২৫০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫০৫
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ:: خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فُرِضَ عَلَيْكُمُ الْحَجُّ فَحُجُّوْا» فَقَالَ رَجُلٌ: أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ؟ فَسَكَتَ حَتّٰى قَالَهَا ثَلَاثًا فَقَالَ: لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ ثُمَّ قَالَ: ذَرُوْنِىْ مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى انْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوْهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দানকালে বললেন, হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, সুতরাং তোমরা হজ্জ পালন করবে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! এটা (হজ্জ পালন) কি প্রত্যেক বছরই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুপ থাকলেন। লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তবে তা (হজ্জ প্রতি বছর) ফরয হয়ে যেতো, যা তোমরা (প্রতি বছর হজ্জ পালন করতে) পারতে না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে ব্যাপারটি সেভাবে থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বের লোকেরা বেশি বেশি প্রশ্ন করে ও তাদের নাবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নির্দেশ করবো তা যথাসাধ্য পালন করবে এবং যে বিষয়ে নিষেধ করবো তা পরিত্যাগ করবে। (মুসলিম)[১]
অর্থাৎ- আপনি কি আমাদেরকে প্রত্যেক বৎসরই হজ্জ সম্পাদন করতে আদেশ দিচ্ছেন?
(لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ لَوَجَبَتْ) ‘‘আমি হ্যাঁ বললেই তা প্রতি বৎসরের জন্যই ওয়াজিব হয়ে যেত।
ইমাম সিন্দী বলেনঃ এটা অসম্ভব নয় যে, হজ্জ প্রতি বৎসর ওয়াজিব করা বা না করার বিষয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ন্যাস্ত ছিল। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হ্যাঁ বললেই তা প্রতি বৎসরের জন্যই ওয়াজিব হয়ে যেত। কেননা আল্লাহর পক্ষে তাঁর নাবীকে কোন ব্যাপারে সাধারণভাবে নির্দেশ দেয়ার পর তার ব্যাখ্যার বিষয়টি তার ওপর ন্যাস্ত করা বৈধ।
(ذَرُوْنِىْ مَا تَرَكْتُكُمْ) ‘‘যে বিষয়ের উপর আমি তোমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছি তোমরাও সে বিষয়ে আমাকে ছেড়ে দাও।’’ অর্থাৎ- আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে হয়েছে শারী‘আতের নিয়মাবলী বর্ণনা করা এবং তা লোকদের নিকট পৌঁছানোর জন্য। অতএব শারী‘আতের বিধান আমি তোমাদের নিকট অবশ্যই বর্ণনা করব, সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করার কোন প্রয়োজন নেই।
(فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ) ‘‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ অধিক প্রশ্ন করার কারণে ধ্বংস হয়েছে।’’
ইমাম বাগাবী শারহে সুন্নাতে উল্লেখ করেছেন যে, প্রশ্ন দু’ ধরনের। যথা-
(১) ধর্মীয় কোন বিষয়ে প্রয়োজনের খাতিরে শিখার উদ্দেশে প্রশ্ন করা, আর এ ধরনের প্রশ্ন করা বৈধ। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যারা জানে তোমরা তাদের নিকট জিজ্ঞেস করো’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৪৫ আয়াত, সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ৬ আয়াত)। সাহাবীগণের প্রশ্নাবলী এ ধরনেরই ছিল।
(২) হতবুদ্ধি ও বিহ্বল করার জন্য অনর্থক প্রশ্ন করা। আর এ ধরনের প্রশ্ন করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ অধিক ভাল জানেন।
(إِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوْهُ) ‘‘যখন আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নিষেধ করি তা পরিত্যাগ করো।’’
যেহেতু নিষিদ্ধ বস্ত্ত পরিত্যাগ করতে সকলেই সক্ষম তাই বলা হয়নি যে, সক্ষম হলে তা পরিত্যাগ করো। পক্ষান্তরে আদিষ্ট কোন বিষয় কার্যকর করতে সক্ষমতার প্রয়োজন রয়েছে। তাই সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে ‘‘আমি যে বিষয়ে আদেশ করি সাধ্যমত তা পালন করো।’’
২৫০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫০৬
وَعَنْهُ قَالَ: سُئِلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: إِيمَانٌ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِه قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: الْجِهَادُ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ». قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: حَجٌّ مَبْرُوْرٌ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ ‘আমাল সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তারপরে কোন্ ‘আমাল? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবারও জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘হজ্জে মাবরুর’ অর্থাৎ- কবূলযোগ্য হজ্জ। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(حَجٌّ مَبْرُوْرٌ) ‘‘কবূলযোগ্য হজ্জ/হজ’’। অর্থাৎ- আল্লাহর নিকট গৃহীত হজ্জ। হজ্জ কবূল হওয়ার আলামাত হলোঃ হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর তার অবস্থা পূর্বের চাইতে ভাল হওয়া এবং গুনাহের কাজে পুনরায় লিপ্ত না হওয়া। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ মাকবূল-এর বিভিন্ন অর্থ করা হয়ে থাকে যার সারমর্ম প্রায় একই, অতএব মাকবূল হজ্জ বলতে তাই বুঝায় যে হজে তার সকল নিয়মাবলী যথার্থ পালিত হয়েছে এবং হজ্জ সম্পাদনকারী ব্যক্তি তার ওপর করণীয় কার্যসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পাদন করেছে তাই হজ্জে মাবরূর তথা মাকবূল হজ্জ।
অত্র হাদীসে জিহাদকে হজ্জের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে অথচ জিহাদ হলো ফারযে কিফায়াহ্ আর হজ্জ হলো ফারযে ‘আইন। এর কারণ এই যে, জিহাদের উপকারিতা ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে সমস্ত মুসলিম সমাজে প্রভাব ফেলে, পক্ষান্তরে হজ্জের উপকারিতা শুধুমাত্র ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। তাছাড়া জিহাদের মধ্যে প্রাণ বিসর্জন দেয়ার বিষয়টি সংযুক্ত যা হজ্জের মধ্যে নেই। তাই জিহাদের গুরুত্ব হজ্জের তুলনায় অধিক। এজন্যই অত্র হাদীসে জিহাদকে আগে উল্লেখ করা হয়েছে লোকদেরকে ঐ কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
২৫০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫০৭
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ حَجَّ لِلّٰهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহরই (সন্তুষ্টির) জন্য হজ্জ করেছে এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলেনি বা অশ্লীল কাজকর্ম করেনি। সে লোক হজ্জ হতে এমনভাবে বাড়ী (নিস্পাপ হয়ে) ফিরবে যেন সেদিনই তার মা তাকে প্রসব করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّه) ‘‘সেদিনের ন্যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’’। অর্থাৎ- হজ্জ সম্পাদনকারী ব্যক্তি হজ্জের কার্য সম্পাদন করে জন্মদিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে গেল। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় হজ্জ সম্পাদনকারীর কাবীরাহ্ ও সগীরাহ্ সকল প্রকার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
২৫০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫০৮
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَه جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ‘উমরা হতে অপর ‘উমরা পর্যন্ত সময়ের জন্য (গুনাহের) কাফফারাহ স্বরূপ আর কবূলযোগ্য হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(الْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ) ‘মাকবূল হজ্জ/হজ’’। ইবনুল ‘আরাবী বলেনঃ যে হজ্জের পরে গুনাহের কাজ করা হয়নি তাই হজে মাবরুর তথা মাকবূল হজ্জ/হজ।
‘আলিমগণ বলেনঃ হজ্জে মাবরুর-এর শর্ত হলো হজ্জে ব্যয়কৃত মাল হালাল পন্থায় অর্জিত হতে হবে। হারাম পন্থায় অর্জিত মাল দ্বারা সম্পাদিত হজ্জ হজ্জে মাবরুর নয়। যদিও এ হজ্জ দ্বারা তার ওপর নির্ধারিত ফরয হজ্জ সম্পাদন হয়েছে বলে গণ্য কিন্তু এ হজ্জ দ্বারা তার কোন সাওয়াব অর্জিত হবে না। এটাই ইমাম আবূ হানীফা, মালিক ও শাফি‘ঈর অভিমত। পক্ষান্তরে ইমাম আহমাদ বলেনঃ হারাম মাল দ্বারা সম্পাদিত হজ্জের মাধ্যমে তার ওপর নির্ধারিত ফরয হজ্জ সম্পাদন হবে না।
(لَيْسَ لَه جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ) ‘‘জান্নাতই তার একমাত্র প্রতিদান’’। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তার শুধুমাত্র আংশিক গুনাহ ক্ষমা হবে না বরং অবশ্য সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
২৫০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫০৯
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযান মাসে ‘উমরা পালন (সাওয়াবের দিক দিয়ে) হজ্জের সমতুল্য। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, উক্ত মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ সম্পাদন করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন তা করতে পারলেন না তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমাযান মাসে ‘উমরা সম্পাদন করলে আমার সাথে হজ্জ সম্পাদন করার মতো সাওয়াব অর্জিত হবে।
ইবনুল জাওযী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, সময়ের মর্যাদার কারণে কার্যের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় যেমন মনোযোগ সহকারে ও ইখলাসের সাথে ‘আমাল করার কারণে কাজের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ‘উমরা সম্পাদন করেছেন যিলকদ মাসে, তাই ‘আলিমগণ এ বিষয়ে সন্দেহে পতিত হয়েছেন যে, রমাযান মাসে ‘উমরা পালন উত্তম না-কি হজ্জের মাসসমূহে ‘উমরা পালন করা উত্তম? অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, রমাযান মাসে ‘উমরা পালন করা উত্তম। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য যে কোন লোকের জন্য রমাযান মাসে ‘উমরা পালন করা উত্তম। পক্ষান্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং যা করেছেন তার জন্য তাই উত্তম। কেননা জাহিলী যুগের লোকেরা মনে করত যে, হজ্জের মাসসমূহে ‘উমরা করা বৈধ নয়। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের মাসে ‘উমরা পালন করে দেখিয়ে দিলেন যে, হজ্জের মাসে ‘উমরা পালন করা বৈধ।
অত্র হাদীসে রমাযান মাসে ‘উমরা পালন করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এতে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, একাধিকবার ‘উমরা করা বৈধ তথা মুস্তাহাব, আর এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম শাফি‘ঈ।
ইমাম মালিক বৎসরে একাধিক ‘উমরা করা মাকরূহ মনে করেন। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল দশদিনের কমে ‘উমরা করা মাকরূহ্ মনে করেন।
২৫১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১০
وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ النَّبِىَّ ﷺ لَقِىَ رَكْبًا بِالرَّوْحَاءِ فَقَالَ: «مَنِ الْقَوْمُ؟» قَالُوا: الْمُسْلِمُونَ. فَقَالُوا: مَنْ أَنْتَ؟ قَالَ: «رَسُوْلُ اللّٰهِ» فَرَفَعَتْ إِلَيْهِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا فَقَالَتْ: أَلِهٰذَا حَجٌّ؟ قَالَ: نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হজের সফরে) ‘রওহা’ নামক জায়গায় এক আরোহী দলের সাক্ষাৎ পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা? তারা বললো, ‘আমরা মুসলিম’। অতঃপর তারা জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, (আমি) আল্লাহর রসূল! তখন একজন মহিলা একটি শিশুকে উঠিয়ে ধরলেন এবং বললেন, (হে আল্লাহর রসূল!) এর কি হজ্জ হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, তবে সাওয়াব হবে তোমার। (মুসলিম)[১]
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, শিশুকে সাথে নিয়ে হজ্জ করা বিধিসম্মত। এতে ‘উলামাগণের মাঝে কোন বিরোধ নেই। এতে এটাও জানা গেল যে, শিশু ছোট হোক বা বড় হোক তার হজ্জ বিশুদ্ধ। তবে শিশুর পক্ষ থেকে এ হজ্জটি নফল হজ্জ বলে গণ্য হবে। বালেগ হওয়ার পর হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহ পাওয়া গেলে তাকে পুনরায় হজ্জ করতে হবে।
কোন শিশু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধার পর ‘আরাফাতে অবস্থান করার পূর্বে বালেগ হলে তার বিধান কি? এ নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
ইমাম মালিক-এর মতে ইহরাম বাঁধার পর ‘আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে শিশু বালেগ হলে অনুরূপভাবে গোলামকে আযাদ করা হলে তারা ঐ অবস্থায় হজ্জের কাজ সম্পাদন করবে। তবে তাদের উভয়কে পুনরায় ফরয হজ্জ সম্পাদন করতে হবে।
ইমাম আবূ হানীফার মতে তারা যদি নতুন করে ইহরাম বেঁধে হজ্জের বাকী কাজ সম্পন্ন করে তাহলে এটিই তাদের জন্য ফরয হজ্জ বলে গণ্য হবে।
ইমাম শাফি‘ঈর মতে শিশু ইহরাম বাঁধার পর ‘আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে বালেগ হলে অনুরূপভাবে গোলাম ইহরাম বাঁধার পর তাকে আযাদ করা হলে ঐ ইহরামেই তারা ‘আরাফাতে অবস্থানসহ হজ্জের বাকী কাজ সম্পাদন করলে এ হজ্জই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তাদের পুনরায় ফরয হজ্জ করতে হবে না।
২৫১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১১
وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ امْرَأَةً مِنْ خَثْعَمَ قَالَتْ: يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فَرِيْضَةَ اللهِ عَلٰى عَلٰى عِبَادِه فِى الْحَجِّ أَدْرَكَتْ أَبِىْ شَيْخًا كَبِيْرًا لَا يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ أَفَأَحُجُّ عَنْهُ؟ قَالَ: نَعَمْ وَذٰلِكَ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার খাস্‘আম গোত্রের এক মহিলা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! বান্দাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার ফরয করা হজ্জ আমার পিতার ওপরও বর্তেছে, কিন্তু আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ, যিনি সওয়ারীর উপরে বসে থাকতে পারে না। তাই আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পারো। এটা বিদায় হজ্জের ঘটনা। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, পুরুষের পক্ষ হতে কোন মহিলা অনুরূপভাবে মহিলার পক্ষ থেকে কোন পুরুষ হজ্জ করলে তা বৈধ ও বিশুদ্ধ। ইবনু বাত্ত্বাল বলেনঃ এতে কোন মতভেদ নেই যে, পুরুষের পক্ষ থেকে মহিলার এবং মহিলার পক্ষ থেকে পুরুষের হজ্জ করা বৈধ। তবে হাসান বাসরীর মতে পুরুষের পক্ষ থেকে মহিলার হজ্জ সম্পাদন করা বৈধ নয়। কেননা হজ্জে মহিলার জন্য এমন পোষাক পরিধান করা বৈধ যা পুরুষের জন্য বৈধ নয়। অতএব পুরুষের পক্ষ থেকে পুরুষকেই হজ্জ করতে হবে। অত্র হাদীস তার এ মত প্রত্যাখ্যান করে। অত্র হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, অপারগ ব্যক্তির ওপর হজ্জের অন্যান্য শর্ত পাওয়া গেলে এবং তার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করার লোক পাওয়া গেলে তাকে হজ্জ পালন করতে অর্থাৎ- অন্য লোক দিয়ে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করাতে হবে। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম শাফি‘ঈর অভিমত এটাই।
পক্ষান্তরে ইমাম মালিক-এর মতে স্বয়ং হজ্জ সম্পাদনে সক্ষম না হলে তার পক্ষ থেকে অন্যকে দিয়ে হজ্জ করানো ফরয নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا ‘‘যে ব্যক্তি তাতে পৌঁছতে সক্ষম’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ৯৭)। আর অপারগ ব্যক্তি সক্ষম নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত খাস্‘আমিয়াহ্ মহিলার হাদীসটি ইমাম মালিক-এর এ মতকে প্রত্যাখ্যান করে।
তবে এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই যে, কোন ব্যক্তির ওপর সুস্থ অবস্থায় হজ্জ ফরয হওয়ার পর যদি তিনি অসুস্থ হন যার ফলে তিনি স্বয়ং হজ্জ সম্পাদন করতে অক্ষম হন তাহলে তার পক্ষ থেকে অবশ্যই হজ্জ সম্পাদন করতে হবে।
২৫১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১২
وَعَنْهُ قَالَ: أَتٰى رَجُلٌ النَّبِىَّ ﷺ فَقَالَ: إِنَّ أُخْتِىْ نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ وَإِنَّهَا مَاتَتْ فَقَالَ النَّبِىُّ ﷺ: «لَوْ كَانَ عَلَيْهَا دَيْنٌ أَكَنْتَ قَاضِيَه؟ قَالَ: نَعَمْ قَالَ: فَاقْضِ دَيْنَ اللّٰهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِالْقَضَاءِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমার বোন হজ্জ পালন করার জন্য মানৎ করেছিলেন; কিন্তু (তা আদায় করার আগেই) তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বোনের কোন ঋণ থাকলে তুমি তা পরিশোধ করতে কিনা? সে বললো, হ্যাঁ আদায় করতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তুমি আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো; কেননা তা আদায় করা অধিক উপযোগী। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৫১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৩
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজ্জের উদ্দেশে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ করো। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ) ‘‘তুমি গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ সম্পাদন করো’’। হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, স্বামী অথবা মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলার জন্য হজ্জের সফর বৈধ নয় যদি এর দূরত্ব তিন মাইলের বেশী হয়। দারাকুত্বনী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা মাহরাম ব্যতীত কখনো হজ্জ করবে না। অতএব যারা বলেন যে, হজ্জের সফরের জন্য মাহরাম শর্ত নয়- এটা তাদের মনগড়া উক্তি। যা গ্রহণযোগ্য নয়।
অত্র হাদীস এও প্রমাণ করে যে, কোন মহিলার ওপর হজ্জ ফরয হলে তাকে হজ্জ করতে বাধা দেয়া স্বামীর জন্য বৈধ নয় যদি তার সাথে মাহরাম ব্যক্তি সফর করে।
২৫১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৪
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: اِسْتَأْذَنْتُ النَّبِىَّ ﷺ فِى الْجِهَادِ. فَقَالَ: «جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিহাদে যাবার জন্য অনুমতি চাইলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের জিহাদ হলো হজ্জ/হজ। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
ইবনু বাত্ত্বাল বলেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে যে, মহিলাদের ওপর জিহাদ ফরয নয় বরং তারা আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ انْفِرُواْ خِفَافاً وَثِقَالًا (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৪১ আয়াত)-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি সর্বসম্মত বিষয়। তবে (جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ) এর অর্থ এ নয় যে, তারা নফল জিহাদও করতে পারবে না। বরং হাদীসের মর্ম হলো মহিলাদের জন্য জিহাদের চাইতে হজ্জ উত্তম। তাদের উপর জিহাদ এ জন্য ফরয নয় যে, মহিলাদের পুরুষদের থেকে পৃথক থাকা এবং তাদের থেকে পর্দা করা জরুরী। অথচ জিহাদ এর বিপরীত। তাই তাদের উপর জিহাদ ফরয নয়।
২৫১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৫
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا تُسَافِرُ امْرَأَةٌ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ إِلَّا وَمَعَهَا ذُوْ مَحْرَمٍ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা কোন মাহরাম ব্যতীত একদিন ও এক রাতের পথও সফর করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
‘উলামাগণের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে, কোন মহিলা যখন সম্পদশালী হয় এবং তার যদি মাহরাম বা স্বামী না থাকে তাহলে তার ওপর কি হজ্জ ফরয? সঠিক কথা এই যে, কোন মহিলার পক্ষেই কোন সফরের জন্য মাহরাম অথবা স্বামী ব্যতীত সফর করা বৈধ নয়। অতএব যে মহিলার স্বামী বা মাহরাম নেই এ ওজর থাকার কারণে তার উওপর হজ্জ ফরয নয়।
২৫১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৬
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: وَقَّتَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ: ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلِأَهْلِ الشَّامِ: الْجُحْفَةَ وَلِأَهْلِ نَجْدٍ: قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلِأَهْلِ الْيَمَنِ: يَلَمْلَمَ فَهُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتٰى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّه مِنْ أَهْلِه وَكَذَاكَ وَكَذَاكَ حَتّٰى اَهْلُ مَكَّةَ يُهِلُّوْنَ مِنْهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাবাসীদের জন্যে ‘যুলহুলায়ফাহ্’-কে, শাম বা সিরিয়াবাসীদের জন্য ‘জুহফাহ্’-কে আর নাজদবাসীদের জন্য ‘ক্বরনুল মানাযিল’-কে এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালাম্লাম্’-কে মীকাত নির্দিষ্ট করেছেন। এসব স্থানগুলো এ সকল স্থানের লোকজনের জন্য আর অন্য স্থানের লোকেরা যখন এ স্থান দিয়ে আসবে তাদের জন্য, যারা হজ্জ বা ‘উমরার ইচ্ছা করে। আর যারা এ সীমার ভিতরে অবস্থান করবে, তাদের ইহ্রামের স্থান হবে তাদের ঘর- এভাবে ক্রমান্বয়ে কাছাকাছি লোকেরা স্বীয় বাড়ি হতে এমনকি মাক্কাবাসীরা ইহরাম বাঁধবে মক্কা হতেই। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
জুহফাহ্ঃ মক্কা হতে উত্তর-পশ্চিম দিকে ১২০ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান। মরক্কো, মিসর ও সিরিয়ার অধিবাসীগণের এটি মীকাত। বর্তমানে উক্ত স্থানটি চেনার বিশেষ কোন নিদর্শন না থাকার কারণে লোকজন রাবেগ নামক স্থান থেকে ইহরাম বেঁধে থাকেন।
ক্বরনুল মানাযিলঃ মক্কা হতে ৪২ মাইল পূর্বে একটি পাহাড়ী এলাকার নাম। এটি নাজদবাসীদের মীকাত।
ইয়ালামলাম্ঃ মক্কা থেকে ৩০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটি ইয়ামানবাসীদের মীকাত। পাকভারত উপমহাদেশের সমুদ্রপথে গমনকারী যাত্রীগণও ইয়ামানে উপনীত হয়ে এ ইয়ালামলাম পাহাড়ের দক্ষিণে অবস্থানকালে ইহরাম বাঁধেন।
(هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتٰى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ) উক্ত বর্ণিত মীকাত তাদের জন্য যাদের জন্য তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদেরও জন্য এগুলো মীকাত যারা এর অধিবাসী নয় অথচ এ পথেই তারা অতিক্রম করে। যেমন- একজন বাংলাদেশী যিনি মাদীনাতে অবস্থান করছেন তিনি যদি হজ্জ করতে চান তাহলে তার মীকাত যুলহুলায়ফাহ্। অথচ তার প্রকৃত মীকাত উড়োজাহাজে ক্বরনুল মানাযিল আর সমুদ্র পথে ইয়ালামলাম্।
(لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ) ‘‘যে ব্যক্তি হজ্জ অথবা ‘উমরা করতে চায়’’। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হজ্জ অথবা ‘উমরাতে গমনেচ্ছু ব্যক্তির জন্য ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করা বৈধ নয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি হজ্জ অথবা ‘উমরা করার ইচ্ছা ব্যতিরেকে সফরে গমন করে তার জন্য ইহরাম ছাড়াই এ মীকাতগুলো অতিক্রম করা বৈধ। তবে এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
(১) ইমাম যুহরী, হাসান বাসরী, ইমাম শাফি‘ঈ-এর একটি ক্বওল, ইবনু ওয়াহ্ব-এর বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মালিক এবং দাঊদ ইবনু ‘আলী ও তাদের অনুসারীদের মতে ইহরাম ব্যতীত মাক্কাতে প্রবেশে কোন ক্ষতি নেই।
(২) ‘আত্বা ইবনু আবী রবাহ, লায়স ইবনু সা‘দ, সাওরী, আবূ হানীফা এবং তার অনুসারীবৃন্দ, বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ-এর প্রসিদ্ধ মত, আহমাদ, আবূ সাওর প্রমুখদের মতে মীকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের জন্য ইহরাম ব্যতিরেকে মাক্কাতে প্রবেশ করা বৈধ নয়।
কেউ যদি ইহরাম ছাড়াই প্রবেশ করে তবে খারাপ কাজ করল তবে এজন্য ইমাম শাফি‘ঈর মতে কোন প্রকার কাফফারা নেই। আর ইমাম আবূ হানীফার মতে কাফফারাহ স্বরূপ হজ্জ অথবা ‘উমরা করতে হবে।
(فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّه مِنْ أَهْلِه) আর যে ব্যক্তি মীকাতের অভ্যন্তরের অধিবাসী স্বীয় আবাসই তার ইহরাম বাঁধার স্থান। অর্থাৎ- তাকে মীকাতের বাইরে যেয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে না বরং স্বীয় আবাসস্থল থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
(وَأَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ) আর মাক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে। এ বিধান হজ্জের জন্য খাস।
মাক্কাহ্বাসী যদি ‘উমরা করতে চায় তবে হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। যেমনটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে তান্‘ঈমে প্রেরণ করেছিলেন ‘উমরা-এর ইহরাম বাঁধার জন্য।
মীকাতে যাওয়াব পূর্বেই ইহরাম বাঁধা যাবে কি-না? এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে ভিন্নমত রয়েছে।
ইবনু হাযম বলেনঃ কারো জন্য বৈধ নয় যে, মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই হজ্জ অথবা ‘উমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে। কেউ যদি মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই ইহরাম বাঁধে। অতঃপর মীকাত অতিক্রম করে তবে তার হজ্জ বা ‘উমরা কোনটাই হবে না। তবে মীকাতে পৌঁছার পর যদি নতুন করে ইহরামের নিয়্যাত করে তাহলে তার ইহরাম বিশুদ্ধ হবে।
জমহূর ‘উলামাগণের মতে মীকাতে পৌঁছাবার পূর্বেই ইহরাম বাঁধলে তা বৈধ হবে বরং হানাফী এবং শাফি‘ঈ উলামাগণের মতে, মীকাতে পৌঁছার পূর্বে ইহরাম বাঁধা উত্তম। ইমাম মালিক-এর মতে মীকাতে পৌঁছাবার পূর্বে ইহরাম বাঁধা মাকরূহ। আর এ অভিমতটিই অধিক সঠিক। আল্লাহই ভাল জানেন।
২৫১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৭
وَعَنْ جَابِرٍ عَنْ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ قَالَ: «مُهَلُّ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مِنْ ذِى الْحُلَيْفَةِ وَالطَّرِيقُ الْاٰخَرُ الْجُحْفَةُ وَمُهَلُّ أَهْلِ الْعِرَاقِ مِنْ ذَاتِ عِرْقٍ وَمُهَلُّ أَهْلِ نَجْدٍ قَرْنٌ وَمُهَلُّ أَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمُ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনাবাসীদের মীকাত হলো ‘যুলহুলায়ফাহ্’। অন্য পথে (সিরিয়ার পথে) প্রবেশ করলে ‘জুহফাহ্’, ইরাকবাসীদের মীকাত হলো ‘যা-তু ‘ইরক্ব’ এবং নাজদবাসীদের মীকাত হলো ‘ক্বরনুল মানাযিল’ এবং ইয়ামানবাসীদের মীকাত হলো ‘ইয়ালাম্লাম্। (মুসলিম)[১]
২৫১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৮
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: اعْتَمَرَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَرْبَعُ عُمَرٍ كُلُّهُنَّ فِىْ ذِى الْقَعْدَةِ إِلَّا الَّتِىْ كَانَتْ مَعَ حَجَّتِه: عُمْرَةً مِنَ الْحُدَيْبِيَةِ فِىْ ذِى الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةً مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ فِىْ ذِى الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةً مِنَ الْجِعْرَانَةِ حَيْثُ قَسَّمَ غَنَائِمَ حُنَيْنٍ فِىْ ذِى الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةً مَعَ حَجَّتِه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোট চারবার ‘উমরা পালন করেছেন। হজ্জের সাথে ‘উমরা ছাড়া প্রত্যেকটি ‘উমরা পালন করেছেন যিলকদ মাসে। এক ‘উমরা করেছেন হুদায়বিয়াহ্ নামক স্থান হতে যিলকদ মাসে (আগমনকারী বৎসরে), আর এক ‘উমরা করেছেন জি‘রানাহ্ নামক স্থান থেকে, যেখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হুনায়ন যুদ্ধেলব্ধ গনীমাতের মাল বণ্টন করেছিলেন যিলকদ মাসে। আর এক ‘উমরা তিনি পালন করেছেন (দশম হিজরীতে তাঁর বিদায়) হজ্জের মাসে। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
বারা ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার ‘উমরা করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি ‘উমরা করেছেন যিলকদ মাসে এবং একটি ‘উমরা করেছেন শাও্ওয়াল মাসে।
‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের পূর্বে যিলকদ মাসে তিনটি ‘উমরা করেছেন।
আনাস (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীস এবং যে সমস্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি দু’বার ‘উমরা করেছেন এর সমন্বয় এই যে, তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জের সাথে ‘উমরা গণ্য করেননি। আর তা ছিল যিলহজ্জ মাসে। অনুরূপভাবে হুদায়বিয়ার ‘উমরাকেও তারা গণ্য করেননি। এজন্য যে, তা পূর্ণতা পায়নি মুশরিকদের বাধা দেয়ার কারণে। আর যারা বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার ‘উমরা করেছেন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জের সাথে ‘উমরাটি গণ্য করেননি তা যিলহজ্জ মাসে হজ্জের সাথে হওয়ার কারণে, যেমনটি ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত শাও্ওয়াল মাসের ‘উমরার সমন্বয় এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুরু করেছিলেন শাও্ওয়াল মাসের শেষের দিকে আর তা সমাপ্তি ঘটেছে যিলকদ মাসে।
২৫১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫১৯
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: اعْتَمَرَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِىْ ذِى الْقَعْدَةِ قَبْلَ أَنْ يَحُجَّ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দশম হিজরীতে তাঁর বিদায়) হজ্জ পালন করার আগে যিলকদ মাসে দু’বার ‘উমরা করেছিলেন। (বুখারী)[১]
২৫২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২০
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللّٰهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ». فَقَامَ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ فَقَالَ: أَفِىْ كُلِّ عَامٍ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ؟ قَالَ: لَوْ قُلْتُهَا: نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَوْ وَجَبَتْ لَمْ تَعْمَلُوا بِهَا وَلَمْ تَسْتَطِيْعُوْا وَالْحَجُّ مَرَّةٌ فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعٌ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِىُّ وَالدَّارِمِىُّ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবজাতি! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। এটা শুনে আক্বরা‘ ইবনু হাবিস দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা (হজ্জ/হজ) কি প্রতি বছর? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি আমি বলতাম হ্যাঁ, তবে তা (প্রত্যেক বছর) ফরয হয়ে যেতো। আর যদি ফরয হয়ে যেতো, তোমরা তা সম্পাদন করতে না এবং করতে সমর্থও হতে না। হজ্জ (জীবনে ফরয) একবারই। যে বেশী করলো সে নফল করলো। (আহমাদ, নাসায়ী, ও দারিমী)[১]
(لَوْ قُلْتُهَا: نَعَمْ لَوَجَبَتْ) আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ, তবে তা প্রতি বৎসরের জন্যই ফরয হয়ে যেত। উল্লেখ্য যে, হাদীসটি মুসনাদ আহমাদে আট জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোন স্থানেই (لَوْ قُلْتُهَا: نَعَمْ) এ শব্দে বর্ণিত হয়নি। বরং প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে (১ম খণ্ড, ২৫৫ ও ২৯০-২৯১ পৃঃ) (لَوْ قُلْتُهَا: لَوَجَبَتْ) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। সপ্তম স্থানে (১ম খণ্ড, ৩৭১ পৃঃ) ও অষ্টম স্থানে (১ম খণ্ড, ৩৭২ পৃঃ) (لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ) শব্দে, তৃতীয় স্থানে (১ম খণ্ড, ২৯২ পৃঃ) পঞ্চম স্থানে (১ম খণ্ড, ৩২৩ পৃঃ) ও ৬ষ্ঠ স্থানে (১ম খণ্ড, ৩০১ পৃঃ) (لو قلت: كل عام لكان) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। অতএব এটি স্পষ্ট যে, মিশকাতের বর্ণনা (لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ) শব্দটি সংকলক কর্তৃক ভুল হয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।
(وَالْحَجُّ مَرَّةٌ) ‘‘হজ্জ/হজ মাত্র একবার’’, অর্থাৎ- হজ্জ জীবনে মাত্র একবারই ফরয। যে ব্যক্তি এর বেশী করবে তা নফল।
২৫২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২১
وَعَنْ عَلِىٍّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُه إِلٰى بَيْتِ اللّٰهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا وَذٰلِكَ أَنَّ اللّٰهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى يَقُولُ: وَلِلهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِليْهِ سَبِيْلًا
رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ. وَفِى اسْنَادِه مَقَالٌ وَهِلَالُ بْنُ عَبْدِ اللّٰهِ مَجْهُولٌ والْحَارِثُ يُضَعَّفُ فِى الحَدِيْثِ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘বায়তুল্লাহ’ পৌঁছার পথের খরচের মালিক হয়েছে অথচ হজ্জ পালন করেনি সে ইয়াহূদী বা খ্রীস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করুক এতে কিছু যায় আসে না। আর এটা এ কারণে যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘মানুষের জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ পালন করা ফরয, যে ব্যক্তি ওখানে পৌঁছার সামর্থ্য লাভ করেছে।’’
(তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এটি গরীব। এর সনদে কথা আছে। এর এক রাবী হিলাল ইবনু ‘আব্দুল্লাহ মাজহূল বা অপরিচিত এবং অপর রাবী হারিস য‘ঈফ বা দুর্বল।)[১]
২৫২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২২
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا صَرُوْرَةَ فِى الْإِسْلَامِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) হজ্জ পালন না করে থাকা ইসলামে নেই। (আবূ দাঊদ)[১]
