৫৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৬৪
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ হতে অপর জুমু’আহ পর্যন্ত এবং এক রমযান হতে আরেক রমযান পর্যন্ত সব গুনাহের কাফ্ফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ গুনাহ সমূহ বেঁচে থাকা হয়। [১]
৫৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৬৫
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهَرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا هل يُبْقى مِنْ دَرَنِه شَىْءٌ قَالُوا لَا يُبْقى مِنْ دَرَنِه شَيْئٌ قَالَ فَذلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে ) বললেন, আচ্ছা বল তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগ্ণ উত্তরে বললেন, না কোন ময়লা থাকতে পারে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাসমূহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন । [১]
৫৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৬৬
وَعَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ إِنَّ رَجُلًا أَصَابَ مِنْ امْرَأَةٍ قُبْلَةً فَأَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَأَخْبَرَه فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالى أَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ فَقَالَ الرَّجُلُ يَا رَسُولَ اللهِ أَلِي هَذَا قَالَ لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ وَفِىْ رَوَايَةٍ لِّمَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ اُمَّتِىْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘আবদুল্লাহ (বিন মাস’উদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমু দিয়েছিল । তারপর সে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি বলল। এ সময়ে আল্লাহ্ ওয়াহী নাযিল করেনঃ “সালাত ক্বায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে । নিশ্চয় নেক কাজ পাপ কাজকে দূর করে দেয়” (সুরাহ হূদ ১১:১১৪) । [১]
মুহাদ্দিসীনে কিরাম উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, কোন মহিলাকে চুমু দেয়া ও স্পর্শ করার কারণে কারো ওপর ‘‘হাদ্দ’’ কার্যকর করা আবশ্যক নয়। আর কেউ এরূপ করে অনুতপ্ত হলে ও তাওবাহ্ করলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না।
৫৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৬৭
وَعَنْ أَنَسِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ قَالَ وَلَمْ يَسْأَلْهُ عَنْهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلّى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ ﷺ الصَّلَاةَ قَامَ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْ فِيَّ كِتَابَ اللهِ قَالَ أَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ اللهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ أَوْ قَالَ حَدَّكَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! আমি ‘হাদ্দ’ যোগ্য-এর কাজ (অপরাধ) করে ফেলেছি। আমার উপর তা প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। বরং সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। লোকটিও রসূলের সাথে সলাত আদায় করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করলে লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদ্দ-এর কাজ করেছি। আমার উপর আল্লাহর কিতাবের নির্দিষ্ট হাদ্দ জারী করুন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সলাত আদায় করনি। লোকটি বলল, হ্যাঁ, করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (এ সলাতের মাধ্যমে) আল্লাহ তোমার গুনাহ বা হাদ্দ মাফ করে দিয়েছেন। [১]
৫৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৬৮
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ ﷺ أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلَاةِ لَوَقْتِهَا قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِىْ بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُه لَزَادَنِي. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
[‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ কাজ (‘আমাল) আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? তিনি( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সঠিক সময়ে সলাত আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। রাবী [ইবনু মাস’উদ(রহঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এসব উত্তর দিলেন। আমি যদি আরও জিজ্ঞেস করতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আরও কথা বলতেন। [১]
৫৬৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৬৯
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল সলাত পরিত্যাগ করা। [১]
৫৭০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭০
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللّهُ تَعَالى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَه عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَه وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَه عَلَى اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَه وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَه. رَوَاهُ أَحْمَد وأَبُوْ دَاوٗدَ وروى مالك وَالنَّسَائِـيُِّ نحوه
‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফারয্ করেছেন। যে ব্যক্তি এ সলাতের জন্য ভালভাবে উযূ করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [৫৮৩] মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [১]
৫৭১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭১
وَعَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ. رَوَاهُ أَحْمَد وَالتِّرْمِذِيُّ
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের উপর ফারয্ করা পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় কর, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা মাসটির সিয়াম (রোযা) পালন কর, আদায় কর তোমাদের ধন- সম্পদের যাকাত এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের অনুগত্য কর। তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [১]
৫৭২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭২
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَكَذَا رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ عَنْهُ
আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমার সন্তানদের বয়স সাত বছরে পৌছবে তখন তাদেরকে সলাত আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। আর (সলাত আদায় করার জন্য) তাদের শাস্তি দিবে যখন তারা দশ বছরে পৌছবে এবং তাদের ঘুমানোর স্থান পৃথক করে দিবে। [১] শারহে সুন্নাহ- তে এভাবে রয়েছে।
৫৭৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৩
وَفِىْ الْمَصَابِيْحِ عَنْ سَبْرَةَ بْنِ مَعْبَدٍ
সাবরাহ্ ইবনু মা‘বাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কিন্তু মাসাবীহ-তে সাবরাহ্ বিন মা’বাদ হতে বর্ণিত হয়েছে।
৫৭৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৪
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ وابن مَاجَةَ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হল সলাত। অতএব যে সলাত পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করল (অর্থাৎ কাফির হয়ে যাবে)। [১]
৫৭৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৫
عَنْ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي عَالَجْتُ امْرَأَةً فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَإِنِّي أَصَبْتُ مِنْهَا مَا دُونَ أَنْ أَمَسَّهَا فَأَنَا هذَا فَاقْضِ فِيَّ مَا شِئْتَ فَقَالَ لَه عُمَرُ لَقَدْ سَتَرَكَ اللّهُ لَوْ سَتَرْتَ نَفْسَكَ قَالَ وَلَمْ يَرُدَّ النَّبِيُّ ﷺ شَيْئًا فَقَامَ الرَّجُلُ فَانْطَلَقَ فَأَتْبَعَهُ النَّبِيُّ ﷺ رَجُلًا فَدَعَاهُ وَتَلَا عَلَيْهِ هذِهِ الْآيَةَ أَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذلِكَ ذِكْرَاى لِلذَّاكِرِينَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الْقَوْمِ يَا نَبِيَّ اللهِ هذَا لَه خَاصَّةً قَالَ بَلْ لِلنَّاسِ كَافَّةً. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মাদীনার উপকন্ঠে এক মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর সব রসাস্বাদন করেছি। আমি আপনার দরবারে উপস্থিত, তাই আমার প্রতি এ অপরাধের কারণে যা শাস্তি বিধান করার তা আপনি করুন। ‘উমার (রহঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার অপরাধ ঢেকে রেখেছিলেন। তুমি নিজেও তা ঢেকে রাখতে (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে, তবে তা উত্তম হত)। বর্ণনাকারী (‘আবদুল্লাহ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কথার কোন উত্তর দিলেন না। তাই লোকটি উঠে চলে যেতে লাগল। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পিছনে লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং তার সামনে এ আয়াত পাঠ করলেন- (অর্থ) “সলাত কায়িম কর দিনের দু’অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ বদ কাজকে দূর করে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারী জন্য এটা একটা উপদেশ”- (সূরাহ্ হূদঃ ১১:১১৪) । এ সময়ে উপস্থিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর নাবী ! এ হুকুম কি বিশেষভাবে তার জন্য। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, না, বরং সকল মানুষের জন্যই। [১]
৫৭৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৬
وَعَنْ أَبِيْ ذَرٍّ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ خَرَجَ زَمَنَ الشِّتَاءِ وَالْوَرَقُ يَتَهَافَتُ فَأَخَذَ بِغُصْنَيْنِ مِنْ شَجَرَةٍ قَالَ فَجَعَلَ ذلِكَ الْوَرَقُ يَتَهَافَتُ قَالَ فَقَالَ يَا أَبَا ذَرٍّ قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ إِنَّ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ لَيُصَلِّ الصَّلَاةَ يُرِيدُ بِهَا وَجْهَ اللهِ فَتَهَافَتُ عَنْهُ ذُنُوبُه كَمَا تَهَافَتُ هذَا الْوَرَقُ عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ. رَوَاهُ أَحْمَد
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক শীতের সময়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল । তিনি একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগল। আবূ যার (রহঃ) বলেন, তখন তিনি আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সলাতে আদায় করে, আর জ়ীবন থেকে তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। [১]
৫৭৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৭
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدِ الْجُهَنِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلّى سَجْدَتَيْنِ لَا يَسْهُوْ فِيْهِمَا غَفَرَ الله ُلَه مَا تَقدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. رَوَاهُ أَحْمَد والْبَيْهَقِىُّ وَالْبَيْهَقِىُّ
যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা করে দিবেন। [১]
৫৭৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৮
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّه ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ «مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَه نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَه نُورٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ». رَوَاهُ أَحْمَد وَالدَّارِمِيُّ والْبَيْهَقِىُّ في شُعَبِ الْإِيْمَانِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন সলাত সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন: যে ব্যক্তি সলাতের হিফাযাত করবে, তা ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের হিফাযাত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির কারণ হবে না। ক্বিয়ামাতের দিন সে কারূন, ফির‘আওন, হামান ও উবাই বিন খালাফ-এর সাথে থাকবে। [১]
এখানে কিছু মনীষী একটি সূক্ষ্ম বিষয় বুঝিয়েছেন যে, সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগকারী ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয়ে যায় এবং হাদীসের মধ্যে বর্ণিত চারজন মহা অপরাধীর সাথে চির জাহান্নামী হবে। কারণ মুসলিম হয়ে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করা আল্লাহর দৃষ্টিতে একটি বড় মাপের প্রতারণা।
৫৭৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৭৯
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْل اللهِﷺ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُه كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
আবদুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণ সলাত ছাড়া অন্য কোন ‘আমাল পরিত্যাগ করাকে কুফ্রী বলে মনে করতেন না। [১]
৫৮০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮০
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي أَنْ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ. رَوَاهُ ابن مَاجَةَ
আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন : (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করবে না, যদিও তোমাকে খন্ড-বিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়, (২) ইচ্ছা করে কোন ফার্য সলাত ত্যাগ করবে না’। যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফার্য সলাত ত্যাগ করবে তার উপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে, (৩) মদ পান করবে না। কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। [১]
প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশে সাময়িকের জন্য শির্কী বাক্য উচ্চারণ করা যেতে পারে কিন্তু তা না করে শহীদ হতে পারলে আল্লাহর নিকট একটি বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যাবে।
৫৮১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮১
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ الرَّجُلُ كَطُولِه مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلى نِصْفِ اللَّيْلِ الْأَوْسَطِ وَوَقْتُ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاةِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সূর্য ঢলে পড়ার সাথে যুহরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন ‘আস্রের সলাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়। ‘আস্রের সলাতের ওয়াক্ত যুহরের সলাতের পর থেকে যে পর্যন্ত সূর্য হলদে রং ধারণ না করে এবং সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশের লালিমা মিশে যাবার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। আর ‘ইশার সলাতের ওয়াক্ত মাগরিবের সলাতের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফাজরের সলাতের ওয়াক্ত ফা্জর অর্থাৎ সুবহে সাদিকের উদিত হবার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতঃপর সূর্যোদয় হতে শুরু করলে সলাত হতে বিরত থাকবে। কেননা সূর্যোদয় হয় শায়ত্বনের দু’শিং-এর মধ্য দিয়ে। [১]
এভাবে যে, ঠিক দুপুর বেলায় যখন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর পৌঁছে যাওয়ার পর পশ্চিম দিকে গড়তে আরম্ভ করে ঠিক তখন যুহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়ে যায় এবং প্রতিটি বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত যুহরের সময় থাকে। ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পরপর যুহরের সময় সমাপ্ত হয়ে যায় এবং ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায়। দু’ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) যেমন একই সময়ের মধ্যে একত্রিত হয় না তেমনি দু’ সলাতের মাঝখানে কিছু সময় ফাঁকাও থাকে না যে, এটা যুহরেরও নয় আবার ‘আসরের নয়। বরং এক সলাতের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় সলাতের সময় আরম্ভ হয়ে যায়।
‘আসরের সময় আরম্ভ প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার পর পরই এবং উজ্জ্বল সাদা চকচকে সূর্য লালে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত চালু থাকে। কিন্তু এটা হলো ‘আসরের উত্তম ও আল্লাহর পছন্দনীয় সময়।
কারণ অন্য হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, সূর্য ডুবতে আরম্ভ হওয়ার পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি ‘আসরের এক রাক্‘আতও পড়তে পারে তাহলে তার ‘আসর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ‘আসরের সময়েই আদায় হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। এ হাদীস সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবে রয়েছে।
ইমাম নাবাবী বলেন, ‘আসরের সময় সূর্য ডুবতে আরম্ভ হওয়া পর্যন্ত চালু থাকে এ কথায় সমস্ত মাযহাবের সকল ইমাম ও মুহাদ্দিস একমত। আর মাগরিবের সময় আরম্ভ হয় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর পরই এবং তা চালু থাকে পশ্চিম গগণে সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত।
তারপর ‘ইশার সময় লাল আভা গায়েব হওয়ার পর থেকে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত। অবশ্য এটা পছন্দনীয় ও উত্তম সময়। কারণ অন্য হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ফজরের (ফজরের) আযানের আগ পর্যন্ত ‘ইশা পড়ে নিতে পারলে তা সঠিক সময়ে আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে।
তারপর ফাজর (ফজর)-এর সময় আরম্ভ হয় সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার সাথে সাথে এবং সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত যদি সূর্য উদিত হয়ে যায় তাহলে সলাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। কেননা সূর্য উদিত হওয়ার সময় যে কোন সলাত আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সে সময় ইবলীস সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়ায় আর সূর্যের পূজারীগণ সূর্যের পূজা আরম্ভ করলে ইবলীস এ কথা ভেবে নেয় যে, এরা আমার পূজা করছে। এতে সে মনে মনে আনন্দিত হয়। মু’মিন ব্যক্তিকে মুশরিকদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করেছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৫৮২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮২
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ اِنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ فَقَالَ لَه صَلِّ مَعَنَا هَذَيْنِ يَعْنِي الْيَوْمَيْنِ فَلَمَّا زَالَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ ثُمَّ أَمَرَه فَأَقَامَ الظُّهْرَ ثُمَّ أَمَرَه فَأَقَامَ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ ثُمَّ أَمَرَه فَأَقَامَ الْمَغْرِبَ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ ثُمَّ أَمَرَه فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ ثُمَّ أَمَرَه فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ فَلَمَّا أَنْ كَانَ الْيَوْمُ الثَّانِي أَمَرَه فَأَبْرِدْ بِالظُّهْرِ فَأَبْرَدَ بِهَا فَأَنْعَمَ أَنْ يُبْرِدَ بِهَا وَصَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ أَخَّرَهَا فَوْقَ الَّذِي كَانَ وَصَلَّى الْمَغْرِبَ قَبْلَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ وَصَلَّى الْعِشَاءَ بَعْدَمَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ وَصَلَّى الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ بِهَا ثُمَّ قَالَ أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ فَقَالَ الرَّجُلُ أَنَا يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ وَقْتُ صَلَاتِكُمْ بَيْنَ مَا رَأَيْتُمْ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, আমাদের সাথে এ দু’ দিন সলাত আদায় কর। প্রথমদিন সূর্য ঢলে পড়লে তিনি বিলাল (রাঃ)-কে হুকুম দিলেন আযান দিতে। বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। এরপর তিনি নির্দেশ দিলে বিলাল (রাঃ) যুহরের সলাতের ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর (‘আস্রের সময়) তিনি বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ‘আস্রের সলাতের ইক্বামাত দিলেন। তখনও সূর্য বেশ উঁচুতে ও পরিষ্কার সাদা। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি মাগরিবের ইক্বামাত দিলেন। তখন সূর্য দেখা যাচ্ছে না। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ‘ইশার সলাতের ইক্বামাত দিলেন, যখন মাত্র লালিমা অদৃশ্য হল। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ফাজরের সলাতের ইক্বামাত দিলেন। তখন ঊষা (সুবহে সাদিক) দেখা দিয়েছে। যখন দ্বিতীয় দিন এলো তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, যুহরের সলাত ঠান্ডা পড়া পর্যন্ত দেরী করতে। বিলাল দেরী করলেন। রোদের তাপ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত দেরী করলেন। তারপর ‘আস্রের সলাত আদায় করলেন। সূর্য তখন উঁচুতে অবস্থিত, কিন্তু সলাতে পূর্বের দিনের চেয়ে বেশী দেরী করলেন। মাগরিবের সলাত আদায় করলেন লালিমা অদৃশ্য হবার কিছুক্ষণ আগে। আর এ দিন ‘ইশার সলাত আদায় করলেন রাতের এক তৃতীয়াংশ শেষ হবার পর। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করলেন বেশ পরিষ্কার হওয়ার পর। সবশেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তি কোথায়? সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! এই যে আমি। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সলাত আদায় করার ওয়াক্ত হল, তোমরা যা (দু’ সীমা) দেখলে তার মধ্যস্থলে। [১]
যা হোক প্রথম দিন সূর্য নিরক্ষরেখা থেকে পশ্চিম দিকে গড়ানোর সাথে সাথে বিলাল (রাঃ)-কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন যুহরের জন্য আযান দিতে। আযান হলো, সুন্নাতের জন্য কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর ইক্বামাতের জন্য আদেশ দিলেন। যুহর আদায় করলেন। ‘আসরের সময় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার পর পরই আযানের জন্য আদেশ হলো। আযান হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা তারপর ‘আসর আদায় করলেন। ‘আসরের সলাতের পর সূর্য ছিল উজ্জ্বল সাদা চকচকে তাতে লালিমার লেশ মাত্র দৃষ্টিগোচর হয়নি।
তারপর সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পরই আযান, অতঃপর ইক্বামাত ও মাগরিব আদায় করলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন সূর্যের লাল আভা মুছে গেল তখন ‘ইশার জন্য আযান হলো, কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর ‘ইশা আদায় করলেন। নিদ্রা যাওয়ার পর সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে ফাজরের (ফজরের) আযান দেয়া হলো। কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর গালাসের মধ্যে অর্থাৎ- ভোরের অন্ধকারের মধ্যে ফাজর (ফজর) আদায় করলেন।
দ্বিতীয় দিনের সকাল হলো তারপর দুপুর হলো তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে আদেশ দিলেন, আজ বিলম্ব করো। দুপুরের গরম কম হোক। যুহরে শেষ সময়টি কাছাকাছি হোক। তাই হলো এ দিন যুহরকে তার শেষ সময়ে আদায় করলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সূর্য সাদা উজ্জ্বল থাকা অবস্থায় যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হলো তখন আযান কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পরে ইক্বামাত ও ‘আসর আদায় করলেন।
তারপর অপেক্ষা করলেন সূর্য অস্তমিত হলো কিন্তু এ দিন সাথে সাথে নয় বিলম্ব করতে বললেন। লাল আভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে মাগরিবের আযান ও ইক্বামাত তারপর সলাত এমনভাবে আদায় করলেন যে, মাগরিবের সলাত শেষের পর পরই সূর্যের লাল আভা গায়িব হয়ে গেল। অর্থাৎ- দ্বিতীয় দিন মাগরিব তার শেষ সময়ে পড়া হলো। মাগরিবের পর পরই আজ ‘ইশার সময় আরম্ভ হয়ে গেল কিন্তু আজ দ্বিতীয় দিন ‘ইশা বিলম্ব করলেন এবং রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পার করার পর ‘ইশার সলাত আদায় করলেন।
নিদ্রা যাওয়ার পর সুবহে সাদিক হলো, কিন্তু আজ গালাস তথা ভোরের অন্ধকারে নয় কিছুক্ষণ বিলম্ব করে যখন একটু আলো হলো তখন ফাজর (ফজর) আদায় করলেন।
অতঃপর উক্ত সাহাবী বললেন, প্রথম দিনের সলাতগুলো আরম্ভ এবং দ্বিতীয় দিনে সলাতগুলো শেষ এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সময়টি তোমাদের সলাতের সময়। কিন্তু এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, এটা হলো সলাতের উত্তম ও আল্লাহর নিকট পছন্দীয় সময়।
কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য বাণীর ও আ‘মালের মাধ্যমে জানা যায় যে, যুহর আরো একটু বিলম্ব করা যায় এবং ‘আসর সূর্য ডোবা পর্যন্ত এবং ‘ইশা সকল ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের মতে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করতে পারলে ‘ইশা তার সঠিক সময়ে পড়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
৫৮৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৩
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَمَّنِي جِبْرِيلُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَتْ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَصَلّى بِيَ الْعَصْرَ حِينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَىْءٍ مِثْلَه وَصَلّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِينَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلّى بِيَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ وَصَلّى بِيَ الْفَجْرَ حِينَ حَرُمَ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ عَلَى الصَّائِمِ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ صَلّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّه مِثْلَه وَصَلّى بِي الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّه مِثْلَيْهِ وَصَلّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِينَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلّى بِيَ الْعِشَاءَ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَصَلّى بِيَ الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ هذَا وَقْتُ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা‘বার কাছে দু’বার আমার সলাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সলাত আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ‘আস্রের সলাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হল। মাগরিবের সলাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ‘ইশার সলাত আদায় করালেন যখন ‘শাফাক্ব অস্ত হল। ফাজরের সলাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়। দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সলাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ‘আস্রের সলাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সলাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার করে। ‘ইশার সলাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নাবীগণের সলাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সলাতের ওয়াক্ত। [১]
সুতরাং কা‘বাহ্ গৃহের নিকট জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে পরপর দু’দিন পাঁচ পাঁচ ওয়াক্তের সলাত আদায় করলেন। উদ্দেশ্য ছিল সলাতের সময় কখন আরম্ভ হয় ও কখন শেষ হয় তা হাতে কলমে বুঝানো।
সুতরাং প্রথম দিন যখন সূর্য নিরক্ষরেখা হতে খুব সামান্য পরিমাণ পশ্চিম দিকে গড়ল এবং কোন জিনিসের ছায়া তার পূর্ব দিকে জুতার ফিতা অর্থাৎ- খুব সামান্য পরিমাণ দেখা দিলো তখন যুহর পড়লেন। উল্লেখ্য যে, সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ার পর কোন বস্ত্তর ছায়া যতটুকু পরিমাণে দৃষ্টিগোচর হয়েছিল তা ছিল ঐ ঋতুতে এবং মক্কা নগরীতে খুব সামান্য পরিমাণে। মনে রাখার দরকার যে, এ ছায়াটি ঋতুভেদে এবং দেশভেদে কম বেশী হয়। অর্থাৎ- যে দেশগুলো নিরক্ষরেখার ঠিক সোজাসুজিতে আছে সে দেশগুলোতে এ ছায়াটি খুব কম পরিমাণে দেখা দেয় এবং যে দেশগুলো নিরক্ষরেখা হতে উত্তর দিকে দূরে আছে সে দেশগুলোতে এ ছায়াটি বেশী পরিমাণে দেখা দিবে।
অতঃপর যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলো তখন ‘আসর আদায় করলেন।
উল্লেখ্য যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায় এটাই হচ্ছে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম হাসান ও ইমাম যুফার-এর ফাতাওয়া। তাছাড়া হানাফী মাযহাবের গণ্যমান্য ‘আলিম ইমাম তাহাবীর ফাতাওয়াও এটাই। তাছাড়া ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র ইমাম হাসান স্বীয় উস্তায (উস্তাদ) ইমাম আবূ হানীফার কাছ হতে একটি উক্তি বা ফাতাওয়া বর্ণনা করেছেন যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সময় শুরু হয়ে যায়। ইমাম আবূ হানীফার এ ফাতাওয়া হানাফী মাযহাবের সাধারণ কিতাবের মধ্যে দেখা যায়। তাছাড়া হুবহু এ ফাতাওয়াটি ইমাম মুহাম্মাদ ইমাম আবূ হানীফার পক্ষ হতে বর্ণনা করেছেন ‘‘আল মাবসুত’’ নামক কিতাবের মধ্যে।
কিন্তু জনসাধারণের মাঝে এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফার যে ফাতাওয়া প্রসিদ্ধ আছে তা হচ্ছে এই যে, কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর ‘আসরের সময় শুরু হয়। হানাফী মাযহাবের একজন বড় ‘আলিম মাওলানা ‘আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী সাহেব স্বীয় কিতাব ‘‘আত্ তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ’’-এর মধ্যে বলেছেন যে, ইনসাফের কথা হচ্ছে এই যে, ছায়া সমপরিমাণের হাদীসগুলো স্বীয় অর্থ প্রকাশের দিক দিয়ে পরিষ্কার ও সানাদগত দিক দিয়ে সহীহ এবং ছায়া দ্বিগুণের হাদীসগুলোতে এ কথা পরিষ্কার করে বলা হয়নি যে, ছায়া দ্বিগুণ না হলে ‘আসরের সময় আরম্ভ হয় না। যারা ছায়া দ্বিগুণের কথা বলেছেন তারা হাদীসের মধ্যে ইজতিহাদ করে মাসআলাহ্ বের করেছেন। এ ইজতিহাদী মাসআলাহ্ ঐ পরিষ্কার হাদীসের সমক্ষক হতে পারে না যে হাদীসে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ছায়া সমপরিমাণ হলে ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায়।
এতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা হলো প্রথম দিনের ‘আসরের সময়ের কথা। এখন আরম্ভ হচ্ছে প্রথম দিনের মাগরিবের সময়। তো প্রথম দিন সূর্য পরিপূর্ণরূপে অস্তমিত হওয়ার পর পরই মাগরিব আদায় করলেন জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাথে নিয়ে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পশ্চিম গগণে সূর্যের লাল আভা গায়িব হওয়ার পর পরই আদায় করলেন ‘ইশা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর পরই আদায় করলেন ফাজর (ফজর)। এ হলো ২৪ ঘণ্টার পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের সময়ের বিবরণ।
