২২৮৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৮৭
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ لِلّٰهِ تَعَالٰى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ». وَفِىْ رِوَايَةٍ: «وَهُوَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বই- এক কম একশ’টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বিজোড়, (তাই) বিজোড়কে ভালবাসেন। (বুখারী, মুসলিম)[১]
আল্লামা ইবনু মালিক (রহঃ) বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ’’ নামটি মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার স্বত্বাগত নাম, এটা গুণবাচক নাম নয়। ‘‘আল্লাহ’’ নামটি ব্যতীত অন্য যত নাম রয়েছে সবগুলো নামকে ‘‘আল্লাহ’’ নামের দিকে সম্পর্কিত করা হয়। যেমন- বলা হয়, ‘‘আল্ কারীম’’ এটা আল্লাহর নাম, ‘‘আর্ রহীম’’ এটা আল্লাহর নাম কিন্তু এ কথা বলা হয় না যে, ‘‘আল্লাহ’’ আর্ রহীম-এর বা আল্ কারীম-এর নাম। ‘আল্লামা ইবনু জারীর আত্ব ত্ববারী ও ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ)-ও এমন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
আল্লামা কুস্তুলানী (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা নাম ও গুণাবলীসমূহ যেহেতু তাওফীকি, অর্থাৎ- এগুলো জানার মাধ্যমটি ওহীর উপর নির্ভরশীল। কোন নাম বা গুণাবলী আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করতে হলে তা অবশ্যই কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞান যতই বেশী হোক না কেন এখানে জ্ঞানের বিন্দু পরিমাণ দখল নেই। এ ক্ষেত্রে ভুল করাটা এক জঘন্য ভুল হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমানভিত্তিক কোন কথা বলা ঠিক নয়।
আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার নাম ও গুণাবলীর সংখ্যার ক্ষেত্রে কেউ কেউ (تسعة وتسعين ৯৯) আবার কেউ কেউ (بسبعة وسبعين ৭৭) অথবা (سبعة وتسعين ৯৭) অথবা (تسعة وسبعين ৭৯) এ বলেছেন, এটি আসলে লেখকের ভুল হয়েছে। কারণ এ সংখ্যাগুলো ‘‘আরাবীতে দেখতে একই রকম দেখায়, তাই বিষয়টি এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে যে বর্ণনাটিতে مائة إلا واحدا তথা ১০০ থেকে একটি কম আছে সে বর্ণনাটি উপরোক্ত সন্দেহের অবসান ঘটিয়েছে এবং স্পষ্ট প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, এ সংখ্যায় আসলে ৯৭, ৭৯, ৭৭ ইত্যাদি কোনটি নয় বরং সংখ্যাটি হলো ৯৯।
একটি মতবিরোধ ও তার সমাধানঃ অত্র হাদীসটি কি মহান আল্লাহর নামের সীমাবদ্ধতা তথা মহান আল্লাহর নাম ৯৯টিতে সীমাবদ্ধ এমন বুঝাচ্ছে? না-কি মহান আল্লাহর এতদ্ব্যতীত আরো নাম ও গুণাবলী রয়েছে? তবে এ ৯৯ নিরানব্বইটি মুখস্থ করলে এবং সেগুলো সম্পর্কে ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস ঠিক রেখে যথাযথ ‘আমাল করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে- এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের ফাতওয়াহ হচ্ছে দ্বিতীয় মতটি অর্থাৎ- আল্লাহর নাম ৯৯টিতে সীমাবদ্ধ নয় বরং তার আরো সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলী রয়েছে যা কোন সৃষ্টি জানে না।
যেমন- এ ব্যাপারে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) তার মুসনাদে রিওয়ায়াত করেছেন আর ইমাম ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন, হাদীসটি হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
أسألك بكل اسم هو لك سميت به نفسك أو أنزلته في كتابك أو علمته أحداً من خلقك أو استأثرت به في علم الغيب عندك.
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাই তোমার নিজের জন্য তোমার রাখা নামের মাধ্যমে অথবা যেগুলো তুমি তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ সেগুলোর মাধ্যমে অথবা যা তোমার কোন বানদাকে শিখিয়েছে অথবা যেগুলো তুমি কাউকে জানাওনি সেগুলোর মাধ্যমে।
ইমাম মালিক (রহঃ) তার মুয়াত্ত্বা-তে কা‘ব আল্ আহবার থেকে বর্ণনা করেন, যে কা‘ব আল্ আহবার দু‘আর ক্ষেত্রে বলতেন,
وَأَسْاَلُكَ بِأَسْمَائِكَ الْحُسْنٰى مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ.
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে দু‘আ করছি, যে নামগুলো আমি জানি আর যেগুলো জানি না সবগুলোর মাধ্যমে।
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করে বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপস্থিতিতেও এরূপ দু‘আ করতেন।
‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণ হলো আল্লাহর নাম ও গুণাবলী এগুলো এবং এর সংখ্যা ৯৯, কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, এর উপর আরো কত নাম ও গুণাবলী আছে- এ হাদীস সেগুলোকে নিষেধ করছে। বিশেষ করে এগুলোর কথা উল্লেখ করার কারণ হলো এগুলো হচ্ছে বেশী ব্যবহৃত অর্থগতভাবে বেশী স্পষ্ট।
‘আল্লামা কুরতুবী তার আল্ মুফহাম ও ‘আল্লামা তুরবিশতী তার শারহে মাসাবীহ-তে এমনই বলেছেন। কেউ কেউ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য করেছেন।
এমনকি ইবনুল ‘আরাবী তার আত্ তিরমিযীর ব্যাখ্যায় কিছু ‘আলিম থেকে বর্ণনা করেছেন। যে, কিতাব সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর সংখ্যা ১,০০০ (এক হাজার)।
আমি (‘উবায়দুল্লাহ মুবারাকপূরী) বলব, অনেকেই মহান আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর সংখ্যা ৯৯-তে সীমাবদ্ধ করেছেন।
আল্লামা ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, যারা মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর সংখ্যা ৯৯-এর বেশী বলার পক্ষে তারা এ ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত করে থাকেন। তিনি দলীল হিসেবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা مائة إلا واحدا কে পেশ করেন। তিনি গবেষণা করে বলেন, যদি আল্লাহর নাম ৯৯-এর অধিক থাকত, তাহলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مائة إلا واحدا না বলে শুধুমাত্র (مائة ১০০) ব্যবহার করতেন।
অত্র হাদীসে আল্লাহর নাম ও গুণাবলী ৯৯-টিতে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করার হিকমাহ্/রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন কথা বলেছেন।
(১) ইমাম ফখরুদ্দীন আর্ রাযী বলেন, অধিকাংশ ‘আলিম বলেছেন, (أنه تعبد لا يعقل معناه) অর্থাৎ- এটা এমন ধরনের ‘ইবাদাত যার অর্থ বুঝার প্রয়োজন নেই।
(২) কেউ কেউ বলেছেন হাদীসে এরূপ কথা হলেও কুরআন কারীমে তা বর্ণনা করা হয়েছে।
(৩) অপর একদল ‘আলিম বলেন, আসমায়ে হুসনায় সংখ্যা ১০০, তবে একটি আল্লাহ কাউকে জানাননি আর সেটি হচ্ছে ইসমে আ‘যম।
(৪) তবে কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহর নাম ১০০টি- এ বিষয়টি স্পষ্ট আর ১০০ নম্বরটি হলো الله ‘‘আল্লাহ’’ নামটি ‘আল্লামা সুহায়লী এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন। তিনি বলেছেন, জান্নাতের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আল্লাহর নামও ১০০টি। মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَلِلهِ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوهُ بِهَا
‘‘আল্লাহর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম যেগুলোর মাধ্যমে তোমরা তাকে ডাকো।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৮০)
(مَنْ أَحْصَاهَا) মুসলিম-এর এক বর্ণনায় (من حفظها) আছে, আর বুখারীর এক বর্ণনায় আছে (لا يحفظها أحد إلا دخل الجنة) যে কেউ এ নামগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ রিওয়ায়াতগুলো (مَنْ أَحْصَاهَا)-এর ব্যাখ্যাস্বরূপ, তাই إحصاء অর্থ الحفظ। আবার কেউ কেউ বলেছেন أَحْصَاهَا অর্থ হলো (قرأها كلمة كلمة كأنه يعدها) অর্থাৎ- শব্দে শব্দে পড়বে গণনার ন্যায়।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা করা।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার দাবী অনুপাতে ‘আমাল করা। তবে প্রথম তাফসীরটিই প্রাধান্য, কারণ তা আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী মিল আছে।
‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) ও অনুরূপ আরো অনেক বিশ্লেষক বলেছেন إحصاء এর অর্থ الحفظ হওয়াই বেশী স্পষ্ট কারণ তা অপর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল আযকার প্রণেতা বলেন, এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত।
‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, الإحصاء এখানে কয়েকটি অর্থের সম্ভাবনা রাখে।
(১) সবগুলো নামই যপে কোনটি যেন বাদ না দেয়।
(২) الإحصاء অর্থ إلا طاقة তথা সামর্থ/সক্ষমতা। যেমন- আল্লাহ বলেন, عَلِمَ أَنْ لَنْ تُحْصُوهُ
অর্থাৎ- ‘‘নামগুলো যখন পড়বে তখন সাধ্যমত এর হাক্বীকাত সম্পর্কে চিন্তা করবে।’’ (সূরা আল মুযযাম্মিল ৭৩ : ২০)
যেমন- যখন الرزاق নাম ডাকবে তখন رزق তথা রিয্ক আল্লাহই দেন- এ কথা বিশ্বাস করবে।
(৩) الأسماء দ্বারা উদ্দেশ্য হলো العقل তথা জ্ঞান যেমন- ‘আরবদের কা‘বা فلان ذو حصاة অর্থাৎ- অমুক ব্যক্তি জ্ঞানী বুঝাতে, ‘‘আরবরা فلان ذو حصاة শব্দ ব্যবহার করে থাকে।
আবার কেউ বলেছেন, من أحصاها অর্থ হলো, عرفها অর্থাৎ- নামগুলো বুঝল আর যে এ নামগুলো বুঝাল সে মু’মিন না হয়ে থাকতে পারে না আর মু’মিন জান্নাতেই যাবে জাহান্নামে নয়।
২২৮৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৮৮
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ لِلّٰهِ تَعَالٰى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ هُوَ اللّٰهُ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيمُ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ الْغَفَّارُ الْقَهَّارُ الْوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الْخَافِضُ الرَّافِعُ الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ الْحَكَمُ الْعَدْلُ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ الْحَلِيمُ الْعَظِيمُ الْغَفُورُ الشَّكورُ العَلِىُّ الكَبِيرُ الحَفِيظُ المُقِيتُ الْحَسِيبُ الْجَلِيلُ الْكَرِيمُ الرَّقِيبُ الْمُجِيبُ الْوَاسِعُ الْحَكِيمُ الْوَدُودُ الْمَجِيدُ الْبَاعِثُ الشَّهِيدُ الْحَقُّ الْوَكِيلُ الْقَوِىُّ الْمَتِينُ الْوَلِىُّ الْحَمِيدُ الْمُحْصِى الْمُبْدِئُ الْمُعِيدُ الْمُحْيِىُ المُمِيتُ الحَىُّ القَيُّومُ الوَاجِدُ المَاجِدُ الْوَاحِدُ الأحَدُ الصَّمَدُ الْقَادِرُ الْمُقْتَدِرُ الْمُقَدِّمُ الْمُؤَخِّرُ الْأَوَّلُ الْاٰخِرُ الظَّاهِرُ الْبَاطِنُ الْوَالِى الْمُتَعَالِى الْبَرُّ التَّوَّابُ الْمُنْتَقِمُ العَفُوُّ الرَّؤوْفُ مَالِكُ الْمُلْكِ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ الْمُقْسِطُ الْجَامِعُ الْغَنِىُّ الْمُغْنِى الْمَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّورُ الْهَادِى الْبَدِيعُ الْبَاقِى الْوَارِثُ الرَّشِيْدُ الصَّبُورُ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ والبيهقىُّ فِى الدَّعْوَاتِ الْكَبِيْرِ. وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে নামগুলোর মধ্যে একটি নাম আল্ল-হ- যিনি ছাড়া আর কোন মা‘বূদ নেই। আর্ রহমান- দয়াময় বা মেহেরবান। যার দয়া বা মেহেরবানী সাড়া বিশ্বকে ছেয়ে আছে। আর্ রহীম- করুণা বা বিশেষ দয়ার অধিকারী, যে করুণা শুধু মু’মিনদের প্রতি করা হয়। আল মালিক- রাজাধিরাজ, বাদশাহ। আল কুদ্দূস- অতি পাক-পবিত্র, ধ্বংস বা কোন অপশক্তি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। আস্ সালা-ম- শান্তিময় ও নিরাপদ, কোনরূপ অশান্তি তাঁকে ছুঁতে পারে না। আল মু’মিন- নিরাপত্তাদাতা বা নিরাপদকারী। আল মুহায়মিনু- রক্ষণাবেক্ষণকারী। আল ‘আযীয- প্রভাবশালী, অন্যের ওপর বিজয়ী। আল জাব্বা-র- কঠিন-কঠোর, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধনকারী। আল মুতাকাব্বিরু- অহংকারের অধিকারী, যাঁর জন্য অহংকার করাই শোভা পায়।
আল খ-লিক্ব- স্রষ্টা। আল বা-রী- ত্রুটিহীন সৃষ্টিকারী। আল মুসাব্বির- প্রকল্পক ও নকশা অংকনকারী, ডিজাইনার। আল গাফফা-র- বড় ক্ষমাশীল, যিনি অপরাধ ঢেকে রাখেন এবং অসংখ্য অপরাধ ক্ষমা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। আল কহহা-র- সকল বস্ত্ত যাঁর ক্ষমতার অধীন, অর্থাৎ- ক্ষমতা প্রয়োগে যাঁর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আল ওয়াহহা-ব- বড় দাতা, যাঁর দান অসীম। আর্ রাযযা-ক- রিযকদাতা। আল ফাত্তা-হ- যিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সৃষ্টির মীমাংসাকারী, বিপদমুক্তকারী। আল ‘আলীম- বড় জ্ঞাতা, যিনি পূর্বাপর সবকিছু জানেন। আল, ক্ব-বিয- রিযক ইত্যাদির সংকোচনকারী। আল বা-সিত্ব- রিযকসহ ইত্যাদির সম্প্রসারণকারী। আল খ-ফিয- যিনি নীচে নামান। আর্ র-ফি‘উ- যিনি উপরে উঠান। আল মু‘ইযযু- সম্মান ও পূর্ণতা দানকারী। আল মুযিল্লু- অপমান ও অপূর্ণতা দানকারী। আস্ সামী‘উ- সর্বশ্রোতা, উচ্চস্বর-নিম্বস্বর সকল স্বরের শ্রোতা। আল বাসীর- দর্শক, ছোট-বড় সকল বস্ত্তর।
আল হাকাম- নির্দেশ দানকারী, বিধানকর্তা। আল ‘আদলু- ন্যায়বিচারক, যিনি যা উচিত তা-ই করেন। আল লাত্বীফ- যিনি সৃষ্টির যখন যা আবশ্যক তা করে দেন; অনুগ্রহকারী, সূক্ষ্মদর্শী বা যিনি অতি সূক্ষ্ম বিষয় সম্পর্কেও অবগত। আল খবীর- যিনি গুপ্ত রহস্যাদি সম্পর্কে অবগত। আল হালীম- ধৈর্যশীল, যিনি অপরাধ জেনেও সহজে শাস্তি দেন না। আল ‘আযীম- বিরাট মহাসম্মানী। আল গাফূর- যিনি অপরাধ গোপন রাখেন এবং অতি জঘন্য অপরাধও ক্ষমা করেন। আশ্ শাকূর- কৃতজ্ঞ, যিনি অল্পে বেশী পুরস্কার দেন। আল ‘আলীয়্যু- সর্বোচ্চ সমাসীন; সর্বোপরি। আল কাবীর- বিরাট, মহান, ধারণার ঊর্ধে বড়। আল হাফীয- বড় রক্ষাকারী, যিনি বান্দাদের সব বিষয় লক্ষ্য রাখেন। আল মুক্বীতু- খাদ্যদাতা; দৈহিক ও আত্মিক শক্তিদাতা। আল হাসীবু- যিনি অন্যের জন্য যথেষ্ট হন; যিনি যার জন্য যা যথেষ্ট তা দান করেন।
আল জালীলু- গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত; যাঁর মহিমা অতুলনীয়। আল কারীমু- বড় দাতা, আশার অধিক দাতা; যিনি বিনা চাওয়ায় দান করেন। আর্ রক্বীবু- যিনি সকলের সকল বিষয় লক্ষ্য রাখেন এবং সর্বদা নখদর্পণে থাকেন। আল মুজীবু- উত্তরদাতা, যিনি ডাকে সাড়া দেন। আল ওয়া-সি‘উ- সম্প্রসারণকারী; যাঁর দান, জ্ঞান, দয়া ও রাজ্য বিপুল ও সম্প্রসারিত। আল হাকীমু- প্রজ্ঞাবান তত্ত্বজ্ঞানী, যিনি প্রতিটি বিষয় উত্তমরূপে ও নিখুঁতভাবে সমাধা করেন। আল ওয়াদূদু- যিনি বান্দার কল্যাণকে পছন্দ করেন। আল মাজীদু- অসীম অনুগ্রহকারী। আল বা-‘ইসু- প্রেরক, রসূল প্রেরণকারী, রিযক প্রেরণকারী, কবর থেকে হাশরে প্রেরণকারী। আশ্ শাহীদু- বান্দার প্রতিটি কাজের সাক্ষী, যিনি প্রকাশ্য বিষয় অবগত, আল হাক্কু- সত্য ও সত্য প্রকাশকারী, যিনি প্রজ্ঞা অনুসারে কাজ করেন। আল ওয়াকীলু- কার্যকারক, যিনি বান্দাদের কাজের যোগানদাতা। আল কবিয়্যু- শক্তিবান, শক্তির অধিকারী। আল মাতীনু- বড় ক্ষমতাবান, যার ওপর কারো কোন প্রকার ক্ষমতা নেই। আল ওয়ালিয়্যু- যিনি মু’মিনদের অভিভাবক, ভালবাসেন ও সাহায্য করেন।
আল হামীদু- প্রশংসিত, একমাত্র প্রশংসার যোগ্য। আল মুহসী- হিসাবরক্ষক, বান্দারা যা করে তিনি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখেন। আল মুব্দিউ- বিনা নমুনায় স্রষ্টা, যিনি মডেল না দেখে সৃষ্টি করেন। আল মু‘ঈদু- মৃত্যুর পর পুনঃসৃষ্টিকারী। যার পুনঃ সৃষ্টি, যিনি বিনা মডেলে সৃষ্টি করেন। আল মুহীউ- পুনরায় জীবিতকারী, আল মুমীতু- পুনরায় মৃত্যু দানকারী, যার পুনরায় সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে। আল হাইয়্যু- চিরঞ্জীব, আল কইয়্যূমু- স্বয়ং প্রতিষ্ঠিত, চিরস্থায়ী। আল ওয়া-জিদু- যিনি যাই চান তাই পান। আল মা-জীদু- বড় দাতা। আল ওয়া-হিদুল আহাদু- একক ও অদ্বিতীয়, যাঁর কোন শারীক নেই। আস্ সামাদু- প্রধান, প্রভু; যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন কিন্তু সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আল ক-দিরু- ক্ষমতাবান, যিনি ক্ষমতা প্রয়োগে কারো মুখাপেক্ষী নন। আল মুকতাদিরু- সকলের ওপর যাঁর ক্ষমতা রয়েছে, সার্বভৌম, যাঁর বিধান চরম। আল মুকদ্দিমু- যিনি যাকে চান নিকটে করেন এবং আগে বাড়ান। আল মুআখখিরু- যিনি যাকে চান দূরে রাখেন বা পিছনে করেন। আল আও্ওয়ালু- প্রথম, অনাদি। আল আ-খিরু- সর্বশেষ, অনন্ত। আয্ যা-হিরু- যিনি ব্যক্ত, প্রকট গুণে ও নিদর্শনে। আল বা-ত্বিনু- যিনি গুপ্ত সত্তাতে। আল ওয়া-লিয়্যু- অভিভাবক, মুরুব্বী।
আল মুতা‘আ-লিয়্যু- সর্বোপরি। আল বাররু- মুহসিন, অনুগ্রহকারী। আত্ তাও্ওয়া-বু- তাওবাহ্ কবূলকারী, যিনি অপরাধে অনুশোচনাকারীর প্রতি পুনঃঅনুগ্রহ করেন। আল মুনতাকিমু- প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল আফুব্বু- বড়ই ক্ষমাশীল। আর্ রঊফু- বড়ই দয়ালু। মালিকুল মুল্ক- রাজাধিরাজ, যাঁর রাজ্যে তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। যুল্ জালা-লি ওয়াল ইকর-ম- মহিমা ও সম্মানের অধিকারী। আল মুকসিত্বু- অত্যাচার দমনকারী, উৎপীড়ক থেকে উৎপীড়িতের প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল জা-মি‘উ- কিয়ামাতে বান্দাদের একত্রকারী অথবা সর্বগুণের অধিকারী।
আল গনিয়্যু- বেনিয়াজ, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল মুগনিয়্যু- যিনি কাউকেও কারো মুখাপেক্ষী হতে বাঁচিয়ে রাখেন। আল মা-নি‘উ- বিপদে বাধাদানকারী। আয্ যাররু- যিনি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন। আন্ না-ফি‘উ- উপকারী, যিনি উপকারের ক্ষমতা রাখেন। আন্ নূরু- আলোকোজ্জ্বল, প্রভা, প্রভাকর। আল হা-দিয়ু- পথপ্রদর্শক (যারা তাঁর অনুসরণ করে তাদের)। আল বাদী‘উ- অদ্বিতীয়, অনুপম অথবা যিনি বিনা আদর্শে গড়েন। আল বা-ক্বী- যিনি সর্বদা আছেন, সৃষ্টি ধ্বংসের পরেও যিনি থাকবেন। আল ওয়া-রিসু- উত্তরাধিকারী, সকল শেষ হবে আর তিনি সকলের উত্তরাধিকারী হবেন। আর্ রশীদু- কারো পরামর্শ বা জিজ্ঞাসু ছাড়া যাঁর কাজ উত্তম ও ভাল হয়। আস্ সাবূরু- বড়ই ধৈর্যশীল। (তিরমিযী, বায়হাক্বী-দা‘ওয়াতুল কাবীর; তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[১]
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) সহ অনেকেই বলেছেন এর অর্থ হলো, মুখস্থ করলো, এটাই অধিকাংশদের কথা। আর এটাই সঠিক।
আবূ যায়দ আল বালখী (রহঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় ‘আমাল করলে জান্নাতে যাওয়া যায় এমন কথা বলেছেন। সুতরাং এখানে এরূপ ৯৯টি নাম মুখস্থ করলেই সহজভাবে জান্নাতে যাওয়ার যে কথাটি বলা হয়েছে তার সম্পর্কে একটি প্রশ্ন থেকে যায়।
এ প্রশ্নের উত্তর হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীস যেহেতু সহীহ সেহেতু তা আমরা মেনে নিব। আল্লাহর অনুগ্রহ খুবই প্রশস্ত।
২২৮৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৮৯
وَعَن بُرَيْدَةَ: أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: اللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِىْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَه كُفُوًا أَحَدٌ فَقَالَ: «دَعَا اللّٰهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ الَّذِىْ إِذَا سُئِلَ بِه أَعْطٰى وَإِذَا دُعِىَ بِه أَجَابَ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা‘বূদ নেই। তুমি এক ও অনন্য। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্মও দেননি। কারো থেকে জন্মও নন। যার কোন সমকক্ষ নেই।’ তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে তার ইস্মে আ‘যম বা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামে ডাকল। এ নামে ডেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে তা দান করেন এবং কেউ ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[১]
২২৯০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯০
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِىِّ ﷺ فِى الْمَسْجِدِ وَرَجُلٌ يُصَلِّىْ فَقَالَ: اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْحَنَّانُ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ أَسْأَلُكَ فَقَالَ النَّبِىُّ ﷺ: «دَعَا اللّٰهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ الَّذِىْ إِذَا دُعِىَ بِه أَجَابَ وَإِذَا سُئِلَ بِه أَعْطٰى». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাসজিদে নাবাবীতে বসে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি সলাত আদায় করছিল এবং সলাতের পর বলছিল, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ তোমারই জন্য সব প্রশংসা। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। তুমিই সবচেয়ে বড় দয়ালু, বড়দাতা। তুমিই আসমান জমিনের স্রষ্টা। হে মর্যাদা ও দান করার মালিক! হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাতা! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আল্লাহকে ইস্মে আ‘যম-এর সাথে ডাকে তিনি তাতে সাড়া দেন এবং যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয় তখন তিনি তা দান করেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[১]
২২৯১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯১
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: اسْمُ اللّٰهِ الْأَعْظَمُ فِىْ هَاتَيْنِ الْاٰيَتَيْنِ: ﴿وَإِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ﴾
وفاتحة ﴿اٰلِ عِمْرَانَ﴾ : ﴿الٓمْ اَللهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ﴾ رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর ইস্মে আ‘যম এই দু’ আয়াতের মধ্যে রয়েছে, ওয়া ইলা-হুকুম ইলা-হূ ওয়া-হিদ, লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়ার রহমা-নুর রহীম।
এছাড়াও সূরা আ-লি ‘ইমরান-এর শুরুতে আলিফ লা-ম মী-ম আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[১]
ইমাম জাযরী তাঁর ‘হিসনুল মুসলিম’ কিতাবে বলেন, ইসমে আ‘যম হলো, اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, ইসমে আ‘যম হলো, لا إله إلا هو الرحمن الرحيم الحي القيوم।
২২৯২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯২
وَعَنْ سَعْدَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: دَعْوَةُ ذِى النُّونِ إِذا دَعَا رَبَّه وَهُوَ فِىْ بَطْنِ الْحُوتِ ﴿لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّىْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ﴾
لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِىْ شَىْءٍ إلاَّ استجابَ لَه. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ
সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাছওয়ালা নাবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে গিয়ে যখন দু‘আ পড়েছিলেন তা হলো এই ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’ অর্থাৎ- ‘‘তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’- (সূরা ইউনুস ১০ : ৮৭)।
যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু‘আ পাঠ করবে, তার দু‘আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে। (আহমদ, তিরমিযী)[১]
জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিনে, হে আল্লাহর নাবী! এ দু‘আটি ইউনুস (আঃ)-এর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট ছিল? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি কুরআন পড়োনি? যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ
وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذٰلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ
‘‘আমি তাকে মুক্তি দিলাম এমনিভাবে আমি মু’মিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’’ (সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ৮৮)
অর্থাৎ- দু‘আটি আল্লাহর নাবী ইউনুস (আঃ)-এর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট নয় তা সমস্ত মু’মিনের জন্য প্রযোজ্য।
২২৯৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৩
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ الْمَسْجِدَ عِشَاءً فَإِذَا رَجُلٌ يَقْرَأُ وَيَرْفَعُ صَوْتَه فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ أَتَقُولُ: هٰذَا مُرَاءٍ؟ قَالَ: «بَلْ مُؤْمِنٌ مُنِيبٌ» قَالَ: وَأَبُو مُوسَى الْأَشْعَرِىُّ يَقْرَأُ وَيَرْفَعُ صَوْتَه فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَتَسَمَّعُ لِقِرَاءَتِه ثُمَّ جَلَسَ أَبُو مُوسٰى يَدْعُو فَقَالَ: اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أُشْهِدُكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَحَدًا صَمَدًا لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا أَحَدٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَقَدْ سَأَلَ اللّٰهَ بِاسْمِهِ الَّذِىْ إِذَا سُئِلَ بِه أَعْطٰى وَإِذَا دُعِىَ بِه أَجَابَ» قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ أُخْبِرُه بِمَا سَمِعْتُ مِنْكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ» فَأَخْبَرْتُه بِقَوْلِ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ لِىْ: أَنْتَ الْيَوْمَ لِىْ أَخٌ صَدِيقٌ حَدَّثْتَنِىْ بِحَدِيثِ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ. رَوَاهُ رَزِيْنٌ
বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ‘ইশার সলাতের সময় মাসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন দেখি জনৈক ব্যক্তি (সলাতে) কুরআন পড়ছেন এবং তার নিজের গলার স্বর উচ্চ করছেন। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এভাবে (সলাতে) কুরআন পড়াকে কি আপনি রিয়া বা প্রদর্শনী বলবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললন, না। বরং এ ব্যক্তি একজন বিনয়ী মু’মিন। বুরায়দাহ্ (রাঃ) বলেন, আবূ মূসা আল আশ্‘আরীই কুরআন পড়ছিলেন এবং তা উচ্চৈঃস্বরে পড়ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিরাআত শুনছিলেন। তারপর আবূ মূসা বসে এ দু‘আ করতে লাগলেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তুমি এক ও তুমি সকলের নির্ভরস্থল, অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্মও দেননি, কারো থেকে জন্মও নন এবং যার কোন সমকক্ষও নেই।’’
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই সে আল্লাহর ঐ নামের সাথে তাঁর কাছে প্রার্থনা করল, যে নাম ধরে যখন যা প্রার্থনা করা হয়, তখন তিনি তা দান করেন এবং ঐ নামের সাথে যখন তাঁকে ডাকে, তখন তিনি সে ডাকে সাড়া দেন। বুরায়দাহ্ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে এটা বলব, যা আপনার কাছে শুনলাম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ (বলো)। অতঃপর আমি তাঁকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা বলে শুনালাম। তখন আবূ মূসা (রাঃ) আমাকে বললেন, আজ থেকে আপনি আমার প্রিয় ভাই। কারণ আপনি আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সব কথা শুনালেন। (রযীন)[১]
‘উলামাহমগণ মতবিরোধ করেছেন, একদল বলেছেন, আল্লাহর সব নামই ইসমে আ‘যম-এর কোন সুনির্দিষ্টতা নেই। তবে অধিকাংশ ‘আলিমগণের মত হচ্ছে ইসমে আ‘যম সুনির্দিষ্ট যা উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
২২৯৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৪
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «أَفْضَلُ الْكَلَامِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ
وَفِىْ رِوَايَةٍ: أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللّٰهِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ لَا يَضُرُّكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম (মর্যাদাপূর্ণ) কালাম বা বাক্য হলো চারটি- (১) সুবহা-নাল্ল-হ [আল্লাহ পবিত্র], (২) ওয়াল হামদুলিল্লা-হ [আল্লাহর জন্য প্রশংসা], (৩) ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ [আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই], (৪) ওয়াল্ল-হু আকবার [আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান]।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় বাক্য চারটি- (১) সুবহা-নাল্ল-হ, (২) আল হামদুলিল্লা-হ, (৩) লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ও (৪) ওয়াল্ল-হু আকবার। এ চারটি কালিমার যে কোন একটি প্রথমে (আগ-পিছ করে) বললে তাতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (মুসলিম)[১]
নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস এবং এর অনুরূপ হাদীসকে মানুষের কথার উপর প্রয়োগ করা হবে অন্যথায় কুরআনই সর্বোত্তম কালাম। এমনিভাবে কুরআন পাঠ করা সাধারণ তাসবীহ তাহলীল থেকে উত্তম। পক্ষান্তরে কোন সময় বা অবস্থাতে বর্ণিত দু‘আগুলো নিয়ে ব্যস্ত হওয়া সর্বোত্তম।
কারী বলেন, সর্বোত্তম কথা চারটি অর্থাৎ- মানুষের কথার মাঝে সর্বোত্তম কথা। (كلام) ‘‘কালাম’’ থেকে মানুষের কথা উদ্দেশ্য করার কারণ হল দু’টি। প্রথমত যেহেতু চতুর্থ নম্বর কালামটি কুরআনে পাওয়া যায়নি। আর কুরআনের বাণীর উপর অন্য বাণীকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
আর দ্বিতীয়ত যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘এগুলো কুরআনের পর সর্বোত্তম কথা’’। আর এগুলো কুরআনেরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ- এদের অধিকাংশ তথা প্রথম তিনটি যদিও কুরআনে পাওয়া গেছে কিন্তু চতুর্থটি কুরআনে পাওয়া যায়নি। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘‘আর এগুলো কুরআনের অন্তর্ভুক্ত’’- এ উক্তিটি আধিক্যের উপর নির্ভর করছে। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, কারী ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি’’ দ্বারা মুসনাদে আহমাদে সামুরাহ্ হতে বর্ণিত হাদীসটি বুঝিয়েছেন যার ভাষ্য হল, ‘‘কুরআনের পর সর্বোত্তম কালাম চারটি আর এগুলো কুরআনেরই অন্তর্ভুক্ত তুমি এগুলোর যেটি শুরু করবে তা তোমার ক্ষতি করবে না’’।
এক মতে বলা হয়েছে, ‘‘এগুলো কুরআনের অন্তর্ভুক্ত’’- এ কথার মর্ম হল এ বাক্যগুলো কুরআনে আলাদাভাবে এসেছে একত্রিতভাবে আসেনি। যেহেতু কুরআনে বর্ণিত হয়েছে فَسُبْحَانَ اللّٰهِ حِينَ تُمْسُونَ ‘‘অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর’’- (সূরা আর্ রূম ৩০ : ১৭)। (الحمد لله كثيرا) বাক্যটি এসেছে। আল্লাহর অপর বাণীতে এসেছে فَاعْلَمْ أَنَّهٗ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ ‘‘কাজেই জেনে রেখ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই’’- (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ১৯)। পক্ষান্তরে (الله أكبر) উক্তি, এ গঠনে কুরআনে অবিদ্যমান। তবে এর অর্থটি নিমেণাক্ত আয়াতসমূহে পাওয়া যায়। আল্লাহর বাণী সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ১১১ নং আয়াতে وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا এবং সূরা আল মুদ্দাস্সির ৭৪ : ৩ নং আয়াতে وَرَبَّكَ فَكَبِّر হতে তা লাভ করা যায়। আর তা আল্লাহর বাণী সূরা আল ‘আনকাবূত ২৯ : ৪৫ নং আয়াতে وَلَذِكْرُ اللّٰهِ أَكْبَرُ وَاللهُ এবং অপর বাণী সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৭২ নং আয়াত وَرِضْوَانٌ مِنَ اللّٰهِ أَكْبَرُ মূল কথা হল, এ ধারাবাহিকতায় সংগৃহীত কথাগুলো কুরআনের অন্তর্ভুক্ত না। এজন্যই জাযরী বলেন, এগুলো থেকে প্রত্যেকটি কুরআনে এসেছে।
কারী বলেন, সম্ভাবনা রাখছে- হাদীসে তাঁর উক্তি ‘‘সর্বোত্তম কালাম’’ কথাটি আল্লাহর কালামকেও অন্তর্ভুক্ত করবে, কেননা এগুলো শাব্দিকভাবে আল্লাহর কালামে পাওয়া যায় তবে চতুর্থটি ছাড়া, যেহেতু তা আল্লাহর কালামে অর্থগতভাবে বিদ্যমান। আর স্বাভাবিকভাবেও এগুলো সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করছে। কেননা এগুলো ত্রুটি মুক্তকরণ, তাওহীদ গুণকীর্তন এবং প্রশংসাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এগুলোর প্রতিটি শব্দই আল্লাহর কালামের মাঝে গণ্য। এগুলো থেকে প্রতিটি কুরআনের অন্তর্ভুক্ত- এ বর্ণনার আলোকে অর্থগতভাবে স্পষ্ট।
(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ) মা'নাবী বলেন, এ চারটি কালাম সর্বোত্তম এ কারণে যে, প্রত্যেক এমন গুণ যেগুলো আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করা অসম্ভব সেগুলো থেকে আল্লাহর পবিত্র সাব্যস্ত হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং যে সব পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হওয়া আবশ্যক সে সবের সাথে আল্লাহকে গুণান্বিত হওয়াকে, একত্ববাদের সাথে তাঁর একক হওয়াকে এবং মহত্বের সাথে বিশেষিত হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে আল্লাহর বড়ত্ব হওয়া থেকে দু’টি অর্থ লাভ করা গেছে। শায়খ ইযযুদ্দীন বিন ‘আবদুস্ সালাম বলেন, আল্লাহর উত্তম নামসমূহ যার মাধ্যমে তিনি তাঁর কিতাবে ও তাঁর রসূলের কিতাবে নিজের নামকরণ করেছেন। যেগুলো চারটিঃ কালিমার মাঝে প্রবিষ্ট আর এগুলো-ই কুরআনের (الباقيات الصالحات) দ্বারা উদ্দেশ্য। প্রথম কালিমাহ্ঃ (سبحان الله) ‘আরবদের ভাষাতেই এর অর্থ পবিত্র সাব্যস্তকরণ, দূর করা। এগুলো আল্লাহর গুণাবলী ও সত্তা থেকে ঘাটতি ও দোষ-ত্রুটি দূর করার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং তার যে নামগুলো থেকে বিদূরীত হওয়ার অর্থ পাওয়া যাবে সেগুলো এ কালিমার অধীনে প্রবিষ্ট।