(১) যে ব্যক্তি হজ্জ সম্পাদন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। অর্থাৎ- কোন মুসলিমের জন্য সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকবেন। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে হজ্জ করল না সে নিজের উপর থেকে কল্যাণকে বিরত রাখল।
(২) যে ব্যক্তি বিবাহ করা থেকে বিরত থেকে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করল। অর্থাৎ- ইসলামে বিবাহ থেকে বিরত থাকার বিধান নেই।
(৩) হারামে (মক্কার সম্মানিত এলকা) যে ব্যক্তি হত্যা করবে তাকেও হত্যা করা হবে। জাহিলী যুগে কেউ অপরাধ করলে সে অপরাধের দায় থেকে বাঁচার জন্য হারামে আশ্রয় নিত। ইসলাম এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করা বাতিল করে দিয়েছে। অতএব কেউ যদি হারাম শরীফে হত্যা করে অথবা হত্যা করার পর হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করে তাকে রেহাই দেয়া হবে না।
২৫২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৩
وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيُعَجِّلْ». رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والدَّارِمِىُّ
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের ইচ্ছা পোষণ করেছে সে যেন তাড়াতাড়ি হজ্জ পালন করে। (আবূ দাঊদ ও দারিমী)[১]
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ (تفعيل) শব্দটি (استفعال) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ- (تعجل) শব্দটি (استعجال) এর অর্থে এসেছে। যারা বলেনঃ হজ্জ ফরয হওয়া মাত্রই তা দ্রুত আদায় করতে হবে, বিলম্ব করার অবকাশ নেই, অত্র হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল।
২৫২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৪
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَالنَّسَائِىُّ
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হজ্জ ও ‘উমরা সাথে সাথে করো। কারণ এ দু’টি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবূলযোগ্য হজ্জের সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[১]
(متابعة) অর্থাৎ- ধারাবাহিকভাবে একটির পরে আরেকটি কাজ করাকে (متابعة) বলা হয়। অতএব হাদীসের অর্থ দাঁড়ায় তোমরা হজ্জ সম্পাদনের সাথে সাথে ‘উমরা করো। অথবা ‘উমরা করার সাথে সাথে হজ্জ/হজও সম্পাদন করো।
২৫২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৫
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ عَنْ عُمَرَ إِلٰى قَوْلِه خُبْثَ الْحَدِيْدِ
আহমাদ ও ইবনু মাজাহ ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হতে ‘‘লোহার ময়লা’’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।[১]
২৫২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৬
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ مَا يُوجِبُ الْحَجَّ؟ قَالَ: الزَّادُ وَالرَّاحِلَةُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْن مَاجَهْ
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কিসে (কোন বস্ত্ততে) হজ্জ ফরয করে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পথ খরচ ও বাহনে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[১]
উল্লেখ্য যে, এখানে অন্যান্য শর্তসমূহের মধ্য থেকে মাত্র দু’টি উল্লেখ করার কারণ এই যে, এ দু’টি শর্ত অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে জেনে রাখা দরকার যে, হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত পাঁচটি। যথা-
(১) মুসলিম হওয়া, (২) বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া, (৩) বালেগ হওয়া, (৪) আযাদ হওয়া, (৫) মাক্কায় যাতায়াতে সক্ষম হওয়া। এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।
ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ উপর্যুক্ত শর্তসমূহ তিনভাগে বিভক্ত। যথা-
(১) ওয়াজিব ও বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত, আর তা হলো মুসলিম ও বোধশক্তি সম্পনণ হওয়া। অতএব কাফির এবং পাগলের ওপর হজ্জ ফরয নয়। তারা হজ্জ করলে তা বিশুদ্ধ হবে না।
(২) ওয়াজিবও যথেষ্ট হওয়ার শর্ত। আর তা হচ্ছে বালেগ ও আযাদ হওয়া। তা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। অতএব শিশু অথবা গোলাম যদি হজ্জ করে তাহলে তাদের হজ্জ বিশুদ্ধ হবে কিন্তু তাদের হজ্জ ফরয হিসেবে যথেষ্ট নয়। বরং শিশু বালেগ হলে এবং গোলাম আযাদ হলে তাকে পুনরায় ইসলামের ফরয হজ্জ সম্পাদন করতে হবে অন্যান্য শর্ত পাওয়া গেলে।
(৩) শুধুমাত্র ওয়াজিব হওয়ার শর্ত। আর তা হলো সক্ষম হওয়া। অতএব সক্ষম নয় এমন ব্যক্তি যদি পাথেয় ও বাহন ব্যতীতই কষ্ট করে হজ্জ পালন করে তাহলে তার হজ্জ বিশুদ্ধ এবং তা ফরয হিসেবে যথেষ্ট। অর্থাৎ- উক্ত ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে সক্ষমতা অর্জন করে তাকে আর পুনরায় হজ্জ করতে হবে না।
২৫২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৭
وَعَنْهُ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ: مَا الْحَاجُّ؟ فَقَالَ: «اَلشَّعِثُ التَّفْلُ». فَقَامَ اٰخَرُ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ أَىُّ الْحَجِّ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الْعَجُّ وَالثَّجُّ. فَقَامَ اٰخَرُ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ مَا السَّبِيلُ؟ قَالَ: زَادٌ وَرَاحِلَةٌ رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ. وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ فِىْ سُنَنِه إِلَّا أَنَّه لَمْ يَذْكُرِ الْفَصْلَ الْأَخِيْرَ
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হাজী কে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে লোকের (ইহরাম বাঁধার জন্য) অগোছালো চুল এবং সুগন্ধিহীন শরীর। এরপর অপর ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ হজ্জ উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘লাব্বায়কা’ বলার সাথে আওয়াজ সুউচ্চ করা এবং (কুরবানীর) রক্ত প্রবাহিত করা। তারপর অপর (তৃতীয়) ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কুরআনে বর্ণিত ‘সাবীল’ (সামর্থ্য রাখে)-এর অর্থ কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পথের খরচ ও বাহন। [ইমাম বাগাবী (রহঃ) শারহুস্ সুন্নাহ-তে এবং ইবনু মাজাহ তাঁর সুনানে বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি শেষের অংশ বর্ণনা করেননি।][১]
(أَىُّ الْحَجِّ أَفْضَلُ) ‘‘কোন্ হজ্জ উত্তম’’। অর্থাৎ- কোন প্রকারের হজে অধিক সাওয়াব অর্জন হয়। (الْعَجُّ وَالثَّجُّ) ‘‘উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ এবং রক্ত প্রবাহিত করা’’। সুতরাং যে হজ্জে তালবিয়াহ্ বেশী পরিমাণে পাঠ করা হয় এবং কুরবানী করা হয় সে হজ্জই অধিক সাওয়াবের অধিকারী। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে হজ্জের যাবতীয় কাজ, এর রুকনসমূহ, মুস্তাহাবসমূহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয় সে হজ্জই উত্তম হজ্জ।
২৫২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৮
وَعَنْ أَبِىْ رَزِينٍ الْعُقَيْلِىِّ أَنَّه أَتَى النَّبِىَّ ﷺ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ إِنَّ أَبِىْ شَيْخٌ كَبِيرٌ لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ وَلَا الْعُمْرَةَ وَلَا الظَّعْنَ قَالَ: حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِىُّ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
আবূ রযীন আল ‘উক্বায়লী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ, হজ্জ ও ‘উমরা করার সামর্থ্য রাখে, না বাহনে বসতে পারেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ ও ‘উমরা করে দাও। [তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ][১]
ইমাম ত্ববারী বলেনঃ এ হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, যিনি স্বয়ং হজ্জ করতে সক্ষম নন এমন জীবিত ব্যক্তির পক্ষ হতে অন্য ব্যক্তির হজ্জ করা বৈধ। আর তা অন্যান্য শারীরিক ‘ইবাদাত তথা সালাত ও সিয়ামের মতো নয়। وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعٰى আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী দ্বারা সকল ‘ইবাদাত উদ্দেশ্য নয়।
(وَاعْتَمِرْ) ‘‘আর (তার পক্ষ থেকে) ‘উমরা করো’’। যারা বলেন ‘উমরা করা ওয়াজিব হাদীসের এ অংশটুকু তাদের পক্ষে দলীল। এ মতের স্বপক্ষে একদল আহলুল হাদীস এবং ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ-এর প্রসিদ্ধ মত এটাই। ইমাম ইসহাক, সাওরী এবং মুযানী এ মতের প্রবক্তা। ‘আল্লামা সিনদী বলেনঃ অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ ও ‘উমরা করা তা সম্পাদনকারীর ওপর ওয়াজিব নয়। অত্র হাদীসে (اعْتَمِرْ) আদেশসূচক শব্দটি ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা মুস্তাহাব বুঝায়। অতএব অত্র হাদীস দ্বারা ‘উমরা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না।
‘আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ অত্র হাদীসে (اعْتَمِرْ) নির্দেশসূচক শব্দটি আবূ রযীন-এর প্রশ্নের জওয়াবে বলা হয়েছে। আর উসূলবিদদের নিকট এটি সাব্যস্ত যে, প্রশ্নের জওয়াবে নির্দেশসূচক শব্দ দ্বারা ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা দ্বারা বৈধতা বুঝায়। ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম মালিক-এর মতে ‘উমরা করা ওয়াজিব নয়।
এদের স্বপক্ষে দলীলঃ ইমাম তিরমিযী, বায়হাক্বী ও আহমাদে জাবির কর্তৃক বর্ণিত হাদীস যাতে রয়েছে (أخبرني عن العمرة أواجبة هي؟ فقال: لا وأن تعتمر خير لك) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো আমাকে অবহিত করুন যে, ‘উমরা কি ওয়াজিব? উত্তরে তিনি বললেনঃ না। তবে ‘উমরা করা তোমার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু হাদীসটি য‘ঈফ। কেননা এর সনদে হাজ্জাজ ইবনু আরতাহ্ নামক রাবী রয়েছে যিনি য‘ঈফ। এ হাদীসের সমর্থনে আরো হাদীস রয়েছে। তাই ইমাম শাওকানী বলেনঃ হাদীসটি হাসান লিগয়রিহী এর পর্যায়ভুক্ত যা জমহূর ‘উলামাগণের নিকট দলীল হিসেবে গণ্য। ‘উমরা ওয়াজিব কি-না? এ বিষয়ে উভয় ধরনের দলীল থাকার কারণে সকল যুগের ‘আলিমগণের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।
(১) ‘উমরা ওয়াজিবঃ এ মতের পক্ষে রয়েছেন ‘উমার, ইবনু ‘আব্বাস, যায়দ ইবনু সাবিত ও ইবনু ‘উমার (রাঃ), সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব, সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র, ‘আত্বা, তাউস, মুজাহিদ, হাসান বাসরী, ইবনু সীরীন ও শা‘বী প্রমুখ। সাওরী, ইসহাক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ এ মতের প্রবক্তা
(২) ‘উমরা ওয়াজিব নয়ঃ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে তা বর্ণিত আছে। এ মতের পক্ষে রয়েছেন- ইমাম মালিক, আবূ সাওর ও আবূ হানীফা। ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ থেকেও একটি বর্ণনা এরূপ পাওয়া যায়। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্ এ মত গ্রহণ করেছেন।
‘আল্লামা শানক্বীত্বী তিনটি কারণে ওয়াজিব হওয়ার মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
(১) অধিকাংশ উসূলবিদগণ ঐ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে হাদীস বারায়াতে আসলিয়াহ্ (মূল হুকুম) থেকে অন্য হুকুমের দিকে ধাবিত করে।
(২) একদল উসূলবিদ ঐ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যা ওয়াজিব বুঝায় ঐ হাদীসের উপর যা ওয়াজিব বুঝায় না।
(৩) যারা ওয়াজিব বলেছেন তাদের মতানুসারে যদি তা ওয়াজিব হিসেবে পালন করা হয় তাহলে জিম্মা থেকে তা নেমে গেল। পক্ষান্তরে যারা ওয়াজিব বলেনি তাদের মতানুসারে যদি তা আদায় না করা হয় আর যদি তা ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তা জিম্মাতেই থেকে গেল। অতএব ওয়াজিব হিসেবে তা আদায় করাই শ্রেয়। আল্লাহই অধিক অবগত আছেন।
২৫২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫২৯
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ قَالَ: «مَنْ شُبْرُمَةُ؟» قَالَ: أَخٌ لِىْ أَوْ قَرِيبٌ لِىْ قَالَ: أَحَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ؟ قَالَ: لَا قَالَ: «حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ». رَوَاهُ الشَّافِعِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, আমি শুব্রম্নমাহ্’র পক্ষ হতে (হজ্জ/হজ পালনের উদ্দেশে) উপস্থিত হয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শুব্রম্নমাহ্ কে? সে বললো, আমার ভাই অথবা বললো, আমার নিকটাত্মীয়। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজের হজ্জ করেছো কি? সে বললো, জি না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে (প্রথমে) নিজের হজ্জ করো। পরে শুবরুমাহ্’র পক্ষ হতে হজ্জ করবে। (শাফি‘ঈ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[১]
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি নিজের হজ্জ সম্পাদন করেননি তার জন্য অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ করা জায়িয নয়। তিনি নিজের হজ্জ পালন করতে সক্ষম হোন অথবা না হোন।
ইমাম শাফি‘ঈর অভমত এটাই। ইমাম আওযা‘ঈ এবং ইসহাক এ মতের প্রবক্তা। ইমাম আহমাদ থেকেও এ মতের পক্ষে একটি বর্ণনা রয়েছে।
পক্ষান্তরে ইমাম মালিক ও আবূ হানীফার মতে নিজের হজ্জ না করেও অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ করা বৈধ। হাসান বাসরী, ‘আত্বা ও সাওরী- এ মতের প্রবক্তা।
২৫৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩০
وَعَنْهُ قَالَ: وَقَّتَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ لِأَهْلِ الْمَشْرِقِ الْعَقِيقَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বদিকের অধীবাসীদের (‘ইরাকীদের) জন্যে ‘আক্বীক্ব নামক স্থানকে (ইহরাম বাঁধার জন্য) মীকাত নির্ধারণ করেছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[১]
(أَهْلِ الْمَشْرِقِ) দ্বারা উদ্দেশ্য যাদের আবাস মক্কার হারাম শরীফের বাইরে পূর্ব দিকে অবস্থিত। আর তারা হলো ‘ইরাকবাসী। হাদীসের মর্মার্থ এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ‘আক্বীক্ব নামক জায়গাকে মীকাত সাব্যস্ত করেছেন।
২৫৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩১
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ وَقَّتَ لِأَهْلِ الْعِرَاقِ ذَاتَ عِرْقٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِىُّ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইরাকবাসীদের জন্য ‘‘যাতু ‘ইরক্ব’’-কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[১]
ইবনুল মালিক বলেনঃ মনে হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব এলাকাবাসীর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি মীকাত নির্ধারণ করেছেন।
একটি ‘আক্বীক্ব আরেকটি যাতু ‘ইরক্ব। অতএব যে ব্যক্তি যাতু ‘ইরক্ব-এ পৌঁছবার আগেই ‘আক্বীক্ব থেকে ইহরাম পরিধান করে এটি তার জন্য উত্তম। আর যে ব্যক্তি ‘আক্বীক্ব অতিক্রম করে যাতু ‘ইরক্ব-এ ইহরাম পরিধান করে এটি তার জন্য বৈধ। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ ‘আক্বীক্ব থেকেই ইহরাম বাঁধা উচিত।
২৫৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩২
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ أَهَلَّ بِحَجَّةٍ أَوْ عُمْرَةٍ مِنَ الْمَسْجِدِ الْأَقْصٰى إِلَى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه وَمَا تَأَخَّرَ أَوْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মাসজিদে আক্বসা থেকে মাসজিদে হারামের দিকে হজ্জ বা ‘উমরার ইহরাম বাঁধবে তার পূর্বের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হবে। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[১]
ইমাম খাত্ত্বাবী বলেনঃ এ হাদীস প্রমাণ করে মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধা বৈধ। আর একাধিক সাহাবী মীকাতে পৌঁছবার আগেই ইহরাম বেঁধেছেন। তবে একদল ‘আলিম তা মাকরূহ বলেছেন। এমনকি ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ‘ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) কে বাসরাহ্ থেকে ইহরাম বাঁধার বিষয়ের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। হাসান বাসরী, ‘আত্বা ইবনু আবী রবাহ এবং মালিক ইবনু আনাস তা মাকরূহ মনে করতেন।
২৫৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৩
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَحُجُّوْنَ فَلَا يَتَزَوَّدُونَ وَيَقُولُونَ: نَحْنُ الْمُتَوَكِّلُونَ فَإِذَا قَدِمُوا مَكَّةَ سَأَلُوا النَّاسَ فَأَنْزَلَ اللّٰهُ تَعَالٰى: ﴿وَتَزَوَّدُوْا فإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى﴾. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা হজ্জ পালন করতো অথচ পথের খরচ সঙ্গে নিত না। আর বলতো, আমরা আল্লাহর ওপর ভরসাকারী। কিন্তু মাক্কায় পৌঁছে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতো, তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, ‘‘ওয়াতাযাও ওয়াদূ ফাইন্না খয়রায্ যা-দিত্ তাক্বওয়া-’’ অর্থাৎ- তোমরা পথের খরচ সাথে নাও, উত্তম পাথেয় তো তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি (অর্থাৎ- অন্যের নিকট ভিক্ষা না করা)। (বুখারী)[১]
২৫৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৪
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ؟ قَالَ: «نَعَمْ عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لَا قِتَالَ فِيهِ: الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মহিলাদের ওপর কি জিহাদ ফরয? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, তাদের ওপর এমন জিহাদ ফরয যাতে সশস্ত্র যুদ্ধ নেই- আর তা হলো হজ্জ ও ‘উমরা। (ইবনু মাজাহ)[১]
আর তা হলো (الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ) ‘‘হজ্জ/হজ এবং ‘উমরা’’। ‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ হজ্জ এবং ‘উমরা পালনে জিহাদের মতই সফর ও দেশ ত্যাগের কষ্ট বিদ্যমান রয়েছে। তবে শত্রুর সাথে লড়াই করার ক্ষমতা মহিলাদের নেই। অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মহিলাদের ওপর জিহাদ ফরয নয়, এতে ‘উমরা ওয়াজিব হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
২৫৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৫
وَعَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا. رَوَاهُ الدَّارِمِىُّ
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুস্পষ্ট অভাব অথবা অত্যাচারী শাসকের বাধা, অথবা সাংঘাতিক রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়া হজ্জ পালন না করে মৃত্যুপথে যাত্রা করেছে, সে যেন মৃত্যুবরণ করে ইয়াহূদী হয়ে অথবা নাসারা হয়ে। (দারিমী)[১]
(أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ) ‘‘অথবা যালিম শাসক বাধা না দেয়’’। এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাস্তা যদি নিরাপদ না থাকে বরং যালিম শাসক বাধা প্রদান করে তাহলে হজ্জ ফরয নয়। তবে কোন শাসক যদি কারো প্রতি মহববত বা ভালবাসার কারণে সাময়িকভাবে বাধা প্রদান করে তা হজ্জ ফরয হওয়ার পথে বাধা নয়।
রাস্তায় হত্যা অথবা অন্যায়ভাবে সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার আশঙ্কাও হজ্জ ফরয না হওয়ার কারণ।
(مَرَضٌ حَابِسٌ) ‘‘সফরে বাধাপ্রদানকারী রোগ’’। অর্থাৎ- অধিক অসুস্থতার কারণে সফর করার সামর্থ্য না থাকা। অতএব সকল প্রকার রোগ ও শারীরিক ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শর্ত।
২৫৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৬
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ أَنَّه قَالَ: الْحَاجُّ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللّٰهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوْهُ غَفرَ لَهُمْ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হজ্জ ও ‘উমরাহকারী হলো আল্লাহর দা‘ওয়াতী কাফেলা বা মেহমানী দল। অতএব তারা যদি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন, তিনি তা কবূল করেন। আর যদি তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ)[১]
(إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوْهُ غَفرَ لَهُمْ) তারা যদি দু‘আ করে তিনি তা কবূল করেন। তারা ক্ষমা চাইলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন। এ দু‘আ কবূল ও ক্ষমা তাদের জন্য প্রযোজ্য যাদের হজ্জ হজ্জে মাবরূর বলে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে ‘উমরা-এর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।
২৫৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৭
وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: «وَفْدُ اللّٰهِ ثَلَاثَةٌ الْغَازِىْ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ». رَوَاهُ النَّسَائِىُّ وَالْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيمَانِ
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর প্রতিনিধি বা মেহমান হলো তিন ব্যক্তি। গাযী (ইসলামের জন্যে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী), হাজী ও ‘উমরা পালনকারী। (নাসায়ী ও বায়হাক্বী- শু‘আবুল ঈমান-এ রয়েছে)[১]
অন্যান্য ‘ইবাদাতকারীদের মধ্য থেকে এ তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহর মেহমান বলার কারণ এই যে, সাধারণত এ তিন প্রকার ‘ইবাদাতের জন্য সফরের প্রয়োজন হয়। আর যারা সফর করে কারো নিকট গমন করে তারাই তার মেহমান বলে গণ্য। এরাও যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সফর করে তাই এদেরকে আল্লাহর মেহমান বলা হয়েছে।
২৫৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৮
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِذَا لَقِيتَ الْحَاجَّ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَصَافِحْهُ وَمُرْهُ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بَيْتَه فَإِنَّه مَغْفُورٌ لَه. رَوَاهُ أَحْمَدُ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তুমি কোন হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম দিবে, মুসাফাহা করবে আর তাকে অনুরোধ জানাবে, তিনি যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান তার ঘরে প্রবেশের পূর্বেই। কারণ তিনি (হাজী) ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (আহমাদ)[১]
২৫৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৩৯
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ خَرَجَ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ غَازِيًا ثُمَّ مَاتَ فِىْ طَرِيقِه كَتَبَ اللّٰهُ لَه أَجْرَ الْغَازِىْ وَالْحَاجِّ وَالْمُعَتَمِرِ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ, ‘উমরা অথবা আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে বের হবে আর পথেই মৃত্যুবরণ করবে; আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য গাযী, হাজী বা ‘উমরা পালনকারীর সাওয়াব ধার্য করবেন। (বায়হাক্বী ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে অত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)[১]
‘আল্লামা আলক্বারী বলেনঃ হাদীসের অর্থ এই যে, যিনি হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার অব্যবহিত পরেই হজ্জের জন্য বের হয়ে যায় অথবা অসুস্থতা বা রাস্তার নিরাপত্তার অভাবের কারণে বিলম্বে বের হয়। অতঃপর তার মৃত্যু ঘটে তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন না। তবে যদি বিনা উযরে বিলম্ব করে তাহলে অবশ্যই গুনাহগার হবে। এ সত্ত্বেও বলব যে, তিনি হজ্জের সাওয়াব অবশ্যই পাবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কারোরই ভাল ‘আমাল বিনষ্ট করেন না।
২৫৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪০
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أُطَيِّبُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ لِإِحْرَامِه قَبْلَ أَنْ يُحْرِمَ وَلِحِلِّه قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ بِطِيبٍ فِيهِ مِسْكٌ كَأَنِّىْ أَنْظُرُ إِلٰى وَبِيصِ الطِّيبِ فِىْ مَفَارِقِ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ وَهُوَ مُحْرِمٌ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর ইহরামের জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং ইহরাম খোলার জন্যে (দশ তারিখে) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার পূর্বে সুগন্ধি লাগাতাম, এমন সুগন্ধি যাতে মিস্ক থাকতো। আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সিঁথিতে এখনো সুগন্ধি দ্রব্যের উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
পক্ষান্তরে একদল ‘উলামা বলেনঃ ইহরামের উদ্দেশে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ নয়। যদি কেউ তা লাগিয়ে থাকে অবশ্যই তা ধুয়ে ফেলতে হবে যাতে তার রং ও ঘ্রাণ কিছুই না থাকে। ইমাম মালিক-এর এটিই অভিমত। ইমাম যুহরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল হাসানও এ মতের প্রবক্তা।
যারা তা বৈধ মনে করেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীস তাদের দলীল।
পক্ষান্তরে যারা তা বৈধ নয় বলেন তাদের দলীল ইয়া‘লা ইবনু ‘উমাইয়্যাহ্ বর্ণিত হাদীস তাতে আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীকে সুগন্ধি ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি ইহরামের পূর্বে সুগন্ধি লাগাবেন তা অব্যাহতভাবে রাখার সুযোগ নেই বরং ইহরাম বাঁধার পূর্বেই তা ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জমহূর ইয়া‘লা বর্ণিত হাদীসের জওয়াবে বলেনঃ
(১) ইয়া‘লা বর্ণিত ঘটনা ঘটেছিল অষ্টম হিজরীতে জি‘রানাতে। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের ঘটনা ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের ঘটনা। আর সর্বশেষ বিষয়টি দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
(২) ইয়া‘লা বর্ণিত হাদীসে নির্দিষ্ট সুগন্ধি ধোয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর তা হলো খালূক। যে কোন সুগন্ধি ধোয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। সম্ভবতঃ খালূক জা‘ফরান মিশ্রিত থাকার কারণে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যা সুগন্ধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা পুরুষের জন্য কোন অবস্থাতেই জা‘ফরান ব্যবহার করা বৈধ নয়।
‘আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ আমার দৃষ্টিতে জমহূরের অভিমত তথা ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার বৈধ অধিক স্পষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়।
(وَلِحِلِّه قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ) অর্থাৎ- তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে রামী জামারাহ্ এবং মাথা মুন্ডানোর পরে তাকে সুগন্ধি লাগিয়েছি। হাদীসের এ অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রমী জামারার পর ইহরাম অবস্থায় হারামকৃত সবকিছুই হালাল হয়ে যায়। শুধুমাত্র স্ত্রীর সাথে মিলন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কার্যাবলী তাওয়াফ ইফাযাহ্ পর্যন্ত হারাম থাকে।
এ হাদীসটি এও প্রমাণ করে যে, হাজীর জন্য দু’টি হালাল অবস্থা রয়েছে। একটি জামরাতে পাথর নিক্ষেপ ও মাথা মুন্ডানোর পর। আরেকটি তাওয়াফে ইফাযার পর।
২৫৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪১
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يُهِلُّ مُلَبِّدًا يَقُولُ: «لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ». لَا يَزِيدُ عَلٰى هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাথার চুল জড়ানো অবস্থায় তালবিয়াহ্ বলতে শুনেছি,
‘‘লাব্বায়ক আল্লা-হুম্মা লাব্বায়ক, লাব্বায়কা লা- শারীকা লাক লাব্বায়ক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্ নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা- শারীকা লাকা’’
অর্থাৎ- ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি! আমি তোমার খিদমাতে উপস্থিত হয়েছি। তোমার কোন শারীক নেই। আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। সব প্রশংসা, অনুগ্রহের দান তোমারই এবং সমগ্র রাজত্বও তোমারই, তোমার কোন শারীক নেই।’’
এ কয়টি কথার বেশি কিছু তিনি বলেননি। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
এ থেকে বুঝা যায় যে, ইহরাম অবস্থায় তালবীদ করা মুস্তাহাব।
(لَا يَزِيدُ عَلٰى هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালবিয়াতে হাদীসে বর্ণিত শব্দের চাইতে বেশী কিছু বলতেন না’’। এ বর্ণনাটি নাসায়ীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়াতে ছিল ‘‘লাব্বায়কা ইলাহাল হাক্কি’’-এর বিরোধী নয়। কেননা এ সম্ভাবনা রয়েছে এটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) শুনেছেন কিন্তু ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা শুনেননি, তবে এটা প্রকাশমান যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত বাক্যটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব কমই বলেছেন। যেহেতু ইবনু ‘উমারের বর্ণিত বাক্যটি অধিক বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমাদ, মালিক ও মুসলিম নাফি' সূত্রে ইবনু ‘উমার থেকে মারফূ' সূত্রে অত্র হাদীসে বর্ণিত তালবিয়ার শব্দ বর্ণনা করার পর অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, নাফি' বলেনঃ ইবনু ‘উমার তার তালবিয়াতে এ দু‘আর সাথে আরো বাড়িয়ে বলতেন, ‘‘লাব্বায়কা, লাব্বায়কা, লাব্বায়কা, ওয়া সা‘দায়কা, ওয়াল খাইরু বিইয়াদায়কা, লাব্বায়কা, ওয়ার রাগবাউ ইলায়কা ওয়াল ‘আমাল’’।
যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইবনু ‘উমার তালবিয়াতে তা কিভাবে বাড়ালেন যা সেটার অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণে খুবই কঠোর ছিলেন? এর জওয়াব এই যে, তিনি মনে করতেন যে, বর্ণিত শব্দমালার সাথে কিছু বাড়ানো হলে তা উক্ত শব্দমালাকে রহিত করে না। কোন বস্ত্তর একাকী থাকা যে পর্যায়ের, অন্যের সাথে সে একই পর্যায়ভুক্ত। অতএব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পঠিত তালবিয়ার সাথে উক্ত শব্দমালাকে বাড়ালে তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়াতে কোন ব্যাঘাত ঘটাবে না। অথবা তিনি বুঝেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পঠিত শব্দমালার উপর সংক্ষেপ্ত রাখা জরুরী নয়। কেননা কাজ বেশীর মধ্যেই সাওয়াব বেশী। ‘আল্লামা ‘ইরাকী বলেনঃ যিকিরের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন না করে যদি অতিরিক্ত শব্দমালা যোগ করা হয় তবে তা দোষণীয় নয়।
জেনে রাখা ভাল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালবিয়াতে যে শব্দমালা পাঠ করেছেন তার চাইতে বাড়ানো যাবে কি-না- এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।
কেউ তা মাকরূহ বলেছেন। ইবনু ‘আবদুল বার ইমাম মালিক থেকে তা বর্ণনা করেছেন। ইমাম শাফি‘ঈর একটি অভিমতও এ রকম।
পক্ষান্তরে সাওরী, আওযা‘ঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান বলেনঃ তালবিয়াহ্ পাঠকারী তাতে তার পছন্দমত শব্দ বাড়াতে পার। আবূ হানীফা, আহমাদ ও আবূ সাওর বলেনঃ বাড়ানোতে কোন দোষ নেই।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পঠিত শব্দমালার উপর ‘আমাল করা উত্তম। তবে তাতে বাড়ালে কোন দোষ নেই। এটিই জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত।
২৫৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪২
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ إِذَا أَدْخَلَ رِجْلَه فِى الْغَرْزِ وَاسْتَوَتْ بِه نَاقَتُه قَائِمَةً أَهَلَّ مِنْ عِنْدِ مَسْجِدِ ذِى الْحُلَيْفَةِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিদায় হজ্জের সময়) যখন যুলহুলায়ফাহ্ মাসজিদের নিকট নিজের পা রিকাবে রাখার পর উটনী তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(১) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফার মাসজিদে সালাত আদায় করার পর তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। যেমনটি আহমাদ, নাসায়ী, তিরমিযী ও বায়হাক্বী ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন।
(২) যুলহুলায়ফার মাসজিদের বাইরে বৃক্ষের নিকট যখন তার বাহন তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন তিনি তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ ইবনু ‘উমার থেকে তা বর্ণনা করেছেন।
(৩) ‘বায়দা’ নামক স্থানে যখন তার বাহন তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন তিনি তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত সকল স্থানেই তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। যারা তাঁকে যেখানে তা পাঠ করেছেন তারা তাই বর্ণনা করতে দেখেছেন। অতএব অত্র বর্ণনাগুলোর মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই।
ইবনুল ক্বইয়্যিম বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফার মাসজিদে যুহরের দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করার পর মুসল্লাতেই হজ্জ ও ‘উমরা-এর নিয়্যাত করে তালবিয়াহ্ পাঠ করেন। এরপর বাহনে আরোহণ করে আবার তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। অতঃপর বায়দা নামক স্থানে যখন তার বাহন তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তখনো তিনি তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন।
২৫৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৩
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ نَصْرُخُ بِالْحَجِّ صُرَاخًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (হজের উদ্দেশে) বের হলাম এবং উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ বলতে থাকলাম। (মুসলিম)[১]