তারপর দ্বিতীয় দিন দুপুর হলো সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ে গেল কিন্তু তৎক্ষণাৎ যুহর আরম্ভ করলেন না। কিছুক্ষণ বিলম্ব করার পর যখন কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার কাছাকাছি হলো তখন যুহর শুরু করলেন এবং ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে যুহর শেষ করলেন। এতে করে যুহরের জামা‘আত ও যুহরের সময় দু’টি একই সাথে সমাপ্ত হলো।
উল্লেখ্য যে, পরপর দু’দিন সলাত আদায় করে দেখানোর উদ্দেশ্যই ছিল এই যে, একটি সলাতের সময় আরম্ভ হচ্ছে কখন আর তা বুঝালেন প্রথম দিনে এবং ঐ সলাতটির সময় শেষ হচ্ছে কখন আর সেটা বুঝালেন দ্বিতীয় দিনে। তাছাড়া এর সাথে এ কথাও বুঝিয়ে দিলেন যে, যুহরের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় ‘আসরের সময় এবং এ দু’ সলাতের মাঝে সময়ের কোন গ্যাপও নেই এবং এ দু’ সলাত একই সময়ের মধ্যে একত্রিতও হয় না।
এ হলো দ্বিতীয় দিনের যুহরের সময়ের আলোচনা। দ্বিতীয় দিন যুহর সলাতের সালাম ফিরানোর পর পরই শুরু হয়ে গেল ‘আসরের সময়। কিন্তু সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে ‘আসরের সলাত আরম্ভ করলেন না, কিছুক্ষণ বিলম্ব করলেন। যখন কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হলো তখন ‘আসর আদায় করলেন।
আর মাগরিব আদায় করলেন সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই এবং ‘ইশা আদায় করলেন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পর। ফাজর (ফজর) আদায় করলেন বিলম্ব করে, আলো হওয়ার পর।
এভাবে দু’দিন সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর জীবরীল (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, এ হলো পূর্বেকার নাবীগণের সলাতের সময়। অর্থাৎ- পূর্বেকার নাবীগণের সলাতের সময়ের মধ্যে এ রকমই প্রশস্ততা ছিল যেমন আপনার সলাতের সময়সমূহের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে।
৫৮৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৪
وَعَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ أَخَّرَ الْعَصْرَ شَيْئًا فَقَالَ لَه عُرْوَةُ أَمَا إِنَّ جِبْرِيلَ قَدْ نَزَلَ فَصَلّى أَمَامَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ لَه عُمَرُ اعْلَمْ مَا تَقُولُ يَا عُرْوَةُ قَالَ سَمِعْتُ بَشِيرَ بْنَ أَبِي مَسْعُودٍ يَقُولُ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُودٍ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ نَزَلَ جِبْرِيلُ فَأَمَّنِي فَصَلَّيْتُ مَعَه ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَه ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَه ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَه ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَه يَحْسِبُ بِأَصَابِعِه خَمْسَ صَلَوَاتٍ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খলীফা ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) একদিন ‘আস্রের সলাত দেরীতে পড়ালেন। ‘উরওয়াহ্ (ইবনু যুবায়র) (রহঃ) খলীফাকে বললেন, সাবধান! জিবরীল নাযিল হয়েছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাত আদায় করিয়েছিলেন (ইমামাত করেছিলেন)। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয বললেন, দেখ ‘উরওয়াহ্! তুমি কি বলছ? উত্তরে ‘উরওয়াহ্ বললেন, আমি বাশীর ইবনু আবী মাস‘ঊদ হতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। জিবরীল (আঃ) অবতীর্ণ হলেন। আমার ইমামাত করলেন। আমি তাঁর সাথে সলাত (যুহর) আদায় করলাম। তারপর তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (‘আস্র) । আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (মাগরিব)। এরপর তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (‘ইশা)। অতঃপর তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (ফাজর)। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের আঙ্গুল দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত হিসাব করছিলেন। [১]
‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) কোন একদিন মিম্বারে বসে মুসলিম প্রজাদেরকে কিছু নাসীহাত করতে করতে ‘আসরের আও্ওয়াল ওয়াক্ত পার করে দিয়েছিলেন। মাসজিদে উপস্থিত ছিলেন সাহাবী ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)। সাহাবী সাথে সাথে উপদেশ দিলেন যে, আপনি উত্তম কাজে ব্যাস্ত আছেন ঠিকই। কিন্তু ‘আসরের আও্ওয়াল ওয়াক্ত পার করে দেয়া উচিত নয়। কারণ শুধু সলাতের সময়টি বুঝানোর উদ্দেশে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন স্বয়ং জিবরীল (আঃ) কে রসূলের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। সুতরাং সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আও্ওয়াল ওয়াক্তেই আদায় করে নিতে হবে।
৫৮৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৫
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ اَنَّه كَتَبَ إِلى عُمَّالِه إِنَّ أَهَمَّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصَّلَاةُ مَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا حَفِظَ دِينَه وَمَنْ ضَيَّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ ثُمَّ كَتَبَ أَنْ صَلُّوا الظُّهْرَ اَنْ كَانَ الْفَيْءُ ذِرَاعًا إِلى أَنْ يَكُونَ ظِلُّ أَحَدِكُمْ مِثْلَه وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ قَدْرَ مَا يَسِيرُ الرَّاكِبُ فَرْسَخَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً قَبْلَ مَغِيْبِ الشَّمْسِ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غاب الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشَّفَقُ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُه فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُه فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُه وَالصُّبْحَ وَالنُّجُومُ بَادِيَةٌ مُشْتَبِكَةٌ. رَوَاهُ مَالك
খলীফাহ্ ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তার শাসনকর্তাদের কাছে লিখলেন, আমার কাছে আপনাদের সকল কাজের মধ্যে সলাতই হল সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যে এর যথাযথ হিফাযাত করেছে ও তা রক্ষা করেছে, সে তার দীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা বিনষ্ট করেছে সে তা ছাড়া অপরগুলোর পক্ষে আরো বেশী বিনষ্টকারী প্রমাণিত হবে। অতঃপর তিনি লিখলেন, যুহরের সলাত আদায় করবে ছায়া এক বাহু ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে ছায়া এক মিসাল হওয়া পর্যন্ত (ছায়া আসলী বাদ দিয়ে)। সূর্য উপরে পরিষ্কার সাদা থাকা অবস্থায় ‘আসরের সলাত আদায় করবে, যাতে একজন আরোহী সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দু’ বা তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করে যেতে পারে। মাগরিবের সলাত আদায় করবে সূর্য অস্ত যাবার পরপর। ‘ইশার সলাত আদায় করবে ‘শাফাক্ব’ দূর হয়ে যাবার পর থেকে শুরু করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তার চোখ না ঘুমাক যে এর আগে ঘুমাবে (তিনবার বললেন)। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করবে যখন তারাসমূহ পরিষ্কার হয় ও চকমক করে। [১]
আর সূর্য আকাশের মধ্যে উপরের দিকে সাদা উজ্জ্বল ও চকচকে থাকা অবস্থায় ‘আসর আদায় করে নিতে হবে যেন ‘আসর সলাত আদায়ের পর একটি সওয়ারী সূর্য ডোবার পূর্বে শীতকালে ছয় মাইল ও গ্রীষ্মকালে নয় মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে এবং সূর্য পূর্ণরূপে অস্ত যাওয়ার পর মাগরিব আদায় করবে এবং ‘ইশার সলাত আদায় করবে সূর্যের লাল আভা মুছে যাওয়ার পর থেকে রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অতঃপর তিনি বদদু‘আ স্বরূপ একটি বাক্য উচ্চারণ করলেন যে, যে ব্যক্তি ‘ইশার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে নিদ্রা যাওয়ার চেষ্টা করবে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন যেন তাকে শান্তির ঘুম দান না করেন।
৫৮৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৬
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ كَانَ قَدْرُ صَلَاةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ الظُّهْرَ فِي الصَّيْفِ ثَلَاثَةَ أَقْدَامٍ إِلى خَمْسَةِ أَقْدَامٍ وَفِي الشِّتَاءِ خَمْسَةَ أَقْدَامٍ إِلى سَبْعَةِ أَقْدَامٍ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاؤُدَ وَالنَّسَائِـيُِّ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, গরমকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুহরের সলাতের (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হতে পাঁচ ক্বদম, আর শীতকালে পাঁচ হতে সাত ক্বদম। [১]
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বলছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রীষ্মকালে যুহরের সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন সূর্য পশ্চিম দিকে চলে যাওয়ার পর হতে একজন মানুষের ছায়া তার তিন পা সমান হওয়া পর্যন্ত। আবার কখনো আবহাওয়া খুব গরম হওয়ার কারণে সময়টি একটু ঠাণ্ডা করার উদ্দেশে যুহরকে আরো একটু বিলম্ব করতেন তখন দেখা যেত যে, মানুষের ছায়া তার পাঁচ ক্বদম বা তার পাঁচ পা সমান হয়ে গেছে।
আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালে যুহর আদায় করতেন সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ার পর হতে একজন মানুষের ছায়া পাঁচ থেকে সাত কদম হওয়া পর্যন্ত।
উল্লেখ্য যে, মানুষের সাত ক্বদম তার হাতের প্রায় সাড়ে তিন হাত পরিমাণ হবে। তার অর্থ দাঁড়ায় প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ পর্যন্ত।
উল্লেখ্য যে, ছায়া ঋতুভেদে কম-বেশী হয়ে থাকে- এ কথাটি সর্বক্ষণ মনে রাখা দরকার।
৫৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৭
عَنْ سَيَّارِ بْنِ سَلَامَةَ قَالَ دَخَلْتُ أَنَا وَأَبِي عَلى أَبِي بَرْزَةَ الْأَسْلَمِيِّ فَقَالَ لَه أَبِي كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّي الْهَجِيرَ الَّتِي تَدْعُونَهَا الْأُولى حِينَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ وَيُصَلِّي الْعَصْرَ ثُمَّ يَرْجِعُ أَحَدُنَا إِلى رَحْلِه فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَنَسِيتُ مَا قَالَ فِي الْمَغْرِبِ وَكَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يُؤَخِّرَ الْعِشَاءَ الَّتِي تَدْعُونَهَا الْعَتَمَةَ وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَهَا وَالْحَدِ يثَ بَعْدَهَا وَكَانَ يَنْفَتِلُ مِنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ حِينَ يَعْرِفُ الرَّجُلُ جَلِيسَه وَيَقْرَأُ بِالسِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ-. وَفِىْ رِوَايَةٍ وَلَا يُبَالِي بِتَأْخِيرِ الْعِشَاءِ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَلَا يُحِبُّ النَّوْمَ قَبْلَهَا وَالْحَدِيْثَ بَعْدَهَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
সাইয়্যার ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ও আমার আব্বা আবূ বারযাহ্ আল আসলামী (রাঃ)- এর নিকট গেলাম। আমার আব্বা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাত কিভাবে আদায় করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, যুহরের সলাত- যে সলাতকে তোমরা প্রথম সলাত বল, সূর্য ঢলে পড়লেই পড়তেন। ‘আসরের সলাত আদায় করতেন এমন সময়, যার পর আমাদের কেউ মাদীনার শেষ প্রান্তে তার বাড়ীতে ফিরতে পারতেন, অথচ সূর্য তখনও পরিষ্কার থাকত। বর্ণনাকারী বলেন, মাগরিবের সলাত সম্পর্কে কী বলেছেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ‘ইশার সলাত, যাকে তোমরা ‘আতামাহ্’ বল, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেরী করে পড়তেই ভালবাসেন এবং ‘ইশার সলাতের আগে ঘুম যাওয়া বা সলাতের পরে কথা বলাকে পছন্দ করতেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত শেষ করতেন, যখন কেউ নিজের সঙ্গে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত এবং এ সময় ষাট হতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। [৫৯৯] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাতকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতেও দ্বিধা করতেন না এবং ‘ইশার সলাতের আগে ঘুম যাওয়া ও পরে কথা বলাকে আপছন্দ করতেন। [2]
[2] সহীহ : বুখারী ৫৪১, নাসায়ী ৫৩০, আবূ দাঊদ ৩৯৮, আহমাদ ১৯৭৬৭, দারেমী ১৩৩৮।
তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসর আদায় করতেন এমন সময় যে, তাঁর পিছনে ‘আসর আদায়ের পর একজন সাহাবী মাদীনার শেষ সীমানায় তার নিজ বাড়ী ফিরে যাওয়ার পর সূর্য উজ্জ্বল সাদা চকচকে থাকতো। সাহাবীর উপরোক্ত উক্তি প্রমাণ করে যে, একটি বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে ‘আসর আদায় করা হয়েছিল।
সাহাবী (রাঃ) বললেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করা পছন্দ করতেন এবং ‘ইশার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পর গল্প-গুজব করা পছন্দ করতেন না। কারণ তাহাজ্জুদ ও ফাজর (ফজর) ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের (ফজরের) সলাত হতে সালাম ফিরাতেন তখন একজন মুসল্লী তার পাশে বসে থাকা সাথীকে চিনতে পারতো।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজর (ফজর) গালাস, অর্থাৎ- ভোরের অন্ধকারে শুরু করেছিলেন। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড়ই ধীরস্থিরভাবে ৬০-১০০ আয়াত পর্যন্ত ফাজর (ফজর) সলাতে তিলাওয়াত করতেন।
৫৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৮
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سَأَلْنَا جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ عَنْ صَلَوةِ النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّي الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا وَجَبَتْ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ وَالصُّبْحَ بِغَلَسٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনুল হাসান ইবনু ‘আলী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আম্র জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুপুর ঢলে গেলে যুহরের সলাত আদায় করতেন। ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, তখনও সূর্যের দীপ্তি থাকত। মাগরিবের সলাত আদায় করতেন সূর্য অস্ত যেতেই। আর ‘ইশার সলাত, যখন লোক অনেক হত এবং তাড়াতাড়ি পড়তেন। আর লোকজন কম হলে দেরী করতেন এবং অন্ধকার থাকতে ফাজরের সলাত আদায় করতেন। [১]
মাগরিব সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পরই। আর ‘ইশার সলাতটি আদায় করার ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উপস্থিতির কথাটি খেয়াল রাখতেন। তাড়াতাড়ি উপস্থিত হলে আও্ওয়াল ওয়াক্তে আর বিলম্বে উপস্থিত হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করতেন। কারণ ‘ইশা বিলম্ব করে আদায় করলে সাওয়াব বেশী। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজর (ফজর) শুরু করতেন গালাসে, অর্থাৎ- ভোরের অন্ধকারে।
৫৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৮৯
وَعَنْ أَنَسِ قَالَ كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ النَّبِيّ ﷺ بِالظَّهَائِرِ فَسَجَدْنَا عَلى ثِيَابِنَا اتِّقَاءَ الْحَرِّ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَلَفْظُه لِلْبُخَارِىِّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে যুহরের সলাত আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সাজদাহ্ করতাম। [১]
এছাড়া মাস্আলাহ্ হলো এই যে, গরম, ঠাণ্ডা বা অন্য কোন সমস্যা হলে পরনের কাপড় বা অন্য কাপড়ের উপর সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করার অনুমতি রয়েছে।
৫৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন গরমের প্রকোপ বেড়ে যাবে, ঠান্ডা সময়ে সলাত (যুহর) আদায় করবে। [১]
৫৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯১
وَفِي رَوَايَةٍ لِلْبُخَارِىِّ عَنْ اَبِىْ سَعِيْدٍ بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ وَاشْتَكَتْ النَّارُ إِلى رَبِّهَا فَقَالَتْ يَا رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَهُوَ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الزَّمْهَرِيرِ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ - وَفِىْ رَوَايَةٍ لِّلْبُخَارِىِّ فَاَشَدَّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الْحَرِّ فَمِنْ سَمُوْمِهَا وَاَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الْبَرْدِ فَمِنْ زَمْهَرِيْرِهَا
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যুহরের সলাত ঠান্ডা সময়ে আদায় করবে। (অর্থাৎ আবূ হুরায়রাহর বর্ণনায় (আরবী) শব্দ ব্যবহার হয়েছে আর আবূ সা‘ঈদের বর্ণনায় (আরবী) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে) কারন গরমের প্রকোপ জাহান্নামের ভাপ। জাহান্নাম আপন প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করে বলেছিল, হে আমার আল্লাহ! (গরমের তীব্রতায়) আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার। এক নিঃশ্বাস শীতকালে, আর এক নিঃশ্বাস গরমকালে। এজন্যই তোমরা গরমকালে তাপের তীব্রতা বেশী পাও। আর শীতকালে শীতের প্রচন্ডতা বেশী। [১]
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা গরমের যে প্রচন্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাাসের কারনেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাসের কারনেই।
(১) জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাস বলতে কী বুঝায়?
(২) যুহর বিলম্ব করা প্রচন্ড গরমের কারণে।
(১) জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস তার আসল ও প্রকৃত অর্থে আছে।
কিছু ‘আলিম বলেন যে, প্রকৃত অর্থে নেই বরং রূপক অর্থে আছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটি যথাযথ। ইমাম নাবাবীও প্রথম উক্তিটি সমর্থন করেছেন। কিন্তু এখানে একটি আপত্তি ও প্রশ্ন দেখা দেয় যে, পৃথিবীর উপর গরমটি তো কম-বেশী হয় সূর্যের নিকট ও দূরে হওয়ার কারণে। তাহলে পৃথিবীর গরমটি সূর্যের কারণে হলো জাহান্নামের কারণে নয়। উত্তর হলো এই যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলা রব্বুল ‘আলামীন সূর্যের ও জাহান্নামের মাঝে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন। যে সংযোগের মাধ্যমে সূর্য জাহান্নাম থেকে তাপ সংগ্রহ করে পৃথিবীর বুকে ছাড়ছে। আমরা মানুষ আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সূর্য। আর উপলব্ধি করছি সূর্যের তাপ। প্রকৃতপক্ষে যে তাপটি আমরা অনুভব করি তা হচ্ছে জাহান্নামের তাপ। আর সূর্য ঐ তাপটি আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি যন্ত্র মাত্র।
মাঝখানে আর একটি কথা, সেটা হলো আল্লাহর নিকট জাহান্নামের অভিযোগ করা। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাঁর নিকট জড় পদার্থ নামের কোন জিনিস নেই। জড় ও জীবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জড় পদার্থকে বাকশক্তি দান করতে কোন সময় লাগে না তাঁর নিকট। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বারটি ছিল শুকনো একটি খেজুর গাছের কান্ড শুকনো কাঠ। সেটা হাঁওমাও করে কান্না আরম্ভ করেছিল। সাহাবাগণ শুনেছিলেন।
(২) প্রচন্ড গরমের কারণে যুহর বিলম্বিত করা যায় ততটুকুই যতটুকু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন। অর্থাৎ- কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত। যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস আছে যে, খাব্বাব (রাঃ) বলেন যে, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যুহর বিলম্ব করার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করেননি। উত্তর হচ্ছে এই যে, তাঁরা আরো বেশী বিলম্বিত করার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের আবেদন গ্রহণ করলে যুহরের সময় পার হয়ে যেত সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আবেদন কবূল করেননি। প্রকৃত সত্য আল্লাহর নিকট।
৫৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯২
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ فَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي فَيَأْتِيهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ وَبَعْضُ الْعَوَالِي مِنَ الْمَدِينَةِ عَلى أَرْبَعَةِ أَمْيَالٍ أَوْ نَحْوِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উপরের আকাশে ও উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। আর কেউ আওয়ালীর দিকে (মাদীনার উপকন্ঠে) গিয়ে পুনরায় আসার পরেও সূর্য উপরেই থাকত। এসব আওয়ালীর কোন কোনটি মাদীনাহ্ হতে চার মাইল বা এর কাছাকাছি দূরত্বের ছিল। [১]
৫৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৩
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ تلك صَلَاةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتّى إِذَا اَصْفَرَتْ وَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَيْ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللّهَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এটা (আসরের সলাত দেরী করে আদায়) মুনাফিক্বের সলাত। তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূর্যের হলদে রং এবং শায়ত্বনের দু’ শিং- এর মধ্যস্থলে গেলে (সূর্যাস্থের সময়ে) তারা তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। [১]
৫৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৪
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الَّذِي تَفُوتُه صَلَاةُ الْعَصْرِ كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَه وَمَالَه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তির ‘আসরের সলাত ছুটে গেল তার গোটা পরিবার ও ধন সম্পদ যেন উজার হয়ে গেল। [১]
৫৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৫
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُه. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি ‘আসরের সলাত ছেড়ে দিল সে তার ‘আমল বিনষ্ট করল। [১]
তবে এর অধিকতর সঠিক ব্যাখ্যা হলো, এ হাদীসে ‘আসরের সলাত পরিত্যাগের শাস্তি স্বরূপ ‘আমাল বরবাদ হয়ে যাওয়াকে বুঝানো হয়নি। এর দ্বারা যারা এরূপ করে তাদের শক্ত ধমক দেয়া হয়েছে।
৫৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৬
وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ كُنَّا نُصَلِّي الْمَغْرِبَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَيَنْصَرِفُ أَحَدُنَا وَإِنَّه لَيُبْصِرُ مَوَاقِعَ نَبْلِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। সলাত শেষ করে আমাদের কেউ তার তীর পড়ার স্থান (পর্যন্ত) দেখতে পেত। [১]
৫৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৭
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانُوْا يُصَلُّوْنَ الْعَتَمَةَ فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ الْأَوَّلِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সহাবীগণ ‘ইশার’ সলাত আদায় করতেন ‘শাফাক্ব’ অদৃশ্য হবার পর হতে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। [১]
৫৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৮
وَعَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَيُصَلِّي الصُّبْحَ فَيَنْصَرِفُ النِّسَاءُ مُتَلَفِّعَاتٍ بِمُرُوطِهِنَّ مَا يُعْرَفْنَ مِنَ الْغَلَسِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত আদায় করতেন। যে সব স্ত্রীলোক চাদর গায়ে মুড়িয়ে সলাত আদায় করতে আসতেন, অন্ধকারের দরুন তাদের চেনা যেত না। [১]
লেখক বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আলোকিত অবস্থার চেয়ে অন্ধকার অবস্থায় ফজরের (ফজরের) সলাত আদায় করা অধিক ফাযীলাতপূর্ণ। এ মতই দিয়েছেন ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ এবং ইসহক (রহঃ )। ইবনু ‘আবদুল বার্ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ), ‘উসমান (রাঃ) সবাই অন্ধকার থাকতে ফাজরের (ফজরের) সলাত আদায় করতেন- এ কথা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত।
আল্ হাযিমী বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অন্ধকারে ফাজরের (ফজরের) সলাত আদায় করা প্রমাণিত। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এর উপর অটল ছিলেন। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম ‘আমাল ছাড়া কোন ‘আমালের উপর অটল থাকতেন না। তারপরে তাঁর সাহাবীগণও তার অনুসরণ করেছেন।
৫৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৫৯৯
وَعَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ أَنَّ النَبِيَّ ﷺ وَزَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ تَسَحَّرَا فَلَمَّا فَرَغَا مِنْ سَحُوْرِهِمَا قَامَ نَبِيُّ اللهِ ﷺ إِلَى الصَّلَاةِ فَصَلّى قُلْنَا لِأَنَسٍ كَمْ كَانَ بَيْنَ فَرَاغِهِمَا مِنْ سَحُورِهِمَا وَدُخُولِهِمَا فِي الصَّلَاةِ قَالَ قَدْرُ مَا يَقْرَأُ الرَّجُلُ خَمْسِينَ آيَةً. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) (সিয়াম পালনের জন্য) সাহ্রী খেলেন। সাহ্রী শেষ করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ফাজরের) সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সলাত আদায় করলেন। আমরা ‘আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, এ দু’জনের খাবার পর সলাত শুরু করার আগে কী পরিমাণ সময়ের বিরতি ছিল? তিনি উত্তরে বলেন, এ পরিমাণ বিরতির সময় ছিল যাতে একজন পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে। [১]
৬০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০০
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُمِيتُونَ الصَّلَاةَ اَوْ يُؤَخِّرُوْنَهَا عَنْ وَقْتِهَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي قَالَ صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, সে সময় তুমি কী করবে যখন তোমাদের উপর শাসকবৃন্দ এমন হবে, যারা সলাতের প্রতি অমনোযোগী হবে অথবা তা সঠিক সময় হতে পিছিয়ে দিবে? আমি বললাম, আপনি কী আমাকে নির্দেশ দেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ সময়ে তুমি তোমার সলাতকে সঠিক সময়ে আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে পাও, আবার আদায় করবে। আর এ সলাত তোমার জন্য নাফ্ল হিসেবে গন্য হবে। [১]
এরপর আবূ যার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি যদি ঐ সময় পাই তাহলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ করেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, তুমি নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করবে এবং তাদের সাথে সলাত পেলে তাদের সাথেও সলাত আদায় করবে। তাহলে যে সলাত শাসকের সাথে পড়বে সে সলাত তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, সলাতকে এর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হবে। আর শাসকগণ যখন সলাতকে এর প্রথম ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয় তখন তাদের অনুসরণ বর্জন করতে হবে। এরূপ এজন্য করবে যে, যাতে মতানৈক্য ও ফিতনাহ্ (ফিতনা) তৈরি না হয়।
৬০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০১
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ أَدْرَكَ الصُّبْحَ وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْعَصْرَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে ফাজরের সলাতের এক রাক্’আত পেল, সে ফাজরের সলাত পেয়ে গেল। এভাবে যে সূর্যাস্তের পূর্বে ‘আস্র সলাতের এক রাক্’আত পেল, সে ‘আস্রের সলাত পেলো। [১]
ইমাম নাবাবী বলেন, ‘আলিমগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, সূর্য উদয়কাল কিংবা অস্তকাল পর্যন্ত সলাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা বৈধ নয়। সূর্য উদয়ের পূর্বে এক রাক্‘আত পেলে এবং সূর্য উদয়ের পরে এক রাক্‘আত পড়লে তার সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে। জমহূর ‘আলিমগণের এ মতের পক্ষে এ সম্পর্কে বায়হাক্বীতে দু’টি স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। সেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফাজরের (ফজরের) সলাতের এক রাক্‘আত পেল এবং এক রাক্‘আত সূর্য উদয়ের পরে পড়ল, সে যেন পূর্ণ সলাতই নির্দিষ্ট ওয়াক্তে পেল। বায়হাক্বীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের এক রাক্‘আত আদায় করলো এবং বাকী অংশ সূর্যাস্তের পর আদায় করলো, তার ‘আসরের সলাত নষ্ট হলো না। তিনি ফাজরের (ফজরের) সলাতের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছেন। বুখারীর বর্ণনায় এ হাদীসের শেষে উল্লেখ রয়েছে, ‘‘সে যেন তার সলাতকে পূর্ণ করে’’। নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সলাতের (নির্দিষ্ট সময়ে) এক রাক্‘আত পেল সে যেন পূর্ণ সলাতই পেল। তবে যে রাক্‘আত আদায় করতে পারেনি সে তা ক্বাযা করবে’’।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফাজরের (ফজরের) সলাতের এক রাক্‘আত পেল সে যেন ফাজরের (ফজরের) পূর্ণ সলাতই পেল এবং সূর্য উদয়ের ফলে তার সলাত বাতিল হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সলাত পেল এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার ফলে তার সলাত বাতিল হবে না। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহক (রহঃ)-এর মত এটিই, আর এটিই সঠিক মত।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ এ হাদীসের বিরোধী মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছে এমতাবস্থায় সূর্য উদিত হলো তাহলে তার সলাত বাতিল হয়ে যাবে। তিনি তিন সময়ে সলাত আদায় নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস দ্বারা তার মতের পক্ষে দলীল প্রদান করেছেন। এর উত্তরে বলা যায় যে, সূর্য উদয়ের সময় সলাত আদায় নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কিত বিধান ‘আম্ তথা ব্যাপক আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীস খাস তথা বিশেষ হুকুম জ্ঞাপক।
৬০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০২
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا أَدْرَكَ أَحَدُكُمْ سَجْدَةً مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَلْيُتِمَّ صَلَاتَه وَإِذَا أَدْرَكَ سَجْدَةً مِنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَلْيُتِمَّ صَلَاتَه. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সূর্যাস্তের আগে ‘আসরের সলাতের এক সাজদাহ্ (রাক্’আত) পেলে সে যেন তার সলাত পূর্ণ করে। এমনিভাবে ফাজরের সলাত সূর্যোদয়ের আগে এক সাজদাহ্ (রাক্’আত) পেলে সেও যেন তার সলাত পূর্ণ করে। [১]
৬০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৩
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا. وَفِىْ رِوَايَةٍ لَّا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذلِكَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্ফারাহ্ হলো যখনই তা স্মরণ হবে সলাত আদায় করে নিবে। [১] অন্য বর্ণনায় আছে, ঐ সলাত আদায় করে নেয়া ছাড়া তার কোন প্রতিকারই নেই। [2]