যেমন (القدوس) অর্থাৎ- যিনি প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র এবং (السلام) যা প্রত্যেক বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ। দ্বিতীয় শব্দঃ (الحمد لله) আর এটা আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীর পূর্ণাঙ্গতা বর্ণনার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং তাঁর যে নাম যেগুলো ইতিবাচককে অন্তর্ভুক্ত করবে যেমন (سميع - قدير- عليم- بصير) এগুলো দ্বিতীয় শব্দের অধীনে প্রবিষ্ট। আমরা (سبحان الله) উক্তির মাধ্যমে আমাদের অনুভূতি অনুযায়ী প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি এবং আমাদের বুঝ অনুযায়ী প্রত্যেক ঘাটতিকে দূর করেছি। আর (الحمد لله) এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জানা অনুযায়ী প্রত্যেক পূর্ণাঙ্গতা এবং অনুভূতি অনুযায়ী প্রত্যেক সম্মানকে সাব্যস্ত করেছি। আমরা যা দূর করেছি এবং যা সাব্যস্ত করেছি তার পেছনে মহা গুরুত্ব-মর্যাদা রয়েছে যা আমাদের থেকে অদৃশ্য এবং আমরা যা জানি না তাই আমরা সেগুলো আমাদের (الله أكبر) উক্তির মাধ্যমে সামষ্টিকভাবে বাস্তবরূপ দিব আর এটি তৃতীয় কালিমার অর্থ- আমরা যা নিষেধ করেছি ও যা সাব্যস্ত করেছি তার অপেক্ষা তিনি অধিক সম্মানিত। আর এটিই হল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমি তোমার গুণকীর্তন পরিসংখ্যান করে শেষ করতে পারব না, তুমি তেমন যেমনটি তুমি নিজের প্রশংসা করেছ। অতঃপর তার নামসমূহ থেকে যা আমাদের জ্ঞান ও বুঝের পর পর্যায়ের মর্যাদাকে অন্তর্ভুক্ত করবে যেমন (الأعلى) এবং (التعالى) অর্থাৎ- সর্বোচ্চ। তাহলে তা আমাদের উক্তি (الله أكبر) এর অধীনে প্রবিষ্ট হবে। অতঃপর আমরা যখন অস্তিত্বের ক্ষেত্রে তার সদৃশ বা অনুরূপ কিছু সাব্যস্ত হওয়াকে নাফি করলাম তখন আমরা তা (لا إله الا الله) এ উক্তির মাধ্যমে সুনিশ্চিত করলাম। আর এটি চতুর্থ শব্দ। কেননা প্রভুত্ব উপাসত্বের উত্তরাধিকারের দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। আর উপাসত্বের অধিকার রাখেন একমাত্র ঐ সত্তা ছাড়া আমরা যা বর্ণনা করেছি তার প্রতি যে ন্যায় বিচার করবে। সুতরাং তার নামসমূহ থেকে যা সামষ্টিকতার পূর্বক্ত বর্ণনাকে অন্তর্ভুক্ত করবে তা একক সত্তার ন্যায় যিনি এক, মর্যাদার অধিকারী অনুগ্রহের অধিকারী, আর তা আমাদের (لا إله الا الله) এর অধীনে প্রবিষ্ট। উপাসত্বের অধিকার কেবল ঐ সত্তা রাখে যার জন্য সুন্দর গুণাবলী ও ঐ সমস্ত পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী নির্দিষ্ট যেগুলো বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করতে পারে না এবং গণনাকারীগণ গণনা করতে পারে না।
এভাবে আস্ সাবাকী ত্ববাকতে শাফি‘ঈয়্যাহ্ আল কুবরা-তে উল্লেখ করেছেন। (৫ম খণ্ড- ৮৬-৮৭ পৃষ্ঠা) হাদীসটিতে আছে, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কালাম এ চারটি কালাম। হাদীসটির বাহ্যিক দিক অচিরেই আগত আবূ যার (রাঃ) এর হাদীসের পরিপন্থী। যে হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল কোন কথা সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (سبحان الله وبحمده) আর অচিরেই ২য় পরিচ্ছেদে আগত জাবির-এর হাদীসেরও বিরোধিতা করছে যাতে আছে (لا إله الا الله) সর্বোত্তম জিকির। সাধারণভাবে আবূ যার-এর হাদীস তাসবীহ এর শ্রেষ্ঠত্বের উপরও প্রমাণ বহন করছে। আর সেটাও জাবির-এর হাদীসের বিপরীত। যা সাধারণভাবে (لا إله الا الله) এর শ্রেষ্ঠত্বের উপর প্রমাণ বহন করছে। কুরতুবী এভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন যার সারাংশ হল, নিশ্চয়ই এ জিকিরগুলোর কতকের উপর যখন কতকে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হবে (অর্থাৎ- সর্বোত্তম কালাম বা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কালামকে), তখন এগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হবে যখন এগুলো মুসলিমে বিদ্যমান সামুরার [সর্বাধিক প্রিয় কালাম চারটি এগুলোর যে কোনটি দ্বারা তুমি শুরু করবে তোমার কোন ক্ষতি করবে না আর তা হল سبحان الله و الحمد لله ولا إله الا الله الله أكبر] এ হাদীসের দলীল কর্তৃক তার সমগোত্রীয়দের সাথে মিলিত হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থের উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সম্ভাবনা রাখছে। সুতরাং যে এগুলোর কতকের উপর সীমাবদ্ধ থাকবে তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা এগুলোর সারাংশ হল সম্মান প্রদর্শন করা, পবিত্র সাব্যস্তকরণ। যে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করল সে তাঁর বড়ত্ব সাব্যস্ত করল আর যে তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করল সে তার পবিত্রতা সাব্যস্ত করল। কেউ কেউ বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি أَفْضَلُ الْكَلَامِ، أَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلٰهَ إِلَّا الله এবং আগত أَحَبُّ الْكَلَامِ এর পূর্বে একটি من অব্যয় উহ্য মানার মাধ্যমে সমন্বয় করা সম্ভব। কারণ أَفْضَلُ (সর্বোত্তম) ও أَحَبُّ (সর্বাধিক প্রিয়) শব্দদ্বয় অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে সমার্থক। ভাষ্যকার বলেন, মুসনাদে আহমাদে (৫ম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা) বর্ণিত
(أربع من أطيب الكلام وهن من القرآن لا يضرك بأيهن بدأت سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر)
হাদীসটি এ অভিমতটিকে শক্তিশালী করছে। যেহেতু সেখানে من অব্যয়টি প্রকাশ্য এসেছে। হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে, নিশ্চয়ই এ চারটি কালিমাহ্ আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, অচিরেই যা আসতেছে তা এর পরিপন্থী না আর তা হল (سبحان الله وبحمده) আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কালাম। কেননা এখানে এ চারটিরই অন্তর্ভুক্ত।
(وفى رواية أحب الكلام إلى الله أربع) অর্থাৎ- চারটি কালিমাহ্।
(سبحان الله) অর্থাৎ- আমি প্রত্যেক এমন জিনিস থেকে তাঁর পবিত্র সাব্যস্ত হওয়াতে বিশ্বাসী যা তার সত্তার সৌন্দর্য ও তার গুণাবলীর পূর্ণাঙ্গতার সাথে বেমানান আর তা মুক্ত করার স্থল নিয়ে এসেছেন যা ঐ অবস্থার উপর প্রমাণ বহন করে যে, নিশ্চয়ই তিনি উত্তম নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীর সাথে গুণান্বিত এবং শুকরিয়া ও গুণকীর্তন প্রকাশের জন্য উপযুক্ত। আর তা গুণ বর্ণনা করার স্থল আর এজন্যই তিনি (الحمد لله) বলেছেন।
এরপর তিনি যে তাঁর ইতিবাচক ও নেতিবাচক গুণাবলীতে একক এদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন (لا إله إلا الله)। অতঃপর তিনি ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, তাঁর বড়ত্বের পরিধি এবং ইযার ও রিদার মহত্ত্বকে পরিকল্পনা করা যায় না। যা হাদীসে (الله أكبر) দ্বারা স্পষ্ট।
(لَا يَضُرُّكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ) অর্থাৎ- পাঠক তাসবীহগুলোর যে কোনটি দিয়ে শুরু করলে এগুলো পাঠের সাওয়াব সংরক্ষণে কোন ক্ষতি হবে না, কেননা কালিমাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মহত্ব ও পূর্ণতার যে অর্থ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে এগুলোর প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র। কিন্তু হাদীসে যেভাবে এসেছে সে ধারাবাহিকতাটিই উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ। কারণ সেখানে প্রথমে আল্লাহর পবিত্রতা সাব্যস্তকরণ সূচক কালিমাহ্ سبحان الله এসেছে, পরে তাঁর প্রশংসাজ্ঞাপক কালিমাহ্ الحمد لله এসেছে। অতঃপর তাসবীহ ও তাহমীদযুক্ত কালিমাহ্ لا إله الا الله দ্বারা উভয়ের মাঝে সমন্বয় কর হয়েছে, এরপর তাঁর বড়ত্বজ্ঞাপক কালিমাহ্ الله أكبر দ্বারা শেষ করা হয়েছে।
ইবনুল মালিক বলেন, অর্থাৎ- সুবহা-নাল্ল-হ বা আলহামদুলিল্লা-হ বা লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ অথবা আল্ল-হু আকবার যে কোনটি দ্বারা তাসবীহ পাঠ শুরু করা বৈধ আছে। আর এটাই প্রমাণ করে যে, এগুলোর প্রতিটি বাক্যই স্বয়ংসম্পন্ন, উল্লেখিত সাজানো অনুযায়ী এগুলো উল্লেখ করা আবশ্যক না। তবে উল্লেখিত সাজানো অনুযায়ী উল্লেখ করা উত্তম।
শাওকানী বলেন, জানা উচিত যে, নিশ্চয়ই এ শব্দাবলীর মাঝে পতিত و এদের কতকে কতকের উপর আতফ করার জন্য আনা হয়েছে। যেমন অন্যান্য আতফ করা বিষয়াবলী। সুতরাং و ছাড়া এগুলোর উল্লেখ করা অতঃপর জিকিরকারী (سبحان الله الحمد لله ولا إله إلا الله الله أكبر) বলা অথবা এগুলো و সহ উল্লেখ হওয়া অতঃপর জিকিরকারী (سبحان الله الحمد لله ولا إله إلا الله الله أكبر) এভাবে বলা উল্লেখিত পদ্ধতিদ্বয়ের মাঝে প্রথমটি স্পষ্ট। কেননা নাবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে খবর দিয়েছেন তারা এভাবে বলবে। সুতরাং উক্ত বিষয়টি হবে উল্লেখিত (واو) ছাড়া পদ্ধতি। যেমন নাবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সকল শিক্ষাসমূহ।
২২৯৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৫
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَأَنْ أَقُولَ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুবহা-নাল্ল-হ [আল্লাহ পবিত্র], ওয়াল হাম্দুলিল্লা-হ [আল্লাহর জন্য প্রশংসা], ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ [আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই], ওয়াল্ল-হু আকবার [আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান] বলা, আমার কাছে সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষাও বেশি প্রিয়। (বুখারী, মুসলিম)[১]
أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَأَحْسَنُ مَقِيْلًا (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ২৪) অর্থাৎ- সেদিন জান্নাতবাসীরা বাসস্থানের দিক দিয়ে উৎকৃষ্ট ও বিশ্রামস্থলের দিক দিয়ে মনোরম হবে। অর্থাৎ- উল্লেখিত আয়াতে জান্নাতের ক্ষেত্রে (أفعل) এর ওযন তুলনা করা হয়নি। অথবা সম্বোধনটি অধিকাংশ মানুষের অন্তরে যা আছে তার উপর প্রয়োগ হবে। কেননা অধিকাংশ মানুষ এ বিশ্বাস করে থাকে যে, দুনিয়ার মতো কোন কিছু নেই আর দুনিয়াটাই মূল উদ্দেশ্য। অতঃপর আল্লাহ খবর দিয়েছেন, নিশ্চয়ই জান্নাত তাঁর নিকট তোমরা যা ধারণা করে থাক তার অপেক্ষা উত্তম। নিশ্চয়ই তাঁর মতো কোন কিছু নেই বা তার অপক্ষো উত্তম কোন কিছু নেই। এক মতে বলা হয়েছে এ উদ্দেশ্য হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এ সকল শব্দাবলী আমার নিকট দুনিয়াবর মালিক হয়ে তা দান করা অপেক্ষা উত্তম। সারাংশ হল এ শব্দাবলী বলার যে সাওয়াব দেয়া হয় তার পরিমাণ দুনিয়ার মালিক হওয়া, অতঃপর তা দান করা অপেক্ষা অধিক।
২২৯৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৬
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه فِىْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে ‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’ (অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)[১]
(وَبِحَمْدِه) কারী বলেন, অর্থাৎ- আমি তাঁর প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
(فِىْ يَوْمٍ) ইমাম ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- ব্যাপক সময়ে এতে নির্দিষ্ট কোন সময় জানা যায়নি। সুতরাং এ সময়সমূহ থেকে কোন সময়কে নির্দিষ্ট করা যাবে না।
মাযহার বলেন, শব্দ প্রয়োগের ব্যাপকতা থেকে বাহ্যত অনুভব করা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি দিনে এটা একশতবার পাঠ করবে সে উল্লেখিত সাওয়াব পাবে চাই তা একসাথে পাঠ করুক বা আলাদাভাবে বিভিন্ন মাজলিসে পাঠ করুক। অথবা এগুলোর কতক দিনের প্রথমাংশে পাঠ করুক এবং কতক দিনের শেষাংশে পাঠ করুক। তবে উত্তম হল এগুলো দিনের প্রথমাংশে পরস্পরভাবে পাঠ করা।
(خَطَايَاهُ) অর্থাৎ- তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। কারী বলেন, গুনাহ বলতে সগীরাহ্ কাবীরাহ্ সকল গুনাহ সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘আয়নী বলেন, অর্থাৎ- এমন গুনাহ যা আল্লাহর অধিকার সংক্রান্ত কেননা মানুষের অধিকারসমূহ অধিকারীর সন্তুষ্ট ছাড়া মাফ হয় না।
ইমাম বাজী বলেন, এগুলো পাঠকারী ব্যক্তির গুনাহ মোচনের কাফফারা স্বরূপ হয়ে যাবে। যেমন তাঁর বাণী, ‘‘নিশ্চয়ই পুণ্য কাজসমূহ পাপ কাজসমূহকে মিটিয়ে দেয়।’’ (সূরা হূদ ১১ : ১১৪)
(وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ) الزبد বলা হয় ফেনা বা ফেনা জাতীয় পদার্থকে যা প্রবল তরঙ্গের সময় পানির উপর ভেসে উঠে। এর মাধ্যমে আধিক্যতার দিকে ইঙ্গিত করা উদ্দেশ্য। কাযী ‘ইয়ায বলেন, (لا إله إلا الله) সম্পর্কে ৯ম অধ্যায়ের আবূ হুরায়রার হাদীসে ‘‘তার থেকে একশত গুনাহকে মিটিয়ে দেয়া হবে’’ এ উক্তির সাথে ‘‘যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয় তথাপিও তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’’- এ উক্তি (لا إله إلا الله) পাঠের উপর (سبحان الله) পাঠের শ্রেষ্ঠত্বকে জানিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ- যেহেতু সমুদ্রের ফেনার সংখ্যা শত শত গুণ। অথচ (لا إله إلا الله) এর হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (لا إله إلاالله) এর ‘আমাল করবে তার অপেক্ষা উত্তম ‘আমাল আর কেউ করতে পারবে না। সুতরাং উভয়ের মাঝে এভাবে সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে যে, উল্লেখিত (لا إله إلا الله) পাঠ সর্বোত্তম এবং তাতে পুণ্যসমূহ লিপিবদ্ধকরণ ও গুনাহসমূহ মিটানোর যে অতিরিক্ততা আছে তা, অতঃপর এ সত্ত্বেও দাস মুক্ত করার যে মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা তাসবীহ পাঠের শ্রেষ্ঠত্ব ও তাঁর সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়ার উপর এক অতিরিক্ত অর্জন। কেননা প্রমাণিত আছে, যে ব্যক্তি একটি দাস মুক্ত করবে আল্লাহ ঐ মুক্ত দাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে মুক্তকারীর একটি করে অঙ্গ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। একটি দাস মুক্ত করার কারণে তার থেকে গুনাহ মোচনের বিশেষ সংখ্যা সীমাবদ্ধের পর ব্যাপকভাবে সমস্ত গুনাহ মোচন অর্জন হল। সেই সাথে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া, অতিরিক্ত একশত মর্যাদা লাভের সাথে (لا إله إلا الله) পাঠের মাধ্যমে একের অধিক দাস মুক্ত করবে তার কোন গুনাহ থাকতে পারে না।
২২৯৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৭
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ وَحِينَ يُمْسِىْ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه مِائَةَ مَرَّةٍ لَمْ يَأْتِ أَحَدٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِه إِلَّا أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ أَوْ زَادَ عَلَيْهِ). (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় একশ’বার পড়বে ‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’ (অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- কিয়ামাতের দিন তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বাক্য নিয়ে কেউ উপস্থিত হতে পারবে না, সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর সমপরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি পড়বে। (বুখারী, মুসলিম)[১]
২২৯৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৮
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِى الْمِيزَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمٰنِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি খুব সংক্ষিপ্ত বাক্য যা বলতে সহজ অথচ (সাওয়াবের) পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তা হলো ‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্ল-হিল ‘আযীম’’। (বুখারী, মুসলিম)[১]
আলোচ্য হাদীসে বিধেয়কে উদ্দেশের আগে এনে শ্রোতার আগ্রহ আকর্ষণ করা হয়েছে। আর বিধেয়-এর বর্ণনার ক্ষেত্রে বাক্য যখনই দীর্ঘতা লাভ করবে তখন তাকে উদ্দেশের পূর্বে আনা উত্তম হবে। কেননা সুন্দর গুণাবলীর আধিক্যতা উদ্দেশের ব্যাপারে শ্রোতার আগ্রহ বৃদ্ধি করে। ফলে তা অন্তরে বদ্ধমূল হয় এবং গ্রহণযোগ্যতায় অধিক উপযোগী। সিনদী বলেন, বাহ্যিক দিক থেকে বুঝা যায় (كلمتان) উক্তিটি (سبحان الله) শেষ পর্যন্ত। এর খবর বা বিধেয়। তার দিকে শ্রোতার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য তাকে উদ্দেশের আগে আনা হয়েছে।
(خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ) অর্থাৎ- বাক্যদ্বয়ের অক্ষরসমূহ নরম হওয়ার দরুন জিহ্বাতে সহজেই উচ্চারিত হয়ে থাকে। কেননা বাক্যদ্বয়ে ‘আরবীয়দের নিকট পরিচিত কোন শক্ত অক্ষর নেই।
(ثَقِيلَتَانِ فِى الْمِيزَانِ) অর্থাৎ- প্রকৃতপক্ষেই তা সাওয়াবের পাল্লায় ভারী। হাফেয বলেন, ‘আমালের স্বল্পতা ও সাওয়াবের আধিক্যতার বর্ণনা দেয়ার্থে পাল্লাকে হালকা ও ভারত্বের মাধ্যমে বিশেষিত করা হয়েছে।
‘আল্লামা সিনদী বলেন, বাক্যদ্বয়ের উত্তম শৃঙ্খলা, অক্ষরের কমতি হওয়ার দরুন জিহ্বাতে এদের উচ্চারণে সহজতা থাকায় তা হালকা। হালকা হওয়ার অপর কারণ বাক্যদ্বয় আল্লাহর সম্মানিত নামকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যার জিকিরে মেজাজ অনুগত হয়। আর আল্লাহর কাছে সম্মানের দিক থেকে বাক্যদ্বয়ের শব্দের বড়ত্বের কারণে তা দাড়িপাল্লায় ভারি। ইমাম ত্বীবী বলেন, ‘‘হালকা’’ কথাটিকে সহজ অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ভারি বলতে আহলুস্ সুন্নাহ এর কাছে মূল অর্থই উদ্দেশ্য, কেননা ‘আমালসমূহ মাপার সময় দাড়িপাল্লাতে অবয়ব দান করা হবে। আর মীযান বা দাড়িপাল্লা ঐ জিনিস কিয়ামাতের দিন যার মাঝে বান্দাদের ‘আমালসমূহ ওযন দেয়া হবে। আর পাল্লার ধরণ সম্পর্কে অনেক উক্তি আছে তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত নিশ্চয়ই তা অনুভূতিশীল গঠনের কাটা বিশিষ্ট ও দু’টি পাল্লা বিশিষ্ট হবে। আল্লাহ তা‘আলা ‘আমালসমূহকে বাহ্যিক ওযনে পরিণত করবেন। এক মতে বলা হয়েছে, আমালের খাতাসমূহ ওযন করা হবে। পক্ষান্তরে ‘আমাল হল সম্মান আর সম্মানকে ওযন করা অসম্ভব। কেননা সম্মান মূলত ওযনযোগ্য না। সুতরাং ‘আমালসমূহকে ভারত্ব বা হালকার সাথে গুণান্বিত করা যাবে না। আর একে সমর্থন করছে (بطاقة) তথা কার্ডের হাদীস। যা ইমাম তিরমিযী সংকলন করেছেন ও হাসান বলেছেন। ইমাম হাকিমও একে সংকলন করেছেন ও সহীহ বলেছেন। তার বর্ণনাতে আছে ‘‘অতঃপর খাতাসমূহ এক পাল্লাতে এবং কার্ড আরেক পাল্লাতে রাখা হবে’’।
আবার কারো মতে, ‘আমালসমূহকে অবয়ব দান করা হবে অতঃপর তা উত্তম আকৃতিতে আনুগত্যশীলদের ‘আমালে পরিণত হবে এবং নিকৃষ্ট আকৃতিতে পাপীদের ‘আমালে পরিণত হবে। এরপর ওযন দেয়া হবে। হাফেয বলেন, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ‘আমালসমূহকেই ওযন দেয়া হবে। ইবনু হিব্বান আবূ দারদা (রাঃ) থেকে একে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন তাতে আছে ‘‘কিয়ামাতের দিন সচ্চরিত্র অপেক্ষা ভারী কোন জিনিস মীযানের পাল্লায় পরিমাপ করা হবে না’’।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ‘আমাল যেহেতু স্থির থাকে না বরং নিঃশেষ হয়ে যায়- এ ত্রুটি সাব্যস্ত করে ‘আমালসমূহ ওযন করা অসম্ভব হওয়ার ব্যাপারে কৃত উক্তি খুবই দুর্বল। বরং তা বাতিল। বর্তমানে প্রাকৃতিক বিদ্যার অধিকারীরা একে বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছে। আর তারা নিশ্চিত করেছে উক্তিসমূহ শেষ হয়ে যায় না বরং তা শূন্যে বিদ্যমান থাকে যাকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। আর তারা কথা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রিক যন্ত্র আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। হাদীসে ঐ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সকল দায়িত্ব অর্পণমূলক নির্দেশ কষ্টকর, আবার অন্তরের উপরেও ভারী। তবে এ ‘আমালসমূহ দাড়িপাল্লাতে ভারি হওয়া সত্ত্বেও নাফসের উপর সহজ হালকা, সুতরাং এ ক্ষেত্রে শিথিলতা উচিত না। আসারে (তথা সাহাবীদের উক্তি) আছে, ‘ঈসা (আঃ)-কে প্রশ্ন করা হল পুণ্য ভারি হবে এবং পাপ হালকা হবে, তার কারণ কি? উত্তরে তিনি বললেন, কেননা পুণ্যসমূহের তিক্ততা উপস্থিত এবং তার মিষ্টতা অনুপস্থিত থাকে, সুতরাং তা ভারি। অতএব তার ভারত্ব যেন তা বর্জনের ব্যাপারে তোমাকে উৎসাহিত না করে। পক্ষান্তরে পাপের মিষ্টতা উপস্থিত, তিক্ততা অনুপস্থিত (সাধারণত তা পরকালে দেয়া হয়ে থাকে) এজন্য পাপ তোমাদের ওপর হালকা, সুতরাং তার হালকা হওয়া তাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে তোমাদের যেন উৎসাহিত না করে। কেননা পাপের কাজের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন মীযানসমূহ হালকা হয়ে যাবে।
সিনদী বলেন, (حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمٰنِ) এর অর্থ হল নিশ্চয়ই এ দু’টি বাক্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে অধিক প্রিয় হওয়ার সাথে গুণান্বিত। অন্যান্য হাদীসগুলো থেকে যা বুঝা যাচ্ছে। যেমন আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় বাক্য হল (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ)। অন্যথায় সকল জিকির আল্লাহর কাছে প্রিয়। এক মতে বলা হয়েছে, এ বাক্যদ্বয়ের পাঠকারী আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া উদ্দেশ্য আর বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসা বলতে বান্দার প্রতি কল্যাণ পৌঁছানোর ইচ্ছা করা এবং তাকে সম্মান দান করা। বাক্যে আল্লাহর উত্তম নামসমূহ থেকে রহমান নামকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কারণ এর দ্বারা বান্দার ওপর আল্লাহর রহমাতের প্রশস্ততা বর্ণনা করে দেয়া উদ্দেশ্য। যেমন অল্প কাজের জন্য তিনি অফুরন্ত প্রতিদান দিয়ে থাকেন। হাদীসে তাহমীদ বা আল্লাহর প্রশংসার বাণী পাঠ অপেক্ষা পবিত্রতা ঘোষণার বাণীতে অধিক মনোযোগ দেয়া হয়েছে আর তা আল্লাহকে পবিত্র সাব্যস্তকারীদের বিরোধিতাকারীর আধিক্যতার কারণে। আর এটা বুঝা গেছে আল্লাহর (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ) এ বাণীতে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা বারংবার করার কারণে।
২২৯৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২২৯৯
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِىْ وَقَّاصٍ: قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ: «أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكْسِبَ كُلَّ يَوْمٍ أَلْفَ حَسَنَةٍ؟» فَسَأَلَه سَائِلٌ مِنْ جُلَسَائِه: كَيْفَ يَكْسِبُ أَحَدُنَا أَلْفَ حَسَنَةٍ؟ قَالَ: «يُسَبِّحُ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ فَيُكْتَبُ لَه أَلْفُ حَسَنَةٍ أَوْ يُحَطُّ عَنهُ أَلْفُ خَطِيْئَةٍ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِىْ كِتَابِه: فِىْ جَمِيعِ الرِّوَايَاتِ عَنْ مُوسَى الْجُهَنِىِّ: «أَوْ يُحَطُّ» قَالَ أَبُوْ بَكْرِ الْبَرْقَانِىْ وَرَوَاهُ شُعْبَةُ وَأَبُو عَوَانَةَ وَيَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقطَّان عَن مُوسٰى فَقَالُوْا: «وَيُحَطُّ» بِغَيْر أَلْفٍ هَكَذَا فِىْ كِتَابِ الْحُمَيْدِىْ
সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের কেউ কি একদিনে এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তার সাথে বসা লোকদের কেউ বললেন, আমাদের কেউ কিভাবে একদিনে এক হাজার নেকী আদায় করতে সক্ষম হবেন? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেউ যদি একদিনে একশ’বার ‘‘সুবহা-নাল্ল-হ’’ পড়ে তাহলে এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা তার এক হাজার গুনাহ মাফ করা হবে। (মুসলিম)[১]
(أَوْ يُحَطُّ عَنهُ أَلْفُ خَطِيْئَةٍ) এটি মূলত আল্লাহর (‘‘নিশ্চয়ই পুণ্যসমূহ পাপকে দূর করে দেয়’’- সূরা হূদ ১১ : ১১৪) এ উক্তির কারণে। আর এতে ঐ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পুণ্য পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়। ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনাতে কিছুটা ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর মুহাম্মাদ বিন বাশশার তিরমিযীতে তার থেকে ‘‘ওয়াও’’ বর্ণের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন আর ইমাম আহমাদ ‘আলিফ’ বর্ণের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। আর আমার কাছে (‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী) দু’টি বর্ণনার একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য দেয়ার বিষয় স্পষ্ট হয়নি। সম্ভবত দু’টি বিষয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করা একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য দেয়া অপেক্ষা উত্তম। কারী মিরকাতে বলেন, ‘‘ওয়াও’’ কখনো ‘‘আও’’ অর্থে ব্যবহৃত হয়, সুতরাং উভয় বর্ণনার মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। হাদীসের ভাব এভাবে হবে, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি এ তাসবীহগুলো পাঠ করবে এমতাবস্থায় তার গুনাহ না থাকলে তার জন্য এক হাজার পুণ্য লিখা হবে আর পাপ থাকলে কিছু পাপ মিটানো হবে এবং পুণ্য লিখা হবে।
২৩০০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০০
وَعَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ: سُئِلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَيُّ الْكَلَامِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «مَا اصْطَفَى اللّٰهُ لِمَلَائِكَتِه: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ কালাম (বাক্য) সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে কালাম আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মালায়িকাহ’র (ফেরেশতাগণের) জন্য পছন্দ করেছেন তা হলো, ‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’। (মুসলিম)[১]
(سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه) ইমাম ত্বীবী বলেন, এতে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) সম্পর্কে বর্ণনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আর আমরা আপনার প্রশংসা সহকারে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি ও সাব্যস্ত করি।’’
(সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৩০)
এ উক্তির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। আর (سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه) বিগত হওয়া চারটি বাক্য (سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر) এর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে, কেননা (سُبْحَانَ اللّٰهِ) আল্লাহর মর্যাদার সাথে উপযুক্ত না এমন বিষয় থেকে আল্লাহর সত্তাকে পবিত্র সাব্যস্ত করা, সকল অপূর্ণাঙ্গতা থেকে তার গুণাবলীকে পবিত্র সাব্যস্ত করা নিশ্চিত করে। সুতরাং এর মাঝে (لا إله إلا الله) এর অর্থ প্রবেশ করবে এবং তার (بحمده) উক্তি (الحمد لله) এর অর্থের ক্ষেত্রে স্পষ্ট। যা (الله أكبر) এর অর্থকে আবশ্যক করে নিচ্ছে, কেননা প্রত্যেক মর্যাদা এবং মর্যাদাসমূহ যখন আল্লাহর জন্য ও আল্লাহর তরফ থেকে হবে এবং এ থেকে কোন কিছু তিনি ছাড়া অন্য কারো থেকে হবে না তখন তার অপেক্ষা বড়ও কেউ হতে পারে না। যদি তুমি বল এর মাধ্যমে তো তাসবীহ তাহলীল অপেক্ষা উত্তম হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ছে? উত্তরে আমি বলব, এটা আবশ্যক হয়ে পড়ছে না। কেননা তাহলীল তাওহীদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট পক্ষান্তরে তাসবীহ তাহলীলকে অন্তর্ভুক্তকারী।
হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর এক বর্ণনাতে আছে আবূ যার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য সম্পর্কে সংবাদ দিব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য সম্পর্কে সংবাদ দিন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য হল (سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه)।
২৩০১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০১
وَعَن جوَيْرِية أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ خَرَجَ مِنْ عِنْدِهَا بُكْرَةً حِينَ صَلَّى الصُّبْحَ وَهِىَ فِىْ مَسْجِدِهَا ثُمَّ رَجَعَ بَعْدَ أَنْ أَضْحٰى وَهِىَ جَالِسَةٌ قَالَ: «مَا زِلْتِ عَلَى الْحَالِ الَّتِىْ فَارَقْتُكِ عَلَيْهَا؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ النَّبِىُّ ﷺ: «لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه عَدَدَ خَلْقِه وَرِضَاءَ نَفْسِه وَزِنَةَ عَرْشِه وَمِدَادَ كَلِمَاتِه». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সলাতের পর খুব ভোরে তাঁর নিকট হতে বের হলেন। তখন জুওয়াইরিয়্যাহ্ নিজ সলাতের জায়গায় বসা। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফিরে আসলেন তখন সূর্য বেশ উপরে উঠে এসেছে। আর জুওয়াইরিয়্যাহ্ তখনো সলাতের জায়গায় বসে আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার সময় যে অবস্থায় তুমি ছিলে, এখনো কি সে অবস্থায় আছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি মাত্র চারটি কালিমাহ্ তিনবার পড়েছি, যদি তুমি এ পর্যন্ত যা পড়েছ তার সাথে আমার পড়া কালাম ওযন দেয়া হয় তাহলে এর ওযনই বেশি হবে। (বাক্যগুলো হলো)
‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, ‘আদাদা খলকিহী, ওয়া রিযা- নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার পূত-পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে, তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টি পরিমাণ, তার ‘আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর বাক্যসমূহের সংখ্যা পরিমাণ।)। (মুসলিম)[১]
ইবনু মাজাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়াইরিয়্যাহ্’র পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সলাত আদায় করলেন অথবা ফজরের সলাত আদায়ের পর। এমতাবস্থায় জুওয়াইরিয়্যাহ্ আল্লাহর জিকির করছিলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলেন যখন বেলা উপরে উঠে গেল অথবা বলেছেন অর্ধ দিবসে, এমতাবস্থাতে জুওয়াইরিয়্যাহ্ ঐভাবেই ছিলেন।
(وَمِدَادَ كَلِمَاتِه) কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হল সংখ্যাতে তার সমান। আবার কারো মতে নিঃশেষ না হওয়ার ক্ষেত্রে তার সমান। কেউ কেউ এটি বলেছেন যে, আধিক্যতার ক্ষেত্রে তার সমান। مَدَدٌ-এর ন্যায় (المداد) শব্দটি ক্রিয়ামূল অর্থ আধিক্যতা।
নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে তার সংখ্যার সমান। কেউ কেউ বলেছেন, আধিক্যতার ক্ষেত্রে কাইল, ওযন, আযান বা সীমাবদ্ধকরণ ও পরিমাপকরণের অন্যান্য মানদণ্ডের মতো বা সমান একটি মাপ। এটা একটি উপমা পেশকরণ যার মাধ্যমে নিকটবর্তীকরণ উদ্দেশ্য করা হয়। কেননা কথা পরিমাপ ও ওযনের মাঝে প্রবেশ করে না। তা কেবল সংখ্যাতে প্রবেশ করে।
বিদ্বানগণ বলেন, এখানে সংখ্যার ব্যবহার রূপক। কেননা আল্লাহর বাণীসমূহ সংখ্যা এবং অন্য কিছু দ্বারা পরিসংখ্যান করা যায় না। উদ্দেশ্য আধিক্যতার ক্ষেত্রে বেশি করা, কেননা প্রথমে সৃষ্টির সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে এমন অধিক সংখ্যা উল্লেখিত হয়েছে। অতঃপর এর অপেক্ষা আরও বড় কিছুর দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ- কোন সংখ্যা দ্বারা যাকে পরিসংখ্যান করা যায় না। যেমন আল্লাহর বাণীসমূহ পরিসংখ্যান করা যায় না। একে ইমাম নাবাবী বর্ণনা করেছেন। লাম্‘আত প্রণেতা বলেন, এটা একটি দাবীকরণ এবং আধিক্যতাতে বেশিকরণ।
সিনদী বলেন, যদি তুমি বল নিশ্চয়ই তাসবীহ সর্বাধিক পবিত্র সত্তার সাথে উপযুক্ত না এমন সকল কিছু থেকে তাকে পবিত্র সাব্যস্তকরণ বুঝানো সত্ত্বেও উল্লেখিত সংখ্যার সাথে তাসবীহকে জড়িয়ে দেয়া কিরূপে বিশুদ্ধ হতে পারে? অথচ তা তার সত্তার ক্ষেত্রে একই বিষয় যা সংখ্যাকে গ্রহণ করে না। বক্তা থেকে তা প্রকাশের বিবেচনায় তাতে এ সংখ্যা বিবেচনা করা সম্ভব না। কেননা বক্তা এ ব্যাপারে ক্ষমতা রাখে না আর যদিও ঐ ব্যাপারে বক্তার সক্ষমতাকে ধরেও নেয়া হয় তাহলে অবশ্যই তাসবীহের সাথে এ সংখ্যার সম্পর্ক বিশুদ্ধ হবে না তবে বক্তা থেকে এ সংখ্যার মাধ্যমে এবং এ ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশের পর। পক্ষান্তরে (سبحان الله) একবার বললে এ সংখ্যা অর্জন হবে না। আমি বলব, সম্ভবত এ সীমাবদ্ধতাটি বক্তা থেকে এ সংখ্যার মাধ্যমে তাসবীহ প্রকাশ পাওয়া সর্বাধিক পবিত্র সত্তার অধিকারের লক্ষ্যের সাথে জড়িত।
২৩০২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০২
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ فِىْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَه عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وَكُتِبَتْ لَه مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ وَكَانَتْ لَه حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَه ذٰلِكَ حَتّٰى يُمْسِىَ وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِه إِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)
তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব হবে। তার জন্য একশ’ নেকী লেখা হবে, তার একশ’টি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ দু‘আ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে বেশী পড়বে। (বুখারী, মুসলিম)[১]
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ হাফেয ফাতহুল বারীতে বলেছেন, তার উক্তি ‘‘আর سبحان الله পাঠ ঐ ব্যক্তির জন্য শয়তান থেকে বাঁচার কারণ হবে’’। ইবনুস্ সুন্নী এর ২৫ পৃষ্ঠাতে ‘আব্দুল্লাহ সা‘ঈদ-এর বর্ণনাতে আছে, ‘‘সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে সংরক্ষণ করবেন’’ তাতে একটু বেশি উল্লেখ করেছেন যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় অনুরূপ বলবে তার জন্যও অনুরূপ হবে।
ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসটি প্রয়োগের বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই হাদীসটিতে উল্লেখিত এ সাওয়াব ঐ ব্যক্তির জন্য অর্জন হবে যে ব্যক্তি এ (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) ঐ দিনে একশতবার বলবে চাই সে তা ধারাবাহিকভাবে বলুক, চাই বৈঠকসমূহে বিচ্ছিন্নভাবে বলুক চাই এর কতক দিনের শুরুতে পাঠ করুক আর কতক দিনের শেষে পাঠ করুক। তবে উত্তম হল এগুলো দিনের শুরুতে ধারাবাহিকভাবে এক সাথে পাঠ করা যাতে সমস্ত দিন শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এমনিভাবে রাত্রের শুরুতে যাতে সমস্ত রাত শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
(إِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ) অর্থাৎ- এমন ব্যক্তি ছাড়া যে তার অপেক্ষা বেশি ‘আমাল করবে সে তার উপর অধিক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে। ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে অবহিতকরণ রয়েছে, যে একশত সংখ্যা যিকিরের ক্ষেত্রে শেষ সীমা এবং খুব কম লোকই এর বেশি বলতে পারবে। এ সংখ্যার উপর বৃদ্ধি করবে। তিনি ব্যতিক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন যাতে এ ধারণা না হয় যে, এ সংখ্যার উপর বৃদ্ধি করা নিষেধ। যেমন ঊযূর ক্ষেত্রে বারবার ‘আমাল করা। তবে উদ্দেশ্য এটিও হতে পারে যে, সকল প্রকারের পুণ্য হতে কেউ তার অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে না তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এ ব্যাপারে তার অপেক্ষা বেশি ‘আমাল করবে। কাযী ‘ইয়ায-এর কথা অনুরূপ। হাদীসে একশত সংখ্যায় জিকির উল্লেখ ঐ ব্যাপারে দলীল যে, তা উল্লেখিত সাওয়াবের শেষ সীমা।
ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে দলীল রয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি এ (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) দিনে একশতবার এর অধিক পাঠ করে তাহলে একশত সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এ ব্যক্তির জন্য হাদীসটিতে উল্লেখিত সাওয়াব থাকবে এবং একশত এর উপর বৃদ্ধি করার কারণে তার জন্য আরো সাওয়াব থাকবে। আর এটা এমন সীমাবদ্ধ সংখ্যা না যা অতিক্রম করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং সে সীমা বৃদ্ধি করতে কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই অথবা বৃদ্ধি করলে মূলটিকেই বাতিল করে দিবে। যেমন পবিত্রতা অর্জনের সংখ্যার ক্ষেত্রে এবং সলাতের রাক্‘আতের সংখ্যার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি করা যা মূলকে বাতিল করে দেয়। আরো সম্ভাবনা আছে কল্যাণকর ‘আমালে সংখ্যা বৃদ্ধি করা হুবহু (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠের সংখ্যা বৃদ্ধি করা না। বৃদ্ধি করা থেকে সাধারণ বৃদ্ধি করাও উদ্দেশ্য হতে পারে চাই তা (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠের সংখ্যা হোক অথবা (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) এর সাথে অন্যান্য কিছু বৃদ্ধি করা উদ্দেশ্য হোক। এ সম্ভাবনাটিই সর্বাধিক স্পষ্ট, আর আল্লাহই সর্বজ্ঞাত। বুখারী একে (সৃষ্টির সূচনা থেকে ইবলীসের বৈশিষ্ট্য) এতে এবং দা‘ওয়াতে উল্লেখ করেছেন এবং মুসলিমও তাতে।
২৩০৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৩
وَعَنْ أَبِىْ مُوسَى الْأَشْعَرِىِّ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فِىْ سَفَرٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى انْفُسِكُمْ إِنَّكُمْ لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا وَهُوَ مَعَكُمْ وَالَّذِىْ تَدْعُونَه أَقْرَبُ إِلٰى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِه» قَالَ أَبُو مُوسٰى: وَأَنَا خَلْفَه أَقُولُ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ فِىْ نَفْسِىْ فَقَالَ: «يَا عَبْدَ اللّٰهِ بْنَ قَيْسٍ أَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟» فَقُلْتُ: بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ قَالَ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা তখন উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলছিল। (তাকবীর শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের নাফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না, তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যাঁকে ডাকছ তিনি তোমাদের প্রত্যেকের বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবূ মূসা আল আশ্‘আরী বলেন, আমি তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! (আবূ মূসার ডাক নাম) আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম, অবশ্যই দেবেন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা হলো ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (বুখারী, মুসলিম)[১]
(فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ) অর্থাৎ- যখনই তারা উঁচু স্থানে আরোহণ করল তাকবীরের মাধ্যমে আওয়াজ উঁচু করতেছিল এবং আওয়াজ প্রকাশে বাড়াবাড়ি করতেছিল। তাকবীর দ্বারা উদ্দেশ্য (لا إله إلا الله الله أكبر) বলা। বুখারীর এক বর্ণনাতে আছে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে যুদ্ধ করলেন মানুষ উপত্যকার উপর উঠে দেখল অতঃপর (الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله) তাকবীরের মাধ্যমে তাদের আওয়াজ উঁচু করল।
(ارْبَعُوا عَلَى انْفُسِكُمْ) অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের আওয়াজ নীচু করার মাধ্যমে নিজেদের প্রতি সদয় হও, নিজের উপর কষ্ট প্রয়োগ করো না। অর্থাৎ- তাকবীর প্রকাশে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। অথবা নাফসের প্রতি সদয় হওয়া, তার ওপর কঠোরতা আরোপ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তোমাদের নিজেদের ওপর অনুগ্রহ কর। কারী বলেন, নিজেদের প্রতি সদয় হও এবং তোমাদের ক্ষতি সাধন করে এমন আওয়াজ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাক। এতে ঐ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তারা আওয়াজ প্রকাশ ও উঁচু করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছিল। এতে সাধারণভাবে আওয়াজ উঁচু করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ছে না।
(لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا) কিরমানী বলেন, তুমি যদি বল হাদীসে (ولا أعمى) টি বলা যথোপযুক্ত ছিল। তাহলে আমি বলব, অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টি দ্বারা অনুভব করা থেকে গায়ব বা অন্তরায় এবং অনুপস্থিত ব্যক্তি দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিকে না দেখার ক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তির মতো। সুতরাং তা নাফিকে (নিষেধকে) আবশ্যক করে নিয়েছে যাতে তার প্রয়োগ পূর্ণাঙ্গ, ব্যাপক হয় এবং নিকটবর্তীকে বৃদ্ধি করে। (অর্থাৎ- অন্য এক বর্ণনাতে আসছে) কেননা অনেক শ্রবণকারী ও দর্শনকারী আছে অনুভূতি থেকে দূরে থাকার কারণ শুনতে পায় না, দেখতে পায় না। সুতরাং এর মাধ্যমে তিনি নিকটবর্তী হওয়াকে সাব্যস্ত করলেন যাতে চাহিদা এবং প্রতিবন্ধক না থাকা স্পষ্ট হয়ে যায়। আর নিকটবর্তী দ্বারা পরিসীমার নিকটবর্তীতাকে উদ্দেশ্য করেননি। বরং বিদ্যার মাধ্যমে নিকটবর্তী হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন। হাফেয বলেন, আওয়াজ উঁচু করা থেকে নিষেধ করার কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে (غائب) শব্দের প্রয়োগ অনুকূল হয়েছে। (سميعا بصيرا) অনুরূপভাবে বুখারীর বর্ণনাতে দু‘আ শেষে যখন উপরে আরোহণ করবে তখন দু‘আ অধ্যায়ে এবং কদর পর্বে এসেছে এবং বুখারীতে মাগাযী পর্বে (سميعا قريبا) এসেছে। এভাবে মুসলিমে তাওহীদে (سميعا بصيرا قريبا) এসেছে। তিনি লাম্‘আতে বলেন, তার (سميعا) উক্তির অনুকূল হওয়ার কারণে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তার (بصيرا) উক্তি বৃদ্ধি করার, কারণ শব্দদ্বয় অধিকাংশ স্থানে এক সাথে উল্লেখ হয়েছে। অথবা আওয়াজ প্রকাশ করা, উঁচু করার প্রয়োজন নেই- এ কথা বর্ণনা করে দেয়ার জন্য তা অতিরিক্ত করা হয়েছে। কেননা তিনি আওয়াজ প্রকাশ ও উঁচু না করলেও শোনেন, এ ছাড়াও তিনি তোমাদেরকে দেখেন এবং তোমাদের আকৃতি গঠনের অবস্থা তিনি জানেন।
ইমাম ত্বীবী বলেন, (بصيرا) উক্তি বৃদ্ধি করার উপকারিতা হল নিশ্চয়ই (السميع) এবং (البصير) শব্দদ্বয় (السميع الأعمى) হতে অধিক অনুভূতিশীল। ইবনু হাজার বলেন, (سميعا) শব্দটি (أصم) এর বিপরীতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং (بصيرا) কে নিয়ে আসা হয়েছে, কেননা যিকিরের ক্ষেত্রে (السميع) কে আবশ্যকীয়। যাদের পরস্পরের মাঝে অনুভূতি সম্পর্ক আছে।
(وَهُوَ مَعَكُمْ) অর্থাৎ- ব্যাপকভাবে বিদ্যা, ক্ষমতা ও আয়ত্বের মাধ্যমে বিশেষভাবে অনুগ্রহ দয়ার মাধ্যমে। কারী বলেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন চাই প্রকাশ্যে থাক চাই গোপনে থাক তিনি তোমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, বিদ্যার মাধ্যমে তোমাদের সাথে আছে। আর বাহ্যিকভাবে এটি (ولا غائبا) এর বিপরীত। অতঃপর তিনি চূড়ান্ত মর্যাদার উপর প্রমাণ বহনকারী ‘‘সাথে’’ অর্থের বিশ্লেষণ (আর তোমরা যাকে আহবান করছ তিনি তোমাদের কারো বাহনের গর্দান অপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী) এ উক্তিকে বৃদ্ধি করেছেন। আর এ বাক্যটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন, বুখারী এটি উল্লেখ করেননি। আর এটি একটি উপমা পেশকরণ ও বুঝ শক্তির নিকটবর্তীকরণ, অন্যথায় তিনি শাহরগ (গ্রীবাদেশের প্রধান রগ) থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
ইমাম নাবাবী বলেন, তার উক্তি (هُوَ مَعَكُمْ) অর্থাৎ- বিদ্যা ও আয়ত্বের মাধ্যমে তিনি তোমাদের সাথে আছেন এবং তার উক্তি (والذى تدعونه أقرب) শেষ পর্যন্ত বিগত হয়ে যাওয়া অর্থে ব্যবহৃত। এর সারাংশ হচ্ছে নিশ্চয়ই তা রূপক যেমন আল্লাহর বাণী, وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ অর্থাৎ- ‘‘আমি বিদ্যার মাধ্যমে তার শাহরগ হতেও অধিক নিকটবর্তী’’- (সূরা কাফ ৫০ : ১৬)। তার গোপনীয় বিষয় থেকে আমার কাছে কোন কিছু গোপন থাকে না। যেন তার সত্তা তার অপেক্ষা নিকটবর্তী, এর সারাংশ হল বিদ্যার নিকটবর্তী অপেক্ষা সত্তার নিকটবর্তী হওয়া বৈধ। ইমাম যাহাবী কিতাবুল উলুব্বি-তে আবূল হাসান আল আশ্‘আরী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যেভাবে ইচছা তার সৃষ্টির নিকটবর্তী হন, যেমন তিনি বলেন, (ونحن أقرب إليه من حبل الوريد)
তার উক্তি (فى نفسى) ইমাম বুখারী একে এককভাবে বর্ণনা করেছেন আর তা দা‘ওয়াতে ও তাওহীদে আছে। আর বুখারীতে মাগাযীতে আছে, আর আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহনের পিছনে ছিলাম।
(يَا عَبْدَ اللّٰهِ) এটি আবূ মূসার নাম।
(أَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟) উক্ত জিকির পাঠ গচ্ছিত সম্পদ এভাবে যে, নিশ্চয়ই তা জিকির পাঠকারীর জন্য প্রস্ত্তত রাখা হবে এবং পাঠকারীর জন্য তা সাওয়াব হিসেবে সঞ্চয় করে রাখা হবে। যা ব্যক্তি জান্নাতে পাবে আর তা দুনিয়ার গচ্ছিত সম্পদের মতো সারাংশ, নিশ্চয়ই তা জান্নাতের সঞ্চয় বা জান্নাতের উৎকৃষ্ট অর্জন।
(لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ) বাক্যটি উহ্য উদ্দেশের বিধেয়। যার মূলরূপ (هو أو كنز الجنة)
অর্থাৎ- এ কালিমা পাঠ করাটাই জান্নাতের গচ্ছিত সম্পদ। আর তা হলঃ لا حول ولا قوة إلا بالله
ইমাম নাবাবী বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, এর কারণ হল নিশ্চয়ই এটি আত্মসমর্পণ, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়া, তার আনুগত্য স্বীকার করা। নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোন স্রষ্টা নেই, তার নির্দেশের কোন প্রত্যাখ্যানকারী নেই, নিশ্চয়ই বান্দা কোন জিনিসের ক্ষমতা রাখেন না। আর এখানে (كنز) এর অর্থ হল নিশ্চয়ই তা জান্নাতের সঞ্চয় করা পুণ্য আর তা উৎকৃষ্ট পুণ্য, যেমন গচ্ছিত সম্পদ তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ। অভিধানবেত্তাগণ বলেন, (الحول) এর অর্থ কৌশল করা, অর্থাৎ- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন গতি নেই, কোন সক্ষমতা নেই, কৌশল নেই।
এক মতে বলা হয়েছে, এর অর্থ কল্যাণ অর্জনে আল্লাহ ছাড়া কোন পরিবর্তনকারী নেই, কোন ক্ষমতা নেই। একমতে বলা হয়েছে, আল্লাহর সংরক্ষণ ছাড়া তাঁর অবাধ্যতা থেকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই আর তাঁর সাহায্য ছাড়া তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে কোন শক্তি নেই। এ মতটি ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ থেকে বর্ণিত আছে বাযযার গ্রন্থে যা মারফূ‘ সূত্রে। হাদীসটিকে ইমাম বুখারী জিহাদ, মাগাযী, দা‘ওয়াত, কদর ও তাওহীদে সংকলন করেছেন। মুসলিম কাছাকাছি শব্দে দা‘ওয়াতে। তবে উল্লেখিত বাচনভঙ্গি বুখারী, মুসলিমের কারো না বরং তথা বুখারী মুসলিমের উভয়ের সামষ্টিকতা থেকে গৃহীত।
২৩০৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৪
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِه غُرِسَتْ لَه نَخْلَةٌ فِى الْجَنَّةِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘‘সুবহা-নাল্ল-হিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহী’’ (অর্থাৎ- মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে) পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। (তিরমিযী)[১]
(فِى الْجَنَّةِ) যা উল্লেখিত জিকির পাঠকারীর জন্য প্রস্ত্তত থাকবে। উদ্ধৃত অংশ থেকে বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই খেজুর জান্নাতী ফলসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘উদ্যানদ্বয়ে থাকবে ফল-মূল, খেজুর ও আনার’’- (সূরা আর্ রহমান ৫৫ : ৬৮)। এখানে খেজুরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে অধিক উপকার, উত্তম স্বাদ এবং এর প্রতি ‘আরববাসীদের ঝোঁক থাকার কারণে। বিদ্বানগণ আরো বলেছেন, এখানে কেবল খেজুর বৃক্ষকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কেননা তা সর্বাধিক উপরকারী ও উত্তম বৃক্ষ। আর এ কারণেই আল্লাহ মু’মিন এবং তার ঈমানের দৃষ্টান্ত খেজুর বৃক্ষ ও তার ফল দ্বারা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি লক্ষ্য করেননি কিভাবে আল্লাহ একটি উত্তম বাণীর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ২৪)। আর তা হল একত্ববাদের বাণী, ‘‘যেমন উত্তম বৃক্ষ’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ২৪)। আর তা হল খেজুর বৃক্ষ।
২৩০৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৫
وَعَنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَا مِنْ صَبَاحٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلَّا مُنَادٍ يُنَادِىْ سَبِّحُوا الْمَلِكَ الْقُدُّوْسَ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রভাত যাতে আল্লাহর বান্দারা উঠেন, তাতে একজন মালাক (ফেরেশতা) এরূপ আহবান করেন যে, ‘‘পবিত্র বাদশাহকে পবিত্রতার সাথে স্মরণ করো’’। (তিরমিযী)[১]
২৩০৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৬
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلّٰهِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম জিকির হলো, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ আর সর্বোত্তম দু‘আ হলো, ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[১]
ইমাম ত্বীবী বলেন, কতক বিশেস্নষক বলেন, (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির এজন্য করা হয়েছে যে, কেননা গোপনে এমন কিছু নিন্দনীয় গুণাবলী সম্পর্কে তার প্রভাব রয়েছে যেগুলো জিকিরকারীর আভ্যন্তরীণ উপাস্যসমূহ। আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যে তার প্রবৃত্তিকে তার উপাস্য স্বরূপ গ্রহণ করেছে’’- (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৪৩)। সুতরাং (لَا إِلٰهَ) দ্বারা সকল উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে এবং (إِلَّا اللّٰهُ) দ্বারা এক উপাস্যকে সাব্যস্ত করা হচ্ছে। জিকির তার জবানের প্রকাশ্য দিক থেকে তার অন্তরের গভীরে প্রত্যার্বতন করছে, অতঃপর অন্তরে তা দৃঢ় হচ্ছে এবং তা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করছে, আর যে তার স্বাদ আস্বাদন করেছে সে এর মিষ্টতা পেয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, কেননা এ ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ হয় না। আর এ ছাড়া আরো যত জিকির আছে এটি তার অন্তর্ভুক্ত না।
(وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلّٰهِ) সম্ভবত এখানে দু‘আ দ্বারা সূরা আল ফাতিহাহ্ পূর্ণাঙ্গ উদ্দেশ্য। যেন এ শব্দটি সূরা ফাতিহার কেন্দ্রের স্থানে আছে। ইমাম ত্বীবী বলেন, আল্লাহর বাণী (الحمد لله) তাঁর বাণী اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ এর দিকে ইঙ্গিত বা ইশারা করা অধ্যায়ের আওতাভুক্ত হতে পারে। আর কোন দু‘আটি এর অপেক্ষা বেশি উত্তম, সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাধিক জামি‘ হতে পারে? আবার এটিও হতে পারে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্বয়ং (الحمد لله) আর এর উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে। এখানে (الحمد لله) এর উপর দু‘আর প্রয়োগ রূপক অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। সম্ভবত একে সর্বোত্তম দু‘আ নির্ধারণ করা হয়েছে এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, তা সূক্ষ্ম চাওয়া যার পথ যথার্থ।
মাযহার বলেন, (حمد)-কে কেবল এজন্য দু‘আ বলা হয়েছে, কেননা তা আল্লাহর জিকির ও তাঁর থেকে প্রয়োজন অনুসন্ধান করা সম্পর্কে একটি ভাষ্য আর (حمد) উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, কেননা যে আল্লাহর হাম্দ প্রকাশ করল সে কেবল তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করল। আর নিয়ামতের উপর (حمد) পেশ করা হলো অধিক চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তাহলে আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দিব’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ৭)।
২৩০৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৭
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عُمَرٍو قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «الْحَمْدُ رَأْسُ الشُّكْرِ مَا شَكَرَ اللّٰهَ عَبْدٌ لَا يَحْمَدُه
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’ বা প্রশংসা করা হলো সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। যে বান্দা আল্লাহর প্রশংসা করল না, সে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল না।[১]
২৩০৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «أَوَّلُ مَنْ يُدْعٰى إِلَى الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يَحْمَدُونَ اللّٰهَ فِى السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ». رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন যাদেরকে প্রথমে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে, তারা হলেন ঐসব ব্যক্তি যারা সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করেন। (এ হাদীস দু’টি বায়হাক্বী শু‘আবূল ঈমানে বর্ণনা করেছে)[১]
২৩০৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩০৯
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «قَالَ مُوسٰى ؑ: يَا رَبِّ عَلِّمْنِىْ شَيْئًا أَذْكُرُكَ بِه وَأَدْعُوكَ بِه فَقَالَ: يَا مُوسٰى قُلْ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ فَقَالَ: يَا رَبِّ كلُّ عِبَادِكَ يَقُوْلُ هٰذَا إِنَّما أُرِيْدُ شَيْئًا تَخُصُّنِىْ بِه قَالَ: يَا مُوسٰى لَوْ أَنَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعَ وَعَامِرَهُنَّ غَيْرِىْ وَالْأَرَضِيْنَ السَّبْعَ وُضِعْنَ فِىْ كِفَّةٍ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ فِىْ كِفَّةٍ لَمَالَتْ بِهِنَّ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ». رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন মূসা (আঃ) বললেন, হে রব! আমাকে এমন একটি কালাম বা বাক্য শিখিয়ে দাও, যা দিয়ে আমি তোমার জিকির করতে পারি। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমার কাছে দু‘আ করতে পারি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ হে মূসা! তুমি বলো, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে রব! তোমার প্রত্যেক বান্দাই তো এটা (কালিমা) বলে থাকে। আমি তো তোমার কাছে আমার জন্য একটি বিশেষ ‘কালিমা’ চাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা তখন বললেন, হে মূসা! সাত আকাশ ও আমি ছাড়া এর সকল অধিবাসী এবং সাত জমিন যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আর ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ অন্য পাল্লায় রাখা হয়, তবে অবশ্যই ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’-এর পাল্লা ভারী হবে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[১]
(قَالَ: يَا مُوسٰى لَوْ أَنَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعَ الخ) ইমাম ত্বীবী বলেন, যদি তুমি বল মূসা (আঃ) এমন কিছু অনুসন্ধান করেছেন যার মাধ্যমে জিকির ও দু‘আর দিক দিয়ে তিনি অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব হওয়ার ইচছা করেছেন তাহলে প্রশ্নোত্তরের অনুকূল কোথায়? আমি বলব, যেন সে বলেছে আমি অসম্ভব জিনিস অনুসন্ধান করেছি, কেননা এর অপেক্ষা উত্তম দু‘আ ও জিকির আর নেই। ইমাম ত্বীবী বলেন, উত্তরের সারাংশ হল, নিশ্চয়ই তোমার সাথে নির্দিষ্ট বিষয় হতে তুমি যা অনুসন্ধান করেছ তা সকল যিকিরের উপর শ্রেষ্ঠ অসম্ভবকর, কেননা এ কালিমাটিকে আকাশ ও তার বাসিন্দাগণ জমিন এবং তার বাসিন্দাগণের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়।
(وَالْأَرَضِيْنَ السَّبْعَ) অর্থাৎ- ‘স্তরসমূহ সীবাবদ্ধ ব্যবহারের কারণে জমিনে আবাদকারী’ কথাটি উল্লেখ করেননি অথবা আকাশের আবাদকারী উক্তি উল্লেখ করে পর্যাপ্ত পথ অবলম্বন করেছেন।
(لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ فِىْ كِفَّةٍ) অর্থাৎ- এর সাওয়াব বা কার্ড এক পাল্লাতে। হাফেয ফাত্হ-এ এ হাদীস উল্লেখের পর বলেন, এ হাদীস থেকে মাসআলাহ্ গ্রহণ করা যাচ্ছে যে, (لا إله إلا الله) দ্বারা জিকির করা (الحمد لله) দ্বারা জিকির করা অপেক্ষা প্রাধান্য পাবে। আবূ মালিক আল আশ্‘আরী-এর মারফূ' হাদীস (আল হামদুলিল্লা-হ দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়) এর বিরোধিতা করবে না। কেননা পূর্ণাঙ্গ সমতার উপর প্রমাণ বহন করে, পক্ষান্তরে (رجحان) স্পষ্টভাবে আধিক্যতাকে বুঝায়। সুতরাং (لا إله إلا الله) দ্বারা জিকির করাই উত্তম। আর দাড়িপাল্লা পরিপূর্ণ হওয়া এর অর্থ হল (لا إله إلا الله) এর জিকিরকারী সাওয়াব দ্বারা দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করবে।
২৩১০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১০
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ صَدَّقَه رَبُّه قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ وَإِذَا قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه يَقُولُ اللّٰهُ: لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِىْ لَا شَرِيْكَ لِىْ وَإِذَا قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا لِىَ الْمُلْكُ وَلِيَ الْحَمْدُ وَإِذَا قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِىْ» وَكَانَ يَقُولُ: «مَنْ قَالَهَا فِىْ مَرَضِه ثُمَّ مَاتَ لَمْ تَطْعَمْهُ النَّارُ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই এবং আল্লাহ সুমহান) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তার কথা সমর্থন করে বলেন, হ্যাঁ, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা-, ওয়া আনা- আকবার’’ (অর্থাৎ- আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি অতি মহান)। আর যখন বলেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- ওয়াহদী, লা- শারীকা লী’’ (অর্থাৎ- হ্যাঁ, আমি একক, আমার কোন শারীক নেই)। আর যখন কোন বান্দা বলেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তাঁরই রাজ্য ও তাঁরই প্রশংসা)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- লিয়াল মুলকু ওয়া লিয়াল হামদু’’ (অর্থাৎ- হ্যাঁ, আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, আমারই রাজ্য এবং আমারই প্রশংসা)।
কোন বান্দা যখন বলেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কোন উপায় ও শক্তি নেই)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বী’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই এবং আমার সাহায্য ছাড়া কারো কোন উপায় ও শক্তি নেই)। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেন, যে ব্যক্তি এসব কালিমাগুলো নিজের অসুস্থতার সময়ে পড়ে, তারপর মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা পাবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[১]
(صَدَّقَه رَبُّه) অর্থাৎ- তার পালনকর্তা তার কথার সমর্থন বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, (لا إله إلا أنا وأنا أكبر) কারীর উক্তি ‘‘এ পদ্ধতি আমি সত্যায়ন করেছি’’ বলা অপেক্ষা পরিপূরক। তিরমিযীতে আছে (صدقة ربه وقال) অর্থাৎ- (قال) এর পূর্বে (واو) বৃদ্ধি করে। তারগীবে আছে, (صدقة ربه فقال) অর্থাৎ- (واو) বর্ণের পরিবর্তে (فاء) বর্ণ দ্বারা, ইবনু মাজাতে আছে বান্দা যখন (لا إله إلا الله الله أكبر) বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন আল্লাহ ‘আযযা ওয়াজাল্লা বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমিই সর্বাধিক বড়।
(لَمْ تَطْعَمْهُ النَّارُ) অর্থাৎ- আগুন তাকে স্পর্শ করবে না অথবা তাকে জ্বালিয়ে দিবে না। অর্থাৎ- তাকে খাবে না। অর্থের আধিক্যতা বুঝানোর জন্য খাদ্যকে জ্বালিয়ে দেয়ার অর্থে (استعارة) করা হয়েছে যেন মানুষ তার খাদ্য যাকে সে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে। ইবনু মাজাতে আছে, এ শব্দগুলো যাকে মৃতের সময় দান করা হবে আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। সিনদী বলেন, এ শব্দগুলো যাকে তার মৃত্যুর সময় দান করা হবে এবং এগুলো বলার তাওফীক যাকে দেয়া হবে আগুন তাকে স্পর্শ করবে না বরং শুরুতেই পুণ্যবানদের সাথে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, হাদীসে এ উল্লেখিত শব্দসমূহ বান্দা যখন তার ঐ অসুস্থতাতে বলবে এবং ঐ শব্দসমূহের উপর ঐ অসুস্থতাতে মারা যাবে, অর্থাৎ- সুস্থ বিবেকে এ শব্দসমূহ তার শেষ কথা হবে তাহলে আগুন তাকে স্পর্শ করবে না এবং তার কৃত অবাধ্যতার কাজ তার কোন ক্ষতি করবে না। নিশ্চয়ই এ শব্দাবলী সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দিবে।
২৩১১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১১
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِىْ وَقَّاصٍ أَنَّه دَخَلَ مَعَ النَّبِىِّ ﷺ عَلَى امْرَأَةٍ وَبَيْنَ يَدَيْهَا نَوًى أَوْ حَصًى تُسَبِّحُ بِه فَقَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هٰذَا أَوْ أَفْضَلُ؟ سُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِى السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِى الْأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذٰلِكَ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذٰلِكَ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ مِثْلَ ذٰلِكَ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مِثْلَ ذٰلِكَ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ مِثْلَ ذٰلِكَ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জনৈকা মহিলার কাছে গেলেন। তখন মহিলার সামনে কিছু খেজুরের বিচি; অথবা তিনি বলেছেন, কিছু কাঁকর ছিল, যা দিয়ে মহিলা গুণে গুণে তাসবীহ পড়ছিল। এটা দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, আমি কি এর চেয়ে তোমার পক্ষে সহজ তাসবীহ; অথবা বলেছেন, উত্তম তাসবীহ তোমাকে বলে দিব না? আর তা হচ্ছে,
‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা মা- খলাকা ফিস্ সামা-য়ি, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা মা- খলাকা ফিল আরযি, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা মা- বায়না যা-লিকা ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ‘আদাদা মা-হুওয়া খ-লিকুন ওয়াল্ল-হু আকবার মিসলা যা-লিকা ওয়াল হামদুলিল্লা-হি মিসলা যা-লিকা ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মিসলা যা-লিকা ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি মিসলা যা-লিকা’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য পাক-পবিত্রতা, যে পরিমাণ তিনি আসমানে সৃষ্টিজগত করেছেন। আল্লাহর জন্য পাক-পবিত্রতা তাঁর ওই সৃষ্টিজগতের অনুরূপ যা আসমান ও জমিনের মধ্যে আছে। আর আল্লাহর জন্য সব পাক-পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবেন। আর অনুরূপভাবে ‘‘আল্ল-হু আকবার’’ ও ‘‘আলহামদুলিল্লা-হি’’ ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ এবং ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি’’ও পড়বে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ; তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন)[১]
(أَلَا أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هٰذَا أَوْ أَفْضَلُ؟) ইমাম ত্বীবী বলেন, নিশ্চয়ই তা সর্বোত্তম; কেননা তাতে শিথিলতা সম্পর্কে স্বীকৃতি রয়েছে, কেননা সে তার গুণকীর্তন পরিসংখ্যান করার ব্যাপারে সক্ষম না, আর বিচি দ্বারা তাসবীহ গণনাতে ঐ ব্যাপারে ঝুঁকি রয়েছে যে, সে পরিসংখ্যানের ব্যাপারে সক্ষম। কারী বলেন, হাদীসে বিচি দ্বারা তাসবীহ গণনা করতে ঝুঁকি আবশ্যক হয়ে যায় না, এরপর কারী শ্রেষ্ঠত্বের অন্যান্য দিকসমূহ উল্লেখ করেছেন যেগুলোর কোনটিই জখমমুক্ত নয় এবং চিন্তাশীলের কাছে যা গোপন না।
(عَدَدَ مَا بَيْنَ ذٰلِكَ) অর্থাৎ- আকাশ, জমিন, বাতাস, পাখি, মেঘমালা এবং এগুলো ছাড়া অন্যান্যদের হতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার মাঝে যা আছে তা।
(عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ) অর্থাৎ- এরপর যা তিনি সৃষ্টি করবেন। ইবনু হাজার একেই পছন্দ করেছেন এবং এটিই সর্বাধিক প্রকাশ্যমান। তবে সবাধিক সূক্ষ্ম ও গোপনীয় ত্বীবী যা বলেছেন, অর্থাৎ- অনাদী হতে অনন্ত পর্যন্ত তিনি যা সৃষ্টি করবেন তা। উদ্দেশ্য নিরবিচ্ছিন্নতা বিশ্লেষণের পরে অস্পষ্টতা। কেননা (اسم الفاعل) কে যখন আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্বন্ধ করা হবে তখন তা সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্থায়িত্বের উপকারিতা দিবে। উদাহরণ স্বরূপ কেউ যদি বলে আল্লাহ ক্ষমতাবান, জ্ঞানী তখন সে কোন এক কালকে বাদ দিয়ে অপর কালকে উদ্দেশ্য করতে পারবে না।
২৩১২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১২
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: مَنْ سَبَّحَ اللّٰهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِىِّ كَانَ كَمَنْ حَجَّ مِائَةَ حَجَّةٍ وَمَنْ حَمِدَ اللّٰهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِىِّ كَانَ كَمَنْ حَمَلَ عَلٰى مِائَةِ فَرَسٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ وَمَنْ هَلَّلَ اللّٰهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِىِّ كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ مِائَةَ رَقَبَةٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَمَنْ كَبَّرَ اللّٰهَ مِائَةً بِالْغَدَاةِ وَمِائَةً بِالْعَشِىِّ لَمْ يَأْتِ فِىْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ أَحَدٌ بِأَكْثَرَ مِمَّا أَتٰى بِه إِلَّا مَنْ قَالَ مِثْلَ ذٰلِكَ أَوْ زَادَ عَلٰى مَا قَالَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
আমর ইবনু শু‘আয়ব থেকে বর্ণিতঃ
তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তাঁর দাদা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ পড়বে, সে তাঁর মতো হবে (সাওয়াবের দিক দিয়ে) যে একশ’বার হজ করবে। যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ পড়বে, সে আল্লাহর পথে একশ’ ঘোড়ায় একশ’ মুজাহিদ রওনা করে দেয়া ব্যক্তির মতো হবে। যে সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পড়বে, সে নাবী ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর বংশের একশ’ লোক মুক্ত করে দেয়া ব্যক্তির সমতুল্য হবে। আর যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ’বার করে ‘আল্ল-হু আকবার’ পড়বে, সেদিন তার চেয়ে বেশি সাওয়াবের কাজ আর কেউ করতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যে অনুরূপ ‘আমাল করেছে অথবা এর চেয়ে বেশি করেছে- (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[১]
(كَانَ كَمَنْ حَجَّ مِائَةَ حَجَّةٍ) অর্থাৎ- নফল হজ। হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে, যে আল্লাহর সাথে আন্তরিক সম্পর্ক ঠিক রেখে সহজ-সাবলীলভাবে ‘ইবাদাত করা উদাসীনতার সাথে জটিলভাবে ‘ইবাদাত করা অপেক্ষা উত্তম। হাদীসটি অধিক উৎসাহিতকরণে এবং বহুগুণ সাওয়াব অর্জন হয় এমন তাসবীহের মাঝে, বহুগুণ সাওয়াব অর্জন হয় এমন অন্যান্য হাজ্জের সাথে সমতা রদকরণে নাকিসকে কামিলের সাথে মিলিয়ে দেয়া অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব।
(عَلٰى مِائَةِ فَرَسٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) অর্থাৎ- জিহাদের মতো ক্ষেত্রে চাই দান স্বরূপ হোক, চাই ধার স্বরূপ হোক। তিরমিযীতে এর পরে আছে অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে একশতটি যুদ্ধ করল। এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ।
(كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ مِائَةَ رَقَبَةٍ) উল্লেখিত অংশে আর্থিক ‘ইবাদাতের সাথে নির্দিষ্ট ধনীদের সম্পর্কে নিঃস্ব মুহাজির জিকিরকারীদের সান্তবনা দেয়া হয়েছে।
(مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ) ইসমা‘ঈলের সন্তান থেকে দাস আযাদ করাকে নির্দিষ্ট করার কারণ হল কেননা ইসমা‘ঈল বংশের দাসদের অন্যান্য বংশের দাসদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
আর এটা এ কারণে যে, মুহাম্মাদ, ইসমা‘ঈল, ইব্রাহীম এরা একে অপর থেকে উদ্ভূত। ত্বীবী বলেন, তাঁর উক্তি (مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ) দাস আযাদের ক্ষেত্রে পূর্ণতা দান, কেননা দাস আযাদ করা মহৎ উদ্দেশ্য। আর তা ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর বংশধর থেকে হওয়া আরো গুরুত্বের দাবীদার। যা সৃষ্টির মাঝে বংশের দিক থেকে সর্বাধিক সম্মানিত মহৎ, দৃষ্টান্তপূর্ণ বংশ।
(لَمْ يَأْتِ فِىْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ أَحَدٌ) অর্থাৎ- কিয়ামাতের দিন উদ্দেশ্য।
(بِأَكْثَرَ) অর্থাৎ- অধিক সাওয়াব নিয়ে, বা (উদ্দেশ্য) সর্বোত্তম ‘আমাল নিয়ে আর এখানে (أكثر) দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কেননা তা (أفضل) অর্থে ব্যবহৃত।
(مِمَّا أَتٰى بِه) অর্থাৎ- সে যা সম্পাদন করেছে অথবা তার মত। এক মতে বলা হয়েছে এর বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই এটা এর পূর্বে যা আছে তার অপেক্ষা উত্তম। অনেক বিশুদ্ধ হাদীস যা প্রমাণ করেছে তা হল, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম হল এ (لا إله إلا الله), অতঃপর (الحمد لله), তারপর (الله أكبر), তারপর (سبحان الله) পাঠ করা। সুতরাং তখন এ বলে ব্যাখ্যা করতে হবে (لا إله إلا الله) পাঠকারী এবং উল্লেখিত জিকির পাঠকারীগণ ছাড়া অন্য কেউ তাদের অপেক্ষা ঐ দিন উত্তম ‘আমাল সম্পাদন করতে পারবে না।