তবে আওয়াজ মধ্যম ধরনের হতে হবে। আর মহিলাগণ শুধু নিজে শুনতে পায় এমনভাবে তালবিয়াহ্ পাঠ করবে তারা আওয়াজ উঁচু করবে না। কেননা উঁচু আওয়াজ তাদের জন্য ফিত্নার কারণ হতে পারে।
সকল ‘উলামাগণের মতে পুরুষদের উঁচু আওয়াজে তালবিয়াহ্ পাঠ করা মুস্তাহাব। আহলুয্ যাহিরদের মতে তা ওয়াজিব। এ হাদীস এও প্রমাণ করে যে, ইহরামের শুরুতে তালবিয়াহ্ পাঠ বা ইহরামের নিয়্যাতের প্রাক্কালে স্বশব্দে হজ্জ বা ‘উমরা-এর নিয়্যাত করা মুস্তাহাব।
২৫৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৪
وَعَنْ أَنَسٍ ؓ قَالَ: كُنْتُ رَدِيفَ أَبِىْ طَلْحَةَ وَإِنَّهُمْ لَيَصْرُخُونَ بِهِمَا جَمِيعًا: اَلْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একই সওয়ারীতে আবূ ত্বলহাহর সাথে পিছনে বসেছিলাম, তখন সাহাবীগণ সম্মিলিতভাবে হজ্জ ও ‘উমরার জন্যে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করছিলেন। (বুখারী)[১]
২৫৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৫
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِحَجٍّ وَعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ وَأَهَلَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ بِالْحَجِّ فَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ فَحَلَّ وَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ أَوْ جَمَعَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَلَمْ يَحِلُّوْا حَتّٰى كَانَ يَوْمُ النَّحْرِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (হজের উদ্দেশে) রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু ‘উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন, আবার কেউ কেউ হজ্জ ও ‘উমরা উভয়ের জন্যে ইহরাম বেঁধেছিলেন, আবার কেউ কেউ শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। অতঃপর যারা শুধু ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা (তাওয়াফ ও সা‘ঈর পর) হালাল হয়ে গেলেন (অর্থাৎ- ইহরাম খুলে ফেললেন)। আর যারা শুধু হজ্জ অথবা হজ্জ ও ‘উমরা উভয়ের জন্য ‘ইহরাম’ বেঁধেছিলেন তারা কুরবানীর দিন আসা পর্যন্ত হালাল হননি। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
আবার এটাও বলা হয় যে, তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ দশ হাজার। কেউ বলেন তাদের সংখ্যা আরো বেশী ছিল।
তাবূকের যুদ্ধের সময় তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ। বিদায় হজ্জ তারও এক বৎসর পরে অনুষ্ঠিত হয়। অতএব তাদের সংখ্যা এক লাখের বেশীই ছিল।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাহ্ থেকে কোন দিন বের হয়েছিলেন- এ নিয়ে ও মতভেদ রয়েছে। সঠিক কথা হলো তিনি যিলকদ মাসের চার দিন বাকী থাকতে শনিবার মাদীনাহ্ থেকে বের হয়ে যুলহুলায়ফাতে যেয়ে যুহর অথবা ‘আসর-এর সালাত আদায় করেন।
(عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ) ‘‘বিদায় হজ্জের বৎসর’’। এ হজ্জ/হজকে বিদায় হজ্জ এজন্যই বলা হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে লোকজনদেরকে বিদায় জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ সম্ভবত এরপর আমি আর হজ্জ করব না। প্রকৃতপক্ষে ঘটেও ছিল তাই। তিনি পুনরায় আর হজ্জ করার সুযোগ পাননি।
জেনে রাখা ভাল যে, হজ্জ তিন প্রকারঃ ইফরাদ, তামাত্তু' ও কিরান। ‘উলামাহগণ সকলে একমত যে, তিন প্রকারের যে কোন এক প্রকার হজ্জ করা বৈধ।
(১) ইফরাদঃ হজ্জের মাসে শুধুমাত্র হজ্জের নিয়্যাতে ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্য সম্পাদন করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে। হজ্জের কাজ সম্পাদন করে কেউ ইচ্ছা করলে ‘উমরা করতে পারে।
(২) তামাত্তুঃ হজ্জের মাসে মীকাত থেকে শুধুমাত্র ‘উমরা এর নিয়্যাতে ইহরাম বেঁধে ‘উমরা এর কাজ সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাবে। এরপর ঐ বৎসরই পুনরায় ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্যাবলী সম্পাদন করবে।
(৩) কিরানঃ মীকাত থেকে একই সাথে হজ্জ ও ‘উমরা-এর জন্য নিয়্যাত করে ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ‘উমরা ও হজ্জের কার্য সম্পাদন করাকে কিরান হজ্জ বলে।
এ তিন প্রকারের হজ্জের মধ্যে কোন প্রকারের হজ্জ উত্তম- এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
[১] উত্তম হলো ইফরাদ হজ্জঃ ইমাম মালিক ও ইমাম শাফি‘ঈর মত এটিই। এরপর তামাত্তু' এরপর কিরান।
[২] উত্তম হলো তামাত্তু' হজ্জঃ ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালের অভিমত এটিই। ইমাম শাফি‘ঈর একটি মতও এরূপ পাওয়া যায়।
[৩] উত্তম হলো কিরান হজ্জঃ এটি ইমাম আবূ হানীফার অভিমত। হানাফীদের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, অতঃপর তামাত্তু', অতঃপর ইফরাদ। ইমাম আবূ হানীফা থেকে একটি মত এরূপ পাওয়া যায় যে, তামাত্তু'-এর চাইতে ইফরাদ উত্তম।
[৪] কুরবানীর পশু সাথে নিলে কিরান উত্তম নচেৎ তামাত্তু' উত্তম। ইমাম আহমাদ থেকে এ মত বর্ণনা করেছেন ‘আল্লামা মারূয।
[৫] ফাযীলাতের দিক থেকে তিন প্রকার হজ্জই সমান। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী ফাতহুল বারীতে দাবী করেছেন যে, এটি ইমাম ইবনু খুযায়মার অভিমত।
[৬] তামাত্তু' ও কিরান ফাযীলাতের ক্ষেত্রে সমান। আর এ দু’টো ইফরাদের চাইতে উত্তম। আবূ ইউসুফ থেকে এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে।
২৫৪৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৬
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَ: تَمَتَّعَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ بَدَأَ فَأهَلَّ بِالْعُمْرَةِ ثُمَّ أَهَلَّ بِالْحَجِّ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সাথে ‘উমরারও উপকারিতা লাভ করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে শুরু করেছিলেন যে, প্রথমে ‘উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন, এরপর হজ্জের তালবিয়াহ্। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(بَدَأَ بِالْعُمْرَةِ) অর্থাৎ- তিনি ইহরাম বাঁধার সময়ে প্রথমে ‘‘উমরা’’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন (لبيك عمرة) ‘‘লাব্বায়কা ‘উমরাতান্’’।
২৫৪৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৭
عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ أَنَّه رَأَى النَّبِىَّ ﷺ تَجَرَّدَ لِإِهْلَالِه وَاغْتَسَلَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ والدَّارِمِىُّ
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশে কাপড় খুলতে ও গোসল করতে দেখেছেন। (তিরমিযী ও দারিমী)[১]
ইমাম শাওকানী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ইহরাম বাঁধার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। অধিকাংশ ‘উলামাগণের অভিমত এটিই।
নাসির বলেনঃ ইহরামের জন্য গোসল করা ওয়াজিব। ইহরামের জন্য গোসল করার উদ্দেশ্য, শরীর পরিষ্কার করা এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ দূর করা যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।
ইবনুল মুনযির বলেনঃ ‘উলামাহগণ এ বিষয়ে একমত যে, ইহরামের উদ্দেশে গোসল করা বৈধ, তবে তা ওয়াজিব নয়। কিন্তু হাসান বাসরী বলেনঃ কেউ যদি গোসল করতে ভুলে যায় তাহলে যখন স্মরণ হবে তখন গোসল করে নিবে।
২৫৪৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৮
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ لَبَّدَ رَأْسَه بِالْغِسْلِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঠালো বস্তু দিয়ে মাথার চুল জড়ো করেছিলেন। (আবূ দাঊদ)[১]
পূর্বে বর্ণিত ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসে (سمعت رسول الله - ﷺ- يهل ملبدًا) তালবীদ সম্পর্কে আলোচনা গত হয়েছে।
২৫৪৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৪৯
وَعَنْ خَلَّادِ بْنِ السَّائِبِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ «أَتَانِىْ جِبْرِيلُ فَأَمَرَنِىْ أَنْ اٰمُرَ أَصْحَابِىْ أَنْ يَرْفَعُوْا أَصْوَاتَهُمْ بِالْإِهْلَالِ أَوِ التَّلْبِيَةِ». رَوَاهُ مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
খল্লাদ ইবনুস্ সায়িব থেকে বর্ণিতঃ
তার পিতা (সায়িব) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করতে আদেশ করি। (মালিক, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[১]
(أَنْ يَرْفَعُوْا أَصْوَاتَهُمْ بِالْإِهْلَالِ) তারা যেন ইহরাম বাঁধার সময় উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করে। যাতে ইহরামের নিদর্শন প্রকাশ পায় এবং অজ্ঞরা তা শিখতে পারে।
২৫৫০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫০
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّىْ إِلَّا لَبّٰى مَنْ عَنْ يَمِينِه وَشِمَالِه: مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتّٰى تَنْقَطِعَ الْأَرْضُ مِنْ هٰهُنَا وَهٰهُنَا». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম যখন তালবিয়াহ্ পাঠ করে, তখন তার সাথে সাথে তার ডান বামে যা কিছু আছে- পাথর, গাছ-গাছড়া কিংবা মাটির ঢেলা তালবিয়াহ্ পাঠ করে থাকে। এমনকি এখান থেকে এদিক ও ওদিকে (পূর্ব ও পশ্চিমের) ভূখগুের শেষ সীমা পর্যন্ত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[১]
২৫৫১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫১
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَرْكَعُ بِذِى الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ إِذَا اسْتَوَتْ بِهِ النَّاقَةُ قَائِمَةً عِنْدَ مَسْجِدِ ذِى الْحُلَيْفَةِ أَهَلَّ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ وَيَقُولُ: «لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِىْ يَدَيْكَ لَبَّيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَلَفْظُه لِمُسْلِمٍ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফায় ইহরাম বাঁধার সময় দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর যুলহুলায়ফার মাসজিদের কাছে তাঁর উষ্ট্রী তাঁকে নিয়ে দাঁড়ালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সব শব্দের দ্বারা তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন, ‘‘লাব্বায়কা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়কা লাব্বায়কা ওয়া সা‘দায়কা, ওয়াল খয়রু ফী ইয়াদায়কা লাব্বায়কা, ওয়ার্ রগবা-উ ইলায়কা ওয়াল ‘আমালু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। আমি উপস্থিত আছি ও তোমার দরবারের সৌভাগ্য লাভ করেছি, সব কল্যাণ তোমার হাতে নিহীত। আমি উপস্থিত, সকল কামনা-বাসনা তোমারই হাতে, সকল ‘আমাল তোমারই জন্যে।)। (বুখারী ও মুসলিম; তবে শব্দগুলো মুসলিমের)[১]
হাসান বাসরী ফরয সলাতের পর ইহরাম বাঁধা মুস্তাহাব মনে করতেন। ‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ সলাতের পর ইহরাম বাঁধা মুস্তাহাব। ফরয সলাতের সময় হলে ফরয সলাতের পর ইহরাম বাঁধবে। তা না হলে দু’ রাক্‘আত নফল সালাত আদায় করে ইহরাম বাঁধবে। ‘আত্বা, ত্বাউস, মালিক, শাফি‘ঈ, সাওরী, আবূ হানীফা, ইসহাক, আবূ সাওর ও ইবনুল মুনযির তা মুস্তাহাব মনে করতেন। ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে। মোটকথা হলো সলাতের পর ইহরাম বাঁধা সুন্নাত। যদি ফরয সলাতের পর তা বাঁধা হয় তাহলে শুধুমাত্র সুন্নাতের উপর ‘আমাল হলো। আর যদি নফল সলাতের পর বাঁধা হয় তাহলে সুন্নাত ও মুস্তাহাব দু’টিই পাওয়া গেল।
(أَهَلَّ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ) ‘‘তালবিয়ার শব্দগুলো উচ্চস্বরে পাঠ করতেন’’। হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করা মুস্তাহাব।
২৫৫২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫২
وَعَنْ عُمَارَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ أَنَّه كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنْ تَلْبِيَتِه سَأَلَ اللّٰهَ رِضْوَانَه وَالْجَنَّةَ وَاسْتَعْفَاهُ بِرَحْمَتِه مِنَ النَّارِ. رَوَاهُ الشَّافِعِىُّ
উমারাহ্ ইবনু খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তার পিতা হতে এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তালবিয়াহ্ শেষ করলেন, তখন আল্লাহর নিকট তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর রহমাতের দ্বারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাইলেন। (শাফি‘ঈ)[১]
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مَغْفِرَتَكَ وَرِضَاكَ وَالْجَنَّةَ فِى الْاٰخِرَةِ، وَأَنْ تَعْفُوْ عَنِّىْ وَتُعِيْذَنِىْ وَتُعْتِقَنِىْ بِرَحْمَتِكَ مِنَ النَّارِ.
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও আপনার সন্তুষ্টি প্রার্থনা করি এবং পরকালে জান্নাত কামনা করি। আপনি আমাকে মাফ করুন। স্বীয় দয়ায় জাহান্নামের আগুন থেকে আমাকে পরিত্রাণ ও আশ্রয় দান করুন।’’
২৫৫৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৩
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ لَمَّا أَرَادَ الْحَجَّ أَذَّنَ فِى النَّاسِ فَاجْتَمَعُوا فَلَمَّا أَتَى الْبَيْدَاءَ أَحْرَمَ. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজ্জ পালনের ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দিলেন। তাই লোকেরা দলে দলে সমবেত হলো। তিনি ‘বায়দা’ নামক জায়গায় পৌঁছলে (হজের জন্য) ‘ইহরাম’ বাঁধলেন। (বুখারী)[১]
(فَلَمَّا أَتَى الْبَيْدَاءَ أَحْرَمَ) ‘‘তিনি যখন বায়দাতে পৌঁছালেন ইহরাম বাঁধলেন’’। অর্থাৎ- তিনি ইহরামের শব্দাবলী পুনরায় উচ্চারণ করলেন অথবা জনসম্মুখে তাঁর ইহরামের বিষয় প্রকাশ করলেন।
২৫৫৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৪
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ الْمُشْرِكُوْنَ يَقُولُونَ: لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ فَيَقُولُ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «وَيْلَكُمْ قَدْ قَدْ» إِلَّا شَرِيْكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُه وَمَا مَلَكَ. يَقُولُوْنَ هٰذَا وَهُمْ يَطُوْفُوْنَ بِالْبَيْتِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুশরিকরা তালবিয়াহ্ পাঠে বলতো, ‘‘লাব্বায়কা লা- শারীকা লাকা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা উপস্থিত। তোমার কোন শারীক নেই।)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘‘তোমাদের সর্বনাশ হোক, থামো থামো (আর অগ্রসর হয়ো না, কিন্তু তারা দ্রুত বেগে চলতো) অবশ্য যে শারীক তোমার আছে, যার মালিক তুমি এবং তারা যে জিনিসের মালিক তারও তুমি মালিক। তারা (মুশরিকরা) এ কথা বলতো আর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতো। (মুসলিম)[১]
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ মুশরিকগণ বলত- (لبيك لا شريك لك إلا شريكًا هو لك تملكه وما ملك)।
তাদের ঐ বাক্যের যখন এ অংশটুকু বলা হত (لَا شَرِيْكَ لَكَ)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ (قَدْ قَدْ) অর্থাৎ- তোমরা এখানেই থামো, তোমরা তা অতিক্রম করে পরবর্তী অংশ বলো না।
২৫৫৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৫
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ مَكَثَ بِالْمَدِينَةِ تِسْعَ سِنِينَ لَمْ يَحُجَّ ثُمَّ أَذَّنَ فِى النَّاسِ بالحَجِّ فِى الْعَاشِرَةِ: أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ حَاجٌّ فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ بَشَرٌ كَثِيرٌ فَخَرَجْنَا مَعَه حَتّٰى اذَا أَتَيْنَا ذَا الْحُلَيْفَةِ فَوَلَدَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِىْ بَكْرٍ فَأَرْسَلَتْ إِلٰى رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ: كَيْفَ أصْنَعُ؟ قَالَ: «اغْتَسِلِىْ وَاسْتَثْفِرِىْ بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِىْ فَصَلّٰى رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِى الْمَسْجِدِ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتّٰى اِذَا اسْتَوَتْ بِه نَاقَتُه عَلَى الْبَيْدَاءِ أَهَلَّ بِالتَّوْحِيدِ «لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ. قَالَ جَابِرٌ: لَسْنَا نَنْوِىْ إِلَّا الْحَجَّ لَسْنَا نَعْرِفُ الْعُمْرَةَ حَتّٰى اِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ اسْتَلَمَ الرُّكْنَ فَطَافَ سَبْعًا فَرَمَلَ ثَلَاثًا وَمَشٰى أَرْبَعًا ثُمَّ تَقَدَّمَ إِلٰى مَقَامِ إِبْرَاهِيْمَ فَقَرَأَ: وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَقَامِ إِبرَاهِيْمَ مُصَلّٰى
فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَه وَبَيْنَ الْبَيْتِ وَفِىْ رِوَايَةٍ: أَنَّه قَرَأَ فِى الرَّكْعَتَيْنِ: ﴿قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ و قُلْ يَا أيُّهَا الْكَافِرُوْنَ
ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ خَرَجَ مِنَ الْبَابِ إِلَى الصَّفَا فَلَمَّا دَنَا مِنَ الصَّفَا قَرَأَ: ﴿إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ
أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللّٰهُ بِه فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِىَ عَلَيْهِ حَتّٰى رَأَى الْبَيْتَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَوَحَّدَ اللّٰهَ وَكَبَّرَه وَقَالَ: «لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَرَ عَبْدَه وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَه». ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذٰلِكَ قَالَ مِثْلَ هٰذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ نَزَلَ وَمَشٰى إِلَى الْمَرْوَةِ حَتَّى انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ فِىْ بَطْنِ الْوَادِىْ ثُمَّ سَعٰى حَتّٰى اِذَا صَعِدْنَا مَشٰى حَتّٰى اَتَى الْمَرْوَةَ فَفَعَلَ عَلَى الْمَرْوَةِ كَمَا فَعَلَ عَلَى الصَّفَا حَتّٰى اِذَا كَانَ اٰخِرُ طَوَافٍ عَلَى الْمَرْوَةِ نَادٰى وَهُوَ عَلَى الْمَرْوَةِ وَالنَّاسُ تَحْتَه فَقَالَ: «لَوْ أَنِّى اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقِ الْهَدْىَ وَجَعَلْتُهَا عُمْرةً فَمَنْ كَانَ مِنْكُم لَيْسَ مَعَه هَدْىٌ فَلْيَحِلَّ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً». فَقَامَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ أَلِعَامِنَا هٰذَا أَمْ لِأَبَدٍ؟ فَشَبَّكَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَصَابِعَه وَاحِدَةً فِى الْأُخْرٰى وَقَالَ: «دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِى الْحَجِّ مَرَّتَيْنِ لَا بَلْ لِأَبَدِ أَبَدٍ». وَقَدِمَ عَلِىٌّ مِنَ الْيَمَنِ بِبُدْنِ النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ لَه: «مَاذَا قُلْتَ حِينَ فَرَضْتَ الْحَجَّ؟» قَالَ: قُلْتُ: اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أُهِلُّ بِمَا أهلَّ به رَسُوْلُكَ قَالَ: «فَإِنَّ مَعِى الْهَدْىَ فَلَا تَحِلَّ». قَالَ: فَكَانَ جَمَاعَةُ الْهَدْىِ الَّذِىْ قَدِمَ بِه عَلِىٌّ مِنَ الْيَمَنِ وَالَّذِىْ أَتَى بِهِ النَّبِىُّ ﷺ مِائَةً قَالَ: فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلَّا النَّبِىَّ ﷺ وَمَنْ كَانَ مَعَه هَدْىٌّ فَمَا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ تَوَجَّهُوْا إِلٰى مِنًى فَأَهَلُّوْا بِالْحَجِّ وَرَكِبَ النَّبِىُّ ﷺ فَصَلّٰى بِهَا الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلًا حَتّٰى طَلَعَتِ الشَّمْسُ وَأَمَرَ بِقُبَّةٍ مِنْ شَعَرٍ تُضْرَبُ لَه بِنَمِرَةَ فَسَارَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ وَلَا تَشُكُّ قُرَيْشٌ إِلَّا أَنَّه وَاقِفٌ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ كَمَا كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصْنَعُ فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَأجَازَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ حَتّٰى اَتٰى عَرَفَةَ فَوَجَدَ الْقُبَّةَ قَدْ ضُرِبَتْ لَه بِنَمِرَةَ فَنَزَلَ بِهَا حَتّٰى اِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِالْقَصْوَاءِ فَرُحِلَتْ لَه فَأَتٰى بَطْنَ الْوَادِىْ فَخَطَبَ النَّاسَ وَقَالَ: «إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هٰذَا فِىْ شَهْرِكُمْ هٰذَا فِىْ بَلَدِكُمْ هٰذَا أَلَا كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ وَكَانَ مُسْتَرْضَعًا فِىْ بَنِىْ سَعْدٍ فَقَتَلَه هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ مِنْ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّه مَوْضُوعٌ كُلُّه فَاتَّقُوا اللّٰهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللّٰهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللّٰهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَه فَإِنْ فَعَلْنَ ذٰلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَه إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِه كِتَابَ اللّٰهِ وَأَنْتُمْ تُسْأَلُونَ عَنِّىْ فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ؟» قَالُوا: نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ. فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ: «اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ رَكِبَ حَتّٰى اَتَى الْمَوْقِفَ فَجَعَلَ بَطْنَ نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ إِلَى الصَّخَرَاتِ وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتّٰى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلًا حَتّٰى غَابَ الْقُرْصُ وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ وَدَفَعَ حَتّٰى اَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَصَلّٰى بِهَا الْمَغْرِبَ وَالْعَشَاءَ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتّٰى طَلَعَ الْفَجْرُ فَصَلَّى الْفَجْرَ حِينَ تَبَيَّنَ لَهُ الصُّبْحُ بِأَذَانٍ وَإِقَامَةٍ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتّٰى اَتَى الْمَشْعَرَ الْحَرَامَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَدَعَاهُ وَكَبَّرَه وَهَلَّلَه وَوَحَّدَه فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتّٰى اَسْفَرَ جِدًّا فَدَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَأَرْدَفَ الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ حَتّٰى اَتٰى بَطْنَ مُحَسِّرٍ فَحَرَّكَ قَلِيلًا ثُمَّ سَلَكَ الطَّرِيقَ الْوُسْطَى الَّتِىْ تَخْرُجُ عَلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرٰى حَتّٰى اَتَى الْجَمْرَةَ الَّتِىْ عِنْدَ الشَّجَرَةِ فَرَمَاهَا بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ مِنْهَا مِثْلَ حَصَى الْخَذْفِ رَمٰى مِنْ بَطْنِ الْوَادِىْ ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلَاثًا وَسِتِّينَ بَدَنَةً بِيَدِه ثُمَّ أَعْطٰى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَه فِىْ هَدْيِه ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِىْ قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلَا مِنْ لَحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا ثُمَّ رَكِبَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فَأَفَاضَ إِلَى الْبَيْتِ فَصَلّٰى بِمَكَّةَ الظُّهْرَ فَأَتٰى عَلٰى بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَسْقُونَ عَلٰى زَمْزَمَ فَقَالَ: اَنْزِعُوْا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلَا أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلٰى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ». فَنَاوَلُوهُ دَلْوًا فَشَرِبَ مِنْهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনায় নয় বছর অবস্থানকালে হজ্জ পালন করেননি। অতঃপর দশম বছরে মানুষের মধ্যে ঘোষণা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বছর হজে যাবেন। তাই মাদীনায় বহু লোক আগমন করলো। অতঃপর আমরা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে হজ্জ করতে রওয়ানা হলাম এবং যখন যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছলাম (আবূ বাকর-এর স্ত্রী) আসমা বিনতু ‘উমায়স মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর-কে প্রসব করলেন। তাই আসমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন, ‘‘আমি এখন কি করবো?’’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে পাঠালেন, ‘‘তুমি গোসল করবে এবং কাপড়ের টুকরা দিয়ে টাইট করে লেঙ্গুট (প্যান্ট) পরবে। এরপর ইহরাম বাঁধবে। তখন (বর্ণনাকারী জাবির) বলেন, এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর ক্বাস্ওয়া নামক উটনীর উপর আরোহণ করলেন।
অতঃপর যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে তাঁকে নিয়ে উটনী সোজা হয়ে দাঁড়াল তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত এ তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন, ‘‘লাব্বায়কা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়কা, লাব্বায়কা লা- শারীকা লাকা লাব্বায়কা, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাকা।’’ জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা হজ্জ ব্যতীত আর অন্য কিছুর নিয়্যাত করিনি। আমরা ‘উমরা বিষয়ে কিছু জানতাম না। অবশেষে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বায়তুল্লাহয় আসলাম তখন তিনি ‘হাজরে আসওয়াদ’ (কালো পাথর)-এ হাত লাগিয়ে চুমু খেলেন এবং সাতবার কা‘বার (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করলেন। তাতে তিনবার জোরে জোরে (রমল) ও চারবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে হেঁটে তাওয়াফ করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাকামে ইব্রাহীমের দিকে অগ্রসর হলেন এবং কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَقَامِ إِبرَاهِيْمَ مُصَلّٰى ‘‘এবং মাকামে ইব্রাহীমকে সলাতের স্থানে রূপান্তরিত করো’’- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১২৫) (অর্থাৎ- এর কাছে সলাত আদায় করো)। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাকামে ইব্রাহীমকে তার ও বায়তুল্লাহর মাঝখানে রেখে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, এ দু’ রাক্‘আত সলাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ ও ‘কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’ পড়েছিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাজারে আস্ওয়াদের দিকে ফিরে গেলেন, একে স্পর্শ করে চুমু খেলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরজা দিয়ে সাফা পর্বতের দিকে বের হয়ে গেলেন। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফার নিকটে পৌঁছলেন তখন কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللّٰهِ অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত’’- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৮)। আর বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যেখান হতে শুরু করেছেন আমিও তা ধরে শুরু করবো। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফা হতে শুরু করলেন এবং এর উপরে চড়লেন। এখান থেকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর ঘর দেখতে পেলেন।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই সার্বভৌমত্ব ও তাঁরই সব প্রশংসা, তিনি সব কিছুতেই ক্ষমতাবান।’ আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তিনি তাঁর ওয়া‘দা পূর্ণ করেছেন, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, একাই তিনি সম্মিলিত কুফরী শক্তিকে পরাভূত করেছেন- এ কথা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বললেন। এর মাঝে কিছু দু‘আ করলেন। অতঃপর সাফা হতে নামলেন এবং মারওয়াহ্ অভিমুখে হেঁটে চললেন, যে পর্যন্ত তাঁর পবিত্র পা উপত্যকার মধ্যমর্তী সমতলে গিয়ে ঠেকলো।
তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্রুতবেগে হেঁটে চললেন, মারওয়ায় না পৌঁছা পর্যন্ত। এখানেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফায় যা করেছেন, মারওয়ার শেষ চলা পর্যন্ত তাই করলেন। এমনকি যখন মারওয়াতে শেষ তাওয়াফ শেষ হলো, তখন তিনি মারওয়ার উপর দাঁড়িয়ে লোকদেরকে সম্বোধন করলেন এবং লোকেরা তখন তাঁর নীচে (অপেক্ষমাণ) ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি আমি আমার ব্যাপারে আগে জানতে পারতাম যা পরে আমি জেনেছি, তবে আমি কখনো কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আনতাম না এবং একে ‘উমরার রূপ দান করতাম। তাই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসেনি সে যেন ‘ইহরাম’ খুলে ফেলে। একে ‘উমরার রূপ দান করে। এ সময় সুরাক্বাহ্ বিন মালিক ইবনু জু’শুম দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! এটা কি আমাদের জন্য এ বছর, নাকি চিরকালের জন্য? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতের আঙুলগুলো পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে দু’বার বললেন, ‘উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করলো না। বরং চিরকালের জন্যে।
এ সময় ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশু নিয়ে আসলেন (তিনি সেখানে বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি (ইহরাম বাঁধার সময় নিয়্যাতে) কি বলেছিলে? ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি বলেছি- হে আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধছি যেভাবে তোমার রসূল ইহরাম বেঁধেছেন!’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার সাথে কুরবানীর পশু রয়েছে, তাই তুমি ইহরাম খুলো না। রাবী জাবির (রাঃ) বলেন, যেসব কুরবানীর পশুগুলো ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে নিয়ে এসেছিলেন এবং যেগুলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাতে মোট একশ’ হয়ে গেলো। রাবী জাবির বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথে যারা নাবীর মতো পশু নিয়ে এসেছিলেন, তারা ছাড়া সকলে ইহরাম খুলে হালাল হয়ে গেলেন এবং চুল কাটলেন। অতঃপর (৮ যিলহাজ্জ) তারবিয়ার দিন তাঁরা সকলেই নতুন করে ইহরাম বাঁধলেন এবং মিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও সওয়ার হয়ে গেলেন এবং সেখানে যুহর, ‘আসর, মাগরিব, ‘ইশা ও ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত স্বল্প সময় অবস্থান করলেন।
এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেন যেন তাঁর জন্যে নামিরাহ্’য় একটি পশমের তাঁবু খাটানো হয়। এ কথা বলে তিনিও সেদিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তখন কুরায়শগণের এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চয়ই মাশ্‘আরুল হারাম-এর নিকটে অবস্থান করবেন, যেভাবে তারা জাহিলিয়্যাতের যুগে করতো (নিজের মর্যাদাহানির আশঙ্কায় সাধারণের সাথে ‘আরাফাতে সহবস্থান করবেন না)। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফাতে না পৌঁছা পর্যন্ত সামনে অগ্রসর হলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন, নামিরাহ্’য় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে নামলেন (অবস্থান নিলেন) সূর্য ঢলা পর্যন্ত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ক্বাস্ওয়া উষ্ট্রীর জন্য আদেশ করলেন।
ক্বাস্ওয়া সাজানো হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘বাত্বনি ওয়াদী’ বা ‘আরানা’ উপত্যকায় পৌঁছলেন এবং লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন- ‘‘তোমাদের একজনের জীবন ও সম্পদ অপরের প্রতি (সকল দিন, কাল ও স্থানভেদে) হারাম যেভাবে এ দিনে, এ মাসে, এ শহরে হারাম। সাবধান! জাহিলিয়্যাতের যুগের সকল অপকর্ম আমার পদতলে প্রোথিত হলো, জাহিলিয়্যাত (মূর্খতার) যুগের রক্তের দাবীগুলো রহিত হলো। আর আমাদের রক্তের দাবীসমূহের যে দাবী আমি প্রথমে রহিত করলাম, তা হলো (আমার নিজ বংশের ‘আয়াশ) ইবনু রবী‘আহ্ ইবনু হারিস-এর রক্তের দাবী। যে বানী সা‘দ গোত্রের দুধপানরত অবস্থায় ছিল তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। এভাবে জাহিলিয়্যাত যুগের সূদ মাওকূফ (রহিত) হয়ে গেল। আর আমাদের (বংশের) যে সূদ আমি প্রথমে মাওকূফ করলাম তা (আমার চাচা) ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর (পাওনা) সূদ, তা সবই মাওকূফ করা হলো।’’
‘‘তোমরা তোমাদের নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছো আল্লাহর আমানাত হিসেবে এবং আল্লাহর নামে তাদের গুপ্তাঙ্গকে হালাল করেছো। তাদের ওপর তোমাদের হাক্ব হলো তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কাউকেও আসতে না দেয়, যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা তা করে, তবে তাদেরকে মৃদু প্রহার করবে। আর তোমাদের ওপর তাদের হাক্ব হলো, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের খাদ্য ও পোশাকের ব্যবস্থা করবে।’’
‘‘আমি তোমাদের মাঝে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা আকড়ে ধরো, তবে তোমরা আমার মৃত্যুর পর কখনো বিপথগামী হবে না- তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।’’