[2] সহীহ : বুখারী ৫৯৭, মুসলিম ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪২, নাসায়ী ৬১৩, তিরমিযী ১৭৮, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৬, আহমাদ ১৩৫৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৫৬, ইরওয়া ২৬৩।
৬০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৪
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَيْسَ فِي النَّوْمِ التَفْرِيطٌ إِنَّمَا التَّفْرِيطُ فِي الْيَقَظَةِ فاذا نَسِيَ أَحَدُكُمْ صَلَاةً اَوْ نَامَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللّهَ تَعَالى قَالَ أَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সলাত আদায় করতে না পারলে তা দোষ নেই। দোষ হল জেগে থেকেও সলাত আদায় না করা। সুতরাং তোমাদের কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা সলাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে, আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমার স্মরণে সলাত আদায় কর” – (সূরাহ্ ত্ব-হা – ২০:১৪)। [১]
ইমাম শাওকানী বলেন, সলাতের ওয়াক্ত সংকীর্ণ হওয়া, সলাতের নির্ধারিত সময় শুরু কিংবা পরে যখনই হোক ঘুমানো অবস্থা কোন ত্রুটি হবে না, বাহ্যিক হাদীসে এটাই প্রমাণিত হয়। কারো কারো মতে, কেউ যদি সলাতের ওয়াক্ত সংকীর্ণ হওয়ার পূর্বে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমিয়ে যায় আর এটিকে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগের জন্য কারণ হিসেবে গ্রহণ করে অথচ তার প্রবল ধারণা ছিল যে, সে সলাতের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারবে না তাহলে গুনাহগার হবে।
সলাতের ওয়াক্ত সংকীর্ণ হওয়ার পরে যদি কেউ ঘুমায় তাহলে সে অবশ্যই গুনাহগার হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার স্মরণে সলাত ক্বায়িম করো’’। অতএব এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমাদের পূর্ববর্তী নাবীগণের শারী‘আতও আমাদের শারী‘আত হতে পারে। কারণ উল্লিখিত আয়াত মূসা (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছিল। তাই হাদীসের উসূল অনুযায়ী এগুলো দলীল হতে পারে যতক্ষণ না এর রহিতকারী (নাসিখ) অন্য কোন নির্দেশনা না পাওয়া যায়।
৬০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৫
عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ يَا عَلِيُّ ثَلَاثٌ لَا تُؤَخِّرْهَا الصَّلَاةُ إِذَا آنَتْ وَالْجَنَازَةُ إِذَا حَضَرَتْ وَالْأَيِّمُ إِذَا وَجَدْتَ لَهَا كُفْوا. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে ‘আলী! তিনটি বিষয়ে দেরী করবে নাঃ (১) সলাতের সময় হয়ে গেলে আদায় করতে দেরী করবে না। (২) জানাযাহ্ উপস্থিত হয়ে গেলে তাতেও দেরী করবে না। (৩) স্বামীবিহীন নারীর উপযুক্ত বর পাওয়া গেলে তাকে বিয়ে দিতেও দেরী করবে না। [১]
তৃতীয় বিষয়টি হলো স্বামীহীনা নারী যেই হোক তার উপযুক্ত পুরুষ পাওয়া গেলে বিবাহ দিতে বিলম্ব করা উচিত না। এখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমতার বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্যান্য সৎগুণের মধ্যে ইসলাম বিষয়ে সমতা বেশি লক্ষণীয়।
৬০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৬
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الْوَقْتُ الْأَوَّلُ مِنْ الصَّلَاةِ رِضْوَانُ اللهِ وَالْوَقْتُ الْآخِرُ عَفْوُ اللهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত প্রথম সময়ে আদায় করা আল্লাহকে খুশি করা এবং শেষ সময়ে আদায় করা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার শামিল। (অর্থাৎ গুনাহ হতে বেঁচে থাকা) [১]
৬০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৭
وَعَنْ اُمِّ فَرْوَةَ قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ ﷺ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ الصَّلَاةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا. رَوَاهُ أَحْمَد وَالتِّرْمِذِىُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ لَا يُرْوَى الْحَدِيْثُ اِلَّا مِنْ حَدِيْثِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ الْعُمَرِىِّ وَهُوَ لَيْسَ بِالْقَوِىِّ عِنْدَ اَهْلِ الْحَدِيْثِ
উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (‘আমাল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। [১]
ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার আল ‘উমারী ছাড়া আর কারো নিকট হতে বর্ণিত হয়নি। তিনিও মুহাদ্দিসগণের নিকট সবল নন।
৬০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৮
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا صَلّى رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَاةً لِوَقْتِهَا الْآخِرِ مَرَّتَيْنِ حَتّى قَبَضَهُ اللّهُ تَعَالى. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোন সলাতকে এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। [১]
৬০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬০৯
وَعَنْ اَيُّوْبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ أَوْ قَالَ عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَمْ يُؤَخِّرُوا الْمَغْرِبَ إِلى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُومُ
আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাত সর্বদাই কল্যাণ লাভ করবে, অথবা তিনি বলেছেন, ফিতরাত-এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যদি তারা তারকারাজি উজ্জ্বল হয়ে উঠা পর্যন্ত মাগরিবের সলাতকে বিলম্বিত না করে। [১]
ইমাম নাবাবী তার শারহে মুসলিম গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্য) হয়েছে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তাড়াতাড়িই মাগরিবের সলাত আদায় করতে হবে’’। শী‘আদের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এ মত ভিত্তিহীন। শাফাক্ব (সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পশ্চিমাকাশে দৃশ্যমান লাল আভা) বিলীন হওয়ার সময় পর্যন্ত মাগরিবের সলাত আদায় দ্বারা মাগরিবের শেষ সময় বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। কেননা এটা ছিল প্রশ্নকারীর উত্তরে বলা কথা। সলাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরপরই দ্রুত তা আদায় করাই ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস। শার‘ঈ ওযর (অযুহাত) ছাড়া এর ব্যতিক্রম ঠিক নয়।
৬১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১০
رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ ورَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنِ الْعَبَّاسِ
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
দারিমী এ হাদীস ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৬১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১১
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلى أُمَّتِي لَامَرْتُهُمْ أَنْ يُؤَخِّرُوا الْعِشَاءَ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ أَوْ نِصْفِه. رَوَاهُ أَحْمَد والتِّرْمِذِىُّ وابن مَاجَةَ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে মনে না করলে তাদেরকে ‘ইশার সলাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করে আদায়ের নির্দেশ দিতাম। [১]
৬১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১২
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَعْتِمُوا بِهذِهِ الصَّلَاةِ فَإِنَّكُمْ قَدْ فُضِّلْتُمْ بِهَا عَلَى الْأُمَمِ وَلَمْ تُصَلِّهَا أُمَّةٌ قَبْلَكُمْ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এ সলাত (অর্থাৎ ‘ইশার সলাত) দেরী করে আদায় করবে। কারণ এ সলাতের মাধ্যমে অন্যসব উম্মাতের উপর তোমাদের বেশী মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তোমাদের আগের কোন উম্মাত এ সলাত আদায় করেনি। [১]
এ হাদীস এবং জিবরীল (আঃ) এর ঐ হাদীস, ‘‘এটা আপনার পূর্বেকার নাবীগণের ওয়াক্ত’’ এ দু’ হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে যে, পূর্বেকার রসূলগণ ‘ইশার সলাত আদায় করতেন নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে। এটা ফরয ছিল না। বিষয়টি অনেকটা তাহাজ্জুদের সলাতের মতো যে, তাহাজ্জুদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল কিন্তু আমাদের ওপর তেমন নয়।
৬১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৩
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ أَنَا أَعْلَمُ بِوَقْتِ هَذِهِ الصَّلَاةِ صَلَاةِ الْعِشَاءِ الْاخِرَةِ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّيهَا لِسُقُوطِ الْقَمَرِ لِثَالِثَةٍ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالدَّارِمِيُّ
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি খুব ভালভাবে জানি তোমাদের এ সলাতের, অর্থাৎ শেষ সলাত ‘ইশার ওয়াক্ত সম্পর্কে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়বার (তৃতীয় রাতের) চাঁদ অস্ত যাবার পর এ সলাত আদায় করতেন। [১]
৬১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৪
وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّه أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالدَّارِمِيُّ
রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ফাজরের সলাত ফর্সা আলোতে আদায় কর। কারণ ফর্সা আলোতে সলাত আদায় করলে অনেক বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়। [১]
অত্র হাদীস দ্বারা হানাফীগণ দলীল পেশ করে থাকেন যে, ফাজরের (ফজরের) সলাতকে ফর্সা আলো পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করার ফাযীলাত বেশী। বিভিন্নভাবে এর জওয়াব দেয়া হয়ে থাকে।
(১) ভোরের অন্ধকারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিয়মিত ফাজরের (ফজরের) সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা প্রমাণ করে যে, অত্র হাদীসের প্রকাশমান অর্থ উদ্দেশ্য নয়। বরং এর অর্থ হলো সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) এতটুকু বিলম্ব করা যাতে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, ফাজর (ফজর) উদিত হয়েছে। অতএব এখানে أَعْظَمُ শব্দটি অধিক ফাযীলাত বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়নি।
(২) এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য চাঁদনী রাতসমূহ। কেননা চাঁদের আলোর কারণে চাঁদনী রাত্রে ফাজরের (ফজরের) শুরুটা বুঝতে অসুবিধা হয় তাই একটু বিলম্ব করা যাতে ফাজর (ফজর) সুস্পষ্ট হয়।
(৩) এর দ্বারা উদ্দেশ্য সে সময় যখন রাত ছোট হয়ে যায় যেমন- মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে প্রেরণকালে বললেনঃ হে মু‘আয! শীতকালে ভোরের অন্ধকারে ফাজরের (ফজরের) সলাত আদায় করবে এবং লোকেদের সাধ্যেকুলায় এমনভাবে সলাতের ক্বিরাআত (কিরআত) দীর্ঘ করবে। আর গরমকালে ফর্সা আলোতে ফাজরের (ফজরের) সলাত আদায় করবে। কেননা তখন রাত ছোট হয়ে থাকে ফলে লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। সুতরাং তাদেরকে ফাজরের (ফজরের) সলাত জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ দাও। হাদীসটি ইমাম বাগাভী শারহুস্ সুন্নাহতে, বাক্বী ইবনু মুখাল্লাদ স্বীয় মুসনাদে এবং আবূ নু‘আয়ম হিল্ইয়াতে বর্ণনা করেছেন।
(৪) এর দ্বারা উদ্দেশ্য ফাজরের (ফজরের) সলাতে ক্বিরাআত (কিরআত) লম্বা করো যাতে ফর্সা আলোর সময় সলাত শেষ হয়। ‘আল্লামা ইবনুল ক্বইয়্যিম ই‘লামুল মুয়াক্কিনে এমনটি বলেছেন। ইমাম তাহাভী শারহুল আসার গ্রন্থে এ অভিমতটিকে গ্রহণ করেছেন।
৬১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৫
رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ كُنَّا نُصَلِّي الْعَصْرَ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ثُمَّ تُنْحَرُ الْجَزُورُ فَتُقْسَمُ عَشَرَ قِسَمٍ ثُمَّ تُطْبَخُ فَنَأْكُلُ لَحْمًا نَضِيجًا قَبْلَ مَغِيبِ الشَّمْسِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ‘আসরের সলাত আদায় করার পর উট যাবাহ করতাম। এ উট ছাড়িয়ে দশ ভাগ করা হত, তারপর রান্না করা হত। আর আমরা রান্না করা এ গোশত সূর্যাস্তের আগে খেতাম। [১]
৬১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৬
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ مَكَثْنَا ذَاتَ لَيْلَةٍ نَنْتَظِرُ رَسُولَ اللهِ ﷺ صَلَاةَ الْعِشَاءِ الآخِرَةِ فَخَرَجَ إِلَيْنَا حِينَ ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ أَوْ بَعْدَه فَلَا نَدْرِي أَشَيْءٌ شَغَلَه فِي أَهْلِه أَوْ غَيْرُ ذلِكَ فَقَالَ حِينَ خَرَجَ إِنَّكُمْ لَتَنْتَظِرُونَ صَلَاةً مَا يَنْتَظِرُهَا أَهْلُ دِينٍ غَيْرُكُمْ وَلَوْلَا أَنْ يَثْقُلَ عَلى أُمَّتِي لَصَلَّيْتُ بِهِمْ هَذِهِ السَّاعَةَ ثُمَّ أَمَرَ الْمُؤَذِّنَ فَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَلّى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা এক রাতে শেষ ‘ইশার সলাতের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপেক্ষা করছিলাম। তিনি এমন সময় বের হলেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত অথবা এরও কিছু পর। আমরা জানি না, পরিবারের কোন কাজে তিনি ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, নাকি অন্য কিছু। তিনি বের হয়ে বললেন, তোমরা এমন একটি সলাতের অপেক্ষা করছ, যার জন্য অন্য ধর্মের লোকেরা অপেক্ষা করে না। আমরা উম্মাতের জন্য কঠিন হবে মনে না করলে তাদের নিয়ে এ সলাত আমি এ সময়েই আদায় করতাম। এরপর তিনি মুয়াযযিনকে নির্দেশ দিলে সে ইক্বামাত দিল। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করালেন। [১]
ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন যে, এটা এমন এক সলাতের জন্য অপেক্ষা যা অন্য কোন ধর্মের অনুসারীরা করে না। কেননা এ সলাত (‘ইশা) শুধু এ উম্মাতের জন্য নির্দিষ্ট। এটা পূর্বে মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এ সলাতের জন্য অপেক্ষা বিশেষ মর্যাদার, অতএব তোমরা এরূপ অপেক্ষা করাকে অপছন্দ করো না। তাঁর শেষ কথায় মনে হয় ‘ইশার সলাত দেরী করে আদায়ের মধ্যে সাওয়াব থাকা সত্ত্বেও উম্মাতের জন্য কষ্টের কথা ভেবে তা’ বিধান সাব্যস্ত করেননি। অতএব সম্ভব হলে এ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিলম্বিত করে আদায় করা অতি উত্তম।
৬১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৭
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي الصَّلَوَاتِ نَحْوًا مِنْ صَلَاتِكُمْ وَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَتَمَةَ بَعْدَ صَلَاتِكُمْ شَيْئًا وَكَانَ يُخِفُّ الصَّلَاةَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের সলাতের মতই সলাত আদায় করতেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'ইশার সলাত তোমাদের চাইতে কিছু দেরীতে আদায় করতেন এবং সংক্ষেপ করতেন। [১]
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইমাম হিসেবে এরূপ করতেন। যদিও মাগরিবের সলাতের দু’ রাক্‘আতে তাঁর সূরাহ্ আল আ‘রাফ পড়ারও প্রমাণ রয়েছে। তবে অধিকাংশ সময় তিনি সংক্ষিপ্ত করে সলাত আদায় করতেন। এ হাদীস দ্বারাও ‘ইশার সলাত বিলম্বিত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। রাতের অর্ধাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করা, এর বেশি নয়।
৬১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৮
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ صَلَّيِنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ صَلَاةَ الْعَتَمَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ حَتّى مَضى نَحْوٌ مِّنْ شَطْرِ اللَّيْلِ فَقَالَ خُذُوْا مَقَاعِدَكُمْ فَاَخَذْنَا مَقَاعِدَنَا فَقَالَ اِنَّ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا وَاَخَذُوْا مَضَاجِعَهُمْ وَاِنَّكُمْ لَنْ تَزَالُوا فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرْتُمِ الصَّلَاةَ وَلَوْلَا ضَعْفُ الضَّعِيفِ وَسَقَمُ السَّقِيمِ لَامَرْتُ بِهذِهِ الصَّلَاةِ إِلى شَطْرِ اللَّيْلِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَآئِىُّ
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একরাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাত আদায় করলাম। (সেদিন) তিনি অর্ধেক রাত পর্যন্ত মাসজিদে এলেন না। [তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে] আমাদের বললেন, তোমরা তোমাদের নিজ নিজ জায়গায় বসে থাক। তাই আমরা বসে রইলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অন্যান্য লোক সলাত আদায় করেছে। বিছানায় চলে গেছে। আর জেনে রেখো, তোমরা যতক্ষণ সলাতের অপেক্ষা করবে, সময় সলাত(রত থাকা) গণ্য হবে। আমি যদি বুড়ো, দুর্বল ও অসুস্থদের দিকে লক্ষ্য না রাখতাম তাহলে সর্বদা এ সলাত অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতাম। [১]
৬১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬১৯
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَشَدَّ تَعْجِيْلًا لِلظُّهْرِ مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ أَشَدُّ تَعْجِيْلًا لِلْعَصْرِ مِنْهُ. رَوَاهُ أَحْمَد وَالتِّرْمِذِىُّ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতকে তোমাদের চেয়ে বেশী আগে ভাগে আদায় করতেন। আর তোমারা 'আসরের সলাত তাঁর চেয়ে বেশী আগে আদায় কর। [১]
শায়খ ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী তাঁর আত্ তিরমিযীর শারাহ গ্রন্থে মুল্লা ‘আলী ক্বারী’র বক্তব্য উল্লেখের পরে লিখেছেন, এ হাদীস ‘আসরের সলাতকে দেরী করে আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কোন দলীল নয়। হ্যাঁ! তবে এ কথা ঠিক যে, যাদেরকে উদ্দেশ করে উম্মু সালমাহ্ (রাঃ) এ কথাগুলো বলেছিলেন তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে বেশি তাড়াতাড়ি ‘আসরের সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ‘আসরের সলাতকে তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে অনেক সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস বিদ্যমান। সলাত তাড়াতাড়ি আদায়ের উত্তমতা সম্পর্কিত স্পষ্ট সহীহ হাদীসগুলোকে পরিত্যাগ করে এ জাতীয় হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বা মাসআলাহ্ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা মাযহাবী তাকলীদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে সিরাতে মুস্তাক্বীমে পরিচালিত করেন।
৬২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২০
وَعَنْ اَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اِذَ كَانَ الْحَرُّ اَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ وَاِذَ كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ. رَوَاهُ النِّسَآئِىُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যুহরের সলাত) গরমকালে ঠান্ডা করে (গরম কমলে) আদায় করতেন আর শীতকালে আগে আগে আদায় করতেন। [১]
৬২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২১
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ يَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنْ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ نَعَمْ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন: আমার পর শীঘ্রই তোমাদের উপর এমন সব প্রশাসক নিযুক্ত হবে যাদেরকে নানা কাজ ওয়াক্তমত সলাত আদায়ে বিরত রাখবে, এমনকি তার ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব (সে সময়) তোমরা তোমাদের সলাত ওয়াক্তমত আদায় করতে থাকবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! তারপর আমি কি তাদের সাথে এ সলাত আবার আদায় করব? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। [১]
৬২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২২
وَعَنْ قَبِيصَةَ بْنِ وَقَّاصٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ مِنْ بَعْدِي يُؤَخِّرُوْنَ الصَّلَاةَ فَهِيَ لَكُمْ وَهِيَ عَلَيْهِمْ فَصَلُّوا مَعَهُمْ مَا صَلَّوْا الْقِبْلَةَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
ক্ববীসাহ্ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার পর তোমাদের উপর এমন সব শাসক নিযুক্ত হবে, যারা সলাতকে পিছিয়ে ফেলবে। যা তোমাদের জন্য কল্যাণ হলেও তাদের জন্য অকল্যাণ ডেকে আনবে। তাই যতদিন তারা ক্বিবলাহ্ হিসাবে (ক্বা'বা-কে)মেনে নিবে ততদিন তাদের পিছনে তোমরা সলাত আদায় করতে থাকবে। [১]
৬২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৩
وَعُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارٍ أَنَّه دَخَلَ عَلى عُثْمَانَ وَهُوَ مَحْصُورٌ فَقَالَ إِنَّكَ إمَامُ عَامَّةٍ وَنَزَلَ بِكَ مَا تَرى وَيُصَلِّي لَنَا إِمَامُ فِتْنَةٍ وَنَتَحَرَّجُ فَقَالَ الصَّلَاةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ فَإِذَا أَحْسَنَ النَّاسُ فَأَحْسِنْ مَعَهُمْ وَإِذَا أَسَاءُوا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
(তাবি'ঈ) 'উবায়দুল্লাহ ইবনু 'আদী ইবনু খিয়ার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি খলীফা 'উসমান (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তিনি নিজ ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। তাকে তিনি বললেন, আপনিই জনগনের ইমাম। কিন্তু আপনার উপর এ বিপদ আপতিত যা আপনি দেখছেন। এ সময় বিদ্রোহী নেতা (ইবনু বিশর) আমাদের সলাতে ইমামাত করছে। এতে আমরা গুনাহ মনে করছি। তখন তিনি ['উসমান (রাঃ)] বললেন, মানুষ যেসব কাজ করে, এসবের মধ্যে সলাত হচ্ছে সর্বোত্তম। অতএব মানুষ যখন ভাল কাজ করবে, তাদের সাথে শারীক হবে। যখন মন্দ কাজ করবে, তাদের এ মন্দ কাজ হতে দূরে সরে থাকবে। [১]
(إِنَّكَ إمَامُ عَامَّةٍ) ‘‘আপনিই জনগণের ইমাম।’’ অর্থাৎ- আপনিই আমীরুল মু’মিনীন এবং মুসলিমদের খলীফাহ্ ও তাদের ইমাম। কেননা শূরা সদস্যগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি খলীফাহ্ নিযুক্ত হয়েছেন। অতএব তিনিই একমাত্র বৈধ নেতা ও ইমাম।
(وَيُصَلِّي لَنَا إِمَامُ فِتْنَةٍ) ‘‘আমাদের ইমামাত করেন ফিতনাহ্ (ফিতনা) সৃষ্টিকারীদের ইমাম।’’ অর্থাৎ- যিনি আমাদের সলাতে ইমামাত করেন তিনি ফিতনাহ সৃষ্টিকারীদের নেতা ‘আবদুর রহমান ইবনু উদায়স অথবা কিনানাহ্ ইবনু বিশর এরা উভয়েই মিসরের অধিবাসী এবং তাদের নেতা ছিলেন। আর ‘আবদুর রহমান ইবনু উদায়স তাদের অন্যতম ছিলেন যারা মিসরবাসীকে ‘উসমান (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন।
(وَنَتَحَرَّجُ) ‘‘আমরা তার পিছনে সলাত আদায় করতে গুনাহ মনে করি।’’ অর্থাৎ- আমরা তার অনুসরণ করাকে গুনাহের কাজ বলে মনে করি।
(الصَّلَاةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ) ‘‘মানুষ যেসব কাজ করে তার মধ্যে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ।’’ অর্থাৎ- সলাত হচ্ছে মুসলিমদের সর্বোত্তম কাজ। অতএব ইমামাত যেই করুক যদিও সে ফাসিক্ব হয় তথাপি তার পিছনেই সলাত আদায় করা উচিত।
(وَإِذَا أَسَاءُوا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ) ‘‘যখন তারা মন্দ কাজ করবে, তাদের এ মন্দ কাজ হতে দূরে সরে থাকবে।’’ অর্থাৎ- সলাত ব্যতীত খারাপ কথা, কাজ ও বিশ্বাসে তাদের অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকবে।
‘উসমান (রাঃ)-এর এ বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, যার পিছনে সলাত আদায় করা মাকরূহ এমন ব্যক্তির পিছনেও জামা‘আতে সলাত আদায় করা উত্তম সলাতের জামা‘আত বিনষ্ট করার চাইতে। জেনে রাখা ভালো যে, ফাসিক্বের ইমামাত বৈধ কি-না এ বিষয়ে ‘উলামাদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। আমার (‘উবায়দুল্লাহ্ মুবারাকপূরীর) দৃষ্টিতে ফাসিক্বের ইমামাত বৈধ যতক্ষণ পর্যন্ত ফাসিক্বের কাজ তাকে ইসলাম থেকে খারিজ না করে দেয়।
৬২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৪
عَنْ عُمَارَةَ بْنِ رُؤَيْبَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا يَعْنِي الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উমারাহ্ ইবনু রুআয়বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি: এমন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্য উঠার ও ডোবার আগে সলাত আদায় করেছে, অর্থাৎ ফাজর ও 'আসরের সলাত। [১]
৬২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৫
وَعَنْ أَبِي مُوسى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা সময়ের সলাত (অর্থাৎ ফাজর ও 'আসর) আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]
৬২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৬
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبَّهُمُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ আসতে থাকেন। তারা ফাজর ও 'আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সলাত আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সলাত আদায় করছিল। [১]
৬২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৭
وَعَنْ جُنْدُبٍ الْقَسْرِيَّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللّهُ مِنْ ذِمَّتِه بِشَيْءٍ فَإِنَّه مَنْ يَطْلُبْهُ مِنْ ذِمَّتِه بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكُبَّه عَلى وَجْهِه فِي نَارِ جَهَنَّمَ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِىْ بَعْضِ نُسَخِ الْمَصَابِيْح ِالْقُشَيْرِىِّ بَدَلَ الْقَسْرِىِّ
জুনদুব আল ক্বসরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজরের সলাত আদায় করল সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে থাকল। অতএব আল্লাহ যেন আপন যিম্মাদারীর কোন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন। কারণ তিনি যার বিপক্ষে আপন দায়িত্বের কোন ব্যাপারে বাদী হবেন, তাকে (নিশ্চিত) ধরতে পারবেনই। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে ফেলবেন। [১]
আর মাসাবীহের কোন কোন নুসখায় (আরবি) পরিবর্তে (আরবি) রয়েছে।
৬২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৮
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّاأَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لَاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَاتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সলাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করত। আর যদি জানত সলাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ (যুহরের) সলাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করত। যদি জানত ‘ইশা ও ফাজরের সলাতের মধ্যে আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সলাতে হাযির হবার চেষ্টা করত। [১]
৬২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬২৯
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَيْسَ صَلَاةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِينَ مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَاتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিক্বদের জন্য ‘ইশা ও ফাজরের সলাতের চেয়ে ভারী আর কোন সলাত নেই। যদি এ দুই সলাতের মধ্যে কি রয়েছে, তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সলাতে আসত। [১]
অন্য যে কোন সলাতের তুলনায় ‘ইশা ও ফাজরের (ফজরের) সলাত আদায় করা মুনাফিক্বদের জন্য বেশি কষ্টকর। কারণ ‘ইশার সলাত হলো বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রস্ত্ততি নেয়ার সময় আর ফাজরের (ফজরের) সলাত হলো ঘুমের সবচেয়ে আরামদায়ক বা মজাদার সময়।
একনিষ্ঠ মু’মিন ব্যক্তির উচিত মুনাফিক্বদের এ অভ্যাস থেকে দূরে থাকা। এ দু’ ওয়াক্ত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) অপরিমেয় বারাকাত সমৃদ্ধ। তাই কষ্ট করে হলেও অবশ্যই এ সলাতদ্বয় আদায় করার জন্য মাসজিদে উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন।
৬৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩০
وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘ইশার সলাত জামা‘আতে সাথে আদায় করেছে, সে যেন অর্ধেক রাত সলাতরত থেকেছে। আর যে ব্যক্তি ফাজরের সলাত জামা‘আতে আদায় করেছে, সে যেন পুরো রাত সলাত আদায় করেছে। [১]
এর উত্তরে আমি (ব্যাখ্যাকারক) বলবো, ‘‘যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) সলাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলো সে যেন পূর্ণ রাত সলাত আদায় করলো’’- সহীহ মুসলিমের এ বর্ণনা ‘ইশার সলাতকেও অন্তর্ভুক্ত করে। فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّه ‘‘সে যেন পূর্ণ রাত সলাত আদায় করলো’’-এর দ্বারা বুঝাচ্ছে যে, সে যেন রাতের শেষ অর্ধাংশ সলাত আদায় করলো। আর প্রথম অর্ধাংশ তো ‘ইশার সলাতেই কাটলো। মোটকথা, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) এবং ‘ইশা উভয় ওয়াক্তের সলাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে পূর্ণ রাতই সলাতে থাকে। এ হাদীসের সকল বর্ণনা এ বিষয়টিই স্পষ্ট করেছে।
৬৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩১
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَا يَغْلِبَنَّكُمُ الْأَعْرَابُ عَلَى اسْمِ صَلَاتِكُمُ الْمَغْرِبَ قَالَ وَتَقُوْلُ الْاَعْرَابُ هِىَ الْعِشَاءِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বেদুইনরা যেন তোমাদের মাগরিবের সলাতের নামকরণে তোমাদের উপর বিজয়ী হতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, বেদুইনরা এ সলাতকে ‘ইশা বলত। [১]
৬৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩২
وَقَالَ لَا يَغْلِبَنَّكُمْ الْأَعْرَابُ عَلَى اسْمِ صَلَاتِكُمُ الْعِشَاءِ فَإِنَّهَا فِي كِتَابِ اللهِ الْعِشَاءُ فَإِنَّهَا تُعْتِمُ بِحِلَابِ الْإِبِلِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বেদুইনরা যেন তোমাদের ‘ইশার সলাতের নামকরণেরও তোমাদের উপর জয়ী হতে না পারে। এটা আল্লাহর কিতাবে ‘ইশা। তা পড়া হয় তাদের উষ্ট্রী দুধ দোহনের সময়। [১]
এ সংকলনে দু’ দিক থেকে সমস্যা রয়েছে। প্রথমত এটি এ ধারণা দিচ্ছে যে উভয়টি ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দু’টি হাদীস একটি মাগরিব সলাতের বিষয়ে আর অপরটি ‘ইশা সলাতের বিষয়ে। দ্বিতীয়ত এ ধারণাও দিচ্ছে যে, ইমাম মুসলিম (রহঃ) এভাবেই পরিপূর্ণ আকারে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ইবনু ‘উমার হতে দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর প্রথম হাদীসটি (অর্থাৎ- মাগরিব সলাতের ক্ষেত্রে) ইমাম বুখারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
৬৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৩
عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ حَبَسُونَا عَنْ صَلَاةِ الْوُسْطى صَلَاةِ الْعَصْرِ مَلَا اللّهُ بُيُوتَهُمْ وَقُبُورَهُمْ نَارًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দাক্বের যুদ্ধের দিন বলেছিলেন, কাফিররা আমাদেরকে ‘মধ্যবর্তী সলাত’ অর্থাৎ ‘আস্রের সলাত আদায় করা থেকে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘর আর ক্ববরগুলো আগুন দিয়ে ভরে দিন। [১]
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, সলাতুল উস্তা, অর্থাৎ- মধ্যবর্তী সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো ‘আসরের সলাত। যদিও মধ্যবর্তী সলাত কোনটি এ নিয়ে ‘আলিমগণের মধ্যে বিশটিরও বেশী মত দেখতে পাওয়া যায়। এ মতগুলোর মধ্যে তিনটি মত সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ।
