২৮১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮১
وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ تَمْلأُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ تَمْلَاۤنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُورٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْاۤنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَه فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ - وَفِيْ رِوَايَةٍ لَا إِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ تَمْلَانِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لَمْ أَجِدُ هذِهِ الرِّوَايَةَ فِي الصَّحِيْحَيْنِ وَلَا فِي كِتَابِ الْحُمَيْدِيْ وَلَا فِي الْجَامِعِ وَلَكِنَّ ذَكَرَهَا الدَّارِِمِيُّ بَدَلَ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ ِللهِ
আবূ মালিক আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহাম্দু লিল্লা-হ’ মানুষের ‘আমালের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং ‘সুবহানাল্ল-হি ওয়াল হাম্দু লিল্লা-হ’ সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। সলাত হল নূর বা আলো। দান-খায়রাত (দানকারীর পক্ষে) দলীল। সব্র বা ধৈর্য হল জ্যোতি। কুরআন হল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল । প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম হতে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে– হয় তাকে সে আযাদ করে দেয় অথবা জীবনকে ধবংস করে দেয় । [১]
আর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আল্ল-হু আকবার’ আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপুর্ণ করে দেয়। [2] মিশকাতুল মাসাবীহ-এর সংকলক বলেছেন, আমি এ বর্ণনাটি বুখারী-মুসলিম কিংবা হুমায়দী বা জামিউল উসূলে কোথাও পাইনি। অবশ্য দারিমী এ বর্ণনাটিকে ‘সুবহানাল্ল-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি’ এর স্হলে বর্ণনা করেছেন।
[2] দারিমী ৬৫৩।
এ ধরনের আরো মত আছে, তবে شطر থেকে نصف অর্থ নেয়াটাই শক্তিশালী মত। যা বানী সুলায়ম গোত্রের জনৈক ব্যক্তির হাদীসে ‘‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক’’। এভাবে আভিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে شَطْرُ শব্দের অর্থ نصف -ই জানা যায়। الإيمان থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে সাওয়াবের বিশালত্বের বিবরণ দেয়া।
(اَلصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ) অর্থাৎ- সদাক্বাহ্ (সাদাকা) সদাক্বাকারীর ঈমানী দাবীর সত্যতার স্পষ্ট প্রমাণ। কেননা ব্যক্তির সম্পদ ব্যয় সাধারণত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়ে থাকে, অতএব সম্পদ ব্যয় তার ঈমানের ব্যাপারে সত্যতার প্রমাণকারী ছাড়া কিছু না।
(اَلصَّبْرُ ضِيَاءٌ) অর্থাৎ- ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশসূচক কাজের আনুগত্য করে ও তাঁর নিষেধসূচক ও অবাধ্য কাজ থেকে বেঁচে থেকে সঠিক পথের উপর ধৈর্য ধারণ করা, এছাড়া সকল প্রকার বিপদে ও দুনিয়াবী সকল অপছন্দনীয় কষ্টদায়ক বিষয়ের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা ব্যক্তির জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন বহু পথের এমন এক জ্যোতি লাভ করে যার মাধ্যমে ব্যক্তি সঠিক পথের দিশা পায়। হাদীসে ধৈর্য ধরাকে ضياء বা জ্যোতি বলা হয়েছে যা نور অপেক্ষাও শক্তিশালী। صبر ধৈর্য ধরাকে ضياء বলার ও صلاة কে نور বলার কারণ হচ্ছে- যেহেতু صبر -এর বিষয়টি صلاة অপেক্ষা প্রশস্ত। ব্যক্তি তার জীবনে প্রত্যেক ওয়াজিব কাজ করতে গিয়েও নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকতে গিয়ে ধৈর্যের মুখাপেক্ষী হয়। দ্বীনের প্রতিটি বিষয়ই ধৈর্যের উপর নির্ভরশীল।
হাদীসটিতে একজন মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাসবীহ, তাহলীল ও ‘আমালের উল্লেখ করা হয়েছে যা তাকে ‘আমালের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগাবে। হাদীসটি থেকে আরো বুঝা যায়, কুরআন অনুযায়ী ‘আমাল করলে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে কুরআন ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য হবে, পক্ষান্তরে তা হতে মুখ ফিরিয়ে রাখলে কুরআন ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। হাদীসের শেষাংশ থেকে বুঝা যায় মানুষের সামনে সঠিক পথ স্পষ্ট হয়ে আছে অথচ মানুষের অবস্থা এই যে, প্রত্যেকে তার নিজের ব্যাপারে চেষ্টা করে, অতঃপর তাদের কেউ এমন, যে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেয় এবং এভাবে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করে। আর কেউ এমন আছে, যে শয়তান (শয়তান) ও প্রবৃত্তির অনুসরণের মাধ্যমে নিজেকে শয়তান (শয়তান) ও প্রবৃত্তির কাছে বিক্রি করে দেয় এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অতএব এ অংশে মানুষের শিক্ষণীয় দিক হলো- সদা-সর্বদা যেন নিজের প্রতি খেয়াল রাখা যে, সে প্রতিনিয়ত কোন ‘আমাল করে সে নিজেকে কার কাছে বিক্রি করছে।
২৮২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮২
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلى مَا يَمْحُو اللّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِه الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِه وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সহাবীগণের উদ্দেশ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন একটি কথা বলব না আল্লাহ তা’আলা যা দিয়ে তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিবেন এবং (জান্নাতেও) পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? সহাবীগণ আবেদন করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আবশ্যই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কষ্ট হলেও পরিপূর্ণভাবে উযূ কর, মাসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা এবং এক ওয়াক্ত আদায়ের পর আর এক ওয়াক্তের সালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটাই হল ‘রিবাত্ব’ (প্রস্তুতি গ্রহণ)। [১]
(وَيَرْفَعُ بِه الدَّرَجَاتِ) ‘‘আর তা দ্বারা পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন।’’ অর্থাৎ- জান্নাতে তাকে উঁচু মর্যাদা দান করবেন। অনুরূপভাবে দুনিয়াতেও তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(كَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ) ‘‘মাসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা।’’ (الْخُطَا) বলা হয়, পায়ে হেঁটে চলার সময় দু’পায়ের মধ্যবর্তী জায়গাকে। যাকে আমরা বাংলা ভাষায় পদক্ষেপ বলি। অধিক পদক্ষেপ দু’টি কারণে হতে পারে। যথা- (১) মাসজিদ থেকে বাসস্থানের অবস্থান দূরবর্তী স্থানে হওয়ার কারণে, (২) বারবার মাসজিদে আগমনের কারণে। কারণ যাই থাক না কেন মাসজিদে অধিক যাতায়াতকারীর ব্যক্তির জন্য হাদীসে বর্ণিত মর্যাদা তার জন্য নির্ধারিত আছে।
(انْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ) ‘‘এক সলাতের পর আরেক সলাতের জন্য অপেক্ষা করা।’’ অর্থাৎ- এক সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর পরবর্তী সলাত আদায় করার উদ্দেশে মাসজিদে বসে থাকা অথবা সলাত আদায় করে স্বীয় কর্মস্থলে ফিরে যাবার পর পরবর্তী সলাত আদায়ের জন্য মনে মনে সংকল্প করা এবং এজন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা যাতে মাসজিদে গিয়ে পরবর্তী সলাত আদায়ে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।
২৮৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৩
وَفِيْ حَدِِيْثِ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ رَدَّدَ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيُّ ثَلَاثًا
মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘এটাই রিবা-ত্ব, এটাই রিবা-ত্ব দু’বার বলা হয়েছে- (মুসলিম ২৫১) । আর তিরমিযীতে তা তিনবার উল্লিখিত হয়েছে । [১]
পরিশেষে বলা যায়, মুসলিমে উল্লিখিত হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ কথাটি দু’বার এবং তিরমিযীর বর্ণনাতে তিনবার এসেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দান অথবা বিষয়টির মর্যাদা বুঝানো এবং এ ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ প্রদানের জন্য একাধিকবার বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন।
২৮৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৪
وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِه حَتّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে, তার শরীর হতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়। [১]
২৮৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৫
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوْ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَه خَرَجَ مِنْ وَجْهِه كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ اۤخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ اۤخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَّتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ اۤخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنْ الذُّنُوبِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দু’হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্য তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে সে (উযূর জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। [১]
২৮৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৬
وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُه صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا اِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذلِكَ الدَّهْرَ كُلَّه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম ফার্য সলাতের সময় হলে উত্তমভাবে উযূ করে, বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ’ করে (সলাত আদায় করে তার এ সলাত), তা তার সলাতের পূর্বের গুনাহর কাফ্ফারাহ্ (প্রায়চিত্ত) হয়ে যায়, যতক্ষন না সে কাবীরাহ্ গুনাহ করে থাকে। আর এভাবে সর্বদাই চলতে থাকবে। [১]
তবে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন- শর্তারোপ ছাড়াই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ ছাড়া, কেননা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ইমাম নাবাবী বলেন, এটাই উদ্দেশিত অর্থ। প্রথম অর্থটি যদিও ইবারত থেকে সম্ভাবনাময় অর্থ কিন্তু হাদীসের বাচনভঙ্গি তা অস্বীকার করছে। কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের ক্ষমা কেবল তাওবা-ই করতে পারে। অথবা আল্লাহর রহমাত ও দয়া। কখনো কখনো বলা হয়, উযূই যখন গুনাহ মোচন করে দিবে তাহলে সলাতে আর কি কাজ? আবার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) যখন গুনাহ মোচন করে দিবে তখন জামা‘আত এবং হাদীসসমূহে গুনাহ মোচনের আরো যত কারণ বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো কি মোচন করবে?
এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে- এগুলোর প্রত্যেকটি গুনাহ মোচনের জন্য উপযুক্ত। অতএব সগীরাহ্ গুনাহ হয়েছে এমন কোন ‘আমাল তা ছোট গুনাহকে ক্ষমা করবে আর যদি ব্যক্তি এমন হয় যে, সে সগীরাহ্ গুনাহ করেনি, কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করেছে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তার কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহকে হালকা করবেন। অন্যদিকে সগীরাহ্ বা কাবীরাহ্ (কবিরা) কোন গুনাহই যদি না করে থাকেন তাহলে এসব ‘আমালের কারণে আল্লাহ তার জন্য পুণ্য লিখবেন এবং এর মাধ্যমে তার মর্যাদাকে আরো উন্নীত করবেন।
উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু রুকূ‘র আলোচনা করেছেন সাজদার আলোচনা করেননি। এর কারণ হচ্ছে- যেহেতু সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) ও রুকূ‘ পারস্পরিক দু’টি রুকন, তাই যখন উভয়ের একটিকে সুন্দরভাবে আদায় করতে বলেছেন তখন এমনিতেই বুঝা যাচ্ছে অপরটিও সুন্দরভাবে আদায় করতে হবে এবং ‘‘রুকূ‘কে’’ যিকর দ্বারা খাস করাতে একটি সতর্কতাও পাওয়া যাচ্ছে যে, রুকূ‘র ব্যাপারে নির্দেশটি অত্যন্ত কঠিন, ফলে রুকূ‘টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ; কেননা রুকূ‘কারী রুকূ‘তে নিজেকে পুরোপুরি বহন করে কিন্তু সাজদাতে সে জমিনের উপর ভর করে থাকে।
একমতে বলা হয়েছে রুকূ‘কে সাজদার অধীন করার জন্যই বিশেষভাবে রুকূ‘র উল্লেখ করেছেন। কারণ রুকূ‘ এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘ইবাদাত নয়। অথচ সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ইবাদাত, যেমন- তিলাওয়াতে সাজদাহ্, শুকরিয়া আদায়ের সাজদাহ্ ইত্যাদি
২৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৭
وَعَنْهُ اَنَّهٗ تَوَضَّاَ فَأَفْرَغَ عَلى يَدَيْهِ ثَلَاثًا ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهٗ ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا ثُمًَّ مَسَحَ بِرَأْسِه ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنى ثَلَاثًا ثُمَّ الْيُسْرى ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ تَوَضَّأُ نَحْوَ وُضُوئِي هذَا ثُمَّ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ وُضُوئِي هذَا ثُمَّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ فِيْهِمَا نَفْسَهٗ غَفَرَ اللّهُ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَلَفْظُهٗ لِلْبُخَارِيُّ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা তিনি এরূপে উযূ করলেন, তিনবার নিজের দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধুলেন, এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন, তারপর ডান পা তিনবার ও বাম পা তিনবার করে ধুলেন। এরপর তিনি [‘উসমান (রাঃ)] বললেন, যে ব্যক্তি আমার ন্যায় উযূ করবে ও মনোযোগ সহকারে দুই রাক্’আত (নাফ্ল) সলাত আদায় করবে তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি; এ বর্ণনার শব্দসমুহ ইমাম বুখারীর। [১]
উল্লেখ্য যে, পূর্বে কতিপয় হাদীস এসেছে যেখানে শুধু ভালোভাবে উযূ করলে ব্যক্তির গুনাহসমূহ ঝরে পড়ার কথা বলা হয়েছে। এ হাদীসে ব্যক্তির গুনাহসমূহ মাফের জন্য উযূর সঙ্গে বিশেষ দু’ রাক্‘আত সলাতের কথাও জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উভয় হাদীসের বক্তব্যে কিছু কম-বেশি আছে, এর কারণ কি?
উত্তরে বলা যেতে পারে, উযূ এবং সলাত প্রত্যেকটিই আলাদাভাবে গুনাহ মাফের উপযোগী। অথবা উযূ শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ মোচনকারী, সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ মোচনকারী। অথবা উযূ প্রকাশ্য গুনাহসমূহের মোচনকারী এবং সলাত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের পাপ মোচনকারী।
২৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৮
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلّـِي رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِه وَوَجْهِه اِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম উযূ করে এবং উত্তমরূপে উযূ করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে (অন্তর ও দেহ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে রুজু করে) দু’রাক্’আত সলাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। [১]
অতএব আমরা বলতে পারি, হাদীসে জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার দ্বারা প্রথমবারে জান্নাতে প্রবেশকে উদ্দেশ করা হয়েছে। আর তা কাবীরাহ্ (কবিরা) ও সগীরাহ্ সকল গুনাহ ক্ষমা হওয়ার উপর নির্ভরশীল বরং এরপর আরো যা কিছু পাপ ব্যক্তি করবে তাও ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে শর্তারোপ এই করা হয়েছে যে, তার মরণ ভালো ‘আমাল বা ঈমানের উপর হতে হবে। মূলত আল্লাহ তার অনুগ্রহে বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তিনি তার ওয়া‘দা ভঙ্গ করেন না। হাদীসটিতে ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে ও তারপর দু’ রাক্‘আত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং হাদীসটি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের দিকে ইশারা করছে।
২৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৮৯
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه وَفِيْ رِوَايَةٍ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه اِلَّا فُتِحَتْ لَه أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ هَكَذَا رَوَاهُ مُسْلِمٌ فِيْى صَحِيْحِه وَالْحُمَيْدِى فِي أَفْرَادِ مُسْلِمٍ وَكَذَا ابْنُ الأَثِيْرِ فِي جَامِعِ الأُصُوْلِ وَذَكَرَ الشَّيْخُ مُحِيُ الدِّيْنِ النَّوَوِيُّ فِيْ اۤخِرِ حَدِيْثِ مُسْلِمٍ عَلى مَا رَوَيْنَاهُ وَزَادَ التِّرْمِذِيُّ اللّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ وَالْحَدِيْثُ الَّذِىْ رَوَاهُ مُحْيُ السُّنَّةِ فِي الصِّحَاحِ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوَضُوْءَ إِلى اۤخِرِه رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ فِيْ جَامِعِهِ بِعَيْنِه اِلَّا كَلِمَة أَشْهَدُ قَبْلَ أَنَّ مُحَمَّدًا
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ করবে এরপর বলবেঃ “আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”, অর্থাৎ- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”- (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আর হুমায়দী তাঁর আফরাদে মুসলিম গ্রন্থে, ইবনুল ‘আসীর জামিউল উসূল গ্রন্থে এরূপ ও শায়খ মুহীউদ্দীন নাবাবী হাদীসের শেষে আমি যেরূপ বর্ণনা করেছি এরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম তিরমিযী উপরউক্ত দু’আর পরে আরো বর্ণনা করেছেনঃ “আল্লা-হুম্মাজ ‘আলনী মিনাত্ তাওয়া-বীনা ওয়াজ ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন”- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তাওবাহকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে গণ্য কর”। [১]
মুহয়ুস্ সুন্নাহ তাঁর সিহাহ গ্রন্থে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, “যে উযূ করল ও উত্তমভাবে তা করল শেষ …. পর্যন্ত। তিরমিযী তার জামি কিতাবে হুবহু এটাই বর্ণনা করেছেন। অবশ্য তিনি (আরবী) (আন্না মুহাম্মাদান) শব্দের পূর্বে (আরবী) (আশহাদু) শব্দটি বর্ণনা করেননি।
হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার পর শাহাদাতায়ন পাঠ করে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। এ বক্তব্যের মর্মার্থ হচ্ছে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইলে একটি দরজাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। তথাপিও হাদীসে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, এটি মূলত ব্যক্তির কর্মের সম্মানার্থে। অথবা বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে দৃষ্টি দিলে বলা যায়, ব্যক্তি যে ধরনের ‘আমাল বেশি করবে তার জন্য ঐ ‘আমালের জন্য প্রস্ত্তত করা বিশেষ দরজা খুলে দেয়া হবে কারণ জান্নাতের দরজাসমূহ প্রস্ত্তত করা হয়েছে বিশেষ বিশেষ ‘আমালের জন্য।
যেমন যে ব্যক্তি বেশি বেশি সওম পালন করবে তার জন্য জান্নাতের রইয়্যান নামক দরজা খুলে দেয়া হবে। অনুরূপ যে ব্যক্তি যেমন ‘আমাল করবে তাঁর জন্য তেমন দরজা খুলে দেয়া হবে। ইবনু সাইয়্যিদিন্ নাস বলেনঃ দরজার সংখ্যাধিক্যতা খুলে দেয়া ও এসব হতে ডাকা ইত্যাদি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন ব্যক্তির সম্মান এবং মর্যাদার দিকেই ইশারা। অতএব বিষয়টি এমন নয় যে, কোন এক দরজা দিয়ে ডাকা হলে সে সে দরজার সীমা অতিক্রম করবে না। বরং প্রত্যেক দরজা দিয়ে ডাক/সাক্ষাৎ পাওয়ার পর যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়েই সে প্রবেশ করবে।
২৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِيْنَ مِنْ اۤثَارِ الْوُضُوءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে (জান্নাতে যাবার জন্য) এই অবস্থায় ডাকা হবে যখন তাদের চেহারা উযূর কারণে ঝকমক করতে থাকবে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকাতে থাকবে। “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতাকে বাড়াতে সক্ষম সে যেন তাই করে”। [১]
এ হাদীসের রাবীদের একজন নু‘আয়ম বলেনঃ (فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَه فَلْيَفْعَلْ) উক্তিটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি নাকি আবূ হুরায়রাহর উক্তি? হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী ফাতহুল বারীতে বলেনঃ সাহাবীগণের থেকে যে দশজন এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তাদের কারো বর্ণনাতে এ বাক্যটি আছে বলে আমি জানি না এবং যারা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন তাদের বর্ণনাতেও আছে বলে জানি না কেবল নু‘আয়ম-এর এ বর্ণনাটি ছাড়া। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কারীর জন্য ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তার উযূর কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শুভ্রতাকে বর্ধিতকরণে এ হাদীসটি দলীলস্বরূপ। তবে এ শুভ্রতাকে বর্ধিতকরণে উযূর অঙ্গগুলোকে কি পরিমাণ ধৌত করতে হবে এ নিয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। বলা হয়েছে হাত কাঁধ পর্যন্ত। পা হাঁটু পর্যন্ত। অন্য মতে বলা হয়েছে, হাত অর্ধ বাহু পর্যন্ত এবং পা নলা পর্যন্ত।
২৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯১
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنْ الْمُؤْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (জান্নাতে) মু’মিনের অলংকার অর্থাৎ উযূর চিহ্ন সে পর্যন্ত পৌঁছবে যে পর্যন্ত উযূর পানি পৌঁছবে (তাই উযূ সুন্দরভাবে করবে)। [১]
২৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯২
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمْ الصَّلَاةُ وَلَا يُحَافِظُ عَلَى الْوُضُوءِ اِلَّا مُؤْمِنٌ. رَوَاهُ مَالِك وأَحْمَدُ وابْن مَاجَةَ وَالدَّارِمِيُّ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (হে মু’মিনগণ!) তোমরা দ্বীনের উপর যথাযথভাবে অটল থাকবে। অবশ্য তোমরা সকল (কাজ) যথাযথভাবে করতে পারবে না, তবে মনে রাখবে তোমাদের সকল কাজের মধ্যে সলাতই হচ্ছে সর্বোত্তম। আর উযূর সব নিয়ম-কানুনের প্রতি মু’মিন ব্যতীত অন্য কেউ লক্ষ্য রাখে না। [১]
এ হাদীসে উল্লিখিত সলাত দ্বারা গোপনীয় বিষয়ের পবিত্রতা বুঝানো হয়েছে। কেননা সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) অশ্লীল ও অসমীচীন কাজ থেকে বাধা দেয়। পক্ষান্তরে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাহ্যিক বিষয়াবলীকে পবিত্র করে। উল্লেখ্য যে, সর্বোত্তম ‘আমাল সম্পর্কে বৈপরীত্যপূর্ণ অনেক হাদীস এসেছে। সুতরাং হাদীসটির সামঞ্জস্যতা প্রয়োজন। অন্যান্য হাদীসের সাথে এ হাদীসের সামঞ্জস্য এভাবে যে, এ হাদীসে উল্লিখিত خَيْرَ أَعْمَالِكُمْ -কে مِنْ خَيْرَ أَعْمَالِكُمْ অর্থে ব্যবহার করতে হবে। এমনিভাবে হাদীসের শেষ অংশে মু’মিন বলতে পূর্ণ মু’মিনকে বুঝানো হয়েছে। পরিশেষে এক কথায় বলা যায়, একজন মু’মিন ব্যক্তিকে সঠিক পথের উপর অবিচল থাকার সর্বাধিক সহজ উপায় সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) সংরক্ষণ করা এবং এ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) কে সংরক্ষণ করতে হলে এর পূর্বশর্ত উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কে সংরক্ষণ করতে হবে।
২৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৩
وَ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ تَوَضَّأَ عَلى طُهْرٍ كُتِبَ لَه بِه عَشْرَ حَسَنَاتٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ থাকতে উযূ করে তার জন্য (অতিরিক্ত) দশটি নেকী রয়েছে। [১]
২৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৪
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের চাবি হল সলাত। আর সলাতের চাবি হল ত্বহারাত (উযূ)। [১]
২৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৫
وَعَنْ شَبِيبٍ بْنِ أَبِي رَوْحٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْل اللهِ ﷺ أَنَّ رَسُوْل اللهِ ﷺ صَلّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَقَرَأَ الرُّوْمَ فَالْتَبَسَ عَلَيْهِ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ مَا بَالُ أَقْوَامٍ يُصَلُّونَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُونَ الطُّهُورَ وَإِنَّمَا يَلْبِسُ عَلَيْنَا الْقُرْآنَ أُولَئِكَ. رَوَاهُ النَّسَآئِىُّ
শাবীব ইবনু আবূ রাওহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক সহাবী হতে বর্ণনা করেন। একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের সলাত আদায় করলেন এবং (সলাতে) সূরাহ আর্ রূম তিলাওয়াত করলেন। সলাতের মধ্যে তাঁর তিলাওয়াতে গোলমাল বেঁধে গেল। সলাত শেষে তিনি বললেন, মানুষের কি হল! তারা আমার সাথে সলাত আদায় করছে অথচ উত্তমরূপে উযূ করছে না। এটাই সলাতে আমার কিরাআতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। [১]
২৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৬
وَعَنْ رَجُلٍ مِنْ بَنِي سُلَيْمٍ قَالَ عَدَّهُنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي يَدِي أَوْ فِي يَدِهِ التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ يَمْلَؤُه وَالتَّكْبِيرُ يَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَالصَّوْمُ نِصْفُ الصَّبْرِ وَالطُّهُورُ نِصْفُ الْإِيمَانِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وقال هذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
বানী সুলায়ম গোত্রের এক ব্যক্তি (সাহাবী) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাঁর নিজের হাতে গুণে বললেনঃ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা হল দাঁড়ি পাল্লার অর্ধেক, আর ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা হল দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করা এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ বলা হল আকাশমন্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা আছে তা পূর্ণ করে দেয়া। সিয়াম ধৈর্যের অর্ধেক এবং পাক-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। [১]
২৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৭
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ الصُّنَابِحِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ فَتَمَضْمَضَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ فِيهِ وَإِذَا اسْتَنْثَرَ خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ أَنْفِه فَإِذَا غَسَلَ وَجْهَه خَرَجْتِ الْخَطَايَا مِنْ وَجْهِه حَتّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَشْفَارِ عَيْنَيْهِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ يَدَيْهِ حَتّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ يَدَيْهِ فَإِذَا مَسَحَ بِرَأْسِه خَرَجَتِ الْخَطَايَا مِنْ رَأْسِه حَتّى تَخْرُجَ مِنْ أُذُنَيْهِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ رِجْلَيْهِ حَتّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ رِجْلَيْهِ ثُمَّ كَانَ مَشْيُه إِلَى الْمَسْجِدِ وَصَلَاتُهٗ نَافِلَةً لَهٗ. رَوَاهُ مَالِكٌ وَالنَّسَائِـيُِّ