‘‘হে লোক সকল! তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, তখন তোমরা কি বলবে? লোকেরা উত্তরে বললো, আমরা সাক্ষ্য দিবো যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর বাণী আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন। নিজের কর্তব্য সম্পূর্ণরূপে পালন করেছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশের দিকে উঠিয়ে এবং মানুষের দিকে তা ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো।’’
অতঃপর বিলাল (রাঃ) আযান ও ইক্বামাত দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায় করলেন। বিলাল আবার ইক্বামাত দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের সালাত আদায় করলেন। এর মাঝে কোন নফল সালাত আদায় করলেন না। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বাস্ওয়া উষ্ট্রীতে আরোহণ করে (‘আরাফাতে) নিজের অবস্থানস্থলে পৌঁছলেন। এখানে এর পিছন দিক (জাবালে রহমাতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মুশাত-কে নিজের সম্মুখে করে কিবলার দিকে ফিরলেন। সূর্য না ডুবা ও পিত রং কিছুটা না চলে যাওয়া পর্যন্ত এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখানে দাঁড়িয়ে রইলেন।
এরপর সূর্যের গোলক পরিপূর্ণ নীচের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উসামাকে নিজের সওয়ারীর পেছনে বসালেন এবং মুযদালিফায় পৌঁছা পর্যন্ত সওয়ারী চালাতে থাকলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক আযান ও দুই ইক্বামাতের সাথে মাগরিব ও ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। এর মধ্যে কোন নফল সালাত আদায় করলেন না। তারপর ভোর না হওয়া পর্যন্ত শুয়ে রইলেন। ভোর হয়ে গেলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আযান ও ইক্বামাত দিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বাস্ওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করে চলতে লাগলেন যতক্ষণ না মাশ্‘আরাল হারামে এসে পৌঁছলেন। সেখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন। তাঁর মহিমা ঘোষণা করলেন, কালিমায়ে তাওহীদ (লা- ইলা-হা ইল্লালস্ন-হ) পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা করলেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে আকাশ পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন।
অতঃপর তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই সওয়ারী চালিয়ে দিলেন এবং আপন (চাচাতো ভাই) ফযল ইবনু ‘আব্বাস-কে সওয়ারীর পেছনে বসালেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘বাত্বনি মুহাস্সির’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সওয়ারীকে কিছুটা দৌড়ালেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মধ্যম পথে চললেন যা বড় জামারার দিকে গিয়েছে। সুতরাং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওই জামারায় পৌঁছলেন যা গাছের নিকট অবস্থিত (অর্থাৎ- বড় জামারাহ্) এবং বাত্বনি ওয়াদী (অর্থাৎ- নীচের খালি জায়গা) হতে এর উপর বুটের মতো সাতটি কংকর মারলেন। আর প্রত্যেক কংকর মারার সময় ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বললেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখান থেকে কুরবানীর জায়গায় ফিরে আসলেন এবং তেষট্টিটি উট নিজ হাতে কুরবানী করলেন। অতঃপর যা বাকী রইলো তা ‘আলীকে বাকী পশুগুলো দিলেন, তিনি তা কুরবানী করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পশুতে ‘আলীকেও শারীক করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক পশু হতে এক টুকরা নিয়ে একই হাড়িতে পাকানোর নির্দেশ দেন। সুতরাং নির্দেশ অনুযায়ী একটি ডেকচিতে তা পাকানো হয়।
তারা উভয়ে এর গোশ্ত (গোসত/গোশত) খেলেন ও ঝোল পান করলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওয়ারীতে আরোহণ করলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হলেন। মাক্কায় পৌঁছে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (নিজ বংশ) বানী ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর নিকট পৌঁছলেন। তারা তখন যমযমের পাড়ে দাঁড়িয়ে লোকজনকে পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন, হে বানী আবদুল মুত্ত্বালিব! তোমরা টানো (দ্রুত কর), আমি যদি আশংকা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের উপরে জয়লাভ করবে, তবে আমিও তোমাদের সাথে পানি টানতাম। তখন তারা তাঁকে এক বালতি পানি এনে দিলেন, তা হতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি পান করলেন। (মুসলিম)[১]
(اسْتَلَمَ الرُّكْنَ) ‘‘হাজারে আস্ওয়াদ স্পর্শ করলেন।’’ কোন প্রকার গুণ বর্ণনা করে শুধুমাত্র (الرُّكْنَ) শব্দটি উল্লেখ করলে তা দ্বারা হাজারে আস্ওয়াদই বুঝায়। অর্থাৎ- তিনি উক্ত পাথরটির উপর হাত রাখলেন এবং তাতে চুমু দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকনে ইয়ামানীকেও স্পর্শ করেন তবে তাতে চুমু দেননি। সম্ভব হলে হাজারে আস্ওয়াদ স্পর্শ করে তাতে চুমু দেয়া সুন্নাত। যদি তা কষ্টকর হয় তবে শুধুমাত্র হাত দ্বারা স্পর্শ করে হাতে চুমু দিবে। তাও সম্ভব না হলে লাঠি দ্বারা পাথর স্পর্শ করে তাতে চুমু দিবে। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে হাজারে আসওয়াদের দিকে কোন কিছু দিয়ে ইশারা করবে। তবে ইশারাকৃত বস্ত্ততে চুমু দিবে না। আর রুকনে ইয়ামানীতে শুধুমাত্র স্পর্শ করাই সুন্নাত। তাতে চুমু দেয়া সুন্নাত নয়। আর তা স্পর্শ করতে না পারলে অন্য কিছু করবে না। তাওয়াফের প্রতি চক্করেই হাজারে আসওয়াদের এসে তার দিকে ইশারা করা এবং ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা মুস্তাহাব।
(فَرَمَلَ) ‘‘অতঃপর তিনি রমল করলেন।’’ অর্থাৎ- কাঁধ দুলিয়ে ছোট পদক্ষেপে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হলেন। (ثَلَاثًا) ‘‘তিনবার’’ অর্থাৎ- সাত চক্করের তিন চক্করে তিনি রমল করে বাকী চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেন। আর এ তাওয়াফের সকল চক্করেই তিনি ইযতিবা' করেন। ডান কাঁধ খালি চাদরের দু’প্রান্ত বাম কাঁধের উপর তুলে দিয়ে গায়ে চাদর জড়ানোকে ইযতিবা' বলা হয়। ইমাম নাববী বলেনঃ মুহরিম যদি ‘আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে মাক্কাতে প্রবেশ করে তার জন্য তাওয়াফ কুদূম করা সুন্নাত। আর তাওয়াফে কুদূমের প্রথম তিন চক্করে রমল করাও সুন্নাত।
(فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ) ‘‘অতঃপর তিনি দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন।’’ অত্র হাদীস প্রমাণ করে তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করা বিধিসম্মত। এ বিষয়ে সকলেই একমত। তবে এ সলাত সুন্নাত, না-কি ওয়াজিব এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
(ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَه) ‘‘এরপর তিনি হাজারে আস্ওয়াদের নিকটে ফিরে এসে তা স্পর্শ করলেন।’’ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তাওয়াফ কুদূম সম্পাদনকারী তাওয়াফের পর সালাত শেষে পুনরায় হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর সাফা পাহাড়ের দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। তবে সকলেই একমত যে, এ স্পর্শ করা সুন্নাত, তা ওয়াজিব নয়। আর তা পরিত্যাগকারীর জন্য কোন কাফফারাহ দিতে হবে না।
(أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللّٰهُ بِه) ‘‘আমি সেখান থেকে (সা‘ঈ) শুরু করব যা দিয়ে আল্লাহ আয়াত শুরু করেছেন’’। অর্থাৎ- আমি সাফা পাহাড় থেকে সা‘ঈর কাজ শুরু করব। কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللّٰهِ।
‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য থেকে এ কথা বুঝায় যে, আল্লাহ তা‘আলা যে বিষয় প্রথমে উল্লেখ করেছেন কর্মক্ষেত্রেও তা প্রথমে হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে এ শুরুটা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।
(فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِىَ عَلَيْهِ) ‘‘তিনি সা‘ঈ শুরু করার উদ্দেশে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করলেন।’’
(ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذٰلِكَ قَالَ مِثْلَ هٰذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ) অতঃপর তিনি এর মাঝে দু‘আ করলেন। আর উল্লিখিত যিকির তিনবার পাঠ করলেন। ‘আল্লামা সিন্দী বলেনঃ উল্লিখিত যিকির তিনবার পাঠ করবে এবং প্রত্যেকবার অত্র যিকির পাঠ শেষে দু‘আ করবে।
ইমাম নাবাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللّٰهُ بِه)। অত্র হাদীসে হজ্জের বিভিন্ন বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
(১) সা‘ঈর জন্য শর্ত হলো তা সাফা থেকে শুরু করতে হবে। এটা ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম মালিক ও জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত। নাসায়ীতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (أَبْدَوْوا بِمَا بَدَأَ اللّٰهُ بِه) অর্থাৎ- ‘‘তোমরা সেখান থেকে শুরু করো যা দ্বারা আল্লাহ শুরু করেছেন।’’ এখানে (أَبْدَأوا) শব্দটি বহুবচন এবং তা আদেশসূচক।
(২) সা‘ঈর শুরুতে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করা উচিত। তবে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। জমহূর ‘উলামাগণের মতে তা সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। তা পরিত্যাগ করলে সা‘ঈ বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু ফাযীলাত থেকে বঞ্চিত হবে। আমাদের সাথীরা বলেন, তা মুস্তাহাব।
(৩) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে উল্লেখিত যিকির পাঠ এবং দু‘আ করা সুন্নাত। আর তা তিনবার পাঠ করবে।
(حَتَّى انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ فِىْ بَطْنِ الْوَادِىْ ثُمَّ سَعٰى) ‘‘তার পদদ্বয় নিম্নভূমিতে অবতরণের পর তিনি দৌড়ালেন।’’ অর্থাৎ- ছোট পদক্ষেপে দ্রুত পদচারণা করলেন।
(حَتّٰى اِذَا صَعِدَتَا) ‘‘এমনভাবে তার পদদ্বয় নিম্নভূমি হতে উঁচু ভূমিতে আরোহণের পর তিনি হেঁটে চললেন।’’ ইমাম নাবাবী বলেনঃ এতে এ প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সা‘ঈ করাকালে নিম্নভূমিতে দ্রুত পদক্ষেপে দৌড়াতে হবে। অতঃপর উঁচু ভূমিতে আসার পর সাধারণ গতিতে মারওয়া পর্যন্ত হেঁটে চলবে। এ স্থানে সাত চক্করের প্রতি চক্করেই দ্রুত দৌড়িয়ে চলা মুস্তাহাব। আর নিম্নভূমির পূর্বে উঁচু ভূমিতে হেঁটে চলা মুস্তাহাব। যদি কোন ব্যক্তি সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সম্পূর্ণ স্থান হেঁটে চলে অথবা দৌড়িয়ে চলে তবে তার সা‘ঈ বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু ফাযীলাত থেকে বঞ্চিত হবে।
(فَفَعَلَ عَلَى الْمَرْوَةِ كَمَا فَعَلَ عَلَى الصَّفَا) ‘‘মারওয়াতে তাই করলেন তিনি সাফাতে যা করেছিলেন। অর্থাৎ- মারওয়াতে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে পূর্বোল্লিখিত যিকির পাঠ ও দু‘আ করলেন। এটিও পূর্বের মতই সুন্নাত।
(حَتّٰى اِذَا كَانَ اٰخِرُ طَوَافٍ عَلَى الْمَرْوَةِ) ‘‘তাওয়াফের শেষ চক্করে যখন তিনি মারওয়াতে এলেন।’’ হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, সাফা হতে মারওয়াতে যাওয়া এক চক্কর গণনা করা হবে। আবার মারওয়াহ্ থেকে সাফাতে যাওয়া আরেক চক্কর। এভাবে সাফা থেকে সা‘ঈ শুরু করে মারওয়াতে যেয়ে সা‘ঈর সপ্তম চক্কর শেষ হবে। এটাই ইমাম শাফি‘ঈ ও জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত। পক্ষান্তরে আবূ বাকর সায়রাফী-এর মতে সাফা থেকে মারওয়াতে গিয়ে পুনরায় সাফাতে ফিরে আসলে এক চক্কর হবে। এ মতানুযায়ী সাফা হতে সা‘ঈ শুরু হয়ে সাফাতেই তা শেষ হবে। কিন্তু এ সহীহ হাদীসটি তাদের এ অভিমত প্রত্যাখ্যান করে।
(لَوْ أَنِّى اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ) ‘‘যা আমি এখন বুঝতে পেরেছি তা যদি আমি আগে বুঝতে পারতাম।’’ অর্থাৎ- যখন আমি হজ্জের কাজ শুরু করেছি তখন যদি বুঝতে পারতাম।
(لَمْ أَسُقِ الْهَدْىَ) ‘‘তাহলে আমি কুরবানীর পশু নিয়ে আসতাম না’’। কেননা কোন ব্যক্তি যখন ইহরাম বাঁধার সময় থেকে কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসে তাহলে তা যাবাহ করার আগে তার জন্য হালাল হওয়া বৈধ নয়। আর ইয়াওমুন্ নাহরের পূর্বে অর্থাৎ- ১০ই যিলহজ্জের পূর্বে কুরবানীর পশু যাবাহ করা বৈধ নয়। আর এমন ব্যক্তির জন্য হজ্জের উদ্দেশে বাঁধা ইহরামকে ‘উমরাতে রূপান্তর করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু না নিয়ে আসবে তার জন্য হজ্জের ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে রূপান্তর করা বৈধ।
হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু' হজ্জ করেননি, বরং তাঁর হজ্জ ছিল হজ্জে কিরান।
(وَجَعَلْتُهَا عُمْرَةً) ‘‘আমি তা ‘উমরাতে রূপান্তর করতাম।’’ অর্থাৎ- আমি আমার হজ্জের ইহরামকে ‘উমরাতে রূপান্তর করে ‘উমরার কাজ সমাপনান্তে হালাল হয়ে পুনরায় হজ্জ সম্পাদন করে তামাত্তু' হজ্জ সম্পাদন করতাম।
(أَلِعَامِنَا هٰذَا أَمْ لِأَبَدٍ؟) ‘‘এ বিধান কি শুধু এ বৎসরের জন্য না-কি চিরদিনের জন্য?’’ অর্থাৎ- হজ্জের নিয়্যাত পরিবর্তন করে তা ‘উমরাতে পরিণত করা কি শুধু এ বৎসরের জন্য? হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এটিই, অথবা এর অর্থ হলো হজ্জের মাসসমূহে ‘উমরা পালন করা অথবা হজ্জের সাথে ‘উমরা পালন করার বিধান কি শুধু এ বৎসরের জন্য?
(دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِى الْحَجِّ مَرَّتَيْنِ لَا بَلْ لِأَبَدِ أَبَدٍ) ‘‘হজ্জের সাথে ‘উমরা পালনের বিধান চিরদিনের জন্য। তা কোন বৎসরের জন্য খাস নয়।" সুরাকার প্রশ্নের উদ্দেশ্য কি? তা নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
(১) এর উদ্দেশ্য হজ্জের মাসসমূহে ‘উমরা পালন করা।
(২) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হজে কিবরান করা।
(৩) হজ্জের নিয়্যাত পরিবর্তন করে তা ‘উমরাতে পরিণত করা।
১ম মতানুযায়ী- (دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِى الْحَجِّ)-এর অর্থ হলো হজ্জের মাসসমূহে ‘উমরা করা বৈধ। এর দ্বারা জাহিলী যুগের এ ধারণাকে বাতিল ঘোষণা করা যে, হজ্জের মাসসমূহে ‘উমরা বৈধ নয়।
২য় মতানুযায়ী- এর অর্থ হলো যে ব্যক্তি একই সাথে হজ্জ ও ‘উমরার নিয়্যাত করেছে তার ‘উমরা হজ্জের সাথে মিশে গেছে এবং ‘উমরার কাজসমূহ হজ্জের কাজের মধ্যে প্রবেশ করেছে, ফলে উভয় কাজ হতে একবারে হালাল হবে।
৩য় মতানুযায়ী- এর অর্থ হলো হজ্জের নিয়্যাতের মধ্যে ‘উমরা-এর নিয়্যাত প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ- যে ব্যক্তি হজ্জের নিয়্যাত করেছে তার পক্ষে ‘উমরা-এর কাজ সম্পাদন করে হালাল হওয়া বৈধ। হজ্জের নিয়্যাত পরিবর্তন করে তা ‘উমরাতে পরিণত করার অর্থ হলো যে ব্যক্তি হজ্জে ইফরাদ বা হজ্জে কিরানের নিয়্যাত করেছে এবং সাথে কুরবানীর পশু নিয়ে যায়নি এবং সে ‘আরাফাতে অবস্থান করার পূর্বে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার পর সাফা মারওয়াতে সা‘ঈ করেছে তার জন্য হজ্জের নিয়্যাত পরিবর্তন করে উপর্যুক্ত কাজসমূহকে শুধুমাত্র ‘উমরাতে পরিণত করার নিয়্যাত করা এবং উক্ত কাজসমূহ সমাপনান্তে মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম থেকে হালাল হবে। পরবর্তীতে হজ্জের নিয়্যাত করে পৃথকভাবে হজ্জের কাজ সম্পাদন করে হজে তামাত্তু' সম্পাদনকারী হবে। আর পরিবর্তন করা কি শুধু সাহাবীগণের পক্ষে ঐ বৎসরের জন্য খাস ছিল না-কি তা চিরদিনের জন্য বৈধ- এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
(১) ইমাম আহমাদ, আহলুয্ যাহির ও আহলুল হাদীসদের মতে তা সাহাবীগণের জন্য খাস নয় বরং এ বিধান ক্বিয়ামাত পর্যন্ত বহাল আছে। অতএব যে কোন ব্যক্তি যদি হজ্জ ইফরাদ বা হজ্জ কিরানের জন্য ইহরাম বাঁধে এবং সাথে কুরবানীর পশু না থাকে তাহলে তার ঐ ইহরামকে ‘উমরাতে পরিণত করতে পারবে এবং ‘উমরা-এর কাজ সমাপনান্তে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে।
(২) ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আবূ হানীফা ও জমহূর ‘উলামাগণের মতে এটা শুধু সাহাবীগণের পক্ষে ঐ বৎসরের জন্য খাস। পরবর্তীতে কারো জন্য তা বৈধ নয়।
যারা বলেন তা সাহাবীগণের জন্য খাস তাদের দলীল নিম্নরূপঃ
(১) মুসলিমে আবূ যার হতে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ হজ্জের মুত্‘আহ্, অর্থাৎ- হজ্জ/হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের জন্য খাস।
(২) আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহতে বিলাল ইবনুল হারিস বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হজ্জ/হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করা এটা কি আমাদের জন্য খাস, না-কি তা সবার জন্যই? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং তা তোমাদের জন্য খাস।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় যে, জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীস ও আবূ যার এবং বিলাল ইবনুল হারিস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে আসলে তা নয় বরং হাদীস দু’টোর মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব। তা এভাবে যে, বিলাল ইবনুল হারিস (রাঃ) এবং আবূ যার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস সাহাবীগণের জন্য খাস এ অর্থে যে, এ সফরে যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জের নিয়্যাত করেছিলেন। কিন্তু যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশের কারণে তাদের জন্য ওয়াজিব ছিল হজ্জ/হজকে ‘উমরাতে রূপান্তর করা। আর তা সাহাবীগণের জন্যই খাস।
আর জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে তা চিরদিনের জন্য, অর্থাৎ- হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করা চিরদিনের জন্য বৈধ। তবে তা ওয়াজিব নয়। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী এবং ‘আল্লামা শানক্বীত্বী উভয় প্রকারের হাদীসের মধ্যে এভাবে সমন্বয় করেছেন। আর এটাই সঠিক। আল্লাহই ভাল জানেন।
(اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أُهِلُّ بِمَا أهلَّ به رَسُوْلُكَ) ‘‘হে আল্লাহ! আমি সে ইহরাম বাঁধলাম যে ধরনের ইহরাম বেঁধেছে আপনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’’
এতে এ প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তি যদি বলে অমুক ব্যক্তি যে ধরনের ইহরাম বেঁধেছে আমিও সে ধরনের ইহরাম বাঁধলাম, তাহলে তা সহীহ ও সঠিক। এ ব্যক্তির ইহরাম ঐ ব্যক্তির ইহরামের মতই যার নাম তিনি উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ এবং তার অনুসারীদের অভিমত এটিই।
ইমাম আবূ হানীফার মতে তার ইহরাম সঠিক। কিন্তু যার নাম তিনি উল্লেখ করেছেন এর ইহরাম উল্লিখিত ব্যক্তির ইহরামের মতো হওয়া আবশ্যক নয়।
(فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ) ‘‘অতঃপর সবাই হালাল হয়ে গেল।’’ অর্থাৎ- অধিকাংশ লোকই ‘উমরা সম্পাদন করে হালাল হয়ে গেল।
(وَقَصَّرُوْا) ‘‘এবং তারা তাদের মাথার চুল ছেঁটে খাটো করল।’’ ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ মাথা মুন্ডানো উত্তম হওয়া সত্ত্বেও তারা এজন্য খাটো করেছিল যাতে মাথাতে কিছু চুল অবশিষ্ট থাকে এবং হজ্জ সম্পাদনের পর মাথা মুন্ডাতে পারে যাতে তারা চুল খাটো করা এবং মাথা মুন্ডানোর উভয় প্রকারের সাওয়াবই অর্জনে সক্ষম হয়।
(يَوْمُ التَّرْوِيَةِ) ‘‘তারবিয়ার দিন’’। এটি যিলহজ্জ মাসের অষ্টম দিন। এ দিনকে (التَّرْوِيَةِ) এজন্য বলা হয় যে, হাজীগণ এ দিনে নিজেরা পানি পান করে যেমন তৃপ্ত হয় তেমনি তাদের বাহন উটকে পানি পান করিয়ে তৃপ্ত করায় এবং পরবর্তী দিনগুলোর জন্য পানির ব্যবস্থা করতো ‘আরাফাতে অবস্থানের প্রস্ত্ততি স্বরূপ। কেননা তৎকালীন সময়ে বর্তমানের ন্যায় ‘আরাফাতে পানির কোন ব্যবস্থা ছিল না।
এটাও বলা হয়ে থাকে যে, কুরায়শগণ হাজীদেরকে পান করানোর উদ্দেশে মক্কা থেকে পানি নিয়ে যেত ফলে হাজীগণ তা পান করে তৃপ্ত হত। অথবা ইব্রাহীম (আঃ) এ দিনে চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন যে, তার পুত্র ইসমা‘ঈলকে কিভাবে কুরবানী করবেন। আর (التَّرْوِيَةِ) শব্দটি চিন্তা-ভাবনার অর্থেও ব্যবহার হয়, তাই এ দিনের নাম (يَوْمُ التَّرْوِيَةِ) ‘‘তারবিয়ার দিন’’ নামকরণ করা হয়েছে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রকাশ থাকে যে, যিলহজ্জ মাসের পরস্পর ছয়টি দিনের পৃথক পৃথক নাম রয়েছে।
(১) অষ্টম দিন- ইয়াওমুত্ তারবিয়াহ্, (২) নবম দিন- ‘আরাফাহ্, (৩) দশম দিন- আন্ নাহর, (৪) একাদশ দিন- আল ক্বার। কেননা এ দিন তারা মিনাতে অবস্থান করে, (৫) দ্বাদশ দিন- আন্ নাফরুল আওয়াল, (৬) ত্রয়োদশ দিন- আন্ নাফরুস্ সানী।
(فَأَهَلُّوْا بِالْحَجِّ) ‘‘তারা হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধল।’’
আলমুহিববুত্ তাবারী বলেনঃ এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, মাক্কাহ্বাসীগণ এবং তামাত্তু হজ্জ সম্পাদনকারীগণ এ দিনই হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবেন। এতে এ ইঙ্গিতও পাওয়া যায় যে, মাক্কাতে যারা ইহরাম বাঁধবে এ দিন তারা তাওয়াফ ও সাঈ' করবে না।
(ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلًا حَتّٰى طَلَعَتِ الشَّمْسُ) ‘‘তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন।’’ এতে প্রমাণিত হয় যে, সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে ‘আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া সুন্নাত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিনাতে অবস্থান এবং তথায় সালাত আদায়, রাত যাপন করা প্রমাণ করে যে, এসবগুলোই মুস্তাহাব। অষ্টম দিনের দিবাগত রাতে মিনাতে অবস্থান করা আর মিনার দিবসগুলোতে, অর্থাৎ- ইয়াওমুন্ নাহর থেকে পরবর্তী দিনগুলোতে মিনাতে রাত যাপনের বিধানের মধে পার্থক্য রয়েছে। এতে সবাই একমত।
ইমাম নাবাবী বলেনঃ এ রাতে (অষ্টম দিন দিবাগত রাতে) মিনাতে যাতায়াত করা সুন্নাত। তা হজ্জের রুকনও নয় এবং তা ওয়াজিবও নয়। এ রাতে কেউ মিনাতে রাত যাপন না করলে তার জন্য দম ওয়াজিব নয় এতে ঐকমত্য রয়েছে।
২৫৫৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৬
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِىِّ ﷺ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِحَجٍّ فَلَمَّا قَدِمْنَا مَكَّةَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَلَمْ يُهْدِ فَلْيَحْلِلْ وَمَنْ أَحْرَمَ بِعُمْرَةٍ وَأَهْدٰى فَلْيُهِلَّ بِالْحَجِّ مَعَ العُمْرَةِ ثُمَّ لَا يَحِلُّ حَتّٰى يَحِلَّ مِنْهَا». وَفِىْ رِوَايَةٍ: «فَلَا يَحِلُّ حَتّٰى يَحِلَّ بِنَحْرِ هَدْيِه وَمَنْ أَهَلَّ بِحَجٍّ فَلْيُتِمَّ حَجَّه». قَالَتْ: فَحِضْتُ وَلَمْ أَطُفْ بِالْبَيْتِ وَلَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَلَمْ أَزَلْ حَائِضًا حَتّٰى كَانَ يَوْمُ عَرَفَةَ وَلَمْ أُهْلِلْ إِلَّا بِعُمْرَةٍ فَأَمَرَنِى النَّبِىُّ ﷺ أَنْ أَنْقُضَ رَأْسِي وَأَمْتَشِطَ وَأُهِلَّ بِالْحَجِّ وَأَتْرُكَ الْعُمْرَةَ فَفَعَلْتُ حَتّٰى قَضَيْتُ حَجِّىْ بَعَثَ مَعِىْ عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ أَبِىْ بَكْرٍ وَأَمَرَنِىْ أَنْ أَعْتَمِرَ مَكَانَ عُمْرَتِىْ مِنَ التَّنْعِيمِ قَالَتْ: فَطَافَ الَّذِينَ كَانُوْا أَهَلُّوْا بِالْعُمْرَةِ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حَلُّوْا ثُمَّ طَافُوْا بَعْدَ أَنْ رَجَعُوْا مِنْ مِنًى وَأَمَّا الَّذِينَ جَمَعُوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّمَا طَافُوا طَوَافًا وَاحِدًا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিদায় হজে বের হলাম। আমাদের কেউ কেউ ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিল আর কেউ কেউ হজ্জের ইহরাম। আমরা যখন মাক্কায় পৌঁছলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছে এবং কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসেনি সে যেন ‘উমরার কাজ শেষ করে (ইহরাম খুলে) হালাল হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছে, সাথে করে কুরবানীর পশুও এনেছে, সে যেন হজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করে ‘উমরার সাথে এবং ইহরাম না খুলে, যে পর্যন্ত হজ্জ ও ‘উমরা উভয় হতে অবসর গ্রহণ না করে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সে যেন ইহরাম না খুলে যে পর্যন্ত পশু কুরবানী করে অবসর গ্রহণ না করে। আর যে শুধু হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে সে যেন হজ্জের কাজ পূর্ণ করে। তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি ঋতুমতী হয়ে গেলাম, (‘উমরার জন্য) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারলাম না এবং সাফা-মারওয়ার সা‘ঈও করতে পারলাম না। আমার অবস্থা ‘আরাফার দিন উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত এরূপই থাকলো। অথচ আমি ‘উমরা ছাড়া অন্য কিছুর ইহরাম বাঁধিনি।
তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন, আমি যেন আমার মাথার চুল খুলে ফেলি ও চিরুনী করি। সুতরাং হজ্জের ইহরাম বাঁধি, আর ‘উমরা ত্যাগ করি। আমি তা-ই করলাম এবং আমার হজ্জ আদায় করলাম। এরপর আমার ভাই ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকর-কে আমার সাথে পাঠালেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আমার সেই ‘উমরার পরিবর্তে তান্‘ঈম হতে ‘উমরা করি। তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, যারা শুধু ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিল, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলো এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করলো। অতঃপর তারা হালাল হয়ে গেলো। তারপর যখন মিনা হতে (১০ তারিখে) ফিরে এসে তখন (হজের জন্যে) তাওয়াফ করল, আর যারা হজ্জ ও ‘উমরা একসাথে (ইহরাম বেঁধেছিল) করেছিল তারা শুধু (১০ তারিখে) একটি মাত্র তাওয়াফ করলো। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(فَحِضْتُ وَلَمْ أَطُفْ بِالْبَيْتِ وَلَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ) ‘‘অতঃপর আমি ঋতুবতী হয়ে গেলাম তাই বায়তুল্লাহতে তাওয়াফ করিনি এবং সাফা-মারওয়াতে সা‘ঈ করিনি। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বায়তুল্লাহতে তাওয়াফ করেননি এজন্য যে, তিনি অপবিত্র হয়ে পড়েছিলেন। আর বায়তুল্লাহতে তাওয়াফ করার জন্য পবিত্রতা শর্ত। আর সা‘ঈ এজন্য করেননি যে, সা‘ঈ তো তাওয়াফের পর করতে হয় তাওয়াফ ব্যতীত সা‘ঈ বিশুদ্ধ নয়। তবে ঋতুবতীর বিধান এর ব্যতিক্রম। ঋতুবতীর জন্য সা‘ঈ করা বৈধ এজন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। কেননা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ঋতুবতী হওয়ায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেনঃ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হজ্জের সকল কাজ সম্পন্ন করো।
ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ সা‘ঈ তাওয়াফের অনুগামী। তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করা বৈধ নয়। অতএব তাওয়াফের পূর্বে কেউ সা‘ঈ করলে তা যথেষ্ট হবে না। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ এবং আহলুল বায়তগণের অভিমত এটিই। ‘আত্বা বলেনঃ তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করলেও যথেষ্ট হবে। কতক আহলুল হাদীসের অভিমতও তাই।
(وَأُهِلَّ بِالْحَجِّ وَأَتْرُكَ الْعُمْرَةَ) ‘‘(আমাকে নির্দেশ দিলেন) আমি যেন ‘উমরাহ পরিত্যাগ করে হজ্জের ইহরাম বাঁধি।’’ হানাফীদের নিকট এর অর্থ হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন ‘উমরা-এর ইহরাম থেকে বেরিয়ে যাই এবং ইহরাম অবস্থায় যা হারাম ছিল তা পালন করি যেমন মাথার বেণী খুলে ফেলি, চুল আচড়াই ইত্যাদি। কেননা ঋতুর কারণে ‘উমরা-এর কার্যাবলী সম্পাদন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর হজ্জের ইহরাম বাঁধি। তাঁরা এ হাদীসটিকে তাদের দলীল হিসেবে পেশ করেন এবং বলেন, কোন মহিলা যদি তামাত্তু' হজ্জের নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধার পর কাবা ঘরের তাওয়াফ করার আগেই ঋতুবতী হয়ে যায় এবং ‘আরাফার দিন আসা পর্যন্ত তার ঋতু অব্যাহত থাকে তাহলে সে মহিলা ‘উমরা পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র ইফরাদ হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবে। হজ্জের কাজ সম্পন্ন করার পর পুনরায় পরিত্যক্ত ‘উমরার জন্য কাযা ‘উমরা করবে। আর ইতোপূর্বে ‘উমরা পরিত্যাগ করার জন্য দম দিবে।
জমহূর ‘উলামাহগণ বলেনঃ এ হাদীসের অর্থ হলো- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিলেন আমি যেন ‘উমরা-এর যাবতীয় কাজ তথা কাবা ঘরের তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সা‘ঈ, মাথার চুল খাটো করা এসব কিছু বাদ রেখে ‘উমরার ইহরামের সাথেই হজ্জের ইহরাম বাঁধি। ফলে আমি হজ্জে কিরানকারী হয়ে যাই। এখানে ‘উমরা-এর কাজ পরিত্যাগ করার অর্থ ‘উমরার ইহরাম বাতিল করা নয় বরং ‘উমরার কাজ বাদ রেখে তার সাথে হজ্জের কাজ সংযুক্ত করা। এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইমাম মালিক, আওযা‘ঈ শাফি‘ঈ এবং অনেক ‘উলামাহবৃন্দ। তারা দলীল হিসেবে জাবির (রাঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করেন যাতে রয়েছে- ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি গোসল করে হজ্জের ইহরাম বাঁধো, অতঃপর তিনি তাই করলেন। অতঃপর তিনি হজ্জের সকল কাজ সম্পাদন করার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবার তুমি হজ্জ ও ‘উমরা থেকে হালাল হলে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইয়াওমুন্ নাফরে (ফিরার দিন) বললেনঃ তোমার এ তাওয়াফ তোমার হজ্জ ও ‘উমরা-এর জন্য যথেষ্ট হবে’’ হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
(فَفَعَلْتُ) ‘‘আর আমি তাই করলাম।’’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে নির্দেশ দিলেন। অর্থাৎ- ‘উমরার বাদ রেখে রেখে আমি হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলাম।
(ثُمَّ حَلُّوْا) ‘‘এরপর তারা হালাল হয়ে গেল।’’ অর্থাৎ- ‘উমরা-এর কাজ সম্পাদন করে হলক অথবা তাক্বসীরের মাধ্যমে তারা হালাল হয়ে গেল। অতঃপর মক্কা থেকে পুনরায় হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধল।
(ثُمَّ طَافُوْا بَعْدَ أَنْ رَجَعُوْا مِنْ مِنًى) ‘‘এরপর মিনা থেকে মাক্কায় ফিরে এসে তারা তাওয়াফ করল’’। তার ওপর থেকে, অর্থাৎ- তামাত্তু' হজ্জ সম্পাদনকারীর ওপর থেকে তাওয়াফে কুদূম রহিত হয়ে গেল। কেননা সে এখন মাক্কাহবাসীদের মতই। আর মাক্কাহ্বাসীদের জন্য তাওয়াফে কুদূম নেই।
(وَأَمَّا الَّذِينَ جَمَعُوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّمَا طَافُوا طَوَافًا وَاحِدًا) ‘‘যারা হজ্জে কিরান করল, তারা মাত্র একবার তাওয়াফ করল।’’ অর্থাৎ- হজ্জে কিরানকারী ‘আরাফাতে অবস্থান করার পর কুরবানীর দিন মাক্কায় ফিরে এসে হজ্জ ও ‘উমরার জন্য একবার তাওয়াফ করল। ইমাম যুরক্বানী বলেনঃ কেননা কিরান হজ্জ সম্পাদনকারীর জন্য এক তাওয়াফ, একবার সা‘ঈ করাই যথেষ্ট। কারণ ‘উমরার কার্যাবলী হজ্জের কাজের মধ্যেই প্রবেশ করেছে।
এ অভিমত ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও জমহূর ‘উলামাগণের। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা-এর মতে কিরানকারীর জন্যও দু’টি তাওয়াফ ও দু’টি সা‘ঈ আবশ্যক।
জেনে রাখা ভাল যে, কিরান সম্পাদনকারীর জন্য তিনটি তাওয়াফ রয়েছে- (১) তাওয়াফে কুদূম (আগমনী তাওয়াফ) তাওয়াফে ইফাযাহ্ বা যিয়ারহ্ (এটি হজ্জের রুকন) তাওয়াফুল বিদা' (বিদায়ী তাওয়াফ) এটি ওয়াজিব। ওজর ব্যতীত তা পরিত্যাগ করলে দম দিতে হবে। তবে ঋতুবতীর জন্য তা ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম আবূ হানীফার মতে কিরান হজ্জ সম্পাদনকারীর আরেকটি তাওয়াফ আবশ্যক যা ‘উমরা-এর তাওয়াফ।
২৫৫৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৭