প্রথম মতঃ ইমাম মালিক ও ইমাম শাফিঈ (রহঃ)-এর মতে এটি হলো ফজরের (ফজরের) সলাত।
দ্বিতীয় মতঃ যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও ‘উরওয়াহ্ (রাঃ)-এর মতে এটি হলো যুহরের সলাত।
তৃতীয় মতঃ অধিকাংশ সাহাবী, তাবি‘ঈ, মুহাদ্দিস এবং ইমাম আহমাদ ও ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে এটি হলো ‘আসরের সলাত।
এ মতের পক্ষে স্পষ্ট সহীহ হাদীস বিদ্যমান, যা অসংখ্য প্রমাণবাহী। এ সব হাদীস ‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আল্ আসক্বালানী তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ কিতাবে, ‘আল্লামা ইবনু কাসীর তাঁর ‘তাফসীরে আল-মাজদ’, ইবনু তাইমিয়াহ্ তাঁর ‘আল্ মুনতাক্বা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সে হাদীসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘আলী (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসটি। এ মতের বিপক্ষে প্রমাণ বহনকারী অন্যান্য হাদীস ও আসার (সাহাবীগণের কথা) এ হাদীসের সমকক্ষ নয়। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ/সঠিক কথা। ইমাম নাবাবী বলেন, সহীহ স্পষ্ট হাদীসগুলোর দাবী হলো মধ্যবর্তী সলাত হলো ‘আসরের সলাত। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, এটা ‘আসরের সলাত হওয়াই নির্ভরযোগ্য, প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত কথা।
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের জন্য বদ্দু‘আ করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের দুনিয়ার জীবনের ঘরগুলোকে ধ্বংস করে দিন এবং তাদের আখিরাতের ঘর, অর্থাৎ- কবরগুলোকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করে দিন।
৬৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৪
وَعَنِ بْنِ مَسْعُودٍ وَّسَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَا قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَاةُ الْوُسْطى صَلَاةُ الْعَصْرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
ইবনু মাস্‘ঊদ ও সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : (উস্ত্বা- সলাত) মধ্যবর্তী সলাত হচ্ছ ‘আস্রের সলাত। [১]
৬৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৫
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ فِي قَوْلِه تَعَالى : إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا قَالَ تَشْهَدُه مَلَائِكَةُ اللَّيْلِ وَمَلَائِكَةُ النَّهَارِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আল্লাহর বাণী (আরবী) “ফাজ্রের ক্বিরাআতে (সলাতে) উপস্থিত হয়”- (সূরাহ্ ইসরা ১৭ : ৭৮) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এতে উপস্থিত হয় রাতের ও দিনের মালায়িকাহ্। [১]
৬৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৬
عَنْ زَيْدِ بْنَ ثَابِتٍ وَعَائِشَة قَالَا الصَّلَاةُ الْوُسْطى صَلَاةُ الظُّهْرِ. رَوَاهُ مَالِكٌ عَن زيد وَالتِّرْمِذِىُّ عَنْهُمَا تَعْلِيْقَا
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উভয়ে বলেন, ‘উস্ত্বা সলাত’ (মধ্যবর্তী সলাত) যুহরের সলাত। ইমাম মালিক (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে এবং ইমাম তিরমিযী উভয় হতে মু’আল্লাক্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [১]
৬৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৭
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَلَمْ يَكُنْ يُصَلِّي صَلَاةً أَشَدَّ عَلى أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْهَا نَزَلَتْ ﴿حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوتِ وَالصَّلوةِ الْوُسْطى﴾ وَقَالَ إِنَّ قَبْلَهَا صَلَاتَيْنِ وَبَعْدَهَا صَلَاتَيْنِ. رَوَاهُ أَحْمَد وأَبُوْ دَاودَ
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত আগে আগে আদায় করতেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কোন সলাত আদায় করতেন না যা তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণের জন্য যুহরের চেয়ে কষ্টসাধ্য ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হল : [আরবী] “তোমরা সব সলাতের, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের হিফাযাত করবে”- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ২৩৮)। তিনি [যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)] বলেন,যুহরের সলাতের আগেও দু’টি সলাত (‘ইশা ও ফাজ্র) আছে। আর পরেও দু’টি সলাত (‘আস্র ও মাগরিব) আছে। [১]
৬৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৮
وَعَنْ مَالِك بَلَغَه أَنَّ عَلِيَّ ابْنَ أَبِي طَالِبٍ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ كَانَا يَقُولَانِ الصَّلَاةُ الْوُسْطى صَلَاةُ الصُّبْحِ. رَوَاهُ المُوَطَّأً
আলী ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইমাম মালিক-এর নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে পৌছেছে যে, ‘আলী ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন : ‘সলাতুল উস্ত্বা’ দ্বারা উদ্দেশ্য ফাজ্রের সলাত। [১]
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, এ মধ্যবর্তী সলাতের পূর্বে দু’টি সলাত (সালাত/নামায/নামাজ), যার একটি দিনের (ফাজর) অপরটি রাতের (‘ইশা) এবং এরপরে দু’টি সলাত, যারও একটি দিনের (‘আসর) অপরটি রাতের (মাগরিব)। যুহরের সলাতকে মধ্যবর্তী সলাত এজন্য বলা হতে পারে যে, এটি দিনের মধ্যভাগে আদায়কৃত সলাত।
৬৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৩৯
وَرَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَّابْنِ عُمَرَ تَعْلِيْقًا
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিরমিযী ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনু ‘উমার হতে মু’আল্লাক্ব হিসবে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
‘আলী (রাঃ)-এর মতে যে, মধ্যবর্তী সলাত হলো ‘আসরের সলাত। এ মতের পক্ষে দু’টি বর্ণনা মূল গ্রন্থে রয়েছে। তাছাড়া ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নামেও বর্তমান হাদীসে যে মত প্রকাশিত হয়েছে তারও বিপরীত তার থেকে প্রমাণিত। মোটকথা, এ হাদীসে ‘আলী (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে যে মত বর্ণিত হয়েছে তা তাদের প্রকৃত মত নয়। বিস্তারিত জানার জন্য মূল গ্রন্থ (মির্‘আত) দেখুন।
৬৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪০
وَعَنْ سَلْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ مَنْ غَدَا إِلى صَلَاةِ الصُّبْحِ غَدَا بِرَايَةِ الْإِيمَانِ وَمَنْ غَدَا إِلَى السُّوقِ غَدَا بِرَايَةِ إِبْلِيسَ. رَوَاهُ ابن مَاجَةَ
সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে লোক ভোরে ফাজ্রের সলাত আদায়ের জন্য গেল সে লোক ঈমানের পতাকা উড়িয়ে গেল। আর যে লোক ভোরে বাজারের দিকে গেল সে লোক ইবলীসের (শায়ত্বনের) পতাকা উড়িয়ে গেল। [১]
৬৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪১
عَنْ أَنَسٍ قَالَ ذَكَرُوا النَّارَ وَالنَّاقُوسَ فَذَكَرُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارى فَأُمِرَ بِلَالٌ أَنْ يَشْفَعَ الْأَذَانَ وَأَنْ يُوتِرَ الْإِقَامَةَ قَالَ اِسْمَاعِيْلُ فَذَكَرْتُه لَايُّوْبَ فَقَالَ اِلَّا الْاِقَامَةَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (সলাতে শারীক হবার জন্য ঘোষণা প্রসঙ্গে) আগুন জ্বালানো ও শিঙ্গায় ফুঁক দেবার প্রস্তাব হল। এটাকে কেউ কেউ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথা বলে উল্লেখ করেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে নির্দেশ দিলেন আযান জোড়া শব্দে ও ইক্বামাত বেজোড় শব্দে দেয়ার জন্য। হাদীস বর্ণনাকারী ইসমা’ঈল বলেন, আমি আবূ আইয়ূব আনসারীকে (ইক্বামাত বেজোড় দেয়া সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তবে “ক্বদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্ ছাড়া” (অর্থাৎ- ক্বদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্’ জোড় বলতে হবে।) [১]
৬৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪২
وَعَنْ أَبِيْ مَحْذُوْرَةَ قَالَ اَلْقى عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ التَّاْذِيْنَ هُوَ بِنَفْسِه فَقَالَ قُلْ اَللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ ثُمَّ تَعُودُ فَتَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ لَا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং আমাকে আযান শিখিয়েছেন। তিনি আযানে বললেন, বল : (১) আল্ল-হু আকবার, (২) আল্ল-হু আকবার, (৩) আল্ল-হু আকবার, (৪) আল্ল-হু আকবার; (১) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (২) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (১)আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (২) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ। তারপর (তিনি) বললেন, তুমি আবার বল, (১) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (২) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (১) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (২) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (১) হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ, (২) হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ, (১) হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ, (২) হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ। (১) আল্ল-হু আকবার, (২) আল্ল-হু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ। [১]
‘আল্লামা নাবাবী বলেনঃ আবূ মাহযূরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ এবং জমহূর ‘আলিমদের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট দলীল যে, আযানের মধ্যে তারজী' সাব্যস্ত আছে এবং তা শারী‘আতের বিধান। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং কুফাবাসীগণ বলেন যে, আযানে তারজী' নেই। কেননা ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ-এর হাদীসে তারজী'-এর উল্লেখ নেই।
জমহূর ‘উলামাহগণের দলীল আবূ মাহযূরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত সহীহ হাদীস। আবূ মাহযূরাহ্ বর্ণিত হাদীসে এ বিষয়টি অতিরিক্ত রয়েছে যা ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ-এর হাদীসে নেই। আর দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিষয় অগ্রগণ্য। তাছাড়া আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বর্ণনা। কেননা তা হিজরী ৮ম সালের হুনায়নের যুদ্ধের পরের ঘটনা। তাছাড়া মক্কা ও মাদীনাবাসীর ‘আমালও আবূ মাহযূরাহ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের উপর।
‘আল্লামা সিন্দী ইবনু মাজাহ্-এর হাশিয়াতে (ثم قال لي ارجع فمد من صوتك) ‘‘তুমি পুনরায় উচ্চৈঃস্বরে বলো’’ এ বাক্যের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এটা সুস্পষ্ট যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মাহযূরাহকে তারজী‘ আযান দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তাদের সে সমস্ত ধারণাপ্রসূত বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত যারা বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা শিক্ষা দেয়ার জন্য পুনরায় বলেছিলেন। আর তিনি তা তারজী' মনে করেছেন। আর বিলাল (রাঃ)-এর আযান তারজী' ব্যতীত সাব্যস্ত আছে। অতএব তারজী'সহ ও তারজী'বিহীন উভয় ধরনের আযানই বৈধ তথা সুন্নাত।
৬৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৩
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ الْأَذَانُ عَلى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَالْإِقَامَةُ مَرَّةً مَرَّةً أَنَّه يَقُولُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَآئِىُّ وَالدَّارِمِيُّ
(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় আযানের বাক্য দু’ দু’বার ও ইক্বামাতের বাক্য এক একবার ছিল। কিন্ত ‘‘ক্বদ ক্ব-মাতিস্ সলা-হ্” কে মুয়ায্যিন দু’বার করে বলতেন। [১]
৬৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৪
عَنْ أَبِي مَحْذُورَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ عَلَّمَهُ الْأَذَانَ تِسْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً وَالْإِقَامَةَ سَبْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَآئِىُّ وَالدَّارِمِيُّ وَابْنُ مَاجَةَ
আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উনিশ বাক্যে আযান আর সতের বাক্যে ইক্বামাত শিক্ষা দিয়েছেন। [১]
৬৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৫
وَعَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ عَلِّمْنِىْ سُنَّةَ الأَذَانِ قَالَ فَمَسَحَ مُقَدَّمَ رَأْسِه قَالَ تَقُولُ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ تَرْفَعُ بِهَا صَوْتَكَ ثُمَّ تَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ تَخْفِضُ بِهَا صَوْتَكَ ثُمَّ تَرْفَعُ صَوْتَكَ بِالشَّهَادَةِ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ فَإِنْ كَانَ صَلَاةَ الصُّبْحِ قُلْتَ الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنْ النَّوْمِ الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِّنْ النَّوْمِ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি [আবূ মাহযূরাহ্ রাঃ] বলেন, (আমার কথা শুনে) তিনি আমার অথবা এবং বললেন, বল : আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার,আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার। এ বাক্যগুলো তুমি খুব উচ্চৈঃস্বরে বলবে। এরপর তুমি নিম্নস্বরে বলবে,আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ এবং আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ। তুমি পুনরায় উচ্চৈঃস্বরে শাহাদাত বাক্য বলবে : আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্, হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্; হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ। এ আযান ফাজ্রের সলাতের জন্য হলে বলবে,আস্সলা-তু খয়রুম মিনান্ নাওম, আস্সলা-তু খয়রুম মিনান্ নাওম। আল্ল-হু আকবর, আল্ল-হু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ। [১]
ইবনুল জাওযী বলেন, আবূ মাহযূরাহ্ ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাফির ছিলেন। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযান শিক্ষা দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি শাহাদার বাক্যগুলো পুনরাবৃত্তি করিয়েছিলেন। এটা এজন্য করেছিলেন যে, যাতে শাহাদার ব্যাপারটি তার অন্তরে গেঁথে যায়.....।
ইমাম যায়লা‘ঈ তার নাসবুর্ রায়াহ গ্রন্থে উপর্যুক্ত তিনটি মত উল্লেখ করে বলেছেন, মর্মের দিক থেকে এ তিনটি মতই নিকটবর্তী (অর্থাৎ- প্রায় একই)। এরপর তিনি এ মতগুলোর প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আবূ দাঊদে বর্ণিত অত্র হাদীস এ মতগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে। এ হাদীসে সাহাবী ও বর্ণনাকারী আবূ মাহযূরাহ্ বলেছেন, ‘‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আযানের পদ্ধতি বা নিয়ম শিক্ষা দিন। অতঃপর এ হাদীসের মধ্যেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তারজী' সহ আযান শিক্ষা দিলেন এবং এ তারজী'কে আযানের নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করলেন। তাছাড়া এ মতগুলো প্রত্যাখ্যান করার আরো অনেক কারণ রয়েছে। যা সত্যানুসন্ধানী, ন্যায়নিষ্ঠ চিন্তাশীল ব্যক্তির নিকট অজ্ঞাত বা গোপন নয়।
৬৪৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৬
وَعَنْ بِلَالٍ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَا تُثَوِّبَنَّ فِي شَيْءٍ مِّنَ الصَّلَوَاتِ إِلَّافِي صَلَاةِ الْفَجْرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَاِبْنُ مَاجَةَ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ أَبُوْ إِسْرَائِيلَ الرَّاوِىْ لَيْسَ بِذَاكَ الْقَوِيِّ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ
বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন : ফাজ্রের সলাত ব্যতীত কোন সলাতেই তাসবীব করবে না। [১]
কিন্ত তিরমিযী এ হাদীসের সমালোচনা করে বলেন, এ হাদীসের এক বর্ণনাকারী আবূ ইসরাঈল মুহাদ্দিসদের মতে নির্ভরযোগ্য নন।
বিলাল (রাঃ)-এর এ হাদীসে তাসবীব বলতে ফাজরের (ফজরের) সলাতে মুয়াযযিনের ‘‘আস্ সলা-তু খয়রুম্ মিনান্ নাওম’’ বলাকে বুঝানো হয়েছে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শুধু ফজরের (ফজরের) সলাতে ‘‘হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ’’ বাক্যের পরে ‘‘আস্ সলা-তু খয়রুম মিনান্ নাওম’’ বাক্য বলা সুন্নাত। যেমনটি পূর্বের আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
৬৪৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৭
وَ عَنْ جَابِرِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لِبِلَالٍ إِذَا أَذَّنْتَ فَتَرَسَّلْ وَإِذَا أَقَمْتَ فَاحْدُرْ وَاجْعَلْ بَيْنَ أَذَانِكَ وَإِقَامَتِكَ قَدْرَ مَا يَفْرُغُ الْآكِلُ مِنْ أَكْلِه وَالشَّارِبُ مِنْ شُرْبِه وَالْمُعْتَصِرُ إِذَا دَخَلَ الِقَضَاءِ حَاجَتِه وَلَا تَقُومُوا حَتّى تَرَوْنِي. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَقَالَ لَا نَعْرِفُه اَلَّا مِنْ حَدِيْثِ عَبْدِ الْمُنْعِمِ وَهُوَ اِسْنَاد مَّجْهُوْلٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে বললেন, যখন আযান দিবে ধীর গতিতে (উচ্চকণ্ঠে) দিবে এবং যখন ইক্বামাত দিবে দ্রুতগতিতে (নিচু স্বরে) দিবে। তোমরা আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে এ পরিমাণ বিরতি রাখবে যাতে খাদ্য গ্রহণকারী খাওয়া, পানরত লোক পান করা, পায়খানা প্রস্রাবে রত লোক হাজাত পূর্ণ করতে পারে। আর আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা সলাতে কাতারবদ্ধ হবে না। [১]
তিরমিযী বলেন, এ হাদীসকে আমরা ‘আবদুল মুন্’ইম ছাড়া আর কারও থেকে শুনিনি আর এর সানাদ মাজহূল-অজানা।
৬৪৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৮
وَعَنْ زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ الصُّدَائِىـىِّ قَالَ أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ أَنْ أُؤَذِّنَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَأَذَّنْتُ فَأَرَادَ بِلَالٌ أَنْ يُقِيمَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَخَا صُدَاءٍ قَدْ أَذَّنَ وَمَنْ أَذَّنَ فَهُوَ يُقِيمُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ أَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ
যিয়াদ ইবনু হারিস আস্ সুদায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নির্দেশ দিলেন ফাজ্রের সলাতের আযান দিতে। আমি আযান দিলাম। তারপর (সলাতের সময়) বিলাল ইক্বামাত দিতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথন বললেন, সুদায়ীর ভাই আযান দিয়েছে। আর যে আযান দিবে সে ইক্বামাতও দিবে। [১]
৬৪৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৪৯
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ الْمُسْلِمُونَ حِيْنَ قَدِمُوا الْمَدِينَةَ يَجْتَمِعُونَ فَيَتَحَيَّنُوْنَ لِلصَّلَاةَ لَيْسَ يُنَادِىْ بِهَا اَحَدٌ فَتَكَلَّمُوا يَوْمًا فِي ذلِكَ فَقَالَ بَعْضُهُمُ اتَّخِذُوا مِثْلَ نَاقُوسِ النَّصَارى وَقَالَ بَعْضُهُمْ قَرْنًامِثْلَ قَرْنِ الْيَهُودِ فَقَالَ عُمَرُ أَوَلَا تَبْعَثُونَ رَجُلًا يُنَادِيْ بِالصَّلَاةِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا بِلَالُ قُمْ فَنَادِ بِالصَّلَاةِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুসলিমরা মাদীনায় হিজরত করে আসার পর সলাতের জন্য অনুমান করে একটা সময় ঠিক করে নিতেন। সে সময় সকলে একত্রিত হতেন। কারণ তখনও সলাতের জন্য কেউ আহ্বান করত না। একদিন এ বিষয় নিয়ে তারা আলোচনায় বসতেন। কেউ বললেন, নাসারাদের মতো ঘণ্টা বাজানো হোক। আবার কেউ বললেন, ‘ইয়াহূদীদের মতো শিঙ্গার ব্যাবস্থ করা হোক। তখন ‘উমার (রাঃ) বলেন, তোমরা কি একজন লোক পাঠিয়ে দিয়ে মানুষকে সলাতের জন্য আহ্বান করতে পারবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিলাল! উঠ, সলাতের জন্য আহ্বান কর (আযান দাও)। [১]
আবূ দাঊদ-এ সহীহ সানাদে বর্ণিত ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর হাদীস যে, ‘‘তিনি এক রাত্রে আযান-এর পদ্ধতি স্বপ্নে দেখলেন। অতঃপর তিনি এ খবর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানাতে গেলেন। এমতাবস্থায় ‘উমার (রাঃ)-ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। ঘটনা শুনে ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ সে অর্থাৎ- ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) যা স্বপ্নে দেখেছে আমিও স্বপ্নে তা দেখেছি’’। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, এটা ছিল ভিন্ন বৈঠকের ঘটনা। মূলকথা হলো প্রথম ঘটনা ছিল মানুষকে সলাতের সময়ের খবর জানানো। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) স্বপ্নে দেখা পদ্ধতিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারী‘আহসম্মত বলে ঘোঘণা দেন। বিষয়টিতে ওয়াহীর নির্দেশও রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, আযানের পদ্ধতি শুধু স্বপ্নের উপর ভিত্তি করেই প্রবর্তিত হয়নি।
৬৫০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫০
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَبْدِ رَبِّه قَالَ لَمَّا أَمَرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِالنَّاقُوسِ يُعْمَلُ لِيُضْرَبَ بِه لِلنَّاسِ لِجَمْعِ الصَّلَاةِ طَافَ بِي وَأَنَا نَائِمٌ رَجُلٌ يَحْمِلُ نَاقُوسًا فِي يَدِه فَقُلْتُ يَا عَبْدَ اللهِ أَتَبِيعُ النَّاقُوسَ قَالَ وَمَا تَصْنَعُ بِه فَقُلْتُ نَدْعُو بِه إِلَى الصَّلَاةِ فَقَالَ أَفَلَا أَدُلُّكَ عَلى مَا هُوَ خَيْرٌ مِنْ ذلِكَ فَقُلْتُ لَه بَلى قَالَ فَقَالَ تَقُولُ اللّهُ أَكْبَرُ إِلى آخِرِه وَكَذَا الإِقَامَةُ فَلَمَّا أَصْبَحْتُ أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَأَخْبَرْتُه بِمَا رَأَيْتُ فَقَالَ إِنَّهَا لَرُؤْيََا حَقٌّ إِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالى فَقُمْ مَعَ بِلَالٍ فَأَلْقِ عَلَيْهِ مَا رَأَيْتَ فَلْيُؤَذِّنَ بِه فَإِنَّه أَنْدى صَوْتًا مِنْكَ فَقُمْتُ مَعَ بِلَالٍ فَجَعَلْتُ أُلْقِيْهِ عَلَيْهِ وَيُؤَذِّنُ بِه قَالَ فَسَمِعَ بِذلِكَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَهُوَ فِىْ بَيْتِهِ فَخَرَجَ يَجُرُّ رِدَاءَه يَقًُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَالَّذِىْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ مَا أُوْرِيَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَلِلّهِ الْحَمْدُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالدَّارِمِيُّ وَابْنِ مَاجَةَ اِلَّا أَنَّه لَمْ يَذْكُرِ الإِقَامَةَ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ هذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ لَكِنَّه لَمْ يُصَرِّحْ قِصَّةَ النَّاقُوْسِ
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আবদ রব্বিহী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য একত্রিত হওয়ার জন্য ঘণ্টা বাজানোর নির্দেশ দিলেন। (সেদিন) আমি স্বপ্নে দেখলাম : এক লোক একটি ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি এ ঘণ্টাটা বিক্রি করবে? সে বলল, তুমি এ ঘণ্টা দিয়ে কী করবে? আমি বললাম, আমরা এ ঘণ্টা বাজিয়ে মানুষকে সলাতের জামা’আতে ডাকব। সে ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পন্থা বলে দিব না? আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। সে বলল, তুমি বল, ‘আল্ল-হু আকবার’ আযানের শেষ বাক্য পর্যন্ত আমাকে বলে শুনাল। এভাবে ইক্বামাতও বলে দিল। ভোরে উঠে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট স্বপ্নে যা দেখলাম সব তাঁকে তা বললাম। তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ এ স্বপ্ন সত্য। এখন তুমি স্বপ্নে যা দেখেছে বিলালের সাথে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে থাক। আর সে আযান দিতে থাকুক। কারণ তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে জোরালো। অতএব আমি বিলালের সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে তাকে বলতে লাগলাম। আর তিনি আযান দিতে থাকলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘উমার (রাঃ) নিজ বাড়ী থেকে আযানের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি নিজ চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে এসে (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে) বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল! সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আলহাম্দু লিল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। [১]
কিন্তু ইবনু মাজাহ ইক্বামাতের কথা উল্লেখ করেননি। ইমাম তিরমিযী বলেছেন- হাদীস সহীহ। তবে তিনি ঘণ্টার কথা উল্লেখ করেননি।
৬৫১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫১
وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ لِصَلَاةِ الصُّبْحِ فَكَانَ لَا يَمُرُّ بِرَجُلٍ اِلَّا نَادَاهُ بِالصَّلَاةِ أَوْ حَرَّكَه بِرِجْلِه. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ফাজ্রের সলাতের জন্য বের হলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার নিকট দিয়েই যেতেন, তাকে সলাতের জন্য আহ্বান করতেন অথবা নিজের পা দিয়ে তাকে নেড়ে দিয়ে যেতেন। [১]
৬৫২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫২
وَعَنْ مَالِك بَلَغَه أَنَّ الْمُؤَذِّنَ جَاءَ عُمَرَ يُؤْذِنُه لِصَلَاةِ الصُّبْحِ فَوَجَدَه نَائِمًا فَقَالَ الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ فَأَمَرَه عُمَرُ أَنْ يَجْعَلَهَا فِي نِدَاءِ الصُّبْحِ. رَوَاهُ فِى المُؤَطَّا
ইমাম মালিক থেকে বর্ণিতঃ
একজন মুয়ায্যিন ‘উমারকে ফাজ্রের সলাতের জন্য জাগাতে এলে তাকে নিদ্রিত পেলেন। তখন মুয়ায্যিন বললেন, “আস্সলা-তু খয়রুম মিনান্ নাওম” (সলাত ঘুম থেকে উত্তম)। ‘উমার (রাঃ) তাকে এ বাক্যটি ফাজ্রের সলাতের আযানে যোগ করার নির্দেশ দিলেন। [১]
৬৫৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৩
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ سَعْدِ بْنِ عَمَّارِ بْنِ سَعْدٍ مُؤَذِّنِ رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ حَدَّثَنِىْ أَبِىْ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَمَرَ بِلَالًا أَنْ يَجْعَلَ إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ وَقَالَ إِنَّه أَرْفَعُ لِصَوْتِكَ. رَوَاهُ اِبْنُ مَاجَةَ
আবদুর রহমান ইবনু সা‘দ ইবনু ‘আম্মার ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (দাদা) ছিলেন মাসজিদে কুবায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়ায্যিন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে (আযানের সময়) তার দুই আঙ্গুল দুই কানের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখার হুকুম দিলেন এবং বললেন, এভাবে (আঙ্গুল) রাখলে তোমার কণ্ঠষ্বর উঁচু হবে। [১]
৬৫৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৪
عَنْ مُّعَاوِيَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ الْمُوَذِّنُوْنَ اَطْوَلُ النَّاسِ اَعْنَاقًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : ক্বিয়ামাতের দিন মুয়ায্যিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড় সম্পন্ন লোক হবে। [১]
৬৫৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৫
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَه ضُرَاطٌ حَتّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ فَإِذَا قُضِىَ النِّدَاءُ أَقْبَلَ حَتّى إِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ أَدْبَرَ حَتّى إِذَا قُضِىَ التَّثْوِيْبُ أَقْبَلَ حَتّى يَخْطِرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهيَقُولُ اذْكُرْ كَذَا اُذْكُرْ كَذَا لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ حَتّى يَظِلَّ الرَّجُلُ لَا يَدْرِي كَمْ صَلّى. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সলাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে। ইক্বামাত শেষ হলে আবার ফিরে আসে। সলাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে তাকে। সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন হয় আর বলতে পারে না কত রাক্’আত সলাত আদায় করা হয়েছে। [১]
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী আলক্বারী বলেনঃ গাধার বোঝা বেশী ভার হওয়ার কারণে বোঝা বহনের সময় যেমন তার মলদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হয় তেমনি আযানের শব্দ শায়ত্বনের জন্য সহ্য শক্তির চাইতে ভার হওয়ার কারণে তার বায়ু নির্গত হয়। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, শয়তান ইচ্ছাকৃতভাবেই এ সময় বায়ু ছাড়ে যাতে এ বায়ুর আওয়াজের কারণে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে।
(حَتّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ) ‘‘যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে’’ এ বাক্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আযানের শব্দ উচ্চৈঃস্বরে হওয়া মুস্তাহাব।
৬৫৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৬
وَعَنْ أَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ُ لَا يَسْمَعُ مَدى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَلَا إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ اِلَّا شَهِدَ لَه يَوْمَ الْقِيَامَةِ. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বরেছেন : যতদূর পর্যন্ত মানুষ, জিন্ বা অন্য কিছু মুয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি শুনবে তারা সকলেই ক্বিয়ামাতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। [১]
ইবনে খুযায়মার বর্ণনায় রয়েছে যে, জিন্, ইনসান, পাথর, গাছ-পালা সবকিছুই সাক্ষ্য দেবে। আবূ দাঊদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে, প্রত্যেক শুকনো এবং ভেজা জিনিস মুয়াযযিনের জন্য সাক্ষ্য দেবে। জড় বস্ত্তর মধ্যেও আল্লাহ তা‘আলা এক ধরনের অনুভূতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ১৭ নং সূরার ৪৪ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন যে, وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِه
অর্থাৎ- ‘‘এমন কোন জিনিস নেই যা আল্লাহর প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে না।’’