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মু’মিন বান্দা উযূ করে ও কুলি করে, তখন তার মুখ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন সে নাক ঝাড়ে তখন তার নাক থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধোয়, গুনাহ তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার চোখের পাতার নীচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। এরপর যখন নিজের দু’টি হাত ধোয়, তখন তার হাত হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার হাতের নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মাথা মাসাহ করে, মাথা হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি দুই কান থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নিজের পা দু’টো ধোয়, তার দুই পায়ের গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার পায়ের নখের নীচ হতেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর মাসজিদের দিকে গমন এবং তার সলাত হয় তার জন্য অতিরিক্ত। [১]
হাদীসে উল্লেখ হয়েছে ‘‘অতঃপর যখন সে মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে গুনাহ ঝরে যায় এমনকি তার কান হতেও।’’ উল্লিখিত অংশ প্রমাণ করছে কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব মাথা মাসাহের পানি দিয়ে কান মাসাহ করতে হবে নতুন পানি দ্বারা নয়। এ হাদীস نَافِلَةً لَهٗ বলা হয়েছে, মর্মার্থ হচ্ছে- ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সাথে সাথে তার উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর গুনাহ ঝরে যায় পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অঙ্গের গুনাহ থাকলে সেগুলোর গুনাহও মাফ হয়ে যায়, অর্থাৎ- সগীরাহ্ গুনাহ। সগীরাহ্ গুনাহ যদি না থাকে তাহলে তার কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হালকা করা হবে। যদি কোন প্রকার গুনাহ না থাকে তাহলে তার মর্যাদাকে উন্নীত করা হবে। হাদীসটি একজন মুসলিমকে উযূর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
২৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৮
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَتَى الْمَقْبُرَةَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا قَالُوا أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ فَقَالُوا كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَه خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلاَ يَعْرِفُ خَيْلَه؟ قَالُوا بَلى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরস্থানে (অর্থাৎ- মাদীনার বাকী’তে) উপস্থিত হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশ্যে) বললেনঃ ‘‘আস্সালা-মু ‘আলায়কুম, (তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) হে মু’মিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখতে পাই’’। সহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই ? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখন আসেনি, তাদের আপনি ক্বিয়ামাতের দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে হে আল্লাহর রসূল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে (ক্বিয়ামাতের দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকব। [১]
হাদীসে সাহাবীগণের প্রশ্ন ‘‘আমরা কি আপনার ভাই নই?’’ এর উত্তরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘‘তোমরা আমার সাহাবী।’’ এ ধরনের উত্তর দিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণেরকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন থেকে আলাদা করে দেননি। বরং তাঁদের একটি আলাদা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সামনে মু’মিনদের যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন তা কেবল উম্মাতে মুসলিমার জন্য খাস।
২৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ২৯৯
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ قَالَ رَسُولُ ﷺ أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَه بِالسُّجُودِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَه أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَه فَأَنْظُرَ إِلى مَا بَيْنِ يَدَيَّ فَأَعْرِفَ أُمَّتِي مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ وَمِنْ خَلْفِي مِثْلُ ذلِكَ وَعَنْ يَمِينِي مِثْلُ ذلِكَ وَعَنْ شِمَالِي مِثْلُ ذلِكَ فَقَالَ لَه رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تَعْرِفُ أُمَّتَكَ؟ مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ فِيمَا بَيْنَ نُوحٍ إِلى أُمَّتِكَ قَالَ هُمْ غُرٌّ مُحَجَّلُونَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ لَيْسَ أَحَدٌ كَذلِكَ غَيْرَهُمْ وَأَعْرِفُهُمْ أَنَّهُمْ يُؤْتَوْنَ كُتُبَهُمْ بِأَيْمَانِهِمْ وَأَعْرِفُهُمْ تَسْعى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ ذُرِّيَّتُهُمْ. رَوَاهُ اَحْمَد
আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে ক্বিয়ামাতের দিন (আল্লাহর দরবারে) সাজদাহ্ করার অনুমতি দেয়া হবে। আর এভাবে আমিই প্রথম ব্যক্তি যাকে সাজদাহ্ হতে মাথা উঠাবার অনুমতি দেয়া হবে। অতঃপর আমি আমার সামনে (উপস্থিত উম্মাতদের দিকে) দৃষ্টি নিক্ষেপ করব এবং সকল নাবী-রাসূলদের উম্মাতদের মধ্য হতে আমার উম্মাতকে চিনে নিব। এভাবে আমার পেছনে, ডান দিকে, বাম দিকেও তাকাব। আমার উম্মাতকে চিনে নিব। (এটা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে আপনি নূহ (আঃ) থেকে আপনার উম্মাত পর্যন্ত এত লোকের মধ্যে আপনার উম্মাতকে চিনে নিবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে ধবধবে সাদা কপাল ও ধবধবে হাত-পা সম্পন্ন হবে, অন্য কোন উম্মাতের মধ্যে এরূপ হবে না। তাছাড়া আমি তাদেরকে চিনতে পারব এসব কারণে যে, তাদের ডান হাতে ‘আমালনামা থাকবে এবং তাদেরকে আমি এ কারণেও চিনব যে, তাদের অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানরা তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করবে। [১]
৩০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتّى يَتَوَضَّأَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার উযূ ছুটে গেছে তার সলাত কবুল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে উযূ না করে। [১]
প্রথমত সামনের বা পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়ার মাধ্যমে উযূ বিনষ্ট হবে আর উযূ না হলে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) সঠিক হবে না। চাই তার নির্গত হওয়াটা নিরুপায় অবস্থায় হোক বা স্বাভাবিক অবস্থায় হোক। কেননা হাদীসে উভয় অবস্থার মাঝে কোন পার্থক্য বর্ণিত হয়নি। দ্বিতীয়ত ঐ লোকেদের প্রতিউত্তর যারা বলে যেহেতু তার উযূ নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সে উযূ করে আগের সলাতের উপর নির্ভর করবে। তৃতীয়ত সকল সলাত পবিত্রতা অর্জনের উপর নির্ভরশীল। আর জানাযাহ্, ঈদ সহ সমস্ত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ- উযূ ছাড়া কোন সলাত গৃহীত হবে না।
قَوْلُهٗ (لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طَهُوْرٍ) (পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সলাত গৃহীত হয় না)। অর্থাৎ- ‘পবিত্রতা ছাড়া’ অর্থ এ নয় সলাতটি পবিত্রতার পরিপন্থী কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে না। কেননা অন্যান্য শর্তের ন্যায় পবিত্রতার ভিন্নধর্মী বিষয়ের সাথেও সলাতের সম্পৃক্ততা থাকা অবশ্যক। তবে যদি পবিত্রতার পরিপন্থী দ্বারা তার সম্পূর্ণ বিপরীত উদ্দেশ্য হয় তাহলে ঠিক আছে। আর তা হলো حَدَثٌ হাদাস অর্থাৎ- এমন অপবিত্রতা যা উযূ, গোসল বা তায়াম্মুম ছাড়া দূরীভূত হয় না।
قَوْلُهٗ (وَلَا صَدَقَةُ مِنْ غُلُوْلٍ) (খিয়ানাতের মাল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে গ্রহণ করা হয় না)غُلُوْلٌ (গুলূল) অর্থ হারাম সম্পদ। غُلُوْلٌ -এর মূল অর্থ গনীমাতের মালে খিয়ানাত করা। গনীমাতের সম্পদ বণ্টিত হওয়ার পূর্বে তা চুরি করা হারাম।
যে ব্যক্তিই সংগোপনে কোন কিছুতে বিশ্বাসঘাতকতা করলো বা খিয়ানাত করলো সেই গুলূল করল। ইবনুল ‘আরাবী (রহঃ) বলেনঃ হারাম সম্পদের সদাক্বাহ্ (সাদাকা) প্রত্যাখ্যান এবং শাস্তির যোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে উযূ বা পবিত্রতা ছাড়াই সম্পাদিত সলাতের ন্যায়। অতএব, সলাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সম্পদ পবিত্র হওয়া শর্ত। এ হুকুমটি সকল প্রকার হারাম সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও এখানে গনীমাতের আত্মসাৎকৃত সম্পদের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কারণ এটা হতে পারে যে, গনীমাত সকলের অধিকার সম্বলিত সম্পদ। আর অন্যের অধিকারযুক্ত সম্পদের সদাক্বাই যদি গ্রহণ করা না হয় তাহলে একক অধিকারভুক্ত সম্পদ গৃহীত না হওয়াটাই অধিক যুক্তিসঙ্গত।
৩০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০১
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍٍ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা ছাড়া সলাত এবং হারাম ধন সম্পদের দান-খায়রাত কবূল হয় না। [১]
৩০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০২
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً وَكُنْتُ أَسْتَحْيِي أَنْ أَسْأَلَ النَّبِيَّ ﷺ لِمَكَانِ ابْنَتِه فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ فَسَأَلَه فَقَالَ يَغْسِلُ ذَكَرَه وَيَتَوَضَّأُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার অত্যধিক ‘মাযী’ বের হত। কিন্তু আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যার (ফাত্বিমার) স্বামী, তাই এ ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করতাম। তাই আমি মাসআলাটি জানার জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করতে মিক্বদাদকে বললাম। সে (নাম প্রকাশ ব্যতীত) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ অবস্থায় সে প্রথমে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে ও তারপর উযূ করে নিবে। [১]
مَذِىٌ (মাযী) সম্পর্কে জিজ্ঞেসের কারণ সেটি গোসল আবশ্যককারী নাপাকী কিনা তা জানা। মিক্বদাদ (রাঃ) কারো নাম উল্লেখ ছাড়াই এর হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যা শুধুমাত্র ‘আলীর জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এ বিষয়ে প্রশ্নকারী নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন এ বর্ণনায় মিক্বদাদ (রাঃ)-এর কথা আবার নাসায়ীর বর্ণনায় ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথা এবং ইবনু হিব্বান ও তিরমিযীর বর্ণনায় ‘আলী (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ হয়েছে। ইবনু হিব্বান এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘আলী (রাঃ) প্রথমত আম্মার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করতে বলেন। পরবর্তীতে মিক্বদাদ (রাঃ)-কে বলেন। পরে তিনি নিজেই প্রশ্ন করেন। কিন্তু ইবনু হিব্বান পরক্ষণে উল্লেখ করেন যে, ‘আলী (রাঃ)-এর উক্তি ‘‘আমি লজ্জায় তাঁকে প্রশ্ন করতে পারিনি’’ এটি প্রমাণ করে তিনি স্বয়ং প্রশ্ন করেননি।
قَوْلُهٗ (يَغْسِلُ ذَكَرَةٌ) (মাযী বের হলে সে তার গোপন অঙ্গ ধৌত করবে) যেহেতু মাযী অপবিত্র তাই তা আগে অপসারণ করতে হবে। তারপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু)। গোপনাঙ্গের কতটুকু ধুইতে হবে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সর্বাধিক প্রাধান্যযোগ্য অভিমত হলো মাযী বের হওয়ার স্থানটুকু ধৌত করাই যথেষ্ট, সবটুকু নয়। তবে সাবধানতা অবলম্বনার্থে মাযী ছড়িয়ে পড়া স্থানসমূহ ধৌত করা উত্তম। হাদীসের বাহ্যিক ভাষ্যমতে মাযী বের হলে পানি দ্বারা ধৌত করাই নির্দিষ্ট। হাদীসের শেষাংশ থেকে প্রতীয়মান হয় মাযীতে শুধু উযূই ভঙ্গ হয়। অতএব তাতে গোসল ওয়াজিব হয় না।
৩০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৩
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُولُ تَوَضَّئُوا مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ قَالَ الشَّيْخُ الْإِمَامُ الْأَجَلُّ مُحْيِيُ السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالى هذَا مَنْسُوْخٌ بِحَدِيْثِ ابْنِ عَبَّاسٍ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আগুন দিয়ে পাকানো কোন জিনিস খেলে তোমরা উযূ করে নেবে। [১]
ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের হুকুম ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।
৩০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৪
قَالَ إنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَكَلَ كَتِفَ شَاةٍ ثُمَّ صَلّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর রানের (পাকানো) গোশ্ত খেয়ে সলাত আদায় করলেন কিন্তু উযূ করেননি। [১]
* পূর্ব ও পরবর্তী অধিকাংশ ‘উলামার মতে এটি উযূ ভঙ্গের কোন কারণ নয়।
* আর একদলের মতে আগুনে পাকানো খাবার খেলে শার‘ঈ উযূ করা আবশ্যক। তাদের দলীল আবূ - হুরায়রার এ হাদীসসহ এ বিষয়ে বর্ণিত আরো কতিপয় হাদীস। তবে প্রথম মতাবলম্বীরা বিভিন্নভাবে এ হাদীসের ব্যাখ্যা বা উত্তর দিয়েছেন। যথাঃ
(১) হাদীসে উযূ দ্বারা উদ্দেশ্য মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ধোয়া। তবে তাদের এ কথাটি প্রত্যাখ্যাত। কেননা প্রতিটি শব্দের শার‘ঈ অর্থ অন্য অর্থের উপর প্রাধান্যযোগ্য।
(২) এ হাদীসে ‘আমরটি মুসতাহাব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ওয়াজিব অর্থে নয়। তাদের এ দাবীও প্রত্যাখ্যাত। কেননা ‘আমর-এর আসল অর্থ হলো وجوب বা কোন কিছু আবশ্যক হওয়া।
যখন এ বিষয়ে বর্ণিত পরস্পর বিপরীত হাদীসগুলোর অগ্রাধিকার যোগ্যতা সুস্পষ্ট নয় তখন আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরবর্তী খুলাফায়ি রাশিদ্বীনের ‘আমালের মাধ্যমে একটি দিককে প্রাধান্য দিব। ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ) (شرح المهذب) গ্রন্থে এটিকে সন্তোষজনক অভিমত হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে ইমাম বুখারীর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের ভূমিকায় তিন খলীফাহ্ হতে বর্ণিত আসার নিয়ে আমার রহস্যও উন্মোচিত হয়। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ বিষয়ে সাহাবী তাবি‘ঈদের মাঝের মতবিরোধটা অতি সুপরিচিত। অতঃপর আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য সাব্যস্ত হয়েছে।
(৩) এ হাদীসটি আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
ভাষ্যকার বলেনঃ আমার নিকট তৃতীয় উত্তরটি অধিক শক্তিশালী। কারণ নাসখের দাবীর চেয়ে ঢের উত্তম। আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে আগুনে পাকানো খাদ্যের ব্যাপারে উযূ করার আদেশ প্রদানের রহস্য হলো তারা (মুসলিমরা) অজ্ঞতার যুগে অল্পই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকত। অতঃপর ইসলামে যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি স্বীকৃতি ও ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ করলো, তখন মু’মিনদের প্রতি সহজকরণার্থে সে আদেশ রহিত করা হয়।
আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে শার‘ঈ উযূ আবশ্যক হওয়ার বর্ণনাটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা রহিতকরণের উপর এ বলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, রহিতকরণের দাবি তখনই সঠিক হবে যখন একটি আরেকটির পূর্বে ঘটেছে বলে ইতিহাস থেকে জানা যাবে। এর উত্তরে বলা হয়েছেঃ বায়হাক্বী থেকে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর বর্ণনামতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মক্কা বিজয়ের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচর্যে এসেছেন যা মুহাম্মাদ বিন ‘আমর বিন ‘আত্বা হতে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়। অতএব ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি পরের।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত সহীহ হাদীসটি অধিক সুস্পষ্ট যেখানে বলা হয়েছে كاَنَ أَخِرُ الْاَمْرَيْنِ مِنْ رَّسُوْله وَسَلَّمَِ (অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ ‘আমাল ছিল আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে উযূ না করা)। হাদীসটি সহীহ হলেও কেউ কেউ এটির একটি ত্রুটি বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন, যে চেষ্টাকে মুসনাদে আহমাদে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসটি বাতিল করে দেয়, যেখানে বলা হয়েছে ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে খাওয়া শেষে প্রস্রাব করার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে যুহর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর আবার সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে খেয়ে বিনা উযূতে ‘আসর সলাত আদায় করলেন।’’ এ হাদীস থেকে সুস্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে উযূ করেননি।
৩০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৫
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْغَنَمِ قَالَ إِنْ شِئْتَ فَتَوَضَّأْ وَإِنْ شِئْتَ فَلَا تَتَوَضَّأْ قَالَ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ قَالَ نَعَمْ فَتَوَضَّأْ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ قَالَ أُصَلِّيْ فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَالَ نَعَمْ قَالَ أُصَلِّيْ فِي مَبَارِكِ الْإِبِلِ قَالَ لَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি বকরীর গোশ্ত খেলে উযূ করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে করতে পার, না চাইলে না কর। সে আবার জিজ্ঞেস করল, উটের গোশ্ত খাবার পর কি উযূ করব? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ, উটের গোশ্ত খাবার পর উযূ কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, বকরী থাকার স্থানে কি সলাত আদায় করতে পারি? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পারো। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, উটের বাথানে কি সলাত আদায় করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। [১]
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ছাগলের গোয়ালে সাধারণত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা বৈধ। আর এটিই সঠিক বক্তব্য যদিও ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও শাফি‘ঈ (রহঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেছেন।
উট বসার স্থানে সলাত আদায় করা হারাম। ইমাম আহমাদ এবং ইবনু হাযম এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। আর এটিই সঠিক মত। তবে জমহূরের মতে যদি স্থানে নাজাসাত বা অপবিত্রতা না থাকে তাহলে সলাত আদায় করা মাকরূহ বা অপছন্দীয় আর যদি অপবিত্রতা থাকে তাহলে সলাত আদায় করা হারাম। জমহূরের এ উক্তিটি সঠিক হতো যদি নিষেধের কারণ নাজাসাত বা অপবিত্রতা হতো মূলত যা এখানে উটের পেশাব-পায়খানা কিন্তু এ কথা প্রমাণিত যে, যে সকল প্রাণীর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) হালাল তার পেশাব-পায়খানাও হালাল। যদি উটের পেশাব-পায়খানা নাজাসাত হাওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া হয় তারপরেও সেটিকে নিষেধের কারণ বানানো সঠিক হবে না। কেননা যদি নাজাসাতই কারণ হতো তাহলে উট এবং ছাগলের হুকুম ভিন্ন হতো না যেহেতু উভয়ের পেশাব-পায়খানার হুকুম একই।
মালিকী ও শাফি‘ঈগণের মতে নিষেধের কারণ উটের পলায়ন করার যে স্বভাব রয়েছে তা। কিন্তু এটিই যদি কারণ হতো তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট গোয়ালে উপস্থিত থাকা এবং না থাকার মাঝে পার্থক্য করতেন না, বরং সর্বাবস্থায় যেখানে সলাত আদায় করা হারাম বলতেন চাই তা উপস্থিত থাক আর না থাক। এছাড়াও অনেকে আরও অন্যান্য কারণ উল্লেখ করেছেন যেগুলো বর্ণনা করার পর ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ নিষেধের কারণের ক্ষেত্রে এ মতবিরোধ জানার পর এ কথা স্পষ্ট হলো যে দাবী তাহরীম তথা (কোন কিছু হারাম সাব্যস্ত করা) এর উপর ক্ষান্ত থাকাই হলো সঠিক বক্তব্য, এখানে এর কারণ অন্বেষণের কোন অবকাশ নেই। যেমনটি ইমাম আহমাদ ও দাঊদ যাহিরী বলেছেন। তবে এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাহনকে সুত্রাহ্ (সুতরা) বানিয়ে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার হাদীসটি এর বিপরীত নয়। কারণ তা ছিল সফরে প্রয়োজনীয় অবস্থায়।
৩০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৬
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا وَجَدَ أَحَدُكُمْ فِي بَطْنِه شَيْئًا فَأَشْكَلَ عَلَيْهِ أَخَرَجَ مِنْهُ شَيْءٌ أَمْ لَا فَلَا يَخْرُجَنَّ مِنْ الْمَسْجِدِ حَتّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্য কিছু (বায়ু) শব্দ পায় এবং এরপর তার সন্দেহ হয় যে, তার পেট হতে কিছু (বায়ু) বের হয়েছে কিনা, তাহলে সে যেন (উযূ) নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে মাসজিদ হতে বের না হয়, যে পর্যন্ত সে (বায়ু বের হবার দরুন) কোন শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায়। [১]
এ হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, শারী‘আতের কোন বিষয়ে সন্দেহের মাধ্যমে সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হয়ে যাবে না। অতএব যার সন্দেহ হবে বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা তবে সে তার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে। নিশ্চিত না হাওয়া পর্যন্ত এ সন্দেহ তার কোন ক্ষতি করবে না। আর এটি অন্যান্য বিষয়েও সমভাবে প্রযোজ্য।
৩০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৭
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ إنَّ رَسُوْل اللهِ ﷺ شَرِبَ لَبَنًا فَمَضْمَضَ وَقَالَ إِنَّ لَه دَسَمًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করলেন । অতঃপর কুলি করলেন এবং বললেন, দুধের মধ্যে চর্বি থাকে । [১]
৩০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৮
وَعَنْ بُرَيْدَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ صَلَّى الصَّلَوَاتِ يَوْمَ الْفَتْحِ بِوُضُوءٍ وَاحِدٍ وَمَسَحَ عَلى خُفَّيْهِ فَقَالَ لَه عُمَرُ لَقَدْ صَنَعْتَ الْيَوْمَ شَيْئًا لَمْ تَكُنْ تَصْنَعُه فَقَالَ عَمْدًا صَنَعْتُه يَا عُمَرُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন এক উযূতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করলেন এবং মোজার উপর মাসাহ করলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আজ আপনি এমন কিছু করলেন যা পূর্বে কখনো করেননি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে, ‘উমার! আমি ইচ্ছা করেই এরূপ করেছি। [১]
প্রথমত, সর্বোত্তম হলো প্রতি সলাতের জন্য আলাদা আলাদা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভ্যস্ত ছিলেন।
দ্বিতীয়ত এক উযূ দ্বারা অনেক ফরয এবং নফল সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাও বৈধ, মাকরূহ নয়। তবে প্রস্রাব-পায়খানার চাপ সৃষ্টি করলে তা সম্পূর্ণ করে নতুনভাবে উযূ করে নিবে। আর এটিই অধিকাংশ ‘উলামার অভিমত। তবে এটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী ‘‘যখনই তোমরা সলাত সম্পাদনের ইচ্ছা করবে তখন উযূ কর’’ এর সাথে সংঘর্ষিক মনে হয় যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক সলাতের জন্য উযূ করার আদেশ দিয়েছেন। এর সমাধানকল্পে অনেক মতের সৃষ্টি হয়েছে। জমহূরের মতে আয়াতে অর্থ হলো إذَا قُمْتُمْ إلى الصَّلَاةِ مُحْدِيْثِيْنَ (যখন তোমরা উযূ বিহীনবস্থায় সলাত সম্পাদনের ইচ্ছা করবে) অর্থাৎ- অযু অবস্থায় থাকলে পুনরায় উযূ করতে হবে না।
যদিও আয়াতটি বাহ্যিকভাবে পবিত্র অপবিত্র সকলের উযূ করার বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই জমহূরের মতানুযায়ী আয়াত দ্বারা উযূ বিহীন ব্যক্তির উযূ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। এটিই সঠিক অভিমত। আবার কেউ কেউ বলেনঃ আয়াতে আদেশ দ্বারা উত্তম উদেশ্য। অর্থাৎ- প্রত্যেকের জন্য প্রতিটি সলাতের প্রারম্ভে উযূ করা ভালো। আর উযূহীন ব্যক্তির ওপর উযূ আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। আবার কেউ কেউ বলেন আয়াত দ্বারা সকলের ওপর উযূ আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি শুরুতে কার্যকর থাকলেও পরে তা রহিত হয়েছে।
৩০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩০৯
وَعَنْ سُوَيْدِ بْنِ النُّعْمَانِ أَنَّه خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ عَامَ خَيْبَرَ حَتّى إِذَا كَانُوا بِالصَّهْبَاءِ وَهِيَ أَدْنى خَيْبَرَ فَصَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ دَعَا بِالْأَزْوَادِ فَلَمْ يُؤْتَ اِلَّا بِالسَّوِيْقِ فَأَمَرَ بِه فَثُرِّيَ فَأَكَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأَكَلْنَا ثُمَّ قَامَ إِلَى الْمَغْرِبِ فَمَضْمَضَ وَمَضْمَضْنَا ثُمَّ صَلّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
সুওয়াইদ ইবনু নু‘মান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে খায়বার যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তাঁরা খায়বারের অতি নিকটে ‘সহ্বা’ নামক স্থানে যখন পৌঁছলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আস্রের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর আহার পরিবেশন করতে বললেন, কিন্তু ছাতু ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। তিনি নির্দেশ দিলেন। তাই পানি দিয়ে ছাতু নরম করা হল। এ ছাতু তিনি নিজেও খেলেন আমরাও খেলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সলাতের জন্য দাঁড়ালেন এবং শুধু কুলি করলেন। আর আমরাও কুলি করলাম। এ অবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন, অথচ নতুনভাবে উযূ করলেন না। [১]
৩১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১০
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا وُضُوْءَ اِلَّا مِنْ صَوْتٍ أَوْ رِيحٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (বায়ু নির্গত হবার) শব্দ কিংবা গন্ধ পেলেই কেবল উযূ করতে হবে। [১]
৩১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১১
وَعَنْ عَلِيٍٍّ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ ﷺ عَنِ الْمَذِيِّ فَقَالَ مِنَ الْمَذِيِّ الْوُضُوءُ وَمِنَ الْمَنِيِّ الْغُسْلُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘মাযী’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘মাযীর’ কারণে উযূ আর ‘মানীর’ কারণে গোসল করতে হবে। [১]