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَ: تَمَتَّعَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَسَاقَ مَعَهُ الْهَدْىَ مِنْ ذِى الْحُلَيْفَةِ وَبَدَأَ فَأَهَلَّ بِالْعُمْرَةِ ثُمَّ أَهَلَّ بِالْحَجِّ فَتَمَتَّعَ النَّاسُ مَعَ النَّبِىِّ ﷺ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَكَانَ مِنَ النَّاسِ مَنْ أَهْدٰى وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ يُهْدِ فَلَمَّا قَدِمَ النَّبِىُّ ﷺ مَكَّةَ قَالَ لِلنَّاسِ: «مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدٰى فَإِنَّه لَا يَحِلُّ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتّٰى يَقْضِىَ حَجَّه وَمَنْ لَمْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَهْدٰى فَلْيَطُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَلْيُقَصِّرْ وَلْيَحْلِلْ ثُمَّ لِيُهِلَّ بِالْحَجِّ وَلْيُهْدِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا فَلْيَصُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فِى الْحَجِّ وَسَبْعَةً إِذَا رَجَعَ إِلٰى أَهْلِه» فَطَافَ حِيْنَ قَدِمَ مَكَّةَ وَاسْتَلَمَ الرُّكْنَ أَوَّلَ شَىْءٍ ثُمَّ خَبَّ ثَلَاثَةَ أَطْوَافٍ وَمَشٰى أَرْبَعًا فَرَكَعَ حِينَ قَضٰى طَوَافَه بِالْبَيْتِ عِنْدَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ فَانْصَرَفَ فَأَتَى الصَّفَا فَطَافَ بِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعَةَ أَطْوَافٍ ثُمَّ لَمْ يَحِلَّ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتّٰى قَضٰى حَجَّه وَنَحَرَ هَدْيَه يَوْمَ النَّحْرِ وَأَفَاضَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ حَلَّ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ وَفَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ مَنْ سَاقَ الْهَدْىَ مِنَ النَّاسِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে হজ্জের সাথে ‘উমরা মিলিয়ে হজে তামাত্তু' আদায় করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘যুলহুলায়ফাহ্’ হতে কুরবানীর পশু সাথে নিয়েছিলেন এবং কাজের শুরুতে ‘উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন, তারপর হজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন। তাই লোকেরাও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জের সাথে ‘উমরা মিলিয়ে হজে তামাত্তু' করলেন। তাদের কেউ কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছে, আর কেউ সাথে আনেনি। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাক্কায় পৌঁছে লোকদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে করে এনেছে সে যেন এমন কোন বিষয়কে হালাল মনে না করে যা ইহরামের কারণে তার ওপর হারাম হয়ে গিয়েছে যে পর্যন্ত সে নিজের হজ্জ সম্পন্ন না করে। আর তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসেনি, সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা‘ঈ করে এবং মাথার চুল ছেটে হালাল হয়ে যায়। এরপর হজ্জের জন্যে পুনরায় ইহরাম বাঁধে ও কুরবানীর পশু নেয়। আর যে কুরবানীর পশু সাথে নিতে পারলো না, তাহলে সে যেন তিনদিন হজ্জের সময়েই সওম পালন করে এবং বাড়ীতে ফিরে আসার পর সাতদিন সওম রাখে।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাক্কায় পৌঁছে প্রথমে (‘উমরার জন্য বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ করলেন ও হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সজোরে তিনবার তাওয়াফ করলেন আর চারবার স্বাভাবিক হাঁটলেন। বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দাঁড়িয়ে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর সেখান থেকে সাফা মারওয়ায় ফিরে গেলেন। তারপর সাফা ও মারওয়ায় গিয়ে সাতবার সা‘ঈ করলেন। এরপরও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ইহরামের কারণে) যা তার ওপর হারাম ছিল তা নিজের হজ্জ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল করলেন না। কুরবানীর তারিখে কুরবানীর পশু যাবাহ করলেন এবং (মিনা হতে) মাক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। তারপর ইহরামের কারণে যা তার প্রতি হারাম ছিল তা হতে তিনি পূর্ণ হালাল হয়ে গেলেন। আর লোকেদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছিল তারাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ করেছিলেন সেরূপ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(فَسَاقَ مَعَهُ الْهَدْىَ مِنْ ذِى الْحُلَيْفَةِ) ‘‘তিনি যুলহুলায়ফাহ্ থেকে কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়েছেন।’’ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মীকাত থেকে কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।
(مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدٰى فَإِنَّه لَا يَحِلُّ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتّٰى يَقْضِىَ حَجَّه) ‘‘যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছে সে হজ্জ সম্পাদন না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন কিছুই হালাল হবে না যা তার জন্য হারাম হয়েছে।’’ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসাই হালাল না হওয়ার কারণ।
(وَلْيُهْدِ) ‘‘সে যেন কুরবানী করে।’’ অর্থাৎ- তামাত্তু' হজ্জ সম্পাদনকারী কুরবানীর দিন জামারাতে ‘আক্বাবাতে পাথর নিক্ষেপের পর কুরবানী করবে।
(فَمَنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا فَلْيَصُمْ ثَلَاثَةَ) যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সামর্থ্য না রাখে সে যেন হজ্জের সময় তিনদিন সিয়াম পালন করে এবং বাড়ীতে ফিরে এসে আরো সাতটি সওম পালন করে। হজ্জের দিনসমূহ বলতে হজ্জের মাসে ইয়াওমুন্ নাহরের পূর্বে তিনটি সিয়াম পালন করবে ইহরাম অবস্থায়। তবে উত্তম হলো এর সর্বশেষ সিয়াম ‘আরাফার দিনে সম্পাদন করা। আর সাতটি সওম আইয়্যামে তাশরীক্ব বাদে যে কোন সময় পালন করতে পারে। তবে উত্তম হলো নিজ পরিবারে ফিরে এসে তা পালন করা।
২৫৫৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ هٰذِه عُمْرَةٌ اسْتَمْتَعْنَا بِهَا فَمَنْ لَمْ يَكُنْ عِنْدَهُ الْهَدْىُ فَلْيَحِلَّ الْحِلَّ كُلَّه فَإِنَّ الْعُمْرَةَ قَدْ دَخَلَتْ فِى الْحَجِّ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এটা ‘উমরা, যা দিয়ে আমরা তামাত্তু' করলাম। অতএব যার কাছে কুরবানীর পশু সাথে নেই, সে যেন (‘উমরা শেষ করে) পূর্ণভাবে হালাল হয়ে যায়। তবে এটা মনে রাখবে যে, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত ‘উমরা হজ্জের মাসে প্রবেশ করলো। (মুসলিম)[১]
(إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ) ‘‘ক্বিয়ামাত পর্যন্ত’’। ইবনু মালিক বলেনঃ অর্থাৎ- হজ্জের মাসে ‘উমরা পালন করার বৈধতা এ বৎসরের জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত বৈধ।
২৫৫৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৫৯
عَنْ عَطَاءٍ قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللّٰهِ فِىْ نَاسٍ مَعِىْ قَالَ: أَهْلَلْنَا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ بِالْحَجِّ خَالِصًا وَحْدَه قَالَ عَطَاءٌ: قَالَ جَابِرٌ: فَقَدِمَ النَّبِىُّ ﷺ صُبْحَ رَابِعَةٍ مَضَتْ مِنْ ذِى الْحِجَّةِ فَأَمَرَنَا أَنْ نَحِلَّ قَالَ عَطَاءٌ: قَالَ: حِلُّوْا وَأَصِيْبُوا النِّسَاءَ. قَالَ عَطَاءٌ: وَلَمْ يَعْزِمْ عَلَيْهِمْ وَلَكِنْ أَحَلَّهُنَّ لَهُمْ فَقُلْنَا لَمَّا لَمْ يَكُنْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ عَرَفَةَ إِلَّا خَمْسٌ أَمَرَنَا أَنْ نُفْضِىَ إِلٰى نِسَائِنَا فَنَأْتِىَ عرَفَةَ تَقْطُرُ مَذَاكِيرُنَا الْمَنِىَّ. قَالَ : يَقُوْلُ جَابِرٌ بِيَدِه، كَأَنِّيْ أَنْظُرَ إِلٰى قَوْلِه بِيَدِه يُحَرِّكُهَا. قَالَ: فَقَامَ النَّبِيُّ - ﷺ- فِيْنَا، فَقَالَ: «قَدْ عَلِمْتُمْ أَنِّىْ أَتْقَاكُمْ لِلّٰهِ وَأَصْدَقُكُمْ وَأَبَرُّكُمْ وَلَوْلَا هَدْيِيْ لَحَلَلْتُ كَمَا تَحِلُّونَ وَلَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقِ الْهَدْىَ فَحِلُّوْا» فَحَلَلْنَا وَسَمِعْنَا وَأَطَعْنَا قَالَ عَطَاءٌ: قَالَ جَابِرٌ: فَقَدِمَ عَلِىٌّ مِنْ سِعَايَتِهِ فَقَالَ: بِمَ أَهْلَلْتَ؟ قَالَ بِمَا أَهَلَّ بِهِ النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ لَه رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «فَأَهْدِ وَامْكُثْ حَرَامًا» قَالَ: وَأَهْدٰى لَه عَلِىٌّ هَدْيًا فَقَالَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ أَلِعَامِنَا هٰذَا أَمْ لِأَبَدٍ؟ قَالَ: لِأَبَدٍ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং আমার সাথে কতিপয় লোকের মধ্যে জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ কেবলমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলাম।’’ ‘আত্বা বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজের চার তারিখ পার হবার পর সকালে মাক্কায় আসলেন এবং আমাদেরকে ইহরাম ছেড়ে হালাল হতে নির্দেশ দিলেন। ‘আত্বা জাবিরের মাধ্যমে বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এ কথাও) বলেছেন, ‘‘তোমরা হালাল হও এবং স্বীয় স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করো’’। ‘আত্বা আরো বলেন, এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বাধ্য করলেন না; বরং স্ত্রীদেরকে তাদের জন্য হালাল করে দিলেন। (জাবির বলেন,) তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলাম, আমাদের ও ‘আরাফাতে উপস্থিত হবার মধ্যে যখন মাত্র পাঁচদিন বাকী, এমন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে স্ত্রীর সাথে মিলতে অনুমতি দিলেন, তবে কি আমরা ‘আরাফাতে উপস্থিত হবো আর আমাদের লিঙ্গ থেকে শুক্র ঝরতে থাকবে? ‘আত্বা বলেন, তখন জাবির (রাঃ) নিজের হাত নেড়ে ইশারা করলেন, আমি যেন তাঁর হাত নাড়ার ইঙ্গিত এখনো দেখছি।
জাবির (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন (ভাষণ দানের উদ্দেশে) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা জানো যে, আমি তোমাদের অপেক্ষা আল্লাহকে বেশি ভয় করি, তোমাদের অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী এবং তোমাদের অপেক্ষা অধিক পুণ্যবান। আমি যদি কুরবানীর পশু সাথে না আনতাম, আমিও তোমাদের ন্যায় ইহরাম ভেঙ্গে হালাল হয়ে যেতাম। আর আমি যদি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝতে পারতাম, যা আমি পরে বুঝেছি, তাহলে আমি কক্ষনো কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসতাম না। সুতরাং তোমরা (ইহরাম ভেঙ্গে) হালাল হয়ে যাও।’’ তাই আমরা হালাল হয়ে গেলাম এবং তাঁর কথা শুনলাম ও তাঁর কথামোতো কাজ করলাম।
‘আত্বা (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, এ সময় ‘আলী (রাঃ) তাঁর কর্মস্থল হতে আসলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছো। ‘আলী (রাঃ) বললেন, ‘‘আমি ইহরাম বেঁধেছি, যার জন্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তবে তুমি কুরবানী কর এবং ইহরাম অবস্থায় থাক। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আলী (রাঃ) তার সাথে কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছিলেন। (জাবির (রাঃ) বলেন) এ সময় সুরাক্বাহ্ ইবনু মালিক ইবনু জু‘শুম দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! (হজের সাথে ‘উমরা করা কি) আমাদের শুধু এ বছরের জন্য, নাকি চিরকালের জন্যে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, চিরকালের জন্য। (মুসলিম)[১]
[বিঃ দ্রঃ এ অধ্যায়ে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ নেই (وَهٰذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّانِىْ)]
(فَأَمَرَنَا أَنْ نَحِلَّ) ‘‘তিনি আমাদেরকে হালাল হওয়ার নির্দেশ দিলেন।’’ অর্থাৎ- হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করে ‘উমরার কাজ সম্পাদন করে হালাল হতে বললেন।
(وَلَكِنْ أَحَلَّهُنَّ لَهُمْ) ‘‘তবে তিনি তাদেরকে তাদের জন্য হালাল করে দিলেন।’’ অর্থাৎ- হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করা যে রকম বাধ্যতামূলক করেছিলেন কিন্তু স্ত্রীদের সাথে মিলিত হওয়া তেমন বাধ্যতামূলক করেননি। বরং ‘উমরা সম্পাদনের পর তাদের স্ত্রীগণের সাথে মিলিত হওয়া তাদের জন্য হালাল ছিল।
(تَقْطُرُ مَذَاكِيرُنَا الْمَنِىَّ) ‘‘আমাদের পুরুষাঙ্গ থেকে মনি নির্গত হতে থাকবে।’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্ত্রী সহবাসের অব্যাহতি পরেই আমরা হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধব। আর এ বিষয়টি জাহিলী যুগে দোষণীয় ছিল এবং তা হজ্জের ত্রুটি হিসেবে গণ্য করা হত।
(وَلَوْلَا هَدْيِيْ لَحَلَلْتُ كَمَا تَحِلُّونَ) ‘‘যদি আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকত তবে আমিও হালাল হয়ে যেতাম যেভাবে তোমরা হালাল হলে।’’ অর্থাৎ- আমি তোমাদেরকে যে কাজের নির্দেশ দিয়েছি আমিও তাই করতাম যদি আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকত। হাদীসটি প্রমাণ করে কুরবানীর পশু সাথে থাকাটাই হালাল হওয়ার জন্য বাধা। অতএব কুরবানীর পশু সাথে থাকলে সে হালাল হতে পারবে না তার ইহরাম যে ধরনেরই হোক না কেন।
২৫৬০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬০
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ: قَدِمَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ لِأَرْبَعٍ مَضَيْنَ مِنْ ذِىْ الْحِجَّةِ أَوْ خَمْسٍ فَدَخَلَ عَلَىَّ وَهُوَ غَضْبَانُ فَقُلْتُ: مَنْ أَغْضَبَكَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ أَدْخَلَهُ اللّٰهُ النَّارَ. قَالَ: أَو مَا شَعَرْتِ أَنِّىْ أَمَرْتُ النَّاسَ بِأَمْرٍ فَإِذَا هُمْ يَتَرَدَّدُونَ وَلَوْ أَنِّى اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا سُقْتُ الْهَدْىَ مَعِىْ حَتّٰى اَشْتَرِيَه ثُمَّ أُحِلُّ كَمَا حَلُّوْا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের চার বা পাঁচ তারিখে আমার কাছে রাগান্বিত অবস্থায় আসলেন। এ সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লার রসূল! কে আপনাকে রাগান্বিত করলো? আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি জান না, আমি (কিছু) লোকদেরকে একটা বিষয়ে আদেশ করেছি? আর তারা এ ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করছে। যদি আমি আমার ব্যাপারে প্রথমে বুঝতে পারতাম যা পরে বুঝেছি, তাহলে কক্ষনো আমি কুরবানীর পশু সাথে করে নিয়ে আসতাম না; বরং পরে তা কিনে নিতাম। অতঃপর আমিও তাদের ন্যায় হালাল হয়ে যেতাম। (মুসলিম)[১]
(فَدَخَلَ عَلَىَّ وَهُوَ غَضْبَانُ) ‘‘তিনি রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন।’’ এ রাগের কারণ ছিল হজ্জের ইহরামকে ‘উমরাতে রূপান্তর করতে সাহাবীগণের বিলম্বের কারণে এবং তার নির্দেশ পালনে সংশয়ের মধ্যে নিপতিত হওয়ার জন্যে।
(فَإِذَا هُمْ يَتَرَدَّدُونَ) ‘‘আর তারা সংশয়ে নিপতিত হয়।’’ অর্থাৎ- আদেশ পালন করে আনুগত্য করতে তারা সংশয় করে অথবা তারা মনে করলো এমন করলে তা তাদের হজ্জের জন্য ক্ষতিকর হবে।
২৫৬১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬১
عَنْ نَافِعٍ قَالَ: إِنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْدَمُ مَكَّةَ إِلَّا بَاتَ بِذِىْ طُوًى حَتّٰى يُصْبِحَ وَيَغْتَسِلَ وَيُصَلِّىَ فَيَدْخُلَ مَكَّةَ نَهَارًا وَإِذَا نَفَرَ مِنْهَا مَرَّ بِذِىْ طُوًى وَبَاتَ بِهَا حَتّٰى يُصْبِحَ وَيَذْكُرُ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ يَفْعَلُ ذٰلِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
নাফি' (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখনই মাক্কায় আসতেন ‘যী তুওয়া’ নামক স্থানে সকাল না হওয়া পর্যন্ত রাত যাপন করতেন। এরপর তিনি গোসল করতেন এবং (নফল) সালাত আদায় করতেন। তারপর দিনের বেলায় মাক্কায় প্রবেশ করতেন যখন তিনি মক্কা হতে প্রত্যাবর্তন করতেন আর তখন ‘যী তুওয়া’র পথেই ফিরতেন এবং সেখানে রাত কাটাতেন যতক্ষণ না সকাল হতো এবং তিনি আরো বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ তা মক্কার নিকটবর্তী অতি পরিচিত একটি স্থানের নাম। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ বর্তমানে ঐ স্থানটি ‘‘বি’রি যা-হির’’ (বাহির কূপ) নামে পরিচিত।
(حَتّٰى يُصْبِحَ) ‘‘সকাল পর্যন্ত’’। অর্থাৎ- তিনি ‘যী তুওয়া’ নামক স্থানে অবতরণ করে বিশ্রাম নেয়া এবং গোসল করে পরিষ্কার হওয়ার নিমিত্তে রাত যাপন করতেন। অতঃপর ভোর হলে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতেন।
ইমাম নাবাবী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মাক্কায় প্রবেশ করার জন্য গোসল করা বিধিসম্মত। আর ‘যী তুওয়া’ দিয়ে আগমনকারীর জন্য ঐ স্থানে গোসল করা মুস্তাহাব।
২৫৬২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬২
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ النَّبِىَّ ﷺ لَمَّا جَاءَ إِلٰى مَكَّةَ دَخَلَهَا مِنْ أَعْلَاهَا وَخَرَجَ مِنْ أَسْفَلِهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মাক্কায় আসতেন, উঁচু দিক হতে প্রবেশ করতেন এবং নিচু দিক দিয়ে বের হতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
মাক্কায় আগমনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই কি সানিয়্যাতু ক্বযা দিয়ে প্রবেশ করা সুন্নাত? যদিও তার প্রবেশের পথ ভিন্ন হয়। এ ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরামের মতানৈক্য রয়েছে।
আবূ বাকর সায়দালানী ও শাফি‘ঈ মাযহাবের কিছু ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত এবং সে অভিমতের উপর ইমাম রাফি‘ঈও নির্ভর করেছেন। তারা বলেন, যে ব্যক্তির মাক্কায় প্রবেশ পথ সানিয়্যাতু কাদা এর দিক দিয়ে হবে তার জন্য সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব। কিন্তু যার রাস্তা এই দিক দিয়ে নয়, তার নিজের পথ পরিবর্তন করে সানিয়্যাতু ক্বযা দিয়ে প্রবেশ করা তার জন্য মুস্তাহাব নয়।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে মাক্কায় প্রবেশ করা সুন্নাত। চাই তার পথ এ দিক দিয়ে হোক অথবা না হোক। তিনি আরো বলেন, আমাদের মুহাক্কিক আসহাবদের মতে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, প্রত্যেক মুহরিমের জন্যই সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে মাক্কায় প্রবেশ করা মুস্তাহাব।
আবূ মুহাম্মাদ এর কারণ বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিকে ছিল না। তার পরেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুরে এসে মাক্কায় সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করেছেন।
ইবনু জাসির (রহঃ) বলেন, আমি আমাদের হাম্বালী মাযহাবের আসহাবদের আলোচনায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন মতামত পাইনি। কিন্তু তাদের বাহ্যিক কথা থেকে বুঝা যায় যে, মাক্কায় প্রবেশকারী ব্যক্তির জন্য সাধারণভাবে সানিয়্যাতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়েই প্রবেশ করা সুন্নাত। হ্যাঁ- যদি তার পথ সানিয়্যাতুল ‘উল্ইয়াহ্ থেকে ভিন্ন হয় তখন সে পথ থেকে ফিরে এসে সানিয়্যাতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করাটা তার জন্য মুস্তাহাব নয়।
২৫৬৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৩
وَعَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: قَدْ حَجَّ النَّبِىُّ ﷺ فَأَخْبَرَتْنِىْ عَائِشَةُ أَنَّ أَوَّلَ شَىْءٍ بَدَأَ بِه حِينَ قَدِمَ مَكَّةَ أَنَّه تَوَضَّأَ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةً ثُمَّ حجَّ أَبُوْ بَكْرٍ فَكَانَ أوَّلَ شَىْءٍ بِدَأَ بِه الطوَّافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةً ثُمَّ عُمَرُ ثُمَّ عُثْمَانُ مِثْلُ ذٰلِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ করলেন, (আমার খালা) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাক্কায় প্রবেশ করে প্রথমে উযূ করলেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন। তবে তা ‘উমরায় পরিণত করলেন না (অর্থাৎ- ইহরাম খুললেন না)। তারপর আবূ বাকর (রাঃ) হজ্জ করেছেন, তিনিও প্রথমে যে কাজ করেছেন তা হলো বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তিনি এ তাওয়াফকে ‘উমরায় পরিণত করেননি। অতঃপর ‘উমার, তারপর ‘উসমান (রাঃ) এই একইভাবে হজ্জ সম্পাদন করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, হাদী চালিয়ে হজ্জের ইহরাম ধারণকারী ব্যক্তি শুধু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেই হালাল হয়ে যাবে। আর যদি সে হজ্জের ইহরাম বাকী রাখতে চায় তাহলে তার উকুফে ‘আরাফার পর এসে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে হবে। এর বিপরীতে জমহূর ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, না- বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেই তার হালাল হতে হবে না। বরং হজ্জের যাবতীয় কাজ শেষ করে তারপর হাদী না চালানো ব্যক্তি হালাল হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর দলীল হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবায়ে কিরামদের মাঝে যারা হাদী আনেননি তাদেরকে তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ করেছিলেন।
জমহূর ‘উলামায়ে কিরাম তার জবাবে বলেন, এই হুকুম সহাবায়ে কিরামদের জন্য খাস ছিল। সকল ‘উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে, যে শুধু হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারে, কোন সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) উল্লেখিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। কিন্তু তিনি হজ্জ থেকে হালাল হননি। আর সেটা ‘উমরাও ছিল না।
তাওয়াফের পূর্বে উযূ করাঃ
সকল ‘উলামায়ে কিরামের নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত। কতক কুফাবাসী ‘উলামায়ে কিরামের নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত নয়। ইমাম আবূ হানীফা-এর নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত নয়। তবে তাঁর সাথীবর্গ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত তাঁর মতেও তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত। যেমন ইবনু হুমাম শারহে হিদায়ার মধ্যে বলেছেন, হায়িযা মহিলার জন্য তাওয়াফ হারাম হওয়ার দু’টি কারণ। (ক) তার মাসজিদে প্রবেশের কারণে। (খ) ওয়াজিব ছাড়ার কারণে আর সেটা হচ্ছে পবিত্রতা।
* বর্ণিত হাদীস তাওয়াফে কুদূম শারী‘আতসিদ্ধ হওয়ার উপর দালালাত করে।
* হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় মাসজিদুল হারামে আগমনকারী ব্যক্তির জন্য তাওয়াফের মাধ্যমে কাজ শুরু করা মুস্তাহাব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
১. ‘উরওয়াহ্ (রহঃ)-এর এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, সহাবায়ে কিরাম ও তাদের পরবর্তী তাবি‘ঈনগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের সাথে সাথে খুলাফায়ে রাশিদীনদের ‘আমালকেও শারী‘আতের জন্য দলীল মনে করতেন। সুতরাং শুধু হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ না থেকে হাদীসের ব্যাখ্যার জন্য সহাবায়ে কিরামের ‘আমালকেও আমাদের সামনে রাখতে হবে।
২. এ হাদীস দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত-এর মাযহাব অনুসারে খুলায়ায়ে রাশিদ্বীনের মধ্যে মর্যাদার যে স্থান সাব্যস্ত করা হয় তা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আবূ বাকর (রাঃ), তারপর ‘উমার (রাঃ), তারপর ‘উসমান (রাঃ) এবং তারপর ‘আলী (রাঃ) এ বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।
২৫৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৪
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ إِذَا طَافَ فِى الْحَجِّ أَوِ الْعُمْرَةِ مَا يَقْدَمُ سَعٰى ثَلَاثَةَ أَطْوَافٍ وَمَشٰى أَرْبَعَةً ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ يَطُوْفُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ বা ‘উমরা করতে এসে প্রথমে যখন তাওয়াফ করতেন তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করতেন, আর চার পাক স্বাভাবিকভাবে চলতেন। তারপর (মাকামে ইবরাহীমের কাছে) দু’ রাক্‘আত (তাওয়াফের) সালাত আদায় করতেন এবং সাফা মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২. শাফি‘ঈ মাযহাবে কিছু ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, হজ্জ এবং ‘উমরার শুধু একটি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা মুস্তাহাব, হজ্জ ‘উমরা ব্যতীত সাধারণ তাওয়াফে রমল নেই।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই যে, হজ্জ এবং ‘উমরার শুধু একটি তাওয়াফে রমল করা শারী‘আত সম্মত। এ মাসআলায় ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর দু’টি অভিমত রয়েছে। প্রসিদ্ধ অভিমতটি হচ্ছে, যে তাওয়াফের পরে সা‘ঈ রয়েছে সে তাওয়াফে রমল করবে। আর পরে সা‘ঈ রয়েছে এমন তাওয়াফ হচ্ছে তাওয়াফে কুদূম ও তাওয়াফে ইফাদাহ্। বিদায়ী তাওয়াফের পরে সা‘ঈ নেই, সুতরাং সে তাওয়াফে রমলও হবেনা।
দ্বিতীয় অভিমত হচ্ছে, রমল শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদূমেই শারী‘আতসম্মত অন্য তাওয়াকে নয়। চাই তাওয়াফকারী তাওয়াফের পরে সা‘ঈর ইচ্ছা করুক বা না করুক। আর ‘উমরার তাওয়াফে রমল শারী‘আতসিদ্ধ। কেননা ‘উমরার মাঝে তাওয়াফ একটিই হয়ে থাকে।
৩. বর্ণিত হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, রমল শুধু প্রথম তিন তাওয়াফে করবে বাকীগুলোতে করবে না। কেউ যদি প্রথম তিন তাওয়াফে রমল ছেড়ে দেয় তাহলে বাকী তাওয়াফগুলোতে কাযা করাও লাগবে না এবং তাঁর উপর দমও (কুরবানী) আবশ্যক হবে না।
৪. তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করার বিধান শুধু পুরুষদের জন্য। মহিলাগণ রমল করবে না।
৫. বর্ণিত হাদীস দ্বারা তাওয়াফের পরে মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সলাতের বিধানটি প্রমাণিত হয়। হানাফীদের নিকট এই দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করা ওয়াজিব তাদের দলীল হচ্ছে, (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى) ।
শাফি‘ঈদের নিকট তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাত।
৬. বর্ণিত হাদীস দ্বারা হজ্জের কার্যক্রমের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। তাওয়াফের পরে সা‘ঈ করতে হবে। কেউ যদি তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করে নেয় তাহলে তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে না।
তাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমল করেছিলেন মুশরিকদের সামনে মুসলিমদের বীরত্ব প্রকাশের জন্য। কেননা ‘উমরাতুল কাযার সময় মুশরিকরা মুসলিমদের দেখে বলেছিল, ইয়াস্রিবের জ্বর মুসলিমদের কাবু করে ফেলেছে। তাদের এ কথার প্রতিবাদস্বরূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের তাওয়াফের প্রথম তিনি চক্করে রমলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ের পর রমলের এই কারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রমলের হুকুম রয়ে গিয়েছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময়ও রমল করেছিলেন। রমলের হুকুমের কারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পূর্বের মতো ঠিক থাকার কারণ বর্ণনায় ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, রমলের হুকুম পূর্বের অবস্থায় রাখা হযেছে যাতে করে মুসলিমগণ তাদের পূর্বের অবস্থা স্মরণ রাখতে পারে। তাদের উপর আল্লাহ রববুল ‘আলামীনের অনুগ্রহসমূহ স্মরণ রাখতে পারে যে, তারা এক সময় এমন দুর্বল ছিল মুশরিকরা তাদেরকে হাসি-ঠাট্টা করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাক্তিশালী করেছেন স্বল্পসংখ্যা বৃহৎ সংখ্যায় পরিণত করেছেন। এ সকল নি‘আমাত স্মরণ করানোর জন্যই রমলের হুকুম এখনো বাকি রয়েছে।
২৫৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৫
وَعَنْهُ قَالَ: رَمَلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ مِنَ الْحَجَرِ ثَلَاثًا وَمَشٰى أَرْبَعًا وَكَانَ يَسْعٰى بِبَطْنِ الْمَسِيلِ إِذَا طَافَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন পাক রমল (দ্রুতবেগে) তাওয়াফ করেছেন এবং চার পাক স্বাভাবিকভাবে করেছেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সাফা মারওয়ার মাঝেও সা‘ঈ করতেন তখন বাত্বনিল মাসীলে মাঝখানে (নিচু জায়গায়) দ্রুতবেগে চলতেন। (মুসলিম)[১]
বর্ণিত হাদীসটি সাফা এবং মারওয়ার মাঝে বাত্বনিল মাসীল তথা নিচু জায়গা, বর্তমানে সবুজ বাতি চিহ্নিত জায়গা দ্রুতবেগে চলা সুন্নাত হওয়ার উপর দলীল।
হাজীদের ওপর সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা আবশ্যক করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মাতা হাজিরা (আঃ)-এর স্মৃতিকে ধরে রেখেছেন। ইব্রাহীম (আঃ) যখন আল্লাহর নির্দেশে শিশু পুত্র ইসমা‘ঈল ও স্ত্রী হাজিরাকে মক্কার বিরাণ মরুভূমিতে রেখে গেলেন। তার কিছু দিন পর খাদ্য পানীয় সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ায় শিশু পুত্র ইসমা‘ঈল পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছিলেন। তখন মা হাজিরা পানির খোঁজে সাফা থেকে মারওয়া আবার মারওয়া থেকে সাফা পেরেশান হয়ে দৌড়াচ্ছিলেন। এভাবে এক দুই বার নয় সাত বার তিনি এ পাহাড় থেকে ও পাহাড় গিয়েছেন। সপ্তমবার পুত্র ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর নিকট এসে দেখলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর পায়ের নিকট পানির ফোয়ারা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে এক অবলা নারীর এ মহান কুরবানী অনেক পছন্দনীয়। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ ঘটনা থেকে উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য হাজীদের সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করাকে আবশ্যক করলেন। সাথে সাথে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মানুষের নিকট হাজিরা (আঃ)-এর কুরবানীর এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বাকী থাকল।
২৫৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৬
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ لَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ أَتَى الْحَجَرَ فَاسْتَلَمَه ثُمَّ مَشٰى عَلٰى يَمِينِه فَرَمَلَ ثَلَاثًا وَمَشٰى أَرْبَعًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাক্কায় এলেন, হাজারে আসওয়াদের নিকট গেলেন এবং একে স্পর্শ করলেন। তারপর এর ডানদিকে ঘুরে তিন চক্কর রমল (কা‘বাকে বামে রেখে) করলেন আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন। (মুসলিম)[১]
আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, তাওয়াফকারী হাজারে আসওয়াদ বাম পাশে রেখে তাওয়াফকারীর ডান দিকে বায়তুল্লাহর দরজার দিকে অগ্রসর হবে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় হাজারে আসওয়াদ থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হবে। সকল ‘উলামায়ে কিরাম তাওয়াফের জন্য বর্ণিত অবস্থাকে শর্ত সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং বর্ণিত অবস্থা ব্যতীত অন্য কোন ভাবে তাওয়াফ করলে তা শুদ্ধ হবে না।
হাজারে আসওয়াদ ছোট একটি পাথর। কোন এক দুর্ঘটনায় তা পাঁচ টুকরো হয়ে যায়। এ টুকরাগুলো পরে মূল্যবান ধাতুর সাহায্যে জোড়া দিয়ে একত্র করা হয়েছে। একটি রৌপ্যের পাত্রে বায়তুল্লাহর পূর্ব দক্ষিণ কোণে তা স্থাপন করা হয়েছে। এ টুকরাগুলোর কোন একটিতে চুমু দেয়া বা স্পর্শ করা সুন্নাত। টুকরাগুলো ব্যতীত উক্ত ধাতুতে বা রৌপ্য পাত্রে চুমু দিবে না এবং স্পর্শ করবে না।
২৫৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৭
وَعَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَرَبِىٍّ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ ابْنَ عُمَرَ عَنِ اسْتِلَامِ الْحَجَرِ فَقَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَسْتَلِمُه وَيُقَبِّلُه. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
যুবায়র ইবনু ‘আরাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার এক ব্যক্তি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কে হাজারে আসওয়াদে ‘চুমু দেয়া’ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলো। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জবাবে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা স্পর্শ করতে ও চুমু দিতে দেখেছি। (বুখারী)[১]
২৫৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৮
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: لَمْ أَرَ النَّبِىَّ ﷺ يَسْتَلِمُ مِنَ الْبَيْتِ إِلَّا الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيِّيْنِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বায়তু্ল্লাহর ইয়ামানী দিকের দুই কোণ ছাড়া অন্য কোন কোণকে স্পর্শ করতে দেখিনি। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করার কারণ হলো- এর মধ্যে হাজারে আসওয়াদ অবস্থিত রয়েছে। কতক উলামায়ে কিরামের বক্তব্য হলো, কেবলমাত্র রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকনে স্পর্শ করা সুন্নাত নয়। আর রুকন স্পর্শ দ্বারা হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করাকে বুঝানো হয়েছে।
২৫৬৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৬৯
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: طَافَ النَّبِىَّ ﷺ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ عَلٰى بَعِيْرٍ يَسْتَلِمُ الرُّكْنَ بِمِحْجَنٍ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে উটের উপর থেকে তাওয়াফ করেছেন, মাথা বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৫৭০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭০
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ طَافَ بِالْبَيْتِ عَلٰى بَعِيرٍ كُلَّمَا أَتٰى عَلَى الرُّكْنِ أَشَارَ إِلَيْهِ بِشَىْءٍ فِىْ يَدِه وَكَبَّرَ. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
[ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর সওয়ার অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। হাজারে আসওয়াদের কাছে পৌঁছেই নিজের হাতের কোন জিনিস (লাঠি) দিয়ে ইশারা করতেন এবং (আল্লা-হু আকবার) তাকবীর দিয়েছেন। (বুখারী)[১]
বর্ণিত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ করতে না পারলে ইশারা করবে। কিন্তু রুকনে ইয়ামানীর হুকুম এর বিপরীত। কেননা রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করতে না পারলে তার দিকে ইশারা করার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। আর এটাই ‘উলামায়ে কিরামদের সঠিক অভিমত।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহী অবস্থায় তাওয়াফ করার বিভিন্ন কারণ ছিলঃ
১. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাস্থ্য তখন খুব খারাপ ছিল। এক বর্ণনায় এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মাক্কায় পৌঁছলেন তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপন বাহনে থেকেই তাওয়াফ করেছেন। (আবূ দাঊদ)
২. অথবা কারণ এই ছিল যে, তখন ভিড় ছিল অত্যধিক অথচ সব লোকই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জের কার্যাবলী দেখা ও শেখার জন্য আগ্রহী ছিল। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন। যাতে সকল লোক অথবা বেশী সংখ্যক লোক স্বচক্ষে দেখে শিখতে পারে। এ ব্যাখ্যার সমর্থনে জাবির (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে হজ্জের কার্যাবলী দেখানোর জন্য এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করার জন্য সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন।