২৩১৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৩
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ يَمْلَؤُه وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ لَيْسَ لَهَا حِجَابٌ دُونَ اللّٰهِ حَتّٰى تَخْلُصَ إِلَيْهِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَادُه بِالْقَوِىِّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ হলো পাল্লার অর্ধেক, ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ একে পূর্ণ করে, আর ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’-এর সামনে কোন পর্দা নেই, যে পর্যন্ত না তা আল্লাহর কাছে গিয়ে না পৌঁছে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব, এর সানাদ সবল নয়)[১]
(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ يَمْلَؤُه) অর্থাৎ- যদি (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার এক পাল্লাতে রাখা হয় তাহলে তা এক পাল্লাকে পূর্ণ করে নিবে। সুতরাং (الحمد) তাসবীহ অপেক্ষা উত্তম। তার সাওয়াব তাসবীহের সাওয়াবের দ্বিগুণ, কেননা তাসবীহ দাড়িপাল্লার এক পাল্লার অর্ধেক পূর্ণ করে। পক্ষান্তরে (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার দু’ পাল্লার একটিকে একাই পূর্ণ করে দেয়। অথবা উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার বাকী অর্ধেককে পূর্ণ করে দিবে। অর্থাৎ- যদি তাসবীহের সাওয়াবকে দাড়িপাল্লার এক পাল্লাতে রাখার পর অন্য পাল্লাতে (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) এর সাওয়াব রাখা হয় তাহলে দাড়িপাল্লা পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন (الحمد) এর সাওয়াব তাসবীহের সাওয়াবের সমান হবে, কেননা (الحمد) এবং (تسبيح) থেকে প্রত্যেকটি দাড়িপাল্লার অর্ধেককে গ্রহণ করে এক সাথে দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দিবে তখন (الحمد) এবং (تسبيح) উভয়টি সমান হবে।
ত্বীবী বলেন, হাদীসে দু’টি দিক আছে। দু’টি দিকের একটি হল (تسبيح) এবং (تحميد) এর মাঝে সমতা উদ্দেশ্য করা আর তা এভাবে যে, (تسبيح) এবং (تحميد) প্রত্যেকটি অর্ধেক পাল্লা করে এক সাথে সম্পূর্ণ পাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। আর এটা এ কারণে যে, কেননা ঐ সকল জিকির যা দৈহিক ‘ইবাদাতের মূল তা দু’ প্রকারে সীমাবদ্ধ। দু’ প্রকারের একটি হল, পবিত্রতা বর্ণনা করা অপরটি প্রশংসা করা। (تسبيح) প্রথম প্রকারকে আয়ত্ব করে এবং (تحميد) দ্বিতীয় প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। দু’টির দ্বিতীয়টি দ্বারা (الحمد) কে (تسبيح)-এর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা উদ্দেশ্য। এর সাওয়াব (تسبيح)-এর সাওয়াবের দ্বিগুণ। কেননা (تسبيح) এর দাড়িপাল্লার অর্ধেক আর (تحميد) একাই তাকে পূর্ণ করে আর এটা এ কারণে যে, কেননা সাধারণ (حمد)-এর অধিকারী হবে কেবল ঐ সত্তা যে সকল ঘাটতি থেকে মুক্ত সম্মান মর্যাদার গুণে গুণান্বিত। সুতরাং (حمد) দু’টি বিষয়কে এবং দু’টি প্রকারের সর্বোচ্চ প্রকারকে শামিল করতেছে। প্রথমটির দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (বাণী দু’টি জবানে হালকা এবং দাড়িপাল্লাতে ভারি) এ উক্তি দ্বারা এবং দ্বিতীয়টির দিকে (আমার হাতে থাকবে حمد-এর পতাকা) এ উক্তি দ্বারা ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (لا إله إلا الله)-এর কোন পর্দা নেই (কেবল হওয়ার ক্ষেত্রে) এ উক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঊর্ধ্বগতির অর্থকে সমর্থন করা হচ্ছে। কেননা (لا إله إلا الله)-এর বাণী আল্লাহর পবিত্রতা সাব্যস্তকরণ এবং প্রশংসাকরণকে অন্তর্ভুক্ত করে যেমন অতিবাহিত হয়েছে। আর আল্লাহ ছাড়া যা কিছু রয়েছে তাদের পবিত্রতা ও প্রশংসাকরণকে সাব্যস্ত করে না। এখান থেকে এটিকে অন্য জাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। কেননা প্রথম দু’টি ‘আমালের ক্ষেত্রে ওযন এবং পরিমাণের অর্থের মাঝে অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বিনা বাধাতে আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জন হল।
হাদীসের বাহ্যিক অর্থ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। কেননা (حمد) পাঠ করা যখন দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করবে তখন অবশিষ্ট ‘আমালকে কিভাবে ওযন করা হবে? পুণ্য এবং পাপ ওযনের ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহের বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই সমস্ত পুণ্য কর্মসমূহকে এক পাল্লাতে রাখা হবে এবং সকল পাপসমূহকে অন্য পাল্লাতে রাখা হবে। আরো উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ঐ ‘আমালসমূহ এবং জিকিরসমূহ ওযন করার সময় বহু আকৃতি ও ছোট আকৃতিতে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সত্ত্বেও এদের ওযনে ত্রুটি সৃষ্টি হবে না এবং একে অন্যের সাথে গাদাগাদি সৃষ্টি করবে না। আর আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞানী।
(وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ لَيْسَ لَهَا حِجَابٌ دُونَ اللّٰهِ) অর্থাৎ- (لا إله إلا الله) কবূল হওয়ার জন্য এমন কোন পর্দা নেই যা (لا إله إلا الله) কবূল হওয়াকে বাধা দিবে। আর তা পবিত্রতা ও প্রশংসা সাব্যস্ত করার কারণে এবং আল্লাহর সাথে অন্যের সমতা সাব্যস্তকে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করার কারণে।
(حَتّٰى تَخْلُصَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ- তাঁর পর্যন্ত ও কবূলের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটা এবং এর মতো আরো বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হল, দ্রুত কবূল হওয়া ও অধিক সাওয়াব লাভ করা। উল্লেখিত হাদীসাংশে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, নিশ্চয়ই (لا إله إلا الله) হল (سبحان الله) এবং (الحمد لله) অপেক্ষা উত্তম।
২৩১৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৪
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَا قَالَ عَبْدٌ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُخْلِصًا قَطُّ إِلَّا فُتِحَتْ لَه أَبْوَابُ السَّمَاءِ حَتّٰى يُفْضِىَ إِلَى الْعَرْشِ مَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন বান্দা খালেস মনে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হবে, যতক্ষণ না তা আল্লাহর ‘আরশে না পৌঁছে, তবে যদি সে কাবীরাহ্ গুনাহ হতে বিরত থাকে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[১]
(مَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ) অর্থাৎ- (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ)-এর পাঠক কাবীরাহ্ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সময়। ত্বীবী বলেন, পূর্বক্ত হাদীসটি প্রমাণ বহন করছে (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠ করার সাওয়াব ‘আরশ অতিক্রম করে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, দ্রুত কবূল হওয়া আর কাবীরাহ্ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা দ্রুত দু‘আ কবূলের শর্ত; সাওয়াব অর্জন ও দু‘আ কবূলের শর্ত না। অথবা পূর্ণ সাওয়াব অর্জন এবং দু‘আ কবূলের স্তরের জন্য শর্ত। কেননা মন্দ কর্ম পুণ্য কর্মকে বাদ করতে পারে না, পক্ষান্তরে পুণ্য কর্ম মন্দ কর্মকে দূর করে দেয়। হাদীসটিতে কবীরাহ্ গুনাহে জড়িত হওয়া থেকে সতর্ক করা হয়েছে এবং আল্লাহর বাণী (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১০) إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ এ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
২৩১৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৫
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَقِيتُ إِبْرَاهِيمَ لَيْلَةَ أُسَرِىَ بِىْ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَقْرِئْ أُمَّتَكَ مِنِّى السَّلَامَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ الْجَنَّةَ طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ عَذْبَةُ الْمَاءِ وَأَنَّهَا قِيعَانٌ وَأَنَّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি‘রাজের রাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার উম্মাতকে আমার সালাম বলবেন এবং খবর দিবেন যে, জান্নাত হলো সুগন্ধ মাটি ও সুপেয় পানিবিশিষ্ট। কিন্তু এতে কোন গাছপালা নেই (অর্থাৎ- জান্নাত হলো সমতল ভূমি)। এর গাছপালা হলো ‘‘সুবহা-নাল্ল-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’। (তিরমিযী; তিনি বলেন, সানাদগত দিক থেকে হাদীসটি হাসান গরীব)[১]
(طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ) কেননা তার মাটি মিস্ক আম্বার, জা‘ফরান এবং এদের অপেক্ষা সুগন্ধিময় কিছু নেই।
(قِيعَانٌ) যা (قاع) শব্দের বহুবচন, অর্থাৎ- বৃক্ষমুক্ত সমতল ভূমি।
(وَأَنَّ غِرَاسَهَا) অর্থাৎ- যা (غرس)-এর বহুবচন। কারী বলেন, তা এমন বস্ত্ত যা রোপণ করা হয় অর্থাৎ- জমিনের মাটি, বীজ হতে যা ঢেকে নেয় যাতে পরে তা গজায়। আর যখন ঐ মাটি উত্তম হবে এবং তার পানি মিষ্টি হবে তখন স্বভাবত চারা উত্তম হবে আর চারা বলতে উত্তম বাক্যাবলী আর এগুলো হল নিষ্ঠাপূর্ণ অবশিষ্ট কালিমাহ্, অর্থাৎ- তাদের জানিয়ে দিন এ বাক্যাবলী এবং এদের মতো আরো কিছুর উক্তিকারী জান্নাতে প্রবেশের কারণ এবং জান্নাতে তার বাসস্থানের বৃক্ষ অধিক হওয়ার কারণে, কেননা যখনই উক্তিকারী এগুলো বারংবার পাঠ করবে তখনই তার জন্য জান্নাতে তার পাঠের সংখ্যা পরিমাণ বৃক্ষ গজাবে।
তুরবিশতী বলেন, চারা কেবল উত্তম মাটিতে ভাল হয়ে থাকে। মিষ্টি পানি দ্বারা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থাৎ- আপনি তাদেরকে জানিয়ে দিন নিশ্চয়ই এ বাক্যাবলী এদের উক্তিকারীকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেয় এবং এগুলো অর্জনের চেষ্টাকারীর চেষ্টা নষ্ট হয় না, কেননা রোপণকারী সে তার গুদামজাত করা বস্ত্ত একত্র করে রাখে না। শায়খ দেহলবী বলেন, বিষয়টি জটিলতা সৃষ্টি করছে যে, নিশ্চয়ই আলোচনা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহনকারী যে, নিশ্চয়ই জান্নাতের মাটি বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত যা প্রমাণিত জান্নাতের বিপরীত। এ ব্যাপারে উত্তর প্রদান করা হয়েছে যে, আলোচ্য বিষয়টি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে না যে, এখনও সে জান্নাত বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত, বরং ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, মূলত জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত এবং বৃক্ষসমূহ তাতে কর্মের বদলা স্বরূপ রোপণ করা হয়। অথবা উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই জান্নাতে বৃক্ষসমূহ যা ‘আমালের কারণে হয়েছে তা যেন ‘আমালের কারণে রোপণ করা হয়েছে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, এ হাদীসে জটিলতা রয়েছে, কেননা হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, জান্নাতের জমিন বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত। পক্ষান্তরে আল্লাহর বাণী (جنات تجرى من تحتها الأنهار) এবং অপর বাণী (أعدت للمتقين) ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, নিশ্চয়ই জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত না। কেননা জান্নাতকে জান্নাত নামকরণ করা হয়েছে তার ছায়া বিশিষ্ট ঘন বৃক্ষসমূহের ডাল-পালা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে এবং তা জান্নাতের গঠন ঢেকে নেয়া অর্থের উপর আবর্তনশীল হওয়ার কারণে আর নিশ্চয়ই তা তৈরি করে প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উত্তর হল নিশ্চয়ই জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত ছিল, অতঃপর আল্লাহ তার কৃপা ও তার অনুগ্রহের প্রশস্ততার মাধ্যমে ‘আমালকারীদের ‘আমাল অনুপাতে তাতে বৃক্ষ ও প্রাসাদ সৃষ্টি করেছেন। যা প্রত্যেক ‘আমালকারীর জন্য তার ‘আমাল অনুযায়ী নির্দিষ্ট। অতঃপর নিশ্চয়ই আল্লাহ সাওয়াব দানের জন্য যাকে যে ‘আমালের জন্য সৃষ্টি করেছেন তার জন্য তা যখন সহজ করে দিলেন তখন ‘আমালকারীকে রূপকার্থে বৃক্ষ রোপণকারীর ন্যায় করে দিলেন। অর্থাৎ- (سبب) কে (مسبب) এর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
আরো উত্তর দেয়া হয়েছে যে, হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ নেই যে, জান্নাত সম্পূর্ণরূপে বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত। কেননা জান্নাত বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত হওয়ার অর্থ হল জান্নাতের অধিকাংশ চারা রোপণ করা, এছাড়া বাকী যা আছে তা প্রশস্ত স্থান রোপণহীন যাতে ঐ বাণীর কারণে চারা রোপণ করা হয় যাতে বিনা কারণে প্রকৃত চারা রোপণ এবং ঐ বাণীর কারণে চারা রোপণ। ত্ববারানী অত্যন্ত দুর্বল সানাদে সালমান ফারিসী-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণনা করেন যার শব্দ হল ‘‘তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই জান্নাতে বৃক্ষ, প্রাসাদহীন ভূমি রয়েছে, সুতরাং বেশি করে চারা রোপণ কর। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! চারা রোপণ কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر)।’’
২৩১৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৬
وَعَنْ يُسَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا وَكَانَتْ مِنَ الْمُهَاجِرَاتِ قَالَتْ: قَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «عَلَيْكُنَّ بِالتَّسْبِيحِ وَالتَّهْلِيلِ وَالتَّقْدِيسِ وَاعْقِدَنَّ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْؤُوْلَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ وَلَا تَغْفُلْنَ فَتَنْسَيْنَ الرَّحْمَةَ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ইউসায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি মুহাজির রমণীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ), তাকদীস (সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস) নিজের আঙ্গুলে গুণে গুণে পড়বে। কারণ আঙ্গুলকে কথা বলার শক্তি দিয়ে কিয়ামাতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে এবং আল্লাহর জিকির করা হতে গাফিল হয়ো না, যাতে তোমরা আল্লাহর রহমাতকে ভুলে না যাও। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[১]
(وَاعْقِدَنَّ بِالْأَنَامِلِ) ত্বীবী বলেন, এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা ঐ শব্দ বাক্যসমূহ গণনার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন যাতে এর মাধ্যমে অর্জিত গুনাহসমূহ মুছে দেয়া হয় হাদীসাংশটুকু ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করতেছে যে, ‘আরবরা হিসাব করা জানত।
(فَإِنَّهُنَّ مَسْؤُوْلَاتٌ) কেননা কিয়ামাতের দিন এগুলোকে জিজ্ঞেস করা হবে এগুলো যা উপার্জন করেছে এবং কোন জিনিসের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে।
(مُسْتَنْطَقَاتٌ) অর্থাৎ- এগুলোর মাঝে উচ্চারণ শক্তি দেয়ার কারণে এগুলো তাদের সাথীর পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে ভাল অথবা মন্দ কর্ম করার কারণে। আল্লাহ বলেন, ‘‘যেদিন তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের জিহবা, তাদের হাত, তাদের পা তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।’’ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ২৪)
অন্যত্র বলেন, ‘‘আর তোমরা গোপন করতে পারতে না তোমাদের চক্ষু, কর্ণ, তোমাদের দৃষ্টি, তোমাদের চামড়া তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়া থেকে’’- (সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ২২)। এতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সন্তুষ্টজনিত কাজে ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে।
(فَتَنْسَيْنَ الرَّحْمَةَ) রহমাতকে ভুলে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য রহমাত লাভের উপকরণসমূহ ভুলে যাওয়া, অর্থাৎ- তোমরা জিকির ছেড়ে দিও না, কেননা তোমরা যদি জিকির ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে তার সাওয়াব থেকে মাহরুম করা হবে। শাওকানী বলেন, হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ গণনা করা শারী‘আত সম্মত। আবূ দাঊদ একে সংকলন করেছেন এবং তিরমিযী একে সংকলন করে একে হাসান বলেছেন, ইমাম নাসায়ী একে সংকলন করেছেন এবং হাকিম একে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর থেকে সংকলন করে একে সহীহ বলেছেন।
‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর হাত দ্বারা তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি। আবূ দাঊদ এবং অন্যান্যের বর্ণনাতে একটু বেশি এসেছে, তা হল ডান হাতের কথা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুসায়রার হাদীসে এর কারণ উল্লেখ করেছেন যে, আঙ্গুলসমূহকে বাকশক্তি দেয়া হবে এবং জিজ্ঞেস করা হবে, অর্থাৎ- আঙ্গুলসমূহ এ ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। সুতরাং এভাবে তাসবীহ গণনা করা তাসবীহের দানা এবং কঙ্কর অপেক্ষা উত্তম। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস-এর পূর্বক্ত হাদীস এবং সফিয়্যাহ্’র হাদীস আটি এবং কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ গণনা বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। সফিয়্যাহ্ বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন, এমতাবস্থায় আমার সামনে চার পাত্র আঁটি ছিল তার মাধ্যমে আমি তাসবীহ পাঠ করতাম। তিরমিযী, হাকিম একে সংকলন করেছেন সুয়ূত্বী একে বিশুদ্ধ বলেছেন।
ইমাম শাওকানী বলেছেন, এ হাদীস দু’টি আটি এবং কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ পাঠ বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। এমনিভাবে খেজুরের আঁটি, পাথর এবং তাসবীহের দানার নামে পার্থক্য না থাকার কারণে, এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদ্বয়কে সমর্থন করার কারণে, অসম্মতি না জানানোর কারণে এবং যা উত্তম তার প্রতি দিক-নির্দেশনা যা উত্তম না তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা না করার কারণে তাসবীহের দানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ইতিপূর্বে আমরা সা‘দ-এর হাদীস সম্পর্কে বলেছি যে, তা দুর্বল। অপরদিকে সফিয়্যাহ্ এর হাদীসও দুর্বল, ইমাম তিরমিযী একে তার উক্তি ‘‘এ হাদীসটি গরীব, একে হাশিম বিন সা‘ঈদ আলকূফী সফিয়্যাহ্-এর আযাদকৃত দাস কিনানাহ্ থেকে, আর কিনানাহ্ সফিয়্যাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন আর এ সানাদ ছাড়া অন্য কোন সানাদে হাদীসটি জানা যায় না। এ দ্বারা দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। এর সানাদ মা‘রুফ না। পক্ষান্তরে হাকিম একে সহীহ বলেছেন হাফেয যাহাবী তার সমর্থন করেছেন আর সুয়ূত্বী তার মুতাবায়াত নিয়ে এসেছেন শাওকানী এ ক্ষেত্রে ধোঁকা খেয়েছেন আর এটা তাদের ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয়। কেননা হাশিম বিন সা‘ঈদকে যাহাবী মীযান গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, ইবনু মা‘ঈন হাশিম বিন সা‘ঈদ সম্পর্কে বলেন, ليس بشيئ অর্থাৎ- তার হাদীস কম। ইবনু ‘আদী বলেন, তিনি যা বর্ণনা করেন তার পরিমাণ এমন যার মুতাবায়াত পাওয়া যায় না, এজন্য হাফেয তাকরীর গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন।
২৩১৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৭
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِىْ وَقَّاصٍ قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِىٌّ إِلٰى رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فَقَالَ: عَلِّمْنِىْ كَلَامًا أَقُولُه قَالَ: «قُلْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَهُ اللّٰهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ». فَقَالَ فَهَؤُلَاءِ لِرَبِّىْ فَمَا لِىْ؟ فَقَالَ: «قُلِ اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ وَعَافِنِىْ». شَكَّ الرَّاوِىْ فِىْ «عَافِنِىْ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কিছু দু‘আ-কালাম শিখিয়ে দিন যা আমি পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি পড়বে ‘
‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, আল্ল-হু আকবার কাবীরা- ওয়াল হামদুলিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ‘আযীযিল হাকীম’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, আল্লাহ অনেক বড়, আল্লাহর জন্য অনেক প্রশংসা, আমি পবিত্রতা ঘোষণা করি সে আল্লাহর যিনি সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক, কারো কোন উপায় বা শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া, যিনি প্রতাপান্বিত ও প্রজ্ঞাবান)।
(রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো দু‘আ শুনে) সে বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো আমার রবের জন্য (তাঁর প্রশংসা), আমার জন্য কী? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি পড়বে
‘‘আল্ল-হুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়া ‘আ-ফিনী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, আমাকে রিযক দাও ও আমাকে সুখে-শান্তিতে রাখ)।
শেষ শব্দ عَافِنِىْ (‘আ-ফিনী) [অর্থাৎ- আমাকে সুখে-শান্তিতে রাখ] সম্বন্ধে বর্ণনাকারী সন্দেহ রয়েছে যে, এ শব্দটি রসূলের কথার মধ্যে আছে কিনা? (মুসলিম)[১]
হাদীস থেকে বুঝা যায়, একজন ব্যক্তির সর্বদায় ও প্রাথমিক অবলম্বনীয় বিষয় তাওহীদ। আরো বুঝা যাচ্ছে দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা, তারপর ব্যক্তির যা চাওয়া পাওয়া তা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
২৩১৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৮
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ مَرَّ عَلٰى شَجَرَةٍ يَابِسَةِ الْوَرَقِ فَضَرَبَهَا بِعَصَاهُ فَتَنَاثَرَ الْوَرَقُ فَقَالَ: «إِنَّ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ تُسَاقِطُ ذُنُوْبَ العَبدِ كَمَا يَتَسَاقَطُ وَرَقُ هٰذِهِ الشَّجَرَةِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ غَرِيْبٌ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শুকনা পাতাবিশিষ্ট গাছের কাছে গেলেন এবং নিজের হাতের লাঠি দিয়ে এতে আঘাত করলেন। এতে গাছের পাতা ঝরতে লাগল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হ, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’-এ বাক্যগুলো বান্দার গুনাহ এভাবে ঝরিয়ে দেয় যে, যেভাবে ঐ গাছের পাতা ঝরছে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[১]
২৩১৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩১৯
وَعَن مَكْحُوْلِ عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «أَكْثِرْ مِنْ قَوْلِ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ فَإِنَّهَا مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ». قَالَ مَكْحُولٌ: فَمَنْ قَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ وَلَا مَنْجَأَ مِنَ اللّٰهِ إِلَّا إِلَيْهِ كَشَفَ اللّٰهُ عَنْهُ سَبْعِينَ بَابًا مِنَ الضُّرِّ أَدْنَاهَا الْفَقْرُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُه بِمُتَّصِلٍ وَمَكْحُولٌ لَمْ يَسْمَعْ عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ
মাকহূল (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ বেশি বেশি করে পড়তে। কেননা এ বাক্যটি জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের বিশেষ বাক্য।
মাকহূল (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পড়বে ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি ওয়ালা- মানজাআ মিনাল্ল-হি ইল্লা- ইলায়হি’’- আল্লাহ তার সত্তরটি কষ্ট দূর করে দিবেন, যার সর্বনিমণ হলো দারিদ্র্যতা। (তিরমিযী। তিনি বলেন, হাদীসের সানাদ মুত্তাসিল নয়। মাকহূল (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি শুনেননি।)[১]
(أَدْنَاهَا الْفَقْرُ) কারী বলেন, হাদীসে الفقر বলতে অন্তরের নিঃস্বতা। যে ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, তাসবীহ পাঠকারী যখন এ বাক্যের অর্থ পরিকল্পনা করবে তখন তার নিকট স্থির হবে, তার অন্তরে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে নিশ্চয়ই নির্দেশ সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। আর নিশ্চয়ই উপকার এবং ক্ষতি তার নিকট থেকেই হয়ে থাকে। কোন কিছু দান করা বা বারণ করা তার মাধ্যমেই হয়ে থাকে আর তখন হাদীসে বর্ণিত তাসবীহ পাঠকারী বিপদে ধৈর্যধারণ করে এবং অনুগ্রহের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তার বিষয়কে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করে। আর কদরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, নিঃস্বতা কুফরীতে পৌঁছে যাওয়ার উপক্রম- এ হাদীসটিকে আবূ নু‘আয়ম হিল্ইয়াহ্ গ্রন্থে, বায়হাক্বী শু‘আবূল ঈমান-এ, ইবনুদ্ দায়বা' আশ্ শায়বানী তাম‘ঈযুত্ব ত্বীব-এ বলেন, হাদীসটি খাবীসের অন্তর্ভুক্ত (১৪৪ পৃষ্ঠা)-এর সানাদে ইয়াযীদ আর্ রক্কাশী আছে, সে দুর্বল এবং এ হাদীসের দুর্বল অনেক শাহিদ/সমর্থনকারী হাদীস আছে। মাজমাউল বিহার গ্রন্থের লেখক তাযকিরাতুল মাওযূ‘আতে (১৭৪ পৃষ্ঠা) একে দুর্বল বলেছেন। তবে আবূ সা‘ঈদ-এর উক্তি কর্তৃক এটি সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে।
হাকিম-এর এক বর্ণনাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনভাণ্ডারসমূহ থেকে কোন ধন ভাণ্ডার সম্পর্কে অবহিত করব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, তুমি বলবে (لا حول ولا قوة إلا بالله ولا ملجأ وفجأ من الله إلا أليه) অর্থাৎ- আল্লাহর আনুগত্য থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিবে এমন পরিবর্তনকারী নেই, আল্লাহর ‘ইবাদাত করার তাওফীক দিবে এমন কোন শক্তি নেই এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই এবং আল্লাহ থেকে মুক্তি লাভের কোন উপায় নেই তবে একমাত্র তাঁর নিকটেই।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইমাম হাকিম-এর এ বর্ণনা ইমাম আহমাদ তাঁর কিতাবের ২য় খণ্ডে ৩০৯ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল।
২৩২০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২০
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ دَوَاءٌ مِنْ تِسْعَةٍ وَتِسْعِينَ دَاءً أَيْسَرُهَا الْهُمُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘লা- হাওলা ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ হলো নিরানব্বইটি রোগের ঔষধ, তন্মধ্যে সহজটা হলো চিন্তা।[১]
(دَاءً) অর্থাৎ- গোপনীয় রোগের ঔষধ যেমন, দম্ভ, অহংকার, গোপনীয় শিরক, প্রবৃত্তির আনুগত্য অথবা বিষয়টি এর চাইতেও ব্যাপক এবং তা স্পষ্ট। কারী বলেন, অর্থাৎ- ইহকালীন ও পরকালীন রোগসমূহকে আরোগ্যদানকারী।
(الْهُمُّ) দ্বীন ও দুনিয়ার সাথে সর্ম্পক রাখে এমন চিন্তা বা যা দুনিয়ার জীবন-যাপন ও পরকালের দিকে প্রত্যাবর্তনের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন। মানাবী বলেন, এটা এ কারণে যে, বান্দা যখন কোন কিছুর উপকরণসমূহ থেকে মুক্ত থাকবে তখন তার বক্ষ প্রশস্ত হবে এবং ঐ ব্যাপারে তার চিন্তা দূর হবে তার মাঝে শক্তি সাহায্য আসবে এবং গোপনীয় রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে তার মন হালকা হবে।
২৩২১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২১
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «أَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى كَلِمَةٍ مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ يَقُولُ اللّٰهُ تَعَالٰى: أَسلَمَ عَبْدِىْ وَاسْتَسْلَمَ». رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِىُّ فِى الدَّعْوَاتِ الْكَبِيْرِ
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কী তোমাকে ‘আরশের নীচের ও জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি ‘কালিমাহ্ বলে দেবো না? (সেটি হলো) ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (যখন এ কালিমাটি কেউ পড়ে) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা সর্বাত্মকভাবে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করল। (উক্ত হাদীস দু’টি বায়হাক্বী দা‘ওয়াতুল কাবীর-এ বর্ণনা করেছেন)।[১]
একমতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ- এমন কালিমাহ্ বা বাক্য যা ‘আরশের তলদেশের গচ্ছিত সম্পদ স্বরূপ।
(يَقُولُ اللّٰهُ تَعَالٰى) ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, আল্লাহ তাঁর মালায়িকাহকে (ফেরেশতাদেরকে) শিক্ষা দেয়ার্থে এ বাণী এর পাঠকারী বা যা এর অর্থকে শামিল করে তা পাঠকারী এর পূর্ণাঙ্গতা সম্পর্কে বলেন।
কারী বলেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (يَقُولُ اللّٰهُ) উক্তি এর বাহ্যিক দিক হল, এটি কালিমাহ্ ও তার পাঠকারীর মর্যাদা বর্ণনার জন্য নতুন।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, হাকিমে (তুমি বলবে, (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ) তখন আল্লাহ বলেন, (أَسلَمَ عَبْدِىْ) শেষ পর্যন্ত) এ শব্দে আছে আর ত্বীবীর উক্তি একে সমর্থন করেছে।
(أَسلَمَ عَبْدِىْ) অর্থাৎ- সে উপাসনীয় হুকুম আহকামের অনুস্মরণ করল এবং নিষ্ঠার পথাবলম্বন করল।
(وَاسْتَسْلَمَ) অর্থাৎ- সে যথার্থ আনুগত্য করল। ত্বীবী বলেন, (أَسلَمَ عَبْدِىْ وَاسْتَسْلَمَ) এর অর্থ হল, সংঘটিত হবে এমন সকল বিষয়কে আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণভাবে সোপর্দ করল এবং দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য খাঁটি সাব্যস্ত করে আল্লাহর আনুগত্য করল। এ অধ্যায়ে আরো অনেক হাদীস আছে যার কতক কতককে শক্তিশালী করবে তার একটি ত্ববারানী এর আওসাতে জাবির-এর হাদীস, ইবনু আসাকিরে ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস, ত্ববারানী এর আওসাতে বাহয বিন হাকিম-এর হাদীস যা তিনি তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটিকে ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে কয়েক স্থানে নিয়ে এসেছেন, তার মাঝে একটি তার মুসনাদের ২য় খণ্ডে ২৯৮ পৃষ্ঠাতে এবং বাযযার বর্ণনা করেছেন, হাকিম তার কিতাবের ১ম খণ্ডে ২১ পৃষ্ঠাতে এবং তিনি বলেন, এটি বিশুদ্ধ হাদীস, এর কোন ত্রুটি পাওয়া যায় না এবং যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। মুনযিরী তারগীবে হাকিমের কথা নকল করে তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
হায়সামী তাঁর কিতাবের ১০ম খণ্ডে ৯৯ পৃষ্ঠাতে উক্ত বাণীকে ইমাম আহমাদ ও বাযযারের দিকে সম্পৃক্ত করার পর বলেন, আবূ বালাজ আল কাবীর ছাড়া সকলেই সহীহ এর লেখক। আবূ বালাজ আল কাবীর বলতে ইয়াহ্ইয়া বিন সুলায়ম আর তিনি নির্ভরশীল।
২৩২২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২২
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّه قَالَ: سُبْحَانَ اللّٰهِ هِىَ صَلَاةُ الْخَلَائِقِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَلِمَةُ الشُّكْرِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ كَلِمَةُ الْإِخْلَاصِ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ قَالَ اللّٰهُ تَعَالٰى: أَسْلَمَ وَاسْتَسْلَمَ. رَوَاهُ رَزِيْنٌ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘‘সুবহা-নাল্ল-হ’’ হলো আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সলাত। ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’ হলো কালিমাতুশ্ শুক্র, অর্থাৎ- কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বাক্য। ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ হলো তাওহীদের কালিমাহ্, আর ‘‘আল্ল-হু আকবার’’ আকাশ ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে পূর্ণ করে দেয়। যখন বান্দা বলে, ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ বান্দা সম্পূর্ণরূপে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করল। (রযীন)
এক মতে বলা হয়েছে, পবিত্রতা বর্ণনা মৌখিকভাবেও হতে পারে অথবা অবস্থার মাধ্যমেও হতে পারে, যা প্রমাণ করে তাঁর স্রষ্টা হওয়ার উপর, তাঁর ক্ষমতার উপর, তাঁর কৌশলের উপর এবং ঐ জিনিস থেকে তাঁর পবিত্র হওয়ার উপর যার সাথে তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করা বৈধ না।
(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَلِمَةُ الشُّكْرِ) অর্থাৎ- কৃতজ্ঞতার খুঁটি, মূল।
(وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ كَلِمَةُ الْإِخْلَاصِ) অর্থাৎ- لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ তাওহীদের বাণী তার পাঠককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি আবশ্যক করে দেয় অথবা তা এমন এক বাণী যা সত্য ও নিষ্ঠাসহ পাঠ ছাড়া কোন উপকারে আসবে না।
(وَاللّٰهُ أَكْبَرُ تَمْلَأُ) অর্থাৎ- তার সাওয়াব পূর্ণ হয়ে যায়।
(مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ) এক মতে বলা হয়েছে, আকাশ ও জমিনের মাঝে যা কিছু আছে তা দ্বারা সকল জগতের প্রতি ইঙ্গিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২৩২৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৩
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «وَاللّٰهِ إِنِّىْ لِأَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً». رَوَاهُ البُخَارِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তরবারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ও তাওবাহ্ করি। (বুখারী)[১]
(أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً) এভাবে বুখারীতে শু‘আয়ব-এর বর্ণনাতে আছে, শু‘আয়ব যুহরী থেকে আর যুহরী আবূ সালামাহ্ থেকে, আবূ সালামাহ্ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে। তিরমিযীতে এবং ইবনুস্ সিন্নীতে মা‘মার-এর বর্ণনাতে আছে, মা‘মার যুহরী থেকে যুহরী আবূ সালামাহ্ থেকে বর্ণনা করেন। তাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি দিনে সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। অনুরূপভাবে আবূ ইয়া‘লা আল বাযযার ‘ত্ববারানী’ গ্রন্থে আনাস-এর হাদীসে এসেছে। সুতরাং এখানে সংখ্যা আধিক্যতা উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘আরবরা সাত, সত্তর, সাতশত সংখ্যাকে আধিক্যতার স্থলে প্রয়োগ করে থাকে। নির্দিষ্ট সংখ্যা উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিতাবের বর্ণনাতে أكثر শব্দটি অস্পষ্ট। সুতরাং তা ইবনু ‘উমারের উল্লেখিত হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যাকৃত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে, আর নিশ্চয়ই তা শতকে পৌঁছবে। নাসায়ীতে মুহাম্মাদ বিন ‘আমর-এর বর্ণনাতে আছে, তিনি আবূ সালামাহ্ থেকে আর তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। ইবনু মাজাতে (إنى لأستغفر الله وأتوب إليه كل يوم مائة مرة) অবশ্যই আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তার কাছে তাওবাহ্ করে থাকি, প্রত্যেক দিন একশতবার আর আগার্-এর আগত হাদীসে আছে, (وإنى لأستغفر الله كل يوم مائة مرة) আর নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক দিন আল্লাহর কাছে একশতবার তাওবাহ্ করে থাকি। তিনটি বর্ণনা উল্লেখের পর ইমাম শাওকানী বলেন, সর্বাধিক সংখ্যাকে গ্রহণ করাই উচিত হবে আর তা হল শতকের বর্ণনা। সুতরাং ব্যক্তি প্রত্যেক দিন একশত বার (اللهم إنى أستغفرك فاغفرلى وأتوب إليك فتب على) পাঠ করে তাহলে সে চাওয়ার দু’টি প্রান্তকে অবলম্বন করল। আর আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বলেন, غَافِرِ الذَّنْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِِ ‘‘গুনাহ ক্ষমাকারী ও তাওবাহ্ কবূলকারী’’- (সূরা গাফির/আল মু’মিন ৪০ : ৩)।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ক্ষমা প্রার্থনা সংঘটিত হওয়া মুশকিল, কেননা তিনি গুনাহ থেকে সুরক্ষিত। পক্ষান্তরে ক্ষমা প্রার্থনা অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়াকে দাবী করে। এ প্রশ্নের কয়েকটি উত্তর দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা উদ্দেশ্য হল তার ঐ প্রকৃত ক্ষমা প্রার্থনা যা আগত আগার্-এর হাদীসে সংঘটিত হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হল, ইবনুল জাওযীর উক্তি আর তা হল মানবিক বৈশিষ্ট্যের অপরাধ যা থেকে কেউ বাঁচতে পারে না, নাবীগণ যদিও কাবীরাহ্ গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে কিন্তু তারা সগীরাহ্ গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে না আর তা ইচ্ছার বিপরীতে অবস্থিত, তবে প্রাধান্যযোগ্য কথা হল সগীরাহ্ গুনাহ থেকেও নাবীগণ বেঁচে থাকা। সে উত্তরগুলোর আরেকটি হল, ইবনু বাত্ত্বাল-এর উক্তি আর তা হল আল্লাহ নাবীদেরকে আল্লাহর পরিচিতি থেকে যা দান করেছেন তার কারণে তারা মানুষের মাঝে ‘ইবাদাতে সর্বাধিক চেষ্টাকারী। তারা সর্বদা তার কৃতজ্ঞতায় লিপ্ত। তারা তার কাছে অক্ষমতা স্বীকারকারী।
নিশ্চয়ই আল্লাহর উদ্দেশে যা ওয়াজিব এমন হক আদায়ের ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রার্থনা অক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। আরো সম্ভাবনা রয়েছে, একজন নাবীর ক্ষমা প্রার্থনা মূলত বৈধ বিষয়াবলী তথা খাওয়া, পান করা, সহবাস করা, ঘুম, শান্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে অথবা কথোপকথনের কারণে, তাদের কল্যাণের দিকে দৃষ্টি দেয়া, কখনো তাদের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা, কখনো শত্রুর সাথে কোমল আচরণ করা এবং অন্যান্য কাজ করা যা তাকে আল্লাহর যিকিরের প্রতি ব্যস্ত হওয়া ও তার নিকট অনুনয়-বিনয় করা থেকে বাধা দেয় এবং এমন সকল কাজ বিচক্ষণতার সাথে লক্ষ্য করে সুউচ্চ স্থানের দিকে লক্ষ্য করে তা পাপ মনে করা আর এ কারণে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর সে উত্তরগুলো থেকে আরেকটি হল নিশ্চয়ই ক্ষমা প্রার্থনা উম্মাতকে শিক্ষাদান ও শারী‘আত প্রণয়নের উদ্দেশে। অথবা তার উম্মাতের গুনাহের কারণে, সুতরাং তা উম্মাতের জন্য সুপারিশ স্বরূপ।
২৩২৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৪
وَعَنِ الْأَغَرِّ الْمُزَنِىِّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّه لَيُغَانُ عَلٰى قَلْبِىْ وَإِنِّىْ لَأَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আগার আল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার অন্তরে মরিচা পড়ে, আর (ওই মরিচা পরিষ্কার করার জন্য) আমি দিনে একশ’বার করে ইস্তিগফার করি। (মুসলিম)[১]
(عَلٰى قَلْبِىْ) অর্থাৎ- যা অন্তরকে আচ্ছাদন করে নেয়, ভুল এবং খাদ্য সম্বন্ধীয় বিষয়, জৈবিক চাহিদা সম্বন্ধীয় বিষয় ও অনুরূপ চাহিদা সম্বন্ধীয় বিষয় নাফসের অনুকূলের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কারণে যা হতে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে না। নিশ্চয়ই তা আবরণ ও মেঘমালার মত যা অন্তরকে আচ্ছাদন করে নেয় ফলে তার মাঝে ও উচ্চ পরিষদবর্গের মাঝে আড়াল সৃষ্টি করে, অতঃপর অন্তর স্বচ্ছকরণ ও আচ্ছাদনকে দূরীকরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর তা যদিও গুনাহ নয় কিন্তু তা তার সমস্ত অবস্থার প্রতি সম্বন্ধ করে ঘাটতি ও মানবিক নিম্ন অবস্থার দিকে অবতরণ যা গুনাহের সাথে সাদৃশ্য রাখে ফলে তার পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করা উপযোগী হয়ে যায়।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, বিদ্বানগণ এ হাদীসের অর্থ বর্ণনা ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নিশ্চল হয়ে গেছেন। এমনকি ইমাম সুয়ূত্বী বলেন, এ হাদীস মুতাশাবিহ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত যার অর্থ জানা যায় না। এ হাদীসের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আসমা‘ঈ অভিধানের সামনে থমকে গেছেন এবং বলেছেন, ব্যাপারটি যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর ছাড়া অন্যের অন্তর সম্পর্কে হত, অবশ্যই তার ব্যাপারে আমি উক্তি করতাম এবং তার ব্যাখ্যা করতাম তবে ‘আরবগণ الغين বলতে পাতলা মেঘমালাকে বুঝায়।
সিনদী বলেন, এর প্রকৃত রূপকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে জানা যায় না, আর নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান অনেক ধারণাতে যা জাগ্রত হয় তার অপেক্ষা মহত্তর ও সুমহান। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে তা সোপর্দ করে দেয়াই উত্তম। আর তা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশেষ একটি অবস্থা অর্জন হত যা ক্ষমা প্রার্থনার দিকে আহবান করত। অতঃপর তিনি প্রত্যেক দিন একশতবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। সুতরাং তিনি ছাড়া অন্যের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রয়োজন হতে পারে? এ বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
(فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ) মানাবী বলেন, এখানে مائة বা শতবার দ্বারা আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এটি سبعين বর্ণনার পরিপন্থী নয়।
২৩২৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৫
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللّٰهِ فَإِنِّىْ أَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
[আগার আল মুযানী (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবমন্ডলী! আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করো। আর আমিও প্রতিদিন একশ’বার করে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করি। (মুসলিম)[১]
কারী বলেন, (يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللّٰهِ) আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে الناس দ্বারা মু’মিনগণ উদ্দেশ্য। আর তা আল্লাহ তা‘আলার وَتُوْبُوْا إِلَى اللّٰهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩১) এ বাণীর কারণে। নিশ্চয়ই প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বস্থান থেকে তার পূর্ণাঙ্গতা সংরক্ষণের জন্য তাওবার মুখাপেক্ষী। আয়াত ও হাদীসে এ ব্যাপারে দলীল আছে। আর প্রত্যেকেই ‘ইবাদাত সম্পাদনে কমতি করে যেমন আল্লাহ তার তাকদীরে লিখেছেন। আল্লাহ বলেন, كَلَّا لَمَّا يَقْضِ مَا أَمَرَه অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ তাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা সে পালন করেনি’’- (সূরা ‘আবাসা ৮০ : ২৩) এর উপর আরো প্রমাণ বহন করছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (فإنى أتوب إليه) এ বাণী। অর্থাৎ- আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়া এবং তাঁর কাছে চাওয়ার জন্য উপযুক্ত বা তাঁর সামনে নিঃস্বতা প্রকাশের জন্য উপযুক্ত এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করি (فى اليوم مائة مرة) অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি দিনে একশতবার ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন তাহলে অন্যদের পক্ষে এক মুহূর্তে হাজারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রয়োজন।
২৩২৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৬
وَعَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِيمَا يَرْوِىْ عَنِ اللّٰهِ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى أَنَّه قَالَ: «يَا عِبَادِىْ إِنِّىْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلٰى نَفْسِىْ وَجَعَلْتُه بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَمُوا يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُه فَاسْتَهْدُونِىْ أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُه فَاسْتَطْعِمُونِىْ أُطْعِمْكُمْ يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ عَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُه فَاسْتَكْسُونِىْ أَكْسُكُمْ يَا عِبَادِىْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِىْ أَغْفِرْ لَكُمْ يَا عِبَادِىْ إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّىْ فَتَضُرُّونِىْ وَلَنْ تَبْلُغُوْا نَفْعِىْ فَتَنْفَعُونِىْ يَا عِبَادِىْ لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَاٰخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوْا أَتْقٰى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذٰلِكَ فِىْ مُلْكِىْ شَيْئًا يَا عِبَادِىْ لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَاٰخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوْا عَلٰى اَفْجَرِ قَلْبِ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ مِنْ مُلْكِىْ شَيْئًا يَا عِبَادِىْ لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَاٰخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِىْ صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِىْ فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَه مَا نَقَصَ ذٰلِكَ مِمَّا عِنْدِىْ إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ يَا عِبَادِىْ إِنَّمَا هِىَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِهَا عَلَيْكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللّٰهَ وَمِنْ وَجَدَ غَيْرَ ذٰلِكَ فَلَا يَلُوْمَنَّ إِلَّا نَفْسَه». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার নাম করে যেসব হাদীস বর্ণনা করেছেন তার একটি হলো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, আল্লাহ তাবারক ওয়াতা‘আলা বলেনঃ হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার ওপর যুলম করাকে হারাম করে দিয়েছি। (যুলম করা আমার জন্য যা, তোমাদের জন্যও তা) তাই আমি তোমাদের জন্যও যুলম করা হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর (পরস্পরের প্রতি) যুলম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট। কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই (সে-ই পথের সন্ধান পায়)। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পথের সন্ধান কামনা কর, তাহলে আমি তোমাদেরকে পথের সন্ধান দেবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত। কিন্তু আমি যাকে খাবার দেই (সে খাবার পায়)। তাই তোমরা আমার কাছে খাবার চাও। আমি তোমাদেরকে খাবার দেবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই উলঙ্গ। কিন্তু আমি যাকে পোশাক পরাই (সে পোশাক পরে)। তাই তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে (পোশাক) পরাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গুনাহ (অপরাধ) করে থাকো। আর আমি তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা ক্ষতিসাধন করার সাধ্য রাখো না যে, আমার ক্ষতি করবে। এভাবে তোমরা আমার কোন উপকার করারও শক্তি রাখো না যে, আমার কোন উপকার করবে। তাই হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ তোমাদের মধ্যে হতে সর্বাপেক্ষা পরহেযগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়ে পরহেযগার হয়ে যায়। তাও আমার সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অত্যাচারী-অনাচারী ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়েও অত্যাচার-অনাচার করে তাদের এ কাজও আমার সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র ক্ষতি বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ একই মাঠে দাঁড়িয়ে একসাথে আমার কাছে প্রার্থনা করে। আর আমি তোমাদের প্রত্যেককে তাদের চাওয়া জিনিস দান করি তাহলে আমার কাছে যা আছে, তার কিছুই কমাতে পারবে না। শুধু এতখানি ছাড়া যতটি একটি সূঁই যখন সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়া হলে যতটুকু সমুদ্রের পানি কমায়। হে আমার বান্দাগণ! এখন বাকী রইল তোমাদের (কৃতকর্মের) ‘আমাল, যা আমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করব। অতঃপর এর প্রতিদান আমি পরিপূর্ণভাবে দেবো। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন ভাল (ফল) লাভ করে, সে যেন আল্লাহর শুকর আদায় করে। আর যে মন্দ (ফল) লাভ করে, সে যেন নিজেকে ছাড়া অন্যকে দোষারোপ না করে (কেননা তা তারই কৃতকর্মের ফল)। (মুসলিম)[১]
(حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلٰى نَفْسِىْ) অর্থাৎ- যুলম বা অবিচার আমার জন্য হারাম করেছি।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ বলেন, (حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلٰى نَفْسِىْ) এর অর্থ হল আমি অন্যায় থেকে পবিত্র। আর আল্লাহর ক্ষেত্রে যুুলম অসম্ভব। আর আল্লাহ কিভাবে সীমালঙ্ঘন করবেন অথচ তার ওপর এমন কেউ নেই যার আনুগত্য তাকে করতে হবে, আর কিভাবে তিনি অন্যের মালিকানাতে হস্তক্ষেপ করবেন অথচ সমগ্র বিশ্ব তার মালিকানাতে। আভিধানিক অর্থে তাহরীমের মূল হল বিরত থাকা। কোন কিছু থেকে বিরত থাকার সাথে হারামের সাদৃশ্য থাকার কারণে অবিচার থেকে আল্লাহর পবিত্র হওয়াকে হারাম বলা হয়েছে।
(فَلَا تَظَالَمُوا) অর্থাৎ- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর অবিচারকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা পরস্পর একে অপরের প্রতি অবিচার করবে- এ থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। সুতরাং প্রত্যেক বান্দার ওপর আবশ্যক একে অন্যের প্রতি অবিচার না করা।
(يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُه) অর্থাৎ- যে ব্যক্তির সুপথের দিশা অর্জন হয়েছে তা কেবল আল্লাহর তরফ থেকে, তার নিজের তরফ থেকে নয়। এমনিভাবে খাদ্য, বস্ত্র যার যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা কেবল আল্লাহর তরফ থেকে নিজের তরফ থেকে নয়। আর এ বিশ্বাস দাবী করছে সকল সৃষ্টি তাদের দ্বীন ও দুনিয়াতে কল্যাণ আনয়ন ও ক্ষতি প্রতিহতকরণে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আর নিশ্চয়ই বান্দাগণ এ সবের কিছুই নিজেরা করার ক্ষমতা রাখে না। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সুপথের দিক নির্দেশনা ও দানের মাধ্যমে যাকে দয়া করেননি দুনিয়াতে সে এ দু’টি জিনিস থেকে মাহরুম হবে।
মাযূরী বলেন, এর বাহ্যিক দিক হল, নিশ্চয়ই তাদেরকে পথভ্রষ্টতার উপরে সৃষ্টি করা হয়েছে তবে আল্লাহ যাকে সুপথের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সে ছাড়া। প্রসিদ্ধ হাদীসে আছে, প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ সন্তান সনাতন ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। তিনি বলেন, অতঃপর প্রথমটি দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের কাছে পাঠানোর পূর্বে তারা যে অবস্থার উপর ছিল সে ব্যাপারে তাদের বর্ণনা দেয়া অথবা যদি তাদেরকে ও তাদের স্বভাবে যে প্রবৃত্তি, আরাম ও অবকাশগত ঢিলেমি আছে তা ছেড়ে দেয়া হয় অবশ্যই তারা পথভ্রষ্ট হবে আর এ দ্বিতীয়টিই হল সর্বাধিক স্পষ্ট। মানাবী বলেন, كلكم ضال অর্থাৎ- তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট, অর্থাৎ- রসূলদেরকে প্রেরণ করার পূর্বে তোমাদের প্রত্যেকেই শারী‘আত সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে, তবে আল্লাহ যাকে ঈমান আনার তাওফীক দিয়েছেন সে হিদায়াত পেয়েছে।
কারী বলেন, এটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (كل مولود يولد على الفطرة) অর্থাৎ- ‘‘প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ সন্তান সনাতন ধর্মের উপর জন্ম গ্রহণ করে’’ এ উক্তির পরিপন্থী না। কেননা الفطرة দ্বারা তাওহীদ উদ্দেশ্য। আর الضلالة দ্বারা ঈমানের বিধিবিধান ও ইসলামের দণ্ডবিধির বিশ্লেষণ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা উদ্দেশ্য। আর এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী, وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدٰى অর্থাৎ- ‘‘আর তিনি আপনাকে পথহারা পেয়েছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।’’ (সূরা আয্ যুহা- ৯৩ : ৭)
ইবনু রজব বলেন, কতক মনে করেন নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (كلكم ضال إلا من هديته) এ বাণী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘ইয়ায-এর (আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি আমার বান্দাদেরকে তাওহীদবাদী করে সৃষ্টি করেছি’’) এ হাদীসের পরিপন্থী এবং অন্য বর্ণনাতে (মুসলিমদের থেকে শয়তান পৃথক হয়ে গেছে) এ বাণীর পরিপন্থী। অথচ এরূপ নয়। কেননা আল্লাহ আদম সন্তানদের সৃষ্টি করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের উপযোগী করেছেন এবং তার দিকে তাদেরকে ঝুকিয়ে দিয়েছেন এবং ক্ষমতা দ্বারা তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন কিন্তু বান্দার জন্য আবশ্যক কর্মের মাধ্যমে ইসলামকে শিখে নেয়া, কেননা বান্দা শিক্ষা গ্রহণের পূর্বে মূর্খ থাকে তখন সে কিছু জানে না। যেমন আল্লাহ বলেন, وَاللهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُوْنِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতার পেট থেকে বের করেছেন এমতাবস্থায় তোমরা কিছু জানতে না’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৭৮)। আর তার নাবীকে বলেন, وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدٰى অর্থাৎ- ‘‘আর তিনি আপনাকে পথহারা পেয়েছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।’’ (সূরা আয্ যুহা- ৯৩ : ৭)
অত্র আয়াতে وَوَجَدَكَ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কিতাব এবং কৌশলের যা কিছু আল্লাহ নাবীকে শিক্ষা দিয়েছেন তার পূর্বে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতেন না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘আর এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আমার তরফ থেকে রূহ তথা কুরআন প্রত্যাদেশ করেছি ইতিপূর্বে আপনি জানতে না কিতাব কি ও ঈমান কি কিন্তু আমি একে করেছি জ্যোতিস্বরূপ, আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা এর মাধ্যমে আমি তাকে পথপ্রদর্শন করি।’’ (সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ৫২)
(يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُه) অর্থাৎ- ‘‘হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের সকলেই ক্ষুধার্ত তবে আমি যাকে খাইয়েছি সে ছাড়া।’’ ‘আলকামাহ্ বলেন, এটা এ কারণে যে, মানুষ কোন কিছুর মালিক নয় আর রিযক্বের ভাণ্ডার আল্লাহর হাতে। সুতরাং আল্লাহ অনুগ্রহপূর্বক যাকে খাওয়াবেন না আল্লাহর ন্যায়-ইনসাফ হিসেবে সে ক্ষুধার্ত থাকবে। কেননা কাউকে খাওয়ানো তার ওপর আবশ্যক না। এখন কেউ যদি বলেন কি করে এটা হতে পারে অথচ আল্লাহ বলেছেন, وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا অর্থাৎ- ‘‘পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সকল প্রাণীর খাদ্যভার একমাত্র আল্লাহর ওপর’’- (সূরা হূদ ১১ : ৬)। উত্তরে বলা হবে, এটা আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহ। মূলত প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহর ওপর কোন দায়িত্ব আছে এমন না। অতঃপর যদি বলা হয়, খাদ্যদানকে কিভাবে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হল? অথচ আমরা স্বচক্ষে পেশা, কর্ম এবং উপার্জনের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা খাদ্যসমূহ আগমন করতে দেখতে পাই। উত্তরে বলা হবে, তা আল্লাহর ক্ষমতা ও তাঁর গোপন কৌশলের মাধ্যমে প্রকাশ্য উপকরণসমূহের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
কারী বলেন, (إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُه) অর্থাৎ- যাকে আমি খাওয়াব, যার রিযককে আমি প্রশস্ত করে দেব এবং যাকে আমি ধনী করব একমাত্র সেই তো পাবে।
(فَاسْتَطْعِمُونِىْ) অর্থাৎ- তোমরা খাদ্য ও খাদ্যের সহজতা আমার থেকে অনুসন্ধান কর। (أُطْعِمْكُمْ) অর্থাৎ- আমি তোমাদের জন্য খাদ্য অর্জনের উপকরণ সহজ করে দিব।
(أَكْسُكُمْ) অর্থাৎ- আমি তোমাদের জন্য তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা সহজ করে দিব এবং তোমাদের থেকে তোমাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার অপমান দূর করে দিব।
(فَتَنْفَعُونِىْ) ‘‘অতঃপর তোমরা আমার উপকার করবে’’। অর্থাৎ- বান্দাগণ আল্লাহর কোন ধরনের উপকার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না, কেননা আল্লাহ তিনি নিজে ধনী, প্রশংসিত, বান্দার আনুগত্যের প্রয়োজন তাঁর নেই। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যেমে তার কোন উপকার সাধিত হয় না, বরং তারা নিজেরাই একে অপরের মাধ্যমে পরস্পর লাভবান হয়। তাদের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত হন না, তারা নিজেরাই কেবল অবাধ্যতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ- ‘‘আর যারা কুফরীতে তরান্বিত করে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর ক্ষতি সাধন করতে পারবে না’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৭৬)। আর আল্লাহ মূসা (আঃ) সম্পর্কে বর্ণনা দিতে যেয়ে বলেন, মূসা (আঃ) বলেছেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তোমরা এবং সমস্ত জমিনবাসী যদি কুফরী কর তাহলে জেনে রেখ অবশ্যই আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, ধনী’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ৮)।
কারী বলেন, অর্থাৎ- তোমাদের দ্বারা আমার কোন ক্ষতি করা এবং উপকার করা সম্ভব হবে না, কেননা তোমরা সকলে যদি আমার চূড়ান্ত ‘ইবাদাত করার দিকে সংঘবদ্ধ হও তাহলেও আমার রাজত্বে কোন উপকার পৌঁছানো সম্ভব হবে না আর যদি তোমরা আমার কোন চূড়ান্ত অবাধ্যতার উপর একত্রিত হও তাহলেও তোমরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বরং ‘‘যদি ভাল ‘আমাল কর তাহলে তোমাদের নিজেদের উপকারার্থেই তা করলে আর যদি মন্দ ‘আমাল কর তাহলে তোমাদের নিজেদের অকল্যাণের জন্যই তা করলে’’- (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৭)। আর এটি হল আল্লাহর (لو أن أولكم وأخركم-থ حديث قدسى) এ বাণীর মর্ম।
(كَانُوْا عَلٰى اَفْجَرِ قَلْبِ وَاحِدٍ مِنْكُمْ) অর্থাৎ- তোমরা যদি তোমাদের মধ্য থেকে সর্বাধিক ভীতিপূর্ণ ব্যক্তির হৃদয়ের উপর অবস্থান করে চূড়ান্ত আল্লাহ ভীতির অধিকারী হয়ে যাও। কবাযী বলেন, অর্থাৎ- তোমরা যদি কোন ব্যক্তির সর্বাধিক আল্লাহ ভীতি অবস্থার উপর অবস্থান কর, অর্থাৎ- তোমাদের থেকে প্রত্যেকেই এ অবস্থার উপর অবস্থান করে এভাবে মিরকাতে আছে।
(مَا زَادَ ذٰلِكَ فِىْ مُلْكِىْ شَيْئًا) অর্থাৎ- তোমরা আমার উপকার করার জন্য উপকার করার অবস্থানেই পৌঁছাতে পারবে না।
(مَا نَقَصَ مِنْ مُلْكِىْ شَيْئًا) অর্থাৎ- সামান্যতমও কমাতে পারবে না। অত্র হাদীসে شيئا অর্থাৎ- নাকেরা বা অনির্দিষ্ট বিশেষ্য আনা হয়েছে অতি নগণ্য বুঝানোর জন্য। আর এটা বুঝা যাচ্ছে, আগত হাদীসে এর পরিবর্তে (جناح بعوضة) দ্বারা। আর এটি আল্লাহর (لن تبلغوا ضرى فتضرونى) ‘‘তোমরা কখনো আমার ক্ষতিসাধন করার জন্য আমার ক্ষতি সাধন করার স্থানে পৌঁছাতে পারবে না।’’ এ বাণীর দিকে প্রত্যাবর্তন করছে। অর্থাৎ- আল্লাহর রাজত্ব সৃষ্টজীবের আনুগত্যের কারণে বৃদ্ধি পায় না যদিও তাদের প্রত্যেকেই পুণ্যবান হয়ে যায় এবং অবাধ্যদের অবাধ্যতার কারণে রাজ্যে কোন কিছু হ্রাসও পায় না যদিও জিন্ ও মানব প্রত্যেকইে অবাধ্য হয়ে যায়। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ সত্তাগতভাবে অন্যান্যদের থেকে অমুখাপেক্ষী। তাঁর গুণাবলী, তাঁর কর্মে ও তাঁর সত্তাতে রয়েছে সাধারণ পূর্ণাঙ্গতা। সুতরাং তাঁর রাজত্ব পূর্ণাঙ্গ রাজত্ব। তাঁর রাজত্বে কোন দিক দিয়ে কোন কারণে অপূর্ণাঙ্গতা নেই।
(فِىْ صَعِيدٍ وَاحِدٍ) অর্থাৎ- একই জমিনে একই স্থানে। ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, الصعيد শব্দটি মাটি ও ভূ-পৃষ্ঠ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এখানে ভ-ূপৃষ্ঠ উদ্দেশ্য।
(فَسَأَلُونِىْ) অর্থাৎ- তারা প্রত্যেকে আমার কাছে চায়। ইমাম ত্বীবী বলেন, চাওয়াকে একই স্থানে একত্রিত হওয়ার সাথে আওতাভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কেননা যার কাছে একত্রিতভাবে চাওয়া হয় সেই চাওয়া তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয় এবং তা চাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে এবং তার কাছে তাদের লক্ষ্যের সফলতা এবং তাদের দাবী উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যায়।
(فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ) অতঃপর আমি প্রত্যেক মানুষকেই দান করি, এমনিভাবে প্রত্যেক জিনকেও।
(مَا نَقَصَ ذٰلِكَ مِمَّا عِنْدِىْ) ‘‘এতে আমার নিকট যা আছে তার কিছুই কমবে না’’ এর দ্বারা তাঁর ক্ষমতার পূর্ণাঙ্গতা এবং তাঁর রাজত্বের পূর্ণাঙ্গতা উদ্দেশ্য। তাঁর রাজত্ব এবং তাঁর ধনভাণ্ডার শেষ হবে না এবং দানের কারণে তা কমবে না। যদিও পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে, একই স্থানে তারা যা চায় সব কিছু দেয়া হয়।
(إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ) একটি সুঁই যখন সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়া হলে সমুদ্রের পানি যতটুকু কমায়। এখানে এ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট যা কিছু তা কমে না এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা শেষ হয়ে যাবে আর আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা অবশিষ্ট থাকবে’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৯৬)। কেননা সমুদ্রে যখন কোন সুঁই প্রবেশ করানোর পর বের করা হবে তখন এ কারণে সমুদ্রে কিছু কমবে না। ত্বীবী বলেন, সুঁই সমুদ্র থেকে যা কমায় তা যখন অনুভূতিশীল না, জ্ঞানের কাছে তা যখন গণ্য না বরং তা না কমার হুকুমের মাঝে গণ্য তখন তা সৃষ্টিজীবের প্রয়োজনাদি পূর্ণাঙ্গভাবে দান করার সাথে আরো বেশি অনুভূতিশীল ও সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা তাঁর কাছে যা আছে তা কমে না।
নাবাবী বলেন, বিদ্বানগণ বলেছেন, এ উপমা অবলম্বন একটি বিষয় বুঝিয়ে দেয়ার নিকটবর্তী একটি মাধ্যম। এর অর্থ হল, প্রকৃতপক্ষে তা কিছু কমায় না। যেমন অন্য হাদীসে এসেছে, কোন খরচ তাকে কমায় না। কেননা আল্লাহর কাছে যা আছে তাতে অসম্পূর্ণতা প্রবেশ করে না। অসম্পূর্ণতা কেবল প্রবেশ করে ধ্বংসশীল সীমাবদ্ধ জিনিসের মাঝে। আর আল্লাহর দান তাঁর রহমাত ও তাঁর অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। আর এ দু’টি হল সিফাতের কদীম যাতে অসম্পূর্ণতা প্রবেশ করতে পারে না। অতঃপর সমুদ্রে সুঁইয়ের মাধ্যমে উপমা পেশ করা হয়েছে, কেননা স্বল্পতার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে যা বর্ণনা করা হয় তার মাঝে এটি চূড়ান্ত পর্যায়। উদ্দেশ্য হল মানুষ যা স্বচক্ষে দেখে তা উপলব্ধি করার কাছাকাছি করে দেয়া। কেননা সমুদ্র দর্শনীয় জিনিসের মাঝে সর্বাধিক বড়, পক্ষান্তরে সুঁই অস্তিত্বশীল জিনিসের মাঝে সর্বাধিক ছোট। সেই সাথে তা মসৃণ। পানি তার সাথে সম্পৃক্ত হয় না।
(فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে কল্যাণের তাওফীক পাবে এবং নিজের তরফ থেকে কল্যাণের কাজ পাবে। (فليحمد الله) অর্থাৎ- আল্লাহ তাকে কল্যাণকর কাজে তাওফীক দেয়ার কারণে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, কেননা তিনি পথপ্রদর্শক।
(وَمِنْ وَجَدَ غَيْرَ ذٰلِكَ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অকল্যাণকর কিছু পাবে, অকল্যাণ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি তা তুচ্ছ হওয়ার জন্য এবং তার সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে।
(فَلَا يَلُوْمَنَّ إِلَّا نَفْسَه) ‘‘সে যেন নিজেকে ব্যতীত অন্য কাউকে দোষারোপ না করেন’’। কেননা অকল্যাণ তার নিজ থেকে প্রকাশ পেয়েছে অথবা সে তার এ পথভ্রষ্টতার উপর আছে যে দিকে আল্লাহর (كلكم ضال তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট) এ বাণী দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটি কারীর উক্তি। ‘আলক্বমাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই ঐ আনুগত্যসমূহ যার ওপর সাওয়াব দেয়া হয় এবং আল্লাহর তাওফীক্বে ঐ কল্যাণ যার কারণে আল্লাহর প্রশংসা করা আবশ্যক এবং ঐ অবাধ্যতার কাজসমূহ যার ওপর শাস্তি আরোপ করা হয় এবং অকল্যাণ আরোপ করা হয়। যদিও সে অবাধ্যতার বিষয়গুলো আল্লাহর তাকদীর এবং বান্দাকে তার লাঞ্ছিত করার নিমিত্তে হয়ে থাকে তবুও তা বান্দার অর্জন। সুতরাং মন্দ উপার্জনের ক্ষেত্রে তার বাড়াবাড়ির কারণে সে যেন নিজকে তিরস্কার করে।
২৩২৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৭
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «كَانَ فِىْ بَنِىْ إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِنْسَانًا ثُمَّ خَرَجَ يَسْأَلُ فَأَتٰى رَاهِبًا فَسَأَلَه فَقَالَ: أَلَهَ تَوْبَةٌ قَالَ: لَا فَقَتَلَه وَجَعَلَ يَسْأَلُ فَقَالَ لَه رَجُلٌ ائْتِ قَرْيَةَ كَذَا وَكَذَا فَأَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَنَاءَ بِصَدْرِه نَحْوَهَا فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلَائِكَةُ الْعَذَابِ فَأَوْحَى اللّٰهُ إِلٰى هٰذِه أَنْ تَقَرَّبِىْ وَإِلٰى هٰذِه أَنْ تَبَاعَدِىْ فَقَالَ قِيْسُوْا مَا بَيْنَهُمَا فَوُجِدَ إِلٰى هٰذِه أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَه». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুষ হত্যা করেছিল। তারপর সে শার‘ঈ বিধান জানার জন্য একজন আল্লাহভীরুর কাছে জিজ্ঞেস করল, এ ধরনের মানুষের জন্য তাওবার কোন অবকাশ আছে কিনা? তিনি বললেন, নেই। তারপর সে তাকেও (‘আলিমকেও) হত্যা করল। এভাবে সে লোকদেরকে অনবরত জিজ্ঞেস করতে থাকল। এক ব্যক্তি শুনে বলল, অমুক গ্রামে গিয়ে অমুককে জিজ্ঞেস করো। এমন সময়েই সে মৃত্যুমুখে পতিত হলো এবং মৃত্যুর সময় সে ওই গ্রামের দিকে নিজের সিনাকে বাড়িয়ে দিলো। তারপর রহমাতের মালাক (ফেরেশতা) ও ‘আযাবের মালাক পরস্পর ঝগড়া করতে লাগল, কারা তার রূহ নিয়ে যাবে। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা ওই গ্রামকে বললেন, তুমি মৃত ব্যক্তির কাছে আসো। আর নিজ গ্রামকে বললেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর আল্লাহ মালায়িকাহকে (ফেরেশতাদের) বললেন, তোমরা উভয় দিকের পথের দূরত্ব পরিমাপ করে দেখো। মাপের পর মৃতকে এ গ্রামের দিকে এক বিঘত নিকটে পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (বুখারী, মুসলিম)[১]
(قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِنْسَانًا) আবূ মু‘আবিয়াহ্ বিন আবূ সুফ্ইয়ান-এর হাদীসে ত্ববারানী একটু বেশি উল্লেখ করেছেন আর তা হল হাদীসে হত্যাকারী নিহতদের প্রত্যেককে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিলেন।
(ثُمَّ خَرَجَ يَسْأَلُ) ‘‘অতঃপর সে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকলো’’। অর্থাৎ- তাওবাহ্ ও ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ আছে কিনা। আর মুসলিমে কাতাদাহ্ থেকে হিশাম-এর এক বর্ণনাতে আছে, লোকটি পৃথিবীবাসীদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর তাকে এক পাদ্রী সম্পর্কে বলে দেয়া হল।
(فَأَتٰى رَاهِبًا) বলতে আল্লাহ ভীতিসম্পন্ন, ‘ইবাদাতকারী ও সৃষ্টি থেকে যিনি আলাদা থাকেন, খিষ্টানদের ধর্মযাজক। আর হাদীসে ইঙ্গিত আছে, উল্লেখিত ঘটনাটি ঈসা (আঃ)-কে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়ার পর ঘটেছিল। কেননা সন্ন্যাসী পন্থার আবিষ্কার তার পরে হয়েছিল যেমন কুরআনে এ ব্যাপারে ভাষ্য এসেছে।
(فَسَأَلَه فَقَالَ: أَلَهَ تَوْبَةٌ) অর্থাৎ- এ ধরনের অপরাধের পর এ ধরনের কর্মের জন্য কি কোন তাওবাহ্ আছে? (أَلَهَ تَوْبَةٌ) কারী বলেন, মিশকাতের এক কপিতে আছে (ألى توبة) ‘‘আমরা কি তাওবাহ্ করার কোন সুযোগ আছে’’। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, বূলাক-এর (জায়গা) ১২৯৪ সনের ছাপা অনুযায়ী আমাদের কাছে বিদ্যমান মাসাবীহের এক কপিতে আছে (فقال له هل لى توبة) অর্থাৎ- অতঃপর লোকটি পাদ্রীকে বলল, আমার কি কোন তাওবার সুযোগ আছে? ‘আয়নী এবং কুসতুলানী-এর মূলকপিতে আছে, (ففال له هل من توبة) ‘আয়নী বলেন, অতঃপর লোকটি পাদ্রীকে বলল, আমার কি তাওবাহ্ করার কোন সুযোগ আছে? মুসলিমের এক বর্ণনাতে আছে, নিশ্চয়ই লোকটি নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে, এখন তার কি কোন তাওবাহ্ করার সুযোগ আছে?
