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَتْ: كَانَ إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِه نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে (مُعَوِّذَاتِ) ‘‘মু‘আবিবযা-ত’’ অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মু‘আবিবযাত পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যেসব মু‘আবিবযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত দিয়েই তাঁর শরীর মুছে দিতাম। (বুখারী, মুসলিম)[১]
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ‘‘মু‘আবিবযাত’’ পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন।
وَقُلْ رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُوْنِ
‘‘বলুন, হে আমার পালনকর্তা! আমি শায়ত্বনের (শয়তানের) প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।’’ (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩ : ৯৭-৯৮)
(مَسَحَ عَنْهُ بِيَدِه) নিজের হাত দ্বারা শরীর মুছতেন। বুখারীতে অন্য হাদীসে মাসাহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে এসেছে, ‘‘মা‘মার বলেন, আমি ইবনু শিহাবকে জিজ্ঞেস করি তিনি কিভাবে ফুঁ দিতেন, জবাবে বললেন তার দু’হাতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর তা দ্বারা নিজের চেহারা মুছতেন।’’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আসতেন সূরাহ্ ইখলাস নাস ও ফালাক্ব পড়ার মাধ্যমে হাতের দু’তালুতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর তা দ্বারা তাঁর চেহারা আর তাঁর দু’হাত শরীরে যতদূর পর্যন্ত পৌঁছত মুছতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন ব্যথা অনুভব করতেন আমাকে বলতেন অনুরূপ যেন করি।
হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কালাম দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা ও ফুঁ দেয়া সুন্নাহ। নাবাবী বলেন, ঝাড়ফুঁকের সময় ফুঁ দেয়া মুস্তাহাব। এরূপ বৈধতার ব্যপারে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর এমনটি মুস্তাহাব মনে করেছেন সাহাবীরা, তাবি‘ঈরা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ‘উলামারা ঝাড়ফুঁক বৈধ বলেছেন তিনটি শর্তের উপর
১। ঝাড়ফুঁকের শব্দ হবে আল্লাহর কালাম বা তার নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে আরবী ভাষায়
২। যে পড়বে সে যেন পঠিত বিষয়ের অর্থ বুঝতে পারে।
৩। এ বিশ্বাস রাখতে হবে ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোন প্রভাব নেই বরং আল্লাহ তা‘আলা ভাল করবেন।
রবী‘ বলেনঃ আমি শাফি‘ঈকে ঝাড়ফুঁক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি জবাবে বললেন, এতে বাধা নেই যদি আল্লাহর কিতাব দিয়ে ও এমন আল্লাহর যিকর-আযকার দিয়ে যা পরিচিত ঝাড়ফুঁক হয়।
আমি বললাম, ইয়াহূদীরা কি মুসলিমদেরকে ঝাড়ফুঁক করতে পারবে? জবাবে বললেন, হ্যাঁ তবে যদি ঝাড়ফুঁক করে আল্লাহর কিতাব ও যিকর-আযকার দিয়ে।
মুয়াত্ত্বায় রয়েছেঃ আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রাঃ) ইয়াহূদী মহিলাকে বললেন, যে মহিলা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে ঝাড়ফুঁক করেছিল তুমি তাকে ঝাড়ফুঁক কর আল্লাহর কিতাব দিয়ে।
ইবনু ওয়াহ্ব মালিক হতে বর্ননা করে বলেন, তিনি ঘৃণা করতেন লোহা, লবণ এবং সুতায় গিরা দেয়া আর যা সুলায়মান-এর আংটিতে লেখা হত ইত্যাদি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। আরো বলেন, পূর্ববর্তী লোকের এমন প্রথা ছিল না।
১৫৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৩
وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ أَنَّه شَكَا إِلى رَسُولِ اللّهِ ﷺ وَجَعًا يَجِدُه فِي جَسَدِه فَقَالَ لَه رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِىْ يَأْلَمُ مِنْ جَسَدِكَ وَقُلْ: بِسْمِ اللّهِ ثَلَاثًا وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللّهِ وَقُدْرَتِه مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ». قَالَ: فَفَعَلْتُ فَأَذْهَبَ اللّهُ مَا كَانَ بِىْ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর শরীরে অনুভূত একটি ব্যথার কথা জানালেন। এ কথা শুনে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, যে জায়গায় তুমি ব্যথা অনুভব করো সেখানে তোমার হাত রাখো। তারপর তিনবার ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে) আর সাতবার বলো, ‘‘আ‘ঊযু বি‘ইযযাতিল্ল-হি ওয়া কুদ্রাতিহী মিন্ শার্রি মা- আজিদু ওয়াউহা-যির’’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সম্মান ও তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমি অনুভব করছি ও আশংকা করছি তাঁর ক্ষতি হতে)।
‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস বলেন, আমি তা করলাম। ফলে আমার শরীরে যে ব্যথা-বেদনা ছিল তা আল্লাহ দূর করে দিলেন। (মুসলিম)[১]
ইবনু মাজার বর্ণনায়, (إِجْعَلْ يَدَكَ الْيُمْنى عَلَيْهِ) তোমার ডান হাত তার উপর রাখ।
ত্বরাবানী ও হাকিম-এর বর্ণনায়, (ضَعْ يَمِيْنَكَ عَلَى الْمَكَانِ الَّذِيْ تَشْتَكِيْ فَامْسَحْ بِهَا سَبْعَ مَرَّاتٍ) তোমার ডান হাত বেদনার স্থানে রাখ এবং হাত দিয়ে সাতবার মুছ বা মাসাহ কর।
সুতরাং ডান হাত ব্যথার স্থানে রাখা দু‘আসহ মুস্তাহাব।
(قُلْ: بِسْمِ اللّهِ ثَلَاثًا) তুমি বিস্মিল্লা-হ তিনবার বল। শাওকানী বলেনঃ সংখ্যার বিষয়টি এ হাদীসে উত্থাপিত হওয়াটা নাবীদের একান্ত গুপ্ত বিষয় এর কারণ আমরা অনুসন্ধান করব না।
১৫৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৪
وَعَنْ أبىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِيّ أَن جِبْرِيْلَ أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَشْتَكَيْتَ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ» . قَالَ: بِسْمِ اللّهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ مِنْ شَرِ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একবার জিবরীল (আঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! জিবরীল (আঃ) বললেন, আপনাকে কষ্ট দেয় এমন সব বিষয়ে আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছি প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হতে। অথবা তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বিদ্বেষী চোখের অকল্যাণ হতে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি। (মুসলিম)[১]
১৫৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৫
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ: «أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ» وَيَقُولُ: «إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهِمَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي أَكْثَرِ نُسَخِ الْمَصَابِيْحِ: «بِهِمَا» عَلى لَفْظِ التَّثْنِيَةِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে এ ভাষায় দু‘আ করে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করতেন। তিনি বলতেন, ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে প্রত্যেক শায়ত্বনের (শয়তানের) অনিষ্ট হতে, প্রত্যেক ধ্বংসকারী হিংস্র জন্তু জানোয়ারের ধ্বংস হতে, প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ হতে তোমাদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি। তিনি আরো বলতেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এ কালিমার দ্বারা তাঁর সন্তান ইসমা‘ঈল ও ইসহককে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতেন। বুখারী; মাসাবীহ সংস্করণের অধিকাংশ স্থানে ‘বিহা’ শব্দের জায়গায় بهما (বিহিমা-) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিবচন শব্দে।[১]
জাযারী বলেনঃ আল্লাহর কালামের গুণ তামাম তথা পরিপূর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে এজন্য যে, তার কালামে কোন দোষ ত্রুটি বলা বৈধ হবে না যেমনটি মানুষের কালামে বা ত্রুটি রয়েছে।
কারও মতে তামাম দ্বারা উদ্দেশে তা আশ্রয় প্রার্থনা করাকে উপকার দিবে এবং সকল প্রকার বিপদাপদ হতে রক্ষা করবে এবং এটাই যথেষ্ট হবে।
আহমাদ বিন হাম্বাল (بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّةِ) (আল্লাহর পূর্ণ বাক্যসমূহ) দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, কুরআন সৃষ্ট না আর সৃষ্টজীবের বাক্যসমূহ ত্রুটিপূর্ণ। সুতরাং تمام গুণ নিয়ে আসা প্রমাণ আল্লাহর কালাম সৃষ্ট না। তিনি আরও প্রমাণ করেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সৃষ্ট (বস্ত্ত বা জীব) দিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেননি। প্রত্যেক শয়তান (শয়তান) হতে তা মানব জাতির মধ্যে হতে পারে আবার জিন জাতির মধ্যে হতে পারে (هَامَّةٌ) যা পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং মানুষকে কষ্ট দেয়। কারও মতেঃ বিষধর প্রাণী। আর শাওকানী বলেন, এটা বিষধরের চেয়ে ‘আম যেমন হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন (أَيُؤْذِيْكَ هَوَامُّ رَأسِكَ) তোমার মাথার ব্যথা কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
১৫৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৬
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ يُرِدِ اللّهُ بِه خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ» . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। (বুখারী)[১]
অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন তখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন, যে ধৈর্য ধারণ করে তার জন্য ধৈর্য আর যে অস্থিরতা প্রকাশ করে তার জন্য অস্থিরতা।
১৫৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৭
وَعَن أبىْ هُرَيْرَة وَأبي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «مَا يُصِيْبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلَا وَصَبٍ وَلَا هَمٍّ وَلَا حُزْنٍ وَلَا أَذًى وَلَا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إِلَّا كَفَّرَ اللّهُ بهَا مِنْ خَطَايَاهُ». (مُتَّفق عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুসলিমের ওপর এমন কোন বিপদ আসে না, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন দুঃখ-কষ্ট হয় না, এমনকি তার গায়ে একটি কাঁটাও ফুটে না, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ না করেন। [১]
(وَصَب) বলতে এমন ব্যথা ও রোগ যা সর্বদা লেগে থাকে। هم وحزن বলতে হাফিয ইবনু হাজার বলেন, দু’টোই গোপনীয় রোগ। কারও মতে (هَمٌّ) বলতে এমন চিন্তা যা সামনে আসবে আর (حُزْنٌ) যা অতিবাহিত হয়েছে।
(أَذًى) কষ্ট ইতিপূর্বে যা গেছে সেগুলোর চেয়ে এটা ‘আম। কারও মতে এটা খাস তা হল অন্য লোকের পক্ষ হতে যা আসে (غَمٌّ) গোপন রোগ যা অন্তরকে সংকীর্ণ করে তোলে।
কারও মতে এমন চিন্তা যা অজ্ঞানের বা বেহুশের কাছাকাছি নিয়ে যায়। আর (حُزْنٌ) এর চেয়ে সহজ।
ইবনু হাজার বলেন, এ তিনটি শব্দ (هَمٌّ غَمٌّ حُزْنٌ)। (هَمٌّ) হল যা চিন্তা থেকে আসে এর কারণে তাকে কষ্ট দেয়।
(غَمٌّ) মুসীবাত যা অন্তরের জন্য হয়। (حُزْنٌ) বলতে কোন কিছু খোয়া বা হারিয়ে যাওয়ার কারণে যে শংকা তৈরি হয়।
(إِلَّا كَفَّرَ اللّهُ بهَا من خطاياه) সকল গুনাহ মিটিয়ে দেন দৃশ্যত সকল গুনাহ ‘আমভাবে কিন্তু জমহূর ‘উলামারা সগীরাহ্ গুনাহ খাস করেছেন। কেননা হাদীসে এসেছে, এক সলাত হতে অপর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) এক জুমু‘আহ্ হতে আরেক জুমু‘আহ্ এক রমাযান হতে আরেক রমাযান এর মাঝে যত গুনাহ হয় সেগুলো মিটিয়ে দেয় তবে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ না। সুতরাং মুতলাক্ব তথা সাধারণ হাদীসগুলো তারা এ হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ করেছেন।
১৫৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৮
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ وَهُوَ يُوعَكُ فَمَسِسْتُه بِيَدِىْ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللّهِ إِنَّكَ لَتُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا. فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «أَجَلْ إِنِّىْ أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلَانِ مِنْكُمْ» . قَالَ: فَقُلْتُ: ذلِكَ لِأَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ؟ فَقَالَ: «أَجَلْ» . ثُمَّ قَالَ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُه أَذًى مِنْ مَرَضٍ فَمَا سِوَاهُ إِلَّا حَطَّ اللّهُ تَعَالى بِه سَيِّئَاتِه كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম। তিনি সে সময় জ্বরে ভুগছিলেন। আমি আমার হাত দিয়ে তাঁকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার তো বেশ জ্বর। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের দু’জনে যা ভোগ করে আমি তা ভুগছি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এর কারণ, আপনার জন্য দু’গুণ পুরস্কার রয়েছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন মুসলিমের প্রতি যে কোন কষ্ট পৌঁছে থাক না কেন চাই তা রোগ হোক বা অপর কিছু হোক আল্লাহ তা’আলা তা দ্বারা তার গুনাহসমূহ ঝেড়ে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে। [১]
অথবা অর্থঃ হ্যাঁ রোগ কঠিন হওয়ার কারণে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়া হবে শেষ পর্যন্ত তার আর কোন গুনাহ থাকবে না। এমন মর্মার্থের দিকে সা‘দ-এর হাদীস প্রমাণ বহন করে যা দারিমী ও নাসায়ীতে এসেছে আর তা তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন যেখানে বলা হয়েছে (حتى يمشي على الأرض وما عليه خطيئه) পৃথিবীতে সে চলবে (সুস্থ হবে) এমতাবস্থায় তার আর কোন গুনাহ থাকবে না।
১৫৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৩৯
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا الْوَجَعُ عَلَيْهِ أَشَدُّ مِنْ رَسُولِ اللّهِ ﷺ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বেশী রোগ যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়েছে এমন কাউকে দেখিনি। [১]
১৫৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪০
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَاتَ النَّبِيُّ ﷺ بَيْنَ حَاقِنَتِىْ وَذَاقِنَتِىْ فَلَا أَكْرَه شِدَّةَ الْمَوْتِ لِأَحَدٍ أَبَدًا بَعْدَ النَّبِيَّ ﷺ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুক ও চিবুকের মাঝে মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর পর আর কারো মৃত্যু যন্ত্রণাকে আমি খারাপ মনে করি না। [১]
(فَلَا أَكْرَه شِدَّةَ الْمَوْتِ لِأَحَدٍ أَبَدًا بَعْدَ النَّبِيَّ ﷺ ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর কারও মৃত্য কষ্টকে আর আমি খারাপ মনে করি না। অর্থাৎ মৃত্যুর কষ্টকে আমি অধিক গুনাহের কারণ মনে করতাম আরও ধারণা করতাম এটা হতভাগ্যের চিহ্ন এবং আল্লাহর নিকট লোকটির খারাপ অবস্থা আর এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পূর্বে আর যখন আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর কষ্ট দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম যে, মৃত্যুর কষ্ট হতভাগ্য হওয়া যা খারাপ মানুষ হওয়ার চিহ্ন অথবা খারাপ পরিণতি হবে এমনটি না। কেননা যদি এমনটি হত তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর মৃত্যুর কষ্ট হত না। বরং মৃত্যুর কঠিনতা মর্যাদা বৃদ্ধি ও প্রতিদান বহুগুণে হওয়া আর ব্যক্তিকে গুনাহ হতে পবিত্রকরণের কারণ। আর যখন বিষয়টি এমনই তখন আমি আর কারও মৃত্যুর কষ্টকে খারাপ মনে করি না এটা জানার পর।
১৫৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪১
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ الْخَامَةِ مِنَ الزَّرْعِ تُفَيِّئُهَا الرِّيَاحُ تَصْرَعُهَا مَرَّةً وَتَعْدِلُهَا أُخْرى حَتّى يَأْتِيهِ أَجَلُه وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الْأَرْزَةِ الْمُجْذِيَةِ الَّتِي لَا يُصِيْبُهَا شَيْءٌ حَتّى يَكُوْنَ انْجِعَافُهَا مَرَّةً وَاحِدَةً». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো, ক্ষেতের তরতাজা ও কোমল শস্য শাখার মতো, যাকে বাতাস এদিক-ওদিক ঝুঁকিয়ে ফেলে। একবার এদিকে কাত করে। আবার সোজা করে দেয়। এভাবে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পিপুল গাছের মতো। একেবারে ভূমিতে উপড়ে পড়ার আগে এ গাছে ঝটকা লাগে না। [১]
ইবনু হাজার বলেনঃ বাতাস যদি প্রবল আকারে হয় তাহলে উত্তর দক্ষিণে হেলে পড়ে এবং পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর বাতাস যদি স্থির হয়ে থাকে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে।
মুহলিব বলেনঃ তুলনার কারণ হল মু’মিন ব্যক্তির নিকট যখনই আল্লাহর আদেশ আসে তখনই যে তার অনুগত হয় এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হয় তার জন্য যদি কল্যাণ আসে তাহলে খুশী হয় এবং যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর যদি অকল্যাণ আসে তাহলে ধৈর্য ধারণ করে এবং কল্যাণ ও প্রতিদানের আশা করে। যখন এ (নি‘আমাত) দূরীভূত হয় তারপরে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অবিচল থাকে।
আবুল ফারাজ ইবনু জাওযী বলেনঃ মানুষেরা এ ব্যাপারে কয়েক প্রকার-
- তাদের মধ্যে কেউ বিপদাপদের প্রতিদানের অপেক্ষা করে তার ওপর বিপদ সহজ হয়।
- তাদের মধ্যে কেউ মনে করে, এই বিপদাপদ বাদশাহ তথা আল্লাহ তার রাজত্বে নিয়ন্ত্রণ করেন সুতরাং সে গ্রহণ করে এবং এতে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে না।
- আবার কেউ আল্লাহর ভালবাসায় বিপদাপদ উঠিয়ে নেয়ার আবেদন করা হতে যাকে বিরত রেখেছি। এটা ইতিপূর্বের চেয়ে বেশী ভাল।
- তাদের মধ্যে কেউ মুসীবাত আলিঙ্গন করাকে স্বাদ মনে করে এরা সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পূর্ণ, কেননা তারা আল্লাহর পছন্দই লালিত হয়ে উঠে।
(أَرْزَةِ) পরিচিত এক প্রকার গাছ যাকে বলা হয় أرْزُنْ যা এক প্রকার শক্ত কাঠ বিশিষ্ট বৃক্ষ (যা দ্বারা লাঠি তৈরি হয়) আর যে গাছটি অনেক দিন ধরে বেঁচে থাকে যা খুব বেশী পাওয়া যায় লিবিয়ার পাহাড়ে।
সাদৃশ্যের কারণ যে মুনাফিক্ব ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা তাকে কোন কিছু হারান না (তার কোন কিছু খোয়া যায় না) বরং দুনিয়া তার জন্য সহজসাধ্য হয় যাতে আখিরাতে তার অবস্থা ভয়াবহ হয়। যখন আল্লাহ তার ধ্বংসের ইচ্ছে করেন তাকে তছনছ করে দেন তার মৃত্যু হয় কঠিন শাস্তি হিসেবে আর আত্মা বের হওয়ার সময় ভীষণ ব্যথা পায়।
কারও মতে মু’মিন ব্যক্তি দুনিয়ার বিপদাপদের সাক্ষাত পায় দুনিয়ার স্বল্প অংশ অর্জিত হয় বলে যে কোমল তৃণের ন্যায় যাকে বাতাস খুব এদিক সেদিক ঘুরায় তার কান্ড দুর্বল হওয়ার কারণে। কিন্তু মুনাফিক্ব এর বিপরীত।
১৫৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪২
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ الزَّرْعِ لَا تَزَالُ الرِّيْحُ تُمِيْلُه وَلَا يَزَالُ الْمُؤْمِنُ يُصِبْيُهُ الْبَلَاءُ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ شَجَرَةِ الْأَرْزَةِ لَا تَهْتَزُّ حَتّى تَسْتَحْصِدَ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো এক শস্য ক্ষেতের মতো। শস্য ক্ষেতকে যেভাবে বাতাস সবসময় ঝুঁকিয়ে রাখে, ঠিক এভাবে মু’মিনকে বিপদাপদ দোলায়। বালা-মুসীবত ঘিরে থাকে। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো, পিপুল গাছের মতো। পিপুল গাছ বাতাসের দোলায় ঝুঁকে না পড়লেও পরিশেষে শিকড়সহ উপড়ে যায় । [১]
১৫৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৩
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: دَخَلَ رَسُوْلِ اللّهِ ﷺ عَلَى اُمِّ السَّائِبِ فَقَالَ: «مَالَكِ تُزَفْزِفِينَ؟» . قَالَتِ: الْحُمّى لَا بَارَكَ اللّهُ فِيهَا فَقَالَ: «لَا تَسُبِّي الْحُمّى فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِىْ ادَمَ كَمَا يُذْهِبُ الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সায়িব (রাঃ) -এর কাছে গেলেন। তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? উম্মু সায়িব (রাঃ) বলল, আমার জ্বর বেড়েছে। আল্লাহ এর ভাল না করুন। তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর বানী আদামের গুনাহগুলো এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে হাপর লোহার মরিচ দূর করে। [১]
১৫৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৪
وَعَنْ أَبِىْ مُوسى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَه بِمِثْلِ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْمًا صَحِيْحًا» رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ রোগে অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার ‘আমলনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হত। [১]
(أَوْ سَافَرَ) অথবা সফর করে। সফরই তাকে ‘আমাল করতে বাধা দিচ্ছে তা না হলে সে ‘আমাল চালিয়ে যেত আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় আছে, (إَذَا كَانَ الْعَبْدُ يَعْمَلُ عَمَلًا صَالِحًا فَشَغَلَه عَنْهُ مَرَضٌ أَوْ سَفَرٌ)
‘যখন বান্দা সৎ ‘আমাল করতে থাকে অতঃপর তাকে বাধা দেয় রোগ বা সফর।’
আহমাদ-এর বর্ণনা এসেছে,
إَذَا ابْتَلَى اللهُ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ بِبَلَاءٍ فِي جَسَدِه قَالَ اللهُ: أُكْتُبْ لَه صَالِحَ عَمَلِهِ الَّذِىْ كَانَ يَعْمَلُه فَإِنْ شَفَاهُ غَسَلَه وَطَهَّرَه وَإِنْ قَبَضَه غَفَرَ لَه وَرَحْمَه.
আল্লাহ যখন মুসলিম বান্দাকে তার শরীরে রোগ দিয়ে পরীক্ষা করান তখন আল্লাহ (মালাককে) বলেন তার জন্য সৎ ‘আমাল লিপিবদ্ধ কর যা সে সৎ ‘আমাল করছিল যদি তাকে আরোগ্য লাভ করান তাহলে তাকে শুধু ধৌত ও পাক পবিত্র করাল (গুনাহ হতে) আর যদি আল্লাহ তাকে মৃত্যু ঘটান তহলে তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহম করেন।
নাসায়ীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, হাদীসে সেখানে বল হয়েছে যার রাত্রিতে নফল সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) রয়েছে কিন্তু ঘুম বা ব্যথা তাকে সলাত আদায়ে বাধা দিয়েছে তারপরেও তার জন্য সলাতের সাওয়াব লেখা হয় আর ঘুমটি হল তার ওপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।
ইবনু বাত্বাল উল্লিখিত হাদীসগুলোর হুকুম নফল সলাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফারযের (ফরযের/ফরজের) ক্ষেত্রে না। আর সফর ও অসুস্থ অবস্থায় ফরয সলাত রহিত হয় না।
আর ইবনু হাজার-এর বক্তব্য হাদীসের হুকুম প্রশস্ত ফরয সলাতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
১৫৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৫
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الطَّاعُونُ شَهَادَةٌ لِكُلِّ مُسْلِمٍ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্বা’উন (মহামারী)’র কারণে মৃত্যু মুসলিমদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা। [১]
১৫৪৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৬
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الشُّهَدَاءُ خَمْسَةٌ الْمَطْعُونُ وَالْمَبْطُونُ وَالْغَرِيْقُ وَصَاحِبُ الْهَدَمِ وَالشَّهِيْدُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাহীদরা পাঁচ প্রকার-(১) মহামারীতে মৃত ব্যক্তি, (২) পেটের অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (৩) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, (৪) দেয়াল চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৫) আল্লাহর পথে জিহাদ করে মৃত ব্যক্তি। [১]
শাহীদের সংখ্যার বিষয়ে হাদীসে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন অত্র হাদীসে এ সংখ্যা পাঁচ বলা হয়েছে। আবার আগত জাবির (রাঃ) বিন আতীক-এর হাদীসে এর সংখ্যা সাত এসেছে আল্লাহর রাস্তায় শাহীদ ব্যতীত। আর তিরমিযী আহমাদ বর্ণিত ‘উমারের হাদীসে এ সংখ্যা চারের কথা এসেছে।
এ বিষয়ে হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সর্বনিম্ন সংখ্যা অবহিত করেছেন। আবার অন্য সময়ে তা অধিক বলেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা করা উদ্দেশ্য তার নয়।
আল্লাহর রাস্তায় শাহীদ ব্যক্তির বিধান হলো তার গোসল বা সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই, যা অন্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যিনি আল্লাহর রাস্তায় শাহীদ হন তিনিই প্রকৃত শাহীদ আর বাকীরা রূপকার্থে শাহীদ, আল্লাহর রাস্তায় শাহীদের সাওয়াবের ন্যায় সাওয়াবের অর্থে শাহীদ (যদিও মর্যাদাগতভাবে পার্থক্য বিদ্যমান)। ‘উলামাগণ উল্লেখ করেছেন শাহীদ তিন শ্রেণীর। প্রথমতঃ দুনিয়া আখিরাতে শাহীদ, আর এ হল আল্লাহর রাস্তায় শাহীদ। দ্বিতীয়তঃ শুধু আখিরাতের শাহীদ, দুনিয়ায় নয়। আর এরা হলো বাকী চার শ্রেণী। তৃতীয়তঃ শুধু দুনিয়ার শাহীদ আখিরাতের নয়। এরা হল যারা গনীমাতে খিয়ানাত করে বা পৃষ্ঠপদর্শন করে মারা যায়।
১৫৪৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৭
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللّهِ ﷺ عَنِ الطَّاعُونِ فَأَخْبَرَنِي: «أَنَّه عَذَابٌ يَبْعَثُهُ اللّهُ عَلى مَنْ يَشَاءُ وَأَنَّ اللّهَ جَعَلَه رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِيْنَ لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُونُ فَيَمْكُثُ فِي بَلَدِه صَابِرًا مُحْتَسِبًا يَعْلَمُ أَنَّه لَا يُصِيْبُه إِلَّا مَا كَتَبَ اللّهُ لَه إِلَّا كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম ‘আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ ‘আযাব পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমাত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব। [১]
(رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِيْنَ) এই উম্মাতের জন্য রহমাত স্বরূপ আহমাদে বর্ণিত আবূ আসীব-এর হাদীস,
فَالطَّاعُوْنُ شَهَادَةٌ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَرَحْمَةٌ لَهُمْ وَرِجْسٌ عَلَى الْكَافِرِ.
পেস্নগ রোগ হল মু’মিনদের জন্য শাহাদাত এবং রহমাত স্বরূপ আর কাফিরদের জন্য শাস্তি স্বরূপ।
সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, প্লেগ রহমাত সরূপ আর এটা মুসলিমদের জন্য খাস। আর কাফিরদের ক্ষেত্রে হলে তা শাস্তি যা আখিরাতের পূর্বে দুনিয়াতে জলদি ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এই উম্মাতের মধ্যে যারা পাপী তাদের জন্য পেস্নগ রোগ কি শাহাদাতের মর্যাদার কারণ হবে কিনা? বা শুধুমাত্র পরিপূর্ণ মু’মিনের সাথেই খাস। আর পাপী লোক দ্বারা উদ্দেশ্য কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহকারী যাদেরকে প্লেগ আক্রমণ করলে সে শাহাদাতের মর্যাদা পাবে না তার এই পাপ কাজে জড়িত থাকার কারণে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘যারা দুষ্কর্মে উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের সে লোকদের মতো করে দেব যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।’’ (সূরাহ্ আল জা-সিয়াহ্ ৪৫ : ২১)
(فَيَمْكُثُ فِي بَلَدِه) মহামারী আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে যেখান হতে বের হয় না বিরক্ত বা ব্যাকুল হয়ে বড় প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে। আর কেউ ব্যাস্ত হয় অথবা আফসোস করে সেখান হতে বের হতে না পেরে আর ধারণা করে এখান হতে যদি বের হতে পারত তাহলে আসলেই এ রোগে আক্রান্ত হত না। এ ব্যক্তি এ রোগে মারা গেলে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করতে পারবে না।
(إِلَّا كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍ) ‘তার জন্য শাহীদের অনুরূপ সাওয়াব রয়েছে’ শাহীদের অনুরূপ সাওয়াব ব্যক্তির মধ্যে উদ্দেশ্য হল যে মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সে শাহীদ আর যারা এ মহামারী আক্রান্তে মারা যায় না তাদের জন্য শাহীদের অনুরূপ সাওয়াব রয়েছে। যদিও স্বয়ং শাহাদাতের মর্যাদা অর্জিত হবে না। অতএব যারা শাহীদের গুণে গুণান্বিত তাদের মর্যাদা সুউচ্চ তাদের চেয়ে যাদেরকে শাহীদের অনুরূপ সাওয়াব দেয়া হয়।
অনুরূপ তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমাকে সুউচ্চ করার নিয়্যাতে জিহাদের উদ্দেশে বের হয়, অতঃপর অন্য কোন কারণে মারা যায় যুদ্ধে নিহত হওয়া ছাড়া আল্লাহর অনুগ্রহ অনেক প্রশস্ত আর মু’মিনের নিয়্যাত বেশী কার্যকরী কাজের চেয়েও।
১৫৪৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৮
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الطَّاعُوْنُ رِجْزٌ أُرْسِلَ عَلى طَائِفَةٍ مِنْ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ أَوْ عَلى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِه بِأَرْضٍ فَلَا تَقْدَمُوْا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلَا تَخْرُجُوْا فِرَارًا مِنْهُ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্বা’ঊন বা মহামারী হলো এক রকমের ‘আযাব। এ ত্বা’ঊন বানী ইসরাঈলের একটি দলের ওপর নিপতিত হয়েছিল। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর নিপতিত হয়েছিল। তাই তোমরা কোন জায়গায় ত্বা’ঊন-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শুনলে সেখানে যাবে না। আবার তোমরা যেখানে থাকো, মহামারী শুরু হয়ে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। [১]
ইবনু মালিক বলেনঃ তাদের ওপর মহামারী ‘আযাব আল্লাহ পাঠিয়েছেন ফলে স্বল্প সময়ে চবিবশ হাজার তাদের বড় বড় নেতা গোছের লোক মারা গেছে।
(أَوْ عَلى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ) অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতি।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ এটা বর্ণনাকারীর সন্দেহ ইবনু খুযায়মার বর্ণনায় সুস্পষ্ট শব্দ
(فإنه رجز سلط على طائفة من بني إسرائيل) এটা শাস্তি যা বানী ঈসরাঈলের ওপর পতিত হয়েছিল।
ত্ববারানীতে ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, একজন ব্যক্তি ছিল তার নাম বাল্‘আম তার দু‘আ কবূল হত আর মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের ঐ ভূমিকে আক্রমণের অভিমুখী হলেন যেখানে বাল্‘আম অবস্থান করত বাল্‘আম-এর জাতিরা তার কাছে এসে বলল, আপনি আল্লাহর নিকট তাদেরকে (মূসার) বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ করুন। সে বলল, না, আল্লাহ আমাকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তার নিকট উপঢৌকন নিয়ে আসলো উপঢৌকন সে কবূল করে তারা দ্বিতীয়বার আবেদন করল। সে বলল, না, আমার রব আমাকে নিষেধ করেছে এবং তাদের কথায় ভ্রূক্ষক্ষপ করলেন না। অতঃপর তারা বলল, যদি অস্বীকার করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। পরিশেষে সে বদ্দু‘আ শুরু করল তাদের (মূসা ও তার জাতির) বিরুদ্ধে কিন্তু তার জিহ্বা বানী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ আওড়াতে শুরু করল মূসা (আঃ)-এর জাতির পরিবর্তে তার জাতির ওপর, অতঃপর তাকে তারা ভৎর্সনা করতে লাগল। তারপর সে বলল, আমি তোমাদেরকে তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে পথ বলে দিব।
হাদীস শেষ পর্যন্ত আর সেখানে রয়েছে বানী ইসরাঈলের ওপর মহামারী পতিত হয়েছিল। আর একদিনে সত্তর হাজার লোক মারা গিয়েছিল।
(فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِه بِأَرْضٍ فَلَا تَقْدَمُوْا عَلَيْهِ) অতএব যখন তোমরা কোন স্থানে তা আরম্ভ হয়েছে বলে শ্রবণ করবে তাহলে তথায় যাবে না।
আর এটা এজন্য যে, তোমাদের নিজেদের প্রশান্তি ও শায়ত্বনের (শয়তানের) কুমন্ত্রণা হতে বাঁচার জন্য।
(فَلَا تَخْرُجُوْا فِرَارًا) তোমরা মহামারীর স্থান হতে পলায়ন করবে না, কেননা পলায়নটা ভাগ্য হতে পলায়ন এবং তার বিরোধিতা করা আর হাদীস প্রমাণ করে মহামারী স্থান হতে পলায়ন করা হারাম। অনুরূপ মহামারী স্থানে প্রবেশ করাও হারাম, কেননা নিষেধাজ্ঞাটা মূলত হারামের উপর প্রমাণ বহন করে। আর আহমাদে বর্ণিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস, (الفار منها كالفار من الزحف) মহামারী হতে পলায়ন করা যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করার মতো।
হাফিয ইবনু হাজার বলেন, ‘আয়ায ও অন্যান্যরা ‘উলামারা মহামারী স্থান হতে বের হওয়া বৈধ বলে মন্তব্য করেছেন (তাদের জন্য যাদের আল্লাহর ওপর ভরসা দৃঢ় রয়েছে এবং বিশ্বাস বিশুদ্ধ)। আর এটা সাহাবীগণের মধ্যে একটি দলের অভিমত তাদের মধ্যে অন্যতম আবূ মূসা আল আশ্‘আরী ও মুগীরাহ্ বিন শু‘বাহ্। আর তাবি‘ঈনদের মধ্যে আসওয়াদ বিন হিলাল এবং মাসরূক।
আবার তাদের মধ্যে কারও অভিমত ও নিষেধাজ্ঞাটা বেঁচে থাকার জন্য, ঘৃণিত হারাম না। এদের বিরোধিতা করে জমহূররা বলেন, মহামারী হতে পলায়ন করাটা হারাম হাদীসের সুস্পষ্ট নিষেধের কারণে। আর এটাই শ্রেষ্ঠ ও প্রাধান্যকর। শাফি‘ঈ ও অন্যান্যদের নিকট এটা আর এর সমর্থনে হাদীস হল যা ইবনু খুযায়মাহ্ ও আহমাদে এসেছে,
حَدِيْثُ عَائِشَةَ مَرْفُوْعًا بِسَنَدٍ حَسَنٍ. قُلْتُ: يَارَسُوْلُ اللهِ! فَمَا الطَّاعُوْنُ؟ قَالَ: غَدَةٌ كَغَدَةِ الْبَعِيْرِ، اَلْمُقِيْمُ فِيْهَا كَالشَّهِيْدُ وَالْفَارُّ مِنْهَا كَالْفَارِّ مِنَ الزَّحَفِ.
‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে মারফূ‘ সূত্রে ভাল সানাদে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! মহামারী কী? তিনি বললেন, মহামারী উটের মহামারীর বা মড়কের মতো সেখানে অবস্থানকারীর মর্যাদা শাহীদদের মতো আর সে স্থান হতে পলায়নকারী যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করার মতো।
১৫৪৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৪৯
وَعَن أَنَسٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «قَالَ اللّهُ سُبْحَانَه وَتَعَالى: إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِىْ بِحَبِيْبَتَيْهِ ثُمَّ صَبَرَ عَوَّضْتُه مِنْهُمَا الْجنَّةَ» يُرِيْدُ عَيْنَيْهِ. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আমি যখন আমার কোন বান্দাকে তার প্রিয় দু’টি জিনিস দিয়ে বিপদ্গ্রস্ত করি, আর সে এর উপর ধৈর্যধারণ করে, আমি তাকে এ দু’টি প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে জান্নাত দান করব। প্রিয় দু’টো জিনিস বলতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টো চোখ বুঝিয়েছেন। [১]
(ثُمَّ صَبَرَ) অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করল।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ আল্লাহ ধৈর্যশীলকে সাওয়াব প্রতিদানের যে ওয়া‘দা করেছেন তার উপর সে ধৈর্য ধারণ করে, না এ থেকে মুক্ত হয়ে সবর করে। কেননা ‘আমালসমূহ নির্ভর করে নিয়্যাতের উপর আর দুনিয়াতে তার বান্দাকে আল্লাহর পরীক্ষা তার ওপর তাঁর অসন্তোষ না। বরং খারাপকে প্রতিহত করা অথবা পাপকে মিটিয়ে দেয়া বা মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়ার জন্যে। সুতরাং এরূপ মুসীবাত হাসিমুখে গ্রহণ করলে অনুরূপ উদ্দেশ্য সফল হবে আর না হলে হবে না।
যেমন সালমান-এর হাদীস যা ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে এনেছেন,
أَنَّ مَرَضَ الْمُؤْمِنِ يَجْعَلُهُ اللهُ لَه كَفَّارَةٌ وَمُسْتَعْتِبًا، وَأَنَّ مَرَضَ الْفَاجِرِ كَالْبَعِيْرِ عَقْلُه أَهْلُه ثُمَّ أَرْسَلُوْهُ فَلَا يَدْرِىْ لَمْ أَعْقل وَلَمْ أَرْسِلْ.
মু’মিনের রোগ আল্লাহ তা‘আলা তার পাপ মোচনের ব্যবস্থা করেন আর পাপী লোকদের অবস্থা ঐ উটের মতো যে তার মালিক তাকে বাঁধল আবার ছেড়ে দিল, সে বুঝে না কেন মালিক তাকে বাঁধল এবং কেনই বা ছেড়ে দিল।
১৫৫০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫০
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلَّا صَلّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَه خَرِيْفٌ فِي الْجَنَّةِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) দু’আ করতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তার জন্য সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) সকাল পর্যন্ত দু’আ করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়। [১]
১৫৫১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫১
وَعَنْ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ قَالَ: عَادَنِي النَّبِيُّ ﷺ مِنْ وَجَعٍ كَانَ يُصِيْبُنِىْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ
যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমার চোখের অসুখ হলে আমাকে দেখতে আসলেন। [১]
কোন কোন হানাফী হতে বর্ণিত, যে চোখ সংক্রামক ব্যাধি ও দাঁতের ব্যথা রোগীকে দেখতে যাওয়া সুন্নাহ বিরোধী। আর হাদীস এটা প্রত্যাখ্যান করে (ভাষ্যকার বলেন) আমি জানি না তাদের এ বক্তব্যটি (خلاف السنة) তথা ‘‘সুন্নাহ বিরোধী’’ ভাষ্য বক্তব্যটি কোথায় হতে গ্রহণ করেছে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমাদের আত্মার কুমন্ত্রণা হতে। আর আবূ দাঊদ তার কিতাবে অধ্যায় নিয়ে এসেছেন (باب العيادة من الرمد) চোখ এ সংক্রামক ব্যাধি রোগীকে দেখতে যাওয়ার অধ্যায়। আর যে হাদীসটি বায়হাক্বী ও ত্ববারানী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিন ধরনের রুগীকে খোঁজ-খবর নিতে হবে না। চোখ সংক্রামক রোগী, দাঁতের ব্যথার রুগী ও ফোঁড়াজনিত রুগী। হাদীসটি অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল।
১৫৫২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫২
وَعَنْ أَنَسٍ: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ وَعَادَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ مُحْتَسِبًا بُوعِدَ مِنْ جَهَنَّمَ مَسِيْرَةَ سِتِّينَ خَرِيْفًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়্যাতে ভাল করে উযূ করার পর তার কোন অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। [১]
আর যায়নুল আরব বলেনঃ সম্ভবত উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার হিকমাহ্ হল রুগীর খোঁজ-খবর ও দেখতে যাওয়া একটি ‘ইবাদাত, সুতরাং ‘ইবাদাত পরিপূর্ণ পদ্ধতিতে আদায় করা উত্তম।
১৫৫৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৩
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا فَيَقُولُ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَسْأَلُ اللّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ أَنْ يَّشْفِيَكَ إِلَّا شُفِيَ إِلَّا أَنْ يَكُونَ قَدْ حَضَرَ أَجَلُه». رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিম তার এক অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গিয়ে যদি সাতবার বলে, “আস্আলুল্ল-হাল ‘আযীমা রব্বাল ‘আরশিল ‘আযীমি আই ইয়াশ্ফিয়াকা” (অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহর দরবারে দু’আ করছি তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন, যিনি মহান ‘আরশের রব।)। তাহলে তাকে অবশ্যই আরোগ্য দান করা হয় যদি না তার জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হয়। [১]
১৫৫৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৪
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ: كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْحُمّى وَمِن الْأَوْجَاعِ كُلِّهَا أَنْ يَقُوْلُوْا: «بِسْمِ اللهِ الْكَبِيْرِ أَعُوذُ بِاللّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عِرْقٍ نَعَّارٍ وَمِنْ شَرِّ حَرِّ النَّارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا يُعْرَفُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ إِسْمَاعِيلَ وَهُوَ يُضَعَّفُ فِي الحَدِيْثِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে জ্বরসহ অসুখ-বিসুখ হতে পরিত্রাণ পাবার জন্য এভাবে দু’আ করতে শিখিয়েছেন, “মহান আল্লাহর নামে, মহান আল্লাহর কাছে সব রক্তপূর্ণ শিরার অপকার হতে ও জাহান্নামের গরমের ক্ষতি হতে।” [১]
১৫৫৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৫
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «مَنِ اشْتَكى مِنْكُمْ شَيْئًا أَوِ اشْتَكَاهُ أَخٌ لَه فَلْيَقُلْ: رَبُّنَا اللّهُ الَّذِي فِي السَّمَاءِ تَقَدَّسَ اسْمُكَ أَمْرُكَ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ كَمَا أَنَّ رَحْمَتُكَ فِي السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِي الْأَرْضِ اغْفِرْ لَنَا حُوْبَنَا وَخَطَايَانَا أَنْتَ رَبُّ الطَّيِبِيْنَ أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ وَشِفَاءً مِنْ شِفَائِكَ عَلى هذَا الْوَجَعِ. فَيَبْرَأُ». رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ ব্যথা-বেদনা অনুভব করলে অথবা তার কোন মুসলিম ভাই তার নিকট ব্যথা-বেদনার কথা বললে, সে যেন দু’আ করে, “আমাদের রব আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। হে রব! তোমার নাম পূতঃ-পবিত্র। তোমার নির্দেশ আকাশ ও পৃথিবী উভয় স্থানেই প্রযোজ্য। আকাশে যেভাবে তোমার অগণিত রহমাত আছে, ঠিক সেভাবে তুমি পৃথিবীতেও তোমার অগণিত রহমাত ছাড়িয়ে দাও। তুমি আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করে দাও। তুমি পূতঃ-পবিত্র লোকদের রব। তুমি তোমার রহমাতগুলো হতে বিশেষ রহমাত ও তোমার শেফাসমূহ হতে বিশেষ শেফা এ ব্যথা-বেদনার নিরাময় পাঠিয়ে দাও।” এ দু’আ তার সকল ব্যথা-বেদনা দূর করে দেবে। [১]
১৫৫৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৬
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا جَاءَ الرَّجُلُ يَعُوْدُ مَرِيْضًا فَلْيَقُلْ اللّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا أَوْ يَمْشِىْ لَكَ إِلى جَنَازَةٍ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় তখন সে যেন বলে, “আল্ল-হুম্মাশফি ‘আবদাকা ইয়ান্কাউ লাকা ‘আদ্যুওয়ান আও ইয়াম্শী লাকা ইলা-জানা-যাহ্” (অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও। সে যাতে তোমার জন্য শত্রুকে আঘাত করতে পারে। অথবা তোমার সন্তষ্টির জন্য জানাযায় অংশ নিতে পারে।) [১]
ত্বীবী বলেন, সম্ভবত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও জানাযার সলাতে অংশগ্রহণ মধ্যে একত্রিতকরণের কারণ হল প্রথমটিতে আল্লাহর শত্রুর ওপর প্রতিশোধ নিতে একান্তভাবে মনোনিবেশ করা আর দ্বিতীয়টিতে আল্লাহর বন্ধুদের প্রতি রহমাত পৌঁছাতে প্রচেষ্টা করা বা দ্রুত বাস্তবায়িত করা।
১৫৫৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৭
عَن عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ عَنْ أُمَيَّةَ أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَة عَن قَوْلِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالى: ﴿إِن تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ الله﴾ [البقرة 2 : 284].وَعَنْ قَوْلِه: ﴿مَنْ يَّعْمَلْ سُوْءًا يُجْزَ بِه﴾ [النساء 4 : 123]، فَقَالَتْ: مَا سَأَلَنِىْ عَنْهَا أَحَدٌ مُنْذُ سَأَلَتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ فَقَالَ: «هذِه مُعَاتَبَةُ اللهِ الْعَبْدَ فِيْمَا يُصِيْبُه مِنَ الْحُمّى وَالنَّكْبَةِ حَتَّى الْبِضَاعَةِ يَضَعُهَا فِي يَدِ قَمِيْصِه فَيَفْقِدُهَا فَيَفْزَعُ لَهَا حَتّى إِنَّ الْعَبْدَ لَيَخْرُجُ مِنْ ذُنُوْبِه كَمَا يَخْرُجُ التِبْرُ الْأَحْمَرُ مِنَ الْكِيْرِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
‘উমাইয়্যাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (‘উমাইয়্যাহ) একদিন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে “তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমরা যদি তা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে তোমারদের হিসাব নিবেন”-(সূরাহ আল বাকারাহ ২:২৮৪) এবং “যে অন্যায় কাজ করবে সে তার শাস্তি ভোগ করবে”-(সূরাহ আন নিসা ৪:১২৩)- এ দু’টি আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
উত্তরে ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবার পর এ পর্যন্ত কেউ আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ দু’টি আয়াতে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা হল দুনিয়ায় বান্দার যে জ্বর ও দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি হয়, তা দিয়ে আল্লাহ যে শাস্তি দেন তাই, এমনকি বান্দা জামার পকেটে কে সম্পদ রাখে, তারপর হারিয়ে ফেলে তার জন্য অস্থির হয়ে যায়-এটাও এ শাস্তির মধ্যে গণ্য। অবশেষে বান্দা তার গুনাহগুলো হতে পবিত্র হয়ে বের হয়। যেভাবে সোনাকে হাপরের আগুনে পরিস্কার করে বের করা হয়।
[১]
আর না এটাও কোন দ্বন্দ্ব হিসেবে পরিগণিত হবে যে, কল্পনার চিন্তাকে দৃঢ় হিসেবে গ্রহণ করবে যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ
‘‘কিন্তু যেসব কসমের ব্যাপারে ধরবেন তোমাদের মন যার প্রতিজ্ঞা করেছে।’’ (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ২২৫)
আমরা বলব, বাস্তবে আল্লাহর এই ধরাটা তখনই প্রযোজ্য হবে কখন মনের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে পাপ কাজের সাথে জড়িয়ে নিবে। জ্বরকে খাস করার কারণ হল রোগসমূহের মধ্যে জ্বর হল কঠিন ও ক্ষতিকর।
(عتاب) তথা সাজা শব্দটি ব্যবহার হয় দু’ বন্ধুর মধ্যে এক বন্ধু অপর বন্ধুর ওপর ক্রোধ প্রকাশ করে তার খারাপ আচরণের কারণে এতদসত্ত্বেও তার অন্তরে তার প্রতি ভালবাসা বিদ্যমান। সুতরাং আয়াতের অর্থ এটা না যে, আল্লাহ মু’মিনদেরকে তাদের সকল গুনাহের শাস্তি দিবেন বরং আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা, পিপাসা, রোগ, চিন্তা ও অন্যান্য অপছন্দনীয় জিনিস দিয়ে পাকড়াও করবেন যাতে তারা দুনিয়াতেই গুনাহ হতে বের হয়ে পবিত্র হতে পারে।
১৫৫৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৮
وَعَنْ أَبِي مُوسى أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «لَا يُصِيْبُ عَبْدًا نَكْبَةٌ فَمَا فَوْقَهَا أَوْ دُونَهَا إِلَّا بِذَنَبٍ وَمَا يَعْفُو اللّهُ عَنْهُ أَكْثَرُ وَقَرَأَ: ﴿وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْ عَنْ كَثِيْر﴾ [الشورى 42 : 30]. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বড় হোক কিংবা ছোট হোক, বান্দা যেসব দুঃখ-কষ্ট পায়, নিশ্চয়ই তা তার অপরাধের কারণে। তবে আল্লাহ্ যা ক্ষমা করে দেন তা এর চেয়েও অনেক বেশী। এ কথার সমর্থনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-অর্থাৎ “তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মফলের কারণে। আর আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন অনেক অনেক বেশি”-(সূরাহ আশ শূরা ৪২:৩০)। [১]
১৫৫৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৫৯
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِن الْعَبْدَ إِذَا كَانَ عَلى طَرِيْقَةٍ حَسَنَةٍ مِنَ الْعِبَادَةِ ثُمَّ مَرِضَ قِيلَ لِلْمَلَكِ الْمُوَكَّلِ بِه: اكْتُبْ لَه مِثْلَ عَمَلِه إِذَا كَانَ طَلِيْقًا حَتّى أطْلِقَه أَوْ أَكْفِتَه إِلَيَّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা যখন ‘ইবাদতের কোন সুন্দর নিয়ম-পদ্ধতি পালন করে চলতে শুরু করে এবং তারপর যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে (‘ইবাদতের ধারা বন্ধ হয়ে যায়), তখন তার ‘আমালনামা লিখার জন্য নিযুক্ত মালাককে (ফেরেশতাকে) বলা হয়, এ বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে ‘আমাল করত (অসুস্থ অবস্থাও) তার ‘আমালনামায় তা লিখতে থাকো। যে পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে দিই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি। [১]
(أكفته إِلَيّ) আমি তাকে ক্ববরের দিকে টেনে নেই মূলত মৃত্যু উদ্দেশ্য।
১৫৬০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬০
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: إِذَا ابْتُلِيَ الْمُسْلِمُ بِبَلَاءٍ فِي جَسَدِه قِيلَ لِلْمَلَكِ: اكْتُبْ لَه صَالِحَ عَمَلِهِ الَّذِىْ كَانَ يَعْمَلُ فَإِنْ شَفَاهُ غَسَّلَه وَطَهَّرَه وَإِنْ قَبَضَه غَفَرَ لَه وَرَحِمَه. رَوَاهُمَا فِي شَرَح ِالسُّنَّةِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হলে মালায়িকাহ-কে (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয়, এ বান্দা নিয়মিত যে নেক কাজ করত, তা-ই তার ‘আমালনামায় লিখতে থাকো। এরপর তাকে আল্লাহ্ আরোগ্য দান করলে গুনাহখাতা হতে ধুয়ে পাকসাফ করে নেন। আর যদি তাকে উঠিয়ে নেন, তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহমাত দান করেন। [১]
إَذَا ابْتَلَى اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ بِبَلَاءٍ فِىْ جَسَدَه قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِلْمَلَكِ: أَيْ صَاحِبَ يَمِيْنِه، وَهُوَ كَاتِبُ الْحَسَنَاتِ.
যখন কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হয় তখন আল্লাহ তা‘আলা ডান মালাককে তথা ডানের মালাক (ফেরেশতা) যিনি ভাল ‘আমাল লিখেন।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ হাদীসের প্রকাশ্য ভাষ্য হল তার জন্য হুবহু যে ‘আমালেই লেখা হয় অথবা প্রতিদান প্রথমটিই সঠিক।
১৫৬১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬১
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَتِيْكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللّهِ: الْمَطْعُونُ شَهِيدٌ وَالْغَرِيقُ شَهِيدٌ وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيْدٌ وَالْمَبْطُوْنُ شَهِيْدٌ وَصَاحِبُ الْحَرِيْقِ شَهِيْدٌ وَالَّذِىْ يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيْدٌ وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيْدٌ». رَوَاهُ مَالِك وَأَبُوْ دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
জাবির ইবনু ‘আতীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে নিহত শাহীদ ছাড়াও সাত ধরনের শাহীদ রয়েছে। এরা হচ্ছে (১) মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (২) পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৩) ‘যা-তুল জানব’ রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৪) পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৬) কোন প্রাচীর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৭) প্রসবকালে মৃত্যুবরণকারী মহিলা। [১]
জামি' উসূলে বলা হয়েছে, ‘যা-তুল জান্ব’ বলতে টিউমার বা বড় ফোঁড়া, যখম মানুষের পেটে প্রকাশ পায় এবং ক্ষত ভিতরে প্রবাহিত হয় যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে কখনও ক্ষত বাইরেই থাকে।
১৫৬২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬২
وَعَنْ سَعْدٍ قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ ﷺ: أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً؟ قَالَ: «الْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ يُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلى حَسَبِ دِينِه فَإِنْ كَانَ صَلْبًا فِىْ دِيْنِهِ اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ وَإِنْ كَانَ فِي دِينِه رِقَّةٌ هُوِّنَ عَلَيْهِ فَمَا زَالَ كَذلِكَ حَتّى يَمْشِيَ على الأَرْض مَالَه ذَنْبٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيْحٌ
সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর নাবী! কোন সব লোককে বিপদাপদ দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নাবীদেরকে। তারপর তাদের পরে যারা উত্তম তাদেরকে। মানুষকে আপন আপন দ্বীনদারীর অনুপাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। দ্বীনদারীতে যে যত বেশি মজবুত হয় তার বিপদ-মুসীবাত তত বেশি কঠিন হয়। দ্বীনের ব্যাপারে যদি মানুষের দুর্বলতা থাকে, তার বিপদও ছোট ও সহজ হয়। এভাবে তার বিপদ হতে থাকে। এ নিয়েই সে মাটিতে চলাফেরা করতে থাকে। তার কোন গুনাহখাতা থাকে না। [১]
১৫৬৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৩
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا أَغْبِطُ أَحَدًا بِهَوْنِ مَوْتٍ بَعْدَ الَّذِىْ رَأَيْتُ مِنْ شِدَّةِ مَوْتِ رَسُولِ اللّهِ ﷺ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃত্যু কষ্ট দেখেছি। তাই এরপর আর সহজভাবে মৃত্যু হতে দেখলে ঈর্ষা করি না। [১]
সুতরাং আমি আর কারও কঠিন মৃত্যুকে ঘৃণা করি না।
১৫৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৪
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ بِالْمَوْتِ وَعِنْدَه قَدَحٌ فِيهِ مَاءٌ وَهُوَ يُدْخِلُ يَدَه فِي الْقَدَحِ ثُمَّ يَمْسَحُ وَجْهَه ثُمَّ يَقُولُ: «اللّهُمَّ أَعِنِّىْ عَلى مُنْكَرَاتِ الْمَوْتِ أَوْ سَكَرَاتِ الْمَوْتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি তাঁর মৃত্যুবরণ করার সময় দেখেছি। তাঁর কাছে একটি পানিভরা বাটি ছিল। এ বাটিতে তিনি বারবার হাত ডুবাতেন। তারপর হাত দিয়ে নিজের চেহারা মুছতেন ও বলতেন, হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণায় সাহায্য করো। [১]
১৫৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৫
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا أَرَادَ اللّهُ تَعَالى بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِه حَتّى يُوَافِيَه بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। [১]
(حَتّى يُوَافِيَه بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) অবশেষে তাকে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে পূর্ণ শাস্তি দিবেন অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার গুনাহের কারণে দুনিয়াতে শাস্তি দেন না, অবশেষে পাপী ব্যক্তি পরিপূর্ণ গুনাহ নিয়ে আখিরাতে উপস্থিত হয় আর সে শাস্তির প্রাপ্যতাও পরিপূর্ণভাবে পেয়ে যায়।
১৫৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৬
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা’আলা কোন জাতিকে ভালবাসেন তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। [১]
১৫৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৭
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ أَوِ الْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِه وَمَالِه وَوَلَدِه حَتّى يَلْقَى اللّهَ تَعَالى وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيْئَةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوى مَالِكٌ نَحْوَه وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيْحٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মু’মিন নারী-পুরুষের বিপদ মুসীবাত লেগেই থাকে, এই বিপদ মুসীবাত তার শারীরিক, তার ধন-সম্পদের, তার সন্তান- সন্তুতির ব্যপারে হতে পারে। আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্তই তা চলতে থাকে। আর আল্লাহর সাথে তার মিলিত হবার পর তার উপর গুনাহের কোন বোঝাই থাকেনা। (তিরমিযী; মালিক (রহঃ) এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।)
১৫৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৮
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ خَالِدٍ السُّلَمِيِّ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَه مِنَ اللّهِ مَنْزِلَةٌ لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلَاهُ اللهُ فِىْ جَسَدِه أَوْفِي مَالِه أَوْ فِي وَلَدِه ثُمَّ صَبَّرَه عَلى ذلِكَ يُبَلِّغُهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَه مِنَ اللهِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُوْ دَاوُدَ
মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ আস্ সুলামী থেকে বর্ণিতঃ
তাঁর দাদা বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর তরফ হতে কোন মানুষের জন্য যখন কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা সে ‘আমাল দিয়ে লাভ করতে পারে না, তখন আল্লাহ তাকে তার শরীরে অথবা তার সন্তান-সন্ততির উপর বিপদ ঘটিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে তাকে ধৈর্যধারণ করারও শক্তি দান করেন। যাতে সেরূপ মর্যাদা লাভ করতে পারে, যা আল্লাহর তরফ হতে তার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। [১]
(لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِه) ‘আমাল করার মাধ্যমে সে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছা সম্ভব না। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ হাদীসে প্রমাণিত হয় আনুগত্য তথা ভাল ‘আমাল মর্যাদা অর্জনের কারণ। কারও মতে জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর অনুগ্রহ। ত্বীবী বলেনঃ হাদীসে হৃদয়ঙ্গম হয় যে খাস করে বিপদাপদ সাওয়াব অর্জনের কারণ আনুগত্যের জন্য নয়। এজন্য বিপদ দ্বারা সর্বাপেক্ষা পরীক্ষা করা হয় নাবীদের, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যারা উত্তম তাদের।
১৫৬৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৬৯
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شِخِّيْرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مُثِّلَ ابْنُ ادَمَ وَإِلى جَنْبِه تِسْعٌ وَتِسْعُونَ مَنِيَّةً إِنْ أَخْطَأَتْهُ الْمَنَايَا وَقَعَ فِي الْهَرَمِ حَتّى يَمُوتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম সন্তানকে তার চারদিকে নিরানব্বইটি বিপদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এ বিপদগুলোর সবগুলোই তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে অন্তত বার্ধক্যজনিত বিপদে পতিত হয়। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে। [১]
মোদ্দা কথা হল দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা স্বরূপ আর কাফিরদের জন্য জান্নাত স্বরূপ আর বিপদাপদ গুনাহের জন্য কাফফারাহ্। সুতরাং মু’মিনের উচিত আল্লাহর ফায়সালা ও সিদ্ধান্তের উপর ধৈর্য ধারণ করা ও সন্তোষ প্রকাশ করা যা তার জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।
১৫৭০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭০
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «يَوَدُّ أَهْلُ الْعَافِيَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِيْنَ يُعْطى أَهْلُ الْبَلَاءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالْمَقَارِيْضِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত! [১]
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
‘‘নিশ্চয় যারা সবরকারী তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।’’ (সূরাহ্ আয্ যুমার ৩৯ : ১০)
বায়হাক্বীর শব্দ এসেছে এভাবে,
يَوَدُّ أَهْلُ الْعَافِيَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَّ جُلُوْدَهُمْ قُرِضَتْ بِالْمَقَارِيْضِ مِمَّا يَرَوْنَ مِنْ ثَوَابِ أَهْلِ الْبَلَاءِ.
ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে সুখ শান্তি ভোগী ব্যক্তিরা কামনা করে বলবে, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতিদান দেখে আহা যদি তাদের চামড়া কাঁচি দ্বার কাটা হত।
১৫৭১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭১
وَعَن عَامِرِ الرَّامِ قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ الْأَسْقَامَ فَقَالَ: «إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَصَابَهُ السَّقَمُ ثُمَّ أَعْفَاهُ الله مِنْهُ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضى مِنْ ذُنُوبِه وَمَوْعِظَةً لَه فِيمَا يَسْتَقْبِلُ. وَإِنَّ الْمُنَافِقَ إِذَا مَرِضَ ثُمَّ أُعْفِيَ كَانَ كَالْبَعِيْرِ عَقَلَه أَهْلُه ثُمَّ أَرْسَلُوهُ فَلَمْ يَدْرِ لِمَ عَقَلُوْهُ وَلَمْ يَدْرِ لِمَ أَرْسَلُوهُ» . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللّهِ وَمَا الْأَسْقَامُ؟ وَاللّهِ مَا مَرِضْتُ قَطُّ فَقَالَ: «قُمْ عَنَّا فَلَسْتَ مِنَّا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
‘আমির আর্ র-ম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন অসুখ-বিসুখ প্রসঙ্গে বললেন, মু’মিনের অসুখ হলে পরিশেষে আল্লাহ তাকে আরোগ্য করেন। এ অসুখ তার জীবনের অতীত গুনাহের কাফ্ফারাহ্। আর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা। কিন্তু মুনাফিকের অসুখ-বিসুখ হলে তাকেও আরোগ্য দান করা হয়, সেই উটের মতো যাতে মালিক বেঁধে রেখেছিলো তারপর ছেড়ে দিলো। সে বুঝলো না কেন তাকে বেঁধে রেখেছিল। আর কেনইবা ছেড়ে দিলো। এ সময় এক ব্যাক্তি বলে উঠলো, হে আল্লাহর রসূল! অসুখ-বিসুখ আবার কি? আল্লাহর শপথ আমার কোন সময় অসুখ হয়নি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাদের কাছ থেকে সরে যাও। তুমি আমাদের মধ্যে গণ্য নও। [১]
ত্বীবী বলেনঃ মু’মিন ব্যক্তি যখন অসুস্থ হয় এবং আরোগ্য লাভ করে তখন সে সতর্ক হয় এবং জানতে পারে যে, তার রোগ মূলত অতীতের গুনাহের কারণে হয়েছে, ফলে সে অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে সে পাপ কাজে আর অগ্রসর হয় না তখন এটা তার জন্য কাফফারাহ্। আর মুনাফিক্ব সে উপদেশ গ্রহণ করে না তার জন্য যা অর্জিত হয় আর সে সজাগ হয় না তার উদাসীনতা হতে এবং সে তাওবাও করে না। সুতরাং তার রোগ কোন উপকারে আসে না যা অতীতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আসবে।
১৫৭২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭২
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا دَخَلْتُمْ عَلَى الْمَرِيضِ فَنَفِّسُوا لَه فِي أَجَلِه فَإِنَّ ذلِكَ لَا يَرُدُّ شَيْئًا وَيُطَيِّبُ بِنَفْسِه». رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কোন রোগীকে দেখতে গেলে, তার জীবনের ব্যাপারে তাকে সান্ত্বনা যোগাবে, এ সান্ত্বনা যদিও তার তাক্বদীর পরিবর্তন করতে পারবে না। কিন্তু তার মন প্রশান্তি লাভ করবে। [১]
১৫৭৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৩
وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صَرَدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ قَتَلَه بَطْنُه لَمْ يُعَذَّبْ فِي قَبْرِه» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে তার ‘পেটের অসুখ’ হত্যা করেছে, তাকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হবে না। [১]
মা'নাবী বলেনঃ ক্ববরে শাস্তি দেয়া হবে না অন্য কোন স্থানেও শাস্তি দেয়া হবে না, কেননা কবর হল আখিরাতের প্রথম স্তর আর প্রথমে যদি সহজ হয় তাহলে পরে আরও সহজ হবে। সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে এসেছে শাহীদের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে তবে ঋণ তা মানুষের অধিকার।
১৫৭৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৪
عَنْ أنَسٍ قَالَ: كَانَ غُلَامٌ يَهُودِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ ﷺ فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ يَعُودُه فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِه فَقَالَ لَه: «أَسْلِمْ» . فَنَظَرَ إِلى أَبِيْهِ وَهُوَ عِنْدَه فَقَالَ: أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ. فَأَسْلَمَ. فَخَرَجَ النَّبِيُّ ﷺ وَهُوَ يَقُولُ: «الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِىْ أَنْقَذَه مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী যুবক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। [১]
(أَنْقَذَه مِنَ النَّارِ) এটা প্রমাণ করে খাদেমের ইসলাম গ্রহণ করা শুদ্ধ হয়েছে। আর বালক যখন কুফরকে বুঝতে পারে আর এর উপর মারা যায় তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
১৫৭৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৫
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ عَادَ مَرِيضًا نَادى مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ: طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلًا». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন মালাক (ফেরেশতা) তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক তোমার পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি মনযিল তৈরি করে নিলে। [১]
১৫৭৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৬
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ عَلِيًّا خَرَجَ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ ﷺ فِي وَجَعِهِ الَّذِىْ تُوُفِّيَ فِيهِ فَقَالَ النَّاسُ: يَا أَبَا الْحَسَنِ كَيْفَ أَصْبَحَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ؟ قَالَ: أَصْبَحَ بِحَمْدِ الله بَارِئًا. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন, সে অসুখের সময় একদিন ‘আলী (রাঃ) তাঁর কাছ থেকে বের হয়ে এলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আবু হাসান! আজ সকালে আল্লাহর রসূলের অবস্থা কেমন রয়েছে? ‘আলী (রাঃ) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ সকাল ভালই যাচ্ছে। [১]
১৫৭৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৭
وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِىْ رَبَاحٍ قَالَ: قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِي الله عَنهُ: أَلَا أُرِيْكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجنَّةِ؟ فَقُلْتُ: بَلى. قَالَ: هذِهِ الْمَرْأَةُ السَّوْدَاءُ أَتَتِ النَّبِيَِّ ﷺ فَقَالَتْ: إِنِّىْ أُصْرِعُ وَإِنِّىْ أَتَكَشَفُ فَادْعُ اللهَ تَعَالى ليْ. قَالَ: «إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ تَعَالَى أَنْ يُعَافِيَكِ» فَقَالَتْ: أَصْبِرُ فَقَالَتْ: إِنِّىْ أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللّهَ أَنْ لَا أَتَكَشَّفَ فَدَعَا لَهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে একবার বললেন, হে ‘আত্বা! আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এ কালো মহিলাটিকে দেখো। এ মহিলাটি একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত। রোগের ভয়াবহতার ফলে আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তার কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তুমি চাও, সবর করতে পার। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর তুমি চাইলে, আমি তোমার আরোগ্যের জন্য দু’আ করব। আল্লাহ যেন তোমাকে ভাল করে দেন। জবাবে মহিলাটি বলল, আমি সবর করব। পুনরায় মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। দু’আ করুন আমি যেন উলঙ্গ হয়ে না পড়ি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু’আ করলেন। [১]
১৫৭৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৮
وَعَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا جَاءَهُ الْمَوْتُ فِي زَمَنِ رَسُولِ اللّهِ ﷺ فَقَالَ رَجُلٌ: هَنِنْئًا لَه مَاتَ وَلَمْ يُبْتَلَ بِمَرَضٍ فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «وَيْحَكَ وَمَا يُدْرِيكَ لَوْ أَنَّ اللّهَ ابْتَلَاهُ بِمَرَضٍ فَكَفَّرَ عَنهُ مِنْ سَيِّئَاتِه» . رَوَاهُ مَالِكٌ مُرْسَلًا
ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হলো। এ সময় আর এক ব্যক্তি মন্তব্য করল, লোকটির ভাগ্য ভাল। মারা গেল কিন্তু কোন রোগে ভুগতে হল না। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আহ্! তোমাকে কে বলল, লোকটির ভাগ্য ভাল? যদি আল্লাহ তা’আলা লোকটিকে কোন রোগে ফেলতেন, আর তার গুনাহ মাফ করে দিতেন তাহলেই না সবচেয়ে ভাল হতো! [১]
১৫৭৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৭৯
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ وَالصَّنَابِحِيِّ أَنَّهُمَا دَخَلَا عَلى رَجُلٍ مَرِيضٍ يَعُودَانِه فَقَالَا لَه: كَيفَ أَصْبَحْتَ قَالَ أَصْبَحْتُ بِنِعْمَةٍ. فَقَالَ لَه شَدَّادٌ: أَبْشِرْ بِكَفَّارَاتِ السَّيِّئَاتِ وَحَطِّ الْخَطَايَا فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «إِنَّ اللّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ إِذَا أَنَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِىْ مُؤْمِنًا فَحَمِدَنِىْ عَلى مَا ابْتَلَيْتُه فَإِنَّه يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِه ذلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّه مِنَ الْخَطَايَا. وَيَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالى: أَنَا قَيَّدْتُ عَبْدِىْ وَابْتَلَيْتُه فَأَجْرُوا لَه مَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَه وَهُوَ صَحِيْحٌ». رَوَاهُ اَحْمَدُ
শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একবার তাঁরা দু’জন এক রোগীকে দেখতে গেলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ সকালটা তোমার কেমন যাচ্ছে? রোগীটি বলল, আল্লাহর রহ্মতে ভালই। তার কথা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ ও অপরাধ মাফ হবার শুভ সংবাদ! কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মু’মিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করবে, সে রোগশয্যা হতে সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে উঠবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দী করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। [১]
১৫৮০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮০
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا كَثُرَتْ ذُنُوبُ الْعَبْدِ وَلَمْ يَكُنْ لَه مَا يُكَفِّرُهَا مِنَ الْعَمَلِ ابْتَلَاهُ اللّهُ بِالْحَزَنِ لِيُكَفِّرَهَا عَنهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দার গুনাহ যখন বেশী হয়ে যায় এবং এসব গুনাহের কাফ্ফারার মতো যথেষ্ট নেক ‘আমাল তার না থাকে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বিপদে ফেলে চিন্তাগ্রস্ত করেন। যাতে এ চিন্তাগ্রস্ততা তার গুনাহের কাফ্ফারাহ্ হয়ে যায়। [১]
১৫৮১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮১
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ عَادَ مَرِيْضًا لَمْ يَزَلْ يَخُوضُ الرَّحْمَةَ حَتّى يَجْلِسَ فَإِذَا جَلَسَ اغْتَمَسَ فِيْهَا» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأحْمَدُ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য রওয়ানা হয় তখন সে আল্লাহর রহ্মাতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকে। যে পর্যন্ত রোগীর বাড়ী গিয়ে না পৌঁছে। আর বাড়ী পৌঁছার পর রহ্মাতের সাগরে ডুব দেয়। [১]
১৫৮২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮২
وَعَنْ ثَوْبَانَ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «إِذَا أَصَابَ أَحَدَكُمُ الْحُمّى فَإِنَّ الْحُمّى قِطْعَةٌ مِنَ النَّارِ فَلْيُطْفِئْهَا عَنْهُ بِالْمَاءِ فَلْيَسْتَنْقِعْ فِي نَهْرٍ جَارٍ وَلْيَسْتَقْبِلْ جِرْيَتَه فَيَقُولُ: بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ وَصَدَقَ رَسُوْلُكَ بَعْدَ صَلَاةِ الصُّبْحِ وَقَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَلْيَنْغَمِسْ فِيهِ ثَلَاثَ غَمْسَاتٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي ثَلَاثٍ فَخَمْسٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي خَمْسٍ فَسَبْعٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي سَبْعٍ فَتِسْعٍ فَإِنَّهَا لَا تَكَادَ تُجَاوِزُ تِسْعًا بِإِذْنِ اللّهِ عَزَّ وَجَلَّ». رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো জ্বর হলে জ্বর আগুনের অংশ, আগুনকে পানি দিয়ে নিভানো হয়। সে যেন ফাজ্রের সলাতের পর সূর্য উঠার আগে প্রবাহিত নদীতে ঝাঁপ দেয় আর ভাটার দিকে এগুতে থাকে। এরপর বলে, হে আল্লাহ! শেফা দান করো তোমার বান্দাকে। সত্যবাদী প্রমাণ করো তোমার রসূলকে। ওই ব্যক্তি যেন নদীতে তিনদিন তিনটি করে ডুব দেয়। এতে যদি তার জ্বর না সারে তবে পাঁচদিন। তাতেও না সারলে, সাতদিন। সাতদিনেও যদি আরোগ্য না হয় তাহলে নয়দিন। আল্লাহর রহমাতে জ্বর-এর অধিক আগে বাড়বে না। [১]
১৫৮৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৩
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: ذُكِرَتِ الْحُمّى عِنْدَ رَسُولِ اللّهِ ﷺ فَسَبَّهَا رَجُلٌ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «لَا تَسُبَّهَا فَإِنَّهَا تَنْفِي الذُّنُوبَ كَمَا تَنْفِي النَّارُ خَبَثَ الْحَدِيدِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একবার জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এ সময় এক লোক জ্বরকে গালি দিলো। এ কথা শুনে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর গুনাহ দূর করে যেভাবে (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়। [১]
১৫৮৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৪
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ عَادَ مَرِيْضًا فَقَالَ:«أَبْشِرْ فَإِنَّ اللّهَ تَعَالى يَقُولُ: هِيَ نَارِي أُسَلِّطُهَا عَلى عَبْدِي الْمُؤْمِنِ فِي الدُّنْيَا لِتَكَوُنَ حَظَّه مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ». رَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ والْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيْمَانِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার এক অসু্স্থ লোককে দেখতে গিয়ে বললেন, সুসংবাদ! আল্লাহ তা’আলা বলেন, তা আমার আগুন। আমি দুনিয়াতে এ আগুনকে আমার মু’মিন বান্দার কাছে পাঠাই। তা’ এজন্যই যাতে এ আগুন ক্বিয়ামাতে তার জাহান্নামের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়। [১]
১৫৮৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৫
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «إِنَّ الرَّبَّ سُبْحَانَه وَتَعَالى يَقُولُ: وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ لَا أُخْرِجُ أَحَدًا مِنَ الدُّنْيَا أُرِيْدُ أَغْفِرَ لَه حَتّى أَسْتَوْفِيَ كُلَّ خَطِيئَةٍ فِي عُنُقِه بِسَقَمٍ فِي بَدَنِه وَإِقْتَارٍ فِي رِزْقِه». رَوَاهُ رَزِيْنٌ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার মহান রব বলেন, আমার ইয্য্ত ও প্রতাপের শপথ, আমি ততক্ষণ কাউকে দুনিয়া হতে বের করে আনি না যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে দেবার ইচ্ছা করি। যতক্ষণ না তার ঘাড়ে থাকা প্রত্যেকটি গুনাহকে তার দেহের কোন রোগ অথবা রিয্ক্বের সংকীর্ণতা দিয়ে বিনিময় করে দিই। [১]
১৫৮৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৬
وَعَنْ شَقِيْقٍ قَالَ: مَرِضَ عَبْدُ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ فَعُدْنَاهُ فَجَعَلَ يَبْكِىْ فَعُوتِبَ فَقَالَ: إِنِّي لَا أَبْكِىْ لِأَجْلِ الْمَرَضِ لِأَنِّىْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «الْمَرَضُ كَفَّارَةٌ» وَإِنَّمَا أَبْكِىْ أَنَّه أَصَابَنِىْ عَلى حَالِ فَتْرَةٍ وَلَمْ يُصِبْنِىْ فِىْ حَالِ اجْتِهَادٍ لِأَنَّه يُكْتَبُ لِلْعَبْدِ مِنَ الْأَجْرِ إِذَا مَرِضَ مَا كَانَ يُكْتَبُ لَه قَبْلَ أَنْ يَمْرَضَ فَمَنَعَه مِنْهُ الْمَرَضُ. رَوَاهُ رَزِيْنٌ
শাক্বীক্ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) অসুস্থ হলে আমরা দেখতে গেলাম। আমাদেরকে দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। তা দেখে তাঁকে কেউ কেউ খারাপ বলতে লাগলেন। সে সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) বললেন, আমি অসুখের জন্য কাঁদছি না। আমি শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অসুখ হচ্ছে গুনাহের কাফ্ফারাহ্। আমি বরং কাঁদছি এজন্য যে, এ অসুখ হল আমার বৃদ্ধ বয়সে। আমার শক্তি-সামর্থ্য থাকার সময়ে হল না। কারণ মানুষ যখন অসুস্থ হয় তার জন্য সে সাওয়াব লেখা হয়, যা অসুস্থ হবার আগে তার জন্য লেখা হত। এজন্যই যে অসুস্থতা তাকে ওই ‘ইবাদাত করতে বাধা দেয়। [১]
১৫৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৭
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ لَا يَعُوْدُ مَرِيْضًا إِلَّا بَعْدَ ثَلَاثٍ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রোগীকে (রোগগ্রস্ত হবার পর) তিনদিন না হওয়া পর্যন্ত দেখতে যেতেন না। [১]
আর গাযযালী ইয়াহ্ইয়াউল উলূমে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন আনাস (রাঃ)-এর হাদীসটি খুবই দুর্বল তথা অগ্রহণ্যযোগ্য।
১৫৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৮
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: إِذَا دَخَلْتَ عَلى مَرِيْضٍ فَمُرْهُ يَدْعُو لَكَ فَإِنَّ دُعَاءَه كَدُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি কোন অসুস্থ লোককে দেখতে গেলে, তাকে তোমার জন্য দু’আ করতে বলবে। কারণ রুগ্ন লোকের দু’আ মালায়িকার (ফেরেশ্তাদের) দু’আর মতো। [১]
‘আলক্বামাহ্ বলেনঃ হাদীসের মর্মার্থ রোগীর নিকট দু‘আর আবেদন করা মুসতাহাব, কারণ সে নিরুপায় আর অন্যদের চেয়ে তার দু‘আ দ্রুত কবূল হয়।
১৫৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৮৯
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مِنَ السُّنَّةِ تَخْفِيفُ الْجُلُوسِ وَقِلَّةُ الصَّخَبِ فِي الْعِيَادَةِ عِنْدَ الْمَرِيضِ قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ لَمَّا كَثُرَ لَغَطُهُمْ وَاخْتِلَافُهُمْ: «قُومُوا عَنِّىْ» رَوَاهُ رَزِيْنٌ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রোগীকে দেখতে যাবার পর নিয়ম হলো, রোগীর কাছে বসা। তার কাছে উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলা। ইবনু ‘আব্বাস তাঁর এ কথার সমর্থনে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুশয্যায় তাঁর পাশে লোকেরা বেশি কথাবার্তা ও মতভেদ শুরু করলে তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে সরে যাও। [১]
وَاخْتِلَافُهُمْ: قُومُوا عَنِّي তাদের মতানৈক্যের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা আমার নিকট হতে উঠে যাও। ত্বীবী বলেন, আর এটা ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর সময়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)হতে বর্ণিত যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর যন্ত্রণা উপস্থিত হল এমতাবস্থায় ঘরে অনেক লোক উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ‘উমার (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিয়ে আসো আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখব, এর পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, অন্য বর্ণনায় অনেকে বললেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে বসেছে আর তোমাদের কুরআনে রয়েছে তোমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ঠ হবে। ঘরের অধিবাসীরা মতানৈক্য করল এবং ঝগড়ায় লিপ্ত হল। তাদের মধ্যে কেউ বলল, তোমরা তার নিকট কিছু উপস্থিত কর যাতে তোমাদের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখবেন তাদের মধ্যে, আবার কেউ বললেন অন্য কিছু তথা লিখার প্রয়োজন নেই যখন কথাবার্তা ও মতভেদ বেশী হয়ে গেল তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার নিকট হতে উঠে যাও। (বুখারী, মুসলিম)
১৫৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯০
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «اَلْعِيَادَةُ فَوَاقُ نَاقَةٍ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগী দেখতে অল্প সময় নেবে। [১]
১৫৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯১
وَفِي رِوَايَةِ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ مُرْسَلًا: «أَفْضَلُ الْعِيَادَةِ سُرْعَةُ الْقِيَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব- থেকে বর্ণিতঃ
রোগীকে দেখার উত্তম নিয়ম হলো তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া। [১]
১৫৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯২
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ عَادَ رَجُلًا فَقَالَ لَه: «مَا تَسْتَهِيْ؟» قَالَ: أَشْتَهِيْ خُبْزَ بُرٍّ. قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «مَنْ كَانَ عِنْدَه خُبْزُ بُرٍّ فَلْيَبْعَثْ إِلى أَخِيهِ» . ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «إِذَا اشْتَهى مَرِيْضُ أَحَدِكُمْ شَيْئًا فَلْيُطْعِمْهُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার একজন রোগীকে দেখতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি খেতে তোমার মন চায়? জবাবে সে বলল, গমের রূটি। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কাছে গমের রুটি আছে সে যেন তা তার ভাইয়ের জন্য পাঠায়। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কোন রোগী কিছু খেতে চাইলে, তাকে তা খাওয়াবে। [১]
ত্বীবী বলেনঃ রোগীর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রয়েছে আল্লাহর ওপর যে, তিনি আরোগ্য দিবেন অথবা মৃত্যু আসন্ন। কারও মতে সূক্ষ্ম হিকমাহ্ রয়েছে, তা হল রোগী যখন কোন কিছু কামনা করে যদিও তা স্বল্প ক্ষতি করে তথাপিও তা উপকারে আসে।
১৫৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৩
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ تُوُفِّيَ رَجُلٌ بِالْمَدِينَةِ مِمَّنْ وُلِدَ بِهَا فَصَلّى عَلَيْهِ النَّبِيُِّ ﷺ فَقَالَ: «يَا لَيْتَه مَاتَ بِغَيْرِ مَوْلِدِه» . قَالُوا وَلِمَ ذَاكَ يَا رَسُولَ اللّهِ؟ قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا مَاتَ بِغَيْرِ مَوْلِدِه قِيسَ لَه مِنْ مَوْلِدِه إِلَى مُنْقَطَعِ أَثَرِه فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মাদীনায় মারা গেলেন, মাদীনায়ই তার জন্ম হয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযায় সলাত আদায় করালেন। তারপর তিনি বললেন, হায়! এ ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোন জায়গায় মৃত্যুবরণ করত। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, কেন? হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, কোন লোক জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোথাও মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুস্থান ও জন্মস্থানের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের জায়গা হিসেবে গণ্য করা হয়। [১]
১৫৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৪
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَوْتُ غُرْبَةٍ شَهَادَةٌ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সফররত অবস্থায় মারা যায় সে শাহীদ। [১]
১৫৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৫
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ مَاتَ مَرِيْضًا مَاتَ شَهِيدًا أَوْ وُقِيَ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَغُدِيَ وَرِيحَ عَلَيْهِ بِرِزْقِه مِنَ الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রোগে ভুগে মারা যায়, সে শাহীদ হয়ে মারা গেল; তাকে ক্ববরের ফিতনাহ্ হতে রক্ষা করা হবে। এছাড়াও সকাল-সন্ধ্যায় তাকে জান্নাত থেকে রিয্ক্ব দেয়া হবে। [১]
ইবনু হাজার বলেন, এটা সাধারণভাবে সকল রোগের উপর প্রযোজ্য হবে তবে অন্য হাদীস সীমাবদ্ধ করেছে যে, পেটজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করবে তাকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হবে না। সকাল সন্ধ্যা রিয্ক্ব (রিজিক/রিযিক) দেয়া হবে অর্থ সর্বদাই রিযক্ব দেয়া হবে। আল্লাহর বাণীঃ أُكُلُهَا دَائِمٌ ‘‘সর্বদাই রিযক্ব প্রদান করা হবে।’’ (সূরাহ্ আর্ রাদ ১৩ : ৩৫)
সম্ভাবনা রয়েছে নির্ধারিত দু’সময়ে তাদের জন্য খাস রিয্ক্বের ব্যবস্থা রয়েছে।
১৫৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৬
عَن الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «يَخْتَصِمُ الشُّهَدَاءُ وَالْمُتَوَفَّوْنَ عَلى فُرُشِهِمْ إِلى رَبِّنَا فِي الَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنَ الطَّاعُونِ فَيَقُولُ الشُّهَدَاءُ: إِخْوَانُنَا قُتِلُوْا كَمَا قُتِلْنَا وَيَقُوْلُ: الْمُتَوَفُّوْنَ عَلى فُرُشِهِمْ إِخْوَانُنَا مَاتُوا عَلى فُرُشِهِمْ كَمَا مِتْنَا فَيَقُولُ رَبُّنَا: انْظُرُوا إِلى جِرَاحِهِمْ فَإِنْ أَشْبَهَتْ جِرَاحُهُمْ جِرَاحَ الْمَقْتُولِيْنَ فَإِنَّهُمْ مِنْهُمْ وَمَعَهُمْ فَإِذَا جِرَاحُهُمْ قَدْ أَشْبَهَتْ جِرَاحَهُمْ». رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ
‘ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাহীদগণ এবং যারা বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারীদের ব্যাপারে ঝগড়া করবে। শাহীদগণ বলবে, “এরা আমাদের ভাই। কেননা আমাদেরকে যেভাবে নিহত করা হয়েছে, এভাবে এদেরকেও নিহত করা হয়েছে।” আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীগণ বলবে, “এরা আমাদের ভাই। এ লোকেরা এভাবে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যেভাবে আমরা মরেছি।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এদের জখমগুলোকে দেখা হোক। এদের জখম যদি শাহীদদের জখমের মতো হয়ে থাকে, তাহলে এরাও শাহীদদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের সাথে থাকবে। বস্তুত যখন জখম দেখা হবে, তখন তা’ শাহীদদের জখমের মতো হবে। [১]
১৫৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৭
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «الْفَارُّ مِنَ الطَّاعُونِ كَالْفَارِّ مِنَ الزَّحْفِ وَالصَّابِرُ فِيهِ لَه أَجْرُ شَهِيدٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ রোগ চড়িয়ে পড়লে ওখান থেকে ভেগে যাওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে ভেগে যাবার মতো। প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেখানেই ধৈর্য ধরে অবস্থানকারী শাহীদের সাওয়াব পাবে। [১]
১৫৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৮
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا يَتَمَنّى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّه أَنْ يَزْدَادَ خَيْرًا وَإِمَّا مُسِيْئًا فَلَعَلَّه أَنْ يَّسْتَعْتِبَ» . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারন সে নেক্কার হলে আরো বেশী নেক কাজ করার সুযোগ পাবে। আর বদকার হলে, (সে তাওবাহ করে) আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাসিল করার সুযোগ পাবে। [১]
হাফিয ইবনে হাজার বলেন, হাদীসে মৃত্যু কামনা হতে বিরত থাকার ইঙ্গিত বহন করে যে মৃত্যুর মাধ্যমে ‘আমালের দরজা বিচ্ছিন্ন বা বন্ধ হয়ে যায় আর জীবিত অবস্থা হল ‘আমাল করার মাধ্যম। সুতরাং ‘আমালের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব অর্জন করবে। যদি সে আল্লাহর একত্ববাদের উপর অবিচল থাকে আর এটা সর্বোত্তম ‘আমাল।
১৫৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৫৯৯
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا يَتَمَنّى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ وَلَا يَدْعُ بِه مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَه إِنَّه إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ أَمَلُه وَإِنَّه لَا يَزِيْدُ الْمُؤْمِنَ عُمْرُه إِلَّا خَيْرًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে আর তা আসার পূর্বে তাকে যেন আহ্বান না জানায়, কারন সে যখন মৃত্যুবরণ করবে তার ‘আমাল বন্ধ হয়ে যাবে। আর মু’মিনের হায়াত বাড়লে তার ভাল কাজই বৃদ্ধি পায়। [১]
(مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَه) মৃত্যু আসার পূর্বে হাফিয ইবনে হাজার বলেন, মূলত তাৎপর্যটি এরূপ যে, মৃত্যু অবধারিত হলে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাতের সন্তুষ্টির কামনা করা নিষেধ করে না আর না মৃত্যু চাওয়া আল্লাহর নিকট আর এ বিষয়ে ইমাম বুখারী হাদীস সাজিয়েছেন- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের পরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস।
(اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَأَلْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْأَعْلى) হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর এবং দয়া কর আর সর্বোচচ বন্ধুর সাথে মিলিত কর, সুতরাং এটা ইঙ্গিত করে যে, মৃত্যু কামনা নিষেধাজ্ঞা হল মৃত্যু আসার পূর্বে।
(لَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمْرُه إِلَّا خيرا) মু’মিনের বয়স বা জীবন শুধুমাত্র কল্যাণ ও নেকীই বৃদ্ধি করে বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ, আল্লাহর নি‘আমাতসমূহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর আদেশসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। হাফিয ইবনে হাজার বলেন, প্রশ্ন উঠে কখনো কখনো খারাপ ‘আমাল করে ফলে জীবনে বদ ‘আমালই বৃদ্ধি পায়। জবাবে বলা হয় মু’মিন দ্বারা কামিল মু’মিন উদ্দেশ্য অথব মু’মিন ব্যক্তি ‘আমাল করার মাধ্যমে জীবনের সকল গুনাহ মিটিয়ে নেয় বা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে বিরত থাকে আর অপরদিকে ভাল ‘আমালের দ্বারা খারাপ ‘আমাল মিটিয়ে সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে আর যতক্ষণ ঈমান অবশিষ্ট থাকে এর দ্বারা আনুপাতিক হারে সাওয়াব বাড়তে থাকে এবং পাপ কমতে থাকে বা মিটতে থাকে।
১৬০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০০
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَه فَإِنْ كَانَ لَابُدَّ فَاعِلًا فَلْيَقُلِ: اللّهُمَّ أَحْيِنِىْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِّيْ وَتَوَفَّنِىْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِّىْ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কোন দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা করতেই হয় তাহলে যেন সে বলে, “আল্ল-হুম্মা আহয়িনী মা-কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল লী ওয়াতা ওয়াফফানী ইযা-কা-নাতিল ওয়াফা-তু খায়রাল লী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জীবনে আমার জন্য যতক্ষণ কল্যাণকর হয়, আমাকে বাঁচিয়ে রেখ। আর আমাকে মৃত্যুদান করো যদি মৃত্যুই আমার জন্য কল্যাণকর হয়।) [১]
এটা প্রামাণ করে দুনিয়ার মুসীবাতের কারণ। অনুরূপ ‘উমার (রাঃ) বিন খাত্ত্বাব (রাঃ)ও করেছেন যেমনটি মুয়াত্ত্বা মালিকে এসেছে, (اَللّهُمَّ كَبُرَتَ سِنِّيْ وَضَعُفَتْ قُوِّتِىْ وَانَتَشَرَتْ رَعِيْتِيْ فَاقْبِضْنِيْ إِلَيْكَ غَيْرَ مُضِيْعٍ وَلَا مُفْرِطٍ) ‘উমার (রাঃ) দু‘আ করতেন, হে আল্লাহ! আমার বয়স বেড়েছে শক্তি কমেছে এবং আমার অধিনস্থ প্রজাগণও বেড়েছে আমাকে তোমার নিকট উঠিয়ে নাও কোন প্রকার ক্ষতি সাধন ও সীমালঙ্ঘন ছাড়াই।
১৬০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০১
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللّهِ أَحَبَّ اللّهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللّهِ كَرِهَ اللّهُ لِقَاءَه» فَقَالَتْ عَائِشَةُ أَوْ بَعْضُ أَزْوَاجِه: إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ: «لَيْسَ ذلِكَ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرِضْوَانِ اللّهِ وَكَرَامَتِه فَلَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَه فَأَحَبَّ لِقَاءَ اللّهِ وَأَحَبَّ اللّهُ لِقَاءَه وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا حَضَرَ بُشِرَ بِعَذَابِ اللهِ وَعُقُوْبَتِه فَلَيْسَ شَيْءٌ أَكَرَه إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَه فَكَرِهَ لِقَاءَ اللّهِ وَكَرِهَ اللهُ لِقَاءَه». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য অপছন্দ করেন। (এ কথা শুনে) ‘আয়িশাহ অথবা তাঁর স্ত্রীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি তা নয়। বরং এর অর্থ হল। যখন মু’মিনের মৃত্যু আসে তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন সামনে তার এসব মর্যাদা হতে বেশী পছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে। আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তির মৃত্যু হাযির হলে, তাকে আল্লাহর ‘আযাব ও তার পরিণতির ‘খোশ খবর’ দেয়া হয়। তখন এ কাফির ব্যক্তির সামনে এসব খোশ খবরের চেয়ে বেশী অপছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে যেমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। [১]
খাত্ত্বাবী বলেন, বান্দার আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ভালোবাসার অর্থ হল দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়া আর দুনিয়াতে অবিরামভাবে প্রতষ্ঠিত থাকাকে অপছন্দ করা বরং তা হতে সফরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা। আর অপছন্দ হল এর বিপরীত।
(لِقَاءَ اللّهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য (১) পুনরুত্থান। যেমন, আল্লাহর বাণীঃ قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَاءِ اللّهِ ‘‘নিশ্চয়ই তারা ধ্বংস হয়ে যারা পুনরুত্থানকে মিথ্যা বলেছে।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ৩১)
(২) মৃত্যু। مَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ اللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللَّهِ لَآتٍ ‘‘যারা আল্লাহর সাক্ষাত লাভের কামনা করে সে আল্লাহর নির্ধারিত মৃত্যু অবধারিত।’’ (সূরাহ্ আল ‘আনকাবূত ২৯ : ৫)
(৩) জাযারী নিহায়াতে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন অবিনশ্বর আখিরাতের দিকে ধাবিত হওয়া আর কামনা করা আল্লাহর নিকট যা আছে এবং দুনিয়াতে দীর্ঘ অবস্থান না থাকা ও দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি না থাকা।
(إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ) আমরা তো মৃত্যুকে না পছন্দই করি। সা‘দ বিন হিশাম-এর বর্ণনায়
فَقُلْتُ يَا نَبِيَ اللهِ أَكَرَاهِيَّةُ الْمَوْتِ فَكُلُّنَا يَكْرَهُ الْمَوْتَ أَيْ بِحَسْبِ الْطَبَعِ وَخَوْفًا مِمَّا بَعْدَه.
আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! মৃত্যুর অপছন্দ তো আমরা সবাই করি অর্থাৎ মৃত্যুর পরের অবস্থার ভয়ে।
(لَيْسَ ذلِكَ) তথা বিষয়টি এমন না যেমনটি ধারণা করছ, হে ‘আয়িশাহ্! বরং মু’মিনের মৃত্যুর অপছন্দ মৃত্যুর কঠিনতর ভয়ের জন্য আল্লাহর সাক্ষাতের অপছন্দ নয় বরং অপছন্দটি হল মৃত্যুর অপছন্দ দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়া যখন মৃত্যুর উপস্থিতির সময় আল্লাহর শাস্তির সুসংবাদ দেয়া হয়।
হাদীসের শিক্ষাসমূহঃ
* মরণাপন্ন ব্যক্তি যখন তার ওপর আনন্দের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ পায় এটা দলীল যে তাকে কল্যাণের সুসংবাদ দেয়া হয়। অনুরূপ এর বিপরীত।
* আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ভালোবাসা মৃত্যু কামনা করার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না। কেননা মৃত্যু কামনা করার নিষেধাজ্ঞা বিশেষ পরিস্থিতির সাথে সংশ্লিষ্ট। বরং মরণোম্মুখ সময় মৃত্যু কামনা করা মুস্তাহাব।
* সুস্থ থাকাবস্থায় মৃত্যুকে অপছন্দ করা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে অপছন্দ করে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য আখিরাতের অফুরন্ত নি‘আমাতের উপর সে তিরস্কৃত বা নিন্দনীয়। আর যে এই ভয়ে মৃত্যুকে অপছন্দ করে যে ‘আমাল কমতি হওয়ার কারণে শাস্তি পাওয়ার আশংকা রয়েছে আর সকল দায় দায়িত্ব থেকে মুক্তি হতে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারেনি এবং যে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে যা ওয়াজিব এ ব্যক্তির জন্য মৃত্যুকে অপছন্দ করা বৈধ। তবে যে ব্যক্তি ভাল ‘আমালের প্রস্ত্ততির দিকে দ্রুত ধাবিত হবে এমনকি যখন মৃত্যু এসে উপস্থিত হবে তখন মৃত্যুকে অপছন্দ করবে না বরং আল্লাহর সাক্ষাত লাভের কামনা করবে।
১৬০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০২
وَفِىْ رِوَايَةِ عَائِشَةَ: وَالْمَوْتَ قَبْلَ لِقَاءِ اللهِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
“মৃত্যু হলো আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাতের অগ্রবর্তী”। [১]
১৬০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৩
وَعَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ أَنَّه كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ: «مُسْتَرِيْحٌ أَوْ مُسْتَرَاحٌ مِنْهُ» فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللّهِ مَا الْمُسْتَرِيْحُ وَالْمُسْتَرَاحُ مِنْهُ؟ فَقَالَ: «الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلى رَحْمَةِ اللّهِ وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيْحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وْالْبَلَادُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক দিন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সামনে দিয়ে একটি জানাযাহ্ বহন করা হচ্ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জানাযাহ্ দেখে) বললেন, এ ব্যক্তি শান্তি পাবে, অথবা এর থেকে অন্যরা শান্তি পাবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসুল! শান্তি পাবে কে, অথবা ওই ব্যক্তি কে যার থেকে অন্যরা শান্তি পাবে? তিনি(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর মু’মিন বান্দা মৃত্যুর দারা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট হতে আল্লাহর রহমাতের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে সে শান্তি পায়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে তার অনিষ্ট ও ফাসাদ হতে মানুষ, শহর-বন্দর গাছ-পালা ও জন্তু – জানোয়ার সবকিছুই শান্তি লাভ করে। [১]
নাবাবী আরও বলেন, পশু-পাখীর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি হতে শাস্তি লাভের অর্থ সে তাদেরকে কষ্ট দেয়, প্রহার করে তাদের ওপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেয় আবার কোন কোন সময় তাদেরকে উপাসে রাখে ও আরও অন্যান্য।
আর দেশ ও বৃক্ষরাজির শান্তি লাভের উদ্দেশ্য হল পাপের কারণে বৃষ্টি বন্ধ হয় ফলে তাদের পানি পান করার অধিকার তাদের কাছে হতে ছিনিয়ে নেয়া হয়। ত্বীবী বলেন, দেশ ও বৃক্ষরাজির শান্তি লাভের অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পাপিষ্ঠ লোকের বিদায়ের ফলে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি বর্ষণ করান এবং তার পৃথিবী বৃক্ষরাজি ও প্রাণীদেরকে সজীব করে তোলেন পাপের কারণে বৃষ্টি বন্ধের পর।
১৬০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৪
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ بِمَنْكِبِىْ فَقَالَ: «كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ» . وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ: إِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা হাত দিয়ে আমার দু’কাঁধ ধরলেন। তারপর বললেন, দুনিয়ায় তুমি এমনভাবে থাকো, যেমন-তুমি একজন গরীব অথবা পথের পথিক। (এরপর থেকে) ইবনু ‘উমার (মানুষদেরকে) বলতেন, “সন্ধ্যা হলে আর সকালের অপেক্ষা করবে না। আর যখন সকাল হবে, সন্ধার অপেক্ষা করবে না। নিজের সুস্থতার সুযোগ গ্রহন করবে অসুস্থতার আগে ও জীবনের সুযোগ গ্রহন করবে মৃত্যুর আগে। [১]
কারও মতে উদ্দেশ্য হলঃ মু’মিন ব্যক্তি দুনিয়াতে অবস্থান করবে বিদেশীর অবস্থানের মতো। সুতরাং তার অন্তরকে সম্পর্ক রাখবে না দূরবর্তী দেশের কোন কিছুর সাথে বরং সম্পর্ক রাখবে এমন এক দেশের সাথে সেখানে সে ফিরে যাবে। আর দুনিয়াকে প্রয়োজন মিটানোর অবস্থান হিসেবে গ্রহণ করবে আর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করবে তার আসল দেশের প্রত্যাবর্তনের জন্য। এটাই হল গরীব বা বিদেশীর অবস্থা অথবা মুসাফিরের যে সে নির্ধারিত একটি স্থানে অবস্থান করে না বরং সর্বদাই স্থায়ী শহরের দিকে সফর করে যার অবস্থা দুনিয়াতে এরূপ তার চিন্তাই সফরে পাথেয় সংগ্রহকরণ আর দুনিয়া ভোগ বিলাস সামগ্রী গ্রহণ তার নিকট গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিরমিযীতে অতিরিক্ত বর্ণনা হিসেবে এসেছে,
فَإِنَّكَ لَا تَدْرِيْ يَا عَبْدَ اللهِ مَا اسْمُكَ غَدًا يَعْنِيْ لَعَلَّكَ غَدًا مِنَ الْأَمْوَاتِ دُوْنَ الْأَحْيَاءِ أَيْ لَا يَدْرِيْ هَلْ يُقَالُ لَكَ حَيٌّ أَوْ مَيِّتٌ؟
তুমি জান না হে ‘আবদুল্লাহ! আগামীকাল তোমার নাম কী হবে অর্থাৎ সম্ভবত জীবিত হতে বিদায় নিয়ে মৃতদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার তথা জানা থাকবে না তোমাকে কি মৃত্যু বা জীবিত বলা হবে।
আর হাকিমে ইবনে ‘আব্বাস-এর হাদীস মারফূ' সূত্রে
أَنَّ النَّبِيَّ - ﷺ - قَالَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُه اِغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابُكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتُكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغُكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتُكَ قَبْلَ مَوْتِكَ.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়কে গনীমাত মনে করবে পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে-
তোমার যৌবনকে বার্ধক্য আসার পূর্বে
তোমার সুস্থতাকে অসুস্থ আসার পূর্বে
তোমার স্বচ্ছলতাকে দরিদ্র আসার পূর্বে
তোমার অবসরতাকে ব্যস্ততা আসার পূর্বে
তোমার জীবনকে মৃত্যু আসার পূর্বে।
১৬০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৫
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَبْلَ مَوْتِه بِثَلَاثَةِ أَيَّامٍ يَقُولُ: «لَا يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللّه» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মৃত্যুর তিনদিন আগে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভাল ধারণা পোষণ করা ছাড়া তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুবরণ না করে। [১]
খাত্ত্বাবী বলেন, কারও আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা হল তা তার ভাল ‘আমাল। তিনি আরও বলেন, তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে ভাল ধারণার মাধ্যমে তোমাদের ‘আমালকে সুন্দর কর। কারও আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা হলে তার ‘আমালও খারাপ হয়ে যায়।
আর কখনও কখনও আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা হল তার ক্ষমা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
ত্বীবী বলেন, এখন তোমরা তোমাদের ‘আমালসমূহকে সুন্দর কর শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সময় আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা হবে। আর যদি মৃত্যুর পূর্বে ‘আমাল খারাপ হয় তাহলে মৃত্যুর সময় আল্লাহ সম্পর্কে কুধারণা হবে।
১৬০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৬
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِن شِئْتُم أَنْبَأْتُكُمْ مَا أَوَّلُ مَا يَقُولُ اللّهُ لِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ وَمَا أَوَّلُ مَا يَقُولُونَ لَه؟» قُلْنَا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللّهِ قَالَ: «إِنَّ اللّهَ يَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ هَلْ أَحْبَبْتُمْ لِقَائِيْ؟ فَيَقُولُونَ نَعَمْ يَا رَبَّنَا فَيَقُولُ: لِمَ؟ فَيَقُولُونَ: رَجَوْنَا عَفْوَكَ وَمَغْفِرَتَكَ. فَيَقُولُ: قَدْ وَجَبَتْ لَكُمْ مَغْفِرَتِىْ». رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ وَأَبُو نُعَيْمٍ فِي الْحِلْيَةِ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাদেরকে উদ্দেশ করে) বললেন, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামাতের দিন মু’মিনদেরকে সর্বপ্রথম যে কথাটি বলবেন, তোমরা চাইলে আমি তা’ তোমাদের বলে দিতে পারি। আমরা বললাম, অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, আল্লাহ মু’মিনদেরকে বলবেন, তোমরা কি আমার সাক্ষাৎকে ভালবাসতে? মু’মিনগণ আরয করবেন, হে আমাদের রব অবশ্যই (আমরা আপনার সাক্ষাতকে ভালবাসতাম)! আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা কেন আমার সাক্ষাতকে ভালবাসতে? মু’মিনরা বলবে, আমরা আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত কামনা করেছি, তাই। এ কথা শুনে আল্লাহ বলবেন, তোমাদের জন্য মাগফিরাত মঞ্জুর করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। [১]
১৬০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৭
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ الْمَوْتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ বলেছেনঃ তোমরা দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস, মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করো। [১]
১৬০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৮
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ نَبِيَّ اللّهِ ﷺ قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ لِأَصْحَابِه: «اسْتَحْيُوا مِنَ اللّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ» قَالُوا: إِنَّا نَسْتَحْيِىْ مِنَ اللّهِ يَا نَبِيَّ اللّهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ قَالَ: «لَيْسَ ذلِكَ وَلَكِنَّ مَنِ اسْتَحْيى مِنَ اللّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ فَلْيَحْفَظِ الرَّأْسَ وَمَا وَعى وَلْيَحْفَظِ الْبَطْنَ وَمَا حَوى وَلْيَذْكُرِ الْمَوْتُ وَالْبِلى وَمَنْ أَرَادَ الْاخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا فَمَنْ فَعَلَ ذلِكَ فَقَدِ اسْتَحْيى مِنَ اللّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আল্লাহর সাথে লজ্জা করার মত লজ্জা করো। সহাবীগণ বললেন, আমরা আল্লাহর সাথে লজ্জা করছি, হে আল্লাহর রসূল! সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লজ্জার মতো লজ্জা এটা নয় যা তোমরা বলছ। বরং প্রকৃত লজ্জা এমন যে, যখন ব্যক্তি লজ্জার হাক্ব আদায় করে সে যেন মাথা ও মাথার সাথে যা কিছু আছে তার হিফাযত করে। পেট ও পেটের সাথে যা কিছু আছে তারও হিফাযত করে। তার উচিৎ মৃত্যু ও তার হাড়গুলো পঁচে গলে যাবার কথা স্মরন করে। যে ব্যক্তি পরকালের কল্যান চায়, সে যেন দুনিয়ার চাকচিক্য ও জৌলুশ ছেড়ে দেয়। অতএব, যে ব্যক্তি এসব কাজ করল, সে ব্যক্তিই আল্লাহ সাথে লজ্জার হাক্ব আদায় করল। [১]
(وَمَا وَعى) আর মাথা তার যাকে সংরক্ষণ করছে তথা যে সমস্তকে মাথা একত্রিত করেছে যেমন জিহবা চক্ষু কান এগুলোকে সংরক্ষণ করেছে যা হালাল না তা হতে।
(وَلْيَحْفَظِ الْبَطْنَ وَمَا حَوى) আপন পেটকে হারাম ভক্ষণ হতে রক্ষা করেছে এবং পেটের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্ত্তকেও যেমন লজ্জাস্থান দু’পা, দু’হাত এবং হৃদয় আর এদের সংরক্ষণ বা হিফাযাতের বিষয় হল এগুলোকে গুনাহের কাজে ব্যবহার করবে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করবে। ত্বীবী বলেন, তোমরা যা মনে করছ তা প্রকৃত লজ্জা নয় আল্লাহর হতে বরং প্রকৃত লজ্জা হল যে নিজেকে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা হিফাযাত করা।
১৬০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬০৯
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَال قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «تُحْفَةُ الْمُؤْمِنِ الْمَوْتُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত্যু হল মু’মিনের উপহার। [১]
ত্বীবী বলেন, জেনে রাখ মৃত্যু হল বড় সৌভাগ্যে পৌঁছার মাধ্যম এবং সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিকারী হওয়ার উপায় আর এটা অন্যতম মাধ্যম হল স্থায়ী নি‘আমাতে পৌঁছার আর তা হলে এক বাড়ি হতে অন্য বাড়িতে স্থানান্তর যদি মৃত্যুকে বাস্তবে এক প্রকার ধ্বংস দেখায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দ্বিতীয়বার জন্ম এবং তা জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যে দরজা যা তার দিকে পৌঁছায় আর যদি মৃত্যু না হত তা হলে জান্নাত হত না।
১৬১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১০
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الْمُؤْمِنُ يَمُوتُ بِعَرَقِ الْجَبِيْنِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মু’মিন কপালের ঘামের সাথে মৃত্যুবরণ করে।[১]
* মৃত্যুর কষ্টের মুখোমুখি হওয়ায় কপালের ঘাম ঝড়ে আর এর মাধ্যমে গুনাহ হতে মৃত ব্যক্তি মুক্ত হয়ে উঠে।
* মৃত্যুর সময় মু’মিন ব্যক্তির এ কাঠিন্যতার কারণে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
* মু’মিন ব্যক্তির এমনটি হয় তার লজ্জার কারণে যখন সুসংবাদ আসে তার নিকট অথচ সে পাপকাজ করেছে এর জন্য সে লজ্জিত হয় আর এই লজ্জার কারণে তার কপালে ঘাম ঝড়ে।
* আর এটা মু’মিনের মৃত্যুর আলামত বা চিহ্ন যদিও সে না বুঝে তা।
* কারও মতে এটা কিনায়া তথা রূপক আর হালাল রুযী উপার্জনে কষ্টের কারণে।
১৬১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১১
وَعَنْ عُبَيْدِ اللّهِ بْنِ خَالِدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَوْتُ الْفُجَاءَةِ أَخْذَةُ الْأَسَفِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَزَادَ الْبَيْهَقِيُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيمَانِ وَرَزِيْنٌ فِي كِتَابِه: «أَخْذَةُ الأَسَفِ للْكَافِرِ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤمنِ
উবায়দুল্লাহ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আকস্মিক মৃত্যু (আল্লাহর গযবের) পাকড়াও। [১]
১৬১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১২
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: دَخَلَ النَّبِيُ عَلى شَابٍّ وَهُوَ فِي الْمَوْتِ فَقَالَ: «كَيْفَ تَجِدُكَ؟» قَالَ: أرْجُواللهَ يَا رَسُولَ اللّهِ وَإِنِّىْ أَخَافُ ذُنُوْبِىْ فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا يَجْتَمِعَانِ فِىْ قَلْبِ عَبْدٍ فِىْ مِثْلِ هذَا الْمَوْطِنِ إِلَّا أَعْطَاهُ اللّهُ مَا يَرْجُو وَامَنَه مِمَّا يَخَافُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন এক যুবকের কাছে গেলেন। যুবকটি সে সময়ে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, এখন তোমার মনের অবস্থা কী? যুবকটি উত্তর দিলো, আমি আল্লাহর রহমাতের প্রত্যাশী হে আল্লাহর রসূল! কিন্তু এরপরও আমি আমার গুনাহখাতার জন্য ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ সময়ে এ যুবকের মতো যে আল্লাহর বান্দার মনে ভয় ও আশার সঞ্চার হয় আল্লাহ তা’আলা তাকে তাই দান করেন, সে গুনাহকে ভয় করে এবং আশা পোষন করে। [১]
১৬১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৩
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا تَمَنَّوُا الْمَوْتَ فَإِنَّ هَوْلَ الْمُطَّلَعِ شَدِيدٌ وَإِنَّ مِنَ السَّعَادَةِ أَنْ يَطُولَ عُمْرُ الْعَبْدِ وَيَرْزُقَهُ اللّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْإِنَابَةَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃত্যু কামনা করো না। কেননা মৃত্যু যন্ত্রনা খুবই কঠিন জিনিস। মানুষের জীবন দীর্ঘ হওয়া নিশ্চয় সৌভাগ্যেরই ব্যাপার। আল্লাহ তা’আলা তাকে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে নেন। [১]
১৬১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৪
وَعَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ قَالَ: جَلَسْنَا إِلى رَسُولِ اللّهِ ﷺ فَذَكَّرَنَا وَرَقَّقَنَا فَبَكى سَعْدُ بْنُ أَبِىْ وَقَّاصٍ فَأَكْثَرَ الْبُكَاءَ فَقَالَ: يَا لَيْتَنِىْ مِتُّ. فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «يَا سَعْدُ أَعِنْدِىْ تَتَمَنَّى الْمَوْتَ؟» فَرَدَّدَ ذلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ: «يَا سَعْدُ إِنْ كُنْتَ خُلِقْتَ لِلْجَنَّةِ فَمَا طَالَ عُمْرُكَ وَحَسُنَ مِنْ عَمَلِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলাম। তিনি আমাদের অনেক নসীহাত করলেন। আখিরাতের ভয় দেখিয়ে আমাদের মনকে বিগলিত করে ফেললেন। এ অবস্থায় সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস কাঁদতে লাগলেন এবং বেশ কতক্ষন কাঁদলেন। তারপর বললেন, হায়! আমি যদি (শিশুকালেই) মারা যেতাম (তাহলে তো গুনাহ করতাম না আখিরাতের ‘আযাব হতেও মুক্ত থাকতাম)। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে সা’দ! তুমি আমার সামনে মৃত্যু কামনা করলে? এ বাক্যটি তিনি তিনবার বললেন। তারপর তিনি বললেন, সা’দ! তোমাকে যদি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়ে থাকে, তাহলে তোমার বয়স যত দীর্ঘ হবে এবং যত ভাল ‘আমাল তুমি করবে ততই তোমার জন্য উত্তম হবে। [১]
১৬১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৫
عَن حَارِثَةَ بْنِ مُضَرَّبٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلى خَبَّابٍ وَقَدِ اكْتَوى سَبْعًا فَقَالَ: لَوْلَا أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُول: «لَا يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ» لَتَمَنَّيْتُه. وَلَقَدْ رَأَيْتُنِىْ مَعَ رَسُولِ اللّهِ ﷺ مَا أَمْلِكُ دِرْهَمًا وَإِنَّ فِي جَانِبِ بَيْتِيَ الْانَ لَأَرْبَعِينَ أَلْفَ دِرْهَمٍ قَالَ ثُمَّ أُتِيَ بِكَفَنِه فَلَمَّا رَاهُ بَكى وَقَالَ لَكِنَّ حَمْزَةَ لَمْ يُوجَدْ لَه كَفَنٌ إِلَّا بُرْدَةٌ مَلْحَاءُ إِذَا جُعِلَتْ عَلى رَأْسِه قَلَصَتْ عَنْ قَدَمَيْهِ وَإِذَا جُعِلَتْ عَلى قَدَمَيْهِ قَلَصَتْ عَنْ رَأْسِه حَتّى مُدَّتْ عَلى رَأْسِه وَجُعِلَ عَلى قَدَمَيْهِ الْإِذْخِرُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ إِلَّا أَنَّه لَمْ يَذْكُرْ: ثُمَّ أُتِي بِكَفْنِه إِلى اخِرِه
হারিসাহ্ ইবনু মুযাররাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার খাব্বাব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম (সে সময়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন)। তিনি তার শরীরের সাত জায়গায় দাগ লাগিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ‘তোমরা মৃত্যু কামনা করো না’ কথাটি না শুনতাম, তাহলে অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমার নিজেকে এরুপ পেয়েছি যে, আমি একটি দিরহামেরও মালিক ছিলাম না। আর এখন আমার ঘরের কোণেই চল্লিশ হাজার দিরহাম পড়ে আছে। হারিসাহ বলেন, তারপর খাবাব্বের কাছে তার কাফনের কাপড় আনা হলো (যা খুবই উত্তম দামী কাপড় ছিল) তিনি তা দেখে কাঁদতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, যদিও এ কাপড় জায়িয কিন্তু হামযাহ (রাঃ)-এর জন্য পুরো কাফনের কাপড় পাওয়া যায়নি। শুধু একটি কালো ও সাদা পুরাতন চাদর ছিল। তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা খালি হয়ে যেত। আবার পা ঢাকলে মাথা খালি হয়ে যেত। অবশেষে এ চাদর দিয়েই মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। আর পা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল ইযখার ঘাস দিয়ে। [১]
১৬১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৬
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাকে কালিমায়ে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) তালকীন দিও। [১]
নাবাবী বলেন, এ তালকীনের বিষয়টি নুদব তথা ভাল এরই উপর ‘উলামারা ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর অধিকবার মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থাপন করাকে তারা অপছন্দ করেছেন যাতে মৃত ব্যক্তির কঠিন অবস্থার কারণে বিষয়টি ঘৃণা করতে পারে আর এমন কিছু বলতে পারে যা শোভনীয় নয়।
তবে হাদীসের ভাষ্যমতে তালকীন করা ওয়াজিব, জমহূর ‘উলামারা এ মতে গেছেন বরং কিছু সংখ্যক মালিকীরা বলেছেন সবাই এ মতের উপর ঐকমত্য হয়েছেন।
لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ কারও মতে কালিমা দ্বারা কালিমায়ে শাহাদাত। তবে জমহূররা শুধুমাত্র لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ এর উপর সীমাবদ্ধ করেছেন। আবার কেউ محمد رسول الله বৃদ্ধি করেছেন তার সাথে। কেননা তাওহীদ স্মরণ করা উদ্দেশ্য আর যদি মুমূর্ষু ব্যক্তি কাফির হয় তাহলে তাকে কালিমায়ে শাহাদাত তালকীন দিতে হবে, কেননা তা ছাড়া সে মুসলিম বলে গণ্য হবে না।
আমি ভাষ্যকার বলি কালিমা لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ ইসলাম ও যিকর এর কালিমা কাফিররা যখন বলে ইসলাম প্রবেশের জন্য তখন তা কালিমা ইসলাম ও কালিমা শাহাদাত সবই উদ্দেশ্য আর যখন মুসলিমরা তা দ্বারা যিকর করে তখন যিকর সকল যিকিরের (জিকিরের) মতো। যেমনটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ সর্বোত্তম যিকর হল لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ আর দৃশ্যত অধ্যায়ের হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য কালেমাতুয্ যিকর তাতে ‘‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’ শর্ত না।
১৬১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৭
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيْضَ أَو الْمَيِّت فَقُوْلُوْا خَيْرًا فَإِن الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلى مَا تَقُوْلُوْنَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে কিংবা কোন মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে ভাল ভাল কথা বলবে। কারণ তোমরা তখন যা বলো, (তা’ শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলেন। (মুসলিম) [১]
১৬১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৮
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ تُصِيْبُه مُصِيْبَةٌ فَيَقُولُ مَا أَمَرَهُ اللّهُ بِه: ﴿إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ﴾ [البقرة 2 : 156]. اللّهُمَّ أَجِرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا إِلَّا أَخْلَفَ اللّهُ لَه خَيْرًا مِنْهَا». فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ قَالَتْ: أَيُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ مِنْ أَبِىْ سَلَمَةَ؟ أَوَّلُ بَيْتِ هَاجَرَ إِلى رَسُولِ اللّهِ ﷺ ثُمَّ إِنِّي قُلْتُهَا فَأَخْلَفَ اللّهُ لِىْ رَسُوْلَ اللّهِ ﷺ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উম্মুল মু’মিনীন সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম (কোন ছোট-বড়) বিপদে পতিত হয় এবং আল্লাহ তা’আয়ালার ইচ্ছা হলে এ কথাগুলো বলে, “ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলায়হি র-জি’ঊন [অর্থাৎ “আমরা আল্লাহ্রই জন্য এবং তাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন”-(সূরাহ্ আল বাক্বারাহ ২ : ১৫৬)]।“ আল্ল-হুম্মা আজির্নী ফী মুসীবাতি ওয়া ওয়াখলিফলী খয়রাম মিন্হা” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার বিপদের জন্য আমাকে সওয়াব দাও। আর [এ বিপদে] যা আমি হারিয়েছি তার জন্য উত্তম বিনিময় আমাকে দান করো) আল্লাহ তা’আলা তাকে এ জিনিসের উত্তম বিনিময় দান করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন আবূ সালামাহ্ (অর্থাৎ তাঁর স্বামী) মারা গেলেন, আমি বললাম, “আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে উত্তম কোন মুসলিম হতে পারে? এ আবূ সালামাহ্, যিনি সকলের আগে সপরিবারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হিজরত করেছেন। তারপর আমি উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়েছিলাম। বস্তুত আল্লাহ তা’আলা আমাকে আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করেছেন (অর্থাৎ তাঁর সাথে উম্মু সালামার বিয়ে হয়েছে)। (মুসলিম)[১]
১৬১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬১৯
وَعَن أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: دَخَلَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ عَلى أَبِىْ سَلَمَةَ قَدْ شَقَّ بَصَرَه فَأَغْمَضَه ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الرُّوْحَ إِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ» فَضَجَّ نَاسٌ مِنْ أَهْلِه فَقَالَ: «لَا تَدْعُوْا عَلَى انْفُسِكُمْ إِلَّا بِخَيْرٍ فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلى مَاتَقُوْلُوْنَ» ثُمَّ قَالَ: «اللّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِىْ سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَه فِي الْمَهْدِيِّيْنَ وَاخْلُفْهُ فِىْ عَقِبِه فِي الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَه يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَأَفْسِحْ لَه فِي قَبْرِه وَنَوِّرْ لَه فِيْهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামার কাছে আসলেন যখন তাঁর চোখ স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রুহ কবয করা হয় তখন তার দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়। আবূ সালামার পরিবার (এ কথা শুনে বুঝল, আবূ সালামাহ ইন্তিকাল করেছেন) কাঁদতে ও চিল্লাতে লাগল। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা মাইয়্যিতের জন্য কল্যাণের দু’আ করো। কারণ তোমরা ভাল মন্দ যে দু’আই করো (তা ’শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ‘আমীন’ বলে। তারপর তিনি এ দু’আ পাঠ করলেন, “ আল্ল-হুম্মাগফির লিয়াবী সালামাহ, ওয়ারফা’ দারাজতাহূ ফিল মাহ্দীয়্যিন, ওয়াখ্লুফ্হু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গ-বিরীন, ওয়াগ্ফির লানা-ওয়ালাহূ ইয়া-রব্বাল আ’-লামীন, ওয়া আফসিহ লাহূ ফী ক্বব্রিহী, ওয়ানাওয়ির লাহূ ফিহী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবূ সালামাকে মাফ করে দাও। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। তার ছেড়ে যাওয়া লোকদের জন্য তুমি সহায় হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও। তার জন্য ক্ববরকে নূরের আলোতে আলোকিত করে দাও।)। (মুসলিম) [১]
আর হাদীসে দলীল হিসেবে প্রমাণিত হয় যারা বলে যে, নিশ্চয় রূহ এর সূক্ষ্ম আকৃতি রয়েছে যা শরীরে বিশ্লেষিত এবং সে তা শরীক হতে বের হওয়ার ফলে জীবন চলে আয়। আর তা অন্য বস্ত্তর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত না যেমনটি অনেকে মনে করে। আরও দলীল প্রমাণিত হয় যে, মৃতুর সময় মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ ও তার পরিবারের জন্য দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণ চেয়ে দু‘আ করা। আর প্রমাণিত যে, ক্ববরে মৃত ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
১৬২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২০
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ حِينَ تُوُفِّيَ سُجِّيَ بِبُرْدٍ حِبْرَةٍ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র শরীরের উপর ইয়ামিনী চাদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে রাখা হয়েছিল।” (বুখারী,মুসলিম) [১]
১৬২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২১
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنْ كَانَ اخِرُ كَلَامِه لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শেষ কথা, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবূ দাঊদ) [১]
ইবনে রাসলান বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের বিষয়টি যদি সে পাপী হয় এবং তাওবাকারী না হয় তাহলে প্রথমবারেই (জান্নাতে প্রবেশ) আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তির পরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। দ্বিতীয়তঃ সম্ভাবনা রয়েছে তার শেষ বাক্য কালিমার জন্য সম্মান স্বরূপ তাকে ক্ষমা করে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যা অন্য মু’মিন ব্যক্তির ক্ষেত্রে শেষ বাক্য কালিমা পড়ার তাওফীক হয়নি। আমি ভাষ্যকার এর নিকট দ্বিতীয় মতটিই গ্রহণযোগ্য।
১৬২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২২
وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «اِقْرَؤُوْا سُوْرَةَ (يس) عَلى مَوْتَاكُمْ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়ো। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১]
উল্লেখিত মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার বর্ণিত হাদীসটি (لقنوا موتاكم لا إله إلا الله) ‘‘তোমরা তোমাদের মৃত্যু আসন্ন ব্যক্তিদেকে তালকীন করবে।’’ হাদীসের মতঃ আর এও সম্ভাবনা রয়েছে কারও মতে ক্ববরের নিকট পড়া প্রথমটিই বেশি গ্রহণযোগ্য কতকগুলো কারণে।
প্রথমতঃ (لقنوا موتاكم لا إله إلا الله) ‘‘তোমরা তোমাদের আসন্ন মৃত্যু ব্যক্তিদের তালকীন করবে (لا إله إلا الله) এর সাদৃশ্যতুল্য।
দ্বিতীয়তঃ মুমূর্ষু ব্যক্তি বা আসন্ন মৃত ব্যক্তি এ সূরার মাধ্যমে উপকৃত হয়, কেননা এতে তাওহীদ আখিরাতে এবং জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে তাওহীদবাদদের জন্য আর ঈর্ষা রয়েছে যে ব্যক্তি এর উপর মৃত্যুবরণ করছে তার বক্তব্য يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ হায় আফসোস আমার জাতিরা যদি জানতে পারত যে আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সুতরাং রূহ সুসংবাদ পায় তার দ্বারা আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন আর এ সূরাটি কুরআনের হৃদয়। আসন্ন মৃত ব্যক্তির সামনে এটা পড়া বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
তৃতীয়তঃ আর এ ‘আমালটি অনেক পূর্ব হতে চলে আসছে বর্তমান পর্যন্ত যে মুমূর্ষু ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়া।
চতুর্থতঃ যদি সাহাবীরা বুঝতেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী তোমরা সূরাহ্ ইয়াসীন পড় মৃত ব্যক্তির ওপর এর দ্বারা উদ্দেশ্য ক্ববরের নিকট পড়বে। তাহলে তারা তা পড়া হতে বিরত হতেন না। আর এটা প্রসিদ্ধ সাহাবীরা পড়তেন না।
পঞ্চমতঃ উদ্দেশ্য হল দুনিয়া হতে বিদায়ের সময় শেষ মুহূর্তে মনোযোগ সহকারে শোনানোর মাধ্যমে উপকার দেয়া। আর ক্ববরের উপর তা পাঠ করতে এর কোন সাওয়াব আসে না। কেননা সাওয়াব হলে পড়া বা শ্রবণের মাধ্যমে আর তা ‘আমাল বলে গণ্য এবং তা মৃত্যুর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
১৬২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৩
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَبَّلَ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ وَهُوَ مَيِّتٌ وَهُوَ يَبْكِىْ حَتّى سَالَ دُمُوعُ النَّبِيِّ ﷺ عَلى وَجْهِ عُثْمَانَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ’উসমান ইবনু মায’উন-এর মৃত্যুর পর তাঁকে চুমু দিয়েছেন। এরপর অঝোরে কেঁদেছেন, এমনকি তাঁর চোখের পানি ‘উসমানের চেহারায় টপকে টপকে পড়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১]
১৬২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৪
وَعَن عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ قَبَّلَ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ مَيِّتٌ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ বাক্র সিদ্দীক্ব রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে (চেহারা মুবারাকে) চুমু খেয়েছিলেন। (তিরমিযী,ইবনু মাজাহ্)
[১]
১৬২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৫