২৫৭১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭১
وَعَنْ أَبِىْ الطُّفَيْلِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَيَسْتَلِمُ الرُّكْنَ بِمِحْجَنٍ مَعَه وَيُقَبِّلُ الْمِحْجَنَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার সময় তাঁর হাতের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে এবং বাঁকা লাঠিকে চুমু দিতে দেখেছি। (মুসলিম)[১]
হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে হাতে চুম্বন করা যাবে না, বরং তাতে চুম্বন করতে হবে অথবা তাতে হাত অথবা কোন বস্ত্ত স্পর্শ করিয়ে সে বস্ত্ততে চুম্বন করতে হবে। যদি সহজ ও শান্তভাবে অপরকে কষ্ট দেয়া ব্যতীত হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে চুম্বন করা না যায়, তাহলে পাথরটিকে সামনে রেখে সেদিকে ফিরে দাঁড়াবে ও হাত পাথরের দিক করে বিসমিল্লাহ, তাকবীর বলবে।
২৫৭২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭২
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِىِّ ﷺ لَا نَذْكُرُ إِلَّا الْحَجَّ فَلَمَّا كُنَّا بِسَرِفَ طَمِثْتُ فَدَخَلَ النَّبِىُّ ﷺ وَأَنَا أَبْكِىْ فَقَالَ: «لَعَلَّكِ نَفِسْتِ؟» قُلْتُ: نَعَمْ قَالَ: «فَإِنَّ ذٰلِكِ شَىْءٌ كَتَبَهُ اللّٰهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ فَافْعَلِىْ مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لَا تَطُوفِىْ بِالْبَيْتِ حَتّٰى تَطْهُرِىْ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (হজের উদ্দেশে) রওনা হলাম। তখন আমরা হজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর (‘উমরার) তালবিয়াহ্ পড়তাম না। আমরা ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছলে আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলো। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি হজ্জ করতে পারবো না বিধায় কাঁদছিলাম। (কাঁদতে দেখে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মনে হয় তোমার ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা এমন বিষয় যা আল্লাহ তা‘আলা আদাম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তাই হাজীগণ যা করে তুমিও তা করতে থাকো, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ থেকে বিরত থাকো। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
বর্ণিত হাদীসটি থেকে বুঝা যায় যে, হায়িয ও নিফাসগ্রস্থ মহিলা এবং জুনুবী ব্যক্তি হজ্জের তাওয়াফ ব্যতীত যাবতীয় সব কাজ করতে পারবে। হ্যাঁ- তাওয়াফের অনুগামী হিসেবে তাওয়াফের দু’ রাক্‘আত সালাত ও সা‘ঈও করতে পারবে না।
২৫৭৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৩
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: بَعَثَنِىْ أَبُو بَكْرٍ فِى الْحَجَّةِ الَّتِىْ أَمَّرَهُ النَّبِىُّ ﷺ عَلَيْهَا قَبْلَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ يَوْمَ النَّحْرِ فِىْ رَهْطٍ أَمَرَه أَنْ يُؤَذِّنَ فِى النَّاسِ: أَلَا لَا يَحُجُّ بَعْدَ الْعَامِ مُشْرِكٌ وَلَا يَطُوْفَنَّ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের (এক বছর) আগে যে হজে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর (রাঃ)-কে হজ্জের আমির বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে হজে আবূ বাকর কুরবানীর দিনে আরো কিছু লোকসহ আমাকে লোকদের মাঝে ঘোষণা দিতে আদেশ করে পাঠালেন- সাবধান! এ বছরের পর আর কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হজ্জ করতে পারবে না এবং কেউ কক্ষনো উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, কোন কাফির মাসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও তারা হজ্জের নিয়্যাত করে। এখানে হারাম দ্বারা শুধু বায়তুল্লাহকে বুঝানো হয়নি বরং সমস্ত হারাম এলাকা উদ্দেশ্য। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ যদি কোন কাফির গুরুত্বপূর্ণ কোন চিঠি বা কোন বিষয় নিয়ে আসে যা তার সাথে আছে তবুও সে হারাম এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। বরং যার কাছে সে এসেছে সে হারাম এলাকা থেকে বের হয়ে তার কাছে তথা কাফিরের কাছে যাবে এবং প্রয়োজন মিটাবে। এমনভাবে কোন জিম্মিও হারামে অবস্থান করতে পারবে না। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে ‘আরব উপত্যকা থেকে বের করে দাও।
এ হাদীসের অপর একটি অংশে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি এখন থেকে আর কক্ষনো উলঙ্গ হয়ে কাবা তাওয়াফ করতে পারবে না। শুধু এ দিনটিতেই নয় বরং কোন দিনই কেউ উলঙ্গ হতে পারবে না। এ কথার সমর্থনে কুরআন মাজীদে এসেছে- ‘‘হে আদাম সন্তানেরা! তোমরা সলাতের সময় তোমাদের সাজ-সজ্জা গ্রহণ করো’’- (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩১)।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এ আয়াতটি জাহিলী যুগের উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করার নিয়মকে প্রতিহত করতে নাযিল করা হয়েছে। কেননা জাহিলী যুগে তারা উলঙ্গ হয়ে কাবা প্রদক্ষেণ করত।
২৫৭৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৪
عَنِ الْمُهَاجِرِ الْمَكِّىِّ قَالَ: سُئِلَ جَابِرٌ عَنِ الرَّجُلِ يَرَى الْبَيْتَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فَقَالَ قَدْ حَجَجْنَا مَعَ النَّبِىِّ ﷺ فَلَمْ نَكُنْ نَفْعَلُه. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ
মুহাজির আল মাক্কী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার জাবির -কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহকে দেখে (দু‘আ পাঠের সময়) নিজের দুই হাত উঠাবে। জবাবে জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ করেছি, কিন্তু কক্ষনো আমরা এরূপ করিনি। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[১]
ইমাম আবূ হানীফা, শাফি‘ঈ, আহমাদ, সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) প্রমুখ ইমামদের নিকট বায়তুল্লাহ নজরে পরার সময় উভয় হাত উত্তোলন করে দু‘আ পড়া সুন্নাত। তাদের দলীল হলো ইবনু জুরায়জ-এর একটি হাদীস এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত এই হাদীসে রয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত স্থানে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন- সালাত আরম্ভকালে, বায়তুল্লাহর নিকট, বায়তুল্লাহ দর্শনে, সাফা-মারওয়ায়, ‘আরাফাতে, মুযদালিফায় এবং দু’ জামারায়।
আর ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দু‘আ পাঠের সময় হাত উত্তোলন করা বৈধ নয়। তিনি উপরোক্ত মুহাজিরে মাক্কী বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন। বর্ণিত হাদীসটি ইমাম তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান।
২৫৭৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৫
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: أَقْبَلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فَدَخَلَ مَكَّةَ فَأَقْبَلَ إِلَى الْحَجَرِ فَاسْتَلَمَه ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ أَتَى الصَّفَا فَعَلَاهُ حَتّٰى يَنْظُرَ إِلَى الْبَيْتِ فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَجَعَلَ يَذْكُرُ اللّٰهَ مَا شَاءَ وَيَدْعُوْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাহ্ হতে (হজ্জ/হজ ও ‘উমরা পালনের জন্য) মাক্কায় প্রবেশ করে হাজারে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হলেন, একে চুমু খেলেন। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন, এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে এলেন এবং এর উপর উঠলেন যাতে বায়তুল্লাহ দেখতে পান। তারপর দু’ হাত উঠালেন এবং উদারমনে আল্লাহর যিকির ও দু‘আ করতে লাগলেন। (আবূ দাঊদ)[১]
বর্ণিত হাদীসটি এর উপরও দলীল যে, বায়তুল্লাহ দেখার পর নির্ধারিত কোন দু‘আ পাঠ করার বিধান নেই। বরং যে কোন দু‘আই করতে পারে। তবে দু‘আয়ে মাসুরা বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দু‘আ পড়া উত্তম।
২৫৭৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৬
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: «الطَّوَافُ حَوْلَ الْبَيْتِ مِثْلُ الصَّلَاةِ إِلَّا أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُونَ فِيهِ فَمَنْ تَكَلَّمَ فِيهِ فَلَا يَتَكَلَّمَنَّ إِلَّا بِخَيْرٍ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَالنَّسَائِىُّ وَالدَّارِمِىُّ وَذَكَرَ التِّرْمِذِىُّ جَمَاعَةً وَقَفُوهُ عَلَى ابْنِ عباسٍ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা সলাতেরই মতো, তবে এতে তোমরা কথা বলতে পারো। তাই তাওয়াফের সময় ভালো কথা ব্যতীত আর কিছু বলবে না। (তিরমিযী, নাসায়ী ও দারিমী)[১]
‘বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা সলাতের মতো’ এর অর্থ এই নয় যে, সলাতে যেমন কিরাআত, রুকূ‘, সাজদাহ্ ইত্যাদি আছে তেমনিভাবে তাওয়াফের মধ্যেও এগুলো আছে। তবে শরীর পাক, কাপড় পাক ও সতর ঢাকা যেমনিভাবে সলাতের জন্য অপরিহার্য, তেমনিভাবে তাওয়াফের জন্যও অপরিহার্য। এদিক দিয়ে তাওয়াফ সলাতের সাদৃশ্য। এ হাদীসের ভিত্তিতে ইমামগণ বলেছেন পবিত্রতা তাওয়াফের জন্য শর্ত। কিন্তু হানাফীদের নিকট শর্ত নয় বরং উত্তম।
আলোচ্য হাদীসে তাওয়াফের মধ্যে উত্তম কথা বলা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল। উত্তম কথা হলো যিকির, তিলাওয়াত, দীনী ‘ইলম শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে তার এ সকল কাজে যেন অপরের কষ্ট না হয়। যদি কারো তাওয়াফ চলাকালীন সময় হাদাস (অপবিত্র) হয়ে যায়, তাহলে নতুন করে উযূ করে পুনরায় তাওয়াফ শুরু করতে হবে।
২৫৭৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৭
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «نَزَلَ الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِىْ اٰدَمَ». رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
[ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাজারে আসাওয়াদ যখন জান্নাত হতে নাযিল হয়, তখন তা দুধের চেয়েও বেশি সাদা ছিল। অতঃপর আদাম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দেয়। [আহমাদ ও তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।][১]
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন হাজারে আসওয়াদ পৃথিবীতে আসে তখন সেটা দুধের চেয়ে সাদা ছিল। অতঃপর আদাম সন্তানদের পাপের দ্বারা সেটা কালো হয়ে গেল। অর্থাৎ- বানী আদামের যে সকল লোক হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে তাদের গুনাহের দ্বারা এ পাথর সাদা থেকে কালো হয়েছে। এ কথাগুলো সুনানে আত্ তিরমিযী’র বর্ণনায় এসেছে। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনা হলো- হাজারে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে। আর সেটা ছিল বরফের চেয়েও সাদা। অতঃপর মুশরিকদের পাপের দরুন সেটা কালো রং ধারণ করেছে। ত্ববারানী’র এক বর্ণনায় এসেছে- হাজারে আসওয়াদ জান্নাতের পাথরসমূহের মধ্যে একটি পাথর। এটা ছাড়া দুনিয়াতে জান্নাতের আর কিছুই নেই। আর এটা পানির মতো সাদা ছিল।
কাযী বায়যাবী (রহঃ) বলেন-এ হাদীস দ্বারা হাজারে আসওয়াদের ফাযীলাতের কথা বুঝানো হয়েছে।
২৫৭৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৮
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِى الْحَجَرِ: وَاللّٰهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللّٰهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَه عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِه يَشْهَدُ عَلٰى مَنِ اسْتَلَمَه بِحَقٍّ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدَّارِمِىُّ
[ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর কসম! ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ এটিকে উঠাবেন, তখন এর দু’টি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখতে পাবে। তার একটি জিহবা থাকবে ও এই জিহবা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যে তাকে ঈমানের সাথে চুমু দিয়েছে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে । (তিরমিযী, ইনু মাজাহ ও দারিমী)[১]
(يَشْهَدُ عَلٰى مَنِ اسْتَلَمَه بِحَقٍّ) স্পর্শকারী শুধু স্পর্শ করবে তার নিজের জন্য এমনটি যেন না হয়, বরং আল্লাহর নির্দেশ ও সুন্নাতের অনুসরণ যেন ‘আমাল করা উদ্দেশ্য হয়। ইমাম ‘ইরাকী বলেনঃ এখানে عَلٰى শব্দটি لام এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে স্পর্শ করার সাক্ষ্য হিসেবে, যাতে সংরক্ষণ করা বুঝায়।
(بِحَقٍّ) প্রকৃতপক্ষেই তা হবে ঈমান ও সাওয়াবের আশায়। এ হাদীসকে বাহ্যিক অর্থের উপরই বুঝানো হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বস্ত্তর ক্ষেত্রে বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম যেমনটি তিনি মানুষের ক্ষেত্রে করবেন। আর যাদের অন্তরে বক্রতা আছে তারা এর অপব্যাখ্যা করে। তারা বলে, مستلم (স্পর্শকারী) ব্যক্তির প্রতিদান দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
২৫৭৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৭৯
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: «إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللّٰهُ نُوْرَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُوْرَهُمَا لَأَضَاءَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম জান্নাতের ইয়াকূতসমূহের মধ্যে দু’টি ইয়াকূত। আল্লাহ এদের নূর (আলো) দূর করে দিয়েছেন। যদিও এ দু’টির নূর (আলো) আল্লাহ তা‘আলা দূর করে না দিতেন। তবে এরা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যে যা আছে তাকে আলোকময় করে দিতো। (তিরমিযী)[১]
২৫৮০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮০
وَعَن عُبيدِ بنِ عُمَيرٍ: أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُزَاحِمُ عَلَى الرُّكْنَيْنِ زِحَامًا مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ يُزَاحِمُ عَلَيْهِ قَالَ: إِنْ أَفْعَلْ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا وَسَمِعْتُه يَقُولُ: مَنْ طَافَ بِهٰذَا الْبَيْتِ أُسْبُوعًا فَأَحْصَاهُ كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ. وَسَمِعْتُه يَقُولُ: لَا يَضَعُ قَدَمًا وَلَا يَرْفَعُ أُخْرٰى إِلَّا حطَّ اللّٰهُ عَنْهُ بِهَا خَطِيْئَةً وَكَتَبَ لَه بِهَا حَسَنَةً. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
‘উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) দু’ রুকনের (হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর) কাছে যেভাবে ভীড় করতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের আর কাউকে এমনভাবে (প্রতিযোগিতামূলকভাবে) ভীড় করতে দেখিনি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি যদি এরূপ করি (তাতে দোষের কোন বিষয় নয়), কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এদের স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারাহ্। আমি তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) আরো বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চারদিকে সাতবার তাওয়াফ করবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবার সমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে (ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে) বলতে শুনেছি, কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা‘আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি সাওয়াব নির্ধারণ করেন। (তিরমিযী)[১]
শায়খ ‘আবদুল হাক্ব মুহাম্মাদ দেহলবী (রহঃ) লুম্‘আত নামক কিতাবে বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কথা اِنْ اَفْعَلُ যদি আমি করি এর ব্যাখ্যা হলো যদি আমি হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করার জন্য ভীড় করি তোমরা আমাকে নিষেধ করো না। কেননা আমি এ দু’টি স্পর্শ করার ব্যাপারে যে ফাযীলাত শুনেছি তার উপর আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারি না।
বায়তুল্লাহকে সাতবার তাওয়াফ করাকে গোলাম আজাদের সমতুল্য ধরা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরাম সাতবার প্রদক্ষিণ করার অর্থ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। আর কিছু ‘উলামায়ে কিরাম সাতদিন তাওয়াফ করার অর্থ নিয়েছেন। কিন্তু প্রথমটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। কেননা অন্যান্য হাদীস দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে বর্ণিত সাওয়াব সে পাবে যদি তাওয়াফের ওয়াজিব, সুন্নাত এবং শর্তসমূহ সবকিছু ঠিকভাবে আদায় করে।
২৫৮১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮১
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ مَا بَيْنَ الرُّكْنَيْنِ: ﴿رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
আব্দুল্লাহ ইবনুস্ সায়িব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’ রুকনের (হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) মধ্যবর্তী স্থানে এ দু‘আ পড়তে শুনেছি- ‘‘রব্বানা- আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা- ‘আযা-বান্না-র’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর।)। (আবূ দাঊদ)[১]
২৫৮২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮২
وَعَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ: أَخْبَرَتْنِىْ بِنْتُ أَبِىْ تُجْرَاةَ قَالَتْ: دَخَلْتُ مَعَ نِسْوَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ دَارَ اٰلِ أَبِىْ حُسَيْنٍ نَنْظُرُ إِلٰى رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ وَهُوَ يَسْعٰى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَرَأَيْتُه يَسْعٰى وَإِنَّ مِئْزَرَه لَيَدُوْرُ مِنْ شِدَّةِ السَّعْىِ وَسَمِعْتُه يَقُولُ: اِسْعَوْا فَإِنَّ اللّٰهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْىَ. رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ وَرَوَاهُ أَحْمَدُ مَعَ اِخْتِلَافٍ
সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ তুজরাহ্-এর মেয়ে আমাকে বলেছেন, আমি কুরায়শ গোত্রের কিছু মহিলার সাথে আবূ হুসায়ন পরিবারের একটি ঘরে প্রবেশ করলাম যাতে আমরা সাফা মারওয়ার সা‘ঈর সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পাই। তখন আমি তাঁকে সা‘ঈ করতে দেখলাম, জোরে জোরে পা ফেলার কারণে তাঁর চাঁদর এদিকে-সেদিকে দুলছিল। আর তখন আমি তাঁকে এ কথাও বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা সা‘ঈ করো’’। কেননা সা‘ঈ করা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিপিবদ্ধ (নির্ধারণ) করেছেন। (বাগাবীর শারহুস্ সুন্নাহ এবং আহমাদ কিছু ভিন্নতার সাথে)[১]
সা‘ঈর বিধান সম্পর্কে ইমামগণের মতবিরোধঃ
হজ্জ/হজ আদায়ের ক্ষেত্রে সা‘ঈ করা কী? ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক ও আহমাদ (রহঃ) প্রমুখের মতে সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা রুকন তথা ফরয। তাদের নিকট সা‘ঈ ব্যতীত হজ্জ হবে না। তাদের কথার দলীল হলো আলোচ্য হাদীসের এই অংশ قال عليه السلام اِسْعَوْا فَإِنَّ اللّٰهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْىَ অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সা‘ঈ করো। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর সা‘ঈকে নির্ধারণ করেছেন।
ইমাম আবূ হানীফা ও সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) প্রমুখ ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, সা‘ঈ ওয়াজিব। তাদের দলীল আল্লাহ তা‘আলার মহান বাণী لَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا উল্লেখিত আয়াতে لَا جُنَاحَ বৈধতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে। তাছাড়া আরো দলীল রয়েছে।
২৫৮৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৩
وَعَنْ قُدَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَمَّارٍ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَسْعٰى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ عَلٰى بَعِيرٍ لَا ضَرْبٌ وَلَا طَرْدٌ وَلَا إِلَيْكَ. رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ
কুদামাহ্ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের পিঠে চড়ে সাফা মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেও মারতে বা হাঁকাতে দেখিনি এবং এমনকি আশেপাশে ‘সরো’ ‘সরো’ বলতেও শুনিনি। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[১]
এ প্রখ্যাত সাহাবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিদায় হজ্জের সময় সাক্ষাত করেন। কুদামাহ্ থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা খুবই সীমিত।
এ হাদীসের আলোকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, সময় ক্ষেত্রে বাহনে করে ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা যাবে। অথবা সাধারণভাবে সাফা-মারওয়ার মাঝে বাহনে চড়ে সা‘ঈ করার বৈধতা প্রদান করা হয়েছে আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে।
২৫৮৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৪
وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ طَافَ بِالْبَيْتِ مُضْطَبِعًا بِبُرْدٍ أَخْضَرَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সবুজ চাদর ইযত্বিবা হিসেবে গায়ে দিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[১]
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, (اَلْاِضْطِبَاعَ) হলো ইযার বা লুঙ্গিকে ডান বগলের নিচে প্রবেশ করানো এবং তার অপর প্রান্তকে বাম কাঁধে রাখা আর ডান কাঁধ খোলা থাকবে।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, (اَلْاِضْطِبَاعَ) ইযত্বিবা‘ হলো ইযার (লুঙ্গি) অথবা চাদর নিয়ে এটার মধ্যভাগকে ডান বগলের নিচে রাখা। আর অবশিষ্ট দুই পার্শকে বাম কাঁধের উপর বক্ষ ও পিঠের দিক হতে রাখা।
কেউ কেউ বলেন, এটা (اَلْاِضْطِبَاعَ) করা হয় সাহসিকতা প্রকাশের জন্য। যেমন তাওয়াফের সময় দুই হাত ঝুকিয়ে হাঁটা। আর সর্বপ্রথম (اَلْاِضْطِبَاعَ) করা হয় ‘উমরাতুল কাযাতে। যেন এটা দুই হাত ঝুকিয়ে হাঁটার সময় সহায়ক হয়। আর মুশরিকরা যেন তাদের শক্তি লক্ষ্য করে। অতঃপর তা সুন্নাতে পরিণত হয়। সাত চক্করেই (اَلْاِضْطِبَاعَ) করতে হয়। তাওয়াফ শেষ হলে তখন কাপড় ঠিক করে নেয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফের দুই রাক্‘আতের সময় (اَلْاِضْطِبَاعَ) করেননি। অতএব তাওয়াফ শেষ হলে দু’ রাক্‘আত সলাতে অথবা তাওয়াফ চলাকালীন সলাতে দাঁড়ালে অবশ্যই দু’ কাঁধ ঢেকে নিবে।
২৫৮৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৫
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ وَأَصْحَابَه اِعْتَمَرُوْا مِنَ الْجِعْرَانَةِ فَرَمَلُوْا بِالْبَيْتِ ثَلَاثًا وَجَعَلُوْا أَرْدِيَتَهُمْ تَحْتَ اٰبَاطِهِمْ ثُمَّ قَذَفُوْهَا عَلٰى عَوَاتِقِهِمُ الْيُسْرٰى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ জি‘রানাহ্ হতে ‘উমরা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বায়তুল্লাহর তাওয়াফে তিনবার জোরে জোরে চলেছেন এবং তাঁদের চাদরসমূহ ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন। (আবূ দাঊদ)[১]
এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, তাওয়াফে রমল ও ইযত্বিবা' করতে হয়।
২৫৮৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৬
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: مَا تَرَكْنَا اسْتِلَامَ هَذَيْنِ الرُّكْنَيْنِ: الْيَمَانِىْ وَالْحَجَرِ فِىْ شِدَّةٍ وَلَا رَخَاءٍ مُنْذُ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَسْتَلِمُهُمَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা এ দু’টি কোণ তথা রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ কষ্টে ও আরামে কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করতে ছাড়িনি যখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ দু’ কোণ (রুকন) স্পর্শ করতে দেখেছি। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৫৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৭
وَفِىْ رِوَايَةٍ لَهُمَا: قَالَ نَافِعٌ: رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ يَسْتَلِمُ الْحَجَرَ بِيَدِه ثُمَّ قَبَّلَ يَدَه وَقَالَ: مَا تَرَكْتُه مُنْذُ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَفْعَلُه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
বুখারী ও মুসলিম থেকে বর্ণিতঃ
নাফি‘ (রহঃ) বলেছেনঃ আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ নিজ হাতে স্পর্শ করে হাত চুমু খেতে দেখেছি। আর তাঁকে এটা বলতে শুনেছি, যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটা করতে দেখেছি, তখন থেকে এটা কক্ষনো পরিত্যাগ করিনি। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৫৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৮
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: شَكَوْتُ إِلٰى رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ أَنِّىْ أَشْتَكِىْ. فَقَالَ: «طُوفِىْ مِنْ وَرَاءِ النَّاسِ وَأَنْتِ رَاكِبَةٌ» فَطُفْتُ وَرَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يُصَلِّىْ إِلٰى جَنْبِ الْبَيْتِ يَقْرَأُ بـ (الطُّوْرِ وكِتَابٍ مَسْطُوْرٍ). (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি সওয়ার হয়ে মানুষের পেছনে পেছনে তাওয়াফ করো। তিনি [উম্মু সালামাহ (রাঃ)] বলেন, আমি তাওয়াফ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন এবং সলাতে সূরা ‘‘ওয়াত্ তূর ওয়া কিতা-বিম্ মাসতূর’’ পড়ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৫৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৮৯
وَعَنْ عَابِسِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: رَأَيْتُ عُمَرَ يُقَبَلُ الْحَجَرَ وَيَقُوْلُ: وَإِنِّىْ لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلَا تَضُرُّ وَلَوْلَا أَنِّىْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يُقَبِّلُ مَا قَبَّلْتُكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবিস ইবনু রবী‘আহ্ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুমু দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছি- আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, যা কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারো না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম তবে আমি কক্ষনো তোমাকে চুমু দিতাম না। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
এ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘উমার (রাঃ) এজন্য বলেছেন যে, যেন ইসলামে নবদিক্ষিত কিছু মুসলিমরা বিভ্রান্ত না হয় যারা পাথর পূজা, তার সম্মান করা, তার পরকালের আশা করা এবং তার সম্মানের ত্রুটির কারণে ক্ষতি হয়- এ আশঙ্কার সাথে সুপরিচিত। তিনি আশংকা করলেন যে, তাদের কেউ তাকে চুম্বন করতে দেখে ফিতনায় পড়বে। ফলে তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করলেন যে, এই পাথর কোন উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। এটা কেবল বিধান পালন করে প্রতিদানের আশায় করা হয়।
এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে পাথর চুম্বন করার মাধ্যমে। যদি অনুসরণ করা উদ্দেশ্য না হত, তবে চুম্বন করতেন না।
সারকথা হচ্ছে, আমরা যা করব, বলব এবং বিশ্বাস করব তা হবে সহীহ সুন্নাহভিত্তিক। আর আমরা বিদ্‘আতী কাজ, ‘আক্বীদাহ্ ও ‘আমাল নষ্ট হয়ে যায় এমন শৈথিল্য করা হতে সতর্ক থাকব।
২৫৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯০
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: وُكِّلَ بِه سَبْعُونَ مَلَكًا يَعْنِى الرُّكْنَ الْيَمَانِىَ «فَمَنْ قَالَ: اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ ﴿رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾ قَالُوا: اٰمِيْنَ». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রুকনে ইয়ামানীর সাথে সত্তরজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত রয়েছেন। যখন কোন ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষমা ও কুশল প্রার্থনা করছি। হে রব! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের ‘আযাব হতে রক্ষা করো। তখন সেসব মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলে ওঠেন, ‘আমীন’ (আল্লাহ কবূল কর)। (ইবনু মাজাহ)[১]
সুতরাং যে রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছে অতিক্রম করতে করতে উক্ত দু‘আ তথা
اللهم انى اسئلك.........وقنا عذاب النار
এ দু‘আটি পড়ে তার দু‘আ কবূলের জন্য মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ‘আমীন’ বলেন।
২৫৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯১
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ سَبْعًا وَلَا يَتَكَلَّمُ إِلَّا بِـ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ مُحِيَتْ عَنْهُ عَشْرُ سَيِّئَاتٍ وَكُتِبَ لَه عَشْرُ حَسَنَاتٍ وَرُفِعَ لَه عَشْرُ دَرَجَاتٍ. وَمَنْ طَافَ فَتَكَلَّمَ وَهُوَ فِىْ تِلْكَ الْحَالِ خَاضَ فِى الرَّحْمَةِ بِرِجْلَيْهِ كَخَائِضِ الْمَاءِ بِرِجْلَيْهِ». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে এবং ‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার, ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহরই, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কারো উপায় বা শক্তি নেই।) দু‘আটি পড়া ব্যতীত আর কোন কথা না বলে তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, তার (‘আমালনামায়) দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তার দশটি মর্যাদাও বৃদ্ধি করা হয়। আর যে ব্যক্তি তাওয়াফ করা অবস্থায় কথাবার্তা বলবে সে আল্লাহ তা‘আলার রহমাতে তার পা দিয়ে ঢেউ উঠিয়েছে যেমন কোন ব্যক্তি নিজের পা দিয়ে পানিতে ঢেউ উঠিয়ে থাকে। (ইবনু মাজাহ)[১]
২৫৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯২
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِىْ بَكْرٍ الثَقَفِىُّ أَنَّه سَأَلَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ وَهُمَا غَادِيَانِ مِنْ مِنًى إِلٰى عَرَفَةَ: كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ فِىْ هٰذَا الْيَوْمِ مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ؟ فَقَالَ: كَانَ يُهِلُّ مِنَّا الْمُهِلُّ فَلَا يُنْكَرُ عَلَيْهِ وَيُكَبِّرُ الْمُكَبِّرُ مِنَّا فَلَا يُنكَرُ عَلَيْهِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর আস্ সাক্বাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একবার আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তখন তারা উভয়ে মিনা হতে সকালে ‘আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলেন। আপনারা এ ‘আরাফার দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কি করতেন? তখন তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে যারা তালবিয়াহ্ পাঠ করার পাঠ করতো, এজন্যে তাদের তা হতে নিষেধ করা হতো না এবং যারা তাকবীর ধ্বনি দিতো এতেও নিষেধ করা হতো না। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অন্যান্য যিকিরের ন্যায় তাকবীর পড়ার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ‘আরাফার দিন তাকবীর পাঠ করা হাজীদের সুন্নাত নয়, বরং সুন্নাত হচ্ছে কুরবানীর দিন জামারাতুল ‘আক্বাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ পর্যন্তও সময় তালবিয়াহ্ পাঠ করা।
২৫৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৩
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ: «نَحَرْتُ هٰهُنَا وَمِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ فَانْحَرُوْا فِىْ رِحَالِكُمْ. وَوَقَفْتُ هَهُنَا وَعَرَفَةُ كلُّهَا مَوْقِفٌ. وَوَقَفْتُ هٰهُنَا وَجَمْعٌ كلُّهَا مَوْقِفٌ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি, মিনা সম্পূর্ণটাই কুরবানীর স্থান। তাই তোমরা তোমাদের বাসায় কুরবানী কর। আমি এ স্থানে (‘আরাফায়) অবস্থান করেছি, আর ‘আরাফাহ্ সম্পূর্ণটাই অবস্থানের স্থান এবং আমি এ জায়গায় অবস্থান করেছি, আর মুযদালিফা সম্পূর্ণটাই অবস্থানের স্থান। (মুসলিম)[১]
১. পূর্ব দিকের রাস্তার সীমানা।
২. পাহাড় সংলগ্ন সীমানা, যা তার পেছনে আছে।
৩. কাবার সামনের বাম পাশের দুই পাশ সংলগ্ন বাগানের সীমানা পর্যন্ত।
৪. ‘উরানাহ্ উপত্যকা।
‘উরানাহ্ উপত্যকা ও নামিরাহ্ ‘আরাফাহ্ ও হারামের অন্তর্ভুক্ত নয়।
২৫৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৪
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ: مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللّٰهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّه لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِىْ بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ‘আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ- যা চায় আমি তাদেরকে তাই দেবো)। (মুসলিম)[১]
১. জুমু‘আর দিন উদ্দেশ্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীসের কারণে,
خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ فِيْهِ الشَّمْسُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ.