৩১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১২
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের চাবি হল ‘উযূ’, আর সলাতের ‘তাহরীম’ হল ‘তাকবীর’ (অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা) এবং তার ‘তাহলীল’ হল (সলাতের শেষে) সালাম ফিরানো। [১]
৩১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৩
ورَوَاهُ ابن مَاجَةَ عنه وَعَنْ وَأَبِي سَعِيدٍ
‘আলী ও আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটিকে ‘আলী ও আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। [১]
৩১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৪
وَعَنْ عَلِيٍّ بْنِ طَلْقٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا فَسَا أَحَدُكُمْ فَلْيَتَوَضَّأْ وَلَا تَأْتُوا النِّسَاءَ فِي أَعْجَازِهِنَّ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُوْ دَاوٗدَ
আলী ইবনু ত্বলক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারও যখন বায়ু বের হয়, তখন সে যেন আবার উযূ করে নেয়। আর তোমরা নারীদের গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করবে না। [১]
৩১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৫
وَعَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ إِنَّمَا الْعَيْنَانِ وِكَاءُ السَّهِ فَإِذَا نَامَتْ الْعَيْنُ اسْتَطْلَقَ الْوِكَاءُ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
মু‘আবিয়াহ্ ইবনু আবী সুফ্ইয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চোখ দু’টো হল গুহ্যদ্বারের ফিতা-বন্ধন স্বরূপ। সুতরাং চোখ যখন ঘুমায় ফিতা (ঢাকনা) তখন খুলে যায়। [১]
৩১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৬
وَعَنْ عَلِيٍّ رَّضِىَ الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وِِكَاءُ السَّهِِ الْعَيْنَانِِ فَمَنْ نَامَ فَلْيَتَوَضَّأْ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَقَالَ الشَّيْخُ الْإمَامُ مُحْيِيُ السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللهُ هذَا فِيْ غَيْرِ الْقَاعِدِ لِمَا صَحَّ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুহ্যদ্বারের ফিতা বা ঢাকনা হল চক্ষুদ্বয়। তাই যে ব্যক্তি ঘুমাবে সে যেন উযূ করে। [১]
৩১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৭
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِِ ﷺ يَنْتَظِرُوْنَ الْعِشَاءَ حَتّى تَخْفِقَ رَءُوْسُهُمْ ثُمَّ يَصَلُّوْنَ وَلَا يَتَوَضَّأُوْنَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ اِلَّا أَنَّهٗ ذَكَرَ فِيْهِ يَنَامُوْنَ بَدَلَ يَنْتَظِرُوْنَ الْعِشَاءَ حَتّى تَخْفِقَ رُؤُوْسُهُمْ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সহাবীগণ ‘ইশার সলাতের জন্যে বসে অপেক্ষা করতেন। এমনকি ঘুমের আমেজে তাদের মাথা নীচের দিকে ঝুঁকে পড়তো। এরপর তারা সলাত আদায় করতেন, অথচ নতুন উযূ করতেন না। [১] তবে ইমাম তিরমিযী ‘ইশার সলাতের অপেক্ষায় বসে থাকতেন”-এর জায়গায় “ঘুম যেতেন” শব্দ উল্লেখ করেছেন।
৩১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ الْوُضُوءَ لَا يَجِبُ اِلَّا عَلى مَنْ نَامَ مُضْطَجِعًا فَإِنَّه إِذَا اضْطَجَعَ اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ أَبُوْ دَاوٗدَ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই উযূ সে ব্যক্তির জন্যে ওয়াজিব যে কাত হয়ে ঘুমায়। কারণ কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। [১]
১ম অভিমতঃ সর্বাস্থায় ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে, চাই ঘুম কম হোক বা বেশি হোক।
২য় অভিমতঃ কোন অবস্থাতেই ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হবে না।
৩য় অভিমতঃ হালকা এবং গভীর ঘুমের মাঝে পার্থক্যকরণ। (অর্থাৎ- হালকা ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হবে না আর গভীর ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গ হবে।) এটি প্রধান সহাবা (সাহাবা), তাবি‘ঈ ফুকহায়ূল ইমাম চতুষ্টয়ের অভিমত। আর এটি সঠিক অভিমত। অতএব, শুধুমাত্র ঘুমই উযূ ভঙ্গের কারণ নয় বরং এজন্য যে, ঘুম বায়ুর নিগর্মন নিয়ন্ত্রণকারী বা রোধকারী গ্রন্থীসমূহ শিথিল হওয়াই কারণ।
৩য় মতাবলম্বীরা আবার ঘুম কম বেশির পরিমাণ বর্ণনা, উযূ ভঙ্গের ক্ষেত্রে বিবেচিত বা গ্রহণযোগ্য ঘুম নির্ধারণ এবং সেই ঘুমের পরিমাণ নির্দিষ্টকরণে অনেক মতবিরোধ করেছেন যা গ্রন্থিসমূহ শিথিল হওয়ার কারণ এবং অনুভূতি চেতনা লোপ হওয়ার কারণ।
ভাষ্যকার ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, আমার নিকট প্রাধান্যযোগ্য মত হলো যে ঘুমের মাধ্যমে চেতনা লোপ পায়, সেই গভীর ঘুমই উযূ ভঙ্গের কারণ, চাই তা যে ধরনের ঘুমই হোক না কেন। তাই চেতনা লোপ পাওয়াটাই আমার নিকট ঘুমের মাধ্যমে উযূ ভঙ্গের শর্ত। অতএব, যখন চেতনা বা অনুভূতি লোপ পায় তখন ঘুমন্ত ব্যক্তি যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন তার উযূ ভেঙ্গে যাবে। আর হুকুমটি শুধুমাত্র গা এলিয়ে শায়িত ব্যক্তির সাথে সীমিত নয় যেমনটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি প্রমাণ করে। কারণ এ হাদীসটি য‘ঈফ। আর শায়িত ব্যক্তির হালকা ঘুমের মাধ্যমে তার উযূ বাতিল হবে না।
৩১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩১৯
وَعَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ بْنِ نَوْفِلٍ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا مَسَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَه فَلْيَتَوَضَّأْ. رَوَاهُ مَالِك وأَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ وَاِبْنُ مَاجَةَ وَالدَّارِمِيُّ
বুসরাহ্ বিনতু সফ্ওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে উযূ করতে হবে । [১]
কোন ব্যক্তি (পুরুষ) স্বহস্তে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করা তা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ হবে। এখানে স্পর্শ দ্বারা উদ্দেশ্য হাতের তালুর উপর বা নিম্নভাগ দ্বারা কোন প্রকার আবরণ ছাড়াই স্পর্শ করা। আর এটিই সহাবা (সাহাবা) ও তাবি‘ঈগণের একটি দল, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর প্রসিদ্ধ অভিমত।
অনুরূপভাবে কোন মহিলা যদি হাতের তালুর উপরিভাগ বা নিম্নভাগ দ্বারা স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে তারও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাতিল হযে যাবে। যা মুসনাদে আহমাদ ও বায়হাক্বীতে ‘আমর বিন শু‘আয়ব কর্তৃক তার পিতা, তার দাদা থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَيُّمَا رَجُلٍ مَسَّ فَرْجَهُ فَلْيَتَوَضَّأَ، وَأَيَّمَا اِمْرَأَةً مَسَّتْ فَرْجَهَا فَلْتَتَوَضَّأَ (অর্থাৎ- কোন পুরুষ তার লজ্জাস্থান কোন আবরণ) ছাড়া স্পর্শ করবে সে যেন উযূ করে। আর কোন মহিলা কোন আবরণ ছাড়া স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সেও যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। ইমাম তিরমিযী اَلْعِلَلُ (আল ‘ইলাল) গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে এ হাদীসটি সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। আর এ হাদীসটি এই বিষয়ে মহিলা পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য না থাকার স্পষ্ট প্রমাণ।
৩২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২০
وَعَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنْ مَسِّ الرَّجُلِ ذَكَرَه بَعْدَ مَا يَتَوَضَّاُ قَالَ وَهَلْ هُوَ اِلَّا مُضْغَةٌ مِنْهُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ وَرَوَى اِبْنُ مَاجَةَ نَحْوَه وَقَالَ الشَّيْخُ اِلامَامُ مُحْيِي السُّنَّةُ هذَا مَّنْسُوْخٌ لاَنَّ اَبَا هُرَيْرَةَ اَسْلَمَ بَعْدَ قُدُوْمِ طَلْقٍ
ত্বলক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, উযূ করার পর কেউ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে এর হুকুম কী? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেটা তো মানুষের শরীরেরই একটা অংশবিশেষ। [১]
ইমাম মুহ্য়িয়ূস সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসটি মানসূখ (রহিত)। কেননা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ত্বল্ক্ব-এর মাদীনাহ্ আগমনের পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
(১) তারা বলেন যে, বুসরাহ্ বিনতু সফ্ওয়ান-এর হাদীসটি মারওয়ান থেকে ‘উরওয়াহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত, আর মারওয়ান তার অপকর্মের কারণে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। অথবা হাদীসটি মারওয়ান-এর দেহরক্ষী থেকে ‘উরওয়াহ্-এর সূত্রে বর্ণিত যে, একজন অপরিচিত রাবী। (অতএব হাদীসটি সহীহ নয়)
‘উরওয়ার উক্তির মাধ্যমেই এর উত্তর দেয়া যায়, তিনি বলেনঃ ‘‘মারওয়ানকে হাদীস বর্ণনায় অভিযুক্ত করা হতো না।’’ এছাড়াও তার থেকে সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম মালিক তাঁর হাদীসের উপর আস্থা রেখেছেন। ইমাম বুখারীও তাঁর সহীহ গ্রন্থে হাদীস নিয়ে এসেছেন। আর ‘উরওয়াহ্ তার থেকে এ হাদীসটি তার অপকর্ম এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশের পূর্বে গ্রহণ করেছেন। ইবনু হাযম (রাহঃ) বলেনঃ ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরোধিতা করার পূর্বে মারওয়ান-এর কোন ত্রুটি আমরা জানি না। আর সে সময়েই তার সাথে ‘উরওয়ার সাক্ষাৎ ঘটেছে।
অপরদিকে এটিও প্রমাণিত যে, ‘উরওয়াহ্ বুসরাহ্ থেকে কারো মাধ্যম ছাড়াই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যা ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান, হাকিমসহ আরও অনেক মুহাদ্দিস নিশ্চিত করে বলেছেন। আর বুসরার হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম তাদের উভয়ের গ্রন্থে সংকলন না করায় এটা প্রমাণিত হয় না যে, ‘উরওয়াহ্ বুসরাহ্ থেকে হাদীসটি শ্রবণ করেননি। কারণ তাদের শর্তানুপাতে অনেক সহীহ হাদীসই তারা তাদের কিতাবে সংকলন করেননি। উপরন্তু ‘আলী ইবনুল মাদীনী ইয়াহ্ইয়া ইবনু মা‘ঈন-এর সাথে তর্কে ইয়াহ্ইয়া এর উক্তি (ثُمَّ لَمْ يَقْنَعُ ذلِكَ عُرْوَةً حَتّى أَتى بُسْرَةَ نَسْأَلُهَا وَشَافَهْتُهُ بِالْحَدِيْثِ) (অর্থাৎ- ‘উরওয়াহ্ মারওয়ান থেকে হাদীসটি বর্ণনা করে সন্তুষ্ট হতে না পেরে সরাসরি বুসরার কাছে এসে এ হাদীস সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে তিনি [বুসরাহ্] তাকে তা মুখে মুখে বর্ণনা করেন) এর প্রতিউত্তর করেননি বা খণ্ডন করেননি। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-ও হাদীসটি এ সানাদে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সঠিক বলেছেন। অতএব, উক্ত ইমামের নিকট ‘উরওয়ার হাদীসটি বুসরাহ্ থেকে সরাসরি শ্রবণের বিষয়টি প্রমাণিত। এজন্যই আহমাদ এবং ইবনু মা‘ঈন বুসরার হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (তাই তাদের এ দাবীটি একেবারে ভিত্তিহীন)
(২) তারা বলেনঃ বুসরার হাদীসের সানাদটি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। কারণ কিছু রাবী তা বুসরাহ্ থেকে মারওয়ান-এর মাধ্যমে ‘উরওয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছে, আবার কেউ কেউ বুসরাহ্ থেকে কারো মাধ্যমে ছাড়াই ‘উরওয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছে। (অতএব, হাদীসটি সহীহ নয়)
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) বর্ণনাকারীদের এ ভিন্নতাটি সে পর্যায়ের কোন ত্রুটি নয় যার মাধ্যমে হাদীসটি য‘ঈফ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। কারণ ‘উরওয়াহ্ হাদীসটি প্রথমত মারওয়ান-এর মাধ্যমে বুসরাহ্ হতে শ্রবণ করেছেন। অতঃপর বুসরার নিকট এসে সরাসরি তার মুখ থেকে কোন মাধ্যম ছাড়াই তা শুনেছেন এবং তাদের কাছ থেকে অন্যরা হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে কখনো মারওয়ান-এর মাধ্যমে বুসরাহ্ থেকে ‘উরওয়ার সূত্রে আবার কখনো মারওয়ান-এর মাধ্যম ছাড়াই বুসরাহ্ থেকে সরাসরি ‘উরওয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছেন আর এটি সে ধরনের কোন ভিন্নতা বা বৈপরীত্য নয় যা হাদীসের বিশুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। (তাই তাদের এ দাবীও ভিত্তিহীন)
(৩) তারা বলেনঃ এ হাদীসের রাবী হিশাম তার পিতা থেকে হাদীসটি শ্রবণ করেননি যা ত্ববারানীর বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। (অতএব হাদীসের সানাদে বিছিন্নতা থাকায় তা য‘ঈফ)
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) নিশ্চয় মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী এবং হাকিম-এর বর্ণনাটি এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন যে, হিশাম হাদীসটি তার পিতা থেকে শ্রবণ করেছেন। আর যদি এ ত্রুটিটি সঠিকও হয়ে থাকে তারপরেও তা এ হাদীসের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ হিশাম ছাড়াও ‘আবদুল্লাহ বিন আবূ বাকর, তার পিতা আবূ বাকর-এর মতো বিশ্বস্ত রাবীগণ হাদীসটি ‘উরওয়াহ্ থেকে সরাসরি শ্রবণ করে বর্ণনা করেছেন। যা মুয়াত্ত্বা মালিক, মুসনাদে আহমাদ এবং ইবনু জারূদ-এর বর্ণনা প্রমাণ করে। (অতএব তাদের এ দাবীটিও ভিত্তিহীন)
(৪) তারা বলেনঃ হাদীসটি মহিলা সাহাবী থেকে বর্ণিত অথচ বিধান পুরুষ সম্পর্কিত। অতএব, কিভাবে তা কেবলমাত্র মহিলারাই বর্ণনা করতে পারে? (তাই তা সঠিক নয়, নইলে পুরুষেরাও বর্ণনা করত)।
(আমরা তাদের প্রতিউত্তরে বলব) এর বিষয়ের হাদীস শুধুমাত্র মহিলারাই বর্ণনা করেননি বরং তা পুরুষেরাও বর্ণনা করেছেন। যেমনটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত পরবর্তী হাদীসটি।
(৫) তারা বলেনঃ যে মাস্আলাহ্ কষ্টকে অন্তর্ভুক্ত করে সে ধরনের মাস্আলার ক্ষেত্রে খবরে ওয়াহিদ গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশেষত এ ধরনের খবর।
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) সহীহ হাদীসসমূহকে প্রত্যাখ্যানের উদ্দেশে হানাফীগণ কর্তৃক উদ্ভাবিত এ নিয়মটি অবান্তর, বাতিল। যা ইমাম শাওকানী أِرْشَادُ الفُحُوْلِ আর ইবনু হাযম তাঁর الاَحْكَامُ فِى أُصُولِ الاَحْكَامَ এবং ইবনু কুদামাহ্ তাঁর جَنَّةُ الْمَنَاظِرِ গ্রন্থে বাতিল ঘোষণা করেছেন। আর যদিও এ নিয়মটি মেনে নেয়া হয় তারপরেও তা এ হাদীসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ এ হাদীসটি খবরে ওয়াহিদ পর্যায়ের নয় বরং তা নাবীয (খেজুর ভেজানো পানি) দ্বারা উযূর হাদীসের চেয়েও প্রসিদ্ধ এবং তা সতেরজন সহাবা (সাহাবা) কর্তৃক বর্ণিত।
(৬) তারা বলেনঃ হাদীসটির বিশুদ্ধতা মেনে নেয়া হলেও তাতে এ বিষয়ে কোন দলীল নেই। কারণ সকলের নিকট সর্বসম্মতিক্রমে তা বাহ্যিকভাবে বর্জিত। কেননা لَمْسٌ শব্দের আভিধানিক অর্থ সাধারণ স্পর্শ। আর তারা এটিকে কামভাবের সাথে বা হাতের নিম্নভাগ দ্বারা বা কোন আবরণ ছাড়া সহ আরও যেসব শর্ত দ্বারা করেছে তা এ হাদীসের মুতলাক্ব অর্থের সীমাবদ্ধকরণ আর এটাও সুস্পষ্ট যে, তারা হাদীসের কথা বলে না।
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) নিশ্চয় স্পর্শ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হাত দ্বারা স্পর্শ করা চাই তা হাতের উপরিভাগ হোক বা নিম্নভাগ। কিন্তু তা আবরণ ছাড়াই হতে হবে যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীসটি প্রমাণ করে। আর একটি বর্ণনা অন্য একটি বর্ণনার ব্যাখ্যাস্বরূপ। অতএব আমরা এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসের কথাই বলছি এবং তার উপরই ‘আমাল করছি। কিন্তু অন্যান্য যে সকল শর্তের কথা ফুকাহায়ে শাফি‘ঈসহ অন্যরা বলেছেন আমরা সেদিকে দৃষ্টিপাত করবো না। কেননা হাদীসের সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই।
(৭) তারা বলেনঃ বুসরার হাদীস প্রমাণে বা সত্যায়নে বিনা আবরণে (লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা) উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার পক্ষের প্রবক্তারা অনেকগুলো মত এবং বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন যার সংখ্যা প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি যা ইবনুল ‘আরাবী তিরমিযীর শারাহতে বর্ণনা করেছেন। একটি বর্ণনার প্রমাণে তাদের মতবিরোধটি এর দলীল গ্রহণে সন্দেহের জন্ম দেয় যা প্রমাণ করে যে, তা তাদের নিকটই প্রমাণিত নয় এবং হাদীসের প্রয়োগের ক্ষেত্রটি নির্দিষ্ট নয়। অতএব, যদি হাদীসটি সহীহ হয় এবং ত্বলক্ব-এর হাদীসের উপর তার অগ্রাধিকার পাওয়াটি প্রমাণিত হয় তাহলে হাদীসটি মুজমাল হওয়াটাও সহীহ যার উদ্দেশ্য এর প্রবক্তাদের নিকট স্পর্শ হয়নি। পক্ষান্তরে লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা উযূ ভাঙ্গার বিপক্ষের প্রবক্তাদের মাঝে তা নিয়ে কোন মতবিরোধ নেই। (তাই তাদের মতটি গ্রহণযোগ্য নয়)
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) নিশ্চয়ই হাদীসের অর্থ স্পষ্ট, তার প্রমাণ বা সত্যায়নও প্রকাশিত ও এর প্রয়োগের ক্ষেত্রটিও সুনির্দিষ্ট। কিন্তু এটি সুন্নাহ দরদী লেখকদের নিকটে। আর প্রতিষ্ঠিত ও সহীহ হাদীসগুলো প্রত্যাখ্যানের জন্য কৌশল অবলম্বনকারী স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিরাই সর্বদা এই ধরনের ভিত্তিহীন বাতিল গাদ্দারীতে লেগে থাকে। এছাড়া মালিকী, শাফি‘ঈ সহ অন্যরা হাদীসের অর্থ বর্ণনায় যে মতবিরোধ করেছেন- আমাদের নিকট তা ধর্তব্য নয়। অতএব হাদীসটির অর্থ সুস্পষ্ট, যা মুজমাল নয়।
(৮) তারা বলেনঃ লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা প্রসবের পরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জনের দিকে ইঙ্গিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অধিকাংশ সময় প্রস্রাবের পরে অপবিত্রতা বের হয়ে থাকে। ফলে লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা এটি বর্ণনা করা হয়েছে আর যেসব ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করাটা খারাপ মনে হয় সেসব ক্ষেত্রে এই ধরনের ইঙ্গিতমূলক উল্লেখ করা রয়েছে।
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) প্রথমত নিশ্চয়ই এ সম্ভাবনাটি অনেক দূরবর্তী বরং তা বাতিল, যাকে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীসটি প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিতীয়ত সহাবা (সাহাবা), তাবি‘ঈসহ সালফে সলিহীনদের কারো মনে এ সম্ভাবনার উদয় ঘটেনি এবং তাদের কেউ এ কথা বলেননি বরং তাদের সকলেই একে তার বাহ্যিক অর্থেই বুঝেছেন যেদিকে ব্রেন দ্রুত ধাবিত হয়।
(৯) তারা বলেনঃ হাদীসটি সেই সময়ের শর্তযুক্ত যখন লজ্জাস্থান থেকে কোন কিছু বের হয়।
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) এই শর্তারোপের উপর কোন প্রমাণ নেই। অতএব, তা প্রত্যাখ্যাত।
(১০) তারা বলেনঃ হাদীসে مَسٌّ ক্রিয়ার কর্মটি লুক্বায়িত রয়েছে যা উল্লেখ করাটা খারাপ মনে করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাদীসের অর্থ হলোঃ مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ بِفَرْجِ اِمْرَأتِه فَلْيَتَوَضَأَ (অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থানকে স্বীয় স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গের সাথে স্পর্শ করাবে সে যেন উযূ করে)
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) এটি হাদীসের বিকৃতি করা যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি প্রত্যাখ্যান করেছে। যেখানে বলা হয়েছে اَنْضى بِيَدِه (তার হাত নিয়ে যায় লজ্জাস্থানের কাছে)।
তাদের কেউ কেউ বলেনঃ বুসরার হাদীসের অর্থের দাবী অনুপাতে রাবী হাদীসটি রিওয়ায়াত বিল মা‘না করেছেন।
(তাদের প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি রিওয়ায়াত বিল মা‘না হওয়ার দাবী করাটা মাযহাবের পক্ষপাতিত্বকরণ মস্তিষ্ক এবং শ্রবণশক্তি যাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কারণ বিষয়টি যদি এমনই হয় তাহলে হাদীসের বর্ণনাসমূহের বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা, নিশ্চয়তা সব উঠে যাবে।
তাদের কেউ কেউ আবার বলেনঃ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি এভাবে তা‘বিল করা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তি নিজ হাত দ্বারা লজ্জাস্থানকে স্ত্রীর লজ্জাস্থানে পৌঁছাবে সে যেন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। কারণ إنضاء ক্রিয়াটি কর্ম দাবী করে আর হাততো কেবলমাত্র একটি উপকরণ বা অস্ত্র। তাই পরবর্তীটুকু এর কর্ম।
এটি মূলত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের সাথে কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয় যার উত্তর দানের প্রয়োজন নেই। কারণ এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের চূড়ান্ত বিকৃতকরণ।
তারা আরও বলেনঃ বুসরার হাদীসের ‘আমর বা নির্দেশ দ্বারা মুসতাহাব উদ্দেশ্য।
(তাদের প্রতিউত্তরে আমরা বলব) প্রথমত ‘আমর-এর মূল অর্থ হচ্ছে ওয়াজিব হওয়া। দ্বিতীয়ত মুসনাদে আহমাদ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটিও এ কথা প্রত্যাখ্যান করছে যেখানে বলা হয়েছেঃ (مَنْ أَنْضَى بِيَدِه إِلى ذَكَرَهُ لَيْسَ دَوْنَه سَتْرٌ فَقَدْ وَجَبَ عَلَيْهِ الْوَضُوْءَ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি কোন আবরণ ছাড়াই নিজ হাতকে লজ্জাস্থানের কাছে নিয়ে গিয়ে তা স্পর্শ করলো তার ওপর উযূ ওয়াজিব হয়ে গেল। তৃতীয়ত দারাকুত্বনীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিও তাদের এ দাবীকে প্রত্যাখ্যান করছে যেখানে বলা হয়েছে (وَيْلُ لِّلَّذِيْنَ يَمَسُّوْنَ فُرُوْجَهُمْ وَلَا يَتَوَضُّوْنَ) অর্থাৎ- ‘যারা নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করে উযূ করে না তাদের জন্য দুর্ভোগ’। আর অকল্যাণ শুধুমাত্র ওয়াজিব পরিত্যাগ করার ফলে হয়ে থাকে।
আর প্রাধান্যযোগ্য কথা হলো ত্বলক্ব-এর এ হাদীসটি হাসান স্তরের হলেও বুসরার হাদীসটি তার চেয়ে কয়েক কারণে অধিক সহীহ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। প্রথমত ত্বলক্ব-এর হাদীসের কোন রাবী দ্বারা বুখারী মুসলিম দলীল পেশ করেননি। পক্ষান্তরে বুসরার হাদীসের সকল রাবী দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। দ্বিতীয়ত বুসরার হাদীসের অনেকগুলো সানাদ ও শাহিদ বর্ণনা থাকার সাথে সাথে একে সহীহ হিসেবে আখ্যায়িতকারী মুহাদ্দিসের সংখ্যাও অধিক। আঠারজনের মতো সাহাবী বুসরার হাদীসের অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন যাদের মধ্যে ত্বলক্ব বিন ‘আলী (রাঃ) অন্যতম। তৃতীয়ত বুসরাহ্ (রাঃ) হাদীসটি মুহাজির আনসারপূর্ণ তাদের কেন্দ্রে বর্ণনা করলেও কেউ তার বিরোধিতা করেননি বরং কেউ কেউ একে সমর্থন করেছেন। [অতএব, বুসরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি ত্বলক্ব-এর হাদীসের উপর অগ্রাধিকার যোগ্য।]
৩২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২১
وَّقَدْ رَوى أَبُوْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِِ اللهِِ ﷺ قَالَ إِذَا اَفْضى أَحَدُكُمْ بِيَدِه اِلى ذَكَرِه لَيْسَ بَيْنَه وَبَيْنَهَا شَىْءٌ فَلْيَتَوَضَّا. رَوَاهُ الشَّافِعِىُّ وَالدَّارَ قُطْنِيْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের কারো হাত নিজের পুরুষাঙ্গের উপর লাগলে এবং হাত ও পুরুষাঙ্গের মধ্যে কোন আবরণ না থাকলে তাকে উযূ করতে হবে”। [১]
৩২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২২
وَرَاهُ النَّسَائِـيُِّ عَنْ بُسْرَةَ اِلَّا اَنَّه لَمْ يَذْكُرْ لَيْسَ بَيْنَه وَبَيْنَهَا شَىْءٌ
বুসরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাসায়ী (রহঃ) বুসরাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি “হাত ও পুরুষাঙ্গের মধ্যে কোন আবরণ নেই”-এ শব্দগুলো বর্ণনা করেননি। [১]
আর ইবনু হাযম-এর المخلى গ্রন্থে বলেছেন, ত্বলক্ব-এর হাদীসটি সহীহ। তবে এতে তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। আর তা কয়েকটি কারণে যথা- প্রথমত এ হাদীসটি লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা উযূর নির্দেশ আসার পূর্বে মানুষেরা যে বিধানে ছিল তার উপযোগী। আর এ বিষয়টিতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। যখন হাদীসটির অবস্থা এরূপ তখন লজ্জাস্থান স্পর্শ দ্বারা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশের সাথে সাথে হুকুমটি নিশ্চিতভাবেই মানসূখ হয়ে গেছে। আর যার মানসূখ হওযা সুনিশ্চিত তা গ্রহণ করে নাসেককে পরিত্যাগ করা আদৌ ঠিক নয়।
ভাষ্যকার বলেনঃ আমাদের নিকট ত্বলক্ব-এর হাদীসের উপর বুসরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসকে প্রাধান্য দেয়ার মতটি মানসূখ বা য‘ঈফ বলার চেয়ে উত্তম।
৩২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৩
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيَّ ﷺ يُقَبِّلُ بَعْضَ أَزْوَاجِه ثُمَّ يُصَلِّىْ وَلَا يَتَوَضَّأُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَاِبْنُ مَاجَةَ وَقَالَ النِّزْمِذِىْ لَا يَصِحَّ عِنْدَ أَصْحَابِنَا بِحَالٍ إِسْنَادُ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَأَيْضًا إِسْنَادُ إِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِىِّ عَنْهَا
وَقَالَ أَبُوْ دَاوٗدَ هذَا مُرْسَلٌ وَّاِبْرَاهِيْمُ التَّيْمِىُّ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ عَائِشَةَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন স্ত্রীকে চুমু দিতেন, এরপর সলাত আদায় করতেন, অথচ উযূ করতেন না। [১]
ইমাম তিরমিযী বলেছেন, আমাদের হাদীসবেত্তাদের মতে কোন অবস্থাতেই ‘উরওয়ার সানাদ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে, এমনকি ইবরাহীম আত্ তায়মী (রহঃ)-এর সানাদও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে সহীহ হতে পারে না।
আবূ দাউদ বলেছেন, এ হাদীসটি মুরসাল। কারণ ইবরাহীম আত্ তায়মী (রহঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে শুনেননি।
* তন্মধ্যে প্রথমটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ
كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَىْ رَسُوْل اللهِ ﷺ وَرِجْلَاىَّ فِىْ قِبْلَتِه فَإِذَا سَجَدَ عَمَرَنِىْ فَقَبَضْتُ رِجْدَىَ – الحديث
অর্থাৎ- আমি (সলাতরত অবস্থায়) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে থাকতাম আর আমার পদদ্বয় তাঁর ক্বিবলার দিকে থাকত। ফলে যখন তিনি সিজদায় যেতেন তখন আমায় গুতো মারলে আমি পদদ্বয় গুটিয়ে নিতাম।
তবে ইবনু হাজার (রহঃ) ফাতহুল বারীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীসের ব্যাপারে তা পর্দার আড়ালে হওয়া বা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকার মর্মে যে অজুহাত পেশ করেছেন তা শুধু শুধু কষ্ট করা এবং বাহ্যিকের বিপরীত। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খাস হওয়ার বিষয়টি দলীল ছাড়া সাব্যস্ত হবে না। আর আবরণ বা পর্দার অন্তরালে হওয়ার বিষয়টি কেবলমাত্র ইমামের পক্ষপাতিত্বকারী ব্যক্তিই কল্পনা করতে পারে।
২য়টি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে নাসায়ীতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেনঃ
إِنَّ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَيُصَلِّىْ، وَإِنِّىْ لَمُعْتَرِضَةٌ بَيْنَ يَدَيْهِ اِعْتَرَاضِ الْجَنَازَةِ، حَتّى إِذَا أَرَادَ أَنْ يُوْتَرَ مَسَّنِىَ بِرِجْلِه.
অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আমি তার সামনে জানাযার মতো লম্বা হয়ে পড়ে থাকতাম। অতঃপর যখন তিনি বিজোড় করার (সাজদাহ্) ইচ্ছা করতেন তখন আমাকে পা দ্বারা ইঙ্গিত বা স্পর্শ করতেন।
তৃতীয়তঃ
فَقَّدْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لَيْلَةً مِّنَ الْفِرَاشِ فَالْتَمَسَتْهُ، فَوَضَعْتُ يَدَىَّ عَلى قَدَمَيْهِ وَهُوَ فِى الْمَسْجِدِ وَهُمَا مَنْصُوْبَتَانِ- الحديث
অর্থাৎ- আমি একরাত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিছানা থেকে হারিয়ে ফেললাম। পরে তাঁকে খুঁজতে গিয়ে তার খাড়া পদদ্বয়ের উপরিভাগে আমার হাত পড়লো। এমতাবস্থায় তিনি মাসজিদে অবস্থান করছেন।
৩২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৪
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَكَلَ رَسُوْل اللهِ ﷺ كَتِفًا ثُمَّ مَسَحَ يَدَه بِمِسْحٍ كَانَ تَحْتَه ثُمَّ قَامَ فَصَلّى. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَاِبْنُ مَاجَةَ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেড়ার বাজুর গোশ্ত খেলেন, তারপর আপন হাতকে আপন পায়ের তলায় ঘষে মুছে নিলেন, অতঃপর সলাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলেন, অথচ (নতুন করে) উযূ করলেন না। [১]
* আগুন দ্বারা পাকানো খাদ্য খেলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ হবে না।
* খাওয়ার পরে হাত ধৌত করা ওয়াজিব নয় বরং তা মুছে নিলেই যথেষ্ট হবে।
৩২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৫
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّهَا قَالَتْ قَرَّبْتُ إِلَى النَّبِيَّ ﷺ جَنْبًا مَشْوِيًّا فَأَكَلَ مِنْهُ ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট পাঁজরের ভুনা গোশ্ত পেশ করলাম। তিনি তা থেকে কিছু খেলেন, তারপর সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন, নতুন করে উযূ করেননি। [১]
(وَلَمْ يَتَوَضَّأْ) অর্থাৎ- তিনি ঐ গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) খাওয়ার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) না করেই সলাতে দাঁড়ালেন।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, আগুন দ্বারা পাকানো কোন কিছু খেলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ হয় না।
৩২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৬
عَنْ أَبِي رَافِعٍ قَالَ أَشْهَدُ لَقَدْ كُنْتُ أَشْوِي لِرَسُولِ اللهِ ﷺ بَطْنَ الشَّاةِ ثُمَّ صَلّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ রাফি‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বকরীর পেটের গোশ্ত (কলিজা প্রভৃতি) ভুনা করে দিতাম (তিনি তা খেতেন)। এরপর তিনি সলাত আদায় করতেন, কোন উযূ করতেন না। [১]
৩২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৭
وَعَنْهُ قَالَ أُهْدِيَتْ لَه شَاةٌ فَجَعَلَهَا فِي الْقِدْرِ فَدَخَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَقَالَ مَا هذَا يَا أَبَا رَافِعٍ فَقَالَ شَاةٌ أُهْدِيَتْ لَنَا يَا رَسُولَ اللهِ فَطَبَخْتُهَا فِي الْقِدْرِ قَالَ نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ يَا أَبَا رَافِعٍ؟ فَنَاوَلْتُهُ الذِّرَاعَ ثُمَّ قَالَ نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ الْاۤخَرَ فَنَاوَلْتُهُ الذِّرَاعَ الْاخَرَ ثُمَّ قَالَ نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ الْاخَرَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّمَا لِلشَّاةِ ذِرَاعَانِ فَقَالَ لَه رَسُولُ اللهِ ﷺ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَكَتَّ لَنَاوَلْتَنِىْ ذِرَاعًا فَذِرَاعًا مَا سَكَتَّ ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ فَتَمَضْمَضَ فَاهُ وَغَسَلَ أَطْرَافَ أَصَابِعِه ثُمَّ قَامَ فَصَلّى ثُمَّ عَادَ إِلَيْهِمْ فَوَجَدَ عِنْدَهُمْ لَحْمًا بَارِدًا فَأَكَلَ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَصَلّى وَلَمْ يَمُسَّ مَاءً. رَوَاهُ أَحْمَدُ
আবূ রাফি‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাকে একটি বকরী হাদিয়্যাহ্ দেয়া হল এবং তিনি তা পাতিলে রান্না করলেন। এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-তার কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, এটা কী, হে আবূ রাফি’? তিনি বললেন, আমাদেরকে একটি বকরী হাদিয়্যাহ্ হিসেবে দেয়া হয়েছে, হে আল্লাহর রসূল! পাতিলে তা পাক করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ রাফি’! আমাকে এর একটি বাজু দাও তো। আমি তাঁকে একটি বাজু দিলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে আরো একটি বাজু দাও। অতঃপর আমি তাঁকে আরো একটি বাজু দিলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, আমাকে আরো একটি বাজু দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ রসূল! একটি বকরীর তো দু’টি বাজু হয়। এটা শুনে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আহ! তুমি যদি চুপ থাকতে, তাহলে ‘বাজুর পর বাজু আমাকে দিতে পারতে, যে পর্যন্ত তুমি নিশ্চুপ থাকতে। এরপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুলি করলেন, নিজের আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে নিলেন, অতঃপর সলাতে দাঁড়ালেন এবং সলাত আদায় করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার তাদের কাছে ফিরে এলেন। এবার তাদের কাছে ঠান্ডা গোশ্ত দেখতে পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খেলেন, এরপর মাসজিদে প্রবেশ করলেন এবং সলাত আদায় করলেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি ব্যবহার করলেন না অর্থাৎ উযূ করলেন না। [১]
৩২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৮
ورَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنْ أَبِيْ عُبَيْدٍ اِلَّا أَنَّه لَمْ يَذْكُرْ ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ إِلى اخِرِه
আবূ ‘উবায়দ থেকে বর্ণিতঃ
দারিমী আবূ ‘উবায়দ হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু দারিমী ‘অতঃপর তিনি পানি চাইলেন হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেননি। [১]
* রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহু বা রানের গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) পছন্দ করতেন।
* তা দ্রুত সিদ্ধ হয় এবং অধিক সুস্বাদু।
আবূ রাফি‘-এর উক্তি (إِنَّمَا لِلشَّاةِ ذَرِاعَانِ) আহমাদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে (هَلْ لِلشَّاةِ إِلَّا ذِرَاعَانِ) আর তিরমিযী এবং দারিমী-এর বর্ণনায় রয়েছে (وَكَمْ لِلشَّاةِ ذِرَاعً)
তবে ইসতিফহাম-এর দ্বারা এখানে অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয় বরং বিষয়টিকে দূরবর্তী মনে করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (اَمَا إِنَّكَ لَوْسَكَتَّ لَنا وَذِرَاعًا فَذَرِاَعَا مَا سَكَتٌ) আহমাদ-এর অন্য বর্ণনায় রয়েছে (لَوْ سَكَتَّ لَنَا وَلْتَمْنِىْ مِنْهَا مَا دَعَوْتَ بِه) অর্থাৎ- যদি আমার কথার প্রত্যুত্তর না করে নীরব থাকতে তাহলে আমার চাওয়া অবধি আমাকে তা দিতেই থাকতে কারণ আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন আর তিনি তাঁর নাবীর মর্যাদা ও মু‘জিযা প্রকাশার্থে তাতে একটির পর একটি বাহুর গোশত বা রান সৃষ্টি করতেন। মূলত তার প্রত্যুত্তরে করায় এর প্রতিবন্ধক হয়েছে।
(এর কারণ হিসেবে) বলা হয়েছে যে, সাহাবী বা তার প্রশ্নোত্তরের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় প্রতিপালকের প্রতি মনোযোগের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
(এর কারণ হিসেবে আরও) বলা হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে রীতির বিপরীতে কোন কিছু প্রকাশ পাওয়ার শর্তই হলো তা সন্দেহমুক্ত হওয়া। আর সুনিশ্চিত ও সত্যায়িত বিষয়ে কোন ত্রুটি থাকবে না।
৩২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩২৯
وَعَنْ أَنَس بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنْتُ أَنَا وَأُبَيُّ وَأَبُو طَلْحَةَ جُلُوسًا فَأَكَلْنَا لَحْمًا وَخُبْزًا ثُمَّ دَعَوْتُ بِوَضُوءٍ فَقَالَا لِمَ تَتَوَضَّأُ فَقُلْتُ لِهذَا الطَّعَامِ الَّذِي أَكَلْنَا فَقَالَا أَتَتَوَضَّأُ مِنْ الطَّيِّبَاتِ لَمْ يَتَوَضَّأْ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْكَ. رَوَاهُ أحْمَد
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি, উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ)-এ তিনজন এক জায়গায় বসে গোশ্ত ও রুটি খেলাম। অতঃপর খাওয়া শেষে আমি উযূ করার জন্য পানি চাইলাম। এটা দেখে তাঁরা [উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ ত্বালহাহ্ (রাঃ)] বললেন, তুমি উযূ কেন করবে? আমি বললাম, এ খাবারের কারণে? তাঁরা উভয়ে বললেন, এ পাক-পবিত্র খেয়েও কি তুমি উযূ করবে? অথচ তোমার চেয়ে অনেক বেশী উত্তম যিনি ছিলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আহারের পর উযূ করেননি। [১]
৩৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩০
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُولُ قُبْلَةُ الرَّجُلِ امْرَأَتَه وَجَسُّهَا بِيَدِه مِنَ الْمُلَامَسَةِ فَمَنْ قَبَّلَ امْرَأَتَه أَوْ جَسَّهَا بِيَدِه فَعَلَيْهِ الْوُضُوءُ. رَوَاهُ مَالِكُ وَالشَّافِعِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলতেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে চুমু দেয়া অথবা তার স্বীয় হাত দিয়ে স্পর্শ করা ‘লামস্’-এর মধ্য গণ্য। সুতরাং যে লোক তার স্ত্রীকে চুমু দিবে কিংবা হাত দিয়ে স্পর্শ করবে তার জন্য উযূ করা ওয়াজিব। [১]
৩৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩১
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ كَانَ يَقُولُ مِنْ قُبْلَةِ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ الْوُضُوءُ. رَوَاهُ مَالِكٌ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে চুমু দিলে উযূ করা অত্যাবশ্যক। [১]
৩৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩২
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ إِنَّ الْقُبْلَةَ مِنَ اللَّمَسِ فَتَوَضَّؤُوْا مِنْهَا
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উমার (রাঃ) বলেছেন, চুমু দেয়া ‘লামস্’-এর অন্তর্ভূক্ত। (যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে)। সুতরাং চুমু দেয়ার পরে তোমরা উযূ করবে। [১]
৩৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৩
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ عَنْ تَمِيْمٍ الدَّارِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَلْوَضُوْء مِنْ كُلِّ دَمٍ سَائِلٍ. رَوَاهُمَا الدَّارَقُطْنِىْ وَقَالَ عُمَرَ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيْزُ لَمْ يَسْمَعْ مِن تَمِيْمِ الدَّارِىْ وَلَا رَاهُ وَيَزِيْدُ بْنِ خَالِدٍ وَيَزِيْدُ بْن مُحَمَّدٍ مَجْهُوْلَانِ
‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তামীম আদ্ দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রবাহমান রক্তের কারণেই উযূ করতে হবে। [১]
দারাকুত্বনী হাদীস দু’টো বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) এ হাদীসটি তামীম আদ্ দারী (রাঃ) হতে শুনেননি। তিনি তাঁকে দেখেনওনি। অপর রাবী ইয়াযীদ ইবনু খালিদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ উভয়ই অজ্ঞাত ব্যক্তি। সুতরাং এ হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
(এ হাদীসের আলোকে তারা বলেন) সাবিলায়ন দ্বারা উদ্দেশ্য মূলত প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা। আর ইসতিহাযার রক্ত প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয় না। অতএব জানা গেল সামনের বা পেছনের রাস্তা দিয়ে বের না হওয়া সত্ত্বেও ইসতিহাযার রক্ত উযূ ভঙ্গের কারণ এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি إِنَّمَا ذلِكَ عِرْقٌ (এটি কেবলমাত্র একটি রোগ) এর দ্বারা সাবিলায়ন ছাড়াও শরীরের যে কোন স্থানের রগ থেকে রক্ত বের হওয়া দ্বারা যে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যাবে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অতএব শরীরের যে কোন অঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাতিল হয়ে যাবে।
* (ভাষ্যকার এর প্রত্যুত্তরে বলেন) মহিলাদের লজ্জাস্থান বা গুপ্তাঙ্গ যেখান থেকে ইসতিহাযার রক্ত প্রবাহিত হয় তা পাশর্ববর্তীতার কারণে প্রস্রাব বের হওয়ার স্থানের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। সেজন্য রক্তস্রাব বা মানী উযূ ভঙ্গের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অনুরূপ ইসতিহাযার রক্তও উযূ ভঙ্গের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি إِنَّمَا ذلِكَ عِرْقٌ (এটি কেবলমাত্র একটি রোগ) দ্বারা সাহাবী ফাত্বিমাহ্ বিনতু হুবায়শ (রাঃ) মুসতাহাযার রক্ত কেবলমাত্র হায়যের রক্তের হকুমের অন্তর্গত একটি বিষয় মর্মে যে ধারণা করেছিলেন তা খণ্ডন করেছেন। অর্থাৎ- মহিলারা হায়যের যে রক্ত দেখে অভ্যস্ত মুসতাহাযার রক্ত তার অন্তর্গত নয় বরং অসুস্থতার কারণে একটি বিশেষ শিরা থেকে নির্গত এক প্রকার রক্ত।
তারা তাদের মতের স্বপক্ষে আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও দলীল প্রদান করে যেখানে বলা হয়েছে قَاءً فَتَوَضَّأَ (অর্থাৎ- তিনি বমন করে উযূ করলেন)। তারা বলেন, অথচ বমনের কারণে উযূ ভঙ্গ হবে। যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে উযূ করেছেন।
* (ভাষ্যকার এর প্রতিউত্তরে বলেন) এ বর্ণনায় তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ এখানে فتوضأ টি কারণ হবে বর্ণনামূলক হওয়ার চেয়ে তা‘ক্বীর (অর্থাৎ- একটির পরে অন্য একটি করা) হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময়। যদিও বা মেনে নেয়া হয় যে, فا টি এখানে কারণ (অর্থাৎ- বমনের কারণেই তিনি উযূ করেছেন) তারপরেও এটি দ্বারা বমনের কারণে উযূ ভঙ্গ প্রমাণিত হয় না। কারণ মানুষ কখনো বমনের পর নাক, মুখসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের অবশিষ্ট ময়লা দূর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশেও উযূ করে থাকে। অতএব বমন উযূর শার‘ঈ কোন কারণ নয়, বরং এটি একটি স্বভাবগত কারণ যাতে মানুষ উযূ করে থাকে। শার‘ঈ কারণ হওয়ার জন্য এর প্রবর্তকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা আবশ্যক। মূলকথা হলো শুধুমাত্র কোন কর্মের দ্বারা উযূ আবশ্যক হওয়া বা উযূ নষ্ট হওয়া সাব্যস্ত হয় না। কারণ কোন কর্ম কেবলমাত্র তখনই আবশ্যক প্রমাণিত হবে যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করবেন এবং লোকেদের তা করার নির্দেশ প্রদান করবেন। অথবা সেই কর্মের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করবেন যে, তা উযূ ভঙ্গের কারণ।
* তাদের মতে স্বপক্ষে সর্বাধিক সুস্পষ্ট প্রমাণ হলো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে ইবনু মাজায় বর্ণিত মারফূ‘ হাদীস যেখানে বলা হয়েছে
من قاء أو رعف فى صلاته فلينصرف وليتوضأ
(অর্থাৎ- যার সলাতরত অবস্থায় বমন অথবা নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হবে সে যেন সলাত ছেড়ে দিয়ে উযূ করে)। (অতএব, বমন বা নাক দিয়ে রক্ষক্ষরণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের কারণ)
(ভাষ্যকার তাদের প্রতিউত্তরে বলেন) হাদীসটি একেবারে দুর্বল যাকে আহমাদ বিন হাম্বাল ছাড়াও অন্যরা য‘ঈফ বলেছেন।
এছাড়াও তারা আরো কতগুলো হাদীস দ্বারা দলীল প্রদান করেছেন যার সবগুলো গ্রহণের আযোগ্য বা দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে সেই সহীহ হাদীসের বিপরীত যা ইমাম বুখারী জাবির (রাঃ) হতে মুয়াল্লাক সূত্রে বর্ণনা করেছেন,
اَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ فِىْ غَزْوَةَ ذَاتِ الرِّقَاءِ، فَرَمى رَجُلٌ بِسَهْمٍ فَتَرَفَهُ الدَّمَ فَرَكَعَ وَسَجَدَ وَقَضى-فِيْ صَلَاتِه.
(অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাতুর রিক্বায় যুদ্ধে ছিলেন, সে সময় এক ব্যক্তি তীর দ্বারা আক্রান্ত হলে তার রক্ত ঝরলো, তারপরেও তিনি রুকূ‘ সাজদাহসহ সলাত চালিয়ে গেলেন)। আর বায়হাক্বীর বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে যে ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি সেই সাহাবীকে ডাকলেন। রাবী বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) এবং সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) পুনরায় আদায়ের আদেশ দেননি।’’
এছাড়া সাবিলায়ন ছাড়া শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ দিয়ে রক্ত বা অন্য কোন কিছু প্রবাহিত হওয়াতে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস এবং সাহাবীগণের উক্তি রয়েছে যা মূলকেই সমর্থন করে যেগুলো ইমাম যায়লা‘ঈ, দারাকুত্বনী এবং শাওকানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। অতএব, সামনের বা পিছনের রাস্তা ছাড়া শরীরের অন্য কোন অঙ্গ দিয়ে রক্ত, পূঁজ বা বমনের মতো কোন কিছু বের হলেও তাতে উযূ ভাঙ্গবে না বা নষ্ট হবে না।
৩৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৪
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا أَتَيْتُمْ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
قَالَ الشَّيْخُ الإمَامُ مُحْيِيُ السُّنَّةِ رَحِمَهُ الله هذَا الْحَدِيْثُ فِي الصَّحْرَاءِ وَأَمَّا فِيْ الْبُنْيَانِ فَلَا بَاْسَ لِمَا رُوِيَ
আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন পায়খানায় যাবে তখন ক্বিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে বসবে না, বরং পূর্বদিকে ফিরে বসবে অথবা পশ্চিম দিকে। [১]
শায়খ ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ বলেছেন, এটা উন্মুক্ত প্রান্তরের হুকুম। দালান কোঠা বা ঘরের মধ্যকার পায়খানায় অথবা ঘরের মতো করে নির্মিত পায়খানায় এরূপ করা দোষের নয়।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, দিকাভিমুখী হলে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) সামনে বা পেছনে হয় না সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন (তথা পেশাব-পায়খানা) পূরণ করা যা দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। (অর্থাৎ- প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণ করবে যে দিকাভিমুখী হবে (ক্বিবলাহ্ সামনে বা পেছনে হবে না)। হাদীসটি বাহ্যিকভাবে খোলা ময়দান ও প্রাচীর বেষ্টিত টয়লেটের মাঝে কোন পার্থক্যকরণ ছাড়াই স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের সময় ক্বিবলাকে সামনে বা পিছনে করতে নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ।
৩৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৫
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ اَرْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ لِبَعْضِ حَاجَتِىْ فَرَاَيْتُ رَسُوُلَ اللهِ ﷺ يَقْضِىْ حَاجَتَه مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّامِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার কোন কাজে (আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসার ঘরের ছাদে উঠেছিলাম। তখন আমি দেখলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নীচে এক ঘেরাও করা জায়গায়) ক্বিবলাহকে পেছনে রেখে (উত্তরে) সিরিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে পায়খানা করছেন। [১]
৩৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৬
وَعَنْ سَلْمَانَ قَالَ نَهَانَا يَعْنِىْ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِينِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করতে, ডানহাতে ইস্তিঞ্জা করতে, তিনটির কম ঢিলা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন। [১]
* ইসতিনজার ক্ষেত্রে তিনটির কম টিলা ব্যবহার বৈধ নয় যদিও তিনটির কম ব্যবহারে পবিত্রতা অর্জিত হয়।
* পশুর বিষ্ঠা এবং হাড় দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ নয়। প্রথমটির (পশুর বিষ্ঠা) দ্বারা বৈধ না হওয়ার কারণ হলোঃ প্রথমত তা জিন্ জাতির চতুষ্পদ জন্তুর শুকনা খাবার। দ্বিতীয়ত তা অপবিত্র হওয়ায় অন্য কোন বস্ত্তকে পবিত্র করতে পারে না।
হাড় দ্বারা বৈধ না হওয়ার কারণ হলোঃ
প্রথমত তা জিনদের খাদ্য। অর্থাৎ- তারা তা খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লা-হ’ বললে তা গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত)পূর্ণ অবস্থায় পায় যেমনটি আগে ছিল।
দ্বিতীয়ত তা চটচটে থাকে ফলে তা অপবিত্র।
তৃতীয়ত তা প্রায়শ তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত থাকে।
চতুর্থতঃ তা কষ্টকর যা ব্যবহারে ব্যবহারকারী কষ্ট পায়।
দুই হাদীসে দ্বন্দ্ব নিরসন
এ হাদীসে সর্বনিম্ন তিনটি ঢিলা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অথচ ২য় অনুচ্ছেদে আগত আবূ দাঊদসহ অন্যান্য গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ (مَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَّا فَلَا حَرَجَ) অর্থাৎ- ‘যে ঢিলা ব্যবহার করবে সে যে বিজোড় করে। যে তা করলো সে ভালো করলো তবে বিজোড় না হলেও সমস্যা নেই’। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে তিনটির কমেও বৈধ। এর দ্বন্দ্ব কয়েকভাবে নিরসন করা যায়। যথাঃ
প্রথমত সালমান (রাঃ)-এর হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ। অতএব, তা অগ্রাধিকারযোগ্য।
দ্বিতীয়ত উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধনকরণ। যেমনটি হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেনঃ ইমাম শাফি‘ঈ আহমাদ ও আহলে হাদীসগণ সালমান (রাঃ)-এর হাদীসের দ্বারা ঢিলা তিনটির কম না হওয়ার শর্তারোপ করেছেন যদিও তার কমে পবিত্রতা অর্জিত হয়। কিন্তু তিনটিতে পবিত্রতা অর্জিত না হলে তার বেশি নিতে পারবে যতক্ষণ না পবিত্রতা অর্জিত হয়। তখন (বেশি নেয়ার সময়) বিজোড় ঢিলা ব্যবহার মুসতাহাব - যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (مَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ) ‘ঢিলা ব্যবহার করলে বিজোড় করবে’ তবে তা ওয়াজিব নয়। যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (وَمَنْ لَّا فَلَا حَرَجَ) (বিজোড় না হলে সমস্যা নেই)। অতএব তিনটির কম ঢিলা ব্যবহার বৈধ নয় তবে তিনটির বেশি হলে বিজোড় ব্যবহার মুসতাহাব)।
الاستنجاء (ইসতিনজা) অর্থ মানুষ বা পশুর বিষ্ঠা, শুকনো মল।
৩৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৭
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْل اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ يَقُوْلُ اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় গেলে বলতেনঃ “আল্ল- হুম্মা ইনী আ‘উযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস”- [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট নর ও নারী শায়ত্বনদের (ক্ষতি সাধন) থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।[১]
قوله (اَللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ) ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অনিষ্ট সাধনকারী পুরুষ মহিলা জিন্ শয়তান (শয়তান) হতে আশ্রয় চাচ্ছি।’’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসত্ব প্রকাশার্থে দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন এবং উম্মাতকে শিক্ষাদানের উদ্দেশে তা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করতেন। خُبُثِ (খুবুস) অর্থ অনিষ্ট সাধনকারী পুরুষ জিন্-শায়ত্বন (শয়তান) আর خَبَائِثْ (খবা-য়িস) অর্থ মহিলা।
৩৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ ﷺ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنْ الْبَوْلِ وَفِيْ رَوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنْ الْبَوْلِ وَأَمَّا الْاخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا بِنِصْفَيْنِ ثُمَّ غَرَزَ فِي كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ لِمَ صَنَعْتَ هذَا فَقَالَ لَعَلَّه أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এ দুই ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোন বিরাট গুনাহের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন প্রস্রাব করার সময় আড়াল করত না। সহীহ মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, প্রস্রাব করার পর উত্তমভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জন করত না। আর অপরজন একজনের কথা অন্যজনের কানে লাগাত (চোগলখোরি করত)। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুরের একটি তাজা ডাল ভেঙ্গে তা দুই ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক ক্ববরে তার একটি অংশ গেড়ে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এরূপ করলেন কেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পর্যন্ত ডাল দু’টি শুকিয়ে না যাবে, হয়তো তাদের শাস্তি হ্রাস করা হবে। [১]
قوله (وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ) ‘‘তারা বড় কোন পাপের কারণে শাস্তি পাচ্ছিল না’’, অর্থাৎ- তাদের অপরাধ দু’টি এতটাই হালকা ছিল যে, চাইলেই তারা তা থেকে বাঁচতে পারতো। তবে এর অর্থ এটি নয় যে, তাদের গুনাহ দু’টি গুরুতর বা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ছিল না, কিংবা এ অপরাধে তাদের শাস্তি হতো না। কারণ পেশাব ধেকে না বাঁচলে শরীর অপবিত্র থাকে ফলে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট হয়ে যায়। আর একজনের ত্রুটি অপরকে বলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এমনকি তা হানাহানিতে রূপ নেয়। অতএব এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ দু’টি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে (وَإِنَّه لَكَبِيْرٍ) এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। আর (وَمَا يُعَذِّبَانِ فِىْ كَبِيْرٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য তা থেকে বেঁচে থাকা সহজ ছিল কঠিন ছিল না।
‘আযাব হালকা হওয়ার কারণ সম্পর্কে বেশ কিছু অভিমত ব্যক্ত হয়েছে। যথাঃ
কেউ কেউ বলেনঃ ডাল শুকনো হওয়া শাস্তি লাঘব হওয়ার বিষয়টি নির্দিষ্টকরণের কারণ হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শাস্তি লাঘবের সুপারিশ করেছিলেন। খেজুর ডালের সজীবতা থাকা পর্যন্ত তাদের শাস্তি লাঘব করার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। ডালের সজীবতা অবশিষ্ট থাকা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশের দ্বারা শাস্তি লাঘব করা একটি নিদর্শন। আর এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে মুসলিমের শেষে জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তবে এর অর্থ এটি নয় যে, খেজুর ডালের আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য রয়েছে কিংবা তাজা ডালের কোন বিশেষত্ব রয়েছে যার ফলে তাদের শাস্তি লাঘব হয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতের বারাকাতে শাস্তি লাঘব করা হয়েছিল। এ দৃষ্টিকোণ থেকে হাদীসটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনা সর্বদা প্রযোজ্য কোন নির্দেশনা বা ইঙ্গিত নয়।
* কেউ কেউ বলেনঃ এর হুকুমটি ব্যাপক যা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত সবার জন্য প্রযোজ্য। এর প্রমাণ সাহাবী বুরায়দাহ্ বিন হুসায়ন-এর মৃত্যুর পরে তার কবরে দু’টি খেজুর ডাল গেড়ে দেয়ার ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন। সাহাবী আবূ বারযা আল আসলামী (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।
* ভাষ্যকার বলেনঃ আমার মতে এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার করে কবরের উপর সুগন্ধি গুল্ম স্থাপন, বৃক্ষ রোপণ, এক প্রকার সুগন্ধি কাঠ দ্বারা কবরকে সুবাসিতকরণ, কবরস্থানে প্রদীপ জ্বালানোসহ আরও যে সমস্ত কর্মকান্ড ঘটে তা সবগুলোই সুস্পষ্ট বিদ্‘আত বা ভ্রষ্টতা।
* এ হাদীস থেকে আরও প্রমাণিত হয় যে, মানুষের পেশাব অপবিত্র যা হতে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর এ বিষয়ে সকলেই একমত। পেশাবের বিষয়টি খুবই গুরুতর যা কবরে শাস্তি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ যেমনটি চোগলখোরী করাও কবরে শাস্তি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
৩৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৩৯
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ قَالُوا وَمَا اللَّاعنَانِ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الَّذِي يَتَخَلّى فِي طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ فِي ظِلِّهِمْ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা দু’টি অভিসম্পাত থেকে বেঁচে থাকবে। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সে দুটি অভিসম্পাত কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের চলাচলের পথে অথবা তাদের কোন কিছুর ছায়ার স্থানে পায়খানা করে। [১]
৩৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪০
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ وَإِذَا أَتَى الْخَلَاءَ فَلَا يَمَسَّ ذَكَرَه بِيَمِينِه وَلَا يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ পানি পান করার সময় যেন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে, শৌচাগারে গেলে ডান হাতে নিজের পুরুষাঙ্গকে না ধরে এবং নিজের ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে। [১]
وقوله (فَلَا يَمَسَّ ذَكَرَه بِيَمِينِه) ‘‘সে যেন প্রয়োজন পূরণের সময় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে’’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمَسُّ ذَكَرَه بِيَمِيْنِه (অর্থাৎ- যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে সে যেন ডান হাত দিয়ে স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে)। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে لَا يَمَسُّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَه بِيَمِيْنِه وَهُوَ يَبُوْلُ অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের কেউ যেন পেশাবরত অবস্থায় ডান হাত দ্বারা স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে’’। উপরোক্ত সবগুলো বর্ণনা প্রমাণ করে যে পুরুষাঙ্গ স্পর্শের নিষেধাজ্ঞাটা পেশাবরত অবস্থার সাথে শর্তযুক্ত। এছাড়া অন্য অবস্থায় তা বৈধ। সর্বাবস্থায় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা নিষেধ সম্পর্কিত যে সকল বর্ণনা এসেছে এগুলোর উৎসস্থল একই।
আবার কেউ কেউ বলেনঃ সর্বাবস্থায় এ বিষয়টি নিষিদ্ধ হওয়াটাই যথাযথ হওয়া সত্ত্বেও নিষেধ করেছেন। কেননা প্রস্রাবরত অবস্থায় তা স্পর্শ করার প্রয়োজন। আর ত্বলক্ব বিন ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিও ১ম উক্তিকে সমর্থন করে যেখানে ‘‘তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লজ্জাস্থান স্পর্শ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন যে, তাতো তোমার শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র।’’ ত্বলক্ব (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি সর্বাবস্থায় তা স্পর্শ করা বৈধতা প্রমাণ করে। তবে আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)-এর সহীহ হাদীসটির মাধ্যমে প্রস্রাবরত অবস্থাটি বৈধতা থেকে বের হয়ে গেল এবং অন্য অবস্থায় তা বৈধতার উপর অবশিষ্ট রইল। ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) নিষেধের কারণ ডান হাতের মর্যাদা রক্ষা। হাদীসটি উল্লিখিত তিনটি বিষয় যথা পানি পানের সময় পাত্রে শ্বাস ফেলা, প্রস্রাব করাকালে ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ এবং ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ। কেননা নাহীর (নিষেধাজ্ঞার) মূল অর্থ হলো হারাম করা যদি অন্য কোন অর্থে গ্রহণের কারণ না থাকে। এখানে সে ধরনের কোন কারণ নেই। তবে জমহূরের মতে এখানে নাহী দ্বারা উদ্দেশ্য নাহীয়ে তানযীহি (অপছন্দনীয়)।
৩৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪১
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ تَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ وَمَنْ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কোন ব্যক্তি উযূ করার সময় যেন ভাল করে নাক ঝেড়ে নেয় এবং ইস্তিঞ্জা করার সময় বেজোড় সংখ্যায় ঢিলা (তিন, পাঁচ ও সাত) ব্যবহার করে। [৩৫৮]
(আরবী) (সে যেন প্রয়োজন পূরণের সময় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে (আরবী) (অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে সে যেন ডান হস্ত দ্বারা স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে)। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে (আরবী) (অর্থাৎ তোমাদের কেউ যেন পেশাবরত অবস্থায় ডান হাত দ্বারা স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে) উপরোক্ত সবগুলো বর্ণনা প্রমাণ করে যে পুরুষাঙ্গ স্পর্শের নিষেধাজ্ঞাটা পেশাবরত অবস্থার সাথে শর্তযুক্ত। এছাড়া অন্য অবস্থায় তা বৈধ। সর্বাবস্থায় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা নিষেধ সম্পর্কিত যে সকল বর্ণনা এসেছে এগুলোর উৎসস্থল একই।
আবার কেউ কেউ বলেন ; সর্বাবস্থায় এ বিষয়টি নিষিদ্ধ হওয়াটাই যথাযথ হওয়া সত্ত্বেও নিষেধ করেছেন। কেননা প্রস্রাবরত অবস্থায় তা স্পর্শ করা প্রয়োজন। আর ত্বল্ক্ব বিন ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিও ১ম উক্তিকে সমর্থন করে যেখানে “তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে লজ্জাস্থান স্পর্শ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন যে তাতো তোমার শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র।” ত্বল্ক্ব (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি সর্বাবস্থায় তা স্পর্শ করার বৈধতা প্রমাণ করে। তবে আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)-এর সহীহ হাদীসটির মাধ্যমে প্রস্রাবরত অবস্থাটি বৈধতা থেকে বের হয়ে গেল এবং অন্য অবস্থায় তা বৈধতার উপর অবশিষ্ট রইল। ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা নিষেধের কারণ ডান হাতের মর্যাদা রক্ষা। হাদীসটি উল্লিখিত তিনটি বিষয় যথা পানি পানের সময় পাত্রে শ্বাস ফেলা, প্রস্রাব করা কালে ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ এবং ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ। কেননা নাহীর মূল অর্থ হল হারাম করা যদি অন্য কোন অর্থে গ্রহণের কারণ না থাকে। এখানে সে ধরনের কোন কারণ নেই। তবে জমহুরের মতে এখানে নাহী দ্বারা উদ্দেশ্য নাহীয়ে তানযীহি।
[১]
৩৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪২