وَعَنْ حُصَيْنِ بْنِ وَحْوَحٍ أَنَّ طَلْحَةَ بْنَ الْبَرَاءِ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ يَعُودُه فَقَالَ: «إِنِّي لَا أَرى طَلْحَةَ إِلَّا قَدْ حَدَثَ بِهِ الْمَوْتُ فَآذِنُونِي بِه وَعَجِّلُوا فَإِنَّه لَا يَنْبَغِىْ لِجِيفَةِ مُسْلِمٍ أَنْ تُحْبَسَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
হুসায়ন ইবনু ওয়াহ্ওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ত্বলহাহ্ ইবনু বারা অসুস্থ হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখোতে গেলেন। তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে বললেন, আমার মনে হচ্ছে ত্বলহার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অতএব তার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাকে খবর দিবে (যাতে আমি জানাযাহ্ আদায়ের জন্য আসতে পারি) আর তোমরা তার দাফন-কাফনের কাজ তাড়াতাড়ি করবে। কারণ মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে বেশীক্ষণ ফেলে রাখা ঠিক নয়। (আবূ দাঊদ) [১]
১৬২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৬
وَعَن عَبْدِ اللّهِ بْنِ جَعْفَرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيْمُ سُبْحَانَ اللّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللّهِ كَيْفَ لِلْأَحْيَاءِ؟ قَالَ: «أَجْوَدُ وْأَجْوَدُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃত্যুপথযাত্রীকে এ কালিমার তালকীন দেবে, “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল হালীমুল কারীম, সবুহা-নাল্ল-হি রব্বিল ‘আরশিল ‘আযীম, আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন”। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসুল! সুস্থ জীবিত ব্যক্তিদেরকে এ কালিমা শিখানো কেমন? তিনি বললেন, খুব উত্তম। খুব উত্তম।(ইবনু মাজাহ্) [১]
১৬২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৭
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الْمَيِّتُ تَحْضُرُهُ الْمَلَائِكَةُ فَإِذَا كَانَ الرَّجُلُ صَالِحًا قَالُوا: اخْرُجِىْ أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الطَّيِّبِ اخْرُجِىْ حَمِيدَةً وَأَبْشِرِىْ بِرَوْحٍ وَرَيْحَانٍ وَرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ فَلَا تَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذلِكَ حَتّى تَخْرُجَ ثُمَّ يُعْرَجُ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ فَيُفْتَحَ لَهَا فَيُقَالُ: مَنْ هذَا؟ فَيَقُولُونَ: فُلَانٌ فَيُقَالُ: مَرْحَبًا بِالنَّفسِ الطَّيِّبَةِ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الطَّيِّبِ ادْخُلِىْ حَمِيدَةً وَأَبْشِرِي بِرَوْحٍ وَرَيْحَانٍ وَرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ فَلَا تَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذلِكَ حَتّى تَنْتَهِيَ إِلَى السَّمَاءِ الَّتِىْ فِيْهَا اللّهُ فَإِذَا كَانَ الرَّجُلُ السُّوءُ قَالَ: اخْرُجِىْ أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيْثَةُ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الْخَبِيثِ اخْرُجِىْ ذَمِيمَةً وَأَبْشِرِىْ بِحَمِيمٍ وَغَسَّاقٍ وَاخَرَ مِنْ شَكْلِه أَزْوَاجٌ فَمَا تَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذلِكَ حَتّى تَخْرُجَ ثُمَّ يُعْرَجُ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ فَيُفْتَحُ لَهَا فَيُقَالُ: مَنْ هذَا؟ فَيُقَالُ: فُلَانٌ فَيُقَالُ: لَا مَرْحَبًا بِالنَّفْسِ الْخَبِيثَةِ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الْخَبِيثِ ارْجِعِىْ ذَمِيمَةً فَإِنَّهَا لَا تُفْتَحُ لَه أَبْوَابُ السَّمَاءِ فَتُرْسَلُ مِنَ السَّمَاءِ ثُمَّ تَصِيرُ إِلَى الْقَبْر». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট (ফেরেশতাগণ) আগমন করেন। যদি সে ব্যক্তি নেক ও সালিহ হয় মালাকগণ বলেন, পবিত্র দেহে অবস্থানকারী হে পবিত্র নাফ্স! বের হয়ে আসো। আল্লাহ ও মাখলূক্বের নিকট তুমি প্রশংসিত হয়েছ। তোমার জন্য আনন্দ ও প্রশান্তির, জান্নাতের পবিত্র রিয্ক্বের, আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের শুভ সংবাদ, আল্লাহ তোমার ওপরে রাগান্বিত নন। তার নিকট মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) অনবরত এ কথা বলতে থাকবেন যে পর্যন্ত রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর মালায়িকাহ্ তা নিয়ে আকাশের দিকে চলে যাবেন। আকাশের দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হয়, যেখানে আল্লাহ আছেন। আর যদি লোকটা খারাপ হয় (অর্থাৎ কাফির হয়) তখন রূহ কবয করার মালাক (ফেরেশতা) বলেন, হে খবীস আত্মা যা খবীস শরীরে ছিলে, এ অবস্থায়ই শরীর হতে বের হয়ে এসো। তোমার জন্য গরম পানি, পুঁজ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট আহারের সুসংবাদ। এই মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে বার বার মালায়িকাহ্ এ কথা বলতে থাকবে, যে পর্যন্ত তার রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর তারা তার রূহকে আসমানের দিকে নিয়ে যাবে। তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি কে? জবাব দেয়া হবে , ‘অমুক ব্যক্তি’। এবার বলা হবে, এ খবীস জীবনের জন্য কোন স্বাগতম নেই,যা অপবিত্র দেহে ছিল। তুমি ফিরে চলে যাও, তোমার বদনাম করা হয়েছে। তোমার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হবে না। বস্তুত তাকে আসমান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং সে ক্ববরের মধ্যে এসে পড়বে। (ইবনে মাজাহ্) [১]
১৬২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৮
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «إِذَا خَرَجَتْ رُوْحُ الْمُؤْمِنِ تَلَقَّاهَا مَلَكَانِ يُصْعِدَانِهَا» . قَالَ حَمَّادٌ: فَذَكَرَ مِنْ طِيْبِ رِيْحِهَا وَذَكَرَ الْمِسْكَ قَالَ: «وَيَقُولُ أَهْلُ السَّمَاءِ: رُوحٌ طَيِّبَةٌ جَاءَتْ مِنْ قِبَلِ الْأَرْضِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْكِ وَعَلى جَسَدٍ كُنْتِ تُعَمِّرِينَه فَيُنْطَلَقُ بِه إِلى رَبِّه ثُمَّ يَقُولُ: انْطَلِقُوا بِه إِلى اخِرِ الْأَجَلِ». قَالَ: «وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا خَرَجَتْ رُوحُه» قَالَ حَمَّادٌ: وَذَكَرَ مِنْ نَتَنِهَا وَذَكَرَ لَعْنَهَا. «وَيَقُولُ أَهْلُ السَّمَاءِ: رُوحٌ خَبِيثَةٌ جَاءَتْ مِنْ قِبَلِ الْأَرْضِ فَيُقَالُ: انْطَلِقُوا بِه إِلى اخِرِ الْأَجَلِ» قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: فَرَدَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رَيْطَةً كَانَت عَلَيْهِ عَلى أَنْفِه هَكَذَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মুমিনদের রূহ (তার শরীর থেকে) বের হয়, তখন দু’জন মালাক (ফেরেশতা) তার কাছে আসেন, তাকে নিয়ে আকাশের দিকে রওনা হন। পরবর্তী রাবী হাম্মাদ বলেন, এরপর তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) ঐ ব্যক্তির রূহের খুশবু ও মিস্কের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন আকাশবাসীরা বলবে, পাক-পবিত্র রূহ জমিন হতে এসেছে। তারপর তার রূহকে উদ্দেশ করে বলবে, তোমার ওপর আল্লাহ রহ্মাত করুন এবং শরীরের প্রতি, কারণ তুমি একে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছ। এরপর এরা একে আল্লাহর কাছে আর্শে আযীমে নিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ হুকুম দেবেন, তাকে নিয়ে যাও, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কাফির ব্যক্তির রূহ তার শরীর থেকে বের করে আনা হয়, অতঃপর তিনি তার দুর্গন্ধের কথা উল্লেখ করলেন। তার প্রতি লা'নাতের উল্লেখ করলেন। তারপর বললেন, যখন তাদের রূহ আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে তখন আকাশবাসী বলেন, একটি নাপাক রূহ জমিন হতে এসেছে, তাকে নিয়ে যাও এবং কিয়ামাত পর্যন্ত তাকে রেখে দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদরের কোণা তার নাকের উপর টেনে দিলেন (যেন দুর্গন্ধ হতে বাঁচতে চাইলেন)। (মুসলিম) [১]
১৬২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬২৯
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا حُضِرَ الْمُؤْمِنُ أَتَتْ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ بِحَرِيرَةٍ بَيْضَاءَ فَيَقُولُونَ: اخْرُجِىْ رَاضِيَةً مَرْضِيًّا عَنْكِ إِلى رَوْحِ اللّهِ وَرَيْحَانٍ وَرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ فَتَخْرُجُ كَأَطْيَبِ رِيحِ الْمِسْكِ حَتّى إِنَّه لَيُنَاوِلُه بَعْضُهُمْ بَعْضًا حَتّى يَأْتُوا بِه أَبْوَابَ السَّمَاءِ فَيَقُولُونَ: مَا أَطْيَبَ هذِهِ الرِّيحَ الَّتِىْ جَاءَتْكُمْ مِنَ الْأَرْضِ فَيَأْتُونَ بِه أَرْوَاحَ الْمُؤْمِنِيْنَ فَلَهُمْ أَشَدُّ فَرَحًا بِه مِنْ أَحَدِكُمْ بِغَائِبِهِ يَقْدُمُ عَلَيْهِ فَيَسْأَلُونَه: مَاذَا فَعَلَ فُلَانٌ مَاذَا فَعَلَ فُلَانٌ؟ فَيَقُولُونَ: دَعُوهُ فَإِنَّه كَانَ فِىْ غَمِّ الدُّنْيَا. فَيَقُولُ: قَدْ مَاتَ أَمَا أَتَاكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: قَدْ ذُهِبَ بِه إِلى أُمِّهِ الْهَاوِيَةِ. وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا احْتُضِرَ أَتَتْهُ مَلَائِكَةُ الْعَذَابِ بِمِسْحٍ فَيَقُو لُونَ: أَخْرِجِىْ سَاخِطَةً مَسْخُوْطًا عَلَيْكِ إِلى عَذَابِ اللّهِ عَزَّ وَجَلَّ. فَتَخْرُجُ كَأَنْتَنِ رِيْحٍ جِيْفَةٍ حَتّى يَأْتُوْنَ بِه بَابَ الْأَرْضِ فَيَقُولُونَ: مَا أَنْتَنَ هذِهِ الرِّيحَ حَتّى يَأْتُوْنَ بِه أَرْوَاحَ الْكُفَّارِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মুমিনের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে আসেন এবং রূহকে বলেন, তুমি আল্লাহ তা'আলার ওপর সন্তুষ্ট, আল্লাহও তোমার ওপর সন্তুষ্ট এ অবস্থায় দেহ হতে বেরিয়ে এসো এবং আল্লাহ তা'আলার করুণা, উত্তম রিয্ক্ব ও পরওয়ারদিগারের দিকে চলো। তিনি তোমার ওপর রাগাম্বিত নন। বস্তুতঃ মিস্কের খুশবুর মতো রূহ দেহ হতে বেরিয়ে আসে। মালাকগণ সম্মানের সাথে তাকে হাতে হাতে নিয়ে চলে। এমনকি আসমানের দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসে। ওখানে মালাকগণ পরস্পর বলাবলি করেন, কি পবিত্র খুশবু জমিনের দিক হতে আসছে। তারপর তাকে মুমিনদের রূহের কাছে (ইল্লয়্যিনে) আনা হয়। ওই রূহগুলো এ রূহটিকে দেখে এভাবে খুশী হয়ে যায়, যেভাবে তোমাদের কেউ (সফর হতে ফিরে এলে তোমরা) এ সময় খুশী হও। তারপর সব রূহ এ রূহটিকে জিজ্ঞেস করে অমুক কি করে? অমুক কি করে তারা নিজেরা আবার বলাবলি করে, এখন এ রূহকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কিছু জিজ্ঞেস করো না)। এখন যে দুনিয়ার শোকতাপে আছে। তারপর একটু স্বস্তির পরে (সে নিজেই বলে) অমুক ব্যক্তি যার সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞেস করেছিলে, সে মরে গেছে। সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? রূহগুলো বলে, তাকে তো তার (উপযুক্ত স্থান) হাবিয়্যাহ্ জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। (ঠিক এভাবে কোন কফিরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তার কাছে আযাবের মালাক (ফেরেশতা) শক্ত চটের বিছানা নিয়ে আসেন। আর তার রূহকে বলেন, হে রূহ। আল্লাহর আযাবের দিকে বেরিয়ে এসো। এ অবস্থায় যে, তুমি আল্লাহর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলে, তিনিও তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট। তারপর রূহ তার (কাফির ব্যক্তির) দেহ থেকে পচা লাশের দুর্গন্ধ নিয়ে বেরিয়ে আসবে। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) একে জমিনের দরজার দিকে নিয়ে যাবে। সেখানে মালায়িকাহ্ বলবে, কত খারাপ এ দুর্গন্ধ। তারপর এ রূহটিকে কাফিরদের রূহের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। (আহমাদ, নাসায়ী) [১]
(فَيَقُولُونَ) কিছুসংখ্যক মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) অপর আসমানের মালায়িকার উত্তম সুগন্ধির ব্যাপারে আশ্চর্য হয়ে বলে, হাবিয়্যাহ্ হল নরকসমূহের নামের অন্যতম নরক। মনে হয় নরকটি খুব গভীরে- নরকবাসী পতিত হতে সেখানে অনেক সময় লাগে।
১৬৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩০
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِىْ جَنَازَة رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ وَجَلَسْنَا حَوْلَه كَأَنَّ عَلى رُؤُوْسِنَا الطَّيْرَ وَفِي يَدِه عُودٌ يَنْكُتُ بِه فِي الْأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَه فَقَالَ: اسْتَعِيذُوا بِاللّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْاخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مِنَ السَّمَاء مَلَائِكَة بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ حَتّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِه فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِىْ إِلى مَغْفِرَةٍ مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٍ» قَالَ: «فَتَخْرُجُ تَسِيْلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاءِ فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِىْ يَدِه طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِىْ ذلِكَ الْكَفَنِ وَفِىْ ذلِكَ الْحَنُوطِ وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلى وَجْهِ الْأَرْضِ» قَالَ: «فَيَصْعَدُوْنَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ - يَعْنِىْ بِهَا - عَلى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هذِهِ الرُّوْحُ الطَّيِّبُ فَيَقُولُوْنَ: فُلَانُ بْنِ فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِىْ كَانُوا يُسَمُّونَه بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتّى يَنْتَهَوْا بهَا إِلى سَمَاء الدُّنْيَا فَيَسْتَفْتِحُوْنَ لَه فَيُفْتَحَ لَه فَيُشَيِّعُه مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِىْ تَلِيهَا حَتّى يَنْتَهِىَ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ - فَيَقُولُ اللّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِىْ فِىْ عِلِّيِّينَ وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ وَمِنْهَا أَخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرى قَالَ: «فَتُعَادُ رُوْحُه فَيَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِه فَيَقُولُونَ لَه: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللهُ فَيَقُولُونَ لَه: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ فَيَقُولَانِ لَه: مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِىْ بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُول: هُوَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ فَيَقُولَانِ لَه: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللّهِ فَامَنْتُ بِه وَصَدَّقْتُ فَيُنَادِىْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ قَدْ صَدَقَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَه بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ» قَالَ: «فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا وَيُفْسَحُ لَه فِي قَبْرِه مَدَّ بَصَرِه» قَالَ: «وَيَأْتِيْهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طَيِّبُ الرِّيْحِ فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِىْ يَسُرُّكَ هذَا يَوْمُكَ الَّذِىْ كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ لَه: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيء بِالْخَيْرِ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ فَيَقُولُ: رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ حَتّى أَرْجِعَ إِلى أَهْلِىْ وَمَالِىْ». قَالَ: «وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْاخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مِنَ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ مَعَهُمُ الْمُسُوحُ فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِه فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ اخْرُجِىْ إِلى سَخَطٍ مِنَ اللّهِ» قَالَ: «فَتُفَرَّقُ فِىْ جَسَدِه فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُوْدُ مِنَ الصُّوْفِ الْمَبْلُوْلِ فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِه طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ وَيخرج مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلى وَجْهِ الْأَرْضِ فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هذَا الرُّوْحُ الْخَبِيْثُ؟ فَيَقُولُونَ: فلَانُ بْنِ فُلَانٍ - بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِىْ كَانَ يُسَمّى بِهَا فِي الدُّنْيَا - حَتَّى يَنْتَهِي بهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُسْتَفْتَحُ لَه فَلَا يُفْتَحُ لَه» ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ ﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِيْ سَمِّ الْخِيَاطِ﴾ [الأعراف 7 : 40] «فَيَقُولُ اللّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَه فِىْ سِجِّين فِي الأَرْض السُّفْلى فَتُطْرَحُ رُوْحُه طَرْحًا» ثُمَّ قَرَأَ: ﴿وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيْحُ فِيْ مَكَانٍ سَحِيْقٍ﴾ [الحج 22 : 31] «فَتُعَادُ رُوحُه فِي جَسَدِه وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِه فَيَقُولَانِ لَه: مَنْ رَبُّكَ: فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِيىْ فَيَقُولَانِ لَه: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ لَه: مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِىْ بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِىْ فَيُنَادِىْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ عَبْدِىْ فَأَفْرِشُوْا لَه مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوا لَه بَابًا إِلَى النَّارِ فَيَأْتِيهِ حَرُّهَا وَسَمُومُهَا وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُه حَتّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُه وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ قَبِيحُ الثِّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيْحِ فَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالَّذِىْ يَسُوْؤُكَ هذَا يَوْمُكَ الَّذِىْ كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ فَيَقُولُ: رَبِّ لَا تُقِمِ السَّاعَةَ». وَفِي رِوَايَة نَحْوُه وَزَاد فِيهِ: «إِذَا خَرَجَ رُوحُه صَلّى عَلَيْهِ كُلُّ مَلَكٍ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَكُلُّ مَلَكٍ فِي السَّمَاءِ وَفُتِحَتْ لَه أَبْوَابُ السَّمَاءِ لَيْسَ مِنْ أَهْلِ بَابٍ إِلَّا وَهُمْ يَدْعُونَ اللّهَ أَنْ يُعْرَجَ بِرُوحِه مِنْ قِبَلِهِمْ. وَتُنْزَعُ نَفْسُه يَعْنِي الْكَافِرَ مَعَ الْعُرُوقِ فَيَلْعَنُه كُلُّ مَلَكٍ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَكُلُّ مَلَكٍ فِي السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ لَيْسَ مِنْ أَهْلِ بَابٍ إِلَّا وَهُمْ يَدْعُونَ اللّهَ أَنْ لَا يُعْرِجَ رُوحَه مِنْ قَبْلِهِمْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় ক্ববরের কাছে গেলাম। (তখনো ক্ববর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে) লাশ ক্ববরস্থ করা হয়নি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাঁর আশেপাশে (চুপচাপ) বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ছিল একটি কাঠ। তা দিয়ে তিনি (নিবিষ্টভাবে) মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, ক্ববরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো। এ কথা তিনি দু’বার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মুমিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে (মৃত্যুর কাছাকাছি হয়) তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য। তাদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্ম। আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সস্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ কথা শুনে মুমিন বান্দার রূহ তার দেহ হতে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক হতে পানির ফোটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর ওই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন (যাবার পথে) সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও এ 'পবিত্র রূহ কার' জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত , পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) আল্লাহ তা'আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার আমলনামা ইল্লীয়্যিনে' লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে (ক্ববরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে ক্ববরের) সওয়াল জবাবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু'জন মালাক (ফেরেশতা) (মুনকির নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব 'আল্লাহ। আবার তারা দু'জন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দ্বীন ইসলাম। আবার তারা দু মালাক প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ইনি হলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তারপর তারা দু’জন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব' পড়েছি, তাই আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী (আল্লাহ) আহ্বান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকবে। তারপর তার ক্ববরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভাল কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়া'দা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক আমাল। মুমিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম করে ফেলো। হে আল্লাহ। তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে আযাবের মালায়িকা নাযিল হবেন। তাদের চেহারা নিকষ কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা আল্লাহর আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কফিরের রূহ এ কথা শুনে তার গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশম হতে টেনে বের করা হয় (আর এতে পশম আটকে থাকে)। মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়িকাহ্ এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্য থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিশিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুৰ্গন্ধ বের হয় যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়িকাহ্ এ রূহকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। যখন মালায়িকার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়িকাহ্ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সস্তান অমুক। তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয়। কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (দলীল হিসেবে) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (অনুবাদ) "ওই কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।" এবার আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তার ‘আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্তুত কাফিরদের রূহ (নিচে) নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দলীল হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, "(অনুবাদ) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু পাখী ঠুকরিয়ে নেয় (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়)। অথবা ঝড়ো বাতাস তাকে (উড়িয়ে নিয়ে) দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। (অর্থাৎ আল্লাহর রহ্মাত থেকে দূরে সরে যায়)।" রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর তার রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) দু'জন মালাক তার কাছে আসেন। বসিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, "তোমার রব কে? (সে কাফির ব্যক্তি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে) বলবে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।" তারপর তারা দুজন জিজ্ঞেস করবেন, “তোমার দ্বীন কি?" সে (কাফির ব্যক্তি) বলবে, "হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।" তারপর তারা দু'জন জিজ্ঞেস করেন, “এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?" সে বলে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।" তখন আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। (তখন সে দরজা দিয়ে তার কাছে) জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তার ক্ববরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, (দু’পাশ মিলে যাবার পর) তার পাঁজরের এদিকের (হাড়গুলো) ওদিকে, ওদিকেরগুলো এদিকে বের হয়ে আসবে। তারপর তার কাছে একটি কুৎসিত চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা, নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। এ কুৎসিত লোকটি (ক্ববরে শায়িত লোকটিকে) বলতে থাকবে, তুমি একটি খারাপ খবরের সংবাদ শুনো যা তোমাকে চিন্তায় ও শোকে-দুঃখে কাতর করবে। আজ ওইদিন, যেদিনের ওয়াদা (দুনিয়ায়) তোমাকে করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত কুৎসিত যে, খারাপ ছাড়া কোন (ভাল) খবর নিয়ে আসতে পারে না। সে লোকটি বলবে, “আমি তোমার বদ আমাল"৷ এ কথা শুনে ওই মুর্দা ব্যক্তি বলবে, হে আমার পরোয়ারদিগার। "তুমি ক্বিয়ামাত ক্বায়িম করো না।" আর একটি বর্ণনায় এতটুকু বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তার (মুমিনের) রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ তার ওপর রহ্মাত পাঠাতে থাকেন। তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার মালাক আল্লাহ তা'আলার কাছে এ মুমিনের রূহ তার কাছ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাবার আবেদন জানায় (যাতে এ মালাক মুমিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করতে পারে।) আর কাফিরের রূহ তার রগের সাথে সাথে টেনে বের করা হয়। এ সময় আসমান ও জমিনের সকল মালাক তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করতে থাকেন। আসমানের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্ত দরজার মালাকগণ (আল্লাহর নিকট) আবেদন জানায়, তার দরজার কাছ দিয়ে যেন তার রূহকে আকাশে উঠানো না হয়। (আহ্মাদ)" [১]
(فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ) রূহ বের হয়ে আসে যেমন মশক হতে পানি বের হয়। উদ্দেশ্য খুব সহজে শরীর হতে রূহ বের হয়ে আসে।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, শরীরের অস্থি এবং রূহ সহজে বের হয়ে আসার বিষয়ে কোন দ্বন্দ্ব নেই বরং প্রথমটি দ্বিতীয়টির কারণে যেমন ব্যক্তির অনুশীলনতা এবং শরীরের দুর্বলতা ‘ইবাদাত চর্চার সময় রূহকে বেশি শক্তিশালী করে তোলে। আর ইবনে হাজার বলেন, কোন দ্বন্দ্ব নেই কঠিনতা হওয়া রূহ বের হওয়ার সময় অন্য সময় নয়, কেননা এমন অবস্থাটি রূহ বের হবার পূর্বের সময়।
(لم يدعوها في يده طرفة عين) ‘মুহূর্তের জন্য নিজের হাতে রাখেন না।’ ত্বীবী বলেন, বাক্যটি ইঙ্গিত করে যে, মালাকুল মাওত রূহ কবয করার সঙ্গে সঙ্গে তার সহযোগী মালাকের (ফেরেশতার) হাতে অর্পণ করে দেন যাদের কাছে জান্নাতের কাফন রয়েছে।
(اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ) ‘আমার বান্দার ঠিকানা ইল্লীয়্যিনে লিখা।’ বান্দা শব্দ উল্লেখ করেছেন তার সম্মানের জন্য আর কাফিরের ক্ষেত্র শুধু বলেছেন তার ঠিকানা বা কিতাব। ইল্লীয়্যিন বলতে মু’মিনদের খাতা বা রেজিস্টার বই আর মূলত তা সপ্তম আসমানে একটি স্থানের নাম যেখানে ভাল লোকদের কিতাব রয়েছে তথা ‘আমালের সহীফা। আবূ ত্বীবী বলেন, ইল্লীয়্যিন বলতে জান্নাতের ঘরসমূহ।
ইবনে হাজার বলেন, ইল্লীয়্যিন মু’মিনগণের রূহসূমহ রয়েছে আর সিজ্জীনে কাফিরদের রূহসমূহ রয়েছে।
(فَتُعَادُ رُوحُه فِي جَسَدِه) ‘তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়’ হাদীসের ভাষ্যমতে রূহের ফিরিয়ে দেয়া হয় তার শরীরের সকল অংশে। সুতরাং এ বক্তব্য ধর্তব্য বলে বিবেচিত হবে না যে রূহ ফিরিয়ে দেয়া বলতে কিছু অংশে বা অর্ধেক অংশে এ দাবীর পক্ষে সহীহ দলীল প্রয়োজন।
(مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟) ‘তোমাদের মধ্যে যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে?’ এভাবে উপস্থাপন করা হয় মূলত পরীক্ষার জন্য। বিষয়টি যেন এমন অনুধাবন না আসে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছবি সরাসরি মৃত ব্যক্তির সম্মানে উপস্থিত করা হয় আর এ ব্যাপারে কোন সহীহ বা দুর্বল হাদীসও বর্ণিত হয়নি। সুতরাং কবর পূজারীদের বক্তব্যের দিকে লক্ষ্য করা যাবে না। তাদের আরও বিশ্বাস মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করার সময় স্বয়ং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরের বাইরে উপস্থিত হন।
(حتى ارجع الى اهلى) চোখ জুড়ানো হূরদের নিকট এবং ঢাকদের নিকট وقالى অট্টালিকা ও বাগানসমূহের নিকট এটা ব্যতিরেকে আরও অন্যান্য মাল যা বলতে মাল বুঝায়। পরিবার বলতে কারও নিকট মু’মিনদের নিকটস্থ লোক, মাল বলতে হূর ও অট্টালিকা।
মীরাক বলেনঃ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করার আবেদন বলতে যাতে সে পৌঁছতে পারে সেখানে যা তার জন্য আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন প্রতিদান ও মর্যাদা যেমন কাফিরের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করো না যাতে করে পলায়ন করতে পারে সে শাস্তি হতে যা তার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
(فينتزعها) জান কবযকারী মালাক (ফেরেশতা) তার রূহ বের করে কঠিনভাবে ও কষ্ট দিয়ে (السفود) লোহার চুলার মতো যার উপর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) ভূনা করা হয়।
لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَآءِ আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় না। যখন তারা আহবান করেন যেমন মুজাহিদ ও নাখ্‘ঈ বলেছেন কারও মতেঃ তাদের ‘আমাল কবূল হয় না বরং তা ফেরত দেয়া হয়, অতঃপর তা তাদের চেহারার উপর ছুড়ে মারা হয়।
সিজ্জীনঃ কাফির ও শায়ত্বনদের। ‘আমালের সমষ্টির কিতাব কারও মতে তা এমন স্থান যা সাত জমিনের নীচে অবস্থিত আর তা ইবলীস ও অনুসারীদের থাকার স্থান।
(حَتّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُه) একদিকে পাঁজর অপরদিকে ঢুকে যাবে তথা ডান দিকের পাঁজর বামদিকের পাঁজরে এবং বামদিকের পাঁজর ডানদিকের পাঁজরে ঢুকে যাবে কবর কঠিন সংকচিত হওয়ার কারণে। আর মু’মিনের জন কবর সংকীর্ণ হল তা জমিনের আলিঙ্গন যেমন অধির আগ্রহী মা তার সন্তানের সাথে মুয়ানাকা বা আলিঙ্গন করে।
আর হাদীস সুস্পষ্ট দলীল যে প্রশ্নের সময় ক্ববরে মৃত ব্যক্তির নিকট রূহকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এটা সকল আহলে সুন্নাতের মাযহাব। ইবনে তায়মিয়্যাহ্ বলেন, মুতাওয়াতির হাদীস প্রমাণ করে প্রশ্নের সময় শরীরে রূহকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কোন দল বলেছে রূহ ছাড়া শুধুমাত্র শরীরকে প্রশ্ন করা হয়। জমহূর এ বিষয় অস্বীকার করেছেন এর বিপরীতে অন্য দল বলেছে শুধুমাত্র রূহকে প্রশ্ন করা শরীর ব্যতিরেকে এমন বলেছে। ইবনে মুররা ও ইবনু হাযম উভয়ে ভুলের মধ্যে রয়েছে আর সহীহ হাদীসসমূহ এর প্রতিবাদ করেছে। ইবনে ক্বইয়্যিম কিতাবুর রূহতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
১৬৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩১
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ كَعْبٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: لَمَّا حَضَرَتْ كَعْبًا الْوَفَاةُ أَتَتْهُ أُمُّ بِشْرٍ بِنْتُ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُورٍ فَقَالَتْ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمنِ إِنْ لَقِيتَ فُلَانًا فَاقْرَأْ عَلَيْهِ مِنِّي السَّلَامَ. فَقَالَ: غَفَرَ اللّهُ لَكِ يَا أُمَّ بِشْرٍ نَحْنُ أَشْغَلُ مِنْ ذلِكَ فَقَالَتْ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمنِ أَمَا سَمِعْتَ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُوْلُ: «إِنَّ أَرْوَاحَ الْمُؤْمِنِينَ فِي طَيْرٍ خُضْرٍ تَعْلُقُ بِشَجَرِ الْجَنَّةِ؟» قَالَ: بَلى. قَالَتْ: فَهُوَ ذَاكَ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي كِتَابِ الْبَعْثِ وَالنُّشُوْرِ
আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, (আমার পিতা) কা’ব-এর মৃত্যু আসন্ন হলে ইবনু মা’রূর-এর কন্যা উম্মু বিশ্র (রাঃ) তার কাছে এলেন এবং বলতে লাগলেন, হে আবূ আবদুর রহমান (কা’ব-এর ডাক নাম) আপনি মৃত্যুবরণ করার পর (আলামে বারযাখে) অমুক ব্যক্তির সাথে দেখা হলে তাকে আমাদের সালাম বলবেন। এ কথা শুনে কা'ব বললেন, হে উম্মু বিশ্র! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। ওখানে আমার সবচেয়ে বেশী ব্যস্ততা থাকবে। তখন উম্মু বিশ্র (রাঃ) বললেন, হে আবূ আবদুর রহ্মান। আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেননি? আলামে বারযাখে মু’মিনদের রূহ সবুজ পাখির ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ হতে ফল-ফলাদি খেতে থাকবে। কা'ব বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনেছি। উম্মু বিশ্র (রাঃ) বললেন, এটাই হলো (তাই আপনি এ মর্যাদা পাবেন বলে আশা করা যায়)। (ইবনু মাজাহ্, বায়হাক্বী- কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশুর)” [১]
আবূ লাবিয়্যাহ্ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বাকর বিন বারা বিন মা‘রূর মারা গেলেন তার মা তখন খুব কষ্ট পেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! বানী সালামার যখন কেউ মারা যাবে সে কি মৃত্যুকে চিনতে পারবে তাহলে আমি পিতাকে সালাম পাঠাবো। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, অবশ্যই তারা চিনবে বা নিশ্চয় চিনে যেমনভাবে পাখি গাছসমূহের মাথা চিনে। আর যখনই কোন বানী সালামাহ্ গোত্রের লোক মৃত্যুর সম্মুখীন হয় বাকর এর মা আসে এবং হে উমুক তোমার ওপর আমার সালাম সেও বলে তোমারও ওপর সালাম, অতঃপর বাকর এর মা বলে বাকরকে আমার সালাম দিবে।
(إِنَّ أَرْوَاحَ الْمُؤْمِنِينَ) নিশ্চয় মু’মিনের রূহসমূহ হাদীসের এ সাধারণ বাক্যের প্রমাণ করে প্রত্যেক মু’মিন শাহীদ হোক বা না হোক জান্নাতে তারা শাহীদ হিসেবে বিবেচিত হবে যদি জান্নাতে যেতে তাদেরকে গুনাহ ও ঋণ বাধা না দেয় আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে সাক্ষাৎ, ক্ষমা ও রহমাত নিয়ে। এ হাদীসটি এবং সামনে আগত হাদীস এটাই প্রমাণ করে তাতে শাহাদাতকে খাস করা হয়নি এ মতে ইবনু ক্বইয়্যিম ও ইবনে কাসীর গেছেন।
কারও মতে শুধুমাত্র শাহীদ মু’মিন উদ্দেশ্য যেমন আহমাদ-এর বর্ণনা (أرواح الشهداء) শাহীদের রূহসমূহ আর এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন কুরতুবী ও ইবনু ‘আবদুল বার। তারা বলেন, উল্লেখিত সম্মানের বিষয়টি শাহীদদের সাথে খাস অন্য কারও সাথে নয় আর কুরআন সুন্নাহ এটাই প্রমাণ করে আর এ সংক্রান্ত সাধারণ বর্ণনাগুলোকে খাসকেই বুঝায়।
মু’মিনের রূহ সবুজ পাখীর মধ্যে হবে ত্ববারানীর বর্ণনায় এসেছে (إِنَّ أَرْوَاحَ الْمُؤْمِنِينَ فِي طَيْرٍ خُضْرٍ) মু’মিনে রূহ সবুজ পাখীর ঝোলায় বা পেটে হবে। হায়সামী বলেন যে, এটা রূহের জন্য আবদ্ধ উদ্দেশ্য না বরং সবুজ পাখীর পেটের মধ্যে রাখার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশের ব্যবস্থা করেছেন যা প্রশস্ত শূন্যে অর্জিত হয়।
অথবা রূহের জন্য পাখীকে বাহনরূপে করে জান্নাতে আনন্দ উপভোগ করার ব্যবস্থা করা বা পাখী হল রূহের জন্য হাওদা স্বরূপ বসা ব্যক্তির জন্য।
কারও মতে রূহসমূহকে পাখীর আকৃতিতে করা হয় তথা রূহ স্বয়ং আল্লাহর নির্দেশে পাখির আকৃতি ধারণ করে যেমন মালাক (ফেরেশতা) মানুষের আকৃতি ধারণ করে। সুয়ূতী আবূ দাঊদ-এর টীকায় বলেন, যখন আমরা রূহের পাখি আকৃতি ধারণ করা সাব্যস্ত করব তখন তা শুধুমাত্র পাখির আকৃতির হওয়ার ক্ষমতা বুঝায় না পাখি সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন হওয়া বুঝায়, কেননা মানুষের আকৃতিই সবচেয়ে উত্তম আকৃতি।
১৬৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩২
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ كَعْبٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: أَنَّه كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَالَ: «إِنَّا نَسْمَةَ الْمُؤْمِنِ طَيْرٌ تَعْلُقُ فِي شَجَرِ الْجَنَّةِ حَتّى يُرْجِعَهُ اللّهُ فِي جَسَدِه يَوْمَ يَبْعَثُه» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَالنَّسَائِيّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي كِتَابِ الْبَعْثِ وَالنُّشُوْرِ
‘আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মুমিনের রূহ (আলামে বার্যাখে) পাখীর ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ থেকে ফল-ফলাদি খেতে থাকবে যে পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা (তাকে উঠাবার দিন) এ রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে না দেন (অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের দিন)।" (মালিক, নাসায়ী, বায়হাক্বী- কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশূর)" [১]
আর সম্ভাবনা রয়েছে, রূহ পাখির শরীরে প্রবেশ করে যেমন অন্য বর্ণনা (أجواف طير) পাখির পেটের মধ্যে।
১৬৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৩
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ قَالَ: دَخَلْتُ عَلى جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللّهِ وَهُوَ يَمُوتُ فَقُلْتُ: اقْرَأْ عَلى رَسُولِ اللّهِ ﷺ السَّلَامً. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (একবার) জাবির ইবনু আবদুল্লাহর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। আমি তাঁর কাছে আরয করলাম, (আপনি আলামে বার্যাখে পৌঁছে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার সালাম দেবেন।" (ইবনু মাজাহ্) [১]
১৬৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৪
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللّهِ ﷺ وَنَحْنُ نُغَسِّلُ ابْنَتَه فَقَالَ: اغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذلِكِ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الْاخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ فَاذِنَّنِىْ فَلَمَّا فَرَغْنَا اذَنَاهُ فَألْقى إِلَيْنَا حِقْوَه وَقَالَ: «أَشْعِرْنَهَا إِيَّاهُ» وَفِىْ رِوَايَةٍ: «اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا وَابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الْوُضُوءِ مِنْهَا». وَقَالَتْ فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ فَأَلْقَيْنَاهَا خَلْفَهَا. (مُتَّفق عَلَيْهِ)
উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা (যায়নাবকে) গোসল করাচ্ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা তিনবার, পাঁচবার, প্রয়োজন বোধ করলে এর চেয়ে বেশী বার; পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও। আর শেষ বার দিকে ‘কাফূর’। অথবা বলেছেন, কাফূরের কিছু অংশ পানিতে ঢেলে দিবে, গোসল করাবার পর আমাকে খবর দিবে। তাঁকে গোসল করাবার পর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খবর দিলাম। তিনি এসে তহবন্দ বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, এ তহবন্দটি তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে দাও। আর এক বর্ণনার ভাষা হলো, তাকে বেজোড় তিন অথবা পাঁচ অথবা সাতবার (পানি ঢেলে) গোসল দাও। আর গোসল ডানদিক থেকে উযুর জায়গাগুলো দিয়ে শুরু করবে। তিনি (উম্মু আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেন, আমরা তার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)" [১]
ইবনে ‘আরাবী বলেন, অথবা পাঁচবার এতে ইঙ্গিত বহন করে শারী‘আত সম্মত হল বেজোড়। কেননা বলা হয়েছে তিন হতে পাঁচ আর চার হতে বিরত থাকা হয়েছে।
(أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذلِكِ) ‘‘এটা অপেক্ষা অধিকবার’’ হাদীস প্রমাণ করে মৃত ব্যক্তিকে গোসলের ব্যাপারে কোন সীমানা নির্ধারণ নেই বরং উদ্দেশ্য পরিষ্কারকরণ তবে অবশ্যই বেজোড়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
বরই দ্বারা বরই পাতা উদ্দেশ্য আর হিকমাহ্ হল বরই পাতা ময়লাকে সমূলে উৎপাটিত করে এবং চামড়াকে পরিচ্ছন্ন করে।
কুরতুবী বলেন, বরই পাতা পানিতে মিশাবে তা যেন ফুটন্ত পর্যন্ত থাকে এবং তা দ্বারা শরীর ঘষবে অতঃপর তার উপর বিশুদ্ধ পানি ঢালবে। এটা প্রথম গোসল বা ধৌত। কারও মতে বরই পাতা পানিতে নিক্ষেপ করবে যাতে পানির সাথে না মিশে যাতে পানির সাধারণ রং পরিবর্তন হয় (আহমাদ বিন হাম্মাল এমনটি অপছন্দ করেছেন)।
কারও মতে প্রথমবার শুধুমাত্র পানি দ্বারা গোসল এবং দ্বিতীয়বার পানি ও বরইপাতাসহ কেননা প্রথম ধৌত ফরয আর তা যেন শুধুমাত্র পানি দ্বারা হয় এর পরে না হয় তা হয় পরিষ্কার করা উদ্দেশ্য সুতরাং অতিরিক্ত যা মিশানো হয় তা ক্ষতি না।
কারও মতেঃ প্রথমবার পানি ও বরই পাতা সহকারে অতঃপর শুধুমাত্র পানি। তবে আমাদের নিকট অধিকতর গ্রহণযোগ্য হল প্রত্যেক বারই পানি ও বরই পাতা সহকারে ধৌত করবে আর পানি যেন বরই পাতাকে নিয়ে ফুটন্ত হয়। কেননা আবূ দাঊদে গৃহীত সানাদে ইবনে সিরীন তিনি উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ হতে বর্ণনা করেন গোসলের বিষয়টি প্রথম দু’বার বরই পাতা সহকারে গোসল দান করবে।
তৃতীয়বার পানি ও কাফুর দিয়ে। শেষবার কাফুর মিশানোর হিকমাহ্ হল কেননা কাফূর স্থানে সুগন্ধি ছড়ায় বিশেষ করে মালায়িকার মধ্যে থেকে যারা যেখানে উপস্থিত থাকে আরও অন্যন্য যারা থাকে তাদের জন্য। তাছাড়া এটা ঠান্ডা ও শুষ্ক রাখতে বাস্তবায়নকারী বিশেষ করে লাশকে মজবুত রাখে এবং বিষাক্ত কীটকে দূরীভূত করে রাখে আর লাশকে দ্রুত নষ্ট হওয়া হতে বাধা দান করে আর এ ব্যাপারে শক্তিশালী সুগন্ধ।
(فَألْقى إِلَيْنَا حقوه) অতঃপর তিনি তার লুঙ্গি ছুঁড়ে দিলেন। হাদীসে পুরুষের কাপড় দিয়ে মহিলাদের কাফন দেয়া বৈধতা প্রমাণ করে। আর ইবনু বাত্তাল বর্ণনা করেছেন এ ব্যাপারে সবাই ঐকমত্য।
(اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا) অন্য রিওয়ায়াতে রয়েছে গোসলদান করবে তিনবার অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার। হাদীসে দৃশ্যত সাতের অধিকবার করা বৈধ না, কেননা পবিত্রতার গণনার সবশেষ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে তবে বুখারী ও মুসলিমের এবং অন্যান্য বর্ণনায় প্রয়োজনে অতিরিক্ত ধৌতের ব্যাপারে অনুমোদন রয়েছে।
আয়নী বলেন, মৃত ব্যক্তির উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সুন্নাহ যেমন জীবিত অবস্থায় গোসলে, তবে কুলি ও নাকে পানি দেয়া ব্যতিরেকে। কেননা তা কঠিন নাক ও মুখ হতে পানি বের করা। ইবনু কুদামাহ্ মুগনীতে বলেনঃ তাকে (মৃত ব্যক্তিকে) উযূ করানো সলাতের উযূর মতো দু’ হাতের তালু ধৌত করাবে, অতঃপর খসখসে কাপড়ের টুকরো নিবে তা ভিজাবে এবং তা আঙ্গুলে নিয়ে দাঁত ও নাক মাসাহ করবে যাতে তা পরিষ্কার হয় তবে খুব নরমভাবে করবে, অতঃপর তার চেহারা ধৌত করাবে এবং উযূ সম্পূর্ণ করাবে। আর তিনি বলেন, মুখে ও নাকের ছিদ্রতে পানি ঢুকাবে না অধিকাংশ আহলে ‘ইলমের মতে।
আর শাফি‘ঈ বলেন, কুলি ও নাকে পানি দিবে জীবিত ব্যক্তির মতো।
(فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ) আমরা তার চুলকে তিনটি বেনীতে ভাগ করলাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, মাথার অগ্রভাগের চুলকে একটি বেনীতে আর মাথার দু’ পাশে চুলকে দু’ বেনীতে করেছি। অপর এক বর্ননায় এসেছে, আমরা তা চুলকে চিরুণি দিয়ে অাঁচড়ালাম, অতঃপর তিনটি বেনীতে ভাগ করলাম। ইমাম শাফি‘ঈ এতে দলীল গ্রহণ করেছেন এবং তার সাথে যারা ঐকমত্য হয়েছেন যে, মৃত মহিলার চুলকে সুবিন্যস্ত করা এবং তিনটি ভাগে বেনী করা এবং পিছনদিকে ছড়িয়ে দেয়া। আর আয়নী বলেন যে, দু’টি বেনী করে বুকের উপর দিয়ে জামার উপর ছড়াবে। আবার কেউ বলেন, চুল ওড়নার নীচে দু’ জনের মাঝ দিয়ে দু’পাশে সকল চুল ছড়াবে।
১৬৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৫
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ كُفِّنَ فِىْ ثَلَاثَةِ أَثْوَابٍ يَمَانِيَّةٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ مِنْ كُرْسُفٍ لَيْسَ فِيهَا قَمِيْصٌ وَلَا عِمَامَةٌ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিন কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। যা সাহুলিয়্যাহ্ সাদা সূতি কাপড় সাদা ইয়ামানী। এতে কোন সেলাই করা কুর্তা ছিল না, পাগড়ীও ছিল না। (বুখারী, মুসলিম) [১]
علي بن أبي طالب: أن النبي - ﷺ - كفن في سبعة أثواب.
‘আলী বিন আবী ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাতটি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছে হাদীসের জবাবে বলা হয়েছে হাদীসের সানাদে খুব দুর্বল রাবী রয়েছেন।
হাকিম বলেন মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত যেমন আলী, ইবনু ‘আব্বাস, ইবনু ‘উমার, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছে আর যেখানে জামা এবং পাগড়ী ছিল না।
সাহূলী একটি গ্রামের নাম। সেই গ্রামের দিকে সম্বোধন করে সাহূলিয়্যাহ্ বলা হয়েছে।
১৬৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৬
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا كَفَّنَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُحْسِنْ كَفَنَه» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন তোমাদের কোন ভাইকে কাফন দিবে তখন উচিত হবে উত্তম কাফন দেয়া। (মুসলিম) [১]
জাবির (রাঃ) উপরোল্লিখিত হাদীস মুসলিম ইমাম মুসলিম পূর্ণভাবে উল্লেখ করেছেন,
وَهُوَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ خَطَبَ يَوْمًا، فَذَكَرَ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِه قُبِضَ فَكُفِّنَ فِىْ كَفَنٍ غَيْرِ طَائِلٍ، وَقُبِرَ لَيْلًا، فَزَجَرَ النَّبِيُّ ﷺ أَنْ يُقْبَرَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ حَتّى يُصَلّى عَلَيْهِ، إِلَّا أَنْ يُضْطَرَّ إِنْسَانٌ إِلى ذلِكَ، وَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: إِذَا كَفَّنَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ، فَلْيُحَسِّنْ كَفَنَه. (رواه مسلم)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ্ প্রদান করেছিলেন, অতঃপর সাহাবীদের এক ব্যক্তি মারা গেছেন উল্লেখ করা হল এবং তার কাফনও হয়েছে খুব সাধারণভাবে তথা সাধারণ কাফনে এবং দাফন হয়েছে রাত্রিতে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদে ধমক দিয়েছেন রাত্রি দাফনের জন্য তবে যদি মানুষেরা অপারগ না হয়। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তেমাদের কেউ যখন তার ভাই কাফন দিবে তা যেন উত্তমভাবে দেয়।
১৬৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৭
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا كَانَ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فَوَقَصَتْهُ نَاقَتُه وَهُوَ مُحْرِمٌ فَمَاتَ فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ وَلَا تَمَسُّوهُ بِطِيْبٍ وَلَا تُخَمِّرُوْا رَأْسَه فَإِنَّه يُبْعَثُ يَوْم الْقِيَامَة مُلَبِّيًا». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ خَبَّابٍ: قَتْلُ مُصْعَبِ بْنِ عُمَيْرٍ فِي بَابِ جَامِعِ الْمَنَاقِبِ إِنْ شَاءَ اللّهُ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (হাজ্জের সময়) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। তার উটটি (তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে) তার ঘাড় ভেঙে দিলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তার দু’টি কাপড় দিয়ে কাফন দাও। তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগিও না, তার মাথাও ঢেক না। কারণ তাকে ক্বিয়ামাতের দিন ‘লাব্বায়ক’ বলা অবস্থায় উঠানো হবে। (বুখারী, মুসলিম) [৬৭৭] মুস’আব ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) এর নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কিত খব্বাব (রাঃ)-এর হাদীসটি আমরা অচিরেই “সাহাবীগণের মর্যাদা” অধ্যায়ে উল্লেখ করব ইন্শা-আল্লা-হ। [১]
(وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ) তাকে কাফন দাও দু’ কাপড়ে তথা তার লুঙ্গি ও চাদর দিয়ে যা সে পরিধান করেছিল ইহরামে। আর এতে তথা কাফনে বেজোড় শর্ত না। আর ইতিপূর্বে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে তিন তা ওয়াজিব না। বরং তা মুস্তাহাব। এটা জমহূরের বক্তব্য তবে এমন একটি কাফন হওয়া প্রয়োজন যা সমস্ত শরীরকে আবৃত করে।
আর হাদীসটিকে দলীল হিসেবে প্রমাণ করেন শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহক সাওরী এবং ‘আত্বা যে যখন মুহরিম ব্যক্তি মারা যান তিনি ইহরামের হুকুমেই থাকেন এজন্য তার মাথা ঢাকা যাবে না এবং সুগন্ধি লাগানো যাবে না এবং ইহরামের দু’ কাপড় দিয়ে কাফন করা হবে।
আর এ ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন মালিক ও আবূ হানীফাহ্ তারা দলীল পেশ করেছেন (إَذَا مَاتَ ابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَمَلُه) যখন মানুষ মারা যাবে তার ‘আমাল বন্ধ হয়ে যায় এর জবাবে বলা হয়েছে তার ইহরামের কাপড় দিলে কাফন করা তা জীবিতাবস্থার ‘আমাল মৃত্যুর পরে গোসল ও তার ওপর জানাযাহ্ আদায়ের মতো।
আর হানাফী ও মালিকী বা ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসের জবাবে বলেছেন, সম্ভবত ঐ মুহরিম ব্যক্তির জন্য খাস যার ব্যাপারে আল্লাহ ওয়াহী করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টি নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ‘আমভাবে না।
‘আবদুল হাই কা‘নাবী জবাবে বলেছেন, তালবিয়াহ্ পড়তে পড়তে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে উঠা এটি খাস নয় বরং ‘আম প্রত্যেক মুহরিম ব্যক্তির জন্য এমন কেননা এভাবে হাদীসের শব্দ এসেছে, (يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلى مَا مَاتَ عَلَيْهِ) প্রত্যেক বান্দা এভাবে উঠবে, যে যেভাবে মারা গেছে। (মুসলিম)
১৬৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمُ الْبَيَاضَ فَإِنَّهَا مَنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ وَمِنْ خَيْرِ أَكْحَالِكُمُ الْإِثْمِدُ فَإِنَّه يُنْبِتُ الشِّعْرَ وَيَجْلُوا الْبَصَرَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করবে, কারণ সাদা কাপড়ই সবচেয়ে ভাল। আর মুর্দাকে সাদা কাপড় দিয়েই কাফন দিবে। তোমাদের জন্য সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ কারণ এ সুরমা ব্যবহারে তোমাদের চোখের পাপড়ি নতুন করে গজায় ও চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী) [১]
ইসমিদঃ প্রসিদ্ধ কালো পাথর যা হতে সুরমা তৈরি করা হয়।
মুল্লা ‘আলী আলী ক্বারী বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে রাত্রিতে ঘুমের সময় সুরমা ব্যবহার করা উত্তম। আমি (ভাষ্যকার) বলি, আহমাদের অন্য বর্ণনায় এ শব্দে এসেছে,
(خَيْرِ أَكْحَالِكُمُ الْإِثْمِدُ فَإِنَّه يُنْبِتُ الشِّعْرَ وَيَجْلُوا الْبَصَرَ)
আর ঘুমের সময় তোমাদের সুরমা জাতীয় জিনিস সমূহের মধ্যে ‘ইসমিদ’ই হল উত্তম। কেননা তা কেশ জন্মায় এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
১৬৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৩৯
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا تَغَالَوْا فِي الْكَفَنِ فَإِنَّه يُسْلَبُ سَلْبًا سَرِيعًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাফনে খুব বেশী মূল্যবান কাপড় ব্যবহার করবে না। কারণ এ কাপড় খুব তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে যায়। (আবূ দাঊদ) [১]
১৬৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪০
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّه لَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ. دَعَا بِثِيَابٍ جُدُدٍ فَلَبِسَهَا ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «الْمَيِّتُ يُبْعَثُ فِي ثِيَابِهِ الَّتِىْ يَمُوتُ فِيهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন তিনি নতুন কাপড় আনালেন এবং তা পরিধান করলেন। তারপর বললেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মুর্দাকে (হাশরের দিন) সে কাপড়েই উঠানো হবে, যে কাপড়ে সে মৃত্যুবরণ করে। (আবূ দাঊদ) [১]
ফলে পুনরুত্থান হবে কাপড় পরিধান অবস্থায় আর হাশর হবে উলঙ্গ অবস্থায় তবে মুহাক্কিক মুহাদ্দিসরা বলেছেন, কাপড় শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ ‘আমাল যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ‘‘তোমার ‘আমালকে পরিশুদ্ধ কর’’- (সূরাহ্ আল মুদ্দাস্সির ৭৪ : ৪)।
১৬৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪১
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُولِ اللّهِ ﷺ قَالَ: «خَيْرُ الْكَفَنِ الْحُلَّةُ وَخَيْرُ الْأُضْحِيَةِ الْكَبْشُ الْأَقْرَنُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম ‘কাফন’ হলো “হুল্লাহ্”, আর সর্বোত্তম কুরবানীর পশু হলো শিংওয়ালা দুম্বা। (আবূ দাঊদ) [১]
কারও মতে ইয়ামীন চাদর দ্বারা কাফন দেয়া উচিত, কেননা তাতে লাল অথবা সবুজ ডোরা দাগ রয়েছে। মাজহার বলেন, এ হাদীসের আলোকে কতক ইমাম এ ইয়ামানী চাদরকে পছন্দ করছেন। আর সঠিক কথা হল সাদা কাপড়ই উত্তম। ইতিপূর্বে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের আলোকে।
কুরবানীতে শিংওয়ালা দুম্বা উত্তম। উদ্দেশ্য হল মহিলা দুম্বার চেয়ে পুরুষ দুম্বা উত্তম অথবা শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানী করা উত্তম ভাগে কুরবানী করা উট ও গরু হতে।
১৬৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪২
وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ
তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্ আবূ উমামাহ্ (রা.) হতে। [১]
১৬৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৩
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ بِقَتْلى أُحُدٍ أَنْ ينْزع عَنْهُم الْحَدِيدُ وَالْجُلُودُ وَأَنْ يُدْفَنُوا بِدِمَائِهِمْ وَثِيَابِهِمْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদ যুদ্ধের ‘শহীদদের’ শরীর থেকে লোহা, (হাতিয়ার, শিরস্ত্রাণ) চামড়া ইত্যাদি (যা রক্তমাখা নয়) খুলে ফেলার ও তাদেরকে তাদের রক্ত ও রক্তমাখা কাপড়-চোপড়সহ দাফন করতে নির্দেশ দেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১]
১৬৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৪
عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمنِ بْنَ عَوْفٍ أُتِيَ بِطَعَامٍ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ: قُتِلَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّىْ كُفِّنَ فِىْ بُرْدَةٍ إِنْ غُطِّيَ رَأْسُه بَدَتْ رِجْلَاهُ وَإِنْ غُطِّيَ رِجْلَاهُ بَدَا رَأْسُه وَأْرَاهُ قَالَ: وَقُتِلَ حَمْزَةُ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّىْ ثُمَّ بُسِطَ لَنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ أَوْ قَالَ: أُعْطِينَا مِنَ الدُّنْيَا مَا أُعْطِينَا وَلَقَدْ خَشِينَا أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا ثُمَّ جَعَلَ يَبْكِىْ حَتّى تَرَكَ الطَّعَامَ. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
সা‘দ ইবনু ইব্রাহীম থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর পিতা ইব্রাহীম (রাঃ) হতে বর্ননা করেছেন যে, একবার ‘আবদুর রহ্মান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) সওম রেখেছিলেন। (সন্ধ্যায়) তাঁর খাবার আনানো হলো। তিনি বললেন উহুদ যুদ্ধের শাহীদ মুস্‘আব ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু তাঁকে শুধু একটি চাদর দিয়ে দাফন করা হয়েছিল। এটা এমনই খাটো ছিল যে, যদি মাথা ঢাকা হত পা খুলে যেত আর পা ঢাকা হলে মাথা খুলে যেত। (সর্বশেষে [চাদর দিয়ে] তার মাথা ঢেকে পাগুলোর উপর ‘ইযখির’ [ঘাস] দেয়া হয়েছিল)। (হাদীসের রাবী) ইব্রাহীম বলেন, আমার মনে হয় ‘আবদুর রহ্মান ইবনু ‘আওফ এ কথাও বলেছেন, (উহুদের) আরেক শাহীদ হামযাহ্ও আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। (মুস্‘আব-এর মতো) তাঁরও এক চাদরে দাফন নাসীব হয়েছিল। (এখন মুসলিমদের দরিদ্র আল্লাহর ফযলে দূর হয়েছে) আমাদের জন্য এখন দুনিয়া বেশ প্রশস্ত হয়েছে, যা দৃশ্যমান। অথবা তিনি বলেছেন, “দুনিয়া এখন আমাদেরকে এতই পর্যাপ্ত পরিমাণে দেয়া হয়েছে যে, আমার ভয় হয় আমাদের নেক কাজের বিনিময় ফল আমরা মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই পেয়ে যাই কিনা। অতঃপর ‘আবদুর রহ্মান ইবনু আওফ কাঁদতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত সামনের খাবারই ছেড়ে দিলেন। (বুখারী) [১]
হাদীসে আরও শিক্ষণীয় যে, দুনিয়া বিমুখিতার ফাযীলাত আর দ্বীনের সম্মানিত ব্যক্তির উচিত দুনিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা হতে নিজেকে বিরত রাখবে যাতে পুণ্যে ঘাটতি না আসে আর এদিকে ‘আবদুর রহমানের বক্তব্য ইঙ্গিত করে, (خَشِينَا أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ) আমরা ভয় পাচ্ছি যে, আমাদের নেক ‘আমালের প্রতিফল আমাদেরকে আগেভাগে দুনিয়াতে দেয়া গেল নাকি? হাদীসে আরো শিক্ষণীয় যে, নেককার লোকদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা উচিত বিশেষ করে দুনিয়ার প্রতি তাদের স্বল্প আগ্রহ এবং আখিরাতে ভয়ে তাদের কাঁদা।
হাদীসে আর প্রমাণিত হয় যে, স্বচ্ছলতার উপর দরিদ্রতার প্রাধান্য দেয়া ‘ইবাদাতের জন্য নিঃসঙ্গতাকে প্রাধান্য উপার্জনের উপর, কেননা ‘আবদুর রহমান খাদ্য গ্রহণ করা হতে বিরত থেকেছেন অথচ সওমরত ছিলেন।
১৬৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৫
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَتى رَسُولَ اللّهِ ﷺ عَبْدُ اللّهِ بْنَ أُبَيٍّ بَعْدَمَا أُدْخِلَ حُفْرَتَه فَأَمَرَ بِه فَاُخْرِجَ فَوَضَعَه عَلى رُكْبَتَيْهِ فَنَفَثَ فِيهِ مِنْ رِيقِه وَأَلْبَسَه قَمِيصَه قَالَ: وَكَانَ كَسَا عَبَّاسًا قَمِيْصًا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুনাফিক্ব দলপতি ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে ক্ববরে নামাবার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে ক্ববর থেকে উঠাবার নির্দেশ দিলেন। ক্ববর থেকে উঠাবার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর দু‘হাঁটুর উপর রাখলেন। নিজের মুখের পবিত্র থুথু তার মুখে দিলেন। নিজের জামা তাকে পরালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ‘আব্বাস (রাঃ) কে তার নিজের জামা পরিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
জাবির (রাঃ)-এর হাদীস কবর হতে উঠার পর জামা প্রদান আর অন্যান্য হাদীসে যেমন ইবনু ‘উমারের হাদীসে আগেই বর্ণনা। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনে উবাই এই ব্যক্তি মুনাফিক্বের নেতা ছিল জাহিলী যুগে খাযরাজ গোত্রের নেতা ছিল। এই ব্যক্তি ‘আয়িশাহ্ সিদ্দীক্বা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে ইফকের ঘটনা প্ররোচনাকারী, সে বলেছিল আমরা যদি মাদীনায় প্রত্যাবর্তন করি তবে সেখান হতে সবল অবশ্যই দুর্বলকে বহিষ্কৃত করবে। সে আরও বলেছিল لَا تُنْفِقُوا عَلى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللّهِ حَتّى يَنْفَضُّوْا ‘‘যারা আল্লাহর রসূলের সাহচর্যে আছে তাদের জন্য ব্যয় করো না’’- (সূরাহ্ আল মুনাফিকূন ৬৩ : ৭)।
আর সে উহুদের যুদ্ধে এক তৃতীয়াংশ সৈন্য নিয়ে মাদীনায় ফিরেছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হবার পর। ওয়াকিদী বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে উবাই শাও্ওয়ালের শেষের দিকে এসে অসুস্থ হয়েছিল আর যুলক্বাদা মাসের নবম হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ হতে ফেরার পর তার রোগ ছিল বিশ দিন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে এসেছিলেন তার মু’মিন ছেলে ‘আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর আহবানে তার নাম ছিল হুবাব। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) পিতার নামানুসারে তিনি মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী ছিলেন অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফাতে ইয়ামামার যুদ্ধে শাহীদ হন। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে তিনি পিতার বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন, যদি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিতেন তাহলে তার পিতাকে তিনি হত্যা করতেন।
উপরে উল্লেখিত হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কামীস তথা জামা ক্ববরে রাখার পর দিয়েছেন। অথচ এর বিপরীত বুখারী মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসে প্রমাণ করে (لَمَّا مَاتَ عَبْدُ اللهِ بْنِ أبَي جَاءَ ابْنُه فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، أَعْطِنِيْ قَمِيْصك أُكَفِّنُه فِيْهِ، فَأَعْطَاهُ قَمِيْصُه) ইবনে ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস যখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন উবাই মৃত্যুবরণ করল তার ছেলে আসলো (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে)। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জামাটি দিন তা দিয়ে তার (আমার পিতার) কাফনের ব্যবস্থা করব তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার জামা প্রদান করলেন।
জবাবে বলা হয়েছে, প্রথমে তার জামার মধ্যে হতে কোন জামা দিয়েছেন, পরে দ্বিতীয়বার আবার জামা দেয়েছেন অথবা মৃত্যুর প্রথম সময়ে আবেদন করেছিল কিন্তু তা প্রদান করতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরী করেছেন এমনকি ক্ববরে তাকে প্রবেশ করা হয়েছিল।
হাদীসে প্রমাণিত হয়, কবর হতে মৃত বক্তিকে প্রয়োজনে উঠা যায় আর কামীসে কাফন বৈধ তথা নিষেধ না চাই তা সেলাইকৃত হোক বা না হোক। বুখারীতে জিহাদ অধ্যায়ে এসেছে, জাবির (রাঃ) হতে বাদ্র (বদর) যুদ্ধে ‘আব্বাস কাফির অবস্থায় মুসলিমদের হাতে বন্দী হয় আর তার শরীরে জামা ছিল না। অতঃপর তার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা তালাশ করলেন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই জামা পাওয়া গেল যা তার শরীরের সাথে খাপ খেয়েছে। সুতরাং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বদলা স্বরূপ ‘আবদুল্লাহ বিন উবাইকে জামা দিয়েছিলেন।
ইবনু ‘উআয়নাহ্ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর ‘আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর অনুগ্রহ ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চান তা বদলা দিতে যাতে সেই মুনাফিক্বের কোন অনুগ্রহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবশিষ্ট না থাকে।
কারও মতে তার ছেলের সম্মানার্থে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন, তিনি খাঁটি মুসলিম এবং মুনাফিক্ব হতে মুক্ত ছিলেন। কারও মতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কোন সায়েলকে ফিরিয়ে দেন না।
জ্ঞাতব্যঃ মহিলাদের শারী‘আত সম্মত কাফন হল পাঁচটি লুঙ্গি, চাদর, ওড়না ও দু’টি লিফাফ তথা আবরণ। যা বর্ণিত আহমাদ ও আবূ দাঊদে লায়লা বিনতু কায়ফ আস্ সাকাফী, তিনি বলেন আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে উমুন কুলসুমকে গোসল দিচ্ছিলাম তার মৃত্যুর পর।
আমাদেরকে প্রথমে লুঙ্গি এরপর চাদর, অতঃপর ওড়না, অতঃপর লিফাফ দিলেন, সবশেষে আমি আরেকটি কাপড় দিয়ে ঢাকলাম। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে দরজায় বললেন, তাকে কাফন দাও আর তিনি একটা একটা করে কাপড় দিলেন। অন্য বর্ণনায় উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ বলেন আমরা তাকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দিয়েছি। তাকে ওড়না পেচিয়েছি যেমনিভাবে জীবিতদের দেই।
হাফিয ইবনে হাজার বলেন, এ অতিরিক্ত বাক্য বিশুদ্ধ। ইবনু মুনযির বলেন, অধিকাংশ ‘উলামাদের মতে মহিলাদের কাফন পাঁচটি যেমন শাবী, নাখ্‘ঈ, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহক আবূ সাওর। ইবনু কুদামাহ্ বলেন, আমাদের অধিকাংশ সাথী ও অন্যান্যদের অভিমত মহিলাদের কাফন পাঁচটি। লুঙ্গি, চাদর ওড়না ও দু’টি লিফাফ আর এটা সহীহ লায়লা বিনতু কায়ফ ও উম্মু ‘আত্বিয়্যার হাদীসের আলোকে।
১৬৪৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৬
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «أَسْرِعُوا بِالْجَنَازَةِ فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا إِلَيْهِ وَإِنْ تَكُ سِوى ذلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُوْنَه عَنْ رِقَابِكُ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জানাযার কার্যক্রম সলাত তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেক মানুষ হয় তাহলে তার জন্য কল্যাণ। কাজেই তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সে এরূপ না হলে খারাপ হবে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দাও। (বুখারী, মুসলিম) [১]
জানাযাহ্ নিয়ে দ্রুত চলার অর্থ এই নয় যে, লাশ কাঁধে নিয়ে দৌড়াবে। বরং মধ্যপন্থায় চলবে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, দ্রুত চলার অর্থ হলো ধীরস্থির হাঁটার চেয়ে একটু বেশী, অর্থাৎ একটি ভারসাম্যপূর্ণ চলন।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এটাই জমহূরের মত।
জানাযাহ্ কাঁধে নিয়ে একেবারে মন্থরগতিতে চলা অপছন্দনীয়। আবার এমন দ্রুতও চলবে না যাতে কারী এবং তার অনুগামীদের কষ্ট হয়। অন্যদিকে মাইয়্যিতেরও কোন ক্ষতি না হয়।
এ দ্রুততা কি শুধু লাশ বহনকালে না অন্য কাজেও?
এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা সিন্ধী বলেন, হাদীসের প্রকাশ্য অর্থে লাশ বহনের ক্ষেত্রেই এ নির্দেশ, তবে অন্যান্য কাজেও।
যেমন তাকে গোসল দান, কাফন পরানো ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এ হুকুম প্রযোজ্য।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ প্রথম ব্যাপারেই হুকুম নির্দিষ্ট তবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
১৬৪৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৭
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا وُضِعَتِ الْجَنَازَةُ فَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلى أَعْنَاقِهِمْ فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ: قَدِّمُونِىْ وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَت لِأَهْلهَا: يَا وَيْلَهَا أَيْنَ تَذْهَبُوْنَ بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الْإِنْسَانَ وَلَو سَمِعَ الْإِنْسَانُ لَصَعِقَ». رَوَاهُ البُخَارِيّ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জানাযাহ্ খাটিয়ায় রাখার পর লোকেরা যখন তাকে কাঁধে নেয় যে জানাযাহ্ যদি নেক লোকের হয় তাহলে সে বলে আমাকে (আমার মঞ্জীলের দিকে) তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো। আর যদি বদ লোকের হয়, সে (তার নিজ লোকদেরকে) বলে, হায়! হায়! আমাকে কোথায় নিয়ে চলছ। মুর্দারের কথার এ আওয়াজ মানুষ ছাড়া সবাই শুনে। যদি মানুষ এ আওয়াজ শুনত তাহলে বেহুশ হয়ে পড়ে যেত। (বুখারী) [১]
অনেকে বলেছেন, আল্লাহ ইচ্ছা করলে সর্বাবস্থায় তাকে কথা বলাতে পারেন।
মৃত ব্যক্তির এ কথা বলা যে, ‘‘তোমরা আমাকে দ্রুত নিয়ে চলো’’। এর অর্থ হলো তার নেককাজের সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য দ্রুত চলার কথা। আর সে মনে করবে সে যেন সকলকে তা শুনাতে পারছে। অথবা আল্লাহ তা‘আলা তার মুখ দিয়ে এ কথা বের করে দিয়েছেন। যাতে তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার মানুষকে তা অবহিত করতে পারেন। অনুরূপভাবে বদকার তার ভয়াবহ পরিণতি জেনে বলবে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, লাশ বহনের দায়িত্ব পুরুষের ওপরই মহিলাদের ওপর নয়। তবে যদি পুরুষ পাওয়া না যায় তবে মহিলারা-ই বহন করবে।
১৬৪৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৮
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُوْمُوْا فَمَنْ تَبِعَهَا فَلَا يَقْعُدْ حَتّى تُوضَعَ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
রাবী (আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন লাশ দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে। যারা জানাযার সাথে থাকে তারা যেন (জানাযাহ্ লোকদের কাঁধ থেকে মাটিতে অথবা ক্ববরে) রাখার আগে না বসে। (বুখারী, মুসলিম) [১]
ইবনু ‘আবদুল বার এটাকে ওয়াজিব বলে দাবী করেছেন। ইমাম আহমাদ এবং তার সমমনা কতিপয় ফকীহ এটাকে মুস্তাহাব বলে মনে করেন। ইমাম ইবনু হাযমও এ মতেরই সমর্থক। ইমাম নাবাবী বলেনঃ মুস্তাহাব হওয়াটাই পছন্দনীয় মত। সাহাবীদের মধ্যে ইবনু ‘উমার (রাঃ), আবূ মাস‘ঊদ, ক্বায়স ইবনু সা‘দ, সাহল ইবনু হুনায়ফ প্রমুখ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন। পক্ষান্তরে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ ও তার সঙ্গীদয় (রহঃ) এ হুকুম মানসূখ বলে মনে করেন। ইমাম আহমাদ, ইসহাক প্রমুখ কতিপয় ইমাম মানসূখের দাবীকে নাকচ করে দিয়েছেন।
জানাযাহ্ অতিক্রমকালে না দাঁড়িয়ে বসে থাকার কথাও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং বুঝা যায় দাঁড়ানোর হুকুমটি মুস্তাহাব, ওয়াজিব বা আবশ্যক নয়। এ কথা ইবনু হাযম বলেছেন।
যারা জানাযার অনুগামী হবে তারা লাশ না রাখা পর্যন্ত বসবে না। এ রাখা খাটিয়া মাটিতে রাখাও হতে পারে, আবার লাশ ক্ববরে রাখাও হতে পারে।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ মাটিতে রাখার মতটিই প্রাধান্যযোগ্য। ইমাম বুখারী (রহঃ) অধ্যায় তৈরি করেছেনঃ ‘‘যারা জানাযার অনুগমন করবে তারা কাঁধ থেকে জানাযাহ্ নামানোর আগে বসবে না’’। ইমাম আবূ দাঊদও এ মতেরই পক্ষপাতি ছিলেন। হানাফীদের নিকট উত্তম হলোঃ লাশ মাটি দিয়ে শেষ করেই বসবে। তবে বাদায়ে, তাতার খানিয়া এবং ইনায়া গ্রন্থসমূহে তার বিরোধিতা করা হয়েছে। প্রত্যেকেই স্বীয় দলীল পেশ করেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাঃ ‘‘মানুষ যদি এ আওয়াজ শুনত তাহলে বেহুশ হয়ে যেত’’, এটা বদকার মৃত ব্যক্তির চিৎকার। নেক্কারের কথা হবে আশাব্যঞ্জক ও কোমল। কেউ কেউ বলেছেন, সকল মৃতের কথাই হবে ভয়ংকর। মানুষ তার কথা শুনবেন। এটা পৃথিবীর নেজাম ঠিক রাখার জন্য। ঈমানের বিষয়টিও এর সাথে সম্পৃক্ত, অর্থাৎ এর প্রতি ঈমান আনতে হবে।
১৬৪৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৪৯
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: مَرَّتْ جَنَازَةٌ فَقَامَ لَهَا رَسُولُ اللّهِ ﷺ وَقُمْنَا مَعَه فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللّهِ إِنَّهَا يَهُودِيَّةٌ فَقَالَ: «إِنَّ الْمَوْتَ فَزَعٌ فَإِذَا رَأَيْتُمْ الْجِنَازَة فَقُوْمُوْا». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একটি জানাযাহ্ যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তার সাথে দাঁড়ালাম। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো এক ইয়াহুদী মহিলার জানাযাহ্। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন। মৃত্যু একটি ভীতিকর বিষয়। অতএব যখনই তোমরা জানাযাহ্ দেখবে দাঁড়িয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম) [১]
সুনানে নাসায়ী, হাকিম প্রভৃতি গ্রন্থে আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ আমরা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) সম্মানে দাঁড়াতাম। ইবনু হিব্বান-এর এক বর্ণনায় রূহ কবযকারী মালাকের সম্মানে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ দাঁড়ানো বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। তবে ইয়াহূদীর উদ্দেশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আহমাদ ও ত্ববারানীর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ঐ দাঁড়ানো ছিল (ধুপ বা ঐ জাতীয় কোন কিছুর) দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য। (যেহেতু তারা মৃত লাশের সাথে ধুপ-লোবান ইত্যাদি বহন করে চলে)।
১৬৫০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫০
وَعَن عَليّ قَالَ: رَأَيْنَا رَسُولَ اللّهِ ﷺ قَامَ فَقُمْنَا وَقَعَدَ فَقَعَدْنَا يَعْنِىْ فِي الْجَنَازَةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةِ مَالِكٍ وَأَبِي دَاوُدَ: قَامَ فِي الْجَنَازَةِ ثُمَّ قَعَدَ بَعْدُ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতে দেখলাম। আমরাও তার সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বসলে আমরাও বসলাম। (মুসলিম, ইমাম মালিক ও আবূ দাঊদের বর্ণনার ভাষ্য হলো, তিনি জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতেন, তারপর বসতেন।) [১]
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি নাসেখ হওয়ার স্পষ্ট দলীল হতে পারে না। কেননা বসার বিষয়টি বায়ানে জাওয়ায বা বৈধ প্রমাণের জন্যও হতে পারে। মানসূখ তো তখনই ধরতে হয় যখন দু’টি পরস্পর বিরোধী হাদীসের মধ্যে সমম্বয় সম্ভব হয় না। অথচ এ দু’টি হাদীসের মধ্যে সুন্দর সমম্বয় সাধিত হয়েছে।
শায়খুল হাদীস আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) এ বিষয়ের বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ উপস্থাপনের পর বলেনঃ আমার নিকট প্রাধান্যযোগ্য কথা ওটাই যা ইমাম আহমাদ (রহঃ) গ্রহণ করেছেন। আর তা হলো প্রত্যেকের স্বাধীন ইচ্ছা, সে যদি দাঁড়ায় তাতে যেমন কোন দোষ নেই ঠিক তার বসে থাকাতেও কোন সমস্যা নেই।
১৬৫১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫১
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا وَكَانَ مَعَه حَتّى يُصَلّى عَلَيْهَا وَيُفْرَغَ مِنْ دَفْنِهَا فَإِنَّه يَرْجِعُ مِنَ الْأَجْرِ بِقِيرَاطَيْنِ كُلُّ قِيرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ وَمَنْ صَلّى عَلَيْهَا ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أَنْ تُدْفَنَ فَإِنَّه يَرْجِعُ بِقِيْرَاطٍ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায় ঈমান ও ইহ্তিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সলাত আদায় করে ক্ববরে দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু' ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সলাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (বুখারী, মুসলিম) [১]
ক্বীরাতের পরিমাণ বলা হয়েছে উহুদ পাহাড়ের সমান। ক্বীরাত মূলতঃ বিভিন্ন দেশে মুদ্রা, বস্তু বা পরিমাপের একটি অংশ বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ অধিকাংশের মতে এখানে ‘ক্বীরাতের’ অর্থ হলো সুবিশাল পরিমাপ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে বুঝানোর জন্য সকলের নিকট অতীব প্রিয় ও সুপরিচিত পাহাড় উহুদের সাথে তার দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ ‘উহুদ পাহাড় সম’ কথাটি হলো উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা। উদ্দেশ্য হলো বিরাট সাওয়াবের অংশ নিয়ে ফেরা। যার পরিমাণ একমাত্র আল্লাহর ‘ইলমেই রয়েছে।
আবার এমনও হতে পারে যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা‘আলা বান্দার এ ‘আমালকে প্রকৃত অর্থেই উহুদ পাহাড়ের মতো বড় করে তা ওজনে আনবেন।
এ হাদীসের মাধ্যমে জানাযার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়, মাইয়্যিতকে দাফন ইত্যাদির প্রতি মু’মিনদের উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলার বড় অনুগ্রহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
১৬৫২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫২
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَعى لِلنَّاسِ النَّجَاشِيَّ الْيَوْمَ الَّذِىْ مَاتَ فِيهِ وَخرج بِهِمْ إِلَى الْمُصَلّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সহাবা কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সলাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্র পেয়ে তিনি ভক্তি ভরে তা গ্রহণ করেন এবং তার চোখে মুখে লাগিয়ে চুম্বন করেন। পত্রের সম্মানে স্বীয় সিংহাসন অথবা খাটিয়া ছেড়ে সোজা মাটিতে বসে পরেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচাত ভাই জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ওয়াকিদী, ইবনু সা‘দ, ইবনু জারীর প্রমুখ নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের মতে তিনি নবম হিজরীর রজব মাসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর স্বীয় রাজ্যেই ইন্তিকাল করেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরে সাহাবীদের মধ্যে তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন এবং তার জন্য গায়িবী জানাযাহ্ আদায় করেন।
এ হাদীস দ্বারা মৃত সংবাদ ঘোষণা বৈধ সাব্যস্ত হয়। ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেনঃ
(بَابٌ الرَّجُلُ يَنْعى إِلى أَهْلِ الْمَيِّتِ بِنَفْسِه) (অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের নিকট তার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছানো)
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ এর দ্বারা প্রমাণিত, মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা পুরোটাই নিষিদ্ধ নয়। তবে জাহিলী যুগের রীতি পদ্ধতিতে মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা নিষেধ। সালাফদের একদল এ ব্যাপারে খুব বেশী কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, এমনকি কেউ মৃত্যুবরণ করলে তা অন্যকে জানাতেও তারা অপ্রস্ত্তত। এ হাদীস দ্বারা দূরদেশে মৃত্যুবরণকারীর গায়িবী জানাযাহ্ আদায়ের বৈধতাও প্রমাণিত হয়।
তবে এতে মনীষীদের বেশ কয়েকটি মতামত রয়েছে। একদল বিনা শর্তে এটাকে বৈধ মনে করেন। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ এবং জমহূর সালাফ এ মতের-ই প্রবক্তা। ইবনু হাযম এমনকি এ কথাও বলেছেন, কোন একজন সাহাবী থেকেও এর বিরোধিতা বা নিষেধাজ্ঞা আসেনি।
দ্বিতীয় আরেকদল কোন শর্তেই এটা বৈধ মনে করেন না। এটা হানাফী এবং মালিকীদের মত।
তৃতীয় দলের মতে মৃত্যুর দিন-ই কেবল গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলে তা বৈধ নয়।
চতুর্থ দলের বক্তব্য হলোঃ মৃত ব্যক্তি যদি ক্বিবলার দিকে থাকে তবে তার গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়। ইবনু হিব্বান এ মতের অনুসারী।
পঞ্চম দলের মতে, মৃত ব্যক্তি যদি এমন দেশে থাকে যেখানে তার জানাযাহ্ আদায়ের কেউ নেই, যেমন নাজাশী, এ অবস্থায় তার গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) এ মতটি গ্রহণ করেছেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর জন্য গায়িবী জানাযাহ্ আদায় করিয়েছিলেন, এর প্রকৃতি ও বাস্তবতা নিয়ে মনীষীদের বক্তব্য হলো- ঐ সময় তার লাশ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল, তিনি তা প্রত্যক্ষ করে জানাযাহ্ আদায় করেছেন, তবে লোকেরা দেখতে পায়নি। অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লাশের মাঝের দূরত্বের ব্যবধান অথবা পর্দা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি তার লাশ প্রত্যক্ষ করেই জানাযাহ্ আদায় করেছিলেন। কেউ বলেছেন, গায়িবী জানাযাহ্ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল, অন্যের বেলায় বৈধ নয়।
এর প্রত্যুত্তরে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, এ খাসের কোন দলীল সাব্যস্ত হয়নি। এভাবে কথায় কথায় খাসের দাবী করলে শারী‘আতের অনেক আহকামের দ্বারই রুদ্ধ হয়ে যাবে।
১৬৫৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৩
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ أَبِىْ لَيْلى قَالَ: كَانَ زَيْدُ بْنُ أَرْقَمَ يُكَبِّرُ عَلى جَنَائِزِنَا أَرْبَعًا وَأَنَّه كَبَّرَ عَلى جَنَازَةٍ خَمْسًا فَسَأَلْنَاهُ فَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ يُكَبِّرُهَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) সলাতুল জানাযায় চার তাকবীর বলতেন। এক জানাযায় তিনি পাঁচ তাকবীরও বললেন। আমরা তখন তাঁকে (এর কারণ) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীরও দিয়েছেন। (মুসলিম) [১]
ফাতহুল বারী, আল মুহাল্লা, মুগনী, মাসবূত প্রভৃতি গ্রন্থে ইমাম আবূ ইউসুফ ও আহলে জাওয়াহিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা পাঁচ তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন।
কেউ কেউ বলেছেন, চারের অধিক তাকবীর বিশেষ মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের সৌজন্যে। যেমন ‘আলী (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জানাযায় ছয় তাকবীর প্রদান করে বললেন, তিনি একজন বাদরী সাহাবী। ত্বহাবী, ইবনু আবী শায়বাহ্, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন, ‘আলী (রাঃ) বাদরী সাহাবীদের জন্য ছয়, সাধারণ সাহাবীদের জন্য পাঁচ, অন্যান্য মুসলিমদের জন্য চার তাকবীর দিতেন।
অন্য আরেক শ্রেণীর ‘আলিম বলেন, এটা ইমাম সাহেবের ইখতিয়ার সে যে কয় তাকবীর ইচ্ছা দিতে পারবে। মুক্তাদীগণ ইমামের পূর্ণ ইত্তেবা করবে। মুনযিরী ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে নয়, সাত, পাঁচ ও চার তাকবীরের বিবরণ উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের ইমাম যে কয় তাকবীর দেয় তোমরাও সে কয় তাকবীর দাও।
তিন ইমাম সহ জমহূর সাহাবী, তাবি‘ঈন পরবর্তী আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন তথা সালাফ ও খালাফগণ জানাযার সলাতে চার তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন, এর বেশীও নয় কমও নয়। এরা চারের অধিক তাকবীর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত বলে মনে করেন; কিন্তু এ কথাও প্রশ্নাতীত নয়। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ আমার নিকট অধিক গ্রহণীয় মত হলো চারের অধিক তাকবীর দিবে না।
কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এটাই ছিল সাধারণ ‘আমাল ও রীতি। তবে ইমাম সাহেব যদি পাঁচ তাকবীর দিয়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। কেননা পাঁচ তাকবীরের হাদীসও রদ করার মতো নয়।
চারের কম তাকবীর মোটেও বৈধ নয়, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন মারফূ' হাদীসেই চারের কমের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
১৬৫৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৪
وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ فَقَالَ: لِتَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
ত্বলহাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস-এর পেছনে এক জানাযার সলাত আদায় করেছি। তিনি এতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়েছেন এবং বলেছেন, আমি (স্বরবে) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ এজন্য পড়েছি, যেন তোমরা জানতে পারো সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়া সুন্নাত। (বুখারী) [১]
এছাড়াও বহু সাহাবী থেকে জানাযার সলাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুনযিরী এর বিস্তারিত তথ্যাদি পেশ করেছেন।
ইমামদের মধ্যে আয়িম্মায়ে সালাসা তথা ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাকসহ অসংখ্য ইমাম ও ফকীহ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন।
ইমাম তুরকিমানী বলেনঃ হানাফীদের নিকট জানাযার সলাতের সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ ওয়াজিবও নয় মাকরূহও নয়। মালিকীদের মতে এটা মাকরূহ। ইমাম মালিক বলেছেনঃ আমাদের মাদীনায় এ ‘আমাল প্রচলিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ইমাম মালিক-এর এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্, আবূ ‘উমামাহ্, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখসহ মাদীনার বড় বড় সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ফকীহ থেকে (সূরাহ্ আল ফা-তিহার) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠের ‘আমাল পাওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বললেন, এটা মাদীনাবাসীর ‘আমাল নয়? এরপরও কথা হলো এই যে, মাদীনাবাসীদের কোন ‘আমাল শারী‘আতের দলীল নয়।
ইবনু ‘আব্বাস-এর কথা- ‘এটা সুন্নাত’, এ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিরাচরিত সুন্নাহ বা নিয়ম। সুন্নাহ মানে ফারযের (ফরযের/ফরজের) বিপরীত এমনটি নয়, এটা ইস্তিলাহে উরফী বা স্বভাবসিদ্ধ পরিভাষা। আশরাফ বলেছেন, সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যা বিদ্‘আতের বিপরীত। আল্লামা কুসতুলানী বলেনঃ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা শার‘ঈ প্রণেতার পথ ও পন্থা। সুন্নাহ বলা এটা ওয়াজিব হওয়াকে নিষেধ করে না। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট কোন সাহাবীর সুন্নাহ দাবী এটা মারফূ' হাদীসের মর্যাদা রাখে। (ইবনু ‘আব্বাস-এর আরেকটি বর্ণনা ১৬৭৩ নং হাদীসে দেখুন)
জানাযার সলাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ কোথায় পাঠ করতে হবে? এ হাদীসে তার উল্লেখ নেই। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈর কিতাবুল উম্ম, বায়হাক্বী, নাসায়ী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে জাবির (রাঃ) প্রমুখাত হাদীসে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে প্রথম তাকবীর দিয়েই সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে।
মুসন্নাফে ‘আবদুর রাযযাক্ব, নাসায়ী প্রভৃতি গ্রন্থে আবূ ‘উমামাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানাযার সলাতে সুন্নাত হলো প্রথম তাকবীর দিয়ে উম্মুল কুরআন সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে। এরপর (তাকবীর দিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়বে..... প্রথম তাকবীর ছাড়া ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জানাযায় ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না মর্মে যে কথাটি রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ বর্জন মোটেও সঠিক নয়। কেননা এটা ছিল তার ব্যক্তিগত ‘আমাল। তাছাড়া তিনি ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাও পাঠ করতেন না বরং এর অর্থ হলো তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ ছাড়া অন্য কোন সূরাহ্ পাঠ করতেন না। উপরন্তু এটি নেতিবাচক কথা, আর সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীসটি হলো ইতিবাচক; উসূলে হাদীস তথা হাদীস বিজ্ঞানের মূলনীতি হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি হাদীস পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে ইতিবাচক হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। সর্বোপরি সাহাবীর কোন কথা বা ‘আমাল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত সুন্নাহকে বর্জন কিংবা রহিত করতে পারে না।
সমস্ত উম্মাতের ইজমা বা ঐকমত্য হলো, জানাযার সলাতও সলাতের অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাত বাঁধা, জামা‘আত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং অন্যান্য সলাতের ন্যায় এখানে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠও আবশ্যক। তাছাড়াও সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের নির্দেশ ও ‘আমাল সংক্রান্ত সুস্পষ্ট হাদীস যেখানে বিদ্যমান সেখানে সংশয় সন্দেহ আর কি থাকতে পারে?
জানাযাহ্ আদায়কালে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ অন্যান্য দু‘আগুলো স্বরবে না নীরবে পড়বে এ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনু ‘আব্বাসের হাদীসের ভিত্তিতে কতিপয় ‘আলিম জোরে পাঠ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। কিন্তু জমহূর ইমাম ও মুহাদ্দিসের মতে নীরবে পাঠ করাটাই মুস্তাহাব। আরেকদল বলেন, জোরে আস্তে পড়া হলো ইমামের ইখতিয়ার সে জোরেও পড়তে পারে আস্তেও পড়তে পারে।
শাফি‘ঈ মাযহাবের কোন কোন ‘আলিম বলেছেনঃ জানাযাহ্ রাতে পড়লে জোরে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তে আর দিনে হলে আস্তে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে।
‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর জোরে পড়ার বিষয়টি ছিল শিক্ষার জন্য, জোরে পড়াই যে সুন্নাত এ উদ্দেশ্য নয়।
১৬৫৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৫
وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: صَلّى رَسُولُ اللّهِ ﷺ عَلى جَنَازَةٍ فَحَفِظْتُ مِنْ دُعَائِه وَهُوَ يَقُولُ: «اللّهُمَّ اغْفِرْ لَه وَارْحَمْهُ وَعَافِه وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَه وَوَسِّعْ مُدْخَلَه وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّه مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِه وَأهْلًا خَيْرًا مِّنْ أَهْلِه وَزَوْجًا خَيْرًا مِّنْ زَوْجِه وَأدْخِلْهُ الْجنَّةَ وَأعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَقِه فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَ النَّارِ» قَالَ حَتّى تَمَنَّيْتُ أَنْ أَكُونَ أَنَا ذلِكَ الْمَيِّتُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক জানাযার সলাত আদায় করলেন। জানাযায় যেসব দু'আ তিনি পড়েছেন তা আমি মুখস্থ করে রেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “আল্ল-হুম্মাগ্ফির লাহ্ ওয়ার্হাম্হু ওয়া ’আ-ফিহী ওয়া’ফু আন্হু ওয়া আক্রিম নুযুলাহু ওয়া ওয়াস্সি' মু্দ্খলাহু ওয়াগ্সিল্হু বিলমা-য়ি ওয়াস্সালজি ওয়াল বারাদি ওয়ানাক্বিহী মিনাল খত্বা-ইয়া-কামা-নাক্কায়সাস্ সাওবাল আব্ইয়াযা মিনাদ্ দানাসি ওয়া আব্দিলহু দা-রান্ খয়রাম্ মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খয়রাম্ মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খয়রাম্ মিন যাওজিহী ওয়া আদ্খিলহুল ওয়াআ ’ইযহু মিন ’আযা-বিল ক্বব্রি ওয়ামিন আযা-বান্ না-র" (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহম করো, তাকে নিরাপদে রাখো। তার ভুল-ত্রূটি ক্ষমা করো, তাকে উত্তম মেহমানদারী করো (জান্নাতে), তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও ঠাণ্ডা (পানি) দিয়ে গোসল করাও। গুনাহখাতা হতে তাকে পবিত্র করো, যেমন তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করো। তাকে (দুনিয়ার) তার ঘরের চেয়ে উত্তম ঘর (জান্নাতে) দান করো, তার পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবারও দান করো। (দুনিয়ার) স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী (আখিরাতে) তাকে দিও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও, তাকে ক্ববরের আযাব এবং জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো।")। অপর এক বর্ণনার ভাষায়- “ওয়াক্বহী ফিত্নাতাল ক্ববরি ওয়া ’আযা-বান্ না-র" (অর্থাৎ ক্ববরের ফিতনাহ্ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাও)। এ দু'আ শুনার পর আমার বাসনা জাগলো, এ মৃত ব্যক্তি যদি আমি হতাম। (মুসলিম) [১]
আখিরাতে তার উত্তম সঙ্গীর অর্থ হলো হুরে ‘ঈন (ডাগর ডাগর উজ্জ্বল সুন্দর চোখবিশিষ্টা সুন্দরী রমণীগণ)। অথবা দুনিয়ার স্ত্রীও হতে পারে, তার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) সিয়াম ইত্যাদির কারণে তার স্ত্রীও হুরে ‘ঈনের চেয়েও উত্তম হয়ে যাবেন। ইমাম সুয়ূতী বলেন, অধিকাংশ ফকীহের মতে এটা শুধু পুরুষের বেলায় প্রযোজ্য নারীর জন্য নয়। আল্লামা শামী বলেন, আহল এবং সঙ্গী পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো সিফাত বা গুণাবলীর পরিবর্তন, জাত বা স্বত্ত্বার পরিবর্তন নয়।
১৬৫৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৬
وَعَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمنِ أَنَّ عَائِشَة لَمَّا تُوُفِّي سَعْدُ بْنِ أَبِىْ وَقَّاصٍ قَالَتْ: ادخُلُوا بِهِ الْمَسْجِدَ حَتّى أُصَلِّىْ عَلَيْهِ فَأُنْكِرَ ذلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ: وَاللّهِ لَقَدْ صَلّى رَسُولِ اللّهِ ﷺ عَلَى ابْنَيْ بَيْضَاءَ فِي الْمَسْجِدِ: سُهَيْلٍ وَأَخِيهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে (তাঁর লাশ বাড়ী হতে দাফনের জন্য আনার পর) আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তার জানাযাহ্ মসজিদে আনো, তাহলে আমিও জানাযাহ্ আদায় করতে পারব। লোকেরা (জানাযাহ্ মাসজিদে আনতে) অস্বীকার করলেন (কারণ তারা ভাবলেন, মসজিদে জানাযার সলাত কিভাবে আদায় করা যেতে পারে)। তখন আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বায়যা' নামী মহিলার দু'ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের জানাযার সলাত মসজিদে আদায় করিয়েছেন। (মুসলিম) [১]
এছাড়াও ইমাম হাকিম সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ ‘উমায়র ইবনু আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) ইন্তিকাল করলে আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ডেকে তার বাড়ীতে আনলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাড়ীতেই জানাযার সলাত আদায় করলেন। আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে দাঁড়ালেন আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তার পিছনে দাঁড়ালেন। এদের সাথে আর কেউ ছিলেন না। এ হাদীসটি সহীহ, বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ।
এটা ইমাম মালিক-এর মাযহাবও বটে, কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈ বলেন, নারীরা জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। এটাতো পুরুষদের সাথে নারীদের অংশ গ্রহণের কথা, কিন্তু পুরুষবিহীন শুধুমাত্র নারীরা জানাযার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে কিনা?