অর্থাৎ- এক সপ্তাহের বা সাত দিনের মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন। আর এভাবেই এ হাদীসের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
২. ‘আরাফার দিন উদ্দেশ্য, সরাসরি হাদীসে বর্ণিত হওয়ার কারণে। ‘আরাফার দিন ফাযীলাতপূর্ণ হওয়ার হাদীসটি বাহ্যিকভাবে ইঙ্গিত বহন করে যে, সালফে সলিহীনদের মতানুসারে তিনি সুবহানাহূ তা‘আলা মাখলূকের সাথে কোন প্রকার তা’বীল, তাক্‘ঈফ ও তাসবীহ ব্যতীত ‘আরাফার দিন দুপুরের পরে বান্দাদের নিকটবর্তী হন। অতঃপর বান্দাকে নিয়ে মালায়িকাহ্’র সাথে ফখর করেন।
মুল্লা ‘আলী কারী বলেন, তারা কি চায়? যার কারণে তারা পরিবার ও দেশ ত্যাগ করেছে, মাল ব্যয় করেছে। মূলত তারা ক্ষমা, সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও সাক্ষাৎ লাভ করতে চায়।
২৫৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৫
عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ صَفْوَانَ عَنْ خَالٍ لَه يُقَالُ لَه يَزِيدُ بْنُ شَيْبَانَ قَالَ: كُنَّا فِىْ مَوْقِفٍ لَنَا بِعَرَفَةَ يُبَاعِدُه عَمْرٌو مِنْ مَوْقِفِ الْإِمَامِ جِدًّا فَأَتَانَا ابْنُ مِرْبَعٍ الْأَنْصَارِىُّ فَقَالَ: إِنِّىْ رَسُولُ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ إِلَيْكُمْ يَقُولُ لَكُمْ: «قِفُوْا عَلٰى مَشَاعِرِكُمْ فَإِنَّكُمْ عَلٰى اِرْثِ مِنْ إِرْثِ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আমর ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সফ্ওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যাকে ইয়াযীদ ইবনু শায়বান বলা হতো। ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, আমরা ‘আরাফাতে আমাদের (পূর্ব পুরুষদের) নির্দিষ্ট স্থানে ছিলাম। ‘আমর বলেন, এ স্থানটি ছিল ইমামের (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) স্থান হতে অনেক দূরে। ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, এমন সময় আমাদের কাছে ইবনু মিরবা‘ আল আনসারী এসে বললেন, আমি তোমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে প্রেরিত প্রতিনিধি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে তোমাদের অবস্থানেই (‘ইবাদাতগাহেই) থাকার জন্য বলেছেন। কারণ তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের সুন্নাতের উপরেই রয়েছ। (তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[১]
২৫৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৬
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ: كُلُّ عَرَفَةَ مَوْقِفٌ وَكُلُّ مِنًى مَنْحَرٌ وَكُلُّ الْمُزْدَلِفَةِ مَوْقِفٌ وَكُلُّ فِجَاجِ مَكَّةَ طَرِيْقٌ وَمَنْحَرٌ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِىُّ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আরাফার সম্পূর্ণ স্থানই অবস্থানস্থল এবং মিনার সম্পূর্ণ স্থানই কুরবানীর স্থান, মুযদালিফার সম্পূর্ণটাই অবস্থানস্থল এবং মক্কার সকল পথই রাস্তা ও কুরবানীর স্থান। (আবূ দাঊদ ও দারিমী)[১]
২৫৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৭
وَعَنْ خَالِدِ بْنَ هَوْذَةَ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَخْطُبُ النَّاسَ يَوْمَ عَرَفَةَ عَلٰى بَعِيرٍ قَائِمًا فِى الرِّكَابَيْنِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
খালিদ ইবনু হাওযাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের উপর চড়ে ‘আরাফার দিনে দু’ পাদানীতে পা রেখে সওয়ার অবস্থায় ভাষণ দিতে দেখেছি। (আবূ দাঊদ)[১]
২৫৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৮
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ قَبْلِىْ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
আমর ইবনু শু‘আয়ব থেকে বর্ণিতঃ
তাঁর পিতা শু‘আয়ব হতে, তিনি তাঁর দাদা [‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] হতে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল দু‘আর শ্রেষ্ঠ দু‘আ হলো ‘আরাফার দিনের দু‘আ আর শ্রেষ্ঠ কালিমাহ্ (যিকির) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নাবীগণ পাঠ করেছেন তা হলো, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সকল শক্তির আঁধার।)। (তিরমিযী)[১]
২৫৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৫৯৯
وَرَوٰى مَالِكٌ عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللّٰهِ إِلٰى قَوْلِه: لَا شَرِيْكَ لَه
ইমাম মালিক থেকে বর্ণিতঃ
ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ হতে ‘‘লা- শারীকা লাহূ’’ বাক্য পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।)[১]
ইমাম বুখারী (রহঃ) এটাকে মুনকার হাদীস বলেছেন। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, ‘আরাফার দিনের দু‘আটি হবে- لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ المُلْكُ، وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর এটাই শুদ্ধ।
২৬০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০০
وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللّٰهِ بْنِ كَرِيزٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ: مَا رُئِىَ الشَّيْطَانُ يَوْمًا هُوَ فِيهِ أَصْغَرُ وَلَا أَدْحَرُ وَلَا أَحْقَرُ وَلَا أَغْيَظُ مِنْهُ فِىْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَمَا ذَاكَ إِلَّا لِمَا يَرٰى مِنْ تَنَزُّلِ الرَّحْمَةِ وَتَجَاوُزِ اللّٰهِ عَنِ الذُّنُوبِ الْعِظَامِ إِلَّا مَا رُئِىَ يَوْمَ بَدْرٍ». فَقِيلَ: مَا رُئِىَ يَوْمَ بَدْرٍ؟ قَالَ: «فَإِنَّه قَدْ رَأَى جِبْرِيلَ يَزَعُ الْمَلَائِكَةَ. رَوَاهُ مَالِكٌ مُرْسَلًا وَفِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ بِلَفْظِ الْمَصَابِيحِ
তলহা ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু কারীয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তানকে ‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন এত অপমানিত, এত লাঞ্ছিত, এত বেশি ঘৃণিত ও এত বেশী রাগান্বিত হতে দেখা যায় না। কেননা শয়তান এদিন দেখতে থাকে বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমাত নাযিল হচ্ছে, তাদের বড় বড় গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে। তবে এটা বাদরের দিন দেখে গিয়েছিল। কেউ জিজ্ঞেস করলো, বাদরের দিন কি দেখা গিয়েছিল (হে আল্লাহ রসূল!)। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেদিন সে নিশ্চিতভাবে শয়তান দেখেছিল, জিবরীল (আঃ) মালায়িকাকে (ফেরেশতাগণকে) কাতারবন্দী করতে দেখেছিল। (মালিক মুরসাল হিসেবে; ইমাম বাগাবী শারহুস্ সুন্নাহয় তবে শব্দবিন্যাস মাসাবীহ-এর)[১]
অনুরূপ খারাপ অবস্থায় শয়তান ছিল দ্বিতীয় হিজরীতে অনুষ্ঠিত বদর যুদ্ধে। যখন শয়তান দেখেছিল মালায়িকাহ্ মুজাহিদদের যুদ্ধের জন্য সাজিয়ে দিচ্ছিলেন এবং তাদেরকে কাতার হতে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। আর হাদীসটিতে হজ্জের ফাযীলাত, ‘আরাফায় উপস্থিত বাদরের দিনের এবং পাপীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ করার ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে।
২৬০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০১
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِذَا كَانَ يَوْمُ عَرَفَةَ إِنَّ اللّٰهَ يَنْزِلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُبَاهِىْ بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُولُ: اُنْظُرُوْا إِلٰى عِبَادِىْ أَتَوْنِىْ شُعْثًا غُبْرًا ضَاجِّيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ أُشْهِدُكُمْ أَنِّىْ قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ فَيَقُولُ الْمَلَائِكَةُ: يَا رَبِّ فُلَانٌ كَانَ يُرَهَّقُ وَفُلَانٌ وَفُلَانَةُ قَالَ: يَقُولُ اللّٰهُ عَزَّ وَجَلَّ: قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ». قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «فَمَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ عَتِيقًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ». رَوَاهُ فِىْ شَرْحُ السُّنَّةِ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আরাফার দিন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং হাজীদের ব্যাপারে মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) সম্মুখে গর্ববোধ করেন এবং বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা আমার কাছে আসছে এলোমেলো চুলে, ধূলাবালি গায়ে, আহাজারী করতে করতে দূর-দূরান্ত হতে উপস্থিত হয়েছে। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, হে রব! অমুক বান্দাকে তো বড় গুনাহগার বলে অভিহিত করা হয় এবং অমুক পুরুষ ও নারীকেও। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তখন বলেন, আমি তাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আরাফার দিনের চেয়ে এত বেশি জাহান্নাম হতে মুক্তি দেবার মতো আর কোন দিন নেই। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[১]
২৬০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০২
عَن عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ قُرَيْشٌ وَمَنْ دَانَ دِينَهَا يَقِفُوْنَ بالمزْدَلفَةِ وَكَانُوا يُسمَّوْنَ الحُمْسَ فَكَانَ سَائِرَ الْعَرَبِ يَقِفُوْنَ بِعَرَفَةَ فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلَامُ أَمَرَ اللّٰهُ تَعَالٰى نَبِيَّه ﷺ أَنْ يَأْتِىَ عَرَفَاتٍ فَيَقِفُ بِهَا ثُمَّ يَفِيضُ مِنْهَا فَذٰلِكَ قَوْلُه عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ثُمَّ أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ﴾. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা (‘আরাফার দিন) মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং নিজেদেরকে তারা বাহাদুর ও অভিজাত বলে অভিহিত করতো। আর সমস্ত ‘আরব গোত্র ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান গ্রহণ করতো। অতঃপর ইসলাম আসার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ করলেন, ‘আরাফার ময়দানে গিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে অবস্থান নিতে, তারপর সেখান থেকে ফিরে আসতে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এ ব্যাপারটিকে এভাবেই বলেছেন, ‘‘সুম্মা আফীযূ মিন হায়সু আফা-যান্না-সু’’ (অর্থাৎ- অতঃপর তোমরা ফিরে আসো, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ ফিরে আসে।’’)। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ মাক্কাহ্বাসী হজ্জের সময় হারাম এলাকা থেকে বের হত না, আর ‘আরাফাহ্ হারামের বাহিরে। তারা মুযদালিফায় অবস্থান করত, আর বলত যে, আমরা আল্লাহর ঘরের অধিবাসী। মাক্কাহবাসীদের ‘আরাফায় অবস্থান না করার কারণে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন যে, সকলকে ‘আরাফায় অবস্থান করতে হবে।
ইমাম সিন্দী বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করাকে আবশ্যক করে দিয়েছে।
হাফিয ‘ইরাকী বলেনঃ এ হাদীসে বর্ণিত আয়াতে যে স্থানের কথা বলা হয়েছে তা হলো- ‘আরাফার মাঠ। অর্থাৎ- যেখানে সকল হজ্জ/হজকারীকে অবস্থান করতে হবে।
২৬০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৩
وَعَنْ عَبَّاسِ بْنِ مِرْدَاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ دَعَا لِأُمَّتِه عَشِيَّةَ عَرَفَةَ بِالْمَغْفِرَةِ فَأُجِيْبَ: إِنِّىْ قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ مَا خَلَا الْمَظَالِمَ فَإِنِّىْ اٰخُذُ لِلْمَظْلُومِ مِنْهُ». قَالَ: أَىْ رَبِّ إِنْ شِئْتَ أَعْطَيْتَ الْمَظْلُومَ مِنَ الْجَنَّةِ وَغَفَرْتَ لِلظَّالِمِ فَلَمْ يُجَبْ عَشِيَّتَه فَلَمَّا أَصْبَحَ بِالْمُزْدَلِفَةِ أَعَادَ الدُّعَاءَ فَأُجِيبَ إِلٰى مَا سَأَلَ. قَالَ: فَضَحِكَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَوِ قَالَ تَبَسَّمَ فَقَالَ لَه أَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ: بِأَبِىْ أَنْتَ وَأُمِّىْ إِنَّ هٰذِه لَسَاعَةٌ مَا كُنْتَ تَضْحَكُ فِيهَا فَمَا الَّذِىْ أَضْحَكَكَ أَضْحَكَ اللّٰهُ سِنَّكَ؟ قَالَ: إِنَّ عَدُوَّ اللّٰهِ إِبْلِيسَ لَمَّا عَلِمَ أَنَّ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدِ اسْتَجَابَ دُعَائِىْ وَغَفَرَ لِأُمَّتِىْ أَخَذَ التُّرَابَ فَجَعَلَ يَحْشُوْهُ عَلٰى رَأْسِه وَيَدْعُوْ بِالْوَيْلِ وَالثُّبُوْرِ فَأَضْحَكَنِىْ مَا رَأَيْتُ مِنْ جَزَعِه. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى الْبَيْهَقِىُّ فِىْ كِتَابِ الْبَعْثِ وَالنُّشُوْرِ نَحْوَه
‘আব্বাস ইবনু মিরদাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার দিন বিকালে নিজের উম্মাতের (হাজীদের) জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন। উত্তর দেয়া হলো, অত্যাচারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। কেননা আমি মাযলূমের পক্ষ হয়ে যালিমকে পাকড়াও করে হাক্ব আদায় করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আমার রব! আপনি ইচ্ছা করলে মাযলূমকে জান্নাত দিতে পারেন এবং যালিমকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু সেদিন বিকালে তাঁর দু‘আ কবূল হলো না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মুযদালিফায় ভোরে উঠলেন, তখন আবার সেই দু‘আ করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা চেয়েছিলেন তা তাঁকে দেয়া হলো। রাবী ‘আব্বাস বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন অথবা তিনি বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুচকী হাসলেন। এ সময় আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমাদের পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এটা তো এমন একটা সময় যে, আপনি কোন সময়ই হাসতেন না। কিসে আপনাকে হাসালো? আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে আরও হাসিখুশি রাখুন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলীস যখন জানতে পারলো যে, আল্লাহ আমার দু‘আ কবূল করেছেন এবং উম্মাত (হাজীদেরকে) ক্ষমা করে দিয়েছেন তখন সে মাটি উঠিয়ে নিজের মাথায় ছিটাতে লাগলো আর বলতে লাগলো, হায় আমার কপাল! হায় আমার দুর্ভাগ্য! ইবলীসের এ অস্থিরতা দেখেই আমায় হাসি এসেছে। [ইবনু মাজাহ; বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর ‘‘কিতাবুল বা‘সি ওয়ান্ নুশূর’’-এ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন][১]
‘আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল উম্মাতের জন্য দু‘আ করেছিলেন যারা তখন তার সাথে হজ্জ করেছিলেন এবং যারা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হজ্জ করবেন সকলের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেছেন। অথবা তিনি সকল উম্মাতের জন্য দু‘আ করেছেন চাই সে হজ্জ করুক বা না করুক।
২৬০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৪
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سُئِلَ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ: كَيْفَ كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَسِيْرُ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ حِينَ دَفَعَ؟ قَالَ: كَانَ يَسِيْرُ الْعَنَقَ فَإِذَا وَجَدَ فَجْوَةً نَصً. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ থেকে বর্ণিতঃ
তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার উসামাহ্ ইবনু যায়দকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে ‘আরাফার ময়দান হতে ফিরে আসার সময় কিভাবে চলেছিলেন? জবাবে তিনি (‘উরওয়াহ্) বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বাভাবিক গতিতে চলতেন এবং যখনই খোলা পথ পেতেন দ্রুতবেগে চলতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৫
وَعَنِ ابْنِ عبَّاسٍ أَنَّه دَفَعَ مَعَ النَّبِىِّ ﷺ يَوْمَ عَرَفَةَ فَسَمِعَ النَّبِىُّ ﷺ وَرَاءَه زَجْرًا شَدِيدًا وَضَرْبًا لِلْإِبِلِ فَأَشَارَ بِسَوْطِه إِلَيْهِمْ وَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ فَإِنَّ الْبِرَّ لَيْسَ بِالْإِيضَاعِ. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একবার ‘আরাফার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ‘আরাফার ময়দান হতে ফিরে এসেছেন। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছন হতে জোরে জোরে উট তাড়ানোর হাঁক ও উটকে পিটানোর শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের হাতের চাবুক দিয়ে পেছনে তাদের দিকে ইশারা করে বললেন, হে লোকেরা! তোমরা প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলো, কারণ উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়াই শুধু নেক কাজ নয়। (বুখারী)[১]
২৬০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৬
وَعَنْهُ أَنَّ أُسَامَةَ بْنَ زِيدٍ كَانَ رِدْفَ النَّبِىِّ ﷺ مِنْ عَرَفَةَ إِلَى الْمُزْدَلِفَةِ ثُمَّ أَرْدَفَ الْفَضْلَ مِنَ الْمُزْدَلِفَةِ إِلٰى مِنًى فَكِلَاهُمَا قَالَ: لَمْ يَزَلِ النَّبِىُّ ﷺ يُلَبِّىْ حَتّٰى رَمٰى جَمْرَة الْعَقَبَةِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) ‘আরাফার ময়দান হতে মুযদালিফা পর্যন্ত ফিরে আসার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে বসেছিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুযদালিফা হতে মিনায় আসা পর্যন্ত (আমার বড় ভাই) ফযল ইবনু ‘আব্বাসকেও তাঁর পেছনে বসিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারাতুল ‘আক্বাবায় কংকর মারা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
১. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। এখানে কেউ কেউ উদ্দেশ্য নিয়েছেন প্রথম পাথর নিক্ষেপ করার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালবিয়াহ্ পাঠ শেষ করেছেন। এর সমর্থনে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যা বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন, (لَمْ يَزَلَ حَتّٰى رَمٰى جَمْرَةَ الْعَقَبَةَ بِأَوْلِ حُطَاةٍ)
অর্থাৎ- তিনি জামারাতুল ‘আক্বাবায় প্রথম পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করতেন।
২. আর কেউ কেউ উদ্দেশ্য নিয়েছেন শেষ পাথর নিক্ষেপ করার পর পর্যন্ত (অর্থাৎ- জামারাতুল ‘আক্বাবায়) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তালবিয়াহ্ পাঠ করা শেষ করেছেন। এর সমর্থনে ইবনু খুযায়মার রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জামারাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করতেন এবং প্রত্যেক পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর পাঠ করতেন। অতঃপর শেষ পাথর নিক্ষেপের সাথে তালবিয়াহ্ পাঠ করা শেষ করতেন। দ্বিতীয় মতটিকে হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ইবনু ‘আবদুল বার, ইমাম নাবাবী, ইমাম ‘আয়নী ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রাধান্য দিয়েছেন।
২৬০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৭
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: جَمَعَ النَّبِىُّ ﷺ الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ بِجَمْعٍ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بِإِقَامَةٍ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا وَلَا عَلٰى اِثْرِ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ‘ইশার সালাত মুযদালিফায় একত্রে আদায় করেছেন। প্রত্যেক সলাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইক্বামাত দিয়েছেন এবং এ দুই সলাতের মাঝে কোন নফল সলাত আদায় করেননি এবং পরেও আদায় করাননি। (বুখারী)[১]
২৬০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৮
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: مَا رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ صَلّٰى صَلَاةً إِلَّا لِمِيقَاتِهَا إِلَّا صَلَاتَيْنِ: صَلَاةَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ وَصَلَّى الْفَجْرَ يَوْمَئِذٍ قَبْلَ مِيْقَاتِهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কক্ষনো মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করা ছাড়া আর অন্য কোন সালাত একত্রে আদায় করতে দেখিনি। আর সেদিনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সলাতও (কিছু) সময়ের আগে আদায় করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬০৯
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَنَا مِمَّنْ قَدَّمَ النَّبِىُّ ﷺ لَيْلَةَ الْمزْدَلِفَةِ فِىْ ضُعْفَةِ أَهْلِه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পরিবারের যেসব দুর্বল (শিশু ও মহিলা)-দেরকে মুযদালিফার রাতে সময়ের আগেই (মিনায়) পাঠিয়েছিলেন আমিও তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১০
وَعَنِ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ وَكَانَ رَدِيْفَ النَّبِىِّ ﷺ أَنَّه قَالَ فِىْ عَشِيَّةِ عَرَفَةَ وَغَدَاةِ جَمْعٍ لِلنَّاسِ حِينَ دَفَعُوْا: عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَهُوَ كَافٌّ نَاقَتَه حَتّٰى دَخَلَ مُحَسِّرًا وَهُوَ مِنْ مِنًى قَالَ: عَلَيْكُمْ بِحَصَى الْخَذَفِ الَّذِىْ يُرْمٰى بِهِ الْجَمْرَةَ. وَقَالَ: لَمْ يَزَلْ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يُلَبِّىْ حَتّٰى رَمَى الْجَمْرَةَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ফযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের পেছনে বসাছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আরাফার সন্ধ্যায় ও মুযদালিফায় ভোরে লোকেদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা (অবশ্যই) প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও নিজের উষ্ট্রীকে মিনার অন্তর্গত মুহাস্সির নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত সংযত রেখেছিলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা আঙ্গুল দিয়ে ধরা যায় এমন ছোট পাথর জামারাতে মারার জন্য লও’। ফযল বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারায় পাথর মারা পর্যন্ত সব সময় তালবিয়াহ্ পড়ছিলেন। (মুসলিম)[১]
২৬১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১১
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَفَاضَ النَّبِىُّ ﷺ مِنْ جَمْعٍ وَعَلَيْهِ السَّكِينَةُ وَأَمَرَهُمْ بِالسَّكِينَةِ وَأَوْضَعَ فِىْ وَادِىْ مُحَسِّرٍ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَرْمُوْا بِمِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ وَقَالَ: «لَعَلِّىْ لَا أَرَاكُمْ بَعْدَ عَامِىْ هٰذَا». لَمْ أَجِدْ هٰذَا الْحَدِيْثَ فِى الصَّحِيْحَيْنِ إِلَّا فِىْ جَامِعِ التِّرْمِذِىِّ مَعَ تَقْدِيْمٍ وَتَأْخِيْرٍ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফা হতে প্রশান্তির সাথে ধীরস্থিরভাবে রওয়ানা হলেন, লোকজনকেও শান্তশিষ্টভাবে রওয়ানা হওয়ার জন্য আদেশ করলেন। তবে মুহাস্সির উপত্যকায় পৌঁছার পর উটকে কিছুটা দৌড়ালেন এবং তাদেরকে জামারায় আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করার মতো পাথর মারতে নির্দেশ দিলেন। এমন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সম্ভবত এ বছরের পর আমি আর তোমাদেরকে দেখতে পাবো না। (গ্রন্থকার লিখেছেন, বুখারী ও মুসলিমে এ হাদীসটি পাইনি, তবে তিরমিযী কিছু আগ-পিছ করে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)[১]
(حَصَي الْخَذْفِ) কঙ্কর নিক্ষেপ বলতে ছোট কঙ্কর নিক্ষেপ উদ্দেশ্য। আর (لَعَلِّىْ لَا أَرَاكُمْ بَعْدَ عَامِىْ هٰذَا) তথা সম্ভবত আমি এ বছর পর তোমাদের দেখতে পাব না। সম্ভবত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্বেগ কণ্ঠে বলেছেন যেন তারা হজ্জের কার্যাবলী শিখে নিয়ে মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দেন।
অন্য বর্ণনায় আছে- لَتَأخُذُوْا مَنَاسِكَكُمْ فَاِنِّيْ لَا اَدْرِىْ لَعَلِّيْ لَا اَحُّجَ بَعْدَ حَجَّتِىْ هٰذِه তথা তোমরা হজ্জের কার্যাবলী শিখে নাও। কেননা আমি জানি না হয়তবা এ হজ্জের পর আর হজ্জ করতে পারব না।
২৬১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১২
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَخْرَمَةَ قَالَ: خَطَبَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوْا يَدْفَعُوْنَ مِنْ عَرَفَةَ حِيْنَ تَكُونُ الشَّمْسُ كَأَنَّهَا عَمَائِمُ الرِّجَالِ فِىْ وُجُوهِهِمْ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ وَمِنَ الْمُزْدَلِفَةِ بَعْدَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ حِينَ تَكُونُ كَأَنَّهَا عَمَائِمُ الرِّجَالِ فِىْ وُجُوهِهِمْ. وَإِنَّا لَا نَدْفَعُ مِنْ عَرَفَةَ حَتّٰى تَغْرُبَ الشَّمْسُ وَنَدْفَعُ مِنَ الْمُزْدَلِفَةِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ هَدْيُنَا مُخَالِفٌ لِهَدْىِ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ وَالشِّرْكِ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَقَالَ فِيهِ: خَطَبنَا وَسَاقَه بِنَحْوِه
মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়স ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দানকালে বললেন, জাহিলী যুগের লোকেরা যখন সূর্যাস্তের পূর্বে মানুষের চেহারায় মানুষের পাগড়ীর মতো দেখা যেত তখন ‘আরাফার ময়দান হতে রওয়ানা হতো। আর সূর্যোদয়ের পর মানুষের চেহারায় ওইভাবে মানুষের পাগড়ীর মতো যখন দেখাতো তখন মুযদালিফা হতে রওয়ানা হতো। আর আমরা সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘আরাফার ময়দান হতে রওয়ানা হবো না এবং সূর্যোদয়ের আগে মুযদালিফা হতে রওয়ানা হবো। আমাদের নিয়ম-নীতি মূর্তিপূজক ও শির্কপন্থীদের নিয়ম-নীতির বিপরীত। (বায়হাক্বী)[১]
২৬১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৩
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَدَّمَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ لَيْلَةً الْمُزْدَلِفَةِ أُغَيْلِمَةَ بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلٰى حُمُرَاتٍ فَجَعَلَ يَلْطَحُ أَفْخَاذَنَا وَيَقُولُ: «أُبَيْنِىَّ لَا تَرْمُوا الْجَمْرَةَ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ». رَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে আমাদেরকে ‘আবদুল মুত্ত্বালিব বংশীয় বালকদেরকে গাধার উপর চড়িয়ে দিয়ে তাঁর আগেই মিনার দিকে রওয়ানা দিলেন। তখন আমাদের উরু চাপড়িয়ে বললেন, আমার প্রিয় সন্তানেরা! তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করো না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[১]
‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, পাথর সূর্যোদয়ের পর মারতে হবে। যাদের কোন সমস্যা নেই তাদের এ ব্যাপারে কোন সুযোগ নেই। আর নারী বা দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ আছে। অর্থাৎ- তারা এর পূর্বেও পাথর মারতে পারবে। এ কথার সমর্থনে সহীহ সনদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
২৬১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৪
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: أَرْسَلَ النَّبِىُّ ﷺ بأُمِّ سَلَمَةَ لَيْلَةَ النَّحْرِ فَرَمَتِ الْجَمْرَةَ قَبْلَ الْفَجْرِ ثُمَّ مَضَتْ فَأَفَاضَتْ وَكَانَ ذٰلِكَ الْيَوْمُ الْيَوْمَ الَّذِىْ يَكُونَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ عِنْدَهَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর (আগের) রাতে উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে (মিনায়) পাঠালেন। তিনি [উম্মু সালামাহ (রাঃ)] ভোর হবার আগেই পাথর মারলেন। তারপর মাক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে যিয়ারত (তাওয়াফে ইফাযাহ্) করলেন। আর সেদিনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁর ঘরে থাকারই দিন ছিল। (আবূ দাঊদ)[১]
২৬১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৫
وَعَنِ ابْنِ عبَّاسٍ، قَالَ: يُلَبِّى الْمُقِيْمُ أَوِ الْمُعْتَمِرُ حَتّٰى يَسْتَلِمَ الْحَجَرَ). رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: وَرُوِىَ مَوْقُوْفًا عَلٰى اِبْنِ عبَّاسٍ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুক্বীম (মাক্কাবাসী) অথবা ‘উমরাহকারী (মক্কার বাইরে থেকে আগন্তুক) হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ না করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ (লাব্বায়কা) পাঠ করতে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[১]
২৬১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৬
عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُرْوَةَ أَنَّه سَمِعَ الشَّرِيْدَ يَقُولُ: أَفَضْتُ مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فَمَا مَسَّتْ قَدَمَاهُ الْأَرْضَ حَتّٰى اَتٰى جمْعًا. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ
য়া‘কূব ইবনু ‘আসিম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি শারীদ (ইবনু সুওয়াইদ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (‘আরাফাহ্ হতে) রওয়ানা হয়েছি। মুযদালিফায় না পৌঁছা পর্যন্ত তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) পা কোথাও মাটি স্পর্শ করেনি। (আবূ দাঊদ)[১]
অন্য বর্ণনায় আছে যখন শা‘ব নামক স্থানে আসলেন তখন সওয়ারীকে বসালেন। অতঃপর প্রসাব-পায়খানা করার পর উযূ করলেন কিন্তু পূর্ণাঙ্গ উযূ করলেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হালকাভাবে উযূ করলেন। আমি বললাম, সলাত? তিনি বললেন, সামনে। তারপর সওয়ার হলেন। যখন মুযদালিফায় আসলেন, নেমে উযূ করলেন এবং পরিপূর্ণ উযূ করলেন। অতঃপর সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলো তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।
সমাধানঃ শারীদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আরাফাহ্ হতে মুযদালিফা পর্যন্ত ভ্রমণের বর্ণনা দিয়েছে যে, তিনি ঐ দূরত্ব পর্যন্ত সওয়ারী হয়েছেন কিন্তু দুই পা দিয়ে দ্রুত হাঁটেননি। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি উট থেকে নামেননি। সুতরাং কোন বৈপরীত্য নেই।
শারীদের ওপর উসামার হাদীস প্রাধান্য পাবে, কেননা উট থেকে নামার প্রমাণ রয়েছে। আর হ্যাঁ-বোধক, না-বোধকের উপর প্রাধান্য পায়। আর উসামাহ্ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সওয়ারী হয়েছেন তিনি তাঁর সম্পর্কে বেশি ভাল জানেন কিন্তু শারীদ তাঁর উট থেকে নামা দেখেননি। এজন্য তিনি নাকচ করেছেন।
২৬১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৭
وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ: أَخْبَرَنِىْ سَالِمٌ أَنَّ الْحَجَّاجَ بْنَ يُوسُفَ عَامَ نَزَلَ بِابْنِ الزُّبَيْرِ سَأَلَ عَبْدَ اللّٰهِ: كَيْفَ نَصْنَعُ فِى الْمَوْقِفِ يَوْمَ عَرَفَةَ؟ فَقَالَ سَالِمٌ إِنْ كُنْتَ تُرِيدُ السُّنَّةَ فَهَجِّرْ بِالصَّلَاةِ يَوْمَ عَرَفَةَ فَقَالَ عَبْدُ اللّٰهِ بْنُ عُمَرَ: صَدَقَ إِنَّهُمْ كَانُوا يَجْمَعُونَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فِى السُّنَّةِ فَقُلْتُ لِسَالِمٍ: أَفَعَلَ ذٰلِكَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ؟ فَقَالَ سَالِمٌ: وَهَلْ يَتَّبِعُوْنَ فِىْ ذٰلِكَ إِلَّا سُنَّتَه؟ رَوَاهُ البُخَارِىُّ
ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে সালিম (রহঃ) (‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর পুত্র) বলেছেন, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র-এর বিরুদ্ধে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মাক্কায় পৌঁছেন, (আমার পিতা) ‘আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরাফার দিনে ‘আরাফার ময়দানে আমরা হজ্জের কাজ কিভাবে সম্পন্ন করবো? সালিমই (তাৎক্ষণিক) বলেন, আপনি যদি সুন্নাতের অনুসারী হয়ে করতে চান, তাহলে ‘আরাফার দিন সকালে শীঘ্র সালাত আদায় করবেন (যুহর ও ‘আসর এক সাথে তথা যুহরের প্রথম সময়ে)। তখন (আমার পিতা) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, সে (সালিম) সঠিক বলেছে, কেননা সাহাবীগণ সুন্নাত অনুসারে যুহর ও ‘আসর একত্রে সালাত আদায় করতেন।
রাবী ইবনু শিহাব বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এটা করেছেন (অর্থাৎ- যুহর ও ‘আসর একত্রে আদায় করেছেন)? তখন সালিম (রহঃ) বললেন, তাঁরা কি রসূলের সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছুর অনুসরণ করতেন? অর্থাৎ- করতেন না। (বুখারী)[১]
খাম্বায় কংকর নিক্ষেপ করাঃ অর্থাৎ- খাম্বাতে কংকর নিক্ষেপ করার সময় অথবা তার হুকুম। খাম্বা তিনটিঃ প্রথম খাম্বা, দ্বিতীয় খাম্বা এবং শেষের খাম্বা। বলা হয়েছে যে, আদম (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ) যখন ইবলীসের সম্মুখীন হন তখন তাকে কংকর নিক্ষেপ করেন।
২৬১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৮
عَن جَابِرٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَرْمِىْ عَلٰى رَاحِلَتِه يَوْمَ النَّحْرِ وَيَقُولُ: لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّىْ لَا أَدْرِىْ لَعَلِّىْ لَا أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِىْ هٰذِه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরবানীর দিন নিজ সওয়ারীর উপর থেকে পাথর মারতে দেখেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার নিকট হতে হজ্জের হুকুম-আহকাম শিখে নাও। কারণ এ হজ্জের পর আর আমি হজ্জ করতে পারব কিনা তা জানি না। (মুসলিম)[১]
শায়খ কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম-এর মতে উত্তম হলো পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করা বিনয়ের নিকটতম। বিশেষ করে বর্তমানে। কারণ সাধারণ লোক পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করে থাকে। তাই ভীড়ের কারণে সওয়ারীতে কংকর মারলে অন্যদের কষ্ট হবে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সওয়ারীতে বসে কংকর নিক্ষেপ করার লক্ষ্য হলো যে, লোকদেরকে দেখানো যাতে তারা তাকে একতেদা করে। বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আইয়্যামে তাশরীকে পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করেছেন। আর এটা বিশুদ্ধ হলে এটাই অনুসরণ করা উচিত। আর এটাকে ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যরা বিশুদ্ধ বলেছেন। ইবনু ‘আব্দুল বার অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন যে, খলীফাদের এক জামা‘আত তাঁর পরে এর উপর ‘আমাল করেছেন।
উক্ত হাদীসের এ অংশ, অর্থাৎ- ‘‘তোমরা আমার থেকে হজ্জের নিয়ম শিখে নাও’’ হজ্জের বিষয়ে বড় একটা মূলনীতি। অনুরূপ রিওয়ায়াত মুসলিম ছাড়া অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমনিভাবে সলাতের ক্ষেত্রেও বর্ণিত হয়েছে, তোমরা সালাত আদায় কর যেমনি আমাকে সলাত আদায় করতে দেখ।
২৬১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬১৯
وَعَنْهُ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ رَمَى الْجَمْرَةَ بِمِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
[জাবির (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জামারায় খযফ-এর পাথরের মতো পাথর মারতে দেখেছি। (মুসলিম)[১]
২৬২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২০
وَعَنْهُ قَالَ: رَمٰى رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ الْجَمْرَةَ يَوْمَ النَّحْرِ ضُحًى وَأَمَّا بَعْدَ ذٰلِكَ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সকাল বেলায় পাথর মেরেছেন, কিন্তু এর পরের দিনগুলোতে সূর্যাস্তের পর মেরেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সুন্নাত হলো কুরবানীর দিন ছাড়া সূর্য ঢলে যাওয়ার পর খাম্বাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করবে।
২৬২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২১
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّهُ انْتَهٰى إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرٰى فَجَعَلَ الْبَيْتَ عَنْ يَسَارِه وَمِنًى عَنْ يَمِينِه وَرَمٰى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ ثُمَّ قَالَ: هٰكَذَا رَمَى الَّذِىْ أُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি জামারাতুল কুবরার (বড় জামারার) নিকট পৌঁছে বায়তুল্লাহকে বামে আর মিনাকে ডানে রেখে এর উপর সাতটি পাথর মারলেন, এতে প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, যাঁর ওপর সূরা আল বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও এভাবে পাথর মেরেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
১. কুরবানীর দিন কেবলমাত্র বড় খাম্বাতে পাথর মারতে হয়।
২. তার নিকট বিলম্ব করা যায় না।
৩. চাশতের সময় কংকর নিক্ষেপ করা।
৪. তার নিচ থেকে কংকর নিক্ষেপ করা মুস্তাহাব?