সূরাহ্ আল বাক্বারার ৭৪ নং আয়াতে পাথর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহর ভয়ে কোন কোন পাথর নীচে পড়ে যায়। আবার হাদীসে এ কথাও রয়েছে যে, এক পাহাড় অপর পাহাড়কে বলে, তোমার উপর দিয়ে কি এমন কেউ অতিক্রম করেছে যে আল্লাহকে স্মরণ করে? পাহাড় যখন বলে, হ্যাঁ, তখন বলা হয় সুসংবাদ গ্রহণ করো।
৬৫৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৭
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ إِذَا سَمِعْتُمِ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّه مَنْ صَلّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللّهَ لِي الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা মুয়ায্যিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার উপর দশবার রাহমাত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হল জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন ওয়াজিব হয়ে পড়বে। [১]
মুয়াযযিনের আযানের জবাবে শ্রোতারা তাই বলবে যা মুয়াযযিন বলে। তবে দুই হাইয়্যা ‘আলা-এর ক্ষেত্রে (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ) ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ বলবে। আর এটা ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে। আর ফাজরের (ফজরের) আযানের সময় মুয়াযযিন যখন اَلصَّلَاةُ خَيْرُ مِّنَ النَّوْمِ বলেন তখন এর উত্তরে صَدَّقْتَ وَبَرَرْتَ বলার কোন দলীল পাওয়া যায় না।
আযানের জবাব দেয়ার পর দু‘আ পড়ার পূর্বে দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। ওয়াসীলা হলো জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্ধারিত। আযানের শেষে এই ওয়াসীলা যোগ করে দু‘আ করলে নাবীর শাফা‘আত পাবার আশা করা যায়।
৬৫৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৮
وَعَنْ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمْ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ثُمَّ قَالَ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ قَالَ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ قَالَ لَا إِلهَ اِلَّا اللّهُ قَالَ لَا إِلهَ اِلَّا اللّهُ مِنْ قَلْبِه دَخَلَ الْجَنَّةَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুয়ায্যিন যখন “আল্লা-হু আকবার” বলে তখন তোমাদের কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, “আল্লা-হু আকবার” “আল্লা-হু আকবার” এরপর মুয়ায্যিন যখন বলেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,” সেও বলে, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,”। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন বলে, “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ”, সেও বলে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ”, তারপর মুয়ায্যিন যখন বলে, “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ”, সে তখন বলে, “লা-হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ”; পরে মুয়ায্যিন যখন বলে, “আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার”, সেও বলে, “আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার”, এরপর মুয়ায্যিন যখন বলে, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”, সেও বলে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]
এ হাদীসটি এ দিকেও ইঙ্গিত করে যে, মুয়াযযিন আযানের ক্ষেত্রে শাহাদাতায়ন ও হাইয়ালাতায়নকে এক এক করে উচ্চারণ করবে। অর্থাৎ- প্রথমে এককভাবে أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ কে উচ্চারণ করবে আবারও এককভাবে أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ উচ্চারণ করবে। অনুরূপ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ কে উচ্চারণ করবে। অনুরূপভাবে হাইয়ালাতাইনও উচ্চারণ করবে।
ক্বাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেন, আযানের মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষী দেয়া হয়, তার গুণগান গাওয়া হয় এবং আল্লাহর আনুগত্যের উপর আত্মসমর্পণ করা হয়। لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ বলার দ্বারা এ কথার উপর আত্মসমর্পণ করা হয় যে, সমস্ত শক্তির অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। আর যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলো হাসিল করতে পারবে সে প্রকৃত ঈমান অর্জন করতে পারবে। আর তার মধ্যে ইসলাম পূর্ণতা লাভ করবে।
৬৫৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৫৯
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اۤتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودَانِ الَّذِي وَعَدْتَه حَلَّتْ لَه شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে ( ও এর উত্তর দেয়ার ও দরূদ পড়ার পর) এ দু’আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দু’আ হল : “আল্ল-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযী-লাহ, ওয়াব’আস্হু মাক্বা-মাম মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া’আদ্তাহ্” [অর্থাৎ-হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সলাতের প্রভূ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করো ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া’দা তুমি তাঁকে দিয়েছ।] ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য আমার শাফা’আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে। [১]
* ইমাম হাফিয (রহঃ)-এর মতে উক্ত দু‘আর মধ্যকার দা‘ওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- একত্ববাদের দিকে ডাকা। যে আহবানের মধ্যে কোন শির্ক নেই। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদের ১৩নং সূরা্হ আর্ রা‘দ এর ১৪নং আয়াতে বলা হয়েছে لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ অর্থাৎ- তার জন্যই সত্যের দিকে আহবান করা।
* উক্ত দু‘আর একটি অংশ ‘‘ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাহ্’’ এর উদ্দেশ্য হল- ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত এ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম থাকবে। কোন দল বা কোন শারী‘আত একে রহিত করতে পারবে না। অর্থাৎ- আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে সকল সলাত প্রতিষ্ঠিত তা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবস পর্যন্ত স্থির থাকবে।
* আর ওয়াসীলা হলো- জান্নাতের একটি নির্দিষ্ট স্থানের নাম। যা একমাত্র রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট।
* আলোচ্য হাদীসে ফাযীলাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সম্মানের অতিরিক্ত পর্যায় যা সমগ্র সৃষ্টিকূলের মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেই প্রদান করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রশংসিত উঁচু স্থান নির্ধারণ করেছেন। এ মর্মে আল কুরআনের ১৭নং সূরার ৭৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে- عَسى أَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
অর্থাৎ- উপরে বর্ণিত দু‘আ পড়লে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে পাওয়া যাবে। এ মর্মে তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনে মাজাহ-তে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৬৬০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬০
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُغِيرُ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ وَكَانَ يَسْتَمِعُ الْأَذَانَ فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا أَمْسَكَ وَاِلَّا أَغَارَ فَسَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ اللّهُ أَكْبَرُ اللّهُ أَكْبَرُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى الْفِطْرَةِ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ خَرَجْتَ مِنَ النَّارِ فَنَظَرُوا فَإِذَا هُوَ رَاعِي مِعْزًى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সেনাবাহিনী নিয়ে কোথাও যখন যেতেন ভোরে শত্রুদের উপর) আক্রমণ চালাতেন। ভোরে তিনি কান পেতে আযান শোনার অপেক্ষায় থাকতেন। (যে স্থানে আক্রমণ করার পরিকল্পনা হত) ওখান থেকে আযানের ধ্বনি কানে ভেসে এলে আক্রমণ করতেন না। আর আযানের ধ্বনি কানে ভেসে না এলে আক্রমণ করতেন। একবার তিনি শত্রুর উপর আক্রমণ করার জন্য রওনা হতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি এক ব্যক্তিকে ‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’ বলতে শনলেন। তখন তিনি বললেন, ইসলামের উপর আছে (কারণ আযান মুসলিমরাই দেয়)। এরপর ওই ব্যক্তি বলল, “আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই), রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি (শির্ক থেকে বিরত থাকার কারণে) জাহান্নাম থেকে বেঁচে গেলে। সহাবীগণ চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন, আযান দান তা বকরীর পালের রাখাল। [১]
৬৬১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬১
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا غُفِرَ لَه ذَنْبُه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনে এই দু’আ পড়বে, “আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ, রাযিতু বিল্লা-হি রব্বাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা” (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দ্বীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানি ও মানি) এর উপর আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। [১]
শাহাদাতের বাক্যের পর যে দু‘আটি উল্লেখ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা, অর্থাৎ- তাঁর রবূবিয়্যাতের সকল বিষয়ের উপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়কে নিজের জন্য কল্যাণকর হিসেবে মেনে নেয়া।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে মেনে নেয়ার অর্থ তিনি বিশ্বাসগত এবং ‘আমালগত যেসব বিষয় নিয়ে আগমন করেছেন তার সব কিছুকেই মেনে নেয়া। ইসলামকে পেয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার অর্থ হলো ইসলামের সকল আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধানকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া ও এসবের বিরুদ্ধাচরণ না করা।
৬৬২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬২
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ ثَلَاثًا لِمَنْ شَاءَ لِمَنْ شَاءَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সলাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সলাত আছে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেন: এই সলাত ওই ব্যক্তির জন্য যে পড়তে চায়, ঐ ব্যক্তির জন্য যে পড়তে চায়। [১]
এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, মাগরিবের আযান ও ইক্বামাতের মাঝে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মুসতাহাব। আর বুরায়দাহ্ হতে মাগরিব ব্যতীত অন্য সকল সলাতের আযান ও ইক্বমাতের মাঝে দু’ রাক্‘আত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) রয়েছে মর্মে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা দুর্বল। অপরপক্ষে বুখারীতে বুরায়দাহ্ হতে হাদীস রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ صَلُّوْ قَبْلَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ لِمَنْ شَاءَ خَشْىيَة أَنْ يَتَّخِذَهَا النَّاسُ
মনে রাখতে হবে যে, এ সলাত আদায় করার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে সলাত আদায় করতে বলেছেন এজন্য যে, আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। সহীহ ইবনে হিব্বান নামক হাদীসের কিতাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) এর বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে দুই রাক্‘আত সলাত আদায় করতেন। আরেক হাদীসে পাওয়া যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের পূর্বে দুই রাক্‘আত নফল সলাত আদায় করলেন এবং সাহাবীগণকেও আদায় করতে বললেন। এটা মুহাম্মাদ ইবনু নাসর কর্তৃক বর্ণিত। মোটকথা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের ফরয সলাতের পূর্বে নফল সলাত আদায় করতেন- এ সংক্রান্ত হাদীস সহীহ। এ ব্যাপারে বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি কিতাবে বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ এবং তাবি‘ঈগণ- সকলেই এ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। সুতরাং এ ব্যাপারে হানাফী ও মালিকী ও তাদের সমর্থনকারীর সিদ্ধান্তের উপর ‘আমাল করা যাবে না। কেননা তাদের সিদ্ধান্ত সুস্পষ্ট হাদীসের হুকুমের বিপরীত।
৬৬৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اَللّهُمَّ أَرْشِدْ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِىُّ وَالشَّافِعِيُّ وِفِي اُخْرى لَه بِلَفْظِ الْمَصَابِيْح
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ইমাম যিম্মাদার আর মুয়ায্যিন আমানতদার। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! তুমি ইমামদেরকে হিদায়াত দান কর। আর মুয়ায্যিনদেরকে মাফ করে দাও”। [১]
আহমাদ ২/৪১৯। ইমাম শাফি‘ঈর শব্দ হলো اَلْاَئِمَّةُ ضُمَنَاءُ وَالْمُؤَذِّنُوْنَ أُمَنَاءُ فَارْشُدْ اَللّهُمَّ...। তবে ইমাম শাফি‘ঈর সানাদটি দুর্বল। কারণ তাতে ইব্রাহীম ইবনু মুহাম্মাদ আল আসলামী রয়েছে যিনি একজন মাতরূক (পরিত্যক্ত) রাবী।
এ হাদীসে আরো বলা হয়েছে যে, মুয়াযযিন বিশ্বস্ত ব্যক্তি। এ কথার উদ্দেশ্য হলো, লোকেরা সলাত, সওম ও অন্যান্য ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে মুয়াযযিনের ওপর নির্ভরশীল। মুসলিম সমাজের লোকেরা মুয়াযযিনের উপর তাদের ‘ইবাদাতের সময়ের ব্যাপারে নির্ভরশীল। ইবনু মাজার মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায়- মুসলিমদের দু’টি বিষয়, মুয়াযযিনের ওপর ন্যাস্ত, আর তা হলো তাদের সলাত ও সওম।
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও। এর অর্থ, ‘ইলমের ব্যাপারে সঠিক পথ দেখাও। আর তার ‘ইলমের মধ্যে শার‘ঈ মাস্আলাহ্-মাসায়িলের সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, হে আল্লাহ! তুমি মুয়াযযিনদেরকে ক্ষমা কর। এ কথার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ যেন মুয়ায্যিনদের দায়িত্ব যেমন সলাত ও সওম। এর ক্ষেত্রে কোন প্রকার আগপিছ করা ভুলের অপরাধ ক্ষমা করে দেন।
৬৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৪
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَذَّنَ سَبْعَ سِنِينَ مُحْتَسِبًا كُتِبَتْ لَه بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وأبو دَاؤُدَ وَاِبْنُ مَاجَةَ
(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি (পারিশ্রমিক ও বিনিময়ের লোভ বাদ দিয়ে) শুধু সাওয়াব লাভের আশায় সাত বছর পর্যন্ত আযান দেয় তার জন্য জাহান্নামের মুক্তি লিখে দেয়া হয়। [১]
এই ফাযীলাতের কারণ হলো, এ ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে আযান দিয়েছে। আর আযানের মধ্যে তাওহীদ ও রিসলাতের সাক্ষ্য রয়েছে। সে দীর্ঘদিন দুনিয়ার কোন স্বার্থ ছাড়াই সলাতের দিকে, অর্থাৎ- আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করেছে। এমন ব্যক্তিকে জাহান্নাম স্পর্শ না করারই কথা।
৬৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৫
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَعْجَبُ رَبُّكَ مِنْ رَاعِي غَنَمٍ فِي رَأْسِ شَظِيَّةِ الْجَبَلِ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّي فَيَقُولُ اللّهُ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا إِلى عَبْدِي هذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ مِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَآئِىُّ
‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সলাতের জন্য আযান দেয় ও সলাত আদায় করে। আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালাকগণকে বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সলাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। [১]
৬৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৬
وَعَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ ثَلَاثَةٌ عَلى كُثْبَانِ الْمِسْكِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَبْدٌ أَدَّى حَقَّ اللهِ وَحَقَّ مَوْالْاَهُ وَرَجُلٌ أَمَّ قَوْمًا وَهُمْ بِه رَاضُونَ وَرَجُلٌ يُنَادِي بِالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وقال هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ক্বিয়ামাতের দিন তিন ধরনের ব্যক্তি ‘মিস্কের’ টিলায় থাকবে। প্রথম সেই গোলাম যে আল্লাহর হাক্ব আদায় করে নিজ মুনীবের হাক্বও আদায় করেছে। দ্বিতীয় সেই ব্যক্তি যে মানুষের সলাত আদায় করায়, আর মানুষরা তার উপর খুশী। আর তৃতীয় হল সেই ব্যক্তি যে দিনরাত সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের জন্য আযান দিয়েছে। [১]
এমন বান্দা যে আল্লাহর হক আদায় করে। এখানে আল্লাহর হক বলতে বুঝানো হয়েছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে নেয়া, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা বরং একনিষ্ঠভাবে তাঁর ‘ইবাদাতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
আর মুনীবের হক বলতে বুঝানো হয়েছে, পার্থিব জীবনে ব্যক্তি যার তত্ত্বাবধানে থাকবে তার প্রয়োজন মিটানো।
এমন ইমাম, মুক্তাদীগণ যার ওপর খুশী। এর অর্থ হলো ইমামের জ্ঞান, দায়িত্ববোধ ও ‘ইলমে ক্বিরাআতের বিশুদ্ধতার জন্য মুক্তাদীগণ খুশী। আসলে একজন ইমামের মধ্যে শারী‘আতের জ্ঞান মজবুতভাবে না থাকলে সে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবে না। আবার তার মধ্যে যদি দায়িত্ববোধ না থাকে তাহলে সে সলাতে সময়মত উপস্থিত হতে পারবে না এবং ইমামের ‘ইলমে ক্বিরাআত (কিরআত) শুদ্ধ না হলে সলাতও শুদ্ধ হবে না। সুতরাং একজন ইমামের এ গুণগুলো থাকা আবশ্যক। আর যে সকল মুয়াযযিন ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মানুষদেরকে দৈনিক পাঁচবার সলাতের দিকে আহবান করে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন অন্যান্য মানুষের ওপর তাদেরকে মর্যাদা দানের জন্য মিস্কের স্তুপের উপর দাঁড় করিয়ে রাখবেন।
৬৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৭
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَه مَدى صَوْتِه وَيَشْهَدُ لَه كُلُّ رَطْبٍ وَيَابِسٍ وَشَاهِدُ الصَّلَاةِ يُكْتَبُ لَه خَمْسٌ وَعِشْرُونَ صَلَاةً وَيُكَفَّرُ عَنْهُ مَا بَيْنَهُمَا. رَوَاهُ أَحْمَد وأَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ وَرَوَى النِّسَائِىُّ اِلى قَوْلِه رَطْبٍ وَّيَابِسٍ وَقالَ وَلَه مِثْلُ اَجْرِ مَنْ صَلّى
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুয়ায্যিন, তাকে মাফ করে দেয়া হবে। তার আযানের আওয়াজের শেষ সীমা পর্যন্ত তার জন্য সাক্ষ্য দেবে প্রতিটা সজীব এ নির্জীব জিনিস। যে সলাতে উপস্থিত হবে, তার জন্য প্রতি সলাতে পঁচিশ সলাতের সাওয়াব লিখা হবে। মাফ করে দেয়া হবে তার দুই সলাতের মধ্যবর্তি সময়ের গুনাহগুলো। [১]
কিন্তু নাসায়ী, প্রত্যেক সজীব নির্জীব পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি আরও বলেছেন, তার জন্য সাওয়াব রয়েছে যারা সলাত আদায় করেছে তাদের সমান। [2]
[2] সহীহ : নাসায়ী ৬৪৬, সহীহ আল জামি‘ ১৮৪১।
৬৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৮
وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ اجْعَلْنِيْ إِمَامَ قَوْمِي قَالَ أَنْتَ إِمَامُهُمْ وَاقْتَدِ بِأَضْعَفِهِمْ وَاتَّخِذْ مُؤَذِّنًا لَا يَأْخُذُ عَلى أَذَانِه أَجْرًا. رَوَاهُ أَحْمَد وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَآئِىُّ
উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার জাতির ইমাম নিযুক্ত করে দিন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি তাদের ইমাম। তবে ইমামতির সময় তাদের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য রেখ। একজন মুয়ায্যিন নিযুক্ত করে নিও, যে আযান দেবার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে না। [১]
এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, তুমি যাদের ইমামতি করবে তাদের দুর্বলদের প্রতি খেয়াল রাখো। জামা‘আতের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোক থাকে। যেমন- অসুস্থ, বয়োঃবৃদ্ধ ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ইমাম সলাতকে ছোট করবে যাতে কোন আরকান-আহকাম ছুটে না যায়। ইমাম সাহেব সলাতের ক্বিরাআত (কিরআত) ও বিভিন্ন সময়ের তাসবীহ কমিয়ে দিয়ে সলাতকে সংক্ষেপ করবে। আমির আল ইয়ামিনী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ভালো কাজের নেতৃত্ব চেয়ে নেয়া জায়িয। আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আযানের বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়িয। ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের রায় হলো, আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়া মাকরূহ।
৬৬৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৬৯
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ عَلَّمَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ أَنْ أقُوْلَ عِنْدَ أَذَانِ الْمَغْرِبِ : اللّهُمَّ إِنَّ هذَا إِقْبَالُ لَيْلِكَ وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ فَاغْفِرْ لِي. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ والْبَيْهَقِىُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيْرِ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মাগরিবের আযানের সময় এ দু’আটি পড়ার জন্য শিখিয়ে দিয়েছেন : “আল্ল-হুম্মা ইন্না হা-যা- ইক্ববা-লু লায়লিকা ওয়া ইদ্বা-রু নাহা-রিকা ওয়া আস্ওয়া-তু দু’আ-তিকা ফাগফির লী” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ আযানের ধ্বনি তোমার দিনের বিদায় ধ্বনি এবং তোমার মুয়ায্যিনের আযানের সময়। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।) [১]
৬৭০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭০
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَوْ بَعْضِ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ بِلَالًا أَخَذَ فِي الْإِقَامَةِ فَلَمَّا أَنْ قَالَ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺ أَقَامَهَا اللّهُ وَأَدَامَهَا وَقَالَ فِي سَائِرِ الْإِقَامَةِ كَنَحْوِ حَدِيثِ عُمَرَ فِي الْأَذَان. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবূ উমামাহ অথবা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন সহাবী থেকে বর্ণিতঃ
একবার বিলাল ইক্বামাত দিতে শুরু করলেন। তিনি যখন “ক্বদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্” বললেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আক্বা-মাহাল্ল-হু ওয়া আদা-মাহা-“ (আল্লাহ সলাতকে ক্বায়িম করুন এ একে চিরস্থায়ী করুন)। বাকী সব ইক্বামাতে ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে আযানের উত্তরে যেরূপ উল্লেখ রয়েছে সেরূপই বললেন। [১]
বিঃ দ্রঃ যখন হাদীসটির দুর্বলতা প্রমাণিত হয়ে যায় তখন সে হাদীসের প্রতি দু’টি কারণে ‘আমাল করা যাবে না। প্রথমত হাদীসটি ফাযীলাত সংক্রান্ত নয় কারণ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ -এর সময় أَقَامَهَا اللّهُ وَأَدَامَهَا বলা শারী‘আতসম্মত নয় এবং অন্য কোন হাদীসে এর ফাযীলাত বর্ণিত হয়নি যে, বলা হবে এটি ফাযীলাত সংক্রান্ত ‘আমাল যার প্রতি ‘আমাল করা যাবে। পক্ষান্তরে এটিকে কেবলমাত্র এ ধরনের দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত করে শারী‘আত সম্মত করাটা শারী‘আতের নীতির অনেক দূরবর্তী বিষয় যা গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপক উক্তির পরিপন্থী। যেখানে তিনি বলেছেন যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান বা ইক্বামাত বলতে শুনবে তখন তোমরা তার মতো বলো.....। তাই হাদীসটি তার ব্যাপকতার উপর রাখাটাই আবশ্যক। অতএব, আমরা ইক্বামাতের সময় قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ বলব।
৬৭১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭১
وَعَنْ أَنَس قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الْاَذَانِ وَالْاِقَامَةِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِىُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ আল্লাহ তা’আলার দরবার হতে ফেরত দেয়া হয় না। [১]
৬৭২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭২
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ «ثِنْتَانِ لَا تُرَدَّانِ أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا» وَّفِىْ رِوَايَةٍ «وَّتَحْتَ الْمَطَرِ». رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالدَّارِمِيُّ اِلَّا اَنَّه لَمْ يَذْكُرْ «وَتَحْت الْمَطَر
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দু’সময়ের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অথবা (তিনি বলেছেন) কমই ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সময়ের দু’আ ও যুদ্ধের সময়ের দু’আ, যখন পরস্পর কাটাকাটি, মারামারি আরম্ভ হয়ে যায়। আর এক বর্ণনায় আছে বৃষ্টি বর্ষণের সময়ে দু’আ। [১]
তবে দারিমীর বর্ণনায় “বৃষ্টির বর্ষণের” কথাটুকু উল্লেখ হয়নি।
৬৭৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৩
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ الْمُؤَذِّنِينَ يَفْضُلُونَنَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ قُلْ كَمَا يَقُولُونَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল! আযানদান তা’ তো আমাদের চেয়ে মর্যাদায় বেড়ে যায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা যেভাবে বলে তোমরাও তোদের সাথে সাথে সেভাবে বলে যাও। আর আযানের উত্তরে শেষে যা খুশী তাই আল্লাহর কাছে চাও, তোমাদেরকে দেয়া হবে। [১]
৬৭৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৪
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ إِنَّ الشَّيْطَانَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ ذَهَبَ حَتّى يَكُونَ مَكَانَ الرَّوْحَاءِ قَالَ الرَّوْحَاءُ مِنْ الْمَدِينَةِ عَلَىسِتَّةٍ وَّثَلَاثِيْنَ مَيْلًا . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, শয়তান যখন সলাতের আযান শুনে তখন সে “রাওহা” না পৌঁছা পর্যন্ত ভাগতে থাকে (অর্থাৎ অনেক দূরে চলে যায়)। বর্ণনাকারী বলেন, “রাওহা” নামক স্থান মাদীনাহ্ থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত। [১]
৬৭৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৫
وَعَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَقَّاصٍ قَالَ إِنِّي لَعِنْدَ مُعَاوِيَةَ إِذْ أَذَّنَ مُؤَذِّنُه فَقَالَ مُعَاوِيَةُ كَمَا قَالَ مُؤَذِّنهُ حَتّى إِذَا قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ فَلَمَّا قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ وَقَالَ بَعْدَ ذلِكَ مَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ ثُمَّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ ذلِكَ. رَوَاهُ أَحْمَد
আলক্বামাহ্ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁর মুয়ায্যিন আযান দিচ্ছিলেন। মুয়ায্যিন যেভাবে (আযানের বাক্যগুলো) বলছিলেন, মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) ও ঠিক সেভাবে বাক্যগুলো বলতে থাকেন। মুয়ায্যিন “হাইয়্যা ‘আলাস্সলা-হ্” বললে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) বললেন, “লা-হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। মুয়ায্যিন “হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ” বললে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) বললেন, “লা-হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম”। এরপর আর বাকীগুলো তিনি তা-ই বললেন যা মুয়ায্যিন বললেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (আযানের উত্তরে) এভাবে বলতে শুনেছি। [১]
৬৭৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৬
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَامَ بِلَالٌ يُنَادِي فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ قَالَ مِثْلَ هذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ. رَوَاهُ النِّسَآئِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যাচ্ছিলাম, বিলাল দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন। আযান শেষে বিলাল চুপ করলে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এর মত বলবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]
৬৭৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৭
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيّ ﷺ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ يَتَشَهَّدُ قَالَ وَأَنَا وَأَنَا. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুয়ায্যিনকে, “আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” ও “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ” বলতে শুনতেন তখন বলতেন, ‘আনা আনা’ (‘আর আমিও’ ‘আর আমিও’) অর্থাৎ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। [১]
৬৭৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৮
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَه بِتَأْذِينِه فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلَاثُونَ حَسَنَةً. رَوَاهُ ابن مَاجَةَ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি বার বছর পর্যন্ত আযান দিবে তার আযানের বিনিময়ে প্রতিদিন তার ‘আমালনামায় ষাটটি নেকী ও প্রত্যেক ইক্বামাতের পরিবর্তে ত্রিশ নেকী লেখা হবে। [১]
৬৭৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৭৯
وَعَنْهُ قَالَ كُنَّا نُؤْمَرُ بِالدُّعَاءِ عِنْدَ اَذَانِ الْمَغْرِبِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِىّ فِى الدَّعْوَاتِ الْكَبِيْرِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদেরকে মাগরিবের আযানের সময় দু’আ করার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে। [১]
৬৮০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮০
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّى يُنَادِىَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ ثُمَّ قَالَ وَكَانَ رَجُلًا أَعْمى لَا يُنَادِىْ حَتّى يُقَالَ لَه أَصْبَحْتَ أَصْبَحْتَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়। তাই তোমরা উম্মু মাকতূমের আযান না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া-দুওয়া করতে থাকবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) অন্ধ ছিলেন। ‘ভোর হয়ে গেছে, ভোর হয়ে গেছে’ তাকে না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না। [১]
অর্থাৎ- যখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) রাতের আযান দিতেন তখন বিলাল (রাঃ) ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন এবং যখন বিলাল (রাঃ) রাতের আযান দিতেন তখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন।