এ প্রশ্নে ইমাম ইবনুল কুদামাহ্ বলেন, মহিলাগণ জামা‘আত করতে পারবে, তবে ইমাম কাতারের মাঝে দাঁড়াবে।
ইমাম আহমাদ এর উপর (কুরআন-হাদীসের) নস পেশ করেছেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-ও এমন কথাই বলেছেন।
ইমাম শাফি‘ঈ বলেন, মহিলাগণ একা একা সলাত আদায় করবে, তবে যদি জামা‘আত করেই ফেলে তাও বৈধ।
এ হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, মাসজিদে জানাযার সলাত আদায় করা জায়িয। শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব সহ জমহূরের এটাই মত। ইমাম মালিক ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) তার বিপরীত মত পেশ করেছেন। এ মতাবলম্বীদের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নির্দেশের উপর সাহাবীরা আপত্তি করেছিলেন। এর প্রত্যুত্তরে মুহাদ্দিসগণ বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ওপর আপত্তি করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তার লাশ মাসজিদে আনা হয় এবং সকল সাহাবী সে জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। (একজনও আপত্তি করে জানাযাহ্ থেকে বিরত থাকেননি) বরং সকলেই তা মেনে নেন, আর পরবর্তীতে বিষয়টি এভাবেই স্থায়িত্ব রূপ লাভ করে। এর উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী দু’ খলীফা যথাক্রমে আবূ বাকর এবং ‘উমার (রাঃ)-এর জানাযাহ্ মাসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাভাবিক নিয়ম ছিল খোলা মাঠেই জানাযার সলাত আদায় করা।
১৬৫৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৭
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: صَلَّيْتُ وَرَاءَ رَسُولِ اللّهِ ﷺ عَلَى امْرَأَةٍ مَاتَتْ فِىْ نِفَاسِهَا فَقَامَ وَسَطَهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে এক মহিলার জানাযার সলাত আদায় করেছি। মহিলাটি নিফাস অবস্থায় মারা গেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]
আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আত্ তিরমিযী, ইমাম আহমাদ-এর মত বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম মহিলার মাঝ বরাবর দাঁড়াবে আর পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে। ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ, ইসহাক্ব, আবূ ইউসুফ প্রমুখ ইমামগণের মাযহাব এটাই, আর এটা হকও বটে। সামনে আনাস (রাঃ) ও সামুরাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এ মতেরই পোষকতায় বর্ণিত হয়েছে। স্বয়ং হিদায়া গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর দ্বিতীয় মতটি এটাই বর্ণিত হয়েছে। কেননা আনাস (রাঃ) এ রকম ‘আমাল করেছেন এবং বলেছেন, এটাই ‘সুন্নাত’। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) ইমাম আবূ হানীফার এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
আত্ তিরমিযীর ভাষ্যকার শায়খুল হাদীস ‘আল্লামা ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী (রহঃ), ইবনুল হুমাম-এর বুক ও কোমর বরাবর দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে তাবীল করেছেন তার প্রেক্ষিতে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পুরুষের মাথা বরাবর এবং নারীর কোমর বরাবর দাঁড়ানোর হাদীস প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন তাবীল বা ব্যাখ্যার দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোনই প্রয়োজন নেই।
১৬৫৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ مَرَّ بِقَبْرٍ دُفِنَ لَيْلًا فَقَالَ: «مَتَى دُفِنَ هذَا؟» قَالُوا: الْبَارِحَةَ. قَالَ: «أَفَلَا اذَنْتُمُونِىْ؟» قَالُوا: دَفَنَّاهُ فِىْ ظُلْمَةِ اللَّيْلِ فَكَرِهْنَا أَنْ نُوقِظَكَ فَقَامَ فَصَفَفْنَا خَلْفَه فَصَلّى عَلَيْهِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক ক্ববরের কাছ দিয়ে গেলেন, যাতে রাতের বেলা কাউকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বললেন, একে কখন দাফন করা হয়েছে? সাহাবীগণ জবাব দিলেন গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাকে অন্ধকার রাতে দাফন করেছি, তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জানাযার সলাত আদায় করলেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]
এ বিশুদ্ধ হাদীসসহ আরো কিছু হাদীস দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, রাত্রিবেলা দাফন করা বৈধ। খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের মধ্যে আবূ বাকর, ‘উমার (রাঃ) প্রমুখগণও রাত্রিতে দাফন করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নন্দিনী ফাত্বিমাহ্ (রাঃ)-কেও ‘আলী (রাঃ) রাত্রিকালেই দাফন করেছেন।
ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ, (এর প্রসিদ্ধ মত) ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমুখ ইমামসহ জমহূর ‘আলিমের মত ও মাযহাব এটাই।
পক্ষান্তরে ক্বাতাদাহ্, হাসান বসরী, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখ ‘আলিমগণের মতে রাত্রিকালে দাফন করা বৈধ নয়। ইবনু হাযম বলেন, একান্ত প্রয়োজন বা সমস্যা ছাড়া রাতে দাফন করা বৈধ নয়। এরা জাবির (রাঃ)-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি ইন্তিকাল করলে লোকেরা তাকে রাতে দাফন করে ফেলেন। খবর শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রাতে দাফন করার কারণে তিরস্কার করলেন এবং বললেন, একান্ত বাধ্য না হলে রাতে দাফন করবে না। আর যখন কারো কাফন দিবে তাকে উত্তম কাফন দিবে।
জমহূরের পক্ষ থেকে এ হাদীসের প্রত্যুত্তরে বলা হয় যে, লোকেরা রাতের অন্ধকারে নিকৃষ্ট কাপড় দিয়েই তাকে দাফন করেছিল, তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তিরস্কার করেন এবং রাতের বেলা কবর দিতে নিষেধ করেন। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) বলেন, সকল মুসলিম যাতে জানাযায় অংশগ্রহণ পূর্বক (জানাযাহ্ আদায়ের) ফাযীলাত লাভ করতে পারে তাই রাতের অন্ধকারে সামান্য কতিপয় লোক নিয়ে জানাযাহ্ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা প্রথম দিকে ছিল পরবর্তীতে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। অথবা জানাযাহ্ আদায় না করিয়েই রাতে দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ক্ববরের উপর জানাযার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের বৈধতাও এ হাদীস থেকে প্রমাণিত। চাই তার জানাযাহ্ আদায় করে দাফন করা হোক চাই বিনা জানাযায় দাফন করা হোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ আহলে ‘ইলম সাহাবী এবং বিজ্ঞ তাবি‘ঈ ও তৎপরবর্তী ইমাম মুজতাহিদ এ মতই অবলম্বন করেছেন। আবূ মূসা, ইবনু ‘উমার, ‘আয়িশাহ্, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, আনাস, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, ক্বাতাদাহ্ প্রমুখ সাহাবী এবং তাবি‘ঈ হতে এতদসংক্রান্ত বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, আওযা‘ঈ প্রমুখসহ সমস্ত হাদীসবিদ এ মতের-ই অনুসারী ছিলেন। এ বিষয়ে অনেক সহীহ ও হাসান হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। পক্ষান্তরে ইমাম নাখ্‘ঈ, সাওরী, মালিক, আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) প্রমুখ বলেন, মাইয়্যিতের ওলী উপস্থিত থেকে জানাযাহ্ হয়ে গেলে ঐ ব্যক্তির পুনঃ জানাযাহ্ জায়িয নেই। আর এ অবস্থা ছাড়া ক্ববরের উপরও জানাযাহ্ বৈধ নয়। অনুরূপ জানাযাহ্ ছাড়া দাফন হয়ে থাকলে তার জন্যই কেবল ক্ববরের উপর জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়।
কেউ কেউ বলেছেন, দাফনের পর ক্ববরের উপর সলাত আদায়ের বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। কিন্তু আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই দলীলের প্রয়োজন, কিন্তু এখানে তা নেই। ইমাম ইবনু হাযম বলেন, উল্লেখিত বাক্যে এমন দলীল নেই যে, এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। তাছাড়া অন্যের জন্য ক্ববরের উপর সলাত আদায়ের কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই।
ক্ববরের উপর জানাযার সলাত কতদিন পর্যন্ত চলবে? এটা নিয়েও কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
ইমাম আহমাদ, ইসহাক্ব ও শাফি‘ঈর অনুসারীরা একমাসকাল পর্যন্ত সলাত আদায় বৈধ মনে করেন।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, একমাত্র ওলী তিনদিন পর্যন্ত সলাত আদায় করতে পারবে। কিন্তু অন্যেরা আদায় করতেই পারবে না। নির্ভরযোগ্য একদল ‘উলামার মতে সর্বদাই ক্ববরের উপর জানাযার সলাত আদায় করা চলবে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুহাদায়ে উহুদের ক্ববরের উপর আট বছর পর জানাযাহ্ আদায় করিয়েছেন। এদের আরো যুক্তি হলো- সলাতুল জানাযার উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ। সুতরাং তা সর্বসময়ের জন্যই বৈধ, আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কোন সময়ও নির্ধারণ করে দেননি।
১৬৫৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৫৯
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ الْمَسْجِدَ أَوْ شَابٌّ فَفَقَدَهَا رَسُولُ اللّهِ ﷺ فَسَأَلَ عَنْهَا أَوْ عَنْهُ فَقَالُوا: مَاتَ. قَالَ: «أَفَلَا كُنْتُمْ اذَنْتُمُونِىْ؟» قَالَ: فَكَأَنَّهُمْ صَغَّرُوْا أَمْرَهَا أَوْ أَمْرَه. فَقَالَ: «دَلُّوْنِىْ عَلى قَبْرِه» فَدَلَّوْهُ فَصَلّى عَلَيْهَا. قَالَ: «إِنَّ هذِهِ الْقُبُورَ مَمْلُوءَةٌ ظُلْمَةً عَلَى اهْلِهَا وَإِنَّ اللّهَ يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلَاتِىْ عَلَيْهِمْ» . وَلَفْظُه لمُسْلِمٌ. (مُتَّفق عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একজন কালো মহিলা অথবা একটি যুবক (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মাসজিদে নবাবী ঝাড়ু দিত। একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে পেলেন না। তিনি সে মহিলা অথবা যুবকটির খোঁজ নিলেন। লোকেরা বলল, সে ইন্তিকাল করেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? (তাহলে আমিও জানাযায় শরীক থাকতাম)। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা এ মহিলার বা যুবকের বিষয়টিকে ছোট বা তুচ্ছ ভেবেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে কোথায় ক্ববর দেয়া হয়েছে আমাকে দেখাও। তারা তাঁকে ক্ববর দেখিয়ে দিল। তখন তিনি তার (কাছে গেলেন ও) ক্ববরে জানাযার সলাত আদায় করালেন, তারপর বললেন, এ ক্ববরগুলো এর অধিবাসীদের জন্য ঘন অন্ধকারে ভরা ছিল। আর আমার সলাত আদায়ের ফলে আল্লাহ তা’আলা এগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম; এ হাদীসের ভাষা মুসলিমের) [১]
১৬৬০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬০
وَعَنْ كُرَيْبٍ مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّه مَاتَ لَهُ ابْنٌ بِقُدَيْدٍ أَوْ بِعُسْفَانَ فَقَالَ: يَا كُرَيْبُ انْظُرْ مَا اجْتَمَعَ لَه مِنَ النَّاسِ. قَالَ: فَخَرَجْتُ فَإِذَا نَاسٌ قَدِ اجْتَمَعُوا لَه فَأَخْبَرْتُه فَقَالَ: تَقُولُ: هُمْ أَرْبَعُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: أَخْرِجُوهُ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ: «مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ عَلى جَنَازَتِه أَرْبَعُونَ رَجُلًا لَا يُشْرِكُونَ بِاللّهِ شَيْئًا إِلَّا شَفَّعَهُمُ اللّهُ فِيهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম কুরায়ব আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস-এর এক ছেলে (মাক্কার নিকটবর্তী) ’কুদায়দ’ অথবা ’উসফান’ নামক স্থানে মারা গিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! জানাযার জন্য কেমন লোক জমা হয়েছে দেখো। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম, জানাযার জন্য কিছু লোক একত্রিত হয়েছে। অতঃপর তাকে আমি এ খবর জানালাম। তিনি বললেন, তোমার হিসেবে তারা কি চল্লিশজন হবে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তখন বললেন, তাহলে সলাতের জন্য তাকে বের করে আনো। কারণ আমি রাসূলুল্লা্হ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন যদি তার জানাযার সলাত আদায় করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা এ মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুপারিশ কবুল করেন। (মুসলিম) [১]
চল্লিশজন মু’মিন কারো পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলে অথবা তার জন্য দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবূল করবেন।
১৬৬১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬১
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «مَا مِنْ مَيِّتٍ تُصَلِّىْ عَلَيْهِ أُمَّةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِائَةً كُلُّهُمْ يَشْفَعُونَ لَه: إِلَّا شُفِّعُوْا فِيهِ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সলাতে জানাযায় একশতজন মুসলিমের দল হাযির থাকবে, তাদের প্রত্যেকেই তার জন্য শাফা’আত (মাগফিরাত) কামনা করবে। তাহলে তার জন্য তাদের এ শাফাআত (কবূল) হয়ে যাবে। (মুসলিম) [১]
জানাযার লোক বেশী হওয়া চাই যাতে তাদের দু‘আ কবূলযোগ্য হয় এবং মৃত ব্যক্তি এর মাধ্যমে সফলতা লাভ করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশকারীদের দু’টি শর্ত থাকতে হবে।
(এক) সুপারিশকারীকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে এবং শির্কমুক্ত থাকতে হবে।
(দুই) সুপারিশকারী খালেসভাবে দু‘আ মাগফিরাত কামনা করবে।
মালিক ইবনু হুবায়রার হাদীসে এসেছে তিন কাতার লোক যার জানাযায় অংশগ্রহণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য (জান্নাত) ওয়াজিব করে দেন।
তিন কাতার, চল্লিশজন এবং একশতজন অংশগ্রহণের এ নানামুখী বর্ণনার ব্যাপারে ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, প্রথমে একশতজনের সুপারিশের কথা বলা হয়েছিল, তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এরপর চল্লিশজনের, অতঃপর তিন কাতারের কথা জানানো হয়েছিল ফলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেভাবেই পর্যায়ক্রমে হাদীস বর্ণনা করে জনগণকে অবহিত করেছেন।
ক্বাযী ‘আয়ায (রহঃ) বলেন, প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের ভিন্নতাসাপেক্ষে (উত্তরের) এ ভিন্নতা হয়েছে।
১৬৬২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬২
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَرُّوْا بِجَنَازَةٍ فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا. فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «وَجَبَتْ» ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرى فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا. فَقَالَ: «وَجَبَتْ» فَقَالَ عُمَرُ: مَا وَجَبَتْ؟ فَقَالَ: «هذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا فَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَهذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ أَنْتُم شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ» مُتَّفق عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ: «الْمُؤْمِنُونَ شُهَدَاءُ اللّهِ فِي الْأَرْضِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (একবার) এক জানাযায় গেলেন। সেখানে তারা মৃতের প্রশংসা করতে লাগলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। (ঠিক) এভাবে তারা আর এক জানাযায় গেলেন সেখানে তারা তার বদনাম করতে লাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ কথা শুনে ‘‘উমার জানতে চাইলেন। কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? (হে আল্লাহর রাসূল!) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ, তার জন্য জান্নাত প্রাপ্তি ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার বদনাম করেছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষী। (বুখারী, মুসলিম; অন্য আর এক বর্ণনার ভাষা হলো তিনি বলেছেন, মু’মিন আল্লহ তা’আলার সাক্ষী)। [১]
এটা সাহাবীগণের জন্যই খাস নয়, বরং ঈমান ইয়াকীনে যে কেউই ঐ গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হবে সে এ মর্যাদা পাবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘তোমরা (জমিনে) আল্লাহর সাক্ষী’’। আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এর অর্থ এই নয় যে, সাহাবীগণ বা মু’মিনগণ কারো ব্যাপারে যা বলল তাই হলো। কারণ যে জান্নাতের হকদার সে কখনো তাদের কথায় জাহান্নামী হতে পারে না অনুরূপ তার বিপরীতও হতে পারে না। বরং এর অর্থ হলো লোকেরা যার জীবনে কল্যাণকর কাজ দেখবে তার-ই প্রশংসা করবে। আর কল্যাণকর কাজ-ই তো জান্নাতে যাওয়ার কারণ ও আলামত। সুতরাং নেক ‘আমাল দেখে তার ব্যাপারে বলা যায় সে জান্নাতী। (এটাই হলো মু’মিনদের সাক্ষী)।
আল্লামা নাবাবী বলেন, আহলে ফাযল এবং দীনদারগণ যাদের প্রশংসা করে তাদের জন্যই এ কথা খাস। এ প্রশংসা যদি বাস্তবতার অনুকূলে হয় তাহলে সে জান্নাতী আর যদি বাস্তব ‘আমালের বিপরীত হয় তাহলে সে জান্নাতী হবে না। কিন্তু সত্য কথা হলো এ হুকুম ‘আম এবং মুত্বলাক্ব। মু’মিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ তখন মানুষের অন্তরে ইলহাম করে দেন ফলে সে তার বড় বড় প্রশংসা করে। এটাও তার জান্নাতী হওয়ার দলীল, ‘আমাল তার যাই হোক। আর শাস্তি দেয়া যেহেতু আল্লাহর জন্য আবশ্যক নয়, বরং তার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এর দ্বারা আমরা প্রমাণ (ও আশা) করতে পারি যে, এ প্রশংসার খাতিরে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং প্রশংসার উপকারিতা অবশ্যই সাব্যস্ত। তা না হলে শুধু কর্মই যদি জান্নাতের জন্য যথেষ্ঠ হত তাহলে প্রশংসা বেকার হত, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশংসার কথা বলতেন না। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত।
১৬৬৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬৩
وَعَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «أَيُّمَا مُسْلِمٍ شَهِدَ لَه أَرْبَعَةٌ بِخَيْرٍ أَدْخَلَهُ اللّهُ الْجَنَّةَ» قُلْنَا: وَثَلَاثَةٌ؟ قَالَ: «وَثَلَاثَةٌ» . قُلْنَا وَاثْنَانِ؟ قَالَ: «وَاثْنَانِ» ثُمَّ لم نَسْأَله عَن الْوَاحِد. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তির ভাল হবার ব্যাপারে চারজন লোক সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা আরয করলাম, যদি তিনজন (সাক্ষ্য দেয়)। তিনি বললেন, তিনজন দিলেও। আমরা (আবার) আরয করলাম, যদি দু’জন সাক্ষ্য দেয়? তিনি বললেন, দু’জন সাক্ষ্য দিলেও। তারপর আমরা আর একজনের (সাক্ষ্যের) ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। (বুখারী) [১]
১৬৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬৪
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا تَسُبُّوا الْأَمْوَاتَ فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلى مَا قَدَّمُوْا» رَوَاهُ البُخَارِيّ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা নিশ্চিতভাবে তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে। (বুখারী) [১]
কেননা الْأَمْوَاتَ শব্দের মধ্যে লাম বর্ণটি عهدى বা জানা, অর্থাৎ জানা-বিশেষ বা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মৃতদের গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, স্বতন্ত্র দলীল না আসা পর্যন্ত হাদীসের অর্থ ‘আমভাবেই গ্রহণ করতে হবে। যেমন- হাদীসের রাবীদের সমালোচনা করা বৈধ। এতে স্বতন্ত্র দলীল এবং উম্মাতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সমালোচনা জীবিত মৃত কাফির মুশরিক সকলেই সমান।
মৃতদের গালি দেয়া নিষেধের কারণ বলা হয়েছে যে, তারা তো তাদের কৃতকর্মের ফলাফল পেয়ে গেছে, এখন তোমার গালি দেয়াতে তাদের কোন ক্ষতিও হবে না এবং কোন লাভও হবে না। যেমন জীবিতদের বেলায় হয়ে থাকে।
১৬৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬৫
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ فِي قَتْلى أُحُدٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ ثُمَّ يَقُولُ: «أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْانِ؟» فَإِذَا أُشِيرَ لَه إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَه فِي اللَّحْدِ وَقَالَ: «أَنَا شَهِيْدٌ عَلى هَؤُلَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . وَأَمَرَ بِدَفْنِهِمْ بِدِمَائِهِمْ وَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُغَسَّلُوْا. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদদের দু’ দু’জনকে এক কাপড়ে জমা করেন। তারপর বলেন, কুরআন মজীদ এদের কারো বেশী মুখস্থ ছিল? এরপর দু’জনের যার বেশী কুরআন মুখস্থ আছে বলে ইশারা করা হয়েছে, তাকে আগে ক্ববরে রাখেন এবং বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন আমি এদের জন্য সাক্ষ্য দিব। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে দাফন করার নির্দেশ দেন। তাদের জানাযার সলাতও আদায় করেননি গোসলও দেয়া হয়নি। (বুখারী) [১]
হতে পারে শাহীদের পরনের কাপড়ের উপর দিয়ে প্রতি দু’জনকে একটি করে চাদর বহিরাবরণী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল, অথবা একটি লম্বা চাদর দু’ টুকরা করে প্রতি দু’জনকে ঢেকে দেয়া হয়েছিল সেটাই বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে দু’জনকে এক চাদরে কাফন দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি অনিবার্য প্রয়োজনে এটা জায়িয। প্রয়োজনে এক কাপড়ে দু’জনকে কাফন দেয়ার মতই এক ক্ববরেও দু’জনকে রাখা জায়িয। এ ক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যে যার কুরআনের জ্ঞান বেশী হবে তাকেই আগে ক্ববরে রাখতে হবে এবং ক্বিবলার দিকে রাখতে হবে। এটাই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মর্যাদার কারণে।
ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য সাক্ষ্য দিবেন, এটাও শাহীদদের সম্মান ও মর্যাদার কারণে।
এখানে জানা গেল যে, কাফিরদের সাথে যুদ্ধে নিহত শাহীদদের গোসল এবং জানাযাহ্ কোনটিই দিতে হবে না। এর প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব প্রমুখ ইমামগণ এ মতই অবলম্বন করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) এবং অন্য কতিপয় ‘আলিম সাধারণ মৃত্যুদের মতই শাহীদদেরও গোসল-জানাযার কথা বলেছেন। তিনি ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির বলেনঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শাহীদদের জানাযার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। শাফি‘ঈদের পক্ষ থেকে এর প্রতিউত্তরে বলা হয়েছেঃ এ সলাতের অর্থ (প্রচলিত) সলাত নয় বরং দু‘আ ইস্তিগফার। ইমাম নাবাবীও বলেন, সলাতের অর্থ এখানে দু‘আ। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দু‘আর অর্থই উপযুক্ত। ‘আমির ইয়ামানী বলেনঃ সলাত যে এখানে দু‘আর অর্থে এসেছে তার প্রমাণ হলো এ সলাতের জন্য তিনি সকলকে ডেকে জামা‘আতবদ্ধ করেননি যেমনটি তিনি নাজাশী বাদশাহর জানাযার ক্ষেত্রে করেছিলেন। অথচ জামা‘আতের সাথে জানাযার নামায আদায় করা অকাট্যভাবেই উত্তম। আর উহুদের শাহীদগণ তো শ্রেষ্ঠ মানুষই ছিলেন, কিভাবে এ শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর জানাযাহ্ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী আদায় করলেন? আরো কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ক্ববরের উপর একাকী জানাযাহ্ পড়ার কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
শাহীদদের গোসল না দেয়ার হিকমাত হলো এই যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন ঐ ক্ষত ও রক্ত থেকে মেশক আম্বারের ন্যায় ঘ্রাণ বের হতে থাকবে।
১৬৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬৬
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: أُتَى النَّبِيُّ ﷺ بِفَرَسٍ مَعْرُورٍ فَرَكِبَه حِينَ انْصَرَفَ مِنْ جَنَازَةِ ابْنِ الدَّحْدَاحِ وَنَحْنُ نَمْشِىْ حَوْلَه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জীন ছাড়া একটি ঘোড়া আনা হলো। (এ অবস্থায়ই) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার উপর আরোহণ করলেন। এরপর ইবনু দাহ্দাহ (রাঃ)-এর জানাযার সলাত সেরে তিনি ফিরে এলেন। আমরা তাঁর চারপাশে পায়ে হেঁটে চলছিলাম। (মুসলিম) [১]
রাবীর বর্ণনা- আমরা জানাযার অনুগমনে তার চারপাশ দিয়ে চলছিলাম। আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা প্রমাণিত আরোহী নেতার সাথে অনুসারীদের দল পদব্রজে গমন দোষণীয় নয়, যদি কোন সমস্যা না থাকে। সুনানে আবূ দাঊদ-এ সাওবান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক জানাযায় গমনকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি বাহন এনে দেয়া হলো কিন্তু তিনি তাতে আরোহণ করতে অস্বীকার করলেন। জানাযাহ্ শেষে যখন ফিরতে লাগলেন তখনো তাকে বাহন দেয়া হলো এবার তিনি এতে আরোহণ করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, নিশ্চয় মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) (জানাযার সাথে) পদব্রজে চলে থাকে। তারা হেঁটে চলছে আর আমি বাহনে উঠে চলতে পারি না। তারা যখন চলে গেছে তখন আমি বাহনে উঠলাম। ইমাম শাওকানী বলেন, এ হাদীসের সানাদ সহীহ।
১৬৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬৭
وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: «الرَّاكِبُ يَسِيرُ خَلْفَ الْجَنَازَةِ وَالْمَاشِىْ يَمْشِىْ خَلْفَهَا وَأَمَامَهَا وَعَنْ يَمِيْنِهَا وَعَنْ يَسَارِهَا قَرِيْبًا مِنْهَا وَالسَّقْطُ يُصَلّى عَلَيْهِ وَيُدْعى لِوَالِدَيْهِ بِالْمَغْفِرَةِ وَالرَّحْمَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَفِي رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَالتِّرْمِذِيِّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَهْ قَالَ: «الرَّاكِبُ خَلْفَ الْجَنَازَة وَالْمَاشِىْ حَيْثُ شَاءَ مِنْهَا وَالطِّفْلُ يُصَلّى عَلَيْهِ» وَفِي المَصَابِيْحِ عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ زِيَادٍ
মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরোহী চলবে জানাযার পশ্চাতে এবং পায়ে হাঁটা ব্যক্তিরা চলবে জানাযার সামনে পেছনে ডানে-বামে জানাযার কাছ ঘেষে। আর অকালে ভূমিষ্ট বাচ্চার সলাত আদায় করবে, তাদের মাতা-পিতার জন্য মাগফিরাত ও রাহ্মাতের দু’আ করবে। (আবূ দাঊদ) [১]
ইমাম আহ্মাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্-এর এক বর্ণনায় রাবী বলেছেন, আরোহীরা জানাযার পেছনে থাকবে। আর পায়ে চলা ব্যক্তির আগেপিছে যেভাবে পারে হাঁটবে। মৃত ছোট বাচ্চাদের জন্যও জানাযার সলাত আদায় করতে হবে। মাসাবীহ হতে এ বর্ণনাটি মুগীরাহ্ ইবনু যিয়াদ বর্ণনা করেছেন।
অত্র হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে, পদব্রজে গমনকারী জানাযার সামনে পিছনে ডানে বামে চতুর্দিক দিয়ে চলতে পারে। কেউ যদি একান্তই বাহনে চলতে বাধ্য হয় তবে সে যেন বেশখানিক পিছনে চলে।
অকালপ্রসূত সন্তানের জানাযাহ্ আদায়ের বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। জমহূরের মত হলো ভূমিষ্ট সন্তানের মধ্যে যদি (কান্না অথবা নড়াচড়ার মাধ্যমে) প্রাণের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার জানাযাহ্ আদায় করবে অন্যথায় নয়। (এর প্রমাণে তৃতীয় পরিচ্ছেদে ১৬৯১ হাদীসে বর্ণনা আসছে)।
পক্ষান্তরে ইমাম আহমাদ (রহঃ) অত্র মুত্বলাক্ব হাদীসের ভিত্তিতে বিনা শর্তে অকালপ্রসূত সন্তানের জানাযাহ্ বৈধ মনে করেন। চার মাস দশদিনে গর্ভস্থিত সন্তানের ভিতর রূহ্ প্রবিষ্ঠ করানো হয়। সুতরাং অকালে ভূমিষ্ট এ বয়সের সকল মৃত সন্তানেরই জানাযাহ্ আদায় করবে, চাই প্রাণের স্পন্দন প্রত্যক্ষ করুক অথবা না করুক।
১৬৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৫ঃ জানাযা
হাদীস নং : ১৬৬৮
وَعَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللّهِ ﷺ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ يَمْشُونَ أَمَامَ الْجَنَازَةِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ وَأَهْلُ الْحَدِيثِ كَأَنَّهُمْ يَرَوْنَه مُرْسَلًا
যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেছেন সালিম (রহঃ) থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র, ‘উমারকে জানাযার আগে আগে হেঁটে চলতে দেখেছি। (আহ্মাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্, ইমাম তিরমিয়ী বলেনঃ আহলুল হাদীসগণ যেন হাদীসটি মুরসাল মনে করেছেন [কিন্তু হাদীসটি সহীহ]) [১]
অন্য আরেকদলের বক্তব্য হলোঃ জানাযার পিছনে চলাই উত্তম। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং আহলে জাহির এ মতের অনুসারী। সাহাবী ‘আলী, ইবনু মাস‘ঊদ, আবূ দারদাহ, ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) প্রমুখ এ বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম আওযা‘ঈ এবং ইব্রা-হীম নাখ্‘ঈ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন। এদের বলিষ্ঠ দলীল হলো এ হাদীসঃ ‘‘মুসলিমের হক হলো জানাযার ইত্তেবা করা’’। অর্থাৎ জানাযার পিছনে চলা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘সে (মুসলিম) যখন মারা যায় তুমি তার জানাযার অনুসরণ করো। অর্থাৎ পিছে চলো’’। সুতরাং এদের মতে পিছে চলাই উত্তম।
তৃতীয় মত হলোঃ আগে পিছে চলা উভয়-ই প্রশস্ততা রয়েছে। গমনকারী যেখান দিয়ে ইচ্ছা চলবে। ইমাম সাওরী এ মতের প্রবক্তা। ‘আবদুর রাযযাক ইবনু আবী শায়বাহ্ আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে এ সংক্রান্ত রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারাকপূরী (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারীর ঝোক এদিকেই।
চতুর্থ দলের মতেঃ পদব্রজে গমনকারীর আগে চলাই উত্তম আর আরোহীর জন্য পিছনে চলা উত্তম। ইমাম আহমাদ এ মত অবলম্বন করেছেন।
পঞ্চম মতঃ পঞ্চম মত অনেকটা চতুর্থ মতের মতই।
ষষ্ঠ মত হলোঃ জানাযার সন্নিকটে হলে আগে চলাই উত্তম অন্যথায় পিছনে চলবে। মিশকাতের ভাষ্যকার আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারাকপূরী (রহঃ) বলেন, আমার নিকট দ্বিতীয় মতটি গ্রহণযোগ্য।