জামারাতুল ‘আকাবাহ্ বড় খাম্বাকে বলা হয়। আর মিনাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের নিকট হতে হিজরতের উপর বায়‘আত নিয়েছিলেন। মুস্তাহাব হলো, যে ব্যক্তি বড় খাম্বার নিকট দাঁড়াবে সে মাক্কাহকে বাম দিকে ও মিনাকে ডান দিকে করবে আর তার চেহারাকে খাম্বার দিকে করবে।
২৬২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২২
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «الِاسْتِجْمَارُ تَوٌّ وَرَمْىُ الْجِمَارِ توٌّ وَالسَّعْىُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ تَوٌّ وَالطَّوَافُ تَوٌّ وَإِذَا اسْتَجْمَرَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَجْمِرْ بِتَوٍّ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইস্তিঞ্জার ঢেলা নিতে হয় বেজোড়, জামারায় পাথর মারা বেজোড়, সাফা মারওয়ায় সা‘ঈ বেজোড় এবং তাওয়াফ করতে হয় বেজোড়। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি সুগন্ধি ধোঁয়া গ্রহণ করে সেও যেন বেজোড় লাগায়। (মুসলিম)[১]
২৬২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৩
عَنْ قُدَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَمَّارٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَرْمِى الْجَمْرَةَ يَوْمَ النَّحْرِ عَلٰى نَاقَةٍ صَهْبَاءَ لَيْسَ ضَرْبٌ وَلَا طَرْدٌ وَلَيْسَ قِيلُ: إِلَيْكَ إِلَيْكَ. رَوَاهُ الشَّافِعِىُّ وَالتِّرْمِذِىُّ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
কুদামাহ্ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরবানীর দিন একটি লাল-সাদা মিশ্রিত রংয়ের উষ্ট্রীর উপর চড়ে জামারায় পাথর মারতে দেখেছি। সেখানে কাউকে আঘাত করা ব্যতীত, হাঁকানো ব্যতীত এবং ‘সরে যাও সরে যাও’ শব্দ ব্যতীত (পাথর মেরেছেন)। (শাফি‘ঈ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[১]
২৬২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৪
وَعَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ: «إِنَّمَا جُعِلَ رَمْىُ الْجِمَارِ وَالسَّعْىُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللّٰهِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَالدَّارِمِىُّ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ (জামারায়) পাথর মারা ও সাফা মারওয়ার মধ্যে সা‘ঈ করা আল্লাহ যিকির কায়িম করার জন্যই প্রবর্তিত হয়েছে। (তিরমিযী ও দারিমী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[১]
২৬২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৫
وَعَنْهَا قَالَتْ: قُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ ألَا نَبْنِي لَكَ بِنَاءً يُظِلُّكَ بِمِنًى؟ قَالَ: لَا مِنًى مُنَاخُ مَنْ سَبَقَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
[‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) অনুনয় করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার জন্য মিনায় একটি বাড়ী তৈরি করে দেবো, যা সবসময় আপনাকে ছায়াদান করবে? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। মিনায় সে ব্যক্তিই তাঁবু খাটাবে যে প্রথমে সেখানে আসবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[১]
২৬২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৬
عَنْ نَافِعٍ قَالَ: إِنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَقِفُ عِنْدَ الْجَمْرَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ وُقُوفًا طَوِيلًا يُكَبِّرُ اللّٰهَ وَيُسَبِّحُه وَيَحْمَدُه وَيَدْعُو اللّٰهَ وَلَا يَقِفُ عِنْدَ جَمْرَةِ الْعَقَبَةِ. رَوَاهُ مَالِكٌ
নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রথম দুই জামারায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন এবং আল্লা-হু আকবার, সুবহা-নাল্ল-হ ও আল হাম্দুলিল্লা-হ (অর্থাৎ- আল্লাহর মহিমা, পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করতেন) বলতেন এবং দু‘আ করতেন। কিন্তু জামারাতুল ‘আক্বাবার নিকট অবস্থান করতেন না। (মালিক)[১]
আর কংকর নিক্ষেপ করে বড় খাম্বার কাছে দাঁড়াতেন না।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনার শেষ দিনে তাওয়াফে ইফাযাহ্ করেন, সেই সময় যখন যুহর সালাত আদায় করেন। অতঃপর আবার মিনায় ফিরে যান। ইবনু ‘উমার ও ইবনু মাস্‘ঊদ হতে জানা যায় যে, তারা কংকর নিক্ষেপ করার সময় এ দু‘আ পড়তেন, হে আল্লাহ! তুমি এটা হজে মাবরূর বানাও এবং গোনাহ ক্ষমা করে দাও।
২৬২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৭
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: صَلّٰى رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ الظُّهْرَ بِذِى الْحُلَيْفَةِ ثُمَّ دَعَا بِنَاقَتِه فَأَشْعَرَهَا فِىْ صَفْحَةِ سَنَامِهَا الْأَيْمَنِ وَسَلَّتِ الدَّمَ عَنْهَا وَقَلَّدَهَا نَعْلَيْنِ ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَه فَلَمَّا اسْتَوَتْ بِه عَلَى الْبَيْدَاءِ أَهَلَّ بِالْحَجِّ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফায় যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর তাঁর কুরবানীর পশু আনালেন এবং এর কুঁজের ডান দিকে ফেঁড়ে দিলেন ও এর রক্ত মুছে ফেলে গলায় দু’টি জুতার মালা পরিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সওয়ারীতে উঠে বসলেন। তারপর (সামনে গিয়ে) বায়দাতে বাহন সোজা হয়ে দাঁড়ালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জের তালবিয়াহ্ (লাব্বায়কা) পাঠ করলেন। (মুসলিম)[১]
(إشعار) ইশ্‘আর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অবহিত করা। আর শারী‘আতের ভাষায় উটের কুঁজের এক পাশে ছুরি বা অস্ত্র দ্বারা আহত করে রক্ত প্রবাহিত করা। যাতে লোকেরা কুরবানীর উট ও অন্য উটের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। যাতে অন্য উটের সাথে মিশে বা হারিয়ে না যায়। আর চোরেরা এর থেকে দূরে থাকে। আর গরীবরা খেতে পারে যখন রাস্তায় যাবাহ করা হয় মৃত্যুর ভয়ে। হাদীসও প্রমাণ করে যে, ইশ্‘আর করা সুন্নাত। আর এটি অধিকাংশ ‘আলিমদের মত। তাদের মধ্য হতে তিন ইমাম। আর ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, ইশ্‘আর বিদ্‘আত ও মাকরূহ। আর মুসলা তথা পশুকে শাস্তি দেয়া হলে এটি হারাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি করেছিলেন মুশরিকদের উট নিতে বিরত রাখার জন্য আর তারা বিরত থাকতো না ইশ্‘আর করা ছাড়া। এখানে ইমাম আবূ হানীফার মতটি সহীহ হাদীসের বিরোধী।
২৬২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৮
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: أَهْدَى النَّبِىُّ ﷺ مَرَّةً إِلَى الْبَيْتِ غَنَمًا فَقَلَّدَهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর কুরবানীর পশু হিসেবে একপাল ছাগল (ভেড়া) পাঠালেন এবং এগুলোর গলায় (জুতার) মালা পরিয়ে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬২৯
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: ذَبَحَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ عَنْ عَائِشَةَ بَقَرَةً يَوْمَ النَّحْرِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন (মিনায়) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেছিলেন। (মুসলিম)[১]
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেন যে, ‘‘কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর।’’ (সূরা আল কাওসার ১০৮ : ২)
আর হাসান বিন সালিহ ও মুজাহিদ নাহর মুস্তাহাব বলেছেন। ইমাম মালিক বলেন, জরুরী ছাড়া উট যাবাহ করা অথবা বিনা প্রয়োজনে ছাগল নাহর করা হলে তার গোশ্ত (গোসত/গোশত) খাওয়া জায়িয হবে না।
২৬৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩০
وَعَنْهُ قَالَ: نَحَرَ النَّبِىُّ ﷺ عَنْ نِسَائِه بَقَرَةً فِىْ حَجَّتِه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী দিয়েছিলেন। (মুসলিম)[১]
২৬৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩১
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: فَتَلْتُ قَلَائِدَ بُدْنِ النَّبِىِّ ﷺ بِيَدَىَّ ثُمَّ قَلَّدَهَا وَأَشْعَرَهَا وَأَهْدَاهَا فَمَا حَرُمَ عَلَيْهِ شَىْءٌ كَانَ أُحِلَّ لَه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার নিজ হাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশু উটের মালা তৈরি করেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পশুদের গলায় পরিয়েছেন এবং এগুলোর কুঁজ ফেঁড়ে দিয়েছেন। তারপর এগুলোকে কুরবানীর পশু হিসেবে (বায়তুল্লাহয়) পাঠিয়েছেন। এতে তাঁর উপরে কোন জিনিস হারাম হয়নি, যা তাঁর জন্যে আগে হালাল করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩২
وَعَنْهَا قَالَتْ: فَتَلْتُ قَلَائِدَهَا مِنْ عِهْنٍ كَانَ عِنْدِىْ ثُمَّ بَعَثَ بِهَا مَعَ أَبِىْ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার কাছে যে পশম ছিল তা দিয়ে আমি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কুরবানীর পশুর মালা তৈরি করেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আমার পিতার সাথে (মাক্কায়) পাঠিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৩
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ رَأَى رَجُلًا يَسُوقُ بُدْنَةً فَقَالَ: «ارْكَبْهَا». فَقَالَ: إِنَّهَا بُدْنَةٌ. قَالَ: «ارْكَبْهَا». فَقَالَ: إِنَّهَا بُدْنَةٌ. قَالَ: «ارْكَبْهَا وَيْلَكَ» فِى الثَّانِيَةِ أَو الثَّالِثَةِ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এর উপর উঠে যাও। তখন লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো কুরবানীর উট। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, চড়ে যাও! সে পুনরায় বললো, এটা যে কুরবানীর উট! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বললেন, আরে হতভাগা এর উপর চড়ে যাও। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
‘আল্লামা কুসতুলানী বলেন, بُدْنَةٌ (বুদনাতুন) শব্দটি উটের নর-নারী ও গাভীর নর ও নারীকে বুঝানো হয়েছে। এ হাদীস হতে প্রমাণ হল যে, কুরবানীর জানোয়ারের উপর সওয়ার হওয়া জায়িয। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য বলেছিলেন, ‘‘তোমার ধ্বংস হোক’’। আসমা‘ঈ বলেন, وَيْلٌ শব্দটি ধমক এবং রহমাতের জন্যও ব্যবহার হয়। সীবুওয়াইহ বলেন, وَيْحٌ শব্দটি ‘আযাব ঐ ব্যক্তির জন্য জন্য যে ধ্বংসের কাছে উপনীত হয়েছে। হাদীসে আছে যে, وَيْلٌ এটি জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। এখানে এ শব্দ দ্বারা ধমক বুঝানো হয়েছে।
২৬৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৪
وَعَنْ أَبِىْ الزُّبَيْرِ قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ سُئِلَ عَنْ رُكُوْبِ الْهَدْىِ فَقَالَ: سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَقُولُ: «ارْكَبْهَا بِالْمَعْرُوْفِ إِذَا أُلْجِئْتَ إِلَيْهَا حَتّٰى تَجِدَ ظَهْرًا». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবুয্ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে কুরবানীর উটের উপর বসে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। জবাবে তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কষ্ট না দিয়ে সুন্দরভাবে এর উপর আরোহণ কর যখন তুমি এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ো যতক্ষণ না অন্য একটি সওয়ারী পাও। (মুসলিম)[১]
২৬৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৫
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَ: بَعَثَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ سِتَّةَ عَشَرَ بَدَنَةً مَعَ رَجُلٍ وَأَمَّرَه فِيهَا. فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ كَيْفَ أَصْنَعُ بِمَا أُبْدِعَ عَلَىَّ مِنْهَا؟ قَالَ: انْحَرْهَا ثُمَّ اصْبُغْ نَعْلَيْهَا فِىْ دَمِهَا ثُمَّ اجْعَلْهَا عَلٰى صَفْحَتِهَا وَلَا تَأْكُلْ مِنْهَا أَنْتَ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ رُفْقَتِكَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার (মাক্কায়) এক ব্যক্তির সাথে কুরবানী করার জন্য ১৬টি উটনী পাঠালেন এবং তাকে কুরবানী করার জন্য দায়িত্ব বুঝে দিলেন। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! যদি পথিমধ্যে উটগুলোর কোনটি অচল হয়ে পড়ে তখন আমার করণীয় কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাবাহ করে দেবে। অতঃপর এর মালার জুতা দু’টি এর রক্তে রঞ্জিত করে তার কুঁজের পাশে রাখবে। তবে তুমি ও তোমার সাথীদের কেউ তা (গোশত) খাবে না। (মুসলিম)[১]
২৬৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৬
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَحَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللّٰهِ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর সাতজনের পক্ষ হতে একটি উট এবং সাতজনের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেছি। (মুসলিম)[১]
এ সকল হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানীতে শারীক হওয়া জায়িয আছে। অন্য হাদীসে এসেছে যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ফায়েদা উঠাতাম। আমরা গরু যাবাহ করতাম সাতজনের পক্ষ থেকে এবং আমরা তাতে শারীক হতাম। সুতরাং বহু সহীহ রিওয়ায়াত প্রমাণ করছে যে, উট ও গরুতে সাতজন শারীক হতে পারবে।
২৬৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৭
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّه أَتٰى عَلٰى رَجُلٍ قَدْ أَنَاخَ بُدْنَتَه يَنْحَرُهَا قَالَ: ابْعَثْهَا قِيَامًا مُقَيَّدَةً سُنَّةَ مُحَمَّدٍ ﷺ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একবার তিনি এক ব্যক্তির কাছে আসলেন। দেখলেন যে, সে তার উটকে কুরবানী করার জন্য বসিয়েছে। (এ দৃশ্য দেখে) তখন তিনি তাকে বললেন, উটকে দাঁড় করাও এবং পা বেঁধে যাবাহ করো। এটাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
এ বিষয়ে সহীহুল বুখারীতে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হস্তে দাঁড়িয়ে সাতটি উট নাহর করেছিলেন। ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইসহাক ও ইবনু মুনযীর এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম খাত্ত্বাবী এবং রায় পন্থীগণ উভয় পন্থাকে জায়িয বলেছেন।
২৬৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৮
وَعَنْ عَلِىٍّ قَالَ: أَمَرَنِىْ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَنْ أَقُومَ عَلٰى بُدْنِه وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُوْدِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لَا أُعْطِىَ الْجَزَّارَ مِنْهَا قَالَ: نَحْنُ نُعْطِيْهِ مِنْ عِنْدِنَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (বিদায় হজে) কুরবানীর উটগুলো দেখাশুনা করতে, তার গোশ্ত (গোসত/গোশত), চামড়া ও ঝুল (গরীবদের মাঝে) বণ্টন করে দিতে এবং কসাইকে কিছু না দিতে আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা আমাদের নিজের কাছ থেকে তার (কসাইয়ের) পারিশ্রমিক দিবো। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
২৬৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৩৯
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كُنَّا لَا نَأْكُلُ مِنْ لُحُومِ بُدْنِنَا فَوْقَ ثَلَاثٍ فَرَخَّصَ لَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ: كُلُوْا وَتَزَوَّدُوْا. فَأَكَلْنَا وَتَزَوَّدْنَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা কুরবানীর উটের গোশ্ত (গোসত/গোশত) তিন দিনের বেশি খেতাম না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিয়ে বললেন, তিন দিনের বেশি সময় ধরে খেতে এবং ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে পারো। তাই আমরা খেলাম ও (ভবিষ্যতের জন্য) রেখে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
(কাযী বলেন) আর এটি হলো হাদীসের দ্বারা হাদীস মানসূখের পর্যায়ভুক্ত। আবার কারো কারো মতে, এটি মূলত মানসূখ নয় বরং হারামটি ছিল একটি বিশেষ কারণে। তাই যখন সে কারণ দূরীভূত হয়ে গেছে তখন হারামের বিধানও উঠে গেছে। সে কারণটি হল, (মাদীনায়) ইসলামের প্রাথমিক সময়ে অভাব দেখা দেয়ায় এ বিষয়ে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। অতঃপর যখন সে অবস্থার অবসান ঘটল তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের তিন দিনের পরেও তা খাওয়ার এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখার নির্দেশ দিলেন। যেমনটি এ বিষয়ে মুসলিমে বর্ণিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসটি সুস্পষ্ট বর্ণনা। তবে সঠিক কথা হলো জমহূরের বক্তব্য, অর্থাৎ- নিষেধাজ্ঞাটি মুত্বলাক্বভাবে (সাধারণভাবে) মানসূখ। হারাম বা কারাহাত কোনটিই অবশিষ্ট আর নেই। ফলে তিন দিনের পরেও খাওয়া এবং জমা করে রাখা বৈধ।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন, প্রায় সকল আহলে ‘ইলমদের ভাষ্যমতে তিন দিনের অধিক জমা করে রাখা বৈধ। তবে ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বৈধতা দেননি। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে নিষেধ করেছেন। আর আমাদের পক্ষে দলীল মুসলিমে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি আমি তোমাদেরকে তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম। তবে এখন তোমরা যতদিন খুশি জমা করে রাখতে পারো। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে সহীহ সনদে বর্ণিত অনেক হাদীস রয়েছে। আর ‘আলী এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বিষয়টি হলো তাদের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাড়ের বিষয়টি পৌঁছেনি। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিষেধ করতে শুনেছিলেন ফলে তারা যা শ্রবণ করেছেন তাই বর্ণনা করেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, সম্ভবত ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট মানসূখের বিষয়টি পৌঁছেনি। আবার অন্যরা বলেছেন, এ সম্ভবনাও রয়েছে যে, ‘আলী (রাঃ) যে সময়ে এ কথাটি বলেছেন সে সময়ে মানুষের প্রয়োজন ছিল যেমনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ঘটেছিল। ইমাম ইবনু হাযম এ বিষয়টিকে অকাট্য বলে বর্ণনা করেছেন। এটি কোন বছরে নিষেধ করা হয়েছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, পঞ্চম হিজরীতে। আবার কেউ বলেন, নবম হিজরীতে নিষেধ করা হয়েছিল আর দশম হিজরীতে রুখসাত (ছাড়) দেয়া হয়েছিল। তবে শেষের বক্তব্যটিই সঠিক যা বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
২৬৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৪০
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ أَهْدٰى عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ فِىْ هَدَايَا رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ جَمَلًا كَانَ لِأَبِىْ جَهْلٍ فِىْ رَأْسِه بُرَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَفِىْ رِوَايَةٍ مِنْ ذَهَبٍ يَغِيظُ بِذٰلِكَ الْمُشْرِكِيْنَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর নিজের কুরবানীর পশুগুলোর মধ্যে আবূ জাহল-এর একটি উটকেও কুরবানীর পশু হিসেবে মাক্কায় পাঠিয়েছিলেন। এর নাকে ছিল একটি রূপার নথ বা বলয়। অপর বর্ণনায় আছে, সোনার বলয় ছিল। এটি দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। (আবূ দাঊদ)[১]
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেছেন, হাদীর ক্ষেত্রে নর এবং মাদী প্রাণী উভয়টিই সমান। ইবনুল মুসাইয়্যিব, ‘উমার বিন ‘আবদুল আযীয, মালিক, ‘আত্বা, এবং শামী প্রমুখ ব্যক্তিগণ নর উট হাদী প্রেরণের বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি কাউকে এরূপ করতে দেখিনি। আমার নিকট পছন্দনীয় হল মাদী উট নাহর করা। তবে প্রথম মতটিই ভালো/উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, (بدن) বুদন তথা হাদীর জন্তুসমূহকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন বানিয়েছি। তিনি এখানে নর বা মাদীর উল্লেখ করেননি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও প্রমাণিত যে, তিনি আবূ জাহল-এর নর উটকে হাদী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কেননা, এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হলো গোশ্ত (গোসত/গোশত)। আর নর উটের গোশত বেশি এবং মাদীর গোশত তাজা। ফলে দু’টি সমান।
২৬৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৪১
وَعَنْ نَاجِيَةَ الْخُزَاعِىِّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ كَيْفَ أَصْنَعُ بِمَا عَطِبَ مِنَ الْبُدْنِ؟ قَالَ: «انْحَرْهَا ثُمَّ اغْمِسْ نَعْلَهَا فِىْ دَمِهَا ثُمَّ خَلِّ بَيْنَ النَّاسِ وَبَيْنَهَا فَيَأْكُلُونَهَا». رَوَاهُ مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَه
নাজিয়াহ্ আল খুযা‘ঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যে কুরবানীর পশু পথে অচল ও অপারগ হয়ে পড়বে, তার ক্ষেত্রে আমি কি করবো? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, একে কুরবানী করে ফেলবে। তবে তার মালার জুতা এর রক্তে ডুবিয়ে (কুঁজের পাশে রেখে) দিবে। অতঃপর এ কুরবানী করা পশুকে মানুষের মাঝে রেখে যাবে। (গরীবেরা) লোকেরা তা খাবে। (মালিক, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[১]
২৬৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৪২
وَرَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ والدَّارِمِىُّ عَنْ نَاجِيْةِ الْأَسْلَمِىِّ
আবূ দাঊদ ও দারিমী (রহঃ) নাজিয়াহ্ আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হতে বর্ণনা করেছেন।[১]
ভাষ্যকার ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসের (الذين يتبعون القافلة) দ্বারা উদ্দেশ্য কি তা নিয়ে মতভেদ আছে। ইমাম মালিক-এর মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য বন্ধুশ্রেণী ও অন্যান্যদের মধ্য হতে যারা ধনী এবং গরীব। হানাফীদের মতে, এর দ্বারা শুধু দরিদ্ররা উদ্দেশ্য চাই তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোক বা অন্যদের থেকে হোক। আর শাফি‘ঈ ও হাম্বালীদের মতে, এর দ্বারা দরিদ্ররাই উদ্দেশ্য, তবে তারা হাদীর মালিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না আর এ মতটিই আমাদের নিকট প্রণিধানযোগ্য। যেহেতু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার থেকে তুমি এবং তোমার বন্ধুরা খাবে না।
২৬৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৪৩
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ قُرْطٍ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ: «إِنَّ أَعْظَمَ الْأَيَّامِ عِنْدَ اللّٰهِ يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ الْقَرِّ». قَالَ ثَوْرٌ: وَهُوَ الْيَوْمُ الثَّانِىْ. قَالَ: وَقُرِّبَ لِرَسُولِ اللّٰهِ ﷺ بُدْنَاتٌ خَمْسٌ أَوْ سِتٌّ فَطَفِقْنَ يَزْدَلِفْنَ إِلَيْهِ بِأَيَّتِهِنَّ يَبْدَأُ قَالَ: فَلَمَّا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا. قَالَ فَتَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ خَفِيَّةٍ لَمْ أَفْهَمْهَا فَقُلْتُ: مَا قَالَ؟ قَالَ: «مَنْ شَاءَ اقْتَطَعَ». رَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ وَذَكَرَ حَدِيْثَا ابْنِ عَبَّاسٍ وَجَابِرٍ فِىْ بَاب الْأُضْحِيَّةِ
আব্দুল্লাহ ইবনু কুরত্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন। অতঃপর ‘ক্বার্’-এর দিন। সাওর বলেন, তা কুরবানীর দ্বিতীয় দিন। রাবী (‘আব্দুল্লাহ) বলেন, (ঐ দিনে) পাঁচ বা ছয়টি উট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করা হলো। আর উটগুলো নিজেদেরকে তাঁর নিকট এজন্য পেশ করতে লাগল যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগে কোনটি কুরবানী করবেন। রাবী (‘আবদুল্লাহ) বলেন, উটগুলো যখন মাটিতে শুইয়ে গেলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিম্নস্বরে একটা কথা বললেন যা আমরা বুঝতে পারলাম না। আমি নিকটস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বললেন? সে ব্যক্তি বললো, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যার ইচ্ছা হয় তা কেটে নিতে পারে। [আবূ দাঊদ; এ ব্যাপারে ইবনু ‘আব্বাস ও জাবির (রাঃ) বর্ণিত দু’টি হাদীস বাবুল উযহিয়্যাহ্ বা কুরবানীর অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে][১]
হাদীসের শেষাংশে উটগুলোর নাহর হওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী হওয়ার যে বর্ণনা এসেছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট মু‘জিযার অন্তর্ভুক্ত। খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, জনসাধারণকে হিবা করা বৈধ।
২৬৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৪৪
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ: قَالَ النَّبِىُّ ﷺ «مَنْ ضَحّٰى مِنْكُمْ فَلَا يُصْبِحَنَّ بَعْدَ ثَالِثَةٍ وَفِىْ بَيْتِه مِنْهُ شَىْءٌ. فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ قَالُوا: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ نَفْعَلُ كَمَا فَعَلْنَا الْعَامَ الْمَاضِىْ؟ قَالَ: كُلُوْا وَأَطْعِمُوْا وَادَّخِرُوْا فَإِنَّ ذٰلِكَ الْعَامَ كَانَ بِالنَّاسِ جَهْدٌ فَأَرَدْتُ أَنْ تُعِيْنُوْا فِيهِمْ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি কুরবানী করে, তৃতীয় দিনের পর সকালেও যেন তার ঘরে কুরবানীর গোশতের কিয়দংশও অবশিষ্ট না থাকে। রাবী (সালামাহ্) বলেন, পরবর্তী বছর আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা গত বছর যা করেছি এ বছরও কি সেভাবে করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না; তোমরা খাও, অন্যদরকেও খাওয়াও এবং (যদি ইচ্ছা কর তবে) জমা করে রেখো। কারণ গত বছর তো মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে ছিল। আর তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাদের সাহায্য করো। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, মুত্বলাক্ব হাদীসসমূহ প্রমাণ করে যে, কুরবানীর গোশত খাওয়ার পরিমাণের ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। আর কুরবানী দাতার জন্য কুরবানীর গোশতের কিছু অংশ খাওয়া আর বাকীটুকু সাদাকা এবং হাদিয়্যাহ্ করা মুস্তাহাব।
ইমাম শাফি‘ঈর বর্ণনা হলো কুরবানীর গোশতকে তিন ভাগে বিভক্ত করা মুস্তাহাব। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নিজেরা খাও, অপরকে খাওয়াও আর সাদাকা কর। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেছেন, ইমাম শাফি‘ঈ ছাড়া অন্যরা বলতেন অর্ধেক নিজে খাওয়া আর বাকী অর্ধেক অপরকে খাওয়ানো মুস্তাহাব। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, জমহূরের মত হলো কুরবানীর গোশত থেকে খাওয়া আবশ্যক নয়। এ ক্ষেত্রে আদেশটি অনুমতির জন্য। আর তার থেকে সাদাকা করার বিষয়ে সঠিক বক্তব্য হলো যতটুকু করলে সাদাকা বুঝাবে ততটুকু করা আবশ্যক। তবে বেশি অংশ সাদাকা করাই উত্তম। ইবনু হাযম (রহঃ) তার ‘মুহাল্লা’ নামক গ্রন্থে বলেন, প্রত্যেক কুরবানীদাতার ওপর আবশ্যক হলো, সে তার কুরবানীর গোশত হতে এক লোকমা হলেও খাবে এবং কম হোক বা বেশি হোক সাদাকা করবে। তবে তার থেকে ধনী, কাফিরদের খাওয়ানো এবং উপঢৌকন দেয়া মুবাহ।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) তাঁর ‘‘আল মুগনী’’ নামক গ্রন্থে বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, আমরা ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীসকে গ্রহণ করব। যেখানে বর্ণিত আছে কুরবানীদাতা এক তৃতীয়াংশ খাবে। এক তৃতীয়াংশ যাকে খুশি খাওয়াবে, আর এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদের সাদাকা করবে। ‘আলক্বমাহ্ (রহঃ) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ) আমাকে একটি হাদীয়াহ দিয়ে প্রেরণ করে বললেন, যেন আমি এক তৃতীয়াংশ খাই, এক তৃতীয়াংশ তার ভাই ‘উতবাহ্’র পরিবারে প্রেরণ করি আর বাকী এক-তৃতীয়াংশ সাদাকা করি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কুরবানী এবং হাদীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ তোমার, এক তৃতীয়াংশ তোমার পরিবারের আর এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদের। আদ্ দুররুল মুখতারের লেখক বলেন, কুরবানীর গোশত থেকে খাবে, ধনীদের খাওয়াবে এবং জমা করে রাখবে তবে সাদাকা এক-তৃতীয়াংশের কম না হওয়ায় ভাল।
ভাষ্যকার ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, ‘উলামাহগণ فَكُلُوْا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيْرَ (সূরা আল হজ্জ ২২ : ২৮) আয়াতে খাওয়ার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তার হুকুম নিয়ে মতবিরোধ করেছেন যে, তা ওয়াজিব না মুস্তাহাব। জমহূরের মতে, আয়াতদ্বয়ে ‘আমর বা খাওয়ার আদেশ দ্বারা উদ্দেশ্য মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। ইবনু কাসীর, ইবনু জারীর এবং কুরতুবী (রহঃ) সকলেই তাদের তাফসীরে আয়াতদ্বয়ের আমরের দ্বারা মুস্তাহাব উদ্দেশ্য এই তাফসীর করেছেন। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন, খাওয়া আবশ্যক এ বক্তব্যটি বিরল।
২৬৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১১ঃ হজ্জ
হাদীস নং : ২৬৪৫
وَعَنْ نُبَيْشَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّا كُنَّا نَهَيْنَا عَنْ لُحُوْمِهَا أَنْ تَأْكُلُوْهَا فَوْقَ ثَلَاثٍ لِكَىْ تَسَعَكُمْ. جَاءَ اللّٰهُ بالسَّعَةِ فَكُلُوْا وَادَّخِرُوْا وَأْتَجِرُوْا. أَلَا وَإِنَّ هٰذِهِ الْأَيَّامَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ وذِكْرِ اللّٰهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
নুবায়শাহ্ আল হুযালী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (বিগত বছর) আমি তোমাদেরকে তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশ্ত (গোসত/গোশত) রেখে খেতে নিষেধ করেছিলাম যাতে তোমাদের সকলকে শামিল করে। এ বছর আল্লাহ তা‘আলা স্বচ্ছলতা দান করেছেন। সুতরাং এ বছর তোমরা খাও ও জমা রাখো এবং (দান করে) সাওয়াব হাসিল করো। তবে জেনে রাখো, (ঈদের) এ দিনগুলো হলো খাবার দাবার ও আল্লাহর যিকিরের দিন। (আবূ দাঊদ)[১]