(قالا) অর্থাৎ- নিরানব্বই জন ব্যক্তি হত্যা করার পর তার বা তোমার তাওবাহ্ করার কোন সুযোগ নেই। পাদ্রীর মনে লোকটির ব্যাপারে ব্যাপক ভয়ের কারণে এবং এত অধিক পরিমাণ লোককে অন্যায়ভাবে হত্যা করার পর তার তাওবাহ্ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে তা অসম্ভবপর ব্যাপার মনে করে লোকটিকে তিনি এমন ফাতাওয়া দিয়েছিলেন। (فقتله) অর্থাৎ- পাদ্রীকে হত্যা করে একশত হত্যা পূর্ণ করল। কারী বলেন, সম্ভবত লোকটি তার এ ধারণার কারণে এমন কাজ করেছিল যে, তার তাওবাহ্ কবূল করা হবে না যদিও তার কাছে প্রাপ্যদাবীদাররা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।
এক মতে বলা হয়েছে, পাদ্রীর ফাতাওয়া লোকটির নিকট এ ভাব প্রকাশ করেছে যে, তার কোন মুক্তি নেই। সুতরাং সে রহমাত থেকে নিরাশ হয়ে গেল, অতঃপর আল্লাহ তাকে অনুভূতি শক্তি দিলে সে কৃতকর্মের উপর লজ্জিত হয়ে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল।
(وَجَعَلَ يَسْأَلُ) অতঃপর লোকটি যার কাছে যেয়ে তার তাওবাহ্ কবূল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, এমন লোকের অন্বেষণে জিজ্ঞেস করতে থাকলো। অবশেষে লোকটি এক ‘আলিম ব্যক্তিকে বলল, ‘‘নিশ্চয়ই আমি একশত লোককে হত্যা করেছি এখন আমার কি কোন তাওবাহ্ আছে?’’ এ কথা বলার পর ‘আলিম ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ, আপনার ও আপনার তাওবার মাঝে কে বাধা দিবে? হিশাম-এর বর্ণনাতে আছে, অতঃপর লোকটি পৃথিবীর সর্বাধিক জ্ঞানী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তাকে এক বিদ্বান ব্যক্তি সম্পর্কে বলে দেয়া হল, অতঃপর লোকটি বিদ্বান ব্যক্তির কাছে বলল, নিশ্চয়ই সে একশত জন লোককে হত্যা করেছে, এখন কি তার কোন তাওবার সুযোগ আছে? উত্তরে ‘আলিম ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ, তার মাঝে ও তাওবার মাঝে কোন জিনিস বাধা দিবে?
(ائْتِ قَرْيَةَ كَذَا) অর্থাৎ- তুমি এমন গ্রামে যাও যার অধিবাসীগণ সৎ এবং আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে ও তাদের সাথে ‘ইবাদাত কর অতঃপর লোকটি ঐ গ্রামের দিকে যেতে থাকলো। হিশাম-এর বর্ণনাতে আছে, লোকটি এ রকম গ্রামের দিকে চলল, অর্থাৎ- ‘‘যে গ্রামের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছিল’’। কেননা সে গ্রামে কিছু মানুষ আছে তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করে। সুতরাং তাদের সাথে আল্লাহর ‘ইবাদাত কর এবং তোমার গ্রামের দিকে প্রত্যাবর্তন করিও না, কেননা তা মন্দ গ্রাম। অতঃপর সে চলতে থাকলো এমনকি যখন সে অর্ধপথ অতিক্রম করল তখন তাকে মৃত্যু গ্রাস করল। আর এ গ্রামের নাম ছিল নুসরা, পক্ষান্তরে যে গ্রামের দিক থেকে এসেছিল সে তার নাম কুফরাহ্। যেমন ত্ববরানীতে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর হাদীস জাইয়িদ সানাদে আছে। নাবাবী বলেন, তার উক্তি (انطلق إلى أرض كذا الخ) অর্থাৎ- সে এ ধরনের গ্রামের দিকে চলল শেষ পর্যন্ত। এতে আছে তাওবাহকারীর ঐ সমস্ত স্থান থেকে আলাদা থাকা মুস্তাহাব যাতে গুনাহ সংঘটিত হয়েছে এবং ঐ বন্ধু থেকে আলাদা থাকা যারা এ ব্যাপারে সহযোগিতা যোগায় এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যতক্ষণ তারা এ অবস্থার উপর থাকে। আর তাদের পরিবর্তে ভালো, সৎ, বিদ্বান, আল্লাহভীরু ‘ইবাদাতকারীদের বন্ধুত্ব গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে তার তাওবাতে গুরুত্ব দেয়া।
(فَأَدْرَكَهُ الْمَوْتُ) অর্থাৎ- অতঃপর মরণের আলামাত বা মরণ যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করল, অর্থাৎ- লোকটি ঐ গ্রামের দিকে যেতে ইচ্ছা করে তার মাঝপথে পৌঁছল তখন মরণ তাকে পেয়ে গেল।
(فَنَاءَ بِصَدْرِه) অর্থাৎ- অতঃপর সে তার বক্ষকে ঐ গ্রামের দিকে হেলিয়ে দিল তাওবার জন্য যে গ্রামের দিকে যাচ্ছিল।
(فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلَائِكَةُ الْعَذَابِ) হিশাম-এর বর্ণনাতে একটু বেশি এসেছে, তাতে আছে, অতঃপর রহমাতের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) বলল, লোকটি তাওবাহ্ করার উদ্দেশে তার অন্তরকে আল্লাহমুখী করে এসেছে। পক্ষান্তরে ‘আযাবের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলল, নিশ্চয়ই সে কোন ভালো ‘আমাল করেনি। অতঃপর তাদের কাছে মানুষের আকৃতিতে একজন মালাক (ফেরেশতা) এলো, অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তাকে তাদের মাঝে স্থাপন করল, অতঃপর মানুষরূপী মালাক দলকে বলল, তোমরা দু’ জমির মাঝে মেপে দেখ মৃত লোকটি যে জমির অধিক নিকটবর্তী হবে তাকে ঐ জমির লোক হিসেবেই গণ্য করা হবে। নাবাবী বলেন, দুই গ্রামের মাঝে মালায়িকাহর (ফেরেশতার) মাপা এবং মালাক দল যাকে তাদের মাঝে ফায়সালাকারী নিয়োগ করেছিল তার ফায়সালা ঐ ব্যাপারে সম্ভাবনা রাখছে যে, মালাক দলের কাছে মৃত লোকটির অবস্থা সংশয়পূর্ণ ছিল এবং তার ব্যাপারে মতানৈক্য হওয়ার সময় আল্লাহ মালাক দলকে নির্দেশ করেছিল তাদের পাশ দিয়ে যারা অতিক্রম করবে তাদের একজনকে বিচারক নিয়োগ করতে। অতঃপর একজন মালাক মানুষের আকৃতিতে অতিক্রম করলে মালাক দল তাকে ঐ ফায়সালার ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়।
(فَوُجِدَ إِلٰى هٰذِه) অর্থাৎ- ঐ গ্রামের দিকে যে দিকে লোকটি যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল আর তার নাম হল নুসরাহ্।
(وَإِلٰى هٰذِه) অর্থাৎ- ঐ গ্রামের দিকে তাওবার উদ্দেশে যে গ্রাম থেকে বের হয়েছিল আর তার নাম কুফ্রাহ্ এবং বুখারীতে (وأوحى) এসেছে।
(أَنْ تَبَاعَدِىْ) অর্থাৎ- মৃত ব্যক্তি থেকে দূর হও।
(فَوُجِدَ إِلٰى هٰذِه أَقْرَبَ) হিশাম-এর বর্ণনাতে আছে, অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) মেপে মৃত লোকটিকে ঐ জমির অধিক নিকটবর্তী পেল যে জমির দিকে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল।
২৩২৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৮
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِه لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ اللّٰهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ اللّٰهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। (মুসলিম)[১]
(فَيَغْفِرُ لَهُمْ) অর্থাৎ- غفار এবং غفور সিফাতের কারণে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা অত্যন্ত ক্ষমাশীল’’- (সূরা নূহ ৭১ : ১০)। উপাস্যগত বৈশিষ্ট্যের আবশ্যকতার কারণে মানব জাতির মাঝে অবাধ্যতার উপস্থিতি। অর্থাৎ- তোমরাও যদি মালায়িকাহর (ফেরেশতাদের) মতো গুনাহমুক্ত থাকতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের এ পৃথিবী থেকে নিয়ে চলে যেতেন এবং এমন জাতি নিয়ে আসতেন যাদের থেকে গুনাহ সংঘটিত হত যাতে الغفران এবং العفو গুণের অর্থ নষ্ট না হয়। সুতরাং এ হাদীসে গুনাহে ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়নি।
তুরবিশতী বলেনঃ এ হাদীস থেকে উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই আল্লাহ যেমন দয়াকারীর প্রতি দয়া করতে ভালবাসেন তেমনি পাপীর পাপ এড়িয়ে চলাও পছন্দ করেন। আর এর উপর প্রমাণ বহন করে আল্লাহর একাধিক নাম, গাফফার, তাওয়াব, হালীম এবং ‘আফুব্যু। সুতরাং আল্লাহ এমন নন যে, বান্দাদেরকে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে মালায়িকাহর (ফেরেশতার) মতো তাদেরকে একই গুণের উপর সৃষ্টি করবেন। বরং তাদের মাঝে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে তার স্বভাব অনুযায়ী প্রবৃত্তির দিকে ঝুকবে ফিতনাহগ্রস্ত হবে এবং প্রবৃত্তির প্রতি সংশয়পূর্ণ হবে। অতঃপর তাকে তা থেকে বেঁচে থাকতে তাকে দায়িত্ব দিবেন, অপরাধী হওয়া থেকে তাকে সতর্ক করবে। পরীক্ষায় পতিত করার পর তাকে তাওবার সাথে পরিচিত করবো। সুতরাং বান্দা যদি আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে তাহলে তার পুণ্য আল্লাহর কাছে থাকবে। পক্ষান্তরে পথ ভুল করলে তার সামনে তাওবাহ্ করার সুযোগ থাকবে।
সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’কে যে বৈশিষ্ট্যের উপর তৈরি করেছেন তোমাদেরকে যদি সে বৈশিষ্ট্যের উপর তৈরি করা হত, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ এমন জাতি নিয়ে আসতেন যাদের দ্বারা গুনাহ সম্পাদিত হত। অতঃপর আল্লাহ কৌশলের চাহিদা মোতাবেক তাদের কাছে ঐ সমস্ত গুণাবলী নিয়ে প্রকাশ পেতেন, কেননা তিনি গাফফার যার বৈশিষ্ট্য ক্ষমা করা, যেমনি তিনি রাজ্জাক যার বৈশিষ্ট্য দান করা।
২৩২৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩২৯
وَعَنْ أَبِىْ مُوسٰى قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ اللّٰهَ يَبْسُطُ يَدَه بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىْءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَه بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىْءُ اللَّيْلِ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা রাতে নিজের হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে দিনের বেলায় গুনাহকারীর তাওবাহ্ করতে পারেন। আবার দিনের বেলায় তিনি তার হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে রাতের বেলায় গুনাহকারীর তাওবাহ্ করতে পারেন। এভাবে তিনি হাত প্রসারিত করতে থাকবেন যতদিন না সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে। (মুসলিম)[১]
(لِيَتُوبَ مُسِىْءُ النَّهَارِ) অর্থাৎ- তাদের শাস্তির ব্যাপারে তিনি তাড়াতাড়ি করেন না বরং তাদেরকে তিনি ঢিল দেন যাতে তারা তাওবাহ্ করে।
(وَيَبْسُطُ يَدَه بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىْءُ اللَّيْلِ) নাবাবী বলেন, এর অর্থ হল, তিনি পাপীদের থেকে দিনে রাত্রে তাওবাহ্ গ্রহণ করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্য না উদিত হবে। আর তিনি তার তাওবাহ্ গ্রহণ কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করেননি। সুতরাং তাওবাহ্ গ্রহণের ক্ষেত্রে হাত বিস্তৃতকরণ রূপকার্থবোধক। মাযুরী বলেন, হাত বিস্তৃতকরণ দ্বারা তাওবাহ্ গ্রহণ উদ্দেশ্য। হাদীসে কেবল হাত বিস্তৃতকরণ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, কেননা ‘আরবরা যখন কোন জিনিসের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তখন সে তার হাতকে তা গ্রহণের জন্য বিস্তৃত করে এবং যখন কোন জিনিসকে অপছন্দ করে তখন তার হাতকে সে জিনিস থেকে গুটিয়ে নেয়। অতএব তাদেরকে ইন্দ্রিয়ানুভূত বিষয় দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে যা তারা বুঝে আর তা রূপকার্থবোধক, কেননা আল্লাহর ক্ষেত্রে দোষণীয় হাত সাব্যস্ত করা অসম্ভব, আল্লাহর হাত আল্লাহর মতো।
(حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا) অর্থাৎ- ‘‘তখন তাওবার দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে’’। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যেদিন আপনার পালনকর্তার কিছু নিদর্শন আগমন করবে তখন কোন আত্মার ঈমান আনয়ন তার কোন কাজে আসবে না’’- (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৮৫)।
ইবনুল মালিক বলেন, এ হাদীসের অর্থ এবং এর মতো অন্যান্য হাদীস ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে নিয়ে কিয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না।
২৩৩০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩০
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ الْعَبَدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ الله عَلَيْهِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন গুনাহ করার পর তা স্বীকার করে (অনুতপ্ত হয়) আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী, মুসলিম)[১]
(ثُمَّ تَابَ) অর্থাৎ- তার গুনাহ হতে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করবে।
কারী বলেন, বান্দা যখন তাওবার সকল রুকন বাস্তবায়ন করবে।
(تَابَ الله عَلَيْهِ) অর্থাৎ- আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করবেন। আর তা মূলত ‘‘তিনিই তার বান্দাদের থেকে তাওবাহ্ কবূল করেন’’- (সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ২৫) আল্লাহর এ বাণীর কারণে। ত্বীবী বলেন, এর হাক্বীকত হল নিশ্চয়ই আল্লাহ তার দয়া সহকারে তার বান্দার কাছে ফিরবেন।
হাদীসটি অপবাদজনিত দীর্ঘ একটি হাদীসের অংশ যার পূর্বের অংশ হল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! তোমার সম্পর্কে আমার কাছে এ রকম এ রকম কথা পৌঁছেছে, অর্থাৎ- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে যে ব্যাপারে অপবাদ দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত। সুতরাং তুমি যদি নির্দোষী হও তাহলে অচিরেই আল্লাহ তোমাকে অপবাদ থেকে মুক্ত করবেন আর যদি তুমি গুনাহে জড়িত হয়ে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ কর এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, কেননা বান্দা যখন তার গুনাহ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি দেয় ... হাদীসের শেষ পর্যন্ত।
২৩৩১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩১
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ الله عَلَيْهِ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয়ের (কিয়ামাতের) আগে তাওবাহ্ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবূল করবেন। (মুসলিম)[১]
(تَابَ الله عَلَيْهِ) অর্থাৎ- আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করেছেন, তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া তাওবাহ্ গ্রহণের সীমা।
বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে, নিশ্চয়ই তাওবাহ্ গ্রহণের একটি খোলা দরজা আছে, সর্বদা তাওবাহ্ গ্রহণ হতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত দরজা বন্ধ না করা হবে। অতঃপর যখন পশ্চিম দিক হতে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং যে ব্যক্তি ইতোপূর্বে তাওবাহ্ করেনি তার তাওবাহ্ গ্রহণ বাধাপ্রাপ্ত হবে। আর এটি হল আল্লাহর [অর্থাৎ- ‘‘যেদিন আপনার পালনকর্তার কিছু নির্দশন আগমন করবে তখন কোন আত্মার ঈমান আনয়ন তার কোন কাজে আসবে না। যদি ইতোপূর্বে সে ঈমান এনে না থাকে অথবা তার ঈমানের সমর্থনে কোন কল্যাণ উপার্জন করে না থাকে’’- (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৫৮)] এ বাণীর মর্মার্থ।
তাওবার দ্বিতীয় একটি সীমা আছে, আর তা হল মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তি তার গলাতে মৃত্যুর গড়গড়া আসার পূর্বে তাওবাহ্ করা। যেমন বিশুদ্ধ হাদীসে এরূপ এসেছে। গড়গড়া হল আত্মা ছিনিয়ে নেয়ার মুহূর্ত। সুতরাং ঐ মুহূর্তে তাওবাহ্ বা কোন কিছু গ্রহণ করা হবে না। কেননা এগুলো বিবেচনার বিষয় অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার ক্ষেত্রে। আর এমন মুহূর্তে তার কৃত কোন ওয়াসিয়্যাত এবং অন্য কোন কিছু বাস্তবায়ন করা হবে না।
২৩৩২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩২
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَلّٰهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِه حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كانَ رَاحِلَتُه بِأَرْضٍ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُه وَشَرَابُه فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتٰى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِىْ ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِه فَبَيْنَمَا هُوَ كَذٰلِكََ إِذ هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَه فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اَللّٰهُمَّ أَنْتَ عَبْدِىْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার তাওবাহ্ করায় অত্যন্ত আনন্দিত হন যখন সে তাঁর কাছে তাওবাহ্ করে। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তির খুশীর চেয়ে অধিক খুশী হন, যে ব্যক্তির আরোহণের বাহন মরুভূমিতে তার কাছ থেকে ছুটে পালায়, আর এ বাহনের উপর আছে তার খাবার ও পানীয়। এ কারণে সে হতাশ-নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আরোহণের বাহন সম্পর্কে একেবারেই নিরাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এসে সে এর ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এমন সময় সে হঠাৎ দেখে, বাহন তার কাছে এসে দাঁড়ানো। সে বাহনের লাগাম ধরে আর আনন্দে আবেগআপ্লুত হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু। সে আনন্দের আতিশয্যে এ ভুল করে। (মুসলিম)[১]
(حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ) অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের কারো আনন্দ ও সন্তুষ্টি অপেক্ষা’’। একমতে বলা হয়েছে, আদম সন্তানের গুণসমূহের ক্ষেত্রে পরিচিত আনন্দ, আল্লাহর ওপর প্রয়োগ বৈধ নয়। কেননা তা এমন আনন্দ যা বিজয় লাভের সময় কোন ব্যক্তি নিজ অন্তরে অনুভব করে থাকে, যার মাধ্যমে ব্যক্তির ঘাটতি পূর্ণতা লাভ করে, অথবা এর মাধ্যমে ব্যক্তি তার ত্রুটিকে বাধা দেয় অথবা এর মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজ থেকে ক্ষতি অথবা ঘাটতিকে প্রতিহত করে। আর এটা আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নয়, কেননা তিনি সত্তাগতভাবে পরিপূর্ণ, অস্তিত্বের দিক দিয়ে অমুখাপেক্ষী, যার সাথে কোন ঘাটতি বা অসম্পূর্ণতা শামিল হয় না। অতএব এর অর্থ কেবল সন্তুষ্টি। সালাফগণ এ থেকে এবং এ ধরনের অন্যান্য বাণী থেকে ‘আমালসমূহের ক্ষেত্রে উৎসাহিতকরণ এবং আল্লাহর কৃপা সম্পর্কে খবর প্রদান উদ্দেশ্য করেছেন। তারা আল্লাহর জন্য এ সকল গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন এবং আল্লাহ তার সৃষ্টজীবের গুণাবলী থেকে পবিত্র তাদের বিশ্বাস থাকার কারণে এ সমস্ত গুণাবলীর ব্যাখ্যা নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত হননি।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা‘বীল বা অপব্যাখ্যা নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে তার দু’টি পন্থা আছে। দু’টির একটি হল, নিশ্চয়ই তাশবীহ বা সাদৃশ্য যৌগিকের এককের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তা জ্ঞানগত যৌগিক। বরং সামষ্টিকভাবে সারাংশ গ্রহণ করা হবে আর তা চূড়ান্ত সন্তুষ্টি। তাশবীহ-এর দৃষ্টিতে এর প্রকাশ কেবল শ্রোতার অন্তরে সন্তুষ্টির অর্থ স্থির করা ও পরিকল্পনা করা। আর দু’টি পথের দ্বিতীয়টি হল, উপমা পেশকরণ আর তা হল মুশাব্বাহের জন্য এমন অবস্থাসমূহ পরিকল্পনা করা যে অবস্থাগুলো মুশাব্বাহবিহীর আছে আর সে অবস্থাগুলো থেকে মুশাব্বাহের জন্য উপস্থাপন করা, যা সময়ে সময়ে তার সাথে অনুকূল। আর তা এমনভাবে যে, সেগুলো থেকে কোন বিশৃঙ্খলা হয় না, অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তা উপমা পেশকরণ অধ্যায়ের আওতাভুক্ত। আর তা হল অর্জিত অবস্থাকে সন্তুষ্টি সম্পাদনের সাথে সাদৃশ্য দেয়। হাদীসে উল্লেখিত ধরনে যারা সফলতায় রয়েছে তাদের অবস্থার সাথে তাওবাহকারী বান্দার প্রতি অগ্রগামী হওয়াকে সাদৃশ্য দেয়া। অতঃপর মুশাব্বাহকে ছেড়ে মুশাব্বাহবিহীকে উল্লেখ করা।
কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এটা এমন এক উদাহরণ যার মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক তার তাওবাহকারী বান্দার তাওবাহ্ দ্রুত গ্রহণের বর্ণনাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই তিনি বান্দার প্রতি ক্ষমা নিয়ে আগমন করেন এবং যার ‘আমালের প্রতি সন্তুষ্টি হন তার সাথে যথার্থ লেনদেন করেন। এ উপমার করণ হল নিশ্চয়ই শয়তানের কব্জাতে এবং বন্দিদশাতে পড়ে অবাধ্যতার দরুন এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কখনো ধ্বংসের মুখোমুখী হয়। অতঃপর আল্লাহ যখন তার প্রতি দয়া করেন এবং তাকে তাওবাহ্ করার তাওফীক দেন তখন সে ঐ অবাধ্যতার অকল্যাণ থেকে বেরিয়ে আসে, শয়তানের বন্দিদশা এবং ঐ ধ্বংস থেকে মুক্তি পায় যার উপক্রম সে হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তার করুণা ও ক্ষমা নিয়ে বান্দার দিকে অগ্রগামী হয়। পক্ষান্তরে ঐ আনন্দ যা সৃষ্টিজীবের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত তা আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব। কিন্তু এ আনন্দ শেষ ফলাফলের মুহূর্তে আর তা হল যার প্রতি আনন্দ প্রকাশ করা হয়েছে তার অভিমুখী হওয়া এবং তার জন্য সুউচ্চ স্থান অনুমোদন করা। আর এটি আল্লাহর ক্ষেত্রে সঠিক। সুতরাং ফারহ বা আনন্দ বলে আনন্দের শেষ ফলাফলকে বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি সম্পর্কে ফারহ তথা আনন্দের প্রয়োগ রূপকার্থে। কখনো কখনো বস্ত্ত সম্পর্কে তার কারণ দ্বারা বিশ্লেষণ করতে হয় অথবা তার থেকে অর্জিত অবস্থা সম্পর্কে। কেননা যে কোন কিছুর প্রতি আনন্দিত হয় তিনি তার কর্তাকে চাওয়া অনুযায়ী দান করেন সে যা অনুসন্ধান করে তা তার জন্য ব্যয় করে। সুতরাং ফারহ বা আনন্দ দ্বারা আল্লাহর দান এবং তার করুণার প্রশস্ততা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ এর উদ্দেশ্য পূর্ণ সন্তুষ্টি। কেননা পরিচিত ফারহ বা আনন্দ আল্লাহর উপর প্রয়োগ করা বৈধ নয়। পূর্ববর্তী আহলে হাদীসগণ এ ধরনের উদাহরণ থেকে সৎকর্মসমূহে উৎসাহ প্রদান এবং সৃষ্টির গুণাবলী থেকে পবিত্র হওয়ার সাথে সাথে বান্দার উপর আল্লাহর অনুগ্রহের উন্মোচন বুঝাতেন এবং তারা এ শব্দসমূহের অর্থ ও এ নিরাপদ পথ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায়নি। এর থেকে পণ্ডিতের পা পিছলে যাবে এটা খুব কম। তুরবিশতী বলেন, অতঃপর এ উক্তি এবং এর মত আরো উক্তি যা আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ জানেন, নিশ্চয়ই এটি এ স্থান ছাড়া যা গত হয়েছে তাতে আদম সন্তানের গুণাবলী সম্পর্কে মানুষ পরস্পর যা জানে তার অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অদৃশ্যময় উদ্দেশ্য বর্ণনার ইচ্ছা করেন তখন ঐ ব্যাপারে ঐ বিষয়ের জন্য কোন অর্থবোধক শব্দ তার অনুগত না হলে তখন সে ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুযোগ রয়েছে এমন এক শব্দ নিয়ে আসার যা উদ্দেশিত অর্থ অপেক্ষা নিম্ন স্তরের। নিশ্চয়ই আদম সন্তান থেকে তাওবাহ্ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম স্থানে সংঘটিত হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ বিষয়ে বর্ণনা করার ইচ্ছা করলেন তখন সে সম্পর্কে الفرح (আনন্দ) শব্দ দিয়ে প্রকাশ করেছেন যা তারা তাদের নিজেদের মাঝে অর্থের দিক নির্দেশনা পায়। আর ওটা মূলত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জানিয়ে দেয়ার পর যে, ঐ সমস্ত শব্দের প্রয়োগ আল্লাহর গুণাবলীর ক্ষেত্রে জায়িয নয়। আর ঐ সমস্ত শব্দ বলতে তারা তাদের নিজেদের গুণাবলীর ক্ষেত্রে পারস্পরিক যা জেনে থাকে। আর কারো পক্ষে তার কথাবার্তায় এ ধরনের শব্দ গ্রহণ ও সুযোগ গ্রহণ করা একমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কারো পক্ষে তা হবে না। কেননা তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সামনে বাড়তেন না। আর এটা এমন মর্যাদা যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যের জন্য প্রযোজ্য নয়।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলব, প্রত্যেক ঐ সমস্ত গুণ যে ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ বা তার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা দিয়েছেন তা প্রকৃত গুণ রূপক না। আল্লাহ তিনি শুনেন, দেখেন, তিনি যা চান সে ব্যাপারে কথা বলেন এবং যখন চান কথা বলেন, সন্তুষ্ট হন, রাগান্বিত হন, আশ্চর্যান্বিত হন, তার বান্দার তাওবায় আনন্দিত হন। এসব কিছুরই অর্থ জানা তবে তার ধরন অজানা। সুতরাং আমরা এ সমস্ত কিছু তার জন্য সাব্যস্ত করব, তার ধরন বর্ণনা করব না, সৃষ্টজীবের গুণাবলীর সাথে তাঁকে সাদৃশ্য দিব না, তাঁর অপব্যাখ্যা করব না এবং তাঁর অর্থের ত্রুটি করব না।
(كانَ رَاحِلَتُه) কারী বলেন, মিশকাতের অন্য এক কপিতে আছে, (كانت راحلته) ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন : আমি বলব, সহীহ মুসলিমে যা আছে তা হল, (كان راحلته) মুনযীর এবং জাযারী এভাবে নকল করেছেন রাহিলাহ্ বলতে ঐ উট যার উপর মানুষ আরোহণ করে ও সামগ্রী বহন করে।
(طَعَامُه وَشَرَابُه) অর্থাৎ- বাহন চলে যাওয়ার কারণে চূড়ান্ত বিপদের দিকে চিন্তা হবে এবং পাথেয়, পানি না থাকার কারণে নিজের ধ্বংসের আশংকা।
(ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اَللّٰهُمَّ أَنْتَ عَبْدِىْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ) অর্থাৎ- আল্লাহ তার বাহন তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে তার প্রতি যে দয়া করেছেন সে কারণে প্রশংসা করার ইচ্ছা করল এবং বলতে ইচ্ছা করল, হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু আমি তোমার বান্দা। অর্থাৎ- সঠিক পদ্ধতি থেকে তার জবান বিচ্যুত হল, ভুল করে বসল এবং ব্যাপক আনন্দের কারণে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার প্রভু। অতঃপর নিশ্চয়ই এ লোকটির আনন্দ চূড়ান্ত পর্যায়ের এমনিভাবে বান্দার তাওবাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। ‘ইয়ায বলেন, এ রকম অবস্থাতে হতভম্ব হয়ে মানুষ যা বলে তার কারণে তাকে পাকড়াও করা হবে না। এর প্রমাণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ঘটনা বর্ণনা করা।
২৩৩৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৩
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ عَبْدًا أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ فَاغْفِرْهُ فَقَالَ رَبُّه أَعَلِمَ عَبْدِىْ أَنَّ لَه رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِه؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِىْ ثُمَّ مَكَثَ مَا شَآءَ اللّٰهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ ذَنْبًا فَاغْفِرْهُ فَقَالَ رَبُّه: أَعَلِمَ عَبْدِىْ أَنَّ لَه رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِه؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِىْ ثُمَّ مَكَثَ مَا شَآءَ اللّٰهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنبا قالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ ذَنْبًا اٰخَرَ فَاغْفِرْ لِىْ فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِىْ أَنَّ لَه رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِه؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِىْ فَلْيَفْعَلْ مَا شَآءَ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ‘হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ‘রব’ আছেন? যে ‘রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল ও বলল, ‘হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ‘রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন, সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ‘রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (বুখারী, মুসলিম)[১]
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, (فَلْيَفْعَلْ مَا شَآءَ) অর্থাৎ- সে যা ইচ্ছা তাই করুক। এ বাণীর অর্থ অনেকের কাছে জটিল হয়ে পড়েছে যেমননিভাবে হাত্বিব বিন বালতা‘আহ্-এর হাদীসে উল্লেখিত বাণীর অর্থ জটিল অনুভূত হয়েছে। কেননা বাণীটির বাহ্যিক রূপ দেখে মনে হচ্ছে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য প্রত্যেক ধরনের ‘আমাল বৈধ এবং ‘আমালসমূহ থেকে তারা যা চায় তা তাদের ইচ্ছাধীন অথচ তা নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে কয়েকভাবে উত্তর দেয়া হয়েছে। আর সে উত্তরসমূহ থেকে ফাওয়ায়িদ গ্রন্থের ১৬ পৃষ্ঠাতে যা বলেছেন, তা এই নিশ্চয়ই এটা এমন এক সম্প্রদায়কে সম্বোধন যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জেনেছেন যে, নিশ্চয়ই তারা তাদের ধর্ম থেকে আলাদা হবে না বরং তারা ইসলামের উপর মারা যাবে তবে কখনো কখনো তারা খারাপ কাজে জড়িত হবে যেমন অন্যান্যরা মন্দ গুনাহের কাজে জড়িত হয়ে থাকে। তবে আল্লাহ তাদেরকে গুনাহের উপর স্থায়ীভাবে ছেড়ে রাখবেন না। বরং তাদেরকে খাঁটি তাওবাহ্ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পুণ্য কাজ করার তাওফীক দিবেন যা ঐ গুনাহের প্রভাবকে মুছে দিবে। আর এ ব্যাপারে তাদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে অন্যদেরকে নয়, কেননা এটি তাদের মাঝে সুনিশ্চিত হয়ে গেছে। তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে আর তাদের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এমন উপকরণসমূহ দ্বারা অর্জিত ক্ষমা এ ক্ষমা থেকে বাধা দিতে পারবে না যে, তা ক্ষমার প্রতি নির্ভরশীল হয় ফরযসমূহ নষ্ট করে দেয়ার দাবী করে না। নির্দেশসমূহের সম্পাদনের উপর স্থায়িত্ব হওয়া ছাড়াই যদি ক্ষমা অর্জন হত তাহলে অবশ্যই তারা এরপর সলাত, সিয়াম, হজ, যাকাত ও জিহাদের প্রতি প্রয়োজনমুখী হত না, অথচ এটা অসম্ভব গুনাহের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হল তাওবাহ্ করা। সুতরাং ক্ষমার শামিল ক্ষমার উপকরণসমূহ নষ্ট করে দেয়াকে আবশ্যক করে না। এর দৃষ্টান্ত হল, অন্য হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (বান্দা গুনাহ করে অতঃপর বলে হে আমার প্রভু আমি গুনাহ করেছি, সুতরাং তুমি আমাকে তা ক্ষমা কর, অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন) এ উক্তি। আর এ হাদীসে আছে, (قد غفرت لعبدى فليعمل ما شاء) অর্থাৎ- ‘‘আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম, সুতরাং সে যা চায় তা করুক।’’ অত্র হাদীসে আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে হারাম ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়নি।
হাদীসটি কেবল ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, বান্দাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেয়া হবে যতক্ষণ সে গুনাহ করার পর তাওবাহ্ করতে থাকবে। আর এ বান্দাকে এ ক্ষমার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করার কারণ হল, আল্লাহ এ বান্দার ব্যাপারে জেনে নিয়েছেন যে, সে কোন গুনাহের উপর স্থায়ী হবে না। বরং যখন সে পাপ করবে তখনই তাওবাহ্ করবে। এমনিভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন অথবা খবর দিয়েছেন যে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ধরনের উক্তি থেকে ঐ সাহাবী বা অন্য কোন সাহাবী এ ধরনের মনে করেননি যে, তাকে তার গুনাহ এবং অবাধ্যতা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে এবং ওয়াজিবসমূহ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে তার প্রতি উদারতা প্রকাশ করা হয়েছে। বরং এ সুসংবাদ পাওয়ার পরে পূর্বাপেক্ষা চেষ্টা, সাধনা, সতর্কতা ও ভয়ে আরো বেশি কঠোর ছিল। যেমন জান্নাতের সংবাদ প্রাপ্ত দশজন। আর এদের মাঝে আবূ বাকর ছিলেন অধিক সতর্ক ও ভয়কারী, এমনিভাবে ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। কারণ তারা জানতেন সাধারণ সুসংবাদ কিছু শর্ত এবং মরণ অবধি সেগুলোর উপর স্থায়ী হওয়ার দ্বারা গন্ডিবদ্ধ এবং সেগুলোর প্রতিবন্ধকসমূহ থেকে বিরত থাকা। তাদের কেউ এ ক্ষেত্রে কর্মে স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে অনুমতি প্রদান বুঝেননি।
২৩৩৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৪
وَعَنْ جُنْدُبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ حَدَّثَ: «أَنَّ رَجُلًا قَالَ: وَاللّٰهِ لَا يَغْفِرُ اللّٰهُ لِفُلَانٍ وَأَنَّ اللّٰهَ تَعَالٰى قَالَ: مَنْ ذَا الَّذِىْ يَتَأَلّٰى عَلَىَّ أَنِّىْ لَا أَغْفِرُ لِفُلَانٍ فَإِنِّىْ قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ». أَوْ كَمَا قَالَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা‘আলা অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এমন কে আছে যে আমাকে কসম দিতে পারে যে, (আমার নামে শপথ করতে পারে) আমি অমুককে ক্ষমা করব না। যাও, আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার ‘আমাল নষ্ট করে দিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ বাক্য অথবা অনুরূপ বাক্য বলেছেন। (মুসলিম)[১]
(قَالَ: وَاللّٰهِ لَا يَغْفِرُ اللّٰهُ لِفُلَانٍ) লোকটি অপর সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেছিল অপরের গুনাহকে বেশি বা বড় মনে করে অথবা লোকটি নিজের সম্মানার্থে এ ধরনের কথা বলেছিল যখন সে অন্যকে ক্ষতিসাধন করতে দেখেছিল। যেমন কতিপয় সূফীপন্থী মূর্খদের থেকে এমন কথা প্রকাশ পেয়ে থাকে। ‘আল্লামা কারী এমনটিই বলেছেন।
(قَالَ: مَنْ ذَا الَّذِىْ يَتَأَلّٰى عَلَىَّ) অর্থাৎ- কে আমার ওপর ফায়সালা করে এবং আমার নামে শপথ করে?