وَعَنْ أَنَسٍ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَدْخُلُ الْخَلَاءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلَامٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِىْ بِالْمَاءِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় যেতেন। আমি এবং অন্য এক বালক পানির পাত্র ও বর্শাধারী একটি লাঠি নিয়ে যেতাম। সে পানি দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচ কার্য সমাধা করতেন। [১]
(غُلَامٌ) গোলাম উঠতি বয়সী তরুণকে বলা হয়। কেউ কেউ বলেন সাত বছর বয়স পর্যন্ত গোলাম বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, দাড়ি দেখা দেওয়ার আগ পর্যন্ত গোলাম বলা হয়। তবে অন্যদেরও রূপকভাবে গোলাম বলা হয়। এখানে ‘গোলাম’ দ্বারা কে তা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি এসেছে। যেমন কেউ কেউ বলেছেন অন্য একজন গোলাম দ্বারা আনাস (রাঃ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-কে বুঝিয়েছেন। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জুতার ফিতা বহন করতেন। আবার অন্যরা বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি। কেউ কেউ বলেছেনঃ জাবির (রাঃ) বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)। এ হাদীসটি ছোট ছেলেকে খাদেম হিসেবে গ্রহণের বৈধতার দলীল।
قوله (يَسْتَنْجِىْ بِالْمَاءِ) (তিনি পানি দ্বারা শৌচকার্য করতেন) মুল্লা ‘আলী ক্বারীর ভাষ্যমতে আনাস (রাঃ) এবং অন্য সাহাবী (রাঃ)-এর বর্ণনা হতে পাওয়া যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা)য় শুধু পানি ব্যবহার করতেন আবার কখনো শুধু পাথর ব্যবহার করতেন। তবে অধিকাংশ সময় তিনি দু’টোই ব্যবহার করতেন। অতএব, এর মাধ্যমে মালিকীদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করেননি মর্মে যে দাবী রয়েছে তা প্রত্যাখ্যাত হলো।
إِدَاوَةً (ইদা-ওয়াহ্) হলো পানি রাখার জন্য চামড়ার তৈরি ছোট পাত্র।
عَنَزَةً (‘আনাযাহ্) হলো লাঠির চেয়ে লম্বা বর্শার চেয়ে খাটো দুই দাঁতবিশিষ্ট একটি বল্লম জাতীয় বস্ত্ত।
৩৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৩
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ نَزَعَ خَاتِمَه. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَائِـيُِّ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيْحٌ غَرِيبٌ وَقَالَ أَبُوْ دَاوٗدَ هذَا حَدِيْثٌ مُنْكَرٌ وَفِىْ رِوَايَتِه وَضَعَ بَدَلَ نَزَعَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় প্রবেশকালে নিজের হাতের আংটি খুলে রাখতেন। [১] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, হাদীসটি ‘মুনকার’। অধিকন্তু তিনি ‘খুলে রাখতেন’ এর পরিবর্তে ‘রেখে দিতেন’ বলেছেন।
৩৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৪
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا أَرَادَ الْبَرَازَ انْطَلَقَ حَتّى لَا يَرَاهُ أَحَد. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় যেতে ইচ্ছা করতেন, তখন এত দূরে চলে যেতেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়। [১]
* প্রাচীর বেষ্টনির মাধ্যমে মানব চক্ষুকে আড়াল করা বা কাপড় জাতীয় কোন আবরণের মাধ্যমে আড়াল করা বা খাল, গর্তের অভ্যন্তরে যাওয়ার মাধ্যমে আড়াল করা।
৩৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৫
وَ عَنْ أَبِي مُوسى قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيَّ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ فَأَرَادَ أَنْ يَبُولَ فَأَتى دَمِثًا فِي أَصْلِ جِدَارٍ فَبَالَ ثُمَّ قَالَ إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَبُولَ فَلْيَرْتَدْ لِبَوْلِه. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে নরম জায়গায় প্রস্রাব করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব করতে ইচ্ছা করলে এরূপ নরম স্থান খোঁজ করবে (যাতে শরীরে প্রস্রাবের ছিটা না আসে)। [১]
৩৪৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৬
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا أَرَادَ الْحَاجَةَ لَمْ يَرْفَعْ ثَوْبَه حَتّى يَدْنُوَ مِنَ الْاَرْضِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالدَّارِمِيُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব-পায়খানার সময় নির্দিষ্ট স্থানের কাছাকাছি যাওয়ার পরই কাপড় উঠাতেন (অর্থাৎ বসার সময়ে উঠাতেন, তার পূর্বে নয়)। [১]
৩৪৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৭
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ لِوَلَدِه أُعَلِّمُكُمْ إِذَا أَتَيْتُمْ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَأَمَرَ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ وَنَهى عَنِ الرَّوْثِ وَالرِّمَّةِ وَنَهى أَنْ يَسْتَطِيبَ الرَّجُلُ بِيَمِينِه. رَوَاهُ ابن مَاجَةَ وَالدَّارِمِيُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : (তা‘লীম ও নাসীহাতের ব্যাপারে) আমি তোমাদের জন্য পিতা-পুত্রের ন্যায়। আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি (তোমাদের দীন, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার শিষ্টাচারও)। যখন তোমরা পায়খানায় যাবে ক্বিবলার দিকে মুখ করে বসবে না, পিঠ দিয়েও বসবে না। পায়খানা করার পর তিনটি ঢিলা দিয়ে তিনি পাক-পবিত্র হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে (পাক-পবিত্র হতে) নিষেধ করেছেন। তিনি ডান হাতে শৌচ করতেও নিষেধ করেছেন। [১]
আল্লামা ‘আযীযী বলেন : রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমিনের নিকটবর্তী না হয়ে পরিপূর্ণ কাপড় উত্তোলন করতেন না বা করেননি। অতএব, কাপড় অপবিত্র হওয়ার আশংকা থাকলে সতর সংরক্ষন করে তা উত্তোলন করা বৈধ অন্যথায় প্রয়োজনানুপাতে উঠাবে।
قوله (أمر بثلاثة أهجار) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসতিনজার ক্ষেত্রে তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা ইসতিনজার ক্ষেত্রে বিজোড় ঢিলা ব্যবহার এবং পূর্ণ পরিষ্কার উভয়টিই শারী‘আতের কাম্য যা তিনটি ঢিলা ব্যবহারের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
الرمة (রিমমাহ্) অর্থ জরাজীর্ণ হাড়। সম্ভবত এখানে সকল হাড়ই উদ্দেশ্য। তবে এটাও বলা যেতে পারে যে, অনুপকারী জরাজীর্ণ হাড় নোংরা করতে নিষিদ্ধ হলে অন্যগুলো আরও নিষেধ হওয়ার উপযোগী। ইমাম বাগাবী شرح السنة গ্রন্থে বলেছেনঃ পশুর মল এবং হাড়ের সাথে নিষেধাজ্ঞাটা সুনির্দিষ্টকরণে বুঝা যায় যে, পরিষ্কারকরণের ক্ষেত্রে পাথর এবং পাথরের মতই অন্যকিছু দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করা বৈধ। আর তা নাজাসাত অপসারণকারী মাটি, কাঠ, কাগজের টুকরাসহ সকল পাক জড়বস্ত্ত।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলে একই পর্যায়ভুক্ত। ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা)কে ‘ইস্তিত্বব’ বলা হয়েছে কারণ তাতে অপবিত্রতা অপসারিত হয়ে পবিত্রতা অর্জিত হয়।
৩৪৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৮
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ ﷺ الْيُمْنى لِطُهُورِه وَطَعَامِه وَكَانَ يَدُهُ الْيُسْرى لِخَلَائِه وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডান হাত ছিল তাঁর পবিত্রতা অর্জন ও খাবারের জন্য। আর বাম হাত ছিল প্রস্রাব-পায়খানা ও অপর অপছন্দনীয় কাজের জন্য। [১]
৩৪৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৪৯
وَعَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَائِـيُِّ وَالدَّارِمِيُّ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যায়, সে যেন তিনটি ঢিলা সাথে করে নিয়ে যায়। এ ঢিলাগুলো দিয়ে সে পাক-পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। [১]
* ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাথর বা ঢিলা ব্যবহারই যথেষ্ট যা পানির সমতুল্য। জীবাণুসহ মূল অপবিত্রতা দূরীভূত হওয়ার পরে যদি নাজাসাতের কোন দাগ অবশিষ্ট থাকে।
* পাথর বা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা নেই।
* তিনটি পাথর বা ঢিলা ব্যবহার করা আবশ্যক। কারণإجزء ক্রিয়াটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবশ্যকতা বুঝায়।
৩৫০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫০
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تَسْتَنْجُوا بِالرَّوْثِ وَلَا بِالْعِظَامِ فَإِنَّه زَادُ إِخْوَانِكُمْ مِنْ الْجِنِّ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ اِلَّا أَنَّه لَمْ يَذْكُرْ زَادَ إِخْوَانِكُمْ مِنْ الْجِنِّ
‘আবদুল্লাহ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করো না। কেননা এসব তোমাদের ভাই জিনদের খোরাক। [১] তবে ইমাম নাসায়ী ‘জিন্দের খোরাক’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি।
قوله (زَادَ إِخْوَانِكُمْ مِنْ الْجِنِّ) (অর্থাৎ- তোমাদের ভাই জিন্দের খাবার) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের এ অংশ থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, জিনরাও মুসলিম যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মুসলিমদের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটিও জানা যায় যে, তারা আহার করে।
৩৫১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫১
وَعَنْ رُوَيْفِعِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا رُوَيْفِعُ لَعَلَّ الْحَيَاةَ سَتَطُولُ بِكَ بَعْدِىْ فَأَخْبِرِ النَّاسَ أَنَّ مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَه أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوِ اسْتَنْجى بِرَجِيعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ فَإِنَّ مُحَمَّدًا مِنْهُ بَرِيءٌ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
ওয়াইফি‘ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : হে রুওয়াইফি'! হয়তো তুমি আমার পরে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে, তুমি তখন মানুষকে এ সংবাদ দিবে যে, যে ব্যক্তি নিজের দাড়ি জট পাকাবে অথবা ধনুকের রশি গলায় কবচ হিসেবে বাঁধবে অথবা পশুর গোবর বা হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন না। [১]
قوله (مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَه) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি তার দাড়িতে গিঁট দেয়’’ এর অর্থ বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে করেছেন। কেউ বলেনঃ এর অর্থ চিকিৎসার মাধ্যমে দাড়ি কোঁকড়ানো করা। কেউ বলেনঃ যুদ্ধের ময়দানে অহমিকা প্রদর্শনার্থে দাড়ি কোঁকড়ানো। কেউ বলেনঃ যুদ্ধের ময়দানে অহমিকা প্রদর্শনার্থে দাড়ি বাঁকিয়ে রাখতো, ফলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তা ছেড়ে রাখার নির্দেশ দিলেন। আবার কেউ বললেনঃ অনারবদের মত দাড়ি পেচিয়ে গুটিয়ে রাখা (যেমনটি আমাদের দেশের ভন্ড পীর ও লালন ফকীররা করে থাকে)।
قوله (أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি গলায় সুতা বা তন্তু ঝুলায়’’। কেউ কেউ বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিপদ আপদ ও খারাপ দৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাবার উদ্দেশে তারা নিজেদের, নিজ সন্তানদের এবং ঘোড়ার গলায় সুতা দিয়ে বেঁধে যেসব তা‘বীয-কবচ ঝুলিয়ে রাখতো তা। আবার কেউ বলেনঃ বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গলায় ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা নিষেধ।
(যারা এ কাজগুলো করবে তাদের থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত)।
এটি কঠোর ধমকের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে।
৩৫২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫২
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقْدَ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنْ أَكَلَ فَمَا تَخَلَّلَ فَلْيَلْفِظْ وَمَا لَاكَ بِلِسَانِه فَلْيَبْتَلِعْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنْ أَتَى الْغَائِطَ فَلْيَسْتَتِرْ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ اِلَّا أَنْ يَجْمَعَ كَثِيبًا مِنْ رَمْلٍ فَلْيَسْتَدْبِرْهُ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَلْعَبُ بِمَقَاعِدِ بَنِي ادَمَ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ وَالدَّارِمِيُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যায় লাগায়। যে এভাবে করল সে ভাল করল, আর যে এভাবে করল না সে গর্হিত কাজ করল না। আর যে ব্যক্তি (প্রস্রাব-পায়খানা করার পর) ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ঢিলা ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি এভাবে করল সে ভাল করল, আর যে ব্যক্তি করল না সে গর্হিত কাজ করল না। যে ব্যক্তি খাবার খেলো এবং (খাবারের পর) খিলাল দ্বারা দাঁত হতে কিছু বের করল, সে যেন তা মুখ থেকে ফেলে দেয়। আর যা জিহ্বা দিয়ে বের করে নেয় তা যেন গিলে ফেলে। যে এভাবে করল সে উত্তম কাজ করল, আর যে এরূপ করল না সে গর্হিত কাজ করল না। যে লোক পায়খানায় যায় সে যেন পর্দা করে। পর্দা করার জন্য যদি সে বালুর স্তুপ ছাড়া কিছু না পায় তাহলে স্তুপের দিকে যেন পিঠ দিয়ে বসে (কাপড় দিয়ে সামনের দিক ঢেকে রাখে)। কারণ শয়তান মানুষের বসার স্থান নিয়ে খেলা করে। যে এরূপ করল ভাল করল, আর না করলে মন্দ কিছু করল না। [১]
قوله (مَنْ لَا فَلَا حَرَجَ) অর্থাৎ- কেউ যদি এরূপ করতে না পারে তবে কোন সমস্যা বা পাপ হবে না। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এটিই প্রমাণ করে যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল নির্দেশই আবশ্যকতা বুঝায় না। নইলে لَا حَرَجَ (কোন গুনাহ হবে না) বলে আদেশের আবশ্যকতা রহিত করা হতো না।
قوله (وَمَنْ أَكَلَ فَمَا تَخَلَّلَ فَلْيَلْفِظْ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি খায় অতঃপর কাঠি বা অন্য কিছু দ্বারা দাঁতের অভ্যন্তর থেকে যেসব খাদ্যকণা বের করে সে যেন তা না খেয়ে মুখ থেকে বের করে ফেলে।
قوله (وَمَا لَاكَ بِلِسَانِه فَلْيَبْتَلِعْ) অর্থাৎ- যা সে চর্বন করে তা গলধঃকরণ করবে, আবার কেউ কেউ বলেনঃ এর অর্থ হলো আহারকারীর উচিত কঠিন কোন কিছু দ্বারা দাঁতের অভ্যন্তরে থেকে বস্ত্ত বের করা না খেয়ে ফেলে দেয়া। কারণ তাতে ময়লা রয়েছে। আর জিহবা দ্বারা বের করা বস্ত্ত গলধঃকরণ করা। কেননা সে তা খারাপ মনে করে না।
(وَمَا لَاكَ) দ্বারা এ উদ্দেশ্য হতে পারে দাঁতের মাড়ি এবং তালুতে লেগে থাকা অবশিষ্ট খাবার যা সে জিহবার মাধ্যমে বের করে, তা ভক্ষণ করবে। আর দাঁতের মাঝের খাবার সে না আহার করে ফেলে দিবে চাই তা কঠিন কোন কিছু দ্বারা বের করুক বা জিহবার দ্বারা বের করুক। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পরিবর্তন সাধিত হয়।
قوله (فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَلْعَبُ بِمَقَاعِدِ بَنِي ادَمَ) ‘‘নিশ্চয় শয়তান (শয়তান) আদম সন্তানের পিছন নিয়ে খেলা করে’’, অর্থাৎ- টয়লেট বা পায়খানা করার স্থানে শয়তান (শয়তান) মানুষের অনিষ্ট করার মতলব করে। সে সেখানে উপস্থিত হতে অনিষ্ট ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। কারণ সেখানে আল্লাহর যিকর বর্জন করা হয়।
এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসম্ভব পায়খানা-পেশাবের সময় নিজেদের আড়াল করার আদেশ প্রদান করেছেন পিছনে বালির ঢিবি তৈরি করে হলেও পাশাপাশি লোকচক্ষুর সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। সাথে সাথে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রস্রাব যাতে শরীর কাপড়ে ছিটে না লাগে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন।
৩৫৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৩
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي مُسْتَحَمِّه ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ أَوْ يَتَوَضَّأُ فِيهِ فَإِنَّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ اِلَّا اَنَّهُمَا لَمْ يَذْكُرَا ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيْهِ اَوْ يَتَوَضَّأُ فِيْهِ
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় প্রস্রাব না করে, এরপর আবার সেখানে গোসল করে অথবা উযূ করে। কারণ মানুষের অধিকাংশ ওয়াস্ওয়াসা এসব থেকেই উৎপন্ন হয়। [১] কিন্তু শেষের দু'জন (তিরমিযী ও নাসায়ী), "এরপর সেখানে গোসল করে ও উযূ করে" উল্লেখ করেননি।
قوله (ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ) ‘‘অতঃপর সে তার গোসল সম্পাদন করবে’’ এর দ্বারা তিনি উদ্দেশ নিয়েছেন যতক্ষণ তারা তাতে গোসল করার পরিকল্পনা রাখবে ততদিন নিষেধ কিন্তু যদি তাতে গোসল করে পরিত্যক্তাবস্থায় রেখে দেয় বা কেবল গোসল আরম্ভ করেছে এখনো প্রস্রাব করেনি তাহলে সে গোসলখানায় প্রস্রাব করা নিষিদ্ধ নয়।
قوله (فَإِنَّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ) ‘‘কারণ অধিকাংশ সংশয় এ থেকেই সৃষ্টি হয়’’, অর্থাৎ- গোসলখানা বা উযূখানায় প্রস্রাব করে সেখানে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বা গোসল করা থেকেই অধিকাংশ সংশয়ের উদ্ভব ঘটে। কারণ সে স্থানটি অপবিত্র হওয়ার ফলে তার মনে এ সংশয়ের সৃষ্টি হয় যে, তার শরীরে প্রস্রাবের কোন ছিটা লাগলো।
৩৫৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৪
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي جُحْرٍ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَاۤئِىُّ
আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গর্তে প্রস্রাব না করে।[১]
৩৫৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৫
وَعَنْ مُعَاذٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ اتَّقُوا الْمَلَاعِنَ الثَّلَاثَةَ الْبَرَازَ فِي الْمَوَارِدِ وَقَارِعَةِ الطَّرِيْقِ وَالظِّلِّ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وابْنُ مَاجَةَ
মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তিনটি অভিশপ্ত হওয়ার যোগ্য কাজ- (১) পানির ঘাটে, (২) চলাচলের পথে ও (৩) কোন কিছুর ছায়ায় পায়খানা করা এমন করা হতে বেঁচে থাকবে। [১]
(الْبَرَازَ فِي الْمَوَارِدِ) ‘‘পানির ঘাটে পায়খানা করা।’’ নালা বা নদীর এমন স্থানকে مَوَارِد বলা হয় যেখানে লোকজন উযূ-গোসল ও পানি পান করার জন্য আগমন করে। এমন স্থানে কোন ব্যক্তি পায়খানা করলে লোকজন তাকে গালি দিবে, অভিশাপ দিবে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন স্থানে পায়খানা করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ চলাচলের রাস্তা এবং গাছের ছায়া যাতে মানুষ বিশ্রাম গ্রহণ করে থাকে। যে ছায়াতে মানুষ বিশ্রাম করে না তাতে পায়খানা করা কোন দূষণীয় কাজ নয়।
৩৫৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৬
وَعَنْ أَبِيْ سَعِيدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَا يَخْرُجْ الرَّجُلَانِ يَضْرِبَانِ الْغَائِطَ كَاشِفَانِ عَوْرَتَهُمَا يَتَحَدَّثَانِ فَإِنَّ اللهَ يَمْقُتُ عَلى ذلِكَ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দুই ব্যক্তি এক সঙ্গে যেন পায়খানায় এমনভাবে না বসে যে, দু'জনেই দু'জনার লজ্জাস্থান দেখতে পায় এবং পরস্পরের সাথে কথা বলে। কেননা মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজে খুবই রাগান্বিত হন। [১]
* লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা আবশ্যক।
* পায়খানা করার সময় কথা বলা হারাম।
* কেউ কেউ এ অবস্থায় কথা বলাটা মাকরূহ বলেছেন। কিন্তু তা সঠিক নয়।
৩৫৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৭
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ هذِهِ الْحُشُوْشَ مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا أَتى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَاِبْنُ مَاجَةَ
যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : এসব পায়খানার স্থান হচ্ছে (জ্বিন ও শাইত্বনের) উপস্থিতির স্থান। সুতরাং তোমাদের যারা পায়খানায় যাবে তারা যেন এ দু'আ পড়ে : “আ'উযু বিল্লা-হি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস”- (অর্থাৎ- আমি নাপাক নর-নারী শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। [১]
৩৫৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৮
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي ادَمَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمْ الْخَلَاءَ أَنْ يَقُولَ بِسْمِ اللهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَإِسْنَادُه لَيْسَ بِقَوِيٍّ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন জিন শাইত্বনের চোখ ও বানী আদামের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল “বিসমিল্লা-হ” বলা। [১] এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব, এর সানাদ দুর্বল।
দুই হাদীসের দ্বন্দ্ব নিরসনে ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে টয়লেটে প্রবেশের দু‘আ بِسْمِ اللهِ এসেছে, অপরদিকে পূর্বে বর্ণিত আনাস (রাঃ) এবং যায়দ বিন আরক্বাম (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে ক্ষতি সাধনকারী জিন্ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। দৃশ্যত উভয় হাদীসের মাঝে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হলেও মূলত বৈপরীত্য নেই। কারণ একটি আল্লাহর নাম এবং অপরটি অনিষ্ট সাধনকারী জিন্ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা। অতএব উভয়টি আলাদা কোন জিনিস নয়।
অধিকন্তু ‘উমার (রাঃ)-এর সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে দু’টি দু‘আই একত্রে এসেছে যে হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (إذا دخلتم الخلاء فقولوا بسم الله إعوذ بالله من الخبث والخبائث) ‘‘যখন তোমরা টয়লেটে প্রবেশের মনস্থ করবে তখন এ দু‘আটি পাঠ করবেঃ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং তাঁর নিকট অনিষ্টকারী জিন্ হতে আশ্রয় চাচ্ছি’’। অতএব, দু‘আ দু’টি পাঠ করা উত্তম। তবে একটি বললেও যথেষ্ট হবে।
৩৫৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৫৯
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ قَالَ غُفْرَانَكَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابْنُ مَاجَةَ وَالدَّارِمِيُّ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেন : “গুফরা-নাকা” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। [১]
৩৬০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِيّ ﷺ إِذَا أَتَى الْخَلَاءَ أَتَيْتُه بِمَاءٍ فِي تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ فَاسْتَنْجى ثُمَّ مَسَحَ يَدَه عَلَى الْأَرْضِ ثُمَّ أَتَيْتُه بِإِنَاءٍ اۤخَرَ فَتَوَضَّأَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَرَوَى الدَّارِمِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ مَعْنَاهُ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় গেলে আমি তাঁর পেছনে পেছনে কখনও ‘তাওর’-এ করে আবার কখনও ‘রাক্ওয়াহ্’-এ করে পানি নিয়ে যেতাম। এ পানি দ্বারা তিনি শৌচকর্ম সম্পাদন করতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটিতে স্বীয় হাত ঘষতেন। অতঃপর আমি আর এক পাত্রে পানি আনতাম। এ পানি দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করতেন। [১]
৩৬১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬১
وَعَنِ الْحَكَمِ بْنِ سُفْيَانَ قَالَ كَانَ النَّبِيّ ﷺ إِِذََا بَالَ تَوَضَّأَ وَنَضَحَ فَرْجَه. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَائِـيُِّ
হাকাম ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব করার পর উযূ করতেন এবং নিজের লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন। [১]
(وَنَضَحَ فَرْجَهٗ) ‘‘এবং স্বীয় লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন।’’ অর্থাৎ- পরিধেয় বস্ত্রের লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটিয়ে দিতেন।’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধেয় বস্ত্রের লজ্জাস্থানের নিকটবর্তী অংশে হালকা পানির ছিটা দিতেন। যাতে শায়ত্বনের (শয়তানের) এ ওয়াস্ওয়াসা দূর হয়ে যায় যে, কাপড়ে কি প্রস্রাবের ছিটা লেগে গেল কি-না, আর এ দ্বারা উম্মাতকে শিক্ষা দেয়াও উদ্দেশ্য।
শিক্ষা: উযূ শেষে লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া উচিত যাতে শায়ত্বনের (শয়তানের) ওয়াস্ওয়াসা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩৬২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬২
وَعَنْ أُمَيْمَةَ بِنْتِ رُقَيْقَةَ قَالَتْ كَانَ لِلنَّبِىّ ﷺ قَدَحٌ مِنْ عِيدَانٍ تَحْتَ سَرِيرِه يَبُولُ فِيهِ بِاللَّيْلِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَائِـيُِّ
উমায়মাহ্ বিনতু রুক্বায়ক্বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাটের নিচে একটি কাঠের গামলা ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে এতে প্রস্রাব করতেন। [১]
৩৬৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৩
وَعَنْ عُمَرَ قَالَ رَاۤنِي النَّبِيُّ ﷺ وَأَنَا أَبُولُ قَائِمًا فَقَالَ يَا عُمَرُ لَا تَبُلْ قَائِمًا فَمَا بُلْتُ قَائِمًا بَعْدُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَةَ قَالَ الشَّيْخُ الاِمَامُ مُحْىُ السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللهُ قَدْ صَحَّ
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখে বললেন, ‘উমার! (আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের ন্যায়) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করো না। অতঃপর আমি আর কক্ষনো দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করিনি। [১]
৩৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৪
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ اَتَى النَّبِيُّ ﷺ سُبَاطَةَ قَوْمٍٍ فَبَالَ قَائِمًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ - قِيْلَ كَانَ ذلِكَ لِعُذْرٍ
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক গোত্রের আবর্জনার স্থানে গেলেন এবং (সেখানে) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন। [১] বলা হয়ে থাকে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ওযরের কারণে এরূপ করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যাস্ত ছিলেন। সম্ভবত দীর্ঘ সময় বৈঠক থাকায় পেশাবের প্রয়োজন প্রখর হওয়ায় দূরে না গিয়ে নিকটেই প্রস্রাব করেছেন। কারণ দূরে গেলে তার ক্ষতি হতো।
কেউ কেউ বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধতার বর্ণনা দেয়ার জন্য এটি করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পায়খানার ক্ষেত্রে না করে প্রস্রাবের ক্ষেত্রে করেছেন। কারণ পায়খানার অধিক দুর্গন্ধ রয়েছে এবং তা সম্পাদনের সময় কাপড় অধিক উন্মুক্ত করতে হয়। সেক্ষেত্রে দূরে না গেলে সমস্যা রয়েছে।
এ হাদীস দ্বারা কোন প্রকার সমস্যা ও অপছন্দনীয় কারণে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।
তবে দাঁড়িয়ে প্রস্রাবের হুকুম নিয়ে আহলি ‘ইলমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। একদল আহলি ‘ইলমের মতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা বৈধ যদি প্রস্রাবের ফোঁটা ছিটে এসে গায়ে না লাগে। তাদের সম্পর্কে হুযায়ফার এই হাদীসসহ আরও বহু হাদীস ও সাহাবীগণের নির্দেশ রয়েছে।
আর একদলের মতে সমস্যা ব্যতীত দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরূহ। তারা তদের মতের পক্ষে এমন কতগুলো হাদীস দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন যার সবগুলোই ত্রুটিযুক্ত সহীহ নয়।
তবে সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি বৈধতার বর্ণনার জন্যই করেছেন। এটি তার স্থায়ী ‘আমাল ছিল না বরং তার স্থায়ী ও অধিকাংশ অবস্থায় ‘আমাল ছিল বসে বসে প্রস্রাব করা।
سباطة (সুবা-ত্বহ্) হলো গৃহকর্তাদের সুবিধার্থে গৃহের উঠানে অবস্থিত ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান। যা সাধারণত নরম হওয়ায় তাতে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবকারীর গায়ে ছিটা লাগে না।
৩৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৫
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَنْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يَبُولُ قَائِمًا فَلَا تُصَدِّقُوهُ مَا كَانَ يَبُولُ اِلَّا قَاعِدًا. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বলে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তোমরা তাঁর কথা বিশ্বাস করো না। তিনি সবসময়ই বসে প্রস্রাব করতেন। [১]
বলা হয়েছে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এই হাদীসের অর্থ যে ‘‘তোমাদের সংবাদ দিবে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে অভ্যস্ত ছিলেন তোমরা তার কথা বিশ্বাস করো না বরং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসে করতেই অভ্যস্ত ছিলেন।’’ ফলে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের বিপরীত নয়। অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধতার বর্ণনা দেয়ার জন্য কখনো কখনো দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন তবে তিনি বসে প্রস্রাব করতেই অভ্যস্ত ছিলেন।
৩৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৬
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ حَارِثَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّ جِبْرِيلَ أَتَاهُ فِي أَوَّلِ مَا أُوحِيَ إِلَيْهِ فَعَلَّمَهُ الْوُضُوْءَ وَالصَّلَاةَ فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الْوُضُوءِ أَخَذَ غَرْفَةً مِنْ المَاءٍ فَنَضَحَ بِهَا فَرْجَه. رَوَاهُ أَحْمَدُ والدَّارَقُطْنِى
যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে জিবরীল আমিনের মাধ্যমে যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহী নাযিল করা হচ্ছিল, তখনই তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উযূ করা ও সলাত আদায়ের শিক্ষা দিলেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উযূ করা শেষ করে এককোষ পানি (হাতে উঠিয়ে) নিলেন এবং তখন নিজের পুরুষাঙ্গের উপর ছিটিয়ে দিলেন। [১]
৩৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৭
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ جَاءَنِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِذَا تَوَضَّأْتَ فَانْتَضِحْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هذَا حَدِيثٌ غَرِيْبٌ قَالَ و سَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَعْنِىْ يَقُولُ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍٍّ الْهَاشِمِيُّ مُنْكَرُ الْحَدِيثِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমার কাছে জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি উযূ করবেন, তখন পানি (সন্দেহ দূর করার জন্য আপনার গুপ্তাঙ্গে) ছিটিয়ে দিবেন। [১]
৩৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৮
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ بَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَقَامَ عُمَرُ خَلْفَه بِكُوزٍ مِنْ مَاءٍ فَقَالَ مَا هذَا يَا عُمَرُ قَالَ مَاءٌ تَتَوَضَّأُ بِه قَالَ مَا أُمِرْتُ كُلَّمَا بُلْتُ أَنْ أَتَوَضَّأَ وَلَوْ فَعَلْتُ لَكَانَتْ سُنَّةً. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব করলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁর পেছনে পানির পাত্র নিয়ে দাঁড়ালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘উমার! এটা কী? ‘উমার (রাঃ) বললেন, পানি। আপনার উযূ করার করার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এজন্য আদিষ্ট হইনি যে, যখনই প্রস্রাব করব তখনই উযূ করব। যদি আমি সর্বদা এমন করি তাহলে এটা ‘সুন্নাত’ হয়ে যাবে। [১]
قوله (لَوْ فَعَلْتُ لَكَانَتْ سُنَّةً) অর্থাৎ- যদি আমি প্রস্রাবের পর সর্বদা পানি দ্বারা শৌচকার্য করতাম অথবা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতাম তাহলে তা আমার উম্মাতের জন্য আবশ্যক হয়ে যেত এবং এ বিষয়ে যে অবকাশ রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যেত। কেউ কেউ বলেছেনঃ এর অর্থ, যদি আমি এরূপ করতাম তবে তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায় পরিণত হতো।
‘আল্লামা মা'নাবী (রহঃ) বলেছেনঃ হাদীসে উযূ দ্বারা প্রস্রাবের পর প্রয়োজন ছাড়াই পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) অর্থ গ্রহণ কোন বাহ্যিকের বিপরীত। এর বাহ্যিক অর্থ শার‘ঈ উযূ যা ‘উমার (রাঃ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রস্রাবের ফলে উযূ নষ্ট হওয়ায় তিনি এ পানি দ্বারা উযূ করবেন। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধতা এবং উম্মাতের প্রতি সহজকরণার্থে তা করেননি।
৩৬৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৬৯
وَعَنْ أَبِيْ أَيُّوبَ وَجَابِرٍ وَأَنَسٍ أَنَّ هذِهِ الْايَةَ لَمَّا نَزَلَتْ ﴿فِيهِ رِجَالٌ يُّحِبُّونَ أَنْ يَّتَطَهَّرُوا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ﴾ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ إِنَّ اللهَ قَدْ أَثْنى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُورِ فَمَا طُهُورُكُمْ قَالُوا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلاةِ وَنَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِىْ بِالْمَاءِ قَالَ فَهُوَ ذَاكَ فَعَلَيْكُمُوهُ. رَوَاهُ ابْن مَاجَةَ
আবূ আইয়ূব, জাবির ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
“সেখানে (মাসজিদে কু’বায়) এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা অর্জন করাকে পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন”- (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯:১০৮) এ আয়াত যখন নাযিল হয় তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আনসারগণ! এ আয়াতে আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমাদের পবিত্রতা কী? তাঁরা বললেন, আমরা সলাতের জন্য উযূ করি, নাপাকী হতে পবিত্র হবার জন্য গোসল করি, পানি দিয়ে পবিত্রতা লাভ করে থাকি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই (পবিত্রতা), যার জন্য আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা করেছেন। সুতরাং তোমরা সবসময় এটা করতে থাকবে। [১]
হাকিম-এর বর্ণনায় এটি আরও স্পষ্টভাবে এসেছে যথাঃ (فَقَالُوْا تَوَضَّأُ الصَّلَاةُ وَنَغْتَسِلُ لِلْجَنَابَةِ فَقَالَ هَلْ مَعَ ذلِكَ غَيْرُه؟ فَلَاواِلَّا إلا أَنْ اَحَدُنَا) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশ্নের উত্তরে তারা বললো- আমরা সলাতের জন্য উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করি এবাং জানাবাতের গোসল করি। তিনি বললেন, এর সাথে আর কিছু কি কর? তারা বললো, না, তবে আমাদের কেউ পায়খানা-প্রস্রাবের পর পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করতে পছন্দ করে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটিই সেই কাজ যার জন্য আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা করেছেন। পরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের জন্য পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করাই আবশ্যক। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তারা পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করাই যথেষ্ট মনে করতেন, ঢিলা ব্যবহারের প্রয়োজন মনে করতেন না।
কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বাযযার যে বর্ণনাটি এনেছেন যথাঃ (أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ سَأَلَ أَهْلُ قُبَاءٍ فَقَالَ إِنَّ اللهَ يَثْنى عَلَيْكُمْ فَقَلُوْا إِنَّا نَتَّبِعُ الْحِجَارَةَ الْمَاءِ) অর্থাৎ- ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবাবাসীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা এমন কি ‘আমাল কর যার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রশংসা করেছেন? তারা উত্তরে বলল, আমরা পায়খানা-প্রস্রাবের পর ঢিলার সাথে সাথে পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করি’’। তার (সে বর্ণনাটির) সূত্রে ইমাম বুখারী, নাসায়ীসহ আরো অনেকের মতে দুর্বল হিসেবে অভিহিত। রাবী মুহাম্মাদ বিন ‘আবদুল ‘আযীয থাকায় তা য‘ঈফ। এছাড়াও মুয়াত্ত্বা মালিক গ্রন্থে অন্য একটি দুর্বল সানাদে এই বর্ণনা এসেছে। অথচ ইমাম হাকিম ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে যে মূল হাদীস বর্ণনা করেছেন তাতে শুধুমাত্র পানি দ্বারা ইসতিনজার উল্লেখ রয়েছে।
আবূ আইয়ূব (রাঃ)-এর এ হাদীসের মাধ্যমে পানি দ্বারা ইসতিনজা এবং যারা এ ‘আমাল করে তাদের প্রশংসার বিষয়টি প্রমাণিত। যেহেতু এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জিত হয়। ‘উলামাহগণ বলেছেনঃ ঢিলা দ্বারা ইসতিনজা করার চেয়ে পানি দ্বারা করা অধিক উত্তম। আর উভয়টি ব্যবহার করা সর্বসাকুল্যে উত্তম। কিন্তু আমীর আল্ ইয়ামানী বলেছেন, একসঙ্গে উভয়টির ব্যবহার আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাইনি।
৩৭০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭০
وَعَنْ سَلْمَانَ قَالَ قَالَ بَعْضُ الْمُشْرِكِينَ وَهُمْ يَسْتَهْزِئُِ إِنِّي لَأَرى صَاحِبَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ حَتَّى الْخِرَاءَةِ قُلْتُ أَجَلْ أَمَرَنَا أَنْ لَا نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ وَلَا نَسْتَنْجِيَ بِأَيْمَانِنَا وَلَا نَكْتَفِيَ بِدُونِ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ لَيْسَ فِيهَا رَجِيعٌ وَلَا عَظْمٌ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وأَحْمَدُ وَاللَّفْظُ لَه
সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুশরিকদের কেউ ঠাট্টা করে আমাকে বলল, তোমাদের বন্ধু (অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তো দেখছি তোমাদেরকে পায়খানা-প্রস্রাবের নিয়ম-কানুনও শিখিয়ে দিচ্ছেন। আমি বললাম, হাঁ (এটা তো তাঁর অনুগ্রহ, দোষের তো কিছু নেই)। তিনি আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আমরা যেন পায়খানার সময় ক্বিবলার দিকে মুখ করে না বসি, ডান হাতে শৌচকর্ম না করি এবং পায়খানার পর তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার না করি। আর এতে (ঢিলা) যেন গোবর ও হাড় না থাকে। [১]
‘আল্লামা সিন্দী বলেছেনঃ সঠিক হলো সাহাবী তার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন এভাবে যে, তুমি যাকে উপহাসের কারণ বলছ তা মুসলিমগণ শত্রুদের নিকট প্রকাশ করে বেড়ায় এমন কোন কারণ নয়। উপরন্তু তার বিশদ বর্ণনা জানার পর মন তাকে ভালো বিষয় হিসেবে মেনে নিবে। অতএব, উল্লেখ করতে খারাপ এমন বিষয়ের দিকে নিসবাত করায় তাকে উপহাস করার জন্য কোন দৃষ্টান্ত হতে পারে না।
৩৭১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭১
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ ابْنِ حَسَنَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَفِي يَدِهِ الدَّرَقَةُ فَوَضَعَهَا ثُمَّ جَلَسَ خَلْفَهَا فَبَالَ إِلَيْهَا فَقَالَ بَعْضُهم انْظُرُوا إِلَيْهِ يَبُولُ كَمَا تَبُولُ الْمَرْأَةُ فَسَمِعَهُ النَّبِيّ ﷺ فَقَالَ وَيْحَكَ أََمَا عَلِمْتَ مَا أَصَابَ صَاحِبُ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانُوا إِذَا أَصَابَهُمْ الْبَوْلُ قَرَضُوهُ بِالْمَقَارِيضِ فَنَهَاهُمْ فَعُذِّبَ فِي قَبْرِه. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ
আবদুর রহমান ইবনু হাসানাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর থেকে বের হয়ে) আমাদের কাছে এলেন, আর তাঁর হাতে ছিল একটি চামড়ার ঢাল (বর্ম)। তিনি ঢালটি (পর্দাস্বরূপ স্থাপন করে) তার দিকে ফিরে মাটিতে বসে প্রস্রাব করলেন। তখন (মুশরিকদের) কয়েকজন বলে উঠল, দেখ, মেয়েদের মতো (পর্দা করে) প্রস্রাব করছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা শুনলেন এবং বললেন, তোমার জন্য আফসোস হয়, তুমি কি জানো না যে, বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির কি ঘটেছিল? অর্থাৎ তাদের শরীরে (বা কাপড়ে) যখন প্রস্রাব লাগতো, তখন তারা কাঁচি দিয়ে তা কেটে ফেলতো। তাই সে (বানী ইসরাঈল-এর এক ব্যক্তি) তা হতে মানুষকে নিষেধ করল। ফলে (মৃত্যুর পর) তাকে ক্ববরের ‘আযাব দেয়া হল। [১]
* প্রত্যেক মুসলিমকে বসে প্রস্রাব করতে হবে যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে প্রস্রাব করেছেন।
* বানী ঈসরাঈলের প্রস্রাবের ক্ষেত্রে অসতর্কতার শাস্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন শরীরে প্রস্রাব লাগলে তা কেটে ফেলতে হতো। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সর্বাবস্থায় কাপড় কেটে ফেলতে হতো। তবে বুখারীর বর্ণনায় কাপড় কেটে ফেলার উল্লেখ এসেছে।
* সৎকাজে বাধা প্রদান না করে বরং প্রত্যেককে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করতে হবে, না হলে বানী ঈসরাঈলের এ ব্যক্তির পরিণতি ভোগ করতে হবে।
৩৭২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭২
وَرَوَاهُ النِّسَاۤئِـيُّ عَنْهُ وَعَنْ اَبِيْ مُوْسى
ইমাম নাসায়ী থেকে বর্ণিতঃ
ইমাম নাসায়ী এ হাদীসটি ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। [১]
৩৭৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৩
وَعَنْ مَرْوَانَ الْاَصْفَرِ قَالَ رَاَيْتُ ابْنَ عُمَرَ اَنَاخَ رَاحِلَتَه مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ ثُمَّ جَلَسَ يَبُوْلُ اِلَيْهَا فَقُلْتُ يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمنِ اَلَيْسَ قَدْ نُهِىَ عَنْ هذَا؟ قَالَ بَلْ اِنَّمَا نُهِىَ عَنْ ذلِكَ فِي الْفَضَاءِ فَاِذَا كَانَ بَيْنَكَ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ شَىْءٌ يَّسْتُرُكَ فَلَا بَاْسَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
মারওয়ান আল আসফার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি ক্বিবলার দিকে তার উটকে বসালেন। তারপর উটের দিকে বসে প্রস্রাব করতে লাগলেন। আমি বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! এটা হতে কি নিষেধ করা হয়নি। তিনি বললেন, না, বরং উন্মুক্ত জায়গায় এরূপ করা নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যখন তোমার আর ক্বিবলার মধ্যে এমন কোন জিনিস আড়াল হয়, তখন এরূপ করাতে কোন দোষ নেই। [১]
[ক্বিবলাকে সামনে বা পশ্চাতে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার উক্তি আমার কর্মের উপর প্রাধান্য পাবে। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ নেই।] (সম্পাদক)
৩৭৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৪
وَعَنْ أَنَسِ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ قَالَ الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّىْ الْأَذى وَعَافَانِىْ. رَوَاهُ ابن مَاجَةَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা হতে বের হতেন, এ দু‘আ পড়তেন : “আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আয্হাবা ‘আন্নিল আযা-ওয়া‘আ-ফানী”- [অর্থাৎ- সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করেছেন ও আমাকে নিরাপদ করেছেন]। [১]
৩৭৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৫
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ لَمَّا قَدِمَ وَفْدُ الْجِنِّ عَلَى النَّبِيّ ﷺ قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ انْهَ أُمَّتَكَ أَنْ يَسْتَنْجُوا بِعَظْمٍ أَوْ رَوْثَةٍ أَوْ حُمَمَةٍ فَإِنَّ اللهَ جَعَلَ لَنَا فِيهَا رِزْقًا قَالَ فَنَهى رَسُولُ اللهِ ﷺ عَنْ ذلِكَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জিনের প্রতিনিধি দল যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলেন, তখন তাঁর নিকট বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতকে গোবর, হাড় ও কয়লা দিয়ে ঢিলা ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিন। আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে আমাদের রিয্ক্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। অতএব রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করে দেন। [১]
৩৭৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৬
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلى أُمَّتِيْ لَامَرْتُهُمْ بِتَأْخِيرِ الْعِشَاءِ وَبِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমি আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে ‘ইশার সলাত দেরীতে আদায় করতে ও প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। [১]
* (আমরা এর প্রত্যুত্তরে বলব) প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা ভিন্ন অন্য স্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়া উযূ ভঙ্গের কারণ এ ভিত্তিতে সুস্পষ্ট বক্তব্যের মোকাবেলায় প্রদত্ত ব্যাখ্যার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে না। যেহেতু এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। যদি তাদের মিসওয়াকের ফলে মাঢ়ি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার দাবী মেনে নেয়া হয় তাহলে যার এ আশংকা রয়েছে সে মাঢ়ি ব্যতীত দাঁত এবং জিহবা মিসওয়াক করবে।
২। মিসওয়াকের মাধ্যমে দাঁতের ময়লা পরিষ্কার করণের মতো এ কাজ মাসজিদে সমুচীন নয়।
(এর প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) এ ব্যাখ্যাটিও প্রত্যাখ্যাত। ‘আল্লামা ‘আযীম আবাদী غاية المقصود গ্রন্থে বলেছেন, আমরা মিসওয়াকের মাধ্যমে ময়লা পরিষ্কার করণের এ দাবী মানি না। আর কিভাবে তা হতে পারে, যেখানে যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)-এর মতো সাহাবী লেখকের ন্যায় কানের উপর কলম নিয়ে সলাতে উপস্থিত হতেন এবং যখনই সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই মিসওয়াক করতেন সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আরম্ভ হয়ে গেলে মিসওয়াকটি আগের স্থানে রেখে দিতেন। এ ছাড়াও খত্বীব বাগদাদী ও ইবনু আবী শায়বাহ্ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এবং ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস নিয়ে এসেছেন, যেখানে বলা হয়েছে সাহাবীগণের কানের উপর মিসওয়াক থাকতো সলাতের আগে মিসওয়াক করতেন আবার তার কানের উপর রেখেই সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করতেন।
৩। যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটা প্রমাণিত নয় যে, তিনি সলাতে দাঁড়ানোর সময় মিসওয়াক করেছেন, তাই কোন কোন বর্ণনা হতে প্রাপ্ত عند كل وضوء (প্রত্যেক উযূ (ওযু/ওজু/অজু) র সময়) এর ভিত্তিতে অত্র হাদীসটিকেও প্রত্যেক সলাতের উযূর সময় এর উপর ধারণ করা হবে।
(আমরা এর প্রত্যুত্তরে বলব) এটি একেবারেই অসম্ভব যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতকে প্রত্যেক সলাতের সময় গুরুত্বসহকারে মিসওয়াক করার আদেশ দিবেন আর তিনি সে ‘আমাল না করে পরিত্যাগ করবেন। বরং এ বিষয়ে তাঁর সুস্পষ্ট ‘আমাল প্রমাণিত হয়েছে। ত্ববারানীতে যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক না করে গৃহ হতে কোন সলাতের জন্য বের হতেন না। ‘আল্লামা হায়সামী বলেছেন, এ হাদীসের রাবীগণ বিশ্বস্ত। আর এ বিষয়টি সুবিদিত যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান শ্রবণ করার পর ইক্বামাতের সময়েই গৃহ হতে বের হতেন। অতএব, গৃহে তিনি সলাতে দাঁড়ানোর সময়ই মিসওয়াক করতেন। আর উভয় বর্ণনার মাঝে এমন কোন বৈপরীত্য নেই যে, সলাতের সময়ের বর্ণনাটি উযূর ক্ষেত্রে নিতে হবে, বরং এটা বলা যেতে পারে যে, উভয়টিই সুন্নাত।
সলাতের দাঁড়ানোর সময় মিসওয়াক সুন্নাহ হওয়ার রহস্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অবস্থা হলো সলাত (সালাত/নামায/নামাজ)। অতএব ‘ইবাদাতের সম্মান প্রদর্শনার্থে সেটি পূর্ণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নাবস্থায় থাকা চাই। মুসনাদে বাযযারে ‘আলী (রাঃ) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এসেছে মালাক মুসল্লীর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের জন্যে তার নিকটবর্তী হতেই থাকে এমনকি সে মুখে মুখ লাগিয়ে দেয়, ফলে মুসল্লীর মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হলে মালাক সে দুর্গন্ধে কষ্ট পায়। এজন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াকের নিয়ম চালু করলেন যাতে ফেরেশতা কষ্ট না পায়।
৩৭৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৭
وَعَنْ شُرَيْحِ بْنِ هَانِىْءٍ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ يَبْدَأُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ بَيْتَه قَالَتْ بِالسِّوَاك. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
তাবি'ঈ শুরায়হ ইবনু হানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, বলুন তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে কোন্ কাজটি করতেন? তিনি বললেন, মিসওয়াক। [১]
১। যে কোন সময় মিসওয়াক করা ভালো।
২। মিসওয়াকের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
৩। বাড়িতে প্রবেশ করাটা যেমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট না, অনুরূপ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সলাতের সময়ের সাথে সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় মিসওয়াক বার বার করা বৈধ।
৩৭৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৮
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাত আদায়ের জন্য ঘুম থেকে উঠেই মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। [১]
৩৭৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৭৯
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الْأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِى الاِسْتِنْجَاءَ قَالَ الرَّاوِىُّ وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ اِلَّا اَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ.
وَفِىْ رِوَايَةٍ الْخِتَانُ بَدَلَ اِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ لَمْ اَجِدْ هذِهِ الرِّوَايَةَ فِي الصَّحِيْحَيْنِ وَلَا فِىْ كِتَابِ الْحُمَيْدِىِّ وَلكِنْ ذَكَرَهَا صَاحِبُ الْجَامِعِ وَكَذَا الْخَطَّابِىُّ فِىْ مَعَالِمِ السُّنَنِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দশটি বিষয় ফিত্বরাহ্ অর্থাৎ প্রকৃতিগত স্বভাবের অন্তর্গত। (১) গোঁফ খাটো করা, (২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, (৫) নখ কাটা,(৬) আঙ্গুলের গিরাগুলো ধোয়া, (৭) বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, (৮) গুপ্তাঙ্গের লোম কাটা, (৯) শৌচকাজ করা (পবিত্র থাকা) এবং রাবী বলেন, দশমটা আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা ‘কুলি করা’। [১]
অপর এক বর্ণনায় (দ্বিতীয় জিনিসটি) দাড়ি বাড়াবার স্থলে খতনা করার কথা এসেছে। মিশকাতের সংকলক বলেন, এ বর্ণনাটি বুখারী-মুসলিমে আমি পাইনি, আর হুমায়দীতেও নেই (যা সহীহায়নের জামি’)। অবশ্য এ রিওয়ায়াতকে জামিউস সগীরে উল্লেখ করেছেন। এভাবে খাত্ত্বাবী (রহঃ) মা’আলিমুস সুনানে বর্ণনা করেছেন।
(إِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ) অর্থাৎ- দুইগাল এবং থুতনীতে উদগত চুলগুলোকে দাঁড়ি বলা হয়। দাড়ি না কেটে ছেড়ে দেয়া এবং বর্ধিত করা। কোন কোন পূর্ববর্তী ‘আলিম সৌন্দর্য বর্ধন এবং উপযোগিতার ক্ষেত্রে দাড়ির দৈর্ঘ্য প্রস্থের দিকে কিছু কাটার বৈধতা দিয়েছেন। তবে তা যেন প্রসিদ্ধতা লাভের উদ্দেশে না হয়।
(قَصُّ الْأَظْفَارِ) নখ কাটা। অর্থাৎ- আঙ্গুলের মাথায় অবস্থিত নখের বর্ধিতাংশ কেটে ফেলা। কেননা সেই বর্ধিতাংশে ময়লা একত্রিত হয়ে আঙ্গুলকে নোংরা করে ফেলে। কখনো কখনো তা এত বড় হয় যা উযূতে পানি পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
(غَسْلُ الْبَرَاجِمِ) অর্থাৎ- আঙ্গুলের গ্রন্থি ও গিঁট ধৌত করা। এর মাধ্যমে তিনি ময়লা জমে থাকার স্থানসমূহ পরিষ্কার করার জন্য দিক-নিদের্শনা দিয়েছেন।
(نَتْفُ الْإِبْطِ) (নাত্ফুল ইবত্ব) نَتْفٌ শব্দের অর্থ আঙ্গুল দিয়ে চুল উপড়ানো, অর্থাৎ- বগলের চুল হাতের আঙ্গুল দিয়ে উপড়িয়ে ফেলা। কেননা আঙ্গুল দিয়ে উপড়ালে তা দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে তার বৃদ্ধি কম হয়। তবে বগলের চুল কর্তন করার মাধ্যমে সুন্নাত আদায় হবে কিনা- এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন কর্তনসহ যে কোন উপায়ে অপসারণ করার মাধ্যমে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কেননা এর মূল লক্ষ্য হলো ময়লা পরিষ্কার করা, বিশেষত সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা অবশ্যই বৈধ যে তা উপড়ানোতে কষ্ট পায়।
(حَلْقُ الْعَانَةِ) (হালকুল ‘আ-নাহ্) عَانَةُ বলা হয় নারী-পুরুষের শরীরের সামনের দিকে লজ্জাস্থানের উপর বা তার উৎসস্থলে উদগত চুল। কেউ কেউ বলেছেন, পিছনের স্থানের চারপাশে উদগত চুল। অতএব এ উক্তিগুলোর ভিত্তিতে সামনে ও পিছনের লজ্জাস্থানের চারপাশে উদগত সমস্ত চুলগুলো কর্তন করা মুসতাহাব। তবে কেউ কেউ বলেছেন, মহিলাদের তা কর্তন না করে যে কোন উপায়ে উপড়ে ফেলাই উত্তম।
৩৮০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮০
عَنْ اَبِي دَاؤُدَ بِرِوَايَةِ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ
‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাদীসটি আবূ দাঊদ-এ ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
৩৮১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮১
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ النَّبِيِّ ﷺ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ. رَوَاهُ الشَّافِعِىُّ وأَحْمَدُ وَالدَّارِمِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ وَرَوَى الْبُخَارِيُّ فِيْ صَحِيْحَه بِلَا اِسْنَادٍ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মিসওয়াক হল মুখগহবর পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম। [১]
৩৮২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮২
وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ الْحَيَاءُ وَيُرْوَى الخِتَانُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : চারটি বিষয় নাবী রসূলদের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত- (১) লজ্জাশীলতা, আর এক বর্ণনায় এর স্থলে খতনার কথা বলা হয়েছে; (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা; (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) বিয়ে করা। [১]
الْحَيَاءُ (আল হায়া-) এ লজ্জা দ্বারা দীনী লজ্জা। যেমন লজ্জাস্থান আবৃত করা, মানবতা যাকে খারাপ মনে করে তাত্থেকে বেঁচে থাকা এবং শারী‘আত অশ্লীলসহ অন্যান্য যেসব কাজকে নিষিদ্ধ করেছে এর দ্বারা জন্মগত লজ্জা উদ্দেশ্য নয়। কেননা এতে সকল মানুষই অংশীদার। আর জন্মগত বা স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য নাবীদের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হয় না।
الخِتَانُ (আল খিতা-ন) খতনা করা ইবরাহীম (আঃ) থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নাবীদের সুন্নাত।
تَعَطَّرٌ (তা‘আত্ত্বার) গায়ে এবং কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৩৮৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৩
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ لَا يَرْقُدُ مِنْ لَيْلٍ وَلَا نَهَارٍ فَيَسْتَيْقِظُ اِلَّا اسْتَاكَ قَبْلَ أَنْ تَتَوَضَّأَ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনে বা রাতে যখনই ঘুম হতে উঠতেন, উযূ করার পূর্বে মিসওয়াক করতেন। [১]
৩৮৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৪
وَعَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَبِيُّ ﷺ يَسْتَاكُ فَيُعْطِينِي السِّوَاكَ لِأَغْسِلَه فَأَبْدَأُ بِه فَأَسْتَاكُ ثُمَّ أَغْسِلُه وَأَدْفَعُه إِلَيْهِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করতেন। অতঃপর ধুয়ে রাখার জন্য তা আমাকে দিতেন। আমি (ধোয়ার আগে) ঐ মিসওয়াক দিয়ে নিজে মিসওয়াক করতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) দিতাম। [১]
শিক্ষা: (১) অনুমতিক্রমে অন্যের মিস্ওয়াক ব্যবহার করা বৈধ,
(২) মিস্ওয়াক ব্যবহার করার আগে ওপরে তা ধুয়ে নেয়া সুন্নাত।
৩৮৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৫
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ أَرَانِي فِى الْمَنَامِ أَتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ فَجَاءَنِي رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْاۤخَرِ فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الْأَصْغَرَ مِنْهُمَا فَقِيلَ لِي كَبِّرْ فَدَفَعْتُه إِلَى الْأَكْبَرِ مِنْهُمَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখন্ড মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করছি। এমন সময় দু’জন লোক আমার কাছে এলো, যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে (বয়সে) বড়। আমি আমার মিসওয়াকটি ছোটজনকে দিতে উদ্যত হলে আমাকে বলা হল, বড়জনকেই দিন। অতঃপর আমি তা বড়জনকেই দিলাম। [১]
ইমাম আহমাদ ও বায়হাক্বী হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ
‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করে তা বড়জনকে দিলেন, অতঃপর বললেন জিবরীল (আঃ) আমাকে এভাবে আদেশ করেছেন।’’
অতএব উক্ত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে।
এ বিষয়টির আরো প্রমাণ পাওয়া যায়, আবূ দাঊদে যা তিনি (ইমাম আবূ দাঊদ) হাসান সানাদে বর্ণনা করেছেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করতেন এবং তাঁর নিকটে দু’জন ব্যক্তি থাকতো, যাদের একজন অপরজনের চেয়ে বড়। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মিসওয়াকের ফাযীলাতের বিষয়ে ওয়াহী করা হলো।
উপরোক্ত হাদীস দু’টির মাঝে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, এ ঘটনাটি ঘটেছে জাগ্রত অবস্থায়, কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থার বিষয়টি বলেছেন।
এ বিষয়ে সতর্ক করার জন্য যে বিষয়টি ওয়াহীর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। যার কতক অংশ কেউ বর্ণনা করেছেন আর কতক অংশ বর্ণনা করেননি।
উল্লেখ্য যে, দু’জনের মধ্যে ছোটজনকে মিসওয়াক প্রদানের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ছোটজন ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে অথবা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। যার ফলে জিবরীল (আঃ) বড়জনকে তা (মিসওয়াক) প্রদান করতে বলেন।
স্মর্তব্য যে, এ হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের দুধ পান করানোর হাদীসের বিপরীত নয় যে, হাদীসে তাঁর বামপাশে আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও এদের মতো বিশিষ্ট সাহাবীগণকে রেখে ছোটজন (সাহাবী)-কে প্রথমে দুধের পাত্র প্রদান করলেন।
কারণ- তাঁরা (সাহাবীরা) সকলেই ছিলেন তাঁর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম পাশে। আর ছোট সাহাবী ছিলেন তাঁর ডান পাশে। আর এ বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘ডান দিক থেকে শুরু কর।’’
৩৮৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৬
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا جَاءَنِي جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَام قَطُّ اِلَّا أَمَرَنِي بِالسِّوَاكِ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ أُحْفِيَ مُقَدَّمَ فِيَّ. رَوَاهُ اَحْمَد
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখনই জিবরীল (আঃ) আমার কাছে আসতেন আমাকে মিসওয়াক করার তাগিদ দিতেন; এমনকি আমার ভয় হল যে, (মিসওয়াক করার দরুন) আমার মুখের সম্মুখভাগ যেন আবার ক্ষত-বিক্ষত না করে ফেলি। [১]
৩৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৭
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَقَدْ أَكْثَرْتُ عَلَيْكُمْ فِي السِّوَاكِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমি তোমাদেরকে মিসওয়াকের (গুরুত্ব ও ফাযীলাতের) ব্যাপারে অনেক বেশি বললাম। [১]
৩৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৮
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَسْتَنُّ وَعِنْدَه رَجُلَانِ اَحَدُهُمَا اَكْبَرُ مِنَ الْاَخَرِ فَاُوْحِىَ إِلَيْهِ فِيْ فَضْلِ السِّوَاكَ اَنْ كَبِّرْ اَعْطِ السِّوَاكَ اَكْبَرَهُمَا. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করছিলেন। তখন তাঁর কাছে দু’জন লোক উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। তখন মিসওয়াকের ফাযীলাত সম্পর্কে ওয়াহী নাযিল হল- তাদের মধ্যে বড়জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে মিসওয়াকটি দিন। [১]
৩৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৮৯
وَعَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ تَفْضُلُ الصَّلَاةُ الَّتِىْ يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلَاةِ الَّتِىْ لَا يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِيْنَ ضِعْفًا. رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِي شُعَبُ الإِيْمَان
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে সলাতের জন্য (উযূ করার সময়) মিসওয়াক করা হয় তার ফাযীলাত সত্তর গুন বেশি সে সলাতের চেয়ে যে সলাতে মিসওয়াক করা হয়নি। [১]
৩৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯০
وَعَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلى أُمَّتِي لَامَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ وَلَاخَّرْتُ صَلَاةَ الْعِشَاءِ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ قَالَ فَكَانَ زَيْدُ بْنُ خَالِدٍ يَشْهَدُ الصَّلَوَاتِ فِي الْمَسْجِدِ وَسِوَاكُه عَلى أُذُنِه مَوْضِعَ الْقَلَمِ مِنْ أُذُنِ الْكَاتِبِ لَا يَقُومُ إِلَى الصَّلَاةِ اِلَّا أُسْتَنَّ ثُمَّ رَدَّه إِلى مَوْضِعِه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ اِلَّا اَنَّه لَمْ يَذْكُرْ «وَلَاخَرَّتُ صَلَاةَ الْعِشَاءِ اِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ» وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيْحٌ
যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : আমি যদি উম্মাতকে কষ্টে ফেলার আশংকা না করতাম তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করতে হুকুম (ফার্য) করতাম এবং 'ইশার সলাত রাতের এক-তৃতীয়াংশে পিছিয়ে দিতাম। তিনি [আবূ সালামাহ্ (রাঃ)] বলেন, (আমি দেখেছি) যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) সলাতে উপস্থিত হতেন। তার মিসওয়াক স্বীয় কানে আটকানো থাকত, যেখানে লেখকের কলম থাকে ঠিক তদ্রূপ। যখনই তিনি সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই মিসওয়াক করতেন। তারপর তা আবার সেখানে (কানে) রেখে দিতেন।
আবূ দাঊদ ‘ইশার সলাত পিছিয়ে দিতাম’ বাক্য ছাড়া বাকীটুকু বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এ হাদিসকে হাসান সহীহ বলেছেন। [১]
(لَا يَقُومُ إِلَى الصَّلَاةِ اِلَّا أُسْتَنَّ) বাহ্যিক হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি সলাতের জন্য মিসওয়াক করতেন।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ উক্ত হাদীস দ্বারা উপযুক্ত দলীল সাব্যস্ত হয় না। কেননা যায়দ ইবনু খালিদ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, অন্য কেউ (হাদীসটি) বর্ণনা করেননি।
শায়খ ‘উবায়দুল্লাহ রহমান মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ আমি বলছি, উক্ত হাদীস যায়দ ইবনু খালিদ একাকীভাবে বর্ণনা করেননি বরং এ সম্পর্কিত হাদীস আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মিসওয়াকগুলো তাদের কানের উপর থাকতো। প্রত্যেক সলাতের সময় তারা মিসওয়াক করে নিতেন।
এছাড়াও সাহাবী ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীগণের থেকে বর্ণিত আছে তারা বিকাল বেলা ঘুরাফেরা করতেন আর তাদের মিসওয়াকগুলো তাদের কানেই রাখতেন।
৩৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯১
عن أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِه فَلَا يَغْمِسْ يَدَه فِي الْإِنَاءِ حَتّى يَغْسِلَهَا ثَلَاثًا فَإِنَّه لَا يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে তখন সে যেন স্বীয় হাত (পানির) পাত্রে না ডুবায়, যে পর্যন্ত তা তিনবার ধুয়ে না নেয়। কারণ সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল। [১]
৩৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯২
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِه فَتَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلَاثًا فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيتُ عَلى خَيْشُومِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠবে ও উযূ করবে, সে যেন তিনবার নাকে পানি দিয়ে (নাক) ঝেড়ে ফেলে। কেননা শয়তান তার নাকের বাঁশিতে রাত যাপন করে। [১]
আরো আদেশ এসেছে যে, হাই তোলার সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে কারণ ঐ সময় শয়তান (শয়তান) মুখের মধ্যে প্রবেশ করে। অতঃপর উদ্দেশ্য হলো خيشوم অর্থাৎ- নাকের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা জমা হওয়ার স্থান আর ঐ স্থানেই রাত্রি যাপন করাটা শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্য উপযুক্ত স্থান। অতএব মানুষের জন্য উচিত নাসিকা পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
৩৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৩
وَقِيْلَ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَتَوَضَّأُ فَدَعَا بِوَضُوءٍ فَأَفْرَغَ عَلى يَدَيْهِ فَغَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَه ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَه بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِه ثُمَّ ذَهَبَ بِهِمَا إِلى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا حَتّى رَجَعَ إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ. رَوَاهُ مَالِكُ وَالنَّسَائِـيُِّ وَلَابِىْ دَاوٗدَ نَحْوَه ذَكَرَه صَاحِبُ الْجَامِعِ
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
'আবদুলাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করতেন? (এ কথা শুনে) তিনি উযূর জন্য পানি আনালেন, তারপর দুই হাতের উপর তা ঢাললেন এবং দুই হাত (কব্জি পর্যন্ত) দু’বার ধুয়ে নিলেন। এরপর তিনবার করে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনবার মুখ ধুলেন। তারপর হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার করে ধুলেন। এরপর দুই হাত দিয়ে ‘মাথা মাসাহ’ করলেন। (মাসাহ এভাবে করলেন) দুই হাতকে মাথার সম্মুখভাগ হতে পেছনের দিকে নিয়ে আবার পেছন হতে সম্মুখভাগে নিয়ে এলেন। তারপর আবার উল্টো দিকে যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে দুই হাত নিয়ে এলেন। অতঃপর দুই পা ধুলেন। [১] মালিক ও নাসায়ী; আবূ দাঊদেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। জামিউই উসূল-এর গ্রন্থকার এ কথা বলেছেন।
হাদীসটির পরবর্তী অংশে এসেছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করেছেন এবং নাকে পানি দিয়েছেন। তিনি তিনবার এরূপ করেছেন। এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, তিনি এক কোষ থেকে কুলি করেছেন ও নাকেও পানি দিয়েছেন।
হাদীসে মুখমণ্ডল ধৌত করার উল্লেখ আছে। মুখমণ্ডল বলতে মাথার চুলের গোড়া থেকে নিয়ে চিবুকের শেষভাগ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত বোঝায়। হাত ধৌত করার সময় দু’ হাতের কনুই সহ ধৌত করতে হবে।
ইমাম মালিক-এর মতটিই উত্তম। কারণ কুরআনে কারীমের আয়াতটিতে কোন পরিমাণের উল্লেখ আসেনি। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু গোটা মাথা মাসাহ করেছেন, তাই পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ওয়াজিব। একমাত্র মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্-এর হাদীসে এসেছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার অংশ বিশেষের উপর মাসাহ করেছেন। তবে মুগীরার হাদীসেও এসেছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কপাল ও পাগড়ির উপর মাসাহ করেছেন। এ বর্ণনা দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, মাথার অংশ বিশেষের উপর মাসাহ করা ওয়াজিব যেহেতু মাথা মাসাহের ক্ষেত্রে কোন সংখ্যার উল্লেখ নেই। তাই মাথা একবারই মাসাহ করতে হবে। হাতকে প্রথমে সামনে থেকে পিছনে তারপর পিছন থেকে সামনে আনতে হবে।
এ হাদীসে উভয় পা ধোয়ার কথা এসেছে কিন্তু সংখ্যা উল্লেখ হয়নি। বাহ্যত এটাই বুঝা যায় যে, পা একবারই ধৌত করেছেন। তবে পূর্বে যেহেতু দু’বার ধোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে, তাই এখানেও দু’বার ধোয়া বুঝা যেতে পারে। আবার তিনবার ধোয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তিনবার করেই উযূর অঙ্গসমূহ ধৌত করতেন। পা ধৌত করার সময় পায়ের টাখনুসহ ধৌত করতে হবে।
৩৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৪
وَفِى المُتَّفَقِ عَلَيْهِ قِيْلَ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ تَوَضَّأْ لَنَا وُضُوءَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَدَعَا بِإِنَاءٍ فَأَكْفَأَ مِنْهَا عَلى يَدَيْهِ فَغَسَلَهُمَا ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَاسْتَخْرَجَهَا فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفٍّ وَاحِدَةٍ فَفَعَلَ ذلِكَ ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَه فَاسْتَخْرَجَهَا فَغَسَلَ وَجْهَه ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَه فَاسْتَخْرَجَهَا بِرَأْسِه فَأَقْبَلَ بِيَدَيْهِ وَأَدْبَرَ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا كَانَ وُضُوءُ رَسُولِ اللهِ ﷺ.