কতিপয় মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, তাদের আযানের মাঝে কোন পালা ছিল না। বরং তাদের উভয়ের দু’টি ভিন্ন অবস্থা ছিল। কেননা সর্বপ্রথম যখন আযানের বিধান আসে তখন বিলাল (রাঃ) একাই ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন। পরবর্তীতে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-কে রাতে আযান দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরিশেষে ইবনু উম্মু মাকতূম-এর দুর্বলতার জন্য ফাজরের (ফজরের) সলাতের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তার সাথে লোক নিয়োগ করা হয়, যারা তার জন্য ফাজর (ফজর) উদিত হওয়া লক্ষ্য করবেন (অন্ধ হওয়ার কারণে) এবং বিলালের আযানকে (রাতের) সাহরীর আযান হিসেবে স্থায়ী করা হয়।
উল্লেখিত হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ফাজরের (ফজরের) (সুবহে সাদিকের) পূর্বে আযান দেয়া শারী‘আতসিদ্ধ। কেননা আযানকে শারী‘আতসম্মত করা হয়েছে ওয়াক্ত প্রবেশের বিষয়টি জানানোর জন্য এবং শ্রবণকারীগণকে সলাতে উপস্থিত হওয়ার আহবানের জন্য।
‘আল্লামা মুবারাকপূরী (রহঃ) এ মতটি প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, আবূ ইউসুফ (রহঃ) এ মত পোষণ করেন যে, ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পূর্বেই ফাজরের (ফজরের) আযান দেয়া জায়িয এবং ঐ আযানটি যথেষ্ট হবে। পুনরায় আযান দেয়া ওয়াজিব নয়। তারা বলেনঃ ফাজরের (ফজরের) সলাতের জন্য দু’টি আযান ছিল। প্রথম আযানটি সাহরী থেকে বাধা প্রদানকারী ছিল না এবং দ্বিতীয় আযানটি ছিল জানানোর পর পুনরায় জানানোর জন্য। শুধুমাত্র ফাজরের (ফজরের) সলাতকে দু’ আযান দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, অন্যান্য সলাত থেকে। কেননা প্রথম ওয়াক্তে সলাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহমূলক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং সকালের সলাতটি অধিকাংশ সময় ঘুমের পরেই আসে।
আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেনঃ ফাজরের (ফজরের) সলাতের আযান ফাজর (ফজর) (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার পূর্বে দেয়া জায়িয নয়। যেমন- অন্য সকল সলাতে সময়ের পূর্বে আযান দেয়া জায়িয নয়। যদি ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পূর্বে আযান দেয়া হয় তাহলে ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পর পুনরায় আযান দেয়া আবশ্যক। পূর্বের আযান যথেষ্ট হবে না। তারা [আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)] বলেনঃ প্রথম আযানটি ফাজরের (ফজরের) সলাতের জন্য ছিল না। বরং অন্য উদ্দেশ্য ছিল। যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, ليرجع قائكم ويوقظ نائمكم
অর্থাৎ- ‘‘যাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা ফিরে যায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত হয়।’’
জেনে রাখুন, ইবনুল ক্বত্ত্বান, ইবনু দাক্বীক্ব আল ‘ঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাসান (রহঃ) দাবী করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ) ‘‘নিশ্চয়ই বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬১৭)।
এটা রমাযানের সাথেই নির্দিষ্ট সারা বছরের ক্ষেত্রে নয়। তাদের এ উক্তির ব্যাপারে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (كلووَاشْرَبُوا) ‘‘তোমরা খাও এবং পান করো’’।
এটা রমাযান ছাড়াও হতে পারে নফল সিয়াম পালনকারীর জন্য। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে অধিকাংশ সাহাবী বেশী বেশী নফল সিয়াম পালন করতেন। উক্ত হাদীসে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। তার দলীল হচ্ছে যা বর্ণনা করেছেন ‘আবদুর রাযযাক্ব ‘‘ইবনুল মুসাইয়্যাব’’ থেকে মুরসাল সানাদে এভাবে- ‘‘নিশ্চয় বিলাল রাতে আযান দেয়’’। সুতরাং যে সিয়ামের ইচ্ছা পোষণ করে তাকে যেন (সাহরী খাওয়া হতে) বিলাল (রাঃ)-এর আযান বাধা না দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) আযান না দেয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (أَصْبَحْتَ أَصْبَحْتَ) ‘‘তুমি সকাল করে ফেলেছ, তুমি সকাল করে ফেলেছ’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬১৭)।
উদ্দেশ্য হচ্ছে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযানটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার নিষেধ হওয়ার চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
উক্ত হাদীস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, অন্ধ ব্যক্তির আযান দেয়া জায়িয। যখন তার কাছে এমন ব্যক্তি থাকবে, যে তাকে কোন প্রকার অপছন্দনীয়তা ছাড়া সলাতের ওয়াক্ত প্রবেশের ব্যাপারে সংবাদ দিবে। কেননা সময়টি মূলত শাহাদাতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
মোটকথা হলো, সুবহে সাদিক হওয়ার পর যে আযান হবে এরপর আর সাহরী খাওয়া ও কোন কিছু পান করা যাবে না।
৬৮১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮১
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَا يَمْنَعَنَّكُمْ مِنْ سُحُورِكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ وَلَا الْفَجْرُ الْمُسْتَطِيلُ وَلَكِنَّ الْفَجْرُ الْمُسْتَطِيرُ فِي الْأُفُقِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَلَفْظُه لِلتِّرْمِذِىُّ
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : বিলালের আযান ও সুবহে কাযিব তোমাদেরকে সাহরী খাওয়া হতে যেন বিরত না রাখে। কিন্তু সুবহে সাদিক যখন দিগন্তে প্রসারিত হয়। (তখন খাবার-দাবার ছেড়ে দেবে)। [১]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (المُسْتَطِيْرُ فِي الْأُفُقِ) (সহীহ; জামি‘ আত্ তিরমিযী- হাঃ ৭০৬)। সেটা হচ্ছে- যার আলোটি ছড়িয়ে যায় এবং পূর্ব দিগন্তে আড়াআড়িভাবে ভেসে উঠে। মনে হয় সেটা আকাশের প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছে। হাদীসের মাঝে ফাজরের (ফজরের) বর্ণনা দেয়া হয়েছে যার সাথে আহকামের সম্পর্ক রয়েছে।
৬৮২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮২
وَعَنْ مَّالِكِ بْنِ الْحَوَيْرِثِ قَالَ اَتِيْتُ النَّبِيّ ﷺ اَنَا وَابْنُ عَمٍّ لِّىْ فَقَالَ إِذَا سَافَرْتُمَا فَاَذِّنَا وَاَقِيْمَا وَلْيَؤُمَّكُمَا اَكْبَرُكُمَا. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ও আমার চাচাতো ভাই, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা সফরে গেলে আযান দিবে ও ইক্বামাত বলবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। [১]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (وَأَقِيْمَا) ‘‘ইক্বামাত বলবে’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬৫৮)। উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যে ব্যক্তি আযান দিবে তিনিই ইক্বামাত বলবে এবং মুয়াযযিনের ইক্বামাত দেয়া মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।
আর তোমাদের মধ্যে যার বয়স বেশী সে ইমামতি করবে। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দু’জনের মধ্যে যে ব্যক্তি আযান দিতে পছন্দ করবে সে-ই আযান দিবে। আর ইমামতির ন্যায় আযানের ক্ষেত্রে বয়স কোন ধর্তব্য বিষয় নয়। এ হাদীসে যার বয়স বেশী তাকে ইমামতি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটাকে খাস করার কারণ হলো- উপস্থিত লোকজন যখন ইমামতির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন- ক্বিরাআত (কিরআত) শুদ্ধ হওয়া, সুন্নাতের ‘ইলম রাখা, মুক্বীম হওয়া- এ সকল বিষয়ে সমান হয় তখন তাদের মধ্যে যার বয়স বেশী হবে তিনিই ইমামতির ক্ষেত্রে অধিক হকদার হবেন। এ হাদীস থেকে আরো যে জিনিসটি প্রমাণিত হয় তা হলো- ফরয সলাতের ক্ষেত্রে আযান দেয়া ওয়াজিব। সর্বনিম্ন দু’জন ব্যক্তি হলেই জামা‘আতে সলাত আদায় করা যাবে এবং এটাতে মুসলিমদের ঐকমত্য রয়েছে। আর মুসাফিরদের জন্য আযান দেয়া এবং জামা‘আতে সলাত আদায় করার বিধান রয়েছে।
৬৮৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৩
وَعَنْهُ قَالَ قال لنا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِىْ أُصَلِّىْ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বেলন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন : তোমরা সলাত আদায় করবে যেভাবে আমাকে সলাত আদায় করতে দেখছ। সলাতের সময় হলে তোমাদের মধ্যে একজন আযান দিবে। এরপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে তোমাদের সলাতের ইমামাত করবে। [১]
‘আল্লামা শাওকানী বলেন, এ হাদীসটি এ কথা প্রমাণ করে যে, সলাতের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা ও কাজ থেকে যা প্রমাণিত হয়েছে তা অনুসরণ করা ওয়াজিব। যেহেতু সলাতের ক্ষেত্রে কুরআনের নির্দেশ اَقِيْمُوا الصَّلَوةَ অর্থাৎ- সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম কর। এটা হচ্ছে মুজমাল বা অস্পষ্ট নির্দেশ। সলাত আদায়ের বিস্তারিত পদ্ধতি কুরআনে আলোচনা করা হয়নি। বিধায় এ ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে সকল নিয়ম-কানুন বর্ণিত হয়েছে এসবের অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
৬৮৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৪
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ اِنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ سَارَ لَيْلَهً حَتّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْكَرى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلَالٍ اِكْلأ لَنَا اللَّيْلَ فَصَلّى بِلَالٌ مَا قُدِّرَ لَه وَنَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأَصْحَابُه فَلَمَّا تَقَارَبَ الْفَجْرُ اسْتَنَدَ بِلَالٌ إِلى رَاحِلَتِه مُوَاجِهَ الْفَجْرِ فَغَلَبَتْ بِلَالًا عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلى رَاحِلَتِه فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَلَا بِلَالٌ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِه حَتّى ضَرَبَتْهُمْ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَوَّلَهُمْ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَيْ بِلَالُ فَقَالَ بِلَالٌ أَخَذَ بِنَفْسِي الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ قَالَ اقْتَادُوا فَاقْتَادُوْا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ فَصَلّى بِهِم الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللّهَ قَالَ أَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي قَالَ يُونُسُ وَكَانَ ابْنُ شِهَابٍ يَقْرَؤُهَا لِلذِّكْرى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলালকে বলে রাখলেন, সলাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফাজ্রের সলাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল (অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলাল জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে লাগল। এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হল তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন, রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চল। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন। বিলালকে তাক্ববীর দিতে বললেন। বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি তাদের ফাজ্রের সলাত আদায় করালেন। সলাত শেষে নাবী বললেন, সলাতের কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, “সলাত কাযিম কর আমার স্মরণে। [১]
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার চক্ষু ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। অন্তর জাগ্রত থাকা সত্ত্বেও তিনি সূর্যোদয় সম্পর্কে কেন জানতে পারলেন না এ প্রশ্নের জবাব দু’ভাবে।
প্রথমত এটাই প্রসিদ্ধ ও সঠিক। এতে কোন দ্বন্দ্ব নেই, কেননা অন্তরাত্মা অনুভূতির কাজে সংশ্লিষ্ট যেমন ব্যথা ইত্যাদি। তা সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো চর্মচক্ষুর কাজ আর চর্মচক্ষু ঘুমানোর কারণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে পারেনি যদিও অন্তরাত্মা জাগ্রত ছিল।
দ্বিতীয়ত অন্তরাত্মার দু’টি অবস্থা। কখনো ঘুমায় আবার কখনো ঘুমায় না। তবে অধিকাংশ সময় ঘুমায় না। কিন্তু এ স্থানে অন্তরাত্মা ঘুমিয়েছিল এটি দুর্বল মন্তব্য।
(وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ)-কে ইক্বামাতের আদেশ দিলে তিনি ইক্বামাত দিলেন, এটা প্রমাণ করে ক্বাযা সলাতের জন্য ইক্বামাত রয়েছে আর আযান নেই। তবে আবূ ক্বাতাদার হাদীস বুখারী ও মুসলিমে আযানের কথা এসেছে।
আবূ হুরায়রার হাদীসে ক্বাযা সলাতের আযান নেই জবাব দু’টি হতে পারে।
প্রথমত তিনি আযানের বিষয়টি জানেননি।
দ্বিতীয়ত শুধু আযান বাদ দেয়ার বৈধতা প্রমাণের জন্য।
আর ইঙ্গিত করে যে, আযান আবশ্যিক তথা ওয়াজিব না বিশেষ করে সফররত ওয়াজিব হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
(مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا) যে ব্যক্তি সলাতের কথা ভুলে যায় সে তা পড়ে নিবে যখনই স্মরণ হয়।
এটা প্রমাণ করে যে, ক্বাযা ফরয সলাত আদায় করা ওয়াজিব। চাই তা কোন ওযরের কারণে হোক যেমন- ঘুম অথবা ভুলে যাওয়া। আর চাই ওযর ছাড়া হোক। আর যখন স্মরণ হবে তখন সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেবে- কথাটি মুস্তাহাব এর প্রমাণ বহন করে। আর ওযরের কারণে ক্বাযা সলাতকে দেরী করে আদায় করা সহীহ মতে বৈধ।
৬৮৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৫
وَعَنْ اَبِى قَتَادَة قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَقُومُوا حَتّى تَرَوْنِي قَدْ خَرَجْتُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন সলাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হবে, তোমরা আমাকে বের হয়ে আসতে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না। [১]
إِنَّ بِلَالًا كَانَ لَا يُقِيْمُ حَتّى يَخْرُجَ النَّبِىُّ - ﷺ -، فَإِذَا خَرَجَ أَقَامَ الصَّلَاةَ حِيْنَ يَرَاهُ.
সে হাদীসে বলা হয়েছে নিশ্চয় বিলাল (রাঃ) ইক্বামাত দিতেন না যতক্ষণ না বের হতেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) তখনই ইক্বামাত দিতেন যখন তাঁকে দেখতেন। দু’ হাদীসের সমাধান হলো যে বিলাল (রাঃ) সর্বদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। অধিকাংশ লোক দেখার পূর্বেই তিনি দেখতেন এবং ইক্বামাত দেয়া শুরু করতেন। অতঃপর মুসল্লীরা যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতেন দাঁড়াতেন আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্থানে দাঁড়াবার পূর্বে কাতার সোজা করতেন।
আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস মুসলিমে এ শব্দে এসেছে যে,
أُقِيْمَتِ الصَّلَاةَ فَقُمْنَا فَعَدِلْنَا الصُّفُوْفَ قَبْلَ أَنْ يُّخْرِجَ إِلَيْنَا النَّبِىُّ - ﷺ ، فَأَتى فَقَامَ مَقَامَه.
সলাতের জন্য ইক্বামাত হতো, অতঃপর আমরা দাঁড়াতাম। অতঃপর কাতার সোজা করতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসার পূর্বে। তিনি আসতেন এবং তাঁর স্থানে দাঁড়াতেন।
আর বুখারীতে এ শব্দে এসেছে, أُقِيْمَتِ الصَّلَاةَ فَسَوَى النَّاسَ صُفُوْفَهُمْ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ - ﷺ
সলাতের জন্য ইক্বামাত হতো, অতঃপর মানুষেরা তাদের কাতার সোজা করতো, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতেন। আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনা,
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ تَقَامُ لِرُسُوْلِ اللهِ - ﷺ -، فَيَأْخُذَ النَّاسُ مَقَامَهُمْ قَبْلَ أَنْ يِّجِئَ النَّبِيُّ - ﷺ.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ইক্বামাত দেয়া হতো, আর মানুষেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার পূর্বে তাদের স্থান গ্রহণ করতো। এসব হাদীস ও আবূ ক্বাতাদার হাদীসের সমন্বয় এই যে, বৈধতার জন্য এমনটি হতো।
আর আবূ ক্বাতাদার হাদীসের নিষেধের কারণ হলো মানুষ ইক্বামাত দেয়ার পর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের না হওয়া সত্ত্বেও।
অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে থাকতে নিষেধ করলেন কোন কাজে ব্যাস্ত হওয়ায় বের হওয়া দেরী হতে পারে। তাছাড়া মানুষের ওপর অপেক্ষা করাটা কষ্টকর হবে, তাই দাঁড়িয়ে থাকতে নিষেধ করলেন।
৬৮৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৬
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ وَعَلَيْكُمْ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.- وَفِىْ رِوَايَةٍ لِّمُسْلِمٍ فَاِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا كَانَ يَعْمِدُ اِلَى الصَّلَاةِ فَهُوَ فِى الصَّلَاةِ وَهذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلُ الثَّانِيْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সলাতের ইক্বামাত দেয়া শুরু হলে তোমরা দৌড়িয়ে আসবে না, বরং শান্তভাবে হেঁটে আসবে। তারপর যা ইমামের সাথে পাবে তাই পড়বে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে পড়ে নিবে। [১]
তবে মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “তোমাদের কেউ সলাতের জন্য বের হলে তখন সে সলাতেই থাকে”।
[2]
[2] সহীহ : মুসলিম ৬০২।
(السَّكِينَةُ) অর্থ হচ্ছে- দ্রুত না চলে ধীরে চলা এবং নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকা।
(الوقار) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অবস্থা; যেমন চক্ষুর দৃষ্টি নীচু করা, আওয়াজকে নীচু করা এবং এদিক সেদিক দৃষ্টি না দেয়া।
(فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا) যার আসল অর্থ তোমাদের প্রতি আদেশ এসেছে ধীরে ধীরে চলার এবং দ্রুতগামী পরিত্যাগ করা। তখন তোমরা যতটুকু সলাত পাবে, তা আদায় করবে। কেননা জমহূর ‘উলামারা দলীল পেশ করেছেন সলাতের যে কোন অংশ পাবে তাহলে জামা‘আতের ফাযীলাত পাবে। হাদীসের ‘আম্ বক্তব্য থেকে (فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا) দ্বারা যা কম বেশী পৃথক নেই। আরো বলা হয়, যে ব্যক্তি এক রাক্‘আতের চেয়ে কম পাবে সে জামা‘আতের ফাযীলাত পাবে না।
আয়াত ও হাদীসের মধ্যকার দ্বন্দ্বঃ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- فَاسْعَوْا إِلى ذِكْرِ اللّهِ ‘‘তোমরা সলাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও’’- (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ৯)। আর এ হাদীসে তা নিষেধ করা হয়েছে। মূলত উভয়ের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই।
আয়াতে বর্ণিত فَاسْعَوْا দ্বারা قَصْدٌ বা ইচ্ছা করা বা অন্যান্য ব্যাস্ততা ছেড়ে দেয়া উদ্দেশ্য।
আর হাদীস প্রমাণ করে, ইমামকে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে সে অবস্থায় তার সাথে মিলিত হওয়া মুস্তাহাব। আর এ হাদীসটিকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছে ইবনু আবী শায়বার একটি হাদীস। সেখানে বলা হয়েছে,
مَنْ وَجَدَنِيْ رَاكِعًا أَوْ قَائِمًا أَوْ سَاجِدًا فَلْيَكُنْ مَّعِىْ عَلى حَالَتِيْ اَلَّتِيْ أَنَا عَلَيْهَا.
যে ব্যক্তি আমাকে রুকূ‘ অথবা দাঁড়ানো অথবা সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) অবস্থায় পাবে সে আমার সাথে মিলিত হবে আমি যে অবস্থায় রয়েছি।
(فَأَتِمُّوا) (বাকী অংশ) তোমরা একা একা পূর্ণ করে নিবে। অধিকাংশ বর্ণনা এ শব্দে আর কতক বর্ণনায় (فَاقْضُوْا) শব্দ রয়েছে, অর্থাৎ- ‘তোমরা আদায় করে নিবে’ এসেছে। মাসবূক্ব তথা সলাতে যার রাক্‘আত ছুটে গেছে তার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে যে, ইমামের পরে একাকী সলাতের যে অংশ আদায় করা হবে তা কি তার সলাতের প্রথমাংশ না শেষাংশ হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম আবূ হানীফার মতে ছুটে যাওয়া সলাত যা সে ইমামের পর একাকী আদায় করবে তা তার সলাতের প্রথমাংশ হিসেবে গণ্য হবে, কেননা বর্ণনায় (اِقْضُوْا) শব্দ এসেছে আর এ ক্বাযা قَضَاء শব্দটি যা ছুটে বা খোয়া গেছে সেক্ষেত্রেই শুধু ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং যার তিন রাক্‘আত ছুটে গেছে যখন ইমাম সালাম ফিরাবে সে দাঁড়াবে আর সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ্ পড়বে, অতঃপর দাঁড়াবে তাশাহুদ (বৈঠক) ব্যতিরেকে এবং সলাতে সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ্ পড়বে, অতঃপর বসবে এবং তাশাহুদ পড়বে, তারপর দাঁড়াবে অবশিষ্ট সলাত আদায় করবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ সহকারে অন্য কোন সূরাহ্ পড়বে না। অতঃপর তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। এর উপর ভিত্তি করে ইমামের সাথে যে সলাতটি পেয়েছিল তা সলাতের শেষাংশ তথা শেষ রাক্‘আত আর পরবর্তী রাক্‘আতগুলো ক্বাযা স্বরূপ।
আর ইমাম শাফি‘ঈর মতে ছুটে যাওয়া সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) মাসবূক্ব ব্যক্তির সলাতের শেষাংশ হিসেবে গণ্য হবে, কেননা হাদীসের শব্দ أَتِمُّوْا তোমরা পূর্ণ কর, কেননা إِتْمَامْ (ইতমা-ম) শব্দটি কোন কিছু অবশিষ্ট রয়েছে এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। সুতরাং যার তিন রাক্‘আত ছুটে গেছে ইমাম সালাম ফিরানোর পরে সে দাঁড়িয়ে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ এবং অন্য একটি সূরাহ্ সহকারে, অতঃপর বসবে এবং তাশাহুদ পড়বে, অতঃপর দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করবে তাতে শুধুমাত্র সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়বে অন্য সূরাহ্ পড়বে না এর উপর ভিত্তি করে যে ইমামের সাথে যে সলাত পেয়েছিল তা তার প্রথম রাক্‘আত। দলীলস্বরূপ বায়হাক্বীর বর্ণনায় হারিস ‘আলী (রাঃ) হতে مَا أَدْرَكْتَ فَهُوَ أَوَّلُ صَلَاتِكَ তিনি বলেনঃ তুমি (ইমামের সাথে) যা পাও তা তোমার প্রথম সলাত তথা প্রথম রাক্‘আত। বায়হাক্বীর অন্য বর্ণনা ক্বাতাদার হাদীস
أَنَّ عَلِيًّا قَالَ: مَا أَدْرَكْتَ مَعَ الْإِمَامِ فَهُوَ أَوَّلُ صَلَاتِكَ، وَاقْضِ مَا سَبَقَكَ مِنَ الْقُرْانِ
‘আলী (রাঃ) বলেন, ইমামের সাথে যা পাবে তা তোমার প্রথম রাক্‘আত আর তুমি ক্বাযা হিসেবে আদায় করো যা তোমাকে অতিক্রম করেছে কুরআন হতে।
আমার (ভাষ্যকারের) নিকট শ্রেষ্ঠ বা অধিক করণীয় শাফি‘ঈ-এর মত, কেননা অধিকাংশ বর্ণনায় أتموا শব্দ এসেছে।
আর এ মতে ইবনু মুনযির দলীল হিসেবে বলেনঃ সবাই ঐকমত্য হয়েছেন যে, تَكْبِيْرَةُ الْإِفْتِتَاحِ উদ্বোধনের তাকবীর কেবল প্রথম রাক্‘আতেই হয়।
হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, রুকূ‘ পেলে তা রাক্‘আত হিসেবে গণ্য হবে না। যা ছুটে গেছে তা পূর্ণ করার আদেশ থাকায়; কেননা ক্বিরাআত (কিরআত) ও ক্বিয়াম (কিয়াম) ছুটে গেছে।
বিঃ দ্রঃ এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ নেই। কারণ, সম্ভবত সাহিবুল মাসাবীহ এই অনুচ্ছেদের জন্য মুনাসিব-উপযুক্ত হাসান হাদীস খুঁজে পাননি।
৬৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৭
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ أَنَّه قَالَ عَرَّسَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَيْلَةً بِطَرِيقِ مَكَّةَ وَوَكَّلَ بِلَالًا أَنْ يُوقِظَهُمْ لِلصَّلَاةِ فَرَقَدَ بِلَالٌ وَرَقَدُوْا حَتَّى اسْتَيْقَظُوا وَقَدْ طَلَعَتْ عَلَيْهِمُ الشَّمْسُ فَاسْتَيْقَظَ الْقَوْمُ وَقَدْ فَزِعُوا فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَنْ يَرْكَبُوا حَتّى يَخْرُجُوا مِنْ ذلِكَ الْوَادِي وَقَالَ إِنَّ هذَا وَادٍ بِه شَيْطَانٌ فَرَكِبُوا حَتّى خَرَجُوا مِنْ ذلِكَ الْوَادِي ثُمَّ أَمَرَهُمْ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَنْ يَنْزِلُوا وَأَنْ يَتَوَضَّئُوا وَأَمَرَ بِلَالًا أَنْ يُنَادِيَ بِالصَّلَاةِ أَوْ يُقِيمَ فَصَلّى رَسُولُ اللهِ ﷺ بِالنَّاسِ ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَيْهِمْ وَقَدْ رَأَى مِنْ فَزَعِهِمْ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَنَا وَلَوْ شَاءَ لَرَدَّهَا إِلَيْنَا فِي حِينٍ غَيْرِ هذَا فَإِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلَاةِ أَوْ نَسِيَهَا ثُمَّ فَزِعَ إِلَيْهَا فَلْيُصَلِّهَا كَمَا كَانَ يُصَلِّيهَا فِي وَقْتِهَا ثُمَّ الْتَفَتَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِلى أَبِي بَكْرٍ فَقَالَ إِنَّ الشَّيْطَانَ أَتى بِلَالًا وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّىْ فَأَضْجَعَه فَلَمْ يَزَلْ يُهَدِّئُه كَمَا يُهَدَّأُ الصَّبِيُّ حَتّى نَامَ ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بِلَالًا فَأَخْبَرَ بِلَالٌ رَسُولَ اللهِ ﷺ مِثْلَ الَّذِي أَخْبَرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَبَا بَكْرٍ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللهِ. رَوَاهُ مالك مُرْسَلًا
যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার মাক্কার পথে এক রাতে শেষের দিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহন হতে নেমে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলালকে নিযুক্ত করলেন তাদেরকে সলাতের জন্য জাগিয়ে দিতে। বিলালও পরিশেষে ঘুমিয়ে পড়লেন। তারা ঘুমিয়েই রইলেন। অবশেষে তারা যখন জাগলেন; সূর্য উপরে উঠে গেছে। জেগে উঠার পর তারা সকলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন বাহনে উঠতে ও ময়দান পার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত চলতে থাকতে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ময়দানে শাইত্বন বিদ্যমান। তারা আরোহীতে সওয়ার হয়ে চলতেই থাকলেন। অবশেষে ময়দান পার হয়ে গেলেন। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অবতরণ করতে ও উযূ করতে নির্দেশ দিলেন। বিলালকে নির্ধেশ দিলের আযান দিতে অথবা ইক্বামাত দিতে। তারপর তিনি লোকজনদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সলাত হতে অবসর হওয়ার পর তাদের উপর ভীতি বিহবলতা পরিলক্ষিত হল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে লোকেরা! আল্লাহ আমাদের প্রাণসমূহকে ক্ববয করে নিয়েছিলেন। যদি তিনি ইচ্ছা করতেন এ সময়ের আরো পরেও আমাদের প্রাণসমূহ ফেরত দিতেন। তাই যখনই তোমাদের কেউ সলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা সলাত ভুলে যায়, জেগে উঠেই সে যেন এ সলাত সেভাবেই আদায় করে যেভাবে সময়মত আদায় করত। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্রকে লক্ষ্য করে বলেন, শয়তান বিলালের নিকট আসে। সে তখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিল। তাকে সে শুইয়ে দিল। (এরপর শয়তান ঘুম পাড়াবার জন্য) চাপড়াতে লাগল শিশুদেরকে চাপড়ানের মতো, যতক্ষণ সে ঘুমিয়ে না পড়ে। তারপর তিনি বিলালকে ডাকলেন। বিলালও ঠিক সে কথাই বললেন, যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্রকে বলছিলেন। তখন আবূ বাক্র (রাঃ) ঘোষণা দিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রসূল। [১]
(إِنَّ اللّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَنَا...) অর্থাৎ- আল্লাহ আমাদের প্রাণহরণ করেছিলেন, অতঃপর রূহ্ আমাদের দিকে ফেরত দিলেন আর এটা আল্লাহ তা‘আলার সে বাণীরই প্রতিধ্বনিত্ব হয়েছে যাতে তিনি বলেছেনঃ
‘‘আল্লাহ মানুষের প্রাণহরণ করেন তার মৃত্যুর সময় আর যে মরে না তার নিদ্রাকালে।’’ (সূরাহ্ আয্ যুমার ৩৯ : ৫২)
আর ‘আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন তাদের শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ ও ফাজরের (ফজরের) সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে ঘুমানোর ঘটনা একবার ঘটেছে না একাধিকবার? অতঃপর কতিপয় ‘উলামাহ্ কিরাম বলেছেন, একবার ঘটেছিল।
আর ইমাম নাবাবী এবং ক্বাযী ‘ইয়ায (রহঃ) প্রাধান্য দিয়েছেন যে, ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেছেন যে, একাধিক ঘটনা না হলে সামঞ্জস্য দেয়া সম্ভব নয়, অধিকাংশ মুহাদ্দিস বলেন যে, এ ধরনের ঘটনা তিনবার ঘটেছে।
(أَنْ يُوقِظَهُمْ لِلصَّلَاةِ) অর্থাৎ- ফাজর (ফজর) সলাতের জন্য। আর এজন্য বিলাল (রাঃ)-কে খাস করার কারণ হলো, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, আমি আপনাদেরকে জাগ্রত করব।
(فَرَقَدَ بِلَالٌ) অর্থাৎ- কিছু সময় জাগ্রত থাকার পর বিলাল (রাঃ)-এর ওপর ঘুম বিজয় হয়ে গেল, অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
(وَرَقَدُوْا) অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ বিলাল (রাঃ)-এর ওপর আস্থা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
(وَقَدْ طَلَعَتْ عَلَيْهِمُ الشَّمْسُ) অর্থাৎ- তাদেরকে সূর্যের তাপ পেয়ে বসল।
(إِنَّ هذَا وَادٍ بِه شَيْطَانٌ) অর্থাৎ- নিশ্চয় এ উপত্যকায় শয়তান (শয়তান) বিদ্যমান। হাদীসের এ অংশ দ্বারা তাদের দলীল খণ্ডন করা হয়েছে যারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাত ক্বাযা করা, অর্থাৎ বিলম্বিত হওয়ার উদ্দেশ্য হলো মাকবুহ (অপছন্দনীয়) ওয়াক্ত অতিক্রম করা। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুনিশ্চিতভাবে জেনেছিলেন যে, এ স্থানে শায়ত্বনের (শয়তানের) প্রভাব রয়েছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণকে অবগত করলেন।
আর রূহ্ ক্ববযের দ্বারা মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। কারণ মৃত্যু হলো রূহের বা আত্মার সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা শরীর হতে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে। আর ঘুম শুধুমাত্র তার প্রকাশ্য বিচ্ছিন্নতা।
আল্ঈজ্জু ইবনু ‘আবদুস্ সালাম বলেনঃ প্রত্যেক শরীরে দু’টি রূহ্ রয়েছে একটি জাগ্রত রূহ্ আল্লাহ যা স্বাভাবিকভাবে চালু রেখেছেন। তা যখন শরীরে থাকে মানুষ তখন জাগ্রত থাকে আর যখন ঘুমায় সেটি বের হয়ে যায় এবং অনেক স্বপ্ন দেখে আর দ্বিতীয়টি জীবন্ত রূহ্ যা আল্লাহ স্বাভাবিকভাবে চালু রেখেছেন। তা যখন শরীরে থাকে তখন মানুষ জীবিত থাকে।
(فَلْيُصَلِّهَا كَمَا كَانَ يُصَلِّيهَا فِي وَقْتِهَا) সে যেন সেটাকে সেরূপ পড়ে যেরূপ যথাসময়ে পড়তো। ক্বাযা সলাতের আলাদা কোন কাফফারাহ্ নেই এবং দ্বিগুণ ক্বাযা নেই যেমনটি অনেকে ধারণা করে থাকেন যে, ক্বাযা সলাত দু’বার আদায় করতে হবে, একবার স্মরণ হওয়ার সাথে আর দ্বিতীয়বার ক্বাযা হিসেবে। অনুরূপ আগত সলাতের সময় সম্পর্কে তারা তাদের স্বপক্ষে ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন-এর হাদীস উল্লেখ করে থাকে যেখানে অনুরূপ বক্তব্য এসেছে। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, সালফে সলিহীন হতে এমন বক্তব্য আসেনি বরং হাদীসের শত্রুরা ভুল ব্যাখ্যা করেছে, বরং তিরমিযী ও নাসায়ীতে ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন-এর হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
أَنَّهُمْ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا نَقْضِيْهَا لِوَقْتِهَا مِنَ الْغَدِ؟ فَقَالَ ﷺ : لَا. يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الرِّبَا وَيَأْخُذَه مِنْكُمْ
সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আগামীকাল এ সময়ে (সলাতের সময়ে) ক্বাযা আদায় করবো? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, আল্লাহ তোমাদেরকে সুদ নিষেধ করেছেন আর তা কি তিনি গ্রহণ করবেন?