(أَنِّىْ لَا أَغْفِرُ لِفُلَانٍ) ‘‘আমি অমুককে ক্ষমা করব না’’ এটি অস্বীকারসূচক প্রশ্ন। সুতরাং কোন ব্যক্তির জন্য জান্নাত অথবা জাহান্নামের অথবা ক্ষমাপ্রাপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করা বৈধ নয়, তবে যে ব্যক্তির ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য এসেছে তার কথা আলাদা।
(فَإِنِّىْ قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ) অর্থাৎ- তোমার অপমানার্থে আমি অমুককে ক্ষমা করে দিলাম।
(وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ) ‘‘আমি তোমার ‘আমাল নষ্ট করে দিলাম’’। মাযহার বলেন, অর্থাৎ- আমি তোমার কসমকে বিনষ্ট করে দিলাম এবং তোমার শপথকে মিথ্যায় পরিণত করলাম। আর এটা ঐ হাদীসের কারণে যে হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে শপথ করবে আল্লাহ তাকে মিথ্যুকে পরিণত করবেন। অর্থাৎ- যে ব্যক্তি এভাবে ফায়াসালা করবে এবং শপথ করবে যে, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আল্লাহ অমুককে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ এ ধরনের ব্যক্তি কসমকে বাতিল করবেন এবং শপথকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবেন। সুতরাং মু‘তাযিলাদের পথ অবলম্বনের কোন সুযোগ নেই যে, কাবীরাহ্ গুনাহকারী কাবীরাকে হালাল না মনে করা সত্ত্বেও সে জাহান্নামে স্থায়ী হবে যেমন কুফরীর কারণে ‘আমাল বাতিল হয়ে যায়।
ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে বিনা তাওবাতে গুনাহ মাফ হওয়ার ক্ষেত্রে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দলীল আছে, আর তা যখন আল্লাহ চাইবেন। আর মু‘তাযিলা সম্প্রদায় এ হাদীসের মাধ্যমে কাবীরাহ গুনাহের কারণে ‘আমাল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। আহলুস্ সুন্নাতের মাযহাব হল, কুফরী ছাড়া ‘আমালসমূহ ধ্বংস হয় না। আর এ ‘আমাল ধ্বংস হওয়াকে ঐ কথার উপর ব্যাখ্যা করা হবে, পাপের কারণে তার পুণ্যসমূহ ঝড়ে গেছে। সুতরাং একে রূপকভাবে ‘আমাল ধ্বংস করা বুঝানো হয়েছে। আরো সম্ভাবনা রয়েছে যে, তার হতে অন্য কোন বিষয় সংঘটিত হয়েছে যা কুফরীকে আবশ্যক করে দিয়েছে। আরো সম্ভাবনা রয়েছে এটি আমাদের পূর্ববর্তীদের শারী‘আতে ছিল আর এটা ছিল তাদের হুকুম।
(أَوْ كَمَا قَالَ) বর্ণনাকারীর সন্দেহ, অর্থাৎ- আমি যা উল্লেখ করেছি তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কেউ বলেছেন অথবা অনুরূপ বলেছেন। আর এটা অর্থগত বর্ণনার ব্যাপারে সতর্কতা স্বরূপ যাতে কেউ তা শব্দগত বর্ণনা মনে না করে। নাবাবী বলেন, বর্ণনাকারী এবং হাদীস পাঠকের জন্য উচিত হবে যখন কোন শব্দ তার কাছে সন্দেহপূর্ণ হবে তখন সন্দেহ স্বরূপ তা পাঠকালে তার পেছনে (أَوْ كَمَا قَالَ) ভাষ্যটুকু বলবে অথবা (أو نحو هذا) অংশটুকু বলতে হবে। যেমন সহাবায়ে কিরাম এবং তাদের পরবর্তীরা এরূপ করেছেন। আর আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।
২৩৩৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৫
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ: اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعَتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ فَإِنَّه لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ». قَالَ: «وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِه قَبْلَ أَنْ يُمْسِىَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ». رَوَاهُ البُخَارِىُّ
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাইয়্যিদুল ইসতিগফার এভাবে পড়বে,
‘‘আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা খলাকতানী, ওয়া আনা- ‘আবদুকা, ওয়া আনা- ‘আলা- ‘আহদিকা, ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্ব‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা- সনা‘তু, আবূউলাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি স্বীকার করি, আমার প্রতি তোমার দানকে এবং স্বীকার করি আমার গুনাহকে। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এ সাইয়্যিদুল ইসতিগফারের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে দিনে পড়বে আর সন্ধ্যার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে এ দু‘আ রাতে পড়বে আর সকাল হবার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (বুখারী)[১]
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ দু‘আটি তাওবার সকল অর্থকে শামিল করার কারণে একে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
(فَاغْفِرْ لِىْ فَإِنَّه لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ) এ বাণী থেকে গ্রহণ করা হয় যে, যে ব্যক্তি তার গুনাহের ব্যাপারে স্বীকার করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর অপবাদারোপিত দীর্ঘ হাদীসে স্পষ্ট এসেছে। আর তাতে আছে যেমন চারটি হাদীস পূর্বে গত হয়েছে। (العبد إذا اعترف بذنبه وتاب تاب الله إليه) অর্থাৎ- ‘‘বান্দা যখন তার গুনাহ স্বীকার করবে এবং তাওবাহ্ করবে তখন আল্লাহ তার তাওবাহ্কে গ্রহণ করবেন।’’ আর এ স্বীকারোক্তি বান্দার এবং তার প্রভুর মাঝে সীমাবদ্ধ, মানুষের কাছে তা প্রকাশ করা উচিত নয়। কেননা বান্দা যখন কোন গুনাহ করে তা গোপন করতে সক্ষম হয় তখন আল্লাহ তা মানুষের কাছে গোপন করতে ভালবাসেন।
(مِنَ النَّهَارِ) অর্থাৎ- দিনের কোন অংশে। নাসায়ীর বর্ণনাতে আছে, অতঃপর সে যদি তা সকালে উপনীত হওয়াবস্থায় পাঠ করে। তিরমিযীতে আছে, তোমাদের যে কেউ সন্ধ্যায় উপনীত হওয়াবস্থায় এ দু‘আ পাঠ করবে। অতঃপর সকালে উপনীত হওয়ার পূর্বে তার নির্দিষ্ট মৃত্যু সময় ঘনিয়ে আসবে অথবা যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হওয়া অবস্থায় এ দু‘আ পাঠ করবে, এরপর সন্ধ্যায় উপনীত হওয়ার পূর্বে তার নির্দিষ্ট মৃত্যু সময় ঘনিয়ে আসবে।
(مُوقِنًا بِهَا) অর্থাৎ- খাঁটি অন্তরে, পুণ্যের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে।
কারী বলেন, অর্থাৎ- সংক্ষিপ্ত অথবা বিস্তারিতভাবে সকল প্রমাণযোগ্য বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে।
(فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ) অর্থাৎ- সে বিশ্বাসী অবস্থায় মারা যাবে, অতঃপর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা শাস্তি ছাড়াই অথবা তা উত্তম পরিসমাপ্তির প্রতি শুভসংবাদ।
তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে, (إلا وجبت له الجنة) অর্থাৎ- ‘‘তার জন্য জান্নাত আবশ্যক হয়ে যাবে’’। নাসায়ীর বর্ণনাতে আছে, (دخل الجنة) অর্থাৎ- ‘‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। সিনদী বলেন, সূচনাতেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে অন্যথায় প্রত্যেক মু’মিন তার ঈমানের দরুন জান্নাতে প্রবেশ করবে এটি আল্লাহর তরফ থেকে কৃপা। কিরমানী বলেন, যদি বলা হয় মু’মিন ব্যক্তি এ দু‘আটি পাঠ না করেই শুরুতে সে জান্নাতের অধিবাসী। আমি বলব, সে জাহান্নামে প্রবেশ না করেই শুরুতেই সে জান্নাতে প্রবেশ করা উদ্দেশ্য। কেননা অধিকাংশ সময় এ দু‘আর প্রকৃত অবস্থার প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তি সামষ্টিকভাবে মু’মিন, সে আল্লাহর অবাধ্য হয় না। অথবা আল্লাহ এ ক্ষমা প্রার্থনার বারাকাতে তার গুনাহ মোচন করেছেন। যদি কেউ বলে যে, এ দু‘আটি سيد الاستغفار হওয়ার হিকমাত কি? আমি বলব, এ দু‘আ এবং এর মতো অন্যান্য দু‘আ দ্বারা ‘ইবাদাতের বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন উদ্দেশ্য। আর আল্লাহই এ সম্পর্কে সর্বাধিক জানেন। তবে এতে পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহর জিকির আছে এবং বান্দার নিজের সংকীর্ণ অবস্থার বর্ণনা আছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর তা হল এমন এক সত্তার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের বিনয় যার অধিকার একমাত্র তিনি ছাড়া কেউ রাখেন না।
২৩৩৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৬
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «قَالَ اللّٰهُ تَعَالٰى: يَا ابْنَ اٰدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِىْ وَرَجَوْتَنِىْ غَفَرْتُ لَكَ عَلٰى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِىْ يَا ابْنَ اٰدَمَ إِنَّكَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِىْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِىْ يَا ابْنَ اٰدَمَ إِنَّكَ لَوْ لَقِيتَنِىْ بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِىْ لَا تُشْرِكُ بِىْ شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব, আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব। (তিরমিযী)[১]
(عَلٰى مَا كَانَ فِيكَ) অর্থাৎ- যত বেশি গুনাহ তোমার মাঝে থাকুক।
(وَلَا أُبَالِىْ) অর্থাৎ- তোমার গুনাহের অধিকতার কারণে আমি পরোয়া করি না, তা আমার কাছে বড় মনে হয় না এবং তা আমি বেশি মনে করি না, অর্থাৎ- তোমাকে ক্ষমা করা আমার কাছে বড় মনে হয় না। যদিও তোমার বা বান্দার গুনাহ অনেক হয়ে থাকে। যদিও গুনাহ অনেক বা বড় হয়ে থাকুক না কেন? কেননা আল্লাহর ক্ষমা এর অপেক্ষাও বড়। তা বড় হলেও আল্লাহর ক্ষমার ক্ষেত্রে তা ছোট।
‘আল্লামা কারী বলেন, অবস্থা এমন যে, আমি তোমার ক্ষমার বিষয়টা আমার কাছে বড় মনে করি না যদিও তা বড় বা পরিমাণে বেশি হোক না কেন?
(لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ) অর্থাৎ- তোমার মাথা যখন আকাশের দিকে উঠাবে ও দৃষ্টি দিবে এবং তোমার দৃষ্টিসীমা আকাশের যে পর্যন্ত পৌঁছবে তোমার গুনাহের পরিমাণ যদি সে পর্যন্তও পৌঁছে যায়।
আর ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- তোমার গুনাহগুলোকে যদি দেহের আকার দেয়া হয় আর আধিক্যতা ও বড়ত্বের কারণে তা যদি জমিন ও শূন্যকে পূর্ণ করে নেয় এমনকি তা আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
(ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِىْ غَفَرْتُ لَكَ) এ বাক্যটি, অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কর্ম করবে অথবা নিজের প্রতি অবিচার করবে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সে আল্লাহকে অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাবে’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১০) আল্লাহর এ বাণীর অনুরূপ।
(لَوْ لَقِيتَنِىْ) মিশকাতের বর্তমান সকল কপিতে এভাবে আছে আর তিরমিযীতে যা আছে, তা হল, (لو أتيتنى) এভাবে মাসাবীহ, তারগীব, হিসন, জামিউস্ সগীর, কানয এবং মাদারিযুস্ সালিকীন গ্রন্থে আছে। এ ধরনের বর্ণনা হতে যা প্রকাশ পাচ্ছে তা হল, নিশ্চয়ই মিশকাতে যা উল্লেখ হয়েছে তা কপি তৈরিকারীর পক্ষ থেকে ভুল।
(بِقُرَابِ الْأَرْضِ) অর্থাৎ- যা জমিন পরিপূর্ণ হওয়ার কাছাকাছি।
একমতে বলা হয়েছে, তা জমিনকে পূর্ণ করে দিবে আর এটি সর্বাধিক সামঞ্জস্যশীল। অর্থাৎ- এখানে তাই উদ্দেশ্য। কেননা আলোচনাটি আধিক্যতার বাচনভঙ্গিতে। আর আহমাদে আবূ যার-এর হাদীসের শেষে যা উল্লেখিত হয়েছে তা একে সমর্থন করেছে, তা হল قراب الأرض বলতে জমিন পরিপূর্ণ।
(لَا تُشْرِكُ بِىْ شَيْئًا) অর্থাৎ- আমার একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং আমার রসূল-মুহাম্মাদ এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি সমর্থন করাবস্থায়। আর তা হল ঈমান। ‘আল্লামা কারী বলেন, (لا تشرك بى شيئا) বাক্যটি আল্লাহর সামনে সাক্ষাতের সময় শির্ক না থাকার ব্যাপারে অতীত অবস্থার বর্ণনা বুঝানো হয়েছে।
(لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً) হাদীস থেকে উদ্দেশ্য হল, ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাওবার ব্যাপারে উৎসাহ দান। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহ্কারীর তাওবাহ্ গ্রহণ করেন এবং তাকে ক্ষমা করেন যদিও তার গুনাহ অধিক হয়।
ইবনু রজাব ‘‘শারহুল আরবা‘ঈন’’-এ বলেন, আনাস (রাঃ)-এর এ হাদীসটি ঐ কথাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যে, এ তিনটি উপকরণের মাধ্যমে ক্ষমা অর্জন হয়। তিনটির একটি হল আশা-আকাঙ্খার সাথে দু‘আ করা। দ্বিতীয় ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও গুনাহ বড় এবং তার আধিক্যতা আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তৃতীয় তাওহীদ আর এটাই হল সর্বাধিক বড় উপকরণ। সুতরাং যে এটিকে হারিয়ে ফেলবে সে ক্ষমা হারিয়ে ফেলবে, পক্ষান্তরে যে এটিকে সম্পন্ন করবে সে ক্ষমা প্রার্থনার সর্বাধিক বড় উপকরণকে সম্পন্ন করবে। আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শির্কের গুনাহ ক্ষমা করেন না এছাড়া আরো যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১৬)। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদের সাথে জমিন ভরপুর গুনাহ নিয়ে আসবে আল্লাহ তার সাথে জমিন ভরপুর ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাত করবেন। তবে এটি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। যদি তিনি চান তাকে ক্ষমা করবেন আর যদি চান তাকে তার গুনাহের দরুন পাকড়াও করবেন তার শাস্তি জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না বরং জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে, অতঃপর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
কেউ কেউ বলেন, একত্ববাদী বান্দাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না। যেমন কাফিরকে নিক্ষেপ করা হবে এবং একত্ববাদী বান্দা জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তাতে স্থায়ী হবে না। যেমন কাফিররা স্থায়ী হবে। সুতরাং বান্দা যদি তাওহীদ এবং তার মাঝে আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা পূর্ণতা লাভ করে এবং ঈমানের সকল শর্তগুলো অন্তর, জবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে অথবা মরণের মুহূর্তে অন্তর এবং জবান দিয়ে সম্পন্ন করে তাহলে তার এ ধরনের ‘আমাল অতীতের সকল গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়াকে আবশ্যক করে দিবে। অথবা পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ থেকে বাধা দিবে। সুতরাং যার অন্তর তাওহীদের বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তার অন্তর থেকে আল্লাহ ছাড়া যত ভালবাসা আছে, সম্মান প্রদর্শন, ভয় করা, আশা-আকাঙ্খা করা, আশা করা ও ভরসা করা সকল কিছুকে বের করে দেয়া হবে এবং তখন তার সকল গুনাহসমূহ জ্বলে যাবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয় এবং কখনো এ তাওহীদী বাণী সে গুনাহসমূহকে পুণ্যে পরিণত করে দিবে, কেননা এ তাওহীদ হল সর্বাধিক বড় সঞ্জীবনী। সুতরাং এ তাওহীদের অনুপরিমাণ যদি গুনাহের পাহাড়ের উপর রাখা হয় অবশ্যই এ তাওহীদ সে গুনাহসমূহকে পুণ্যে পরিণত করবে।
২৩৩৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৭
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَالدَّارِمِىُّ عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ، وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ غَرِيْبٌ
আহমাদ ও দারিমী আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব।[১]
২৩৩৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৮
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا عَنِ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ قَالَ: «قَالَ اللّٰهُ تَعَالٰى: مَنْ عَلِمَ أَنِّىْ ذُو قُدْرَةٍ عَلٰى مَغْفِرَةِ الذُّنُوبِ غَفَرْتُ لَه وَلَا أُبَالِىْ مَا لَمْ يُشْرِكْ بِىْ شَيْئًا». رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে জানে আমি গুনাহ মাফ করে দেয়ার মালিক। আমি তাকে মাফ করে দেবো এবং আমি কারো পরোয়া করি না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমার সাথে কাউকে শারীক না করবে। (শারহুস্ সুন্নাহ)[১]
এ কথার বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন যদিও সে ক্ষমা প্রার্থনা না করে থাকে। একমতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জানবে আমি গুনাহসমূহ ক্ষমা করার ব্যাপারে শক্তিশালী, অর্থাৎ- সে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ইমাম শাওকানী (রহঃ) প্রথম মতের দিকে ঝুঁকেছেন যেমনটি এর উপর প্রমাণ বহন করে ‘তুহফাতুয্ যাকিরীন’-এ যা আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। বিগত হাদীস ব্যাখ্যার সময় শাওকানীর উক্তি। যেমন তিনি বলেন, বরং এমন হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করে যে, বান্দা যখন গুনাহ করবে অতঃপর জানবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ যদি তাকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে শাস্তি দিবেন পক্ষান্তরে যদি চান তাকে ক্ষমা করতে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর শুধু তার এটুকু বিশ্বাস আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহ, দয়া স্বরূপ ক্ষমা প্রদর্শনকে আবশ্যক করে দিবে যেমন ত্ববারানীর আওসাত গ্রন্থে আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে আছে। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গুনাহ করল অতঃপর জানল আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করতে পারেন তাহলে আল্লাহর ওপর হক হয়ে যায় তাকে ক্ষমা করা। এর সানাদে জাবির বিন মারফূক আল জাদ্দী আছে সে দুর্বল।
(وَلَا أُبَالِىْ) ‘আলকামাহ্ বলেন, অর্থাৎ- তোমার পাপের কারণে। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তিনি যা করেন সে ক্ষেত্রে তার কোন বাধাদানকারী নেই, তার ফায়সালার কোন সমালোচনাকারী নেই, তার দানের কোন বাধাদানকারী নেই।
(مَا لَمْ يُشْرِكْ بِىْ شَيْئًا) কেননা শির্কের গুনাহ তাওবাহ্ এবং ঈমান গ্রহণ ছাড়া ক্ষমা করা হবে না।
২৩৩৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৩৯
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللّٰهُ لَه مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَه مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ». رَوَاهُ أحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
[‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সবসময় ক্ষমা চায়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে বের হয়ে আসার পথ খুলে দেন এবং প্রত্যেক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেন। আর তাকে এমন রিযক দান করেন, যা সে কক্ষনো ভাবতেও পারেনি। (আহমদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[১]
উল্লেখিত শব্দ আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান-এর। ইমাম আহমাদ, নাসায়ী, ইবনুস্ সুন্নী এবং হাকিম একে (من أكثر من الاستغفار) অর্থাৎ- যে বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।) এ শব্দে বর্ণনা করেছেন। আর এটি দ্বিতীয় অর্থটিকে সমর্থন করছে।
(مَخْرَجًا) অর্থাৎ- এমন এক পথ যা ব্যক্তিকে অধিক হারে ক্ষমা প্রার্থনা করার দরুন সুপ্রশস্ততা ও উপকার লাভের দিকে বের করে আনবে।
(وَرَزَقَه) অর্থাৎ- পবিত্র হালাল বস্ত্ত তাকে দান করবেন।
(مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ) অর্থাৎ- এমন এক দিক থেকে যার ধারণা ও আশা সে করত না এবং তার অন্তরে তা জাগত না। জাযারী বলেন, অর্থাৎ- এমনভাবে তাকে রিযক দেয়া হবে যা সে জানতো না এবং তার হিসাবে তা ছিল না।
হাদীসটিতে আল্লাহর এ বাণীর দিকে ইঙ্গিত আছে, অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ বের করবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিযক দান করবেন যার পরিকল্পনাও সে করত না আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট’’- (সূরা আত্ব ত্বলাক ৬৫ : ২-৩)। মুত্তাক্বী এবং অন্যান্যগণ যখন ত্রুটিমুক্ত নন যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর ভুলকারী বা পাপীদের মাঝে সর্বোত্তম হল তাওবাহকারীগণ তখন এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশ্লেষণ তার দিকে ক্ষমা প্রার্থনা অবলম্বনের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করেছেন। আরো ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, অবাধ্য ব্যক্তি যখন ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন মুত্তাক্বীতে পরিণত হয়। আর এটি মুত্তাকবী ব্যক্তির আবশ্যকীয় প্রতিদান।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনার হক আদায় করবে সে মুত্তাক্বীতে পরিণত হবে। আর এটি মূলত আল্লাহ এ বাণীর দিকে লক্ষ্য করে, অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর আমি বললাম তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের ওপর অজস্র ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদেরকে দান করবেন উদ্যানসমূহ আরো দান করবেন ঝরণাসমূহ’’- (সূরা নূহ ৭১ : ১০-১২) । আর এতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে সবকিছু অর্জন হয়।
২৩৪০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪০
وَعَنْ أَبِىْ بَكْرٍ الصِّدِّيقِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ: «مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ وَإِنْ عَادَ فِى الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةً». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ
আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে সত্তরবার করে একই গুনাহ করার পরও আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইবে, (ক্ষমা চাওয়ার কারণে) সে যেন প্রকৃতপক্ষে গুনাহ বার বার করেনি। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[১]
নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, اصر على الشر অর্থাৎ- সে মন্দকে আঁকড়িয়ে ধরেছে এবং তার ওপর স্থায়ী হয়েছে বলে গণ্য হবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে اصرار শব্দটি অকল্যাণ এবং পাপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার গুনাহের পর ক্ষমা প্রার্থনা করে তার হুকুম হল, সে পাপের উপর স্থায়ী না যদিও সে পাপ তার থেকে বারংবার হয়ে থাকে।
(سَبْعِينَ مَرَّةً) নিশ্চয়ই এর মাধ্যমে আধিক্যতা, বারংবারতা এবং অতিরিক্ততা উদ্দেশ্য, সীমাবদ্ধতা তথ্য সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়। استغفار দ্বারা استغفر الله উচ্চারণ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং অবাধ্য কাজে লিপ্ত না হওয়া এবং পাপ কাজ না দোহরানোর ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করা।
মানাবী এ হাদীসের ব্যাখ্যাতে বলেন, যে ব্যক্তি খাঁটি তাওবাহ্ করবে তার হুকুম গুনাহের উপর স্থায়ী না হওয়া যদিও সে দিনে সত্তরবার ঐ গুনাহের পুনরাবৃত্তি করে, কেননা আল্লাহর দয়ার শেষ নেই। সুতরাং আল্লাহর ক্ষমার কাছে সমস্ত বিশ্বের গুনাহসমূহ ধ্বংসশীল।
২৩৪১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪১
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «كُلُّ بَنِىْ اٰدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدَّارِمِىُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপী। আর উত্তম পাপী হলো সে ব্যক্তি যে (গুনাহ করে) তাওবাহ্ করে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[১]
কারী বলেন, كل শব্দের দিকে দৃষ্টি দিয়ে خطاء শব্দটি একবচন নেয়া হয়েছে। এক বর্ণনাতে خطاؤن বহুবচন আছে সেখানে كل শব্দের অর্থের দিকে লক্ষ্য করে خطاؤن শব্দটি বহুবচন নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নাবীদের বিষয়টি স্বতন্ত্র বা আলাদা অথবা তারা সগীরাহ্ গুনাহের অধিকারী তবে প্রথমটি উত্তম। অথবা নাবীদের বিষয়গুলোকে পদস্খলন বলা যেতে পারে, অর্থাৎ- যাতে তাদের কোন ইচ্ছা ছিল না। একমতে বলা হয়েছে, كل بنى ادم خطاء এর অর্থ হল তাদের অধিকাংশ অধিক ভুলকারী।
(وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ) অর্থাৎ- যারা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনশীল তথা অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী, অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তাওবাহকারীদের ভালবাসেন’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২২২)। অর্থাৎ- যারা সগীরাহ্ গুনাহে স্থায়ী হয় না, কেননা সগীরাহ্ গুনাহে স্থায়িত্ব সগীরাহ্ গুনাহকে কাবীরাহ্ গুনাহে পরিণত করে।
২৩৪২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪২
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنِ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِىْ قَلْبِه فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُه وَإِنْ زَادَ زَادَتْ حَتّٰى تَعْلُوَ قَلْبَه فَذَلِكُمُ الرَّانُ الَّذِىْ ذَكَرَ اللّٰهُ تَعَالٰى ﴿كَلَّا بَلْ رَانَ عَلٰى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُوْنَ﴾
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন বান্দা যখন গুনাহ করে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে ব্যক্তি তাওবাহ্ করল ও ক্ষমা চাইল, তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে গেল (কালিমুক্ত হলো), আর যদি গুনাহ বেশি হয় তাহলে কালো দাগও বেশি হয়। অবশেষে তা তার অন্তরকে ঢেকে ফেলে। এটা সেই মরিচা যার ব্যাপারে কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘এটা কক্ষনো নয়, বরং তাদের অন্তরের উপর (গুনাহের) মরিচা লেগে গেছে, যা তারা প্রতিনিয়ত উপার্জন করেছে’’- (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ১৪)। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[১]
কারী বলেন, অর্থাৎ- কালির ফোটার মতো যা কাগজে পতিত হয় এবং অবাধ্যতা ও তার পরিমাণ অনুপাতে তা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আর বিষয়টিকে উপমা এবং সাদৃশ্য উপস্থাপন অধ্যায়ের আওতাভুক্ত করা অপেক্ষা বাস্তবতার উপর চাপিয়ে দেয়া উত্তম। যেমন বলা হয়েছে, চূড়ান্ত স্বচ্ছতা ও শুভ্রতার ক্ষেত্রে কাপড়ের সাথে অন্তরকে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে এবং অবাধ্যতাকে ঐ চূড়ান্ত কালো বস্ত্তর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে যা ঐ সাদা কাপড়ে গেলে আটকে গেছে।
উল্লেখিত শব্দ আহমাদ, ইবনু মাজাহ এবং হাকিম-এর এবং তিরমিযীর শব্দ (إن العبد إذا أخطأ خطيئة نكتت فى قلبه نكتة سوداء)
(فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ) অতঃপর যদি সে গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। এবং মুসনাদ, ইবনু মাজাহ ও মুসতাদরাক দ্বিতীয় খণ্ড ৫১৭ পৃষ্ঠাতে تاب শব্দের পর نزع শব্দ পতিত হয়েছে। একমতে বলা হয়েছে, استغفر অর্থাৎ- সে এখান থেকে উঠে এসেছে এবং তা ছেড়ে দিয়েছে। তিরমিযীর শব্দ فإذا هو نزع واستغفر و تاب বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যাচ্ছে মিশকাত গ্রন্থে نزع শব্দের বিলুপ্তি সাধন হয়েছে মাসাবীহ গ্রন্থের অনুসরণার্থে আর আল্লাহই সর্বাধিক ভাল জানেন।
(صُقِلَ قَلْبُه) অর্থাৎ- আল্লাহ তার অন্তর থেকে ঐ দাগ মুছে দেবেন। অর্থাৎ- আল্লাহ তার অন্তরের আয়নাকে পরিচ্ছন্ন করে দেবেন কেননা তাওবাহ্ পরিচ্ছন্ন করার স্থানে অবস্থান করছে যা বাহ্যিকভাবে বা রূপকভাবে অন্তরের ময়লাকে দূর করে দেয়। (وإن زاد زادت) অর্থাৎ- একই রূপ গুনাহের মাধ্যমে বা ভিন্ন ভিন্ন গুনাহের মাধ্যমে যদি গুনাহ বৃদ্ধি পায় তাহলে ঐ কালো দাগ বৃদ্ধি পায় অথবা প্রত্যেক গুনাহের জন্য দাগ প্রকাশ পায়।
(حَتّٰى تَعْلُوَ قَلْبَه) অর্থাৎ- পরিশেষে ঐ কালো দাগ তার অন্তরের উপর আবরণ স্বরূপ বিজয়লাভ করে এবং তার সমস্ত অন্তরকে ঢেকে নেয় এবং সমস্ত অন্তরকে অন্ধকারে পরিণত করে, ফলে সে অন্তর কল্যাণ অর্জন করতে পারে না এবং সৎ পথ দেখতে পায় না এবং সে অন্তরে কল্যাণ স্থির হয় না। তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে, (وإن عاد زيد فيها ختى تعلو قلبه অর্থাৎ- যে পাপ সে কামাই করেছে সে পাপে যদি প্রত্যাবর্তন করে অথবা অন্য কোন পাপে প্রত্যাবর্তন করে। আর পাপ কালোর দাগের মাঝে অন্য দাগ বৃদ্ধি করে আর এভাবে ঐ দাগগুলো ব্যক্তির অন্তরের আলোকে নিভিয়ে দেয় এবং তার অন্তর্দৃষ্টিকে ঢেকে নেয়। (فذلكم) একমতে বলা হয়েছে, এটি সাহাবীগণকে সম্বোধন, অর্থাৎ- এটি হল প্রাধান্য পাওয়া মন্দ প্রভাব।
(الرَّانُ الَّذِىْ ذَكَرَ اللّٰهُ) আবূ ‘উবায়দ বলেন, প্রত্যেক ঐ বস্ত্ত যা তোমার ওপর প্রাধান্য পায় তা তোমার ওপর ময়লা বা মরিচা স্বরূপ।
مَا كَانُوا يَكْسِبُوْنَ অর্থাৎ- তারা যে সমস্ত গুনাহ কামিয়েছে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, আয়াতটি কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ, তবে মু’মিন ব্যক্তি গুনাহে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে অন্তর কালো হওয়ার ক্ষেত্রে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখে এবং গুনাহ বৃদ্ধির কারণে সে দাগও বৃদ্ধি পায়।
ইমাম মালিক বলেন, এ আয়াতটি কাফিরদের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এ আয়াতটি উল্লেখ করেছেন যাতে অধিক গুনাহ করা থেকে তারা সতর্ক হয়, যাতে কাফিরদের কালো অন্তরের ন্যায় তাদের অন্তর কালো না হয়। এজন্য একমতে বলা হয়েছে, المعاصى দ্বারা কুফর উদ্দেশ্য, এভাবে মিরকাতে আছে।
২৩৪৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৩
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ اللّٰهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার প্রাণ (রূহ) ওষ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ তার তাওবাহ্ কবূল করেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[১]
আমাদের শায়খ বলেন, বাহ্যিকদৃষ্টিতে প্রথমটি নির্ভরযোগ্য।
(مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তার আত্মা কণ্ঠনালীতে না পৌঁছবে, অতঃপর তা ঐ বস্ত্তর স্থানে পরিণত না হবে যার কারণে রুগী গড়গড় বা প্রতিধ্বনি করে থাকে। غر غرة বলা হয় পানীয় বস্ত্তকে মুখের মাঝে রাখা এবং কণ্ঠনালীর গোড়া পর্যন্ত পৌঁছানো এবং কণ্ঠনালীর ভিতরে না যাওয়া এবং ঐ বস্ত্ত যার কারণে প্রতিধ্বনি কারী প্রতিধ্বনি করে থাকে তাকে ‘আরবদের ভাষায় লাদূদ, লা‘ঊক এবং সা‘ঊত্ব বলা হয়। উদ্দেশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরকালের অবস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ না করবে।
‘আল্লামা কারী বলেন, অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হবে। কেননা মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়ার পর ব্যক্তির তাওবাহকে তাওবাহ্ গণ্য করা হবে না।
এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী, ‘‘আর যারা পাপ কর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে আমি এখন তাওবাহ্ করব তাদের কোন তাওবাহ্ নেই এবং কাফির অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের কোন তাওবাহ্ নেই।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৮)
তুরবিশতী বলেন, (مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) এর অর্থ হল, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে মৃত্যু আগমন না করবে। কেননা ব্যক্তির কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন সে প্রতিধ্বনি করে থাকে। অতঃপর যখন সে মৃত্যু, জীবন অবসান সম্পর্কে জানতে পারে, সুনিশ্চিত হতে পারে তখন তার তাওবাহ্ গ্রহণীয় নয়। তিনি বলেন, যদিও আমরা মৃত্যু উপস্থিত হওয়া ব্যক্তির দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন অসম্ভব সম্পর্কে নিশ্চিত এবং তার তাওবাহ্ কবূলের বিষয়টি অস্বীকার করি রহমাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং ব্যক্তি ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তথাপিও আমরা আল্লাহর তরফ থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আশা করব। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শির্ক করার গুনাহ ক্ষমা করবেন না তবে শির্ক ছাড়া আরো যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। বুঝা গেল, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার সময় তাওবাহ্ উপকারে আসবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে কেবল ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করে, অতঃপর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৌশলী। আর ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না যারা মন্দকর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে যে, আমি এখন তাওবাহ্ করব।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭-১৮)
জমহূর মুফাসসিরীনদের নিকটে অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ বলতে, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার পূর্বে তাওবাহ্ করা, অর্থাৎ- মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বে তাওবাহ্ করা। ‘ইকরিমাহ্ বলেন, মরণের পূর্বে। যাহহাক বলেন, মালাকুল মাওতকে স্বচক্ষে দেখার পূর্বে। এ হল অনতিবিলম্বে তাওবাহকারীর অবস্থা। পক্ষান্তরে মৃত্যু সংঘটিত হওয়াকালে যে ব্যক্তি বলবে, আমি এখন তাওবাহ্ করব তার তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না। কেননা ওটা আবশ্যকীয় তাওবাহ্ স্বেচ্ছাধীন না। কেননা সেই তাওবাহ্ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পর, কিয়ামতের দিন এবং আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখার পর তাওবাহ্ করার মতো। একমতে বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ করার অর্থ হল, গুনাহের উপর স্থির না হয়ে গুনাহের পরপরই তাওবাহ্ করা।
২৩৪৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৪
وَعَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ: وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ لَا أَبْرَحُ أُغْوِىْ عِبَادَكَ مَا دَامَتْ أَرْوَاحُهُمْ فِى اجْسَادِهِمْ فَقَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ وَارْتِفَاعِ مَكَانِىْ لَا أَزَالُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِىْ». رَوَاهُ أَحْمَدُ
আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান (আল্লাহ তা‘আলার কাছে) বলল, হে মহান প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গুমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমার ইজ্জত, আমার মর্যাদা ও আমার সুউচ্চ অবস্থানের কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি সর্বদা তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব। (আহমদ)[১]
আহমাদ-এর অপর বর্ণনাতে আছে, নিশ্চয়ই ইবলীস তার পালনকর্তাকে বলল, তোমার ইজ্জত এবং তোমার জালাল তথা মর্যাদার শপথ।
‘আল্লামা কারী বলেন, এতে ইঙ্গিত আছে ঐ দিকে যে, ইবলীস পথভ্রষ্টতার প্রধান এবং সম্মান প্রকাশকারী, যেমনিভাবে আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনোযোগ ও সৌন্দর্য প্রকাশকারী পথপ্রদর্শন ও পূর্ণতার নেতা। (عبادك) আহমাদের এক বর্ণনাতে আছে, (بنى ادم) অর্থাৎ- আদম সন্তান, সর্বদাই আমি আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করতে থাকব তবে তাদের থেকে যারা নিষ্ঠাবান তারা ছাড়া। বর্ণনাটি ব্যাপকতারও সম্ভাবনা রাখে।
(فَقَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ) কারী বলেন, সম্ভবত পারস্পরিক সাদৃশ্যতার জন্য উভয় শব্দকে উল্লেখ করেছেন অন্যথায় বৈপরীত্যের দাবী হল, رحمتى এবং جمالى বলা। (وارتفاع مكانى) আবূ সা‘ঈদ-এর মুসনাদে ইমাম আহমাদে এ শব্দ পাইনি। জাযারী একে ‘হিসন’ গ্রন্থে মুনযিরী একে ‘তারগীব’ গ্রন্থে ‘আলী আল মুত্তাক্বী ‘কানয’ গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। তবে এটি ইমাম বাগাবীর ‘শারহুস্ সুন্নাহ’ গ্রন্থে আছে। আর এ অতিরিক্ত অংশটুকু মুনকার হাদীস।
(أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِىْ) অর্থাৎ- স্বেচ্ছাধীন সময়ে ক্ষমা অনুসন্ধানের মুহূর্তে। হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, শয়তানের পথভ্রষ্টতা, পাপকর্মকে চাকচিক্য করার কারণে যে সকল গুনাহ সংঘটিত হয় ক্ষমা প্রার্থনা তা প্রতিহত করতে পারে। আর ক্ষমা প্রার্থনা যতক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে ক্ষমা প্রদর্শনও ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কেউ যদি বলে এ হাদীস এবং আল্লাহর বাণী (অর্থাৎ- ‘‘অবশ্যই আমি তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব তবে তাদের থেকে তোমার নিষ্ঠাবান বান্দারা ছাড়া তিনি বলেন, তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি। অব্যশই আমি তোমাকে দিয়ে এবং তাদের থেকে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সকলকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব’’- সূরা সোয়াদ ৩৮ : ৮৫) এ উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য কিভাবে? উত্তরে বলা হবে, নিশ্চয়ই আয়াতটি এ কথার উপর প্রমণ বহন করছে যে, নিষ্ঠাবানরাই কেবল মুক্তি পাবে, পক্ষান্তরে হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, যারা নিষ্ঠাবান না তারাও মুক্তি পাবে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, আল্লাহ (ممن تبعك) এ বাণীর গন্ডিবদ্ধতা ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে আজমা‘ঈন এর আওতাভুক্ত হওয়া থেকে বের করে দিয়েছে যারা পাপ করার পর ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আয়াতে تبعك এর অর্থ হল যারা শয়তানের অনুসরণ করার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না বরং অবিরাম শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে।
২৩৪৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৫
وَعَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّ اللّٰهَ تَعَالٰى جَعَلَ بِالْمَغْرِبِ بَابًا عَرْضُه مَسِيرَةُ سَبْعِينَ عَامًا لِلتَّوْبَةِ لَا يُغْلَقُ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ مِنْ قِبَلِه وَذٰلِكَ قَوْلُ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿يَوْمَ يَأْتِىْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيْمَانُهَا لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ﴾. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْن مَاجَهْ
সফ্ওয়ান ইবনু ‘আসসাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তাওবাহ্ কবূলের জন্য পশ্চিম দিকে একটি দরজা খুলে রেখেছেন, যার প্রশস্ততা সত্তর বছরের পথ। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় না হওয়া পর্যন্ত এ দরজা বন্ধ করা হবে না। আর এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ‘‘যেদিন (কিয়ামাতের পূর্বে) তোমার ‘রবের’ কোন বিশেষ নিদর্শন এসে পৌঁছবে, সেদিন এ ঈমান তার কোন কাজে আসবে না। কেননা এ নিদর্শন আসার আগে ঈমান আনেনি’’- (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৫৮)। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[১]
(عَرْضُه مَسِيرَةُ سَبْعِينَ عَامًا) অর্থাৎ- সুতরাং তার দৈর্ঘ্যতা কেমন? একমতে বলা হয়েছে, سبعين শব্দটি আধিক্যতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে, সীমাবদ্ধতার জন্য নয়। লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, একমতে বলা হয়েছে, سبعين দ্বারা তাওবার দরজা উন্মুক্ত থাকার ক্ষেত্রে আধিক্যতা এবং তাওবার ক্ষেত্রে মানুষ সুপ্রশস্ততার মাঝে থাকা উদ্দেশ্য। আর এটি হল অপব্যাখ্যা। তবে স্পষ্ট ঈমান হল, কোন অপব্যাখ্যা ছাড়াই এর প্রতি ঈমান আনা। প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহর কাছে।
(لِلتَّوْبَةِ) ‘‘তাওবার জন্য’’, অর্থাৎ- দরজাটি তাওবাহ্কারীদের জন্য খোলা অথবা দরজা খোলা। তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়া ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার চিহ্ন।
(مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ مِنْ قِبَلِه) ইবনুল মালিক বলেন, এটি প্রকৃত দরজা হওয়ার সম্ভাবনা আছে আর এটিই প্রকাশমান অর্থ। আর দরজা বন্ধ থাকার উপকারিতা হল, মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) তাওবার দরজা বন্ধ হওয়া সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দরজার বিষয়টি উদাহরণস্বরূপও হতে পারে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তাওবার দরজা মানুষের জন্য খোলা এমতাবস্থায় তারা প্রশস্ততার মাঝে অবস্থান করছে যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত না হবে। অতঃপর যখন পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হবে তখন তাওবার দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে তখন তাদের থেকে ঈমান, তাওবাহ্ কোন কিছু গ্রহণ করা হবে না। কেননা যখন তারা প্রত্যক্ষভাবে তা দেখবে, তখন ঈমান আনতে বাধ্য হয়ে যাবে এবং তাওবার প্রতি বাধ্য হয়ে যাবে তাই ঐ তাওবাহ, ঈমান কোন কাজে আসবে না যেমনিভাবে মৃত্যু উপস্থিত হওয়া ব্যক্তির তাওবাহ্, ঈমান কোন কাজে আসবে না। আর দরজা বন্ধের বিষয়টি যখন পশ্চিম দিকে তখন দরজা খোলার বিষয়টিও পশ্চিম দিকেই হবে।
(وَذٰلِكَ) অর্থাৎ- পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া তাওবাহ্ গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধক।
يَوْمَ يَأْتِىْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ অর্থাৎ- কিয়ামাতের ব্যাপারে প্রমাণ বহনকারী তার কতিপয় নিদর্শন। অথবা কিয়ামাত যখন নিকটবর্তী হবে তখন তোমার পালনকর্তা কতিপয় নিদর্শনাবলী প্রকাশ করবেন। আর তা হল, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া।
لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ ‘‘যে আত্মা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি’’। অর্থাৎ- তার কতিপয় নিদর্শন আসার পূর্বে। আর তা হল উল্লেখিত উদয় এবং নিদর্শনের পূর্ণতা। অথবা যদি সে তার ঈমানের ক্ষেত্রে কল্যাণ অর্জন করে না থাকে, অর্থাৎ- তার ঈমান গ্রহণের সুযোগ থাকাবস্থায় তাওবাহ্ করে না থাকে। আর এ নিরূপণের মাধ্যমে হাদীস এবং আয়াতের মাঝে পূর্ণ সামঞ্জস্যতা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ঈমান ও তাওবাহ্ অর্জনের সময় ঈমান ও তাওবাহ্ উপকারে না আসার এবং সূর্য উদিত হওয়াকে স্বচক্ষে অবলোকন করা মৃত্যু উপস্থিত হওয়াকে স্বচক্ষে অবলোকন করার মতো- এ উক্তিটি কারীর।
ইমাম ত্বীবী বলেন, কোন নাফসের উপকারে আসবে না তার ঈমান আনয়ন করা যে নাফস্ ইতিপূর্বে ঈমান আনেনি। অথবা ঈমানের ক্ষেত্রে তার কোন কল্যাণ অর্জন করা কাজে আসবে না যদি ইতিপূর্বে ঈমান এনে না থাকে। অথবা ঈমানের ক্ষেত্রে কোন কল্যাণ অর্জন করে না থাকে।
সফ্ওয়ান থেকে যির কর্তৃক ইবনু মাজাহ্’র শব্দ। সফ্ওয়ান বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই সূর্য অস্তমিত হওয়ার দিকে একটি খোলা দরজা আছে যার প্রশস্ততা সত্তর বছর পথ অতিক্রমের সমান। সেই দরজা সর্বদা তাওবার জন্য খোলা থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হবে। আর যখন সূর্য পশ্চিমদিক থেকে উদিত হবে। তখন ঐ নাফসে্র জন্য ঈমান কোন কাজে আসবে না যদি ইতিপূর্বে ঈমান এনে না থাকে। অথবা তার ঈমানের ক্ষেত্রে কল্যাণ উপার্জন না করে থাকে।
২৩৪৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৬
وَعَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتّٰى يَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا». رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِىُّ
মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হিজরতের ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে না ততকক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তাওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয় না হওয়া পর্যন্ত। (আহমদ, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[১]
(حَتّٰى يَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ) উক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য, অর্থাৎ- তাওবাহ্ গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম ও তার শারী‘আতের পরিসমাপ্তি ঘটা। আর তা পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার সময় ঘটবে।
ইবনুল মালিক বলেন, এখানে হিজরত দ্বারা কুফর থেকে ঈমানের দিকে হিজরত করা উদ্দেশ্য এবং শিরক রাষ্ট্র থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে, অবাধ্যতা থেকে তাওবার দিকে হিজরত করা উদ্দেশ্য। ইমাম ত্বীবী বলেন, এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মাদীনার দিকে হিজরত করা উদ্দেশ্য করেননি। কেননা তা শেষ হয়ে গেছে। পাপ থেকে হিজরত করাও উদ্দেশ্য নয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মুহাজির ঐ ব্যক্তি যে গুনাহ এবং পাপ কাজ ত্যাগ করেছে। কেননা এটি প্রকৃত তাওবাহ্। সুতরাং তা বারংবার তাকে আবশ্যক করছে। সুতরাং বিষয়টিকে এমন স্থান থেকে হিজরত করার উপর চাপিয়ে দেয়া আবশ্যক হবে যেখানে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা, সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎকাজের নিষেধ করা সম্ভব নয়।
খাত্ত্বাবী বলেন, ইসলামের শুরুতে হিজরত ফরয ছিল, এরপর তা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মাদীনাতে হিজরতের সময় মুসলিমদের ওপর তা ওয়াজিব হল এবং মুসলিমদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হিজরত করতে নির্দেশ দেয়া হল যাতে যখন কোন বিপদ সংঘটিত হবে তখন যেন তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী হতে পারে। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে তাদের দ্বীনের বিষয় শিক্ষালাভ করতে পারে। আর ঐ যুগে বড় ভয় ছিল মক্কাবাসীর তরফ থেকে। অতঃপর যখন মক্কা নগরী বিজিত হল এবং আনুগত্যে নতি স্বীকার করল তখন ঐ উদ্দেশ্য রহিত হয়ে গেল, হিজরতের আবশ্যকতা উঠে গেল এবং হিজরতের ব্যাপারটি মুস্তাহাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করল। সুতরাং বাতিল হয়ে যাওয়া হিজরত বলতে হিজরতের আবশ্যকতা বাতিল হয়ে গেছে এবং ইবুন ‘আব্বাস-এর হাদীসের সানাদ পরম্পরা ও বিশুদ্ধ হওয়ার উপর ভিত্তি করে হিজরত মুস্তাহাব হওয়ার হুকুম বাকী আছে।
(وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ) অর্থাৎ- তাওবার বিশুদ্ধতা ও তার গ্রহণযোগ্যতা অথবা তাওবাহ্ গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর শারী‘আত রহিত হয়নি।
২৩৪৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৭
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ رَجُلَيْنِ كَانَا فِىْ بَنِىْ إِسْرَائِيلَ مُتَحَابَّيْنِ أَحَدُهُمَا مُجْتَهِدٌ لِلْعِبَادَةِ وَالْاٰخَرُ يَقُولُ: مُذْنِبٌ فَجَعَلَ يَقُولُ: أَقْصِرْ عَمَّا أَنْتَ فِيهِ فَيَقُولُ خَلِّنِىْ وَرَبِّىْ حَتّٰى وَجَدَه يَوْمًا عَلٰى ذَنْبٍ اسْتَعْظَمَه فَقَالَ: أَقْصِرْ فَقَالَ: خَلِّنِىْ وَرَبِّىَ أَبُعِثْتَ عَلَىَّ رَقِيبًا؟ فَقَالَ: وَاللّٰهِ لَا يَغْفِرُ اللّٰهُ لَكَ أَبَدًا وَلَا يُدْخِلُكَ الْجَنَّةَ فَبَعَثَ اللّٰهُ إِلَيْهِمَا مَلَكًا فَقَبَضَ أَرْوَاحَهُمَا فَاجْتَمَعَا عِنْدَه فَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اُدْخُلِ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِىْ وَقَالَ لِلْاٰخَرِ: أَتَسْتَطِيعُ أَنْ تَحْظِرَ عَلٰى عَبْدِىْ رَحْمَتِىْ؟ فَقَالَ: لَا يَا رَبِّ قَالَ: اذْهَبُوْا بِه إِلَى النَّارِ». رَوَاهُ أَحْمَدُ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে দু’ ব্যক্তি পরস্পর বন্ধু ছিল। তাদের একজন ছিল বড় ‘আবিদ আর অন্যজন ছিল গুনাহগার। ‘আবিদ তাকে বলত, তুমি যেসব (গুনাহের) কাজে লিপ্ত আছো তা হতে বিরত থাক। গুনাহগার বলত, আমাকে আমার ‘রবের’ কাছে ছেড়ে দাও। পরিশেষে একদিন ‘আবিদ গুনাহগার ব্যক্তিকে এমন একটি বড় গুনাহের কাজে লিপ্ত পেলো, যা তার কাছে খুবই গুরুতর বলে মনে হল এবং বলল, বিরত থাকো। সে বলল, আমাকে আমার ‘রবের’ কাছে ছেড়ে দাও। তোমাকে কী আমার জন্য পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? ‘আবিদ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! তোমাকে কক্ষনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। সে তাদের উভয়ের রূহ কবয করল। তারা উভয়েই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলো। তখন গুনাহগার ব্যক্তিকে আল্লাহ বললেন, আমার রহমাতের মাধ্যমে তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো। আর ‘আবিদ ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি আমাকে আমার বান্দার প্রতি রহম করতে বাধা দিতে পারো? সে বলল, ‘না, হে রব’। তখন আল্লাহ বললেন, একে জাহান্নামে প্রবেশ করাও। (আহমাদ)[১]
(وَالْاٰخَرُ يَقُولُ: مُذْنِبٌ) অন্যের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে পাপী। ত্বীবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি مُجْتَهِدٌ لِلْعِبَادَةِ এর সামঞ্জস্য হওয়ার্থে কথাটি এভাবে বলাও সম্ভব যে, والاخر منهمك فى الذنب অর্থাৎ- পক্ষান্তরে অন্য ব্যক্তি গুনাহে নিমজ্জিত। মাযহার বলেন, অন্যজন বলেন, انا مذنب অর্থাৎ- গুনাহের স্বীকারকারী। কারী এবং শায়খ দেহলবী বলেন, আমি বলব, হাদীসের বাচনভঙ্গি অনুপাতে এটিই স্পষ্ট। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, (فكان أحدهما يذنب والاخر مجتهد فى العبادة অতঃপর তাদের একজন পাপ করত অন্যজন ‘ইবাদাত চেষ্টাকারী।) এ অংশটুকু যা আবূ দাঊদে রয়েছে তা প্রথম মতটিকে সমর্থন করছে।
(فَجَعَلَ يَقُولُ: أَقْصِرْ) অর্থাৎ- ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারী পাপীকে বলত তুমি পাপ কাজে হ্রাস কর, বর্জন করা। অর্থাৎ- মাজ্‘উল ইকসার গ্রন্থকার বলেন, الإقصار কোন জিনিসের উপর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করা থেকে বিরত থাকা। পক্ষান্তরে যে জিনিস করার ব্যাপারে ব্যক্তি অক্ষম সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি আলিফ ছাড়া قصرت শব্দ প্রয়োগ করে। আবূ দাঊদে আছে, অতঃপর ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারী ব্যক্তি সর্বদা অপর ব্যক্তিকে পাপে লিপ্ত দেখে বলত তুমি তোমার পাপে হ্রাস কর, অর্থাৎ- বর্জন কর।
(أَبُعِثْتَ عَلَىَّ رَقِيبًا) অর্থাৎ- আল্লাহ কি তোমাকে আমার ওপর সংরক্ষণকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন? লোকটি যেন যখন গুনাহ করত তখন তার প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত ও ওযর পেশ করত। এ কারণে এই হাদীসটি ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যশীল। হাদীসটির বাচনভঙ্গির বাহ্যিক দিক হল, লোকটিকে কেবল তার রবের অনুগ্রহ, দয়ার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। সুতরাং এ হাদীসটিকে ঐ অধ্যায়ে উল্লেখ করাই সামঞ্জস্য হবে যা এ অধ্যায়ের কাছাকাছি অধ্যায়। কেননা তাতে উল্লেখিত হাদীসসমূহ আল্লাহ তা‘আলার রহমাতের প্রশস্ততার উপর প্রমাণ বহন করে। যেমন তা গোপন নয়। (فقال) অর্থাৎ- অতঃপর ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারী ব্যক্তি তার সাথীর ‘আমালসমূহে আশ্চর্যান্বিত হয়ে এবং বড় অপরাধে জড়িত হওয়ার কারণে তার সাথীকে তুচ্ছ ভেবে বলল।
(وَلَا يُدْخِلُكَ الْجَنَّةَ) আবূ দাঊদের কপিতে আছে, (أولا يدخلك الله الجنة) অথবা আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। এভাবে কানয গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডের ১৪২ পৃষ্ঠাতে উল্লেখিত সংঘটিত হয়েছে।
(فَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اُدْخُلِ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِىْ) অর্থাৎ- আমার প্রতি তোমার ভাল ধারণার বদলা স্বরূপ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
(وَقَالَ لِلْاٰخَرِ) উল্লেখিত অংশে মুজতাহিদ সম্পর্কে বিশ্লেষণ ত্যাগ করাতে দাগ রয়েছে যা গোপন নয়। আর তা হল, নিশ্চয়ই ‘ইবাদাতে তার চেষ্টা করা, তার অল্প ‘আমাল, তার রবের গুণাবলী সম্পর্কে অল্প পরিচিতি, অপরাধীর ‘আমালের ব্যাপারে তার আশ্চর্যান্বিত হওয়া, তার কসম খাওয়া এবং আল্লাহর ওপর তার হুকুম দেয়া যে, তিনি অপরাধীকে ক্ষমা করবেন না- এ সকল কারণে তার ‘আমাল নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে তার বিষয়টি পরিবর্তিত হয়ে অন্যের জন্য হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে পাপী ব্যক্তি তার ভাল ‘আক্বীদাহ্ তার রব সম্পর্কে ভাল ধারণা, অবাধ্য কাজের মাধ্যমে কমতির ব্যাপারে তার স্বীকারোক্তির দ্বারা ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারীর মর্যাদা দখল করেছে।
(عَلٰى عَبْدِىْ رَحْمَتِىْ) অর্থাৎ- যা দুনিয়াতে প্রতিটি বস্ত্তকে পরিব্যাপৃত করে নিয়েছে এবং পরকালে বিশেষভাবে মু’মিনদেরকে। (اذْهَبُوْا بِه) অর্থাৎ- জাহান্নামের ব্যাপারে নিয়োজিত মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’কে (ফেরেশতাগণকে) বলা হবে।
(إِلَى النَّارِ) আমার ওপর তার দুঃসাহস দেখানো, তার কসম খাওয়া, আমার ওপর তার ফায়সালা করা যে, আমি অপরাধীকে ক্ষমা করব না, অপরাধীর ‘আমালের ব্যাপারে তার আশ্চর্য হওয়া এবং তার সাথীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণে বদলাস্বরূপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া হল। ব্যক্তিটি জাহান্নামের চিরস্থায়ী হওয়ার জন্য ব্যক্তির কুফরের ব্যাপারে হাদীসে কোন দলীল নেই। আর আবূ দাঊদের শব্দ, অতঃপর তিনি ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারীকে বললেন, তুমি কি আমার ব্যাপারে জানতে (যার কারণে তুমি শপথ করে কসম খেয়েছ যে, আমি তাকে ক্ষমা করব না এবং আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব না)। অর্থাৎ- আমার হাতে যা আছে সে ব্যাপারে তুমি কি আমার ওপর ক্ষমতাবান (ফলে তা থেকে তুমি আমাকে বাধা দিবে) এবং পাপীকে বললেন, তুমি যাও, আমার রহমাতের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর এবং অপর ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। ইমাম আহমাদ একে বর্ণনা করেছেন, আবূ দাঊদও একে শিষ্টাচার পর্বের ব্যভিচার থেকে বিরত থাকা অধ্যায়ে সংকলন করেছেন যা ‘আলী বিন সাবিত আল জাযারী ‘ইকরিমাহ্ বিন ‘আম্মার থেকে আর ‘ইকরিমাহ্ যমযম বিন জাওস থেকে আর যমযম আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আর এ সানাদ সহীহ অথবা হাসান। আবূ দাঊদ এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। ‘আলী বিন সাবিত আল জাযারী নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী। আযদী (রহঃ) একে বিনা প্রমাণে দুর্বল বলেছেন। ‘ইকরিমাহ্ বিন ‘আম্মার আল ‘আযলী সত্যবাদী, যমযম বিন জাওস আল হাফানী ইয়ামামী নির্ভরযোগ্য।
২৩৪৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৮
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يقْرَأ: ﴿يَاعِبَادِىَ الَّذِىْ أَسْرَفُوْا عَلَى انْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا﴾. وَلَا يُبَالِىْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ وَقَالَ هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَفِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ يَقُولُ: بَدَلَ: يَقْرَأ
আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরআন মাজীদের এ আয়াত পড়তে শুনেছি, ‘‘ইয়া- ‘ইবা-দিয়াল্লাযী আসরফূ ‘আলা- আনফুসিহিম লা- তাকনাত্বূ মির্ রহমাতিল্লা-হি, ইন্নাল্ল-হা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা জামী‘আ-’’ (অর্থাৎ- ‘‘হে বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন’’- সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ কারো পরোয়া করেন না। (আহমদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গারীব; আর শারহুস্ সুন্নাহ্’য় রয়েছে يَقْرَأ (পড়েছেন) এর পরিবর্তে يَقُولُ (বলেছেন)। [১]
يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا অর্থাৎ- তাওবার মাধ্যমে কাফিরদের গুনাহসমূহ এবং তাওবাহ্ অথবা স্বেচ্ছায় মুসলিমদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন। জানা দরকার ‘আলিম সম্প্রদায় মতানৈক্য করেছে এ আয়াতটি কি তাওবার সাথে শর্তযুক্ত যে, তাওবাহকারীদের গুনাহ ছাড়া কারো গুনাহ ক্ষমা করা হবে না, নাকি আয়াতটি মুত্বলাকব বা বাঁধনমুক্ত? তাফসীরকারদের একটি দল প্রথমটির দিকে গিয়েছেন।
হাফেয ইবনু কাসীর বলেন, এ আয়াতটি সমস্ত অবাধ্যদেরকে কুফর এবং অন্যান্য পাপ থেকে তাওবাহ্ প্রত্যাবর্তন এবং সংবাদ দেয়ার দিকে আহবান করছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করে এবং ফিরে আসে। সে গুনাহ যা-ই হোক না কেন, যতই বেশি হোক না কেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়ে থাকে। এ আয়াতটিকে তাওবাহ্ ছাড়া ‘আম্ অবস্থার উপর চাপিয়ে দেয়া বিশুদ্ধ হবে না। কেননা শির্ক এমন এক গুনাহ যে ব্যক্তি এর থেকে তাওবাহ্ করবে না তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে না।
এরপর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু মুশরিক অধিক পরিমাণ হত্যা কাজ সংঘটিত করে অধিক পরিমাণ যিনা-ব্যভিচার করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলো। অতঃপর তারা বলল, নিশ্চয়ই আপনি যা বলছেন এবং যে দিকে আহবান করছেন তা অবশ্যই ভাল। আপনি যদি আমাদেরকে অবহিত করেন যে, আমরা যা ‘আমাল করেছি তার কাফফারা আছে। তখন এ আয়াত (অর্থাৎ- ‘‘আর যারা আল্লাহর পথে অন্য উপাস্যকে আহবান করে না, হারাম পন্থায় কোন নাফসকে হত্যা করে না তবে ন্যায়সঙ্গত কারণে এবং ব্যভিচার করে না’’- সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৬৮) এবং এ আয়াত (অর্থাৎ- ‘‘হে নাবী! আপনি বলুন, হে বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) অবতীর্ণ হয়। বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসায়ী একে সংকলন করেছেন।
ইবনু কাসীর বলেন, প্রথম আয়াতটির উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর তা‘আলার বাণী (অর্থাৎ- ‘‘তবে যে ব্যক্তি তাওবাহ্ করবে ঈমান আনবে, সৎকর্ম করবে’’- সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৭০)। এরপর তিনি তৃতীয় অনুচ্ছেদে আগত সাওবান-এর হাদীস এবং আসমা-এর হাদীস যার ব্যাখ্যাতে ইবনু কাসীর বলেনঃ এ সকল হাদীসসমূহ ঐ উদ্দেশের উপর প্রমাণ বহন করে যে, তিনি তাওবার মাধ্যমে সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন। এমতাবস্থায় কোন বান্দা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হতে পারে না যদিও তার গুনাহ বড় এবং অধিক হয়। কেননা রহমাত এবং তাওবার দরজা প্রশস্ত। অতঃপর ইবনু কাসীর ঐ সকল আয়াত ও হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন যা ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাওবার দিকে উৎসাহ প্রদান করে। জামাল বলেন, (৭২৪ পৃষ্ঠা) এ আয়াতটি প্রত্যেক ঐ কাফির ব্যক্তির ব্যাপারে ব্যাপক যে তাওবাহ্ করে এবং ঐ অবাধ্য মু’মিন ব্যক্তির ব্যাপারে যে তাওবাহ্ করে, অতঃপর তার তাওবাহ্ তার গুনাহকে মুছে দেয়। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, ঐ ব্যাপারে সতর্ক করা যে, পাপীর জন্য এ ধারণা করা উচিত হবে না যে, শাস্তি থেকে তার পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস রাখবে সে আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ, কেননা যে কোন অবাধ্য ব্যক্তি যখনই তাওবাহ্ করবে তার শাস্তি দূর হয়ে যাবে এবং সে ক্ষমা ও দয়াপ্রাপ্তদের আওতাভুক্ত হবে। সুতরাং إِنَّ اللّٰهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا এ আয়াতের অর্থ হল যখন সে তাওবাহ্ করবে এবং তার তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হবে তখন তার গুনাহসমূহ মুছে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাওবার করার পূর্বে মারা যাবে সে এ ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে ন্যস্ত। তাকে তার গুনাহ পরিমাণ শাস