وَفِيْ رِوَايَةٍ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمٍ رَأْسِه ثُمَّ ذَهَبَ بِهَمَا إِلى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا حَتّى رَجَعَ إِلى الْمَكَانِ الَّذِىْ بَدَأَ مِنْهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ .
وَفٍيْ رِوَايَةٍ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلَاثًا بِثَلَاثِ غَرَفَاتٍ مِّنْ مَّاءٍ.
وَفِيْ رِوَايَةٍ أخرى فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفَّةٍ وَاحِدَةٍ فَفَعَلَ ذلِكَ ثَلَاثًا.
وَفِيْ رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ فَمَسَحَ رَأْسَه فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ مَرَّةً وَّاحِدَةً ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
وَفِيْ أُخْرى لَه فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ مِّنْ غَرْفَةٍ وَّاحِدَةٍ
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিমকে বলা হল, যেভাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ করুন। তাই তিনি [‘আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ (রাঃ)] পানি আনলেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন। অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওযূ। [১]
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, (মাসাহ করার জন্য) নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। অর্থাৎ মাথার সামনের অংশ হতে ‘মাসাহ’ শুরু করে দুই হাত পিছন পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর আবার পিছন থেকে শুরু করে হাত সেখানে নিয়ে এলেন যেখান থেকে শুরু করেছিলেন। অতঃপর দুই পা ধুইলেন। [2]
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন, আর নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনবার করলেন। [3]
বুখারী বর্ণনার শব্দ হল, তারপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। আর এটা তিনি একবার করেছেন। অতঃপর টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধুইলেন। [4]
বুখারীরই এক বর্ণনায় শব্দ হল, অতঃপর তিনি কুলি করলেন ও নাক ঝারলেন তিনবার এক কোষ পানি দিয়ে। [5]
[2] সহীহ : বুখারী ১৮৫।
[3] সহীহ : মুসলিম ২৩৫।
[4] সহীহ : বুখারী ১৮৬।
[5] সহীহ : বুখারী ১৯৯।
সালামাহ্ ইবনু ক্বায়স হতে বর্ণিত তিরমিযী, নাসায়ীতে রয়েছে- إِذَ تَوَضَّأتِ فَانْتَثِرْ অর্থ- যখন তুমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে নাক ঝাড়বে বা পরিষ্কার করবে।
لَقِيْطُ بْنُ صَبْرَةَ এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- সায়িম বা রোযাদার না হলে নাকে পানি দেয়ার ব্যাপারে مُبَالَغَةُ করবে, অর্থাৎ- পরিপূর্ণভাবে পানি ব্যবহার করবে।
আবূ দাঊদে রয়েছে- (اِذَا تَوَضَّأَتْ فَمَضْمَضَ) যখন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে অতঃপর কুলি করবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে দারাকুত্বনীতে রয়েছে- (امرنا رسول الله صلي الله عليه وسلم بِالْمَضْمَضَةِ وَاِلْاٍسْتِنْشَاقَ) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুলি করতে ও নাকে পানি দিতে আদেশ করেছেন। ইবনু কুদামা আল-মুগনীতে এবং ইবনুল কাইয়্যুম আল-হাদীতে (اَلْمُغْنِىْ لِابْنُ قُدَامَةَ وَالْهَدْىُ لِاِبْنُ الْقَيُّمِ) উল্লেখ করেছেন তিন চুল্লু কুলি ও নাকে পানি দিতে একই সঙ্গে ব্যবহার করবে, অর্থাৎ- একচুল্লু নিয়ে একই সঙ্গে কিছু পানি মুখে কিছু পানি নাকে দিতে হবে এভাবে তিনবার। এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিমের হাদীস অধিক স্পষ্ট।
মির্‘আ-তুল মাফা-তীহ-এর লেখক বলেনঃ উল্লিখিত মতটি আমার নিকট বিশুদ্ধ ও পছন্দনীয় এবং একত্র বর্ণনাটা অধিক স্পষ্ট ও অধিক বিশুদ্ধ। আর চুল্লু পৃথক নেয়ার হাদীসটি জায়িযের দিক থেকে।
* এরপর আলোচনা মাথা মাসাহ প্রসঙ্গে। মাথা কতটুকু মাসাহ করা ফরয- এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
* ইমাম মালিক-এর মত সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ্ করা ওয়াজিব। আর এটাই অগ্রাধিকারযোগ্য বা প্রাপ্ত। কেননা আয়াতের শব্দ মুজমাল (সার-সংক্ষেপ) এর উদ্দেশ্য পূর্ণ মাথা। আর باء অক্ষর অতিরিক্ত অথবা কিছু অংশ মাসাহ করা, কিন্তু মৌলিক কথা পূর্ণ মাথা মাসাহ্ করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমালের দ্বারা প্রতীয়মান হয়।
* ইমাম শাফি‘ঈ-এর মত মাথার এক তৃতীয়াংশ মাসাহ করা যা অধিকাংশের বিপরীত। মুগীরাহ্-এর হাদীসে মাথার কিছু অংশ মাসাহ করার কথা রয়েছে। (إِنَّه مَسَحَ عَلى نَاصِيَتِه عَمَامِتِه) তিনি মাথার সম্মুখ ভাগ এবং পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন এ প্রসঙ্গে প্রমাণ নেই যে, মাথার কিছু অংশের উপর মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
* টাখনুসহ উভয় পাকে ধৌত করা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময় এ অভিমত উল্লেখ রয়েছে বুখারীতে।
৩৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৫
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ تَوَضَّأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَرَّةً مَرَّةً لَمْ يَزِدْ عَلى هذَا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উযূর স্থানসমুহ) একবার করে উযূ করলেন। একবারের অধিক ধুলেন না। [১]
* উযূর অঙ্গগুলো একবার ধৌত করা ওয়াজিব যেমন বুখারীতে উল্লেখ রয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (تَوَضَّأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَرَّةً مَرَّةً لَمْ يَزِدْ عَلى هذَا) অর্থ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একবার করে ধৌত করেন বেশী নয় আর মাথা মাসাহ করেন একবার।
আর এটাতে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, উযূর কর্মগুলো একবার করলে এটার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। এজন্য সংক্ষিপ্ত করেছেন। সহীহ হাদীসসমূহ এসেছে দু’বার করে এবং তিনবার। তিনবারটা পরিপূর্ণতা আর একবার যথেষ্ট। বুখারীতে রয়েছে একচুল্লু দিয়ে হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল ধৌত করা।
৩৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৬
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ تَوَضَّأَ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূর অঙ্গগুলোকে দু’বার করে ধুইলেন। [১]
৩৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৭
وَ عَنْ عُثْمَانَ اَنَّه تَوَضَّأَ بِالْمَقَاعِدِ فَقَالَ أَلَا أُرِيكُمْ وُضُوءَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ثُمَّ تَوَضَّأَ ثَلَاثًا ثَلَاثًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তিনি মাক্বা‘ইদ নামক স্থানে উযূ করতে বসলেন এবং বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ করে দেখাব না? অতঃপর তিনি তিন তিনবার করে ধুয়ে উযূ করলেন। [১]
সমস্যা? রিপোর্ট করুন!
৩৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৮
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَجَعْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ حَتّى إِذَا كُنَّا بِمَاءٍ بِالطَّرِيقِ تَعَجَّلَ قَوْمٌ عِنْدَ الْعَصْرِ فَتَوَضَّئُوا وَهُمْ عِجَالٌ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ وَأَعْقَابُهُمْ تَلُوْحُ لَمْ يَمَسَّهَا الْمَاءُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাক্কাহ্ হতে মাদীনায় ফিরে যাবার পথে একটি পানির কূপের কাছে পৌঁছলাম। আমাদের কেউ কেউ ‘আসরের সলাতের সময় তাড়াতাড়ি উযূ করতে গেলেন এবং তাড়াহুড়া করে উযূ করলেন। অতঃপর আমরা তাদের কাছে পৌঁছলাম, দেখি তাদের পায়ের গোড়ালি শুকনা, চকচক করছে। সেখানে পানি পৌঁছেনি। এটা দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সর্বনাশ! (শুকনা) গোড়ালির লোকেরা জাহান্নামে যাবে, তোমরা পূর্ণরূপে উযূ কর। [১]
সহীহ মুসলিমে রয়েছে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি দেখেন এক ব্যক্তি তার গোড়ালিকে ধৌত করেনি। অতঃপর বললেন, এটার জন্য শাস্তি হবে।
ত্ববারানীতে রয়েছে, ‘‘যে গোড়ালি ও পায়ের পাতার পেট ভালোভাবে ধৌত করা হয় না তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে’’।
(أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ) অর্থাৎ- উযূকে পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করো।
আর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) হলো নির্ধারিত অঙ্গসমূহ ধৌত করা, অতঃপর উযূকে পরিপূর্ণ করার আদেশ এমন একটি নির্দেশ যার মাধ্যমে ধৌত কার্যকে পূর্ণ করতে বলা হয়েছে এবং পানি পৌঁছে দিতে হবে প্রত্যেক বাহ্যিক অঙ্গে।
এ হাদীস নির্দেশ করে উযূতে দু’ পা ধৌত করা অত্যাবশ্যক।
৩৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৩৯৯
وَعَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ تَوَضَّاَ فَمَسَحَ بِنَاصِيَتِه وَعَلَى الْعَمَامَةِ وَعَلَى الْخُفَّيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন। তিনি কপালের চুলের উপর, পাগড়ীর উপর এবং মোজার উপর মাসাহ করলেন। [১]
৪০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০০
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَأْنِه كُلِّه فِي طُهُورِه وَتَرَجُّلِه وَتَنَعُّلِه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সব কাজই যথাসম্ভব ডান দিক হতে শুরু করতে পছন্দ করতেন- পাক-পবিত্রতা অর্জনে, মাথা আঁচড়ানোয় ও জুতা পরনে। [১]
নাবাবী বলেনঃ শারী‘আতের বিধান-নীতি প্রত্যেক সম্মান প্রদর্শনের ও সজ্জিতকরণের অধ্যায়ে রয়েছে, ডান দিক হতে শুরু করা মুসতাহাব বা পছন্দনীয় মনে করা ও পছন্দ করা এবং এরূপ চলতে থাকা।
৪০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا لَبِسْتُمْ وَإِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَءُوا بِأَيَامِنِكُمْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমরা কিছু পরিধান করবে এবং উযূ করবে, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে। [১] (আহমাদ, আবূ দাঊদ)
নাসায়ী ও তিরমিযীতে আছে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত (ان انبى ﷺ: اذا لبس قميصابدأ بميامنه) অর্থাৎ- ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামা পরিধান করতেন তখন ডান দিক হতে শুরু করতেন’’।
৪০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০২
وَعَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرْ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابن مَاجَةَ
সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হ’ (আল্লাহ তা‘আলার নাম) পড়েনি তার ওযু হয়নি। [১]
‘‘যে ব্যক্তির উযূ করার সময় বিসমিল্লা-হ বলেনি তার উযূ বিশুদ্ধ হয়নি।’’ বিসমিল্লা-হ বলা সুন্নাত।
* শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) ‘‘হুজ্জাতুল্লা-হিল বা-লিগাহ্’’-তে বলেনঃ হাদীসটি দলীল- বিসমিল্লা-হ বলাটা ركن অথবা شرط অর্থাৎ- এর অর্থ দাঁড়ায় উযূ পরিপূর্ণ হবে না।
* অন্য হাদীসে রয়েছে لَا صَلوةَ لِمَنْ لَا وَضُوْءَ لَه অর্থাৎ যার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বিশুদ্ধ হবে না তার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও হবে না। অতএব উযূ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লা-হ বলার গুরুত্ব অপরিসীম।
* বিসমিল্লা-হ বলার হাদীস অধিক বিশুদ্ধ ও অধিক শক্তিশালী এবং الوضوء بالنبيذ হাদীস থেকে অধিক প্রসিদ্ধ।
৪০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৩
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ عن أَبِيْ هُرَيْرَةَ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আহমাদ ও আবূ দাঊদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণিত। [১]
৪০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৪
وَالدَّارِمِيُّ عن أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىٍِّ عَنْ أَبِيْهِ وَزَادُوْا فِيْ أَوَّلِه لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَا وَضُوْءَ لَه
দারিমী আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
দারিমী আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে ও তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ প্রমুখ তাদের বর্ণনায় তার প্রথমে এ কথা বৃদ্ধি করেছেন যার উযূ নেই তার সলাতও নেই, অর্থাৎ- উযূ ব্যতীত সলাত হয় না। [১]
৪০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৫
وَعَنْ لَقِيطِ بْنِ صَبُرَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي عَنِ الْوُضُوءِ قَالَ أَسْبِغْ الْوُضُوءَ وَخَلِّلْ بَيْنَ الْأَصَابِعِ وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ اِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَةَ وَالدَّارِمِيُّ اِلى قَوْلِه بَيْنَ الْاَصَابِعِ
লাক্বীত্ব ইবনু সবুরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উযূর অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে ধুবে। আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে এবং উত্তমরূপে নাকে পানি পৌঁছাবে, যদি সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) না হও। [১]
কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া জরুরী। সায়িম (রোযাদার) হলে নাকের অভ্যন্তরের পানি দেয়া কিংবা কুলি করার সময় গড়গড়া করা যাবে না, কারণ এতে গলার মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে।
৪০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৬
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا تَوَضَّأْتَ فَخَلِّلْ بَيْنَ أَصَابِعِ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوى ابْنُ مَاجَةَ نَحْوهُ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তুমি যখন উযূ করবে, হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে। তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ। ইবনু মাজাহও একইরূপ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। [১]
৪০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৭
وَعَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ إِذَا تَوَضَّأَ يَدْلُكُ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ بِخِنْصَرِه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَابْنُ مَاجَةَ
মুস্তাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করার সময় দেখেছি যে, তিনি বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতেন। [১]
৪০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৮
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَه تَحْتَ حَنَكِه فَخَلَّلَ بِه لِحْيَتَه وَقَالَ هَكَذَا أَمَرَنِىْ رَبِّىْ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করার সময় এক কোষ পানি নিয়ে চিবুকের নিচ দিয়ে দাড়িতে প্রবেশ করিয়ে তা খিলাল করে নিতেন এবং বলতেন : আমার রব আমাকে এরূপ করতে নির্দেশ করেছেন। [১]
এভাবে দাড়ি খিলাল করার জন্য আমার রব আদেশ করেছেন। অর্থাৎ- জিবরীল (রাঃ)-এর মাধ্যমে তাঁকে এ আদেশ করা হয়েছিল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ প্রত্যেক লোমের নিচে অপবিত্রতা রয়েছে। পানি পৌঁছে দেয়া আবশ্যক দাড়ির অভ্যন্তরে চাই দাড়ি ঘন হোক বা হালকা হোক। আরো বলেন, (فَبَلُو الشَّعْرُ وَانْقُوا الْبَشَرُ) লোম বা চুল ভিজাও আর চামড়া পরিষ্কার করো।
এটাকে ইমাম বুখারী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে صِفَةُ الْوَضُوْءِ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর একচুল্লু পানি গ্রহণ করেন, সেটার দ্বারা স্বীয় মুখমণ্ডল ধৌত করেন।
শাওকানী (রহঃ) নিঃসন্দেহে বলেনঃ একচুল্লু পানি ঘন দাড়িতে যথেষ্ট হবে না, মুখমণ্ডল ধৌত করার জন্য এবং দাড়ি খিলাল করতে। পক্ষান্তরে যার দাড়ি পাতলা হবে যার চামড়া দেখা যাবে, তখন দাড়ির নিচে পানি পৌঁছানো অত্যাবশ্যক হবে। এ বইয়ের লেখকেরও এ মত এবং বলেনঃ আল্লাহ অধিক অবগত রয়েছেন।
৪০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪০৯
وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উযূ করার সময়) নিজের দাড়ি খিলাল করতেন। [১]
দাড়ি খিলাল করা সুন্নাত, তাই আমরাও খিলাল করবো। চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোর জন্য খিলাল করা ত্যাগ করবো না।
৪১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১০
وَعَنْ أَبِي حَيَّةَ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا تَوَضَّأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ حَتّى أَنْقَاهُمَا ثُمَّ مَضْمَضَ ثَلَاثًا وَاسْتَنْشَقَ ثَلَاثًا وَغَسَلَ وَجْهَه ثَلَاثًا وَذِرَاعَيْهِ ثَلَاثًا وَمَسَحَ بِرَأْسِه مَرَّةً ثُمَّ غَسَلَ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثُمَّ قَامَ فَأَخَذَ فَضْلَ طَهُورِه فَشَرِبَه وَهُوَ قَائِمٌ ثُمَّ قَالَ أَحْبَبْتُ أَنْ أُرِيَكُمْ كَيْفَ كَانَ طُهُورُ رَسُولِ اللهِ ﷺ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِـيُِّ
তাবি’ঈ আবু হাইয়্যাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি প্রথমে নিজের হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনবার কুলি করলেন ও তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার করে মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নিলেন। এরপর একবার মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং উযূর বাকী পানিটুকু নিয়ে তা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করলেন। অতঃপর বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করেছেন তা আমি তোমাদেরকে দেখাতে চাইলাম। [১]
অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করেন। এ হাদীস উযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। সর্বসাধারণকে দাঁড়িয়ে খেতে বা পান করতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন- সহীহ মুসলিমে এ মর্মে হাদীসে রয়েছে। পানি দাঁড়িয়ে পান করা উচিত নয়, নিষেধ।
৪১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১১
وَعَنْ عَبْدِ خَيْرٍ قَالَ نَحْنُ جُلُوسٌ فَنَنْظُرُ إِلى عَلِيٍّ حِيْنَ تَوَضَّأَ فَأَدْخَلَ يَدَهُ الْيُمْنى فَمَلَا فَمَه فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَنَثَرَ بِيَدِهِ الْيُسْرى فَعَلَ هذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ مَنْ سَرَّه أَنْ يَنْظُرَ إِلى طُهُورِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَهَذَا طُهُورُه. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
তাবি‘ঈ ‘আবদ খায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা বসে বসে ‘আলী (রাঃ)-এর উযূ করা দেখছিলাম। তিনি ডান হাত পানির মধ্যে ডুবিয়ে পানি উঠিয়ে মুখ ভরে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর বাম হাত দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তিনি এরূপ তিনবার করলেন, অতঃপর বললেন, কেউ যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ (করার পদ্ধতি) দেখে আনন্দ লাভ করতে চায়, তবে দেখুক, এরূপই ছিল তাঁর ওযূ। [১]
৪১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১২
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْل اللهِ ﷺ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفٍّ وَاحِدٍ فَعَلَ ذلِكَ ثَلَاثًا. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করেছেন ও নাকে দিয়েছেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার করেছেন। [১]
৪১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৩
وَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَسَحَ بِرَأْسِه وَأُذُنَيْهِ بَاطِنِهُمَا بِالسَّبَّابَتَيْنِ وَظَاهِرَهِمَا بِإِبْهَامَيْهِ. رَوَاهُ النِّسَآئِىُّ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের মাথা ও দুই কান মাসাহ করেছেন। কানের ভিতরাংশ নিজের দুই শাহাদাত আঙ্গুল ও উপরিভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মাসাহ করেছেন। [১]
৪১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৪
وَعَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذٍ أَنَّهَا رَأَتِ النَّبِيَّ ﷺ يَتَوَضَّأُ قَالَتْ مَسَحَ رَأْسَه مَا أَقْبَلَ مِنْهُ وَمَا أَدْبَرَ وَصُدْغَيْهِ وَأُذُنَيْهِ مَرَّةً وَاحِدَةً
وَفِيْ رِوَايَةٍ أَنَّه تَوَضَّأَ فَأَدْخَلَ إِصْبَعَيْهِ فِي حُجْرى أُذُنَيْهِ
رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ الرِّوَايَةَ الْأّوْلى وَأَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَةَ الثَّانِيَةَ
রুবায়্যিই‘ বিনতু মু‘আব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করতে দেখেছেন। তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন সামনের দিক ও পেছনের দিক (অর্থাৎ গোটা মাথা), দুই কানের পার্শ্ব ও দুই কান একবার করে।
অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন এবং দুই আঙ্গুল দুই কানের ছিদ্রে ঢুকালেন। [১]
তিরমিযী প্রথম রিওয়ায়াতটি এবং আহমাদ ও ইবনু মাজাহ দ্বিতীয় রিওয়ায়াতটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি চোখ ও কানের মধ্যবর্তী স্থান মাথা সহ একবার মাসাহ করার হুকুম শারী‘আত সম্মত হিসেবে নির্দেশ করে।
আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তার আঙ্গুলদ্বয় মাথা মাসাহ করার সময় এবং পরে তার উভয় কানের ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করেছেন।
৪১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৫
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ أَنَّه رَأَى النَّبِيَّ ﷺ تَوَضَّأَ وَأَنَّه مَسَحَ رَأْسَه بِمَاءٍ غَيْرِ فَضْلِ يَدَيْهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ ورَوَاهُ مُسْلِمٌ مَعَ زَوَائِدَ
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করতে দেখেছেন। আর এটাও দেখেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন এমন পানি দিয়ে, যা তাঁর দুই হাতের পানির অবশিষ্টাংশ নয় (অর্থাৎ নতুন পানি দিয়ে মাসাহ করলেন)। [১]
ফলকথা হলো উভয় আদেশ আমার নিকট বৈধ, কিন্তু উত্তম মাথা মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিবে এবং সীমাবদ্ধ হবে না হস্তদ্বয় ভিজানোর উপরে।
৪১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৬
وَعَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ ذَكَرَ وُضُوْءَ رَسُوْل اللهِ ﷺ قَالَ وكَانَ يَمْسَحُ الْمَأْقَيْنِ وَقَالَ الْأُذُنَانِ مِنْ الرَّأْسِ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَةَ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَا قَالَ حَمَّاد لَّا أَدْرِىْ الْأُذُنَانِ مِنَ الرَّأْسِ مِنْ قَوْلِ أَبِيْ أُمَامَةَ أَمْ مِنْ قَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূর কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, উযূর সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চোখের দুই কোণ মললেন এবং বললেন, কান দু’টি মাথারই অংশ। (ইবনু মাজাহ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
আবূ দাঊদ ও তিরমিযী [১] এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, এ হাদীসের অপর রাবী হাম্মাদ বলেছেন, আমি জানি না “কান দু’টি মাথারই অংশ” এ কথাটা কার, আবূ উমামার না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর?