হাদীসের ভাষ্যমতে- জাহরী সলাতে ক্বাযা হলেও ক্বিরাআত (কিরআত) সশব্দে হবে। আর নীরব সলাতে ক্বিরাআত (কিরআত) নীরবে হবে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মু‘জিযা প্রকাশ পেয়েছে। এজন্য আবূ বাকর (রাঃ) শাহাদাত বলার মাধ্যমে তা সত্যায়ন করেছেন।
৬৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৮
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ خَصْلَتَانِ مُعَلَّقَتَانِ فِي أَعْنَاقِ الْمُؤَذِّنِينَ لَلْمُسْلِمِينَ صِيَامُهُمْ وَصَلَاتُهُمْ. رَوَاهُ اِبْنُ مَاجَةَ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুসলিমদের দু’টি ব্যাপার মুয়ায্যিনদের ঘাড়ে ঝুলে থাকে। সিয়াম (রোযা) ও সলাত। [১]
৬৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৮৯
عَنِ ابْنُ عَبَّاسٍ قَالَ لَمَّا دَخَلَ النَّبِيُّ ﷺ الْبَيْتَ دَعَا فِي نَوَاحِيهِ كُلِّهَا وَلَمْ يُصَلِّ حَتّى خَرَجَ مِنْهُ فَلَمَّا خَرَجَ رَكَعَ رَكْعَتَيْنِ فِي قُبُلِ الْكَعْبَةِ وَقَالَ هذِهِ الْقِبْلَةُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বাহ্ ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যেক কোণে দু’আ করলেন, কিন্তু সলাত আদায় করলেন না। পরে বের হয়ে এলেন। কা’বার সামনে দুই রাক্’আত সলাত আদায় করলেন এবং বললেন, এটিই ক্বিবলাহ্। [১]
অত্র হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র কা‘বাহ্ ঘরে দু‘আ অথবা তাকবীর দেয়া মুসতাহাব। আর এ ব্যাপারে কারো ইখতেলাফ নেই।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার অভ্যন্তরে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেননি। আর বিলাল (রাঃ)-এর হাদীসে আদায় করেছেন। দ্বন্দ্ব সমাধান নিম্নরূপ-
* দ্বন্দ্বে হ্যাঁ-সূচক হাদীস প্রাধান্য পায় না-সূচক হাদীসের উপর।
* কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশের পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল অন্ধকার থাকার কারণে, অন্যরা দেখেননি আর বিলাল (রাঃ) তাঁর কাছে থাকায় তিনি সলাত আদায় করা দেখেছেন।
* ঘটনা দু’বার হতে পারে মক্কা বিজয়ের সময় কা‘বার অভ্যন্তরে সলাত আদায় করেছেন আর বিদায় হাজ্জে কা‘বার অভ্যন্তরে ঢুকেছেন সলাত আদায় করেননি যা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা।
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস যা পরবর্তীতে বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে সলাত আদায় করেছেন। সুতরাং বিলাল (রাঃ) সাব্যস্ত করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বাহ্ ঘরে সলাত আদায় করেছেন। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তা নফী (অস্বীকার) করেছেন।
আর মুহাদ্দিসীনে কিরাম বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তার (বিলাল-এর) সাব্যস্ত করাকে অন্যের অস্বীকারের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে দু’টি কারণে। যথা-
১. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করেন সেদিন বিলাল (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ছিলেন না।
২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর অস্বীকার করাটা একবার উসামার দিকে আর একবার তার ভাই ফাজল (রাঃ)-এর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। এ সত্ত্বেও সাব্যস্ত হয়নি যে, ফাজল (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন। ফাজল (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন বলে শায (অর্থাৎ- যে বিশ্বস্ত রাবীর বিপরীতে কোন দুর্বল রাবী বর্ণনা করেন) রিওয়ায়াত ব্যতীত প্রমাণিত হয়নি।
ইমাম মুসলিম (রহঃ) কা‘বার মধ্যে সলাত অস্বীকার হওয়ার বিষয়টি উসামাহ্ (রাঃ) থেকে ইবনু ‘আব্বাস-এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। যেমনভাবে এ বিষয়টি মুসান্নাফ (রহঃ) থেকে বিস্তারিত বর্ণনা আসবে এবং সেখানে সলাত আদায় করা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর একটি বর্ণনায় ‘উসামাহ্ (রাঃ) থেকে ইমাম আহমাদ এবং অন্যান্য ইমামদের নিকট সাব্যস্ত হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে রিওয়ায়াতগুলো একটি আরেকটির বিপরীতমুখী হয়েছে। বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত এ দিক থেকে প্রাধান্যযোগ্য হয়েছে যে, তিনি এটাকে সাব্যস্ত করেছেন এবং তিনি অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আর বিলাল (রাঃ)-এর বিপরীতে অন্য কেউ অস্বীকার সাব্যস্ত করতে পারেনি এবং এক্ষেত্রে সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে কেউ ইখতেলাফও করেনি। আর যিনি অস্বীকার করেছেন তার ব্যাপারে ইখতেলাফ রয়েছে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতটা প্রাধান্য দেয়া ওয়াজিব। কেননা বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত সাব্যস্ত করেছেন এ কারণে যে, তিনি অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আর উসামাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় তা অস্বীকার করার কারণ হচ্ছে যে, যখন তারা কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করলেন তখন দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং দু‘আয় মশগুল হলেন। উসামাহ্ (রাঃ) দেখলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে দু‘আ করছেন। তখন উসামাহ্ এক কোণে দু‘আয় মশগুল হলেন যেদিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে সলাত আদায় করলেন আর এ সময় বিলাল (রাঃ) তার কাছে থেকে দেখলেন। কিন্তু ‘উসামাহ্ (রাঃ) তখন দূরে এবং দু‘আয় মশগুল থাকার কারণে দেখেননি।
২. আরেকটি মতে বলা হয়েছে- কেউ কেউ বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে দু’বার প্রবেশ করেছেন, একবার সেখানে সলাত আদায় করেছেন এবং দ্বিতীয়বার সেখানে দু‘আ, তাকবীর দিয়েছিলেন। কিন্তু সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেননি। ইবনু হিব্বান বলেনঃ আমার নিকট অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় হলো দুই হাদীসে দু’টি সংবাদ বর্ণিত হয়েছে যা দু’ সময় ঘটেছিল।
বলা যায়, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করলেন তখন সলাত আদায় করেছেন।
যখন বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করেছেন তখন সলাত আদায় করেননি।
هذِه অর্থাৎ- কা‘বাহ্ القبله অর্থাৎ- যার দিকে মুখ করার নির্দেশ সাব্যস্ত হয়েছে যা ছাড়া অন্য কিছুর দিকে পরিবর্তন হবে না। যেমনভাবে بيت المقدس কে পরিবর্তন করা হয়েছে।
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কা‘বাহ্ গৃহে প্রবেশ করা জায়িয। আর তাতে সলাত আদায় করা মুস্তাহাব। চাই সে সলাত নফল হোক বা ফরয হোক। কারণ উক্ত দু’ সলাত মুক্বীম ব্যক্তির জন্য কা‘বাহ্ গৃহের সম্মুখে আদায় করা না করার মাঝে কোন মতানৈক্য নেই। এটা জমহূরদের মত। ইমাম মালিক তা অবৈধ বলেছেন।
৬৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯০
وَرَوَاهُ مُسْلِمٌ عَنْهُ وَعَنْ اُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ
উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মুসলিম এ হাদীসটিকে উসামাহ্ ইবনু যায়দ হতেও বর্ণনা করেছেন। [১]
৬৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯১
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ دَخَلَ الْكَعْبَةَ هُوَ وَأُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَعُثْمَانُ بْنُ طَلْحَةَ الْحَجَبِيُّ وَبِلَالُ بْنُ ربَاحٍ فَأَغْلَقَهَا عَلَيْهِ وَمَكَثَ فِيهَا فَسَأَلْتُ بِلَالًا حِينَ خَرَجَ مَاذَا صَنَعَ رَسُوْل الله ﷺ فقَالَ جَعَلَ عَمُودًا عَنْ يَسَارِه وَعَمُودَيْنِ عَنْ يَمِينِه وَثَلَاثَةَ أَعْمِدَةٍ وَرَاءَهُ وَكَانَ الْبَيْتُ يَوْمَئِذٍ عَلى سِتَّةِ أَعْمِدَةٍ ثُمَّ صَلّى . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে ও উসামাহ্ ইবনু যায়দ, ‘উসমান ইবনু ত্বালহাহ্ আল হাজাবী ও বিলাল ইবনু রাবাহ্ (রাঃ) কা’বায় প্রবেশ করলেন। এরপর বিলাল অথবা ‘উসমান (রাঃ) ভিতর থেকে (ভীড় হবার ভয়ে) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছুক্ষণ ভিতরে রইলেন। ভিতর থেকে বের হয়ে এলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার ভিতরে কি করলেন? উত্তরে বিলাল বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভিতরে প্রবেশ করে একটি স্তম্ভ বামে, দু’টি ডানে, আর তিনটি পিছনে রেখে সলাত আদায় করেছেন। সে সময় খানায়ে কা’বা ছয়টি স্তম্ভ বা খিলানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (এখন তিনটি স্তম্ভের উপর। [১]
৬৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯২
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ اِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মাসজিদে হারাম ছাড়া, আমার এই মাসজিদে সলাত আদায় করা অন্য জায়গায় এক হাজার রাক’আত সলাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। [১]
মাসজিদে নাবাবীর যে ফাযীলাত ও মাহাত্ম্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে নির্মিত মাসজিদের অংশের সাথে নির্দিষ্ট, না পরবর্তীতে বর্ধিতাংশের মধ্যেও উক্ত ফাযীলাত রয়েছে- এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম নাবাবী বলেন, এ মাহাত্ম্য ও মর্যাদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্মিত মাসজিদের অংশের জন্যই নির্দিষ্ট। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- مَسْجِدِي هذَا এটা আমার মাসজিদ। তবে হানাফী মাযহাব মতাবলম্বী ও অন্যান্য মতে বর্ধিতাংশও মাসজিদের ফাযীলাতের অন্তর্ভুক্ত। ‘উমার (রাঃ) যখন মাসজিদে নাবাবী বৃদ্ধি করেছিলেন বলেছিলেন যদি যুল্ হুলায়ফাহ্ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতো, তাহলে তা রসূলের মাসজিদ হিসেবে গণ্য করা হতো।
মাসজিদে নাবাবীর ফাযীলাত সম্পর্কে ত্ববারানীতে মারফূ‘ সূত্রে হাদীসে এসেছে। মাসজিদে হারামে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ১ লক্ষ গুণ, আমার মাসজিদে এক হাজার গুণ এবং বায়তুল আক্বসা (আকসা)‘ পাঁচশত গুণ।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরে মাসজিদে নাবাবীর যে অংশ সম্প্রসারণ করা হয়েছে তা কি মাসজিদে নাবাবীর অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। হানাফীদের মতে তা মাসজিদে নাবাবীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, সাহাবীগণের উপস্থিতিতে মাসজিদে নাবাবী বৃদ্ধির ব্যাপারে খুলাফায়ে রাশিদীনরা জায়িয বলেছেন। অথচ এ ব্যাপারে কোন সাহাবী অস্বীকৃতি জানাননি। আর মাদীনার ইতিহাসে ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন মাসজিদে সম্প্রসারণের কাজটুকু শেষ করলেন, তখন তিনি বললেনঃ যদি এটা জাবানা নামক জায়গায় গিয়ে শেষ হয়। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, যদি এটা যুলহুলায়ফায় গিয়ে শেষ হয় তাহলেও সম্পূর্ণ জায়গাটাই আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাসজিদরূপে গণ্য হবে।
تميز الطيب من الخبيث নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ আমার মাসজিদে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা অন্যান্য মাসজিদে এক হাজার রাক্‘আত সলাত আদায় করার সমতুল্য, মাসজিদে হারাম ব্যতীত। যদি তা ইয়ামানের সন্‘আ নামক জায়গা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার মাসজিদে (নাবাবী) এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা অন্যান্য মাসজিদে এক হাজার রাক্‘আত সলাত আদায় করা হতেও উত্তম, মাসজিদে হারাম ব্যতীত। আর মাসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা মাসজিদে নাবাবীতে একশত রাক্‘আত সলাত আদায় করা হতে উত্তম। (ইবনু হিব্বান)
ইবনু হিববানে অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে- মাসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা মাদীনার মাসজিদে একশত রাক্‘আত সলাত আদায় করা হতে উত্তম।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস অনুরূপ প্রমাণ করে যেটা ইবনু মাজাহ মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে-
মাসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা অন্যান্য মাসজিদে একহাজার রাক্‘আতের সলাত আদায় করা হতেও উত্তম।
বাযযার এবং ত্ববারানী মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলোঃ মাসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা অন্য মাসজিদে একলক্ষ রাক্‘আত সলাত আদায় করার মতো। আর আমার মাসজিদে (মাসজিদে নাবাবীতে) এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা অন্য মাসজিদে একহাজার রাক্‘আত সলাত আদায় করার অনুরূপ। আর বায়তুল মুকাদ্দাসে এক রাক্‘আত সলাত আদায় করা পাঁচশত রাক্‘আত সলাত আদায়ের ন্যায়।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেছেনঃ দ্বিগুণ হওয়ার ব্যাপারে বিরোধপূর্ণ রিওয়ায়াতের মাঝে কোন সমস্যা নেই এটার উপর ভিত্তি করে যে, কম সংখ্যার হাদীসগুলো বেশী সংখ্যার হাদীসগুলোর পূর্বেকার। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একটার উপর আরেকটাকে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন- অবস্থা ও সংখ্যার তারতম্যের মাধ্যমে। যা বর্ণিত হয়েছেঃ নিশ্চয়ই উত্তম কর্মগুলো দশ থেকে সত্তর এ থেকে সাতশত গুণের চেয়েও বেশী বৃদ্ধি করা হয়।
৬৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৩
وَعَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَلَا تُشَدُّ الرِّحَالُ اِلَّا إِلى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الْأَقْصى وَمَسْجِدِىْ هذَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মাসজিদে সফর করা যায় না : (১) মাসজিদে হারাম, (২) মাসজিদে আক্বসা ও (৩) আমার এই মাসজিদ (মাসজিদে নাবাবী)। [১]
দ্বিতীয়টি হচ্ছে পূর্ববর্তী জাতির ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) যা সুলায়মান (আঃ) নির্মাণ করেছিলেন। এর তৃতীয়টি যা নির্মিত হয়েছে তাক্বওয়ার উপর এবং এর নির্মাতা হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টির উৎকৃষ্ট ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: (مَسْجِدِىْ هذَا) আমার এ মাসজিদ, অর্থাৎ- মাদীনার মাসজিদ। অন্য বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাসজিদ। হাদীসে বর্ণিত এ তিনটি মাসজিদের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে অন্য মাসজিদের তুলনায়। কেননা তা নাবীদের মাসজিদ এবং প্রথমত সকল মানুষের ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) এবং হাজ্জের (হজ্জের/হজের) স্থান। দ্বিতীয়ত পূর্ব জাতিরও ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) ছিল। তৃতীয়ত এটা তাক্বওয়ার উপর গঠিত।
এ তিনটি মাসজিদ ব্যতীত অন্য সকল স্থানে সফর করার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে, যেমন সৎ ব্যক্তির সাক্ষাতের উদ্দেশে গমন করা, হোক না তিনি মৃত অথবা জীবিত এবং সম্মানিত স্থানে সফর করা বারাকাত গ্রহণ এবং সলাত আদায়ের উদ্দেশে।
শায়খ আবূ মুহাম্মাদ আল্ জুওয়াইনী বলেন, হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী অন্য স্থানে সাওয়াবের উদ্দেশে সফর করা হারাম।
হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী সাধারণভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, এ তিন মাসজিদ ব্যতীত কোন স্থানে বারাকাত পাওয়া ও সলাত আদায়ের উদ্দেশে সফর করা বৈধ নয়। আর ব্যবসা, জ্ঞান অন্বেষণ বা অন্য কোন উদ্দেশে কোন স্থানে সফর করা বৈধ অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যা স্বতন্ত্র বিষয়।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী ‘হুজ্জাতুল্লাহ’ কিতাবে বলেনঃ জাহিলী যুগের লোকেরা তীর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ বিশ্বাস নিয়ে সফর করতো যে, সেখানে বারাকাত পাওয়া যাবে। এ চিন্তা-চেতনাকে বন্ধ করার জন্যে যাতে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ‘ইবাদাতের পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘোষণা দিয়েছেন। আমার নিকট সত্য হলো যে, কবর এবং ওলী-আওলিয়াদের ‘ইবাদাতের স্থান এবং তূর পাহাড় সফরের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সবই সমান।
৬৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৪
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَمِنْبَرِي عَلى حَوْضِيْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যখানে আছে জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যকার একটি বাগান। আর আমার মিম্বার হচ্ছে আমার হাওজে কাওসারের উপর। [১]
কারো মতে, এ স্থানে আল্লাহর রহমাত বর্ষণ ও সফলতা যা অর্জিত হয় যিকিরের (জিকিরের) মাজলিসের মাধ্যমে। বিশেষ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় এর ব্যাপকতা আরো বেশি ছিল। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা হয়েছে জান্নাতের বাগিচা। আর সঠিক বিশ্লেষকদের মতে এ স্থানটি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে ফিরদাওস জান্নাতে স্থানান্তর করা হবে। সুতরাং এ স্থানটি ধূলিস্যাৎ হবে না অন্য স্থানের মতো।
আবার কারো মতে সম্ভাবনা এও রয়েছে যে, এ স্থানটি বাস্তবে জান্নাতেরই স্থান, এ মাসজিদে অবতরণ করা হয়েছে। যেমনটি হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রা-হীম। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হওয়ার পর তার মূল স্থানে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
(وَمِنْبَرِي عَلى حَوْضِيْ) আমার মিম্বার আমার হাওযের উপর। অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে সত্যিকার মিম্বারটি হাওযের উপর। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং মিম্বারটি স্থানান্তর করে হাওযের উপর রাখবেন (ক্বিয়ামাতে) আর এটা শ্রেয় মত।
আবার কারো মতে উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি সর্বান্তকরণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয় সৎ ‘আমালের সাথে জড়িত হওয়ার মানসে সে হাওযে পৌঁছবে এবং তা হতে পান করে উপকৃত হবে।
৬৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৫
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءٍ كُلَّ سَبْتٍ مَاشِيًا وَرَاكِبًا فَيصَلى فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, প্রতি শনিবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়ে হেঁটে অথবা সওয়ারীতে আরোহণ করে ‘মাসজিদে কুবায়’ গমন করতেন। আর সেখানে দুই রাক্’আত সলাত আদায় করতেন। [১]
মাসজিদে কুবার অন্য ফাযীলাত সংক্রান্ত হাদীস এসেছে নাসায়ীতে, যে ব্যক্তি মাসজিদে কুবার উদ্দেশে বের হয়ে এসে সেখানে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে তা ‘উমরাহ্ করার সমতুল্য।
অত্র হাদীস আর অধ্যায়ের হাদীস প্রমাণ করে মাসজিদে কুবার ফাযীলাত এবং সেখানে সলাত আদায়ের ফাযীলাত। তবে এখানে প্রমাণিত হয়নি দ্বিগুণ ফাযীলাত, যেমনটি তিন মাসজিদে রয়েছে।
আর এ হাদীস প্রমাণ করে তিন মাসজিদ ব্যতিরেকে অন্য কোন মাসজিদে সফর করা হারাম নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায় হেঁটে ও সওয়ারীতে আসতেন। তবে এ কথার পিছনে মন্তব্য করা হয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায় যাওয়াটি সফরের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং হাদীসটি না-সূচক, হাদীসের বিরোধী নয়।
৬৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৬
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَحَبُّ الْبِلَادِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلَادِ إِلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আল্লাহর নিকট সকল জায়গা হতে মাসজিদই হল সবচেয়ে প্রিয়, আর বাজার সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান। [১]
আলোচ্য হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোবাসা এবং ক্রোধ- যা সে দু’ স্থানে সংঘটিত হয়।
কেউ কেউ বলেনঃ উল্লিখিত হাদীসের অর্থ হচ্ছে যারা মাসজিদসমূহে অবস্থান করে, তারা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় তাদের চেয়ে যারা মাসজিদ ছাড়া অন্যান্য স্থানে অবস্থান করে। কেননা ভালোবাসা হচ্ছে প্রতিদান দেয়া এবং সরাসরি মাসজিদসমূহকে প্রতিদান দেয়ার কোন অর্থ হয় না। সুতরাং উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকিরের (জিকিরের) জন্য মাসজিদে অবস্থানকারী অথবা ই‘তিকাফকারী অথবা অন্যান্য কাজের জন্য। সুতরাং প্রশংসা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর হক যেখানে প্রতিষ্ঠা করে এর বিপরীতটাকে নিন্দা করা হয়েছে।
ইমাম নাবাবী বলেনঃ আল্লাহর পছন্দ ও ঘৃণা বলতে তাঁর কল্যাণ ও অকল্যাণ করার ইচ্ছা। যে ভাগ্যবান তার সাথে কল্যাণের আর যে হতভাগা তার সাথে অকল্যাণের ইচ্ছা করেন। আর মাসজিদসমূহ রহমাত নাযিল হওয়ার স্থান আর বাজারসমূহ এর বিপরীত।
৬৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৭
وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ بَنى لِلّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللّهُ لَه بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যাক্তি আল্লাহার উদ্দেশ্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন । [১]
৬৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৮
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ اوَرَاحَ أَعَدَّ اللّهُ لَه نُزُلَه مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যাক্তি সকাল-বিকাল মাসজিদে যাবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রত্যেক বারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্হা করে রাখবেন । চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায় । [১]
(أَعَدَّ اللّهُ لَه نُزُلَه مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ) আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অতিথি আপ্যায়ন প্রস্ত্তত করে রাখবেন। তার প্রত্যেকবারের জন্য যখন সে সকালে বা বিকালে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য রুযী থাকবে।’’ (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯ : ৬২)
এর দ্বারা উদ্দেশ্য সর্বদা নির্ধারিত দু’টি সময় না।
মাযহার বলেনঃ মানুষের স্বভাব হলো যখনই কেউ তাদের বাসায় মেহমান হিসেবে আসে তখনই খাদ্য উপস্থাপন করে তথা আপ্যায়ন করায়।
মাসজিদ আল্লাহর ঘর। যখনই এ মাসজিদে প্রবেশ করে, দিনে হোক আর রাতে হোক, আল্লাহ তাকে জান্নাতের কোন না কোন প্রতিদান দিবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বড় সম্মানকারী, তিনি মুহসিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।
৬৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৬৯৯
وَعَنْ أَبِيْ مُوْسى اَلأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَعْظَمُ النَّاسِ أَجْرًا فِي الصَّلَاةِ أَبْعَدُهُمْ فَأَبْعَدُهُمْ مَمْشًى وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ حَتّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْإِمَامِ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنْ الَّذِي يُصَلِّي ثُمَّ يَنَامُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সালাতে সব চেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সব চেয়ে বেশী দূরে । আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করার জন্য মাসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে যে মাদজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালায় আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে । [১]
৭০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০০
وَعَنْ جَابِرِ قَالَ خَلَتِ الْبِقَاعُ حَوْلَ الْمَسْجِدِ فَأَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَنْ يَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْمَسْجِدِ فَبَلَغَ ذلِكَ النَّبِىَّ ﷺ فَقَالَ لَهُمْ إِنَّه بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تُرِيدُونَ أَنْ تَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْمَسْجِدِ قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ أَرَدْنَا ذلِكَ فَقَالَ يَا بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُمْ تُكْتَبُ آثَارُكُمْ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُم. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন : মাসজিদে নাবাবীর পাশে কিছু জায়গা খালি হল। এতে বানূ সালিমাহ্ গোত্র মাসজিদের কাছে স্হানান্তরিত হয়ে আসতে চাইল । এ খবর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পোঁছল । তিনি বানূ সালিমাহ্ কে বললেন, খবর পেলাম, তোমরা নাকি জায়গা পরিবর্তন করে মাসজিদের কাছে আসতে চাইছ ? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসুল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি । তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে বানূ সালিমাহ্ ! তোমাদের জায়গাতেই তোমরা অবস্হান কর । তোমাদের ‘আমালনামায় তোমাদের পায়ের চিহ্ন গুলো লেখা হয়– এ কথাটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’বার বললেন । [১]
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ বানূ সালামাহ্ হচ্ছে আনসারীদের একটি গোত্র তাদের ব্যতীত সালামাহ্ গোত্র নামে আর কোন গোত্র ‘আরবে আর নেই।
তাদের বাড়ী-ঘর মাসজিদে নাবাবী হতে অনেক দূরে ছিল। রাতের আধারে, বৃষ্টি এবং কঠিন ঠাণ্ডার সময় তারা অধিক কষ্ট করে মাসজিদে গমন করতেন; তাই তারা মাসজিদে নাবাবীর নিকট বসবাস করার ইচ্ছা করলেন। মাদীনার চারপাশ খালি হওয়াটাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করলেন। তাই তিনি তাদেরকে আল্লাহর নিকট ভালো কাজের পদক্ষেপের যে প্রতিদান রয়েছে তার প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন।
(كتابه) দ্বারা উদ্দেশ্য বিভিন্ন কাজ পাণ্ডুলিপিতে লেখা হয়। অর্থাৎ- অধিক পদক্ষেপ প্রতিদান বৃদ্ধির কারণ।
হাদীসে আছে যে, পুণ্য কাজগুলো যখন একনিষ্ঠভাবে হবে তখন সে পুণ্য কাজের পদক্ষেপেও পুণ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে।
আর বসবাস মাসজিদের কাছাকাছি হওয়া ভালো। তবে তাঁর বিষয়টি আলাদা যে অধিক পরিমাণ পুণ্য অর্জন করতে চায় বেশী বেশী হেঁটে। বানূ সালামাবাসীরা মাসজিদের নিকটবর্তী হওয়ার আবেদন করেছিল তাঁর মর্যাদার জন্য। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তাবটি নাকচ করলেন এবং তাদেরকে জানালেন বার বার দূর হতে মাসজিদে আসার মর্যাদা।
৭০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০১
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللّهُ فِي ظِلِّه يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّهُ الْإِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّه وَرَجُلٌ قَلْبُه مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتّى يَعُوْدَ إِلَيْهِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَاَةٌ ذَاتُ حَسَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّىْ أَخَافُ اللّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّق بِصَدَقَةٍ فأَخْفى حَتّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِينُه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেই দিন (ক্বিয়ামাতের দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে না : (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়স আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যাক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মাসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যাক্তি যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যাক্তি যে একাকী অবস্হায় আল্লাহর স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’চোখ দিয়ে আশ্রু ঝরে, (৬) যে ব্যাক্তি যাকে কোন ঊচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যাক্তি যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে । যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান কী খরচ করেছে । [১]
(فِي ظِلِّه) ‘‘ও তাঁর ছায়ায়’’-এর কয়েকটি মর্মার্থ হতে পারে।
* সম্মানের কারণে ‘আর্শ (আরশ) কে আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়েছে।
* ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য তত্ত্বাবধান, হিফাযাত, দায়িত্ব। যেমন বলা হয় فُلَانٌ فِىْ ظِلِّ الْمُلَكِ অমুক বাদশার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
* তার ‘আরশের ছায়া যেমন অন্য হাদীসে এসেছে।
(سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِ عَرْشِه) সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর ‘আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন।
(وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ) ঐ যুবক যে নিজের যৌবন আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে। যুবককে খাস করার কারণ হলো, যৌবন বয়সে প্রবৃত্তির চাহিদা বেশী প্রাধান্য পায়। সুতরাং এ অবস্থায় ‘ইবাদাতে ব্যাস্ত থাকা অধিকতর তাক্বওয়ার পরিচয় বহন করে। হাদীসে এসেছে, তোমার রব ঐ যুবককে পছন্দ করেন যার কোন অভিলাষ নেই।
পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তাদের এ ভালোবাসা দ্বীনের জন্যই অটুট থাকে, দুনিয়ার কোন কারণে বিচ্ছিন্ন করে না। শুধুমাত্র মৃত্যুই বিচ্ছিন্ন করে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (خَالِيًا) এমন ব্যক্তি, যে আল্লাহকে স্মরণ করে মানুষ থেকে নির্জনে তার জিহবা অথবা তার অন্তর দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ) তার দু’ চক্ষু প্রবাহিত হয়, অর্থাৎ- অশ্রু প্রবাহিত হয় তার অন্তরের নম্রতার দরুন। আর আল্লাহর মহত্ত্বতার প্রবল ভয়ের দরুন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَأَةٌ) এমন ব্যক্তি, যাকে কোন মহিলা ডাকে। অর্থাৎ- বংশ মর্যাদাসম্পন্ন কোন মহিলা যিনার জন্য তার নিজের দিকে ডাকে।
(فَقَالَ) ‘‘অতঃপর সে বলে’’, অর্থাৎ- অশ্লীলতার ব্যাপারে তার থেকে বাঁচার জন্য ধমকের স্বরে এবং তার থেকে ওজর পেশ করে। অথবা এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার অন্তর থেকে নিজেকে বাধা দেয়ার জন্য।
(إِنِّىْ أَخَافُ اللّهَ) ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’। ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে বংশীয় মর্যাদাওয়ালী ও সুন্দরী রমণীকে নির্দিষ্ট করেছেন। তার প্রতি অত্যধিক আগ্রহ ও তাকে পাওয়াটা কঠিন হওয়ার কারণে। আর সে এমন মহিলা যার মধ্যে বংশীয় মর্যাদা ও সুন্দর উভয়টির সমাবেশ ঘটেছে। বিশেষ করে নিজের দিকে নিজেই আহবানকারিণী। এ রকম মহিলা তার ইচ্ছা বা আকাঙক্ষায় পৌঁছার ক্ষেত্রে কষ্ট থেকে বিমুখ আর এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করাটা একমাত্র আল্লাহর ভয়ের জন্য হয়ে থাকে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের স্তর এবং মহান আনুগত্য। তাই আল্লাহ তা‘আলা তার নিজস্ব ছায়ায় আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে এ ব্যক্তিকে মর্যাদাবান করেছেন।
(لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِينُه) ‘ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানে না।’ অর্থাৎ- অত্যন্ত গোপনে দান করে। ইবনু মালিক বলেনঃ এটা নফল দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কেননা ফরয যাকাত তো প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়।
৭০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০২
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صَلَاةُ الرِّجُلِ فِى الْجَمَاعَةِ تَضَعَّفُ عَلى صَلَاتِه فِى بَيْتِه وَفِىْ سُوْقِه خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ ضِعْفًا وَّذلِكَ اَنَّه إِذَا تَوَضَّاَ فَاَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ خَرَجَ اِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُه اِلَّا الصَّلَاةُ لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً اِلَّا رُفِعَتْ لَه بِهَا دَرَجَةٌ وَّحُطَّ عِنْهُ بِهَا خَطِيْئَةٌ فَاِذَا صَلّى لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّىْ عَلَيْهِ مَا دَامَ فِىْ مُصَلَّاهُ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ اَللّهُمَّ ارْحَمْهُ وَلَا يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِىْ صَلَاةٍ مَّا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ وَفِىْ رِوَايَةٍ قَالَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَتِ الصَّلَاةُ تَحْبِسُه وَزَادَ فِىْ دُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ اَللّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيْهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيْهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর প্রিয় রসূল বলেছেন : ঘরে অথবা (ব্যস্ততার কারণে) কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মাসজিদে জামা’আতের সাথে সালাত আদয় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি । কারণ কোন ব্যাক্তি ভাল করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) উযূ করে নিঃস্বার্থভাবে সলাত আদায় করার জন্যই মাসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বদলা একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মাসজিদে পোঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সলাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসাল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ অনবরত এই দু’আ করতে থাকে : ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও । সে আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমাত বর্ষন কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সলাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সলাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে । আর এক বর্ণনার শব্দ হল, ‘যখন কেউ মাসজিদে গেল। আর সলাতের জন্য অবস্হান করল সেখানে, তাহলে সে যেন সলাতেই রইল। আর মালায়িকার দু’আর শব্দাবলী আরো বেশী : “হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তাওবাহ্ কবুল কর ।” এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায় । [১]
স্পষ্ট এটাই যে, উল্লেখিত সাওয়াব বৃদ্ধি হওয়াটা মাসজিদে জামা‘আতের সাথে নির্দিষ্ট। সাধারণত বাড়িতে সলাত আদায় করাটা বাজারে সলাত আদায়ের চাইতে উত্তম। যেমন- হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বাজার হচ্ছে শায়ত্বনের (শয়তানের) জায়গা। আর বাড়িতে অথবা বাজারে জামা‘আতের সাথে সলাত আদায় করা একাকী সলাত আদায় করার চাইতে উত্তম।
(لَا يُخْرِجُهاِلَّا الصَّلَاةُ) ‘‘তাকে সলাত ব্যতীত অন্য কিছুই বের করে না।’’ অর্থাৎ- ফরয সলাত জামা‘আতে আদায় করার সংকল্প করা।
(تُصَلِّىْ عَلَيْهِ) (তার ওপর দরূদ পড়েন) তার জন্য কল্যাণের দু‘আ, পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং রহমাত কামনা করেন।
(فِىْ مُصَلَّاهُ) সে তার সলাতের স্থানেই আছে। অর্থাৎ- মাসজিদের ঐ স্থান যেখানে সে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছে। এমনভাবে সে যদি সলাতের জন্য অপেক্ষা করার নিয়্যাতে অন্য স্থানেও অবস্থান করে তাহলেও সে এরই অন্তর্ভুক্ত হবে।
(اَللّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ) অর্থাৎ- সর্বক্ষণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য রহমাত কামনা করতে থাকেন এই বলে যে, হে আল্লাহ! তাকে অনুগ্রহ করো। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ রহমাত চাওয়াটা হয় ক্ষমা চাওয়ার পরে। কেননা মালায়িকাহ্’র সলাতই হচ্ছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।
(مَا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ) ‘‘যতক্ষণ যে সলাতের অপেক্ষা করে’’। অর্থাৎ- সলাতের অপেক্ষায় সে যতক্ষণ অবস্থান করে। সেটা মাসজিদের যে স্থানেই হোক যেখানে সে সলাত আদায় করেছে অথবা মাসজিদের অন্য কোন জায়গায় হোক। অন্য এক রিওয়ায়াতে এসেছে- যখন সে মাসজিদে প্রবেশ করে তখন সলাত তাকে আটকে রাখে। অর্থাৎ- মাসজিদ থেকে বের হতে বাধা প্রদান করে। সলাত আদায়ের সময় পর্যন্ত তার জন্য সলাতটি বাধা দানকারী হয়ে থাকে। তবে সলাতের পরে যিকর অথবা ই‘তিকাফের জন্য মাসজিদে অবস্থান করলে উক্ত সাওয়াব হবে না। যদিও এতে বিরাট ধরনের সাওয়াব রয়েছে।
(اَللّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ) হে আল্লাহ! তার তাওবাহ্ কবূল করো। তাকে তাওবাহ্ করার তাওফীক্ব দাও। অথবা তাকে এর উপর অটল রাখো।
(مَا لَمْ يُؤْذِ فِيْهِ) যতক্ষণ সেখানে কষ্ট না দেয়। অর্থাৎ- সর্বক্ষণ মালায়িকাহ্ তার জন্য দু‘আ করতে থাকে এবং তার কথা বা কাজ দ্বারা মাজলিসে মুসলিমদের কাউকে কষ্ট না দেয়।
অন্য মতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ মালাককে কষ্ট না দেয়। আর মাসজিদে অপবিত্রতার মাধ্যমে তাদের কষ্ট দেয়া হয়। মাসজিদে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভাঙ্গার মাধ্যমে মালায়িকাহ্’র কষ্ট দেয়।
(مَا لَمْ يُحْدِثْ) যতক্ষণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) না ভাঙ্গে। আর এটা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের যে কোন কারণ হতে পারে সাধারণভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
হাফিয ইবনু হাজার বলেন, হাদীস প্রমাণ করে মাসজিদে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে যাওয়া নাক ঝাড়ার চেয়ে খারাপ, কেননা তার জরিমানা রয়েছে আর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের জরিমানা নেই। বরং সে মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) ইসতিগফার ও দু‘আ কামনা হতে বঞ্চিত হয়।
হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, অন্যান্য ‘আমালের চেয়ে সলাতের মর্যাদা বেশী। কেননা সলাত আদায়কারীর জন্য মালায়িকাহ্ রহমাত ও ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে।
৭০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৩
وَعَنْ أَبِي أُسَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَقُلِ اللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلْ اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন এই দু’আ পড়েঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর তোমার রহমাতের দরজাগুলো খুলে দাও’। যখন মাসজিদ হতে বের হয়ে তখন বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ফাযল বা অনুগ্রহ কামনা করি”। [১]
৭০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৪
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাক্’আত সলাত আদায় করে নেয়। [১]
কারো মতে হাদীসটি ব্যাপক। কোন কারণ ছাড়া নিষিদ্ধ সময়ে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা নিষেধ। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের পরে যুহরের সুন্নাত সলাত বাযা করেছেন। অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষিদ্ধ সময়কে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ‘আসরের পর, কিন্তু তিনি যুহরের সুন্নাত সলাত আদায় করেছিলেন কারণবশত। অতএব জানা গেল যে, কারণবশত নিষিদ্ধ সময়ে সলাত আদায় করা বৈধ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অবস্থাতেই তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সলাত ছাড়েননি। বরং জুমু‘আর দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুতবাহ্ অবস্থায় এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তাকে তিনি দাঁড়িয়ে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতে বললেন।
খুতবাহ্ অবস্থায় তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সলাত ব্যতীত অন্য কোন সলাত আদায় করা নিষিদ্ধ। আর যদি তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সলাত ত্যাগ করা যেত তাহলে এ অবস্থায় তা ত্যাগ করা যেত। কেননা লোকটি বসে পড়েছিল, আর এটা পড়তে হয় বসার পূর্বেই। লোকটি ভুলবশত এ রকম করেছিলেন। যদি তাহিয়্যাতুল মাসজিদের বেশী গুরুত্ব না হত তাহলে তিনি এরূপ গুরুত্ব সহকারে নির্দেশ দিতেন না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুতবাহ্ বন্ধ করে তার সাথে কথা বলেছিলেন এবং তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
(فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ) দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করবে তথা তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করবে। অথবা তার স্থলাভিষিক্ত সলাতও হতে পারে। যেমন ফরয ও সুন্নাহ সলাত, আর এ সলাত মাসজিদের সম্মানার্থে।
নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ তাহিয়্যাহ্’র নিয়্যাত শর্ত নয়, বরং যথেষ্ট হবে ফরয সলাত অথবা সুন্নাতে রাতেবা।
যদি নিয়্যাত করে তাহিয়্যাহ্’র সলাত এবং ফরয সলাতের, তাহলে এক সাথে দু’টো অর্জিত হবে।
জাহিরীদের মতে তাহিয়্যাতুল সলাত আদায় করা ওয়াজিব, আবার কারো মতে ওয়াজিব নয়; দলীল যায়দ ইবনু আসলাম সূত্রে ইবনু আবী শায়বাহ্ বর্ণিত হাদীস সাহাবীগণ মাসজিদে প্রবেশ করতেন ও বের হতেন এবং সলাত আদায় করতেন না।
সুতরাং তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সুন্নাহ্ তার জন্য যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে। খাত্ত্বাবী বলেনঃ ক্বাতাদার হাদীসে সাব্যস্ত হয় যখন কেউ মাসজিদে প্রবেশ করবে তার ওপর কর্তব্য হলো সে দু’ রাক্‘আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদে সলাত আদায় করবে বসার পূর্বে চাই জুমু‘আতে হোক বা অন্য কোন সময় হোক, ইমাম মিম্বারে থাকুক অথবা না থাকুক। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমভাবে বলেছেন এবং নির্দিষ্ট করেননি।
আমি (ভাষ্যকার) বলি, এটাই সহীহ; তবে জাবির (রাঃ)-এর হাদীস আরো সুস্পষ্ট করেছে এটা, এক ব্যক্তি মাসজিদে আসলো এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ (খুতবা) দিচ্ছিলেন, অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করেছো? জবাব দিলো না, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাঁড়াও এবং দু’ রাক্‘আত আদায় করো।
তারা ইখতিলাফ করেছে ঐ লোকগুলোর ব্যাপারে যে লোকেরা ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সলাত মাসজিদে আসার পূর্বেই বাড়িতে আদায় করেছিল। এখন সে-কি মাসজিদে প্রবেশকালে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতে পারবে কি-না?
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ সে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ সে সলাত আদায় করবে না।
ইমাম রুশদ (রহঃ) বলেনঃ ইখতিলাফের কারণ হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ‘‘ফাজরের (ফজরের) পর সকালের সলাত ব্যতীত কোন সলাত নেই’’।
ইবনু হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আবূ যার-এর হাদীস থেকে। তিনি মাসজিদে প্রবেশ করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করেছো। তিনি বললেনঃ না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দাঁড়াও, অতঃপর দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করে নাও।
৭০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৫
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النبي ﷺ لَا يَقْدَمُ مِنْ سَفَرٍ اِلَّا نَهَارًا فِي الضُّحى فَإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَصَلّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيْهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর হতে দিনের সকালের দিক ছাড়া আগমন করতেন না। আগমন করেই তিনি প্রথমে মাসজিদে প্রবেশ করতেন। দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন, তারপর সেখানে বসতেন। [১]
فَصَلّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ তিনি সেখানে দু’রাক্‘আত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এটা যেন সন্দেহ না হয় এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খাস। কেননা জাবির (রাঃ)-কে তিনি সফর হতে আগমনের সলাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন। আর এ সলাতটি সফর হতে আগমনের সলাত তাহিয়্যাতুল সলাত না তবে তাহিয়্যাতুল সলাতও আদায় হবে।
(ثُمَّ جَلَسَ فِيْهِ) অতঃপর তিনি বসতেন বাড়ীতে প্রবেশের পূর্বে যাতে মুসলিমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে এটা আল্লাহর সৃষ্টিজীবের উপর তাঁর অনুগ্রহ।
৭০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৬
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ لَا رَدَّهَا اللّهُ عَلَيْكَ فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ هذَا . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে মাসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন তার উত্তরে বলে, ‘আল্লাহ করুন তোমার হারানো জিনিস তুমি না পাও। কারণ হারানো জিনিস খুঁজবার জন্য এ ঘর তৈরি করা হয়নি। [১]
৭০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৭
وَعَنْ جَابِر قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَكَلَ مِنْ هذِهِ الشَّجَرَةِ الْمُنْتِنَةِ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ الْإِنْسُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের (পেঁয়াজ বা রসূনের) কিছু খাবে সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ মালায়িকাহ কষ্ট পান যেসব জিনিসে মানুষ কষ্ট পায়।[১] (মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি ৫৬৪)
হাদীস প্রমাণ করে যে, রসুন বা অন্যান্য সবজি যাতে দুর্গন্ধ রয়েছে তা’ পাক করে খাওয়া বৈধ এবং বাসায় থাকলে পাক না করেও খাওয়া বৈধ। আর মাসজিদে উপস্থিতির সময় যেন রান্নাকৃত হয় যাতে এ খাবারের দুর্গন্ধ মানুষ ও মালাককে কষ্ট না দেয়। আর নিষেধটা হলো কাঁচা রসুন বা এ জাতীয় কিছু সবজি খেয়ে মাসজিদে আসা। মূলত রসুন পিঁয়াজ অনুরূপ সবজি খাওয়া হালাল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য, হে লোক সকল! আল্লাহ যা আমার জন্য হালাল করেছেন তা আমার জন্য হারাম করা বৈধ নয়।
৭০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৮
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺ الْبُزَاقُ فِي الْمَسْجِدِ خَطِيئَةٌ وَكَفَّارَتُهَا دَفْنُهَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ। (যদি কেউ ফেলে) তার ক্ষতিপূরণ হল ঐ থুথু মাটিতে পুঁতে ফেলা। [১]
ক্বাযী ‘ইয়ায বলেন, পাপ তখন হবে যখন দাফন করবে না আর যদি দাফন করে তাহলে পাপ হবে না। আর নাবাবী বলেনঃ দাফন করুক বা না করুক উভয় অবস্থায় পাপ হবে।
কারো মতে, মাসজিদ যদি মাটিযুক্ত না হয় বরং চট বা গালিচা বিছানো থাকে তাহলে থুথু বাম পায়ের নীচে ফেলবে।
আমি ভাষ্যকার বলি, যখন থুথু প্রতিহত করার প্রয়োজন হয় আর মাসজিদ মসৃণ ও টাইলস্ যুক্ত হয় তাহলে বাম পায়ের নীচে ফেলবে এবং পা দ্বারা মিটাবে যাতে আর থুথুর আর চিহ্ন না থাকে। এর উপর হাদীসের মর্মার্থ প্রমাণ করে।
৭০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭০৯
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عُرِضَتْ أَعْمَالُ أُمَّتِي حَسَنَتُهَا وَسَيِّئُهَا فَوَجَدْتُ فِي مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الْأَذى يُمَاطُ عَنْ الطَّرِيقِ وَوَجَدْتُ فِي مَسَاوِي أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ تَكُونُ فِي الْمَسْجِدِ لَا تُدْفَنُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের ভালমন্দ সকল ‘আমাল আমার কাছে উপস্থিত করা হলো। তখন আমি তাদের ভাল কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম-রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস ফেলে দেয়া। আর মন্দ কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম, কফ পুঁতে না ফেলে মাসজিদে ফেলে রাখা। [১]
৭১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭১০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَلَا يَبْصُقْ أَمَامَه فَإِنَّمَا يُنَاجِي اللّهَ مَا دَامَ فِي مُصَلَّاهُ وَلَا عَنْ يَمِينِه فَإِنَّ عَنْ يَمِينِه مَلَكًا وَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِه أَوْ تَحْتَ قَدَمِه فَيَدْفِنُهَا
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কারণ যতক্ষণ সে তার জায়নামাযে থাকে ততক্ষণ আল্লাহর সাথে একান্ত আলাপে রত থাকে। সে তার ডান দিকেও ফেলবে না, কারণ সেদিকে মালাক আছে। (নিবারণ করতে না পারলে) সে যেন থুথু ফেলে তার বাম দিকে অথবা তার পায়ের নীচে, তারপর মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। [১]
০১. নিশ্চয় ডান দিকের মালায়িকাহ্ সলাত আদায়কারীর ভালো ‘আমালসমূহ লিখেন আর সলাত হচ্ছে শারীরিক ‘ইবাদাতসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, এটি খারাব ও গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখে। সুতরাং সলাতের মধ্যে বাম দিকে অন্যায় কাজের হিসাবরক্ষকের কোন ভূমিকা নেই।
০২. প্রত্যেকের সাথে শয়তান (শয়তান) রয়েছে। তার অবস্থান বামদিকে, যেমন আবূ ‘উমামার হাদীস ত্ববারানীতে। তার সামনে আল্লাহ ডানদিকে মালাক এবং বামদিকে শয়তান (শয়তান)। থুথু ফেললে শায়ত্বনের (শয়তানের) উপর পড়বে।
০৩. অথবা উত্তর এই যে, বাম দিকের মালায়িকাহ্ চলে যায়।
০৪. অথবা সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) অবস্থায় মালাক এমনভাবে অবস্থান করে যাতে থুথু ইত্যাদি তার নিকট পৌঁছে না।
৭১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭১১
وَفِىْ رِوَايَةٍ اَبِىْ سَعِيْدٍ تَحْتَ قَدَمِهِ الْيُسْرى. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এর বর্ণনায় আছেঃ তার বাম পায়ের নীচে। [১]
৭১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭১২
وَعَنْ عَائِشَةَ اَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ قَالَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي لَمْ يَقُمْ مِنْهُ لَعَنَ اللّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মৃত্যুশয্যায় বলেছেনঃ আল্লাহর অভিশাপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি। তারা তাদের নবীদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিনত করেছে। [১]
নাবীদের কবরকে মাসজিদে পরিণত করার নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো মূর্তিপূজার মতো সাদৃশ্য হওয়া। যারা এমন জড়পদার্থকে সম্মান করে যা শুনে না এবং কারো উপকার কিংবা ক্ষতিও করতে পারে না তা হতে দূরে থাকা এবং এ পথকে বন্ধ করে দেয়া।
তুরবিশতী হানাফী এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইয়াহূদী ও নাসারাদের এমন কাজ প্রত্যাখ্যানের কারণ মূলত দু’টি।
প্রথমত তারা নাবীদের ক্ববরে সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করে তাঁদের সম্মানার্থে। দ্বিতীয়ত তাদের সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের চিন্তা-চেতনা নাবীদের দাফনের স্থানে সলাত আদায় ও তাদের এ রকম কাজ যাতে বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহর নিকট তাদের (নাবীদের) বিশাল ক্ষমতা রয়েছে।
আমি (ভাষ্যকার) বলি, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধাজ্ঞা ও সতর্ক করার কারণ এজন্য যে, তাদের সলাত ক্ববরের নিকটে। তাদের নিকট হতে সাহায্য লাভ এবং তাদের রূহ্ হতে বারাকাত লাভের উদ্দেশে। নিঃসন্দেহে এমনটি করা বড় ধরনের ফাসাদ। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতের কাউকে কোন নাবী বা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির ক্ববরের নিকট আবেদন করা, সাহায্য চাওয়া, বারাকাত গ্রহণ করা ইত্যাদি বিষয় অনুমোদন দেননি। বরং আদেশ করেছেন কবরবাসীকে সালাম প্রদান ও তাদের জন্যে ইস্তিগফার কামনা ও দু‘আ করার জন্য।
৭১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭১৩
وَعَنْ جُنْدُبٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذلِكَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা ক্ববরসমূহকে মাসজিদে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে একাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি। [১]
ইবনু হাজার বলেনঃ পূর্বের যুগের লোকেরা এমনটি করতো যে তারা তাদের ছবি দেখে প্রশান্তি লাভ করতো এবং স্মরণ করতো তাদের নেক অবস্থাকে। আর তাদের মতো প্রচেষ্টা করতো। এরপরে পরবর্তী প্রজন্ম আসলো। পূর্ববর্তী লোকদের উদ্দেশ্য ভুলে গেল আর শয়তান (শয়তান) তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিলো তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ ছবিগুলোর ‘ইবাদাত করতো এবং সম্মান করতো। সুতরাং তোমরা এদের ‘ইবাদাত করো। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে সতর্ক করলেন এবং এ পথকে বন্ধ করলেন অনুরূপ পরিবেশের দিকে ধাবিত যেন আর না হয়।
৭১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৪ঃ সলাত
হাদীস নং : ৭১৪
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اِجْعَلُوا فِي بُيُوتِكُمْ مِنْ صَلَاتِكُمْ وَلَا تَتَّخِذُوهَا قُبُورًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু সলাত আদায় করবে এবং ঘরকে ক্ববরে পরিণত করবে না। [১]