৪১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৭
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّه قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ يَسْأَلُه عَنْ الْوُضُوءِ فَأَرَاهُ الْوُضُوءَ ثَلَاثًا ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ هَكَذَا الْوُضُوْءُ فَمَنْ زَادَ عَلى هذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَتَعَدّى وَظَلَمَ. رَوَاهُ النِّسَائِـيُّ وابن مَاجَةَ وَرَوَى أَبُوْ دَاوٗدَ مَعْنَاهُ
আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (দাদা) বলেন যে, এক বেদুঈন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁকে উযূ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায়, তিনি তাকে তিন তিনবার করে (উযূর প্রতিটি অঙ্গ ধুয়ে) দেখালেন। অতঃপর বললেন, এই হল ওযূ। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বাড়িয়ে করল সে মন্দ করল, সীমালঙ্গল করল ও যুল্ম করল। [১]
অবশ্য হাদীসে এসেছে যে, মাসাহ করতে হয় একবার। ধৌত করার সময় তিনের অধিক যে করবে তার বদনাম করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কঠোর শাস্তির কথা প্রকাশ করা হয় এবং এর থেকে তাকে ধমক দেয়া হয়, সাবধান করা হয়। অতএব উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে গিয়ে যে সমস্ত অঙ্গ ধৌত করতে হয় তা তিনবার ধৌত করবো এটা সুন্নাত, তিনবারের অধিক নয়। আর মাসাহ্-করণ একবার। তিনবারের অধিক করা অন্যায়, সীমালঙ্ঘন করা, যুলম করা।
৪১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৮
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ أَنَّه سَمِعَ ابْنَهٗ يَقُولُ اللّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْقَصْرَ الْأَبْيَضَ عَنْ يَمِيْنِ الْجَنَّةِ قَالَ أَيْ بُنَيَّ سَلِ اللهَ الْجَنَّةَ وَتَعَوَّذْ بِه مِنَ النَّارِ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ إِنَّه سَيَكُونُ فِي هذِهِ الْأُمَّةِ قَوْمٌ يَعْتَدُونَ فِي الطَّهُوْرِ وَالدُّعَاءِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ أَبُوْ دَاوٗدَ وابن مَاجَةَ
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তার ছেলেকে এ দু‘আ করতে শুনলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাতের ডান দিকে সাদা বালাখানাটি চাই। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হে আমার ছেলে! তুমি আল্লাহর কাছে শুধু জান্নাত চাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন লোকের উদ্ভব হবে যারা পবিত্রতা অর্জনে ও দু‘আর ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করবে। [১]
৪১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪১৯
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِنَّ لِلْوُضُوءِ شَيْطَانًا يُقَالُ لَهُ الْوَلَهَانُ فَاتَّقُوا وَسْوَاسَ الْمَاءِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَةَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَادُه بِالْقَوِيِّ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ لِأَنَّا لَا نَعْلَمُ أَحَدًا أَسْنَدَه غَيْرَ خَارِجَةَ وَهُوَ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ عِنْدَ أَصْحَابِنَا
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন : (ওয়াস্ওয়াসা দেবার) জন্য উযূর ক্ষেত্রে একটি শয়তান রয়েছে। এ শয়তান হল ‘ওয়ালাহান’। তাই (উযূ করার সময়) পানির ওয়াস্ওয়াসা হতে সতর্ক থাকবে। [৪৪০]
ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব, সানাদ দুর্বল। রাবী খারিজাহ্ ইবনু মুসহাব মুহাদ্দিসগণের মতে সবল নয়। অথচ তিনি ছাড়া অপর কেউ এ হাদীসকে মারফূ’ সূত্রে বর্ণনা করেননি।
[১]
৪২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২০
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِذَا تَوَضَّأَ مَسَحَ وَجْهَه بِطَرَفِ ثَوْبِه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি উযূ করার পর নিজের কাপড়ের কিনারা দিয়ে নিজের মুখমন্ডল মুছে ফেলতেন। [১]
৪২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২১
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ خِرْقَةٌ يُنَشِّفُ بِهَا بَعْدَ الْوُضُوءِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هذَا حَدِيْثٌ لَيْسَ بِالْقَائِمِ وَأَبُوْ مَعَاذ الرَّاوِي ضَعِيفٌ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৃথক একখন্ড কাপড় ছিল। এ কাপড় দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করার পর তাঁর উযূর অঙ্গগুলো মুছে নিতেন। [১]
ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি তেমন সবল নয়। এর একজন বর্ণনাকারী আবূ ম‘আয মুহাদ্দিসীনের কাছে দুর্বল।
৪২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২২
وَعَنْ ثَابِتِ بْنِ أَبِي صَفِيَّةَ قَالَ قُلْتُ لِأَبِي جَعْفَرٍ هُوَ مُحَمَّدُ الْبَاقِرُ حَدَّثَكَ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ تَوَضَّأَ مَرَّةً مَرَّةً وَمَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَثَلَاثًا ثَلَاثًا قَالَ نَعَمْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابن مَاجَةَ
তাবি‘ঈ সাবিত ইবনু আবূ সফিয়্যাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জা‘ফার-এর পিতা মুহাম্মাদ বাক্বির (ইবনু যায়নুল আবিদীন)-কে বললাম, আপনার কাছে কি জাবির (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো একবার, কখনো দুই দুইবার, আবার কখনো তিনবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধৌত করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। [১]
৪২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৩
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ تَوَضَّأَ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَقَالَ هُوَ نُوْرٌ عَلى نُوْرٍ
‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই দুইবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধুলেন। অতঃপর বললেন, এটা হল আলোর উপর আলো। [১]
৪২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৪
وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ تَوَضَّأَ ثَلَاثًا ثَلَاثًا وَقَالَ هذَا وُضُوْئِيْ وَوُضُوْءِ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِيْ وَوُضُوْءِ إبْرَاهِيْمَ. رَوَاهُمَا رَزِيْن وَّالنَّوَوِىُّ ضَعَّفَ الثَّانِيْ فِىْ شَرحِ مُسْلِمٍ
উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন তিনবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধুয়েছেন। এরপর তিনি বলেছেন, এটা হল আমার ও আমার আগের নাবীগণের উযূ এবং ইবরাহীম (আঃ) এর ওযূ। [১]
এ হাদীস দু’টি ইমাম রযীন বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাবাবী শারহে মুসলিমে দ্বিতীয় হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।
৪২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৫
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَتَوَضَّأُ لِكُلِّ صَلَاةٍ وَكَانَ أَحَدُنَا يَكْفِيهِ الْوُضُوءُ مَا لَمْ يُحْدِثْ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ফারয সলাতের জন্য উযূ করতেন। আর আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির জন্য যে পর্যন্ত উযূ নষ্ট বা ভঙ্গ না হয় সে পর্যন্ত এক ওযূই যথেষ্ট ছিল। [১]
প্রকাশ্য হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল। আরো সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করছিলেন মুসতাহাব হিসেবে। এটা সুন্নাহ হিসেবে পালন করা পছন্দনীয়।
৪২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৬
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حِبَّانَ قَالَ قُلْتُ لِعُبِيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الله بْنِ عُمَرَ أَرَأَيْتَ وُضُوءَ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ لِكُلِّ صَلَاةٍ طَاهِرًا كَانَ أَوْ غَيْرَ طَاهِرٍ عَمَّن اَخَذَه قَالَ حَدَّثَتْهُ أَسْمَاءُ بِنْتُ زَيْدِ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ حَنْظَلَةَ بْنِ أَبِي عَامِرِ ابْنِ الْغَّسِيلِ حَدَّثَهَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ أُمِرَ بِالْوُضُوءِ لِكُلِّ صَلَاةٍ طَاهِرًا كَانَ أَوْ غَيْرَ طَاهِرٍ فَلَمَّا شَقَّ ذلِكَ عَلى رَسُولِ اللهِ ﷺ أُمِرَ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ وَوُضِعَ عَنْهُ الْوُضُوءُ اِلَّا مِنْ حَدَثٍ قَالَ فَكَانَ عَبْدُ اللهِ يَرى أَنَّ بِه قُوَّةً عَلى ذلِكَ كَانَ فَفَعَلُه حَتّى مَاتَ. رَوَاهُ أحْمَد
মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু হিব্বান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার-এর ছেলে ‘উবায়দুল্লাহকে বললাম, আমাকে বলুন তো, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কি প্রত্যেক সলাতের জন্য উযূ করতেন, চাই উযূ থাকুক কি না থাকুক, আর তিনি কার থেকে এ ‘আমাল অর্জন করেছেন? ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট আসমা বিনতু যায়দ ইবনুল খাত্ত্বাব এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ্ আবূ ‘আমির ইবনুল গসীল (রাঃ) এ হাদীস তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রত্যেক সলাতে উযূ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, চাই তাঁর উযূ থাকুক কি না থাকুক। এ কাজ তাঁর উপর কঠিন হয়ে পড়লে প্রত্যেক সলাতে মিসওয়াক করতে নির্দেশ দেয়া হল, উযূ মাওকূফ করা হল, যতক্ষণ পর্যন্ত না উযূ ভঙ্গ হয়। ‘উবায়দুল্লাহ বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার মনে করতেন যে, তার মধ্যে প্রত্যেক সলাতে উযূ করার শক্তি রয়েছে। তাই তিনি মৃত্যু পর্যন্ত এ ‘আমাল করেছেন। [১]
প্রত্যেক সলাতের জন্য উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা ও মিসওয়াক করা অতি উত্তম। ইমাম ত্বীবী বলেন, মিসওয়াক করা মর্যাদাপূর্ণ এমনকি তা ওয়াজিবের স্থলাভিষিক্ত করা যায়। ওয়াজিবের নিকটবর্তী। তাই মিসওয়াক করাটা প্রতি সলাতে কষ্টকর হলেও করাটা অতি উত্তম। আর উযূর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) না থাকলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে হবে। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) থাকলে পুনরায় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা অত্যাবশ্যক নয়, করলে ভালো।
৪২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৭
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَرَّ بِسَعْدٍ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ فَقَالَ مَا هذَا السَّرَفُ يَا سَعْدُ قَالَ أَفِي الْوُضُوءِ سَرَفٌ؟ قَالَ نَعَمْ وَإِنْ كُنْتَ عَلى نَهْرٍ جَارٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وابن مَاجَةَ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় সা’দ (রাঃ) উযূ করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে সা’দ! এত অপচয় কেন? সা’দ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! উযূর মধ্যেও কি অপচয় আছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ আছে। যদিও তুমি প্রবহমান নদীর কিনারায় থাক। [১]
৪২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৮
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَّابْنِ مَسْعُوْدٍ وَّابْنِ عُمَرَ عَنِِ النَّبِيّ ﷺ مَنْ تَوَضَّاَ وَذَكَرَ اسْمَ اللهِ فَاِنَّه يُطَهِّرُ جَسَدَه كُلَّه وَمَنْ تَوَضَّاَ وَلَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ لَمْ يُطَهِّرْ اِلَّامَوْضِعَ الْوُضُوْءِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), ইবনু মাস্‘ঊদ ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূ করল এবং ‘বিস্মিল্লা-হ’ (আল্লাহর নাম নিয়ে) পড়ে উযূ করল, সে তাঁর গোটা শরীরকে (গুনাহ হতে) পবিত্র করল। আর যে ব্যক্তি উযূ করল অথচ ‘বিস্মিল্লা-হ’ বলল না, সে শুধু উযূর অঙ্গগুলোকে পবিত্র (পরিষ্কার) করল। [১]
২য়টি- ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে إِذَا تَطَهَّرَ أَحَدُكُمْ فَلْيَزْكُرِ السْمَ اللهِ শব্দে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, যার সানাদে ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাশিম নামে একজন মিথ্যুক বারী রয়েছে।
৩য়টি- ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে مَنْ تَوَضَّأَ فَزَكَرَ السْمَ اللهِ عَلى وُضُوْئِه... শব্দে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, যার সানাদে আবূ বাকর ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাকীম আদ্ দাহিরী নামে একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে।
৪২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪২৯
وَعَنْ أَبِيْ رَافِعٍ قَالَ كَانَ رَسُوْل اللهِ ﷺ إِذَا تَوَضَّأَ وُضُوْءَ الصَلَاةِ حَرَّكَ خَاتَمَه فِيْ إِصْبَعِه. رَوَاهُمَا الدَّارَقُطْنِيْ وَرَوَى ابْنُ مَاجَةَ الأَخِيْرَةَ
আবূ রাফি‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের উযূ করার সময় নিজের আঙ্গুলে পরা আংটি নেড়ে-চেড়ে নিতেন। [১]
দারাকুত্বনী উপরের দু’টি হাদীসই বর্ণনা করেছেন এবং ইবনু মাজাহ শুধু দ্বিতীয় হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
এমনিভাবে আংটির সাথে সাদৃশ্য রেখে চুড়ি ও অলংকার নেড়ে চেড়ে পানি পৌঁছানো প্রয়োজন। এ দু’টোকে বর্ণনা করেছেন দারাকুত্বনী।
৪৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩০
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا جَلَسَ أَحَدُكُمْ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ وَإِنْ لَمْ يُنْزِلْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ স্ত্রীলোকের চার শাখার (দুই হাত দুই পা) মাঝখানে বসে সঙ্গমে রত হয় তখন তার উপর গোসল করা ফার্য হয়ে যায়, যদিও বীর্যপাত না হয়। [১]
যারা এরূপ করবে তাদের উভয়ের ওপর গোসল করা ওয়াজিব হবে বীর্য বের হোক বা না হোক। গোসল ওয়াজিব হওয়ার জন্য বীর্য বের হওয়া শর্ত করা হয়নি। পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের অংশ (সুপারি) স্ত্রীলিঙ্গের ভিতর অদৃশ্য হয়ে যাওয়াতে গোসল ওয়াজিব হবে।
চার খলীফা, সাহাবীগণের অধিকাংশ, তাবি‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের মত হলো শুধু সঙ্গমেই গোসল করা অত্যাবশ্যক হবে। যদিও বীর্য বের না হোক এটাই সঠিক মত। এ বিষয়ে সহীহুল বুখারীর হাদীসের উপর সাহাবীগণের ইজমা হয়েছে।
৪৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩১
وَعَنْ اَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ- قَالَ الشَّيْخُ الإِمَامُ مُحْيِيُ السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللهُ هذَا مَنْسُوْخٌ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : পানিতেই পানির প্রয়োজন, অর্থাৎ বীর্যপাত ছাড়া গোসল ফার্য নয়। [১]
ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ্ বলেন, এ হুকুম রহিত হয়ে গেছে।
৪৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩২
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ فِى الْإِحْتِلَامِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَلَمْ أَجِدْهُ فِي الصَّحِيْحَيْنِ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
“পানি পানি হতে” এ হুকুম হল স্বপ্নদোষের জন্য। [১] আমি এ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে পাইনি।
৪৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৩
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ اللهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ مِنْ غُسْلٍ إِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ نَعَمْ إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ فَغَطَّتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَجْهَهَا وَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ أَوَتَحْتَلِمُ الْمَرْأَةُ؟ قَالَ نَعَمْ تَرِبَتْ يَمِينُكِ فَبِمَا يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন (আনাস-এর মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা‘আলা হাক্ব কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নপদোষের কারণে তার উপর কি গোসল ফার্য হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন : হাঁ, যদি (ঘুম থেকে জেগে উঠে) বীর্য দেখে। এ উত্তর শুনে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) (লজ্জায়) স্বীয় মুখ ঢেকে ফেললেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীলোকেরও আবার স্বপ্নদোষ হয় (পুরুষের ন্যায় বীর্যপাত হয়)। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ। কি আশ্চর্য! (তা না হলে) তার সন্তান তার সদৃশ হয় কিভাবে? [১]
তার বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেনঃ যখন সে দেখবে নিশ্চয় তার স্বামী তার সাথে স্বপ্নে সহবাস করছে। তাকে কি গোসল করতে হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হ্যাঁ। যখন সে বীর্য দেখবে। এটাতে প্রমাণ হলো যে, স্বপ্নে স্ত্রীলোকের বীর্য বের হলেও গোসল করা অত্যাবশ্যক হবে। আর এ কারণেই স্ত্রীলোকদের সদৃশ সন্তান হয়।
৪৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৪
وَزَادَ مُسْلِمٌ بِرِوَايَةِ أُمُّ سُلَيْمٍ إِنَّ مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيظٌ أَبْيَضُ وَمَاءَ الْمَرْأَةِ رَقِيقٌ أَصْفَرُ فَمِنْ أَيِّهِمَا عَلَا أَوْ سَبَقَ يَكُونُ مِنْهُ الشَّبَه
ইমাম মুসলিম (রহঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কিন্তু ইমাম মুসলিম উম্মু সুলায়ম-এর বর্ণনায় এ কথাগুলো বেশী বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথাও বলেছেন যে, সাধারণত পুরুষের বীর্য গাঢ় ও সাদা। স্ত্রীলোকের বীর্য পাতলা ও হলদে। উভয়ের বীর্যের মধ্যে যেটিই জয়ী হয়, অর্থাৎ- যে বীর্য আগে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে সন্তান তার সাদৃশ্য হয়।।[১]
আর যখন উভয়ের বীর্য কার্যত একত্র হয় পুরুষের বীর্যের প্রাধান্য লাভ করলে আল্লাহর হুকুমে স্ত্রীলোকের বীর্যের সঙ্গে সংমিশ্রণে সন্তান পুরুষ হয়। আর যখন স্ত্রীলোকের বীর্য পুরুষের বীর্যের উপর বৃদ্ধি হয় বা প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে মেয়ে সন্তান হয়।
ছেলে-মেয়ে পিতা-মাতার আকৃতিতে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় এটার ছয়টি অবস্থা বা কারণ।
৪৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৫
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْل اللهِ ﷺ إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ بَدَأَ فَغَسَلَ يَدَيْهِ ثُمَّ يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ يُدْخِلُ أَصَابِعَه فِي الْمَاءِ فَيُخَلِّلُ بِهَا أُصُولَ شَعَرِه ثُمَّ يَصُبُّ عَلى رَأْسِه ثَلَاثَ غَرَفاتٍ بِيَدَيْهِ ثُمَّ يُفِيضُ الْمَاءَ عَلى جِلْدِه كُلِّه. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ - وَفِيْ رَوَايَةٍ لَمُسْلَمٍِ يَبْدَأُ فَيَغْسِلُ يَدَيْهِ قَبْلَ أَنْ يَّدْخُلَهُمَا الْإِنَاءَ ثُمَّ يُفْرِغُ بِيَمِينِه عَلى شِمَالِه فَيَغْسِلُ فَرْجَه ثُمَّ يَتَوَضَّأُ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতার জন্য ফার্য গোসল করার সময় প্রথমে (কব্জি পর্যন্ত) দুই হাত ধুতেন। এরপর সলাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা দিয়ে মাথার চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন, তারপর শরীরের সর্বাঙ্গ পানি দিয়ে ভিজাতেন। [১]
কিন্তু ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন, অতঃপর উযূ করতেন।
চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে। ধৌত করার পূর্বে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা স্বাতন্ত্র সুন্নাত। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা শুরু করতে হবে দু’হাত ধৌত করার মাধ্যমে, অতঃপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দিবে, অতঃপর বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ধৌত করবে, অতঃপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে।
৪৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৬
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَتْ مَيْمُونَةُ وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ ﷺ غُسْلًا فَسَتَرْتُه بِثَوْبٍ وَصَبَّ عَلى يَدَيْهِ فَغَسَلَهُمَا ثُمَّ صَبَّ بِيَمِينِه عَلى شِمَالِه فَغَسَلَ فَرْجَه فَضَرَبَ بِيَدِهِ الْأَرْضَ فَمَسَحَ ثُمَّ غَسَلَهَا فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَغَسَلَ وَجْهَه وَذِرَاعَيْهِ ثُمَّ صَبَّ عَلى رَأْسِه وَأَفَاضَ عَلى جَسَدِه ثُمَّ تَنَحّى فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ فَنَاوَلْتُه ثَوْبًا فَلَمْ يَأْخُذْهُ فَانْطَلَقَ وَهُوَ يَنْفُضُ يَدَيْهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَلَفْظُهُ لِلْبُخَارِىِّ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন) মায়মূনাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোসলের জন্য পানি রাখলাম এবং কাপড় দিয়ে পর্দা করে দিলাম। প্রথমে তিনি দুই হাতের উপর পানি ঢাললেন এবং কব্জি পর্যন্ত হাত ধুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে তা দিয়ে লজ্জাস্থান ধুলেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষে তা মুছে নিলেন। তারপর নিয়ম মত হাত ধুলেন। এরপর মাথার উপর পানি ঢাললেন। সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ভিজালেন। তারপর নিজ স্থান হতে একটু সরে গিয়ে পা ধুলেন। আমি (শরীরের পানি মুছে ফেলার জন্য) তাঁকে কাপড় দিলাম। কিন্তু তিনি তা নিলেন না, দুই হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন। [১]
এটাতে শারী‘আতের বিধান হলো যে, গোসল করার সময় পর্দা করতে হবে যদিও বাড়িতে গোসল করে। তার দু’ কব্জা পর্যন্ত ধৌত করেন। আর তার বাম হাত দ্বারা লজ্জাস্থান ধৌত করেন। অতঃপর স্বীয় বাম হাত জমিনে ঘষেন, হাত থেকে দুর্গন্ধযুক্ত দূর করার জন্য। পরিষ্কারের মধ্যে মুবালাগাহ্ করা উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।
তিনি [মায়মূনাহ্ (রাঃ)] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে, অপবিত্রতা থেকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ধৌত করার প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন। আর এটাতে রয়েছে তিনবার কুলি করার, তিনবার নাকে পানি দেয়ার, তিনবার চেহারা ধৌত করার ও দু’ হাত ধৌত করার ও মাথায় পানি ঢেলে দেয়ার। আর এখানে প্রকাশ হলো যে, তিনি স্বীয় মাথা মাসাহ করেননি। অতঃপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেন যেভাবে সলাতের জন্য উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেন। সম্ভব হলে উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য করা। অথবা ‘আয়িশার হাদীসকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা। অতঃপর তিনি পাদ্বয় ধৌত করেন মাঝে মধ্যে জলাভূমিতে যদি স্থির বা দন্ডায়মান না হন, বরং তক্তার উপরে অথবা পাথরের অথবা উঁচু স্থানে।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ)ও মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস উযূর শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ধৌত করার অবস্থা বর্ণনা করার উপর অন্তর্ভুক্ত। উযূর শুরু পাত্রের মধ্যে হস্তদ্বয় প্রবেশ করার পূর্বে ধৌত করা। অতঃপর লজ্জাস্থান ধৌত করা।
৪৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৭
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ أَنَّ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِِ سَأَلَتِ النَّبِيَّ ﷺ عَنْ غُسْلِهَا مِنْ الْمَحِيضِ فَأَمَرَهَا كَيْفَ تَغْتَسِلُ قَالَ خُذِي فِرْصَةً مِنْ مِسْكٍ فَتَطَهَّرِي بِهَا قَالَتْ كَيْفَ أَتَطَهَّرُ؟ فَقَالَ تَطَهَّرِي بِهَا قَالَتْ كَيْفَ اَتَطَهَّرُ بِهَا؟ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ تَطَهَّرِي بِهَا فَاجْتَذَبْتُهَا إِلَيَّ فَقُلْتُ لَهَاتَتَبَّعِي بِهَا أَثَرَ الدَّمِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক আনসার মহিলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে হায়যের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। কীভাবে গোসল করতে হবে তিনি তাকে সে ব্যাপারে জানিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, মিস্কের সুগন্ধিযুক্ত একখন্ড কাপড় নিয়ে তা দিয়ে ভালভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জন করবে। মহিলাটি বলল, আমি কীভাবে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। সে আবার বলল, আমি তা দ্বারা কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সুব্হানাল্লাহ (এটাও বুঝলে না)! তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করবে।‘আয়িশাহ্ (রা:) বললেন, তখন আমি তাকে আমার দিকে টেনে আনলাম এবং (চুপিসারে) বললাম, রক্তক্ষরণের পর তা দ্বারা (গুপ্তাঙ্গের ভিতরের অংশ) মুছে নিবে (এতে দুর্গন্ধ দূর হবে)। [১]
নিশ্চয়ই একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছেন ঋতু অবস্থায় গোসল করার প্রসঙ্গে। অতঃপর তিনি তাকে আদেশ করেছেন, কিভাবে সে গোসল করবে। তিনি বলেন, মিসকের তুলার টুকরা নাও। অতঃপর এটার মাধ্যমে তুমি পবিত্রতা অর্জন করো। তিনি বলেন, কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এটার দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করো। তিনি বলেন, কিভাবে? তিনি বলেন, সুবহানাল্লাহ! পবিত্রতা অর্জন করো।
৪৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৮
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ ﷺ إِنِّي امْرَأَةٌ أَشُدُّ ضَفْرَ رَأْسِي افَأَنْقُضُه لِغُسْلِ الْجَنَابَةِ؟ فَقَالَ لَا إِنَّمَا يَكْفِيكِ أَنْ تَحْثِيَ عَلى رَأْسِكِ ثَلَاثَ حَثَيَاتٍ ثُمَّ تُفِيْضِيْنَ عَلَيْكِ الْمَاءَ فَتَطْهُرِينَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল!, আমি এমন এক মহিলা যে, আমার মাথার চুলের বেণী বেশ শক্ত করে বাঁধি। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফারয্ গোসলের সময় আমি কি তা খুলে ফেলব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না খুলবে না। তুমি তোমার মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢেলে দিবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্টঃ তারপর তুমি তোমার সর্বাঙ্গে পানি ঢেলে নিবে ও পবিত্রতা অর্জন করবে। [১]
সাওবান (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন, পুরুষ ব্যক্তি তার মাথায় (পানি) ছড়িয়ে দিবে তারপর তার স্বীয় মাথা ধৌত করা উচিত। এমনকি চুলের গোড়া পর্যন্ত যেন পানি পৌঁছে দেয়। পক্ষান্তরে স্ত্রীলোকের ওপর অত্যাবশ্যক নয় যে, সে তার মাথার খোঁপা খুলবে। তার তালুদ্বয় দ্বারা তিন চুল্লু পানি মাথায় দিবে। ইবনুল কাইয়ূম বলেন, এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন আবূ দাঊদ ইসমা‘ঈল ইবনু ‘আইয়্যাশ হতে।
৪৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৩৯
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَتَوَضَّأُ بِالْمُدِّ وَيَغْتَسِلُ بِالصَّاعِ إِلى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ্দ পানি নিয়ে উযু করতেন এবং এক সা’ থেকে পাঁচ মুদ্দ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন। [১]
এক صاع (সা') চার মুদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুদ অনুযায়ী এক মুদ ইরাক্ববাসীদের মাপ অনুযায়ী দু’ রত্বল (رطل) হিজাযবাসীর মাপ অনুযায়ী এক رطل এবং رطل এর তিন ভাগের ১ ভাগ। এক رطل 40 = তোলা। এক رطل صاع (দুই সের ১১ ছটাক) প্রায় আড়াই কেজি।
মূলকথা হলো صاع ৫ মুদের বেশী হবে না এবং ৪ মুদের কম হবে না।
ইমাম মুসলিম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করতেন তিন মুদ অথবা তার নিকটবর্তী মুদ পানি ধারণ ক্ষমতা রাখে এমন পাত্র থেকে গোসল করতেন।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে, তিনি বলেনঃ আমি ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম। যে পাত্রকে اَلْفِرَقَ বলা হয়, আর তাতে তিন صَاعً পরিমাণ পানি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ হচ্ছে পানি ব্যবহারে অপচয় করা যাবে না। কমও করা ঠিক হবে না প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
৪৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৪০
وَعَنْ مُعَاذَةَ قَالَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَرَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ بَيْنِي وَبَيْنَه فَيُبَادِرُنِي حَتّى أَقُولَ دَعْ لِي دَعْ لِي قَالَتْ وَهُمَا جُنُبَانِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
মহিলা তাবি’ঈ মু’আযাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রা:) বলেছেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ও তাঁর মাঝখানে রাখা একটি পাত্র হতে পানি নিয়ে একসাথে (পবিত্রতার) গোসল করতাম। তিনি খুব তারাতারি করে আমার আগে পানি উঠিয়ে নিতেন। আর আমি তখন বলতে থাকতাম, আমার জন্য কিছু রাখুন, আমার জন্য কিছু রাখুন। মু’আযাহ্ (রহঃ) বলেন, তখন তারা উভয়ে নাপাক অবস্থায় থাকতেন। [১]
৪৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৪১
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سُئِلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَنِ الرَّجُلِ يَجِدُ الْبَلَلَ وَلَا يَذْكُرُ احْتِلَامًا قَالَ يَغْتَسِلُ وَعَنِ الرَّجُلِ الَّذِىْ يَرى أَنَّه قَدِ احْتَلَمَ وَلَا يَجِدُ بَلَلًا قَالَ لَا غُسْلَ عَلَيْهِ قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ هَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ تَرى ذلِكَ غُسْلٌ؟ قَالَ نَعَمْ إِنَّ النِّسَاءَ شَقَائِقُ الرِّجَالِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَرَوَى الدَّارِمِيُّ وَابْنُ مَاجَةَ اِلى قَوْلِه لَا غُسْلَ عَلَيْهِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন পুরুষ লোক (ঘুম থেকে জেগে শুক্রের) আদ্রতা পেল, অথচ স্বপ্নদোষের কথা তার মনে পড়ছে না। তখন সে কী করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে (ফারয) গোসল করবে। অপরদিকে কোন পুরুষের স্মরণ আছে তার স্বপ্নদোষ হয়েছে অথচ (কাপড়ে শুক্রের) কোন আদ্রতা সে খুঁজে পাচ্ছে না, (তখন সে কী করবে?) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাবে বললেন, তাকে (ফারয) গোসল করতে হবে না। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কোন স্ত্রীলোক যদি এরূপ দেখে তার উপরও কি গোসল ফারয হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, স্ত্রীলোকরাও পুরুষের মতো। [১]
দারিমী ও ইবনু মাজাহ “তাকে গোসল করতে হবে না” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, (يَغْتَسِلُ) খবর ‘আমরের অর্থে আর এটা অত্যাবশ্যক। এটাতে দলীল রয়েছে যে, নিদ্রা হতে জাগ্রত হবে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব শুধু বীর্যের অস্তিত্ব পাওয়ার দিক থেকে। কুপ্রবৃত্তির ধারণার সাথে মিলিত হবে। এমনকি উল্লেখ করা হয়, নিদ্রা হতে জাগ্রত হওয়ার কথা, নিশ্চয়ই যে ঘুমের মধ্যে কারো সাথে সহবাস করে থাকবে।
সমকক্ষের সঙ্গে সমকক্ষের হুকুম মিলানো। অর্থাৎ- ভিজা দেখার জন্য স্ত্রীলোকের ওপর গোসল করা ওয়াজিব যেমন পুরুষের ওপর অত্যাবশ্যক।
৪৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৪২
وَعَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْل اللهِ ﷺ إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ فَعَلْتُه أَنَا وَرَسُولُ اللهِ ﷺ فَاغْتَسَلْنَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابن مَاجَةَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষের খাতনার জায়গা মহিলার খাতনার জায়গা অতিক্রম করলেই গোসল করা ফারয হয়ে যাবে। তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছি, তারপর দু’জনেই গোসল করেছি। [৪৬৩] [১]
যখন চার শাখার মাঝে (স্বামী ও স্ত্রী) বসবে ও উভয়ের লিঙ্গ একটা আর একটাকে স্পর্শ করবে। অথবা, উভয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হবে তখনই গোসল অত্যাবশ্যক হবে।
৪৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
হাদীস নং : ৪৪৩
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ تَحْتَ كُلِّ شَعَرَةٍ جَنَابَةٌ فَاغْسِلُوا الشَّعَرَ وَأَنْقُوا الْبَشَرَةَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَةَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَالْحَارِثُ بْنُ وَجِيهٍ الرَّاوِي وَهُوَ شَيْخٌ لَيْسَ بِذَاكَ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শরীরের প্রত্যেক পশমীর গোড়ায় নাপাকী থাকে। সুতরাং শরীরের পশমগুলোকে ভালভাবে ধুবে এবং চামড়াকে উত্তমভাবে পরিষ্কার করবে। [৪৬৪]
ইমাম তিরমিযী বলেছেন এ হাদীসটি গরীব। এর রাবী হারিস ইবনু ওয়াজীহ তেমন গ্রহনযোগ্য নন।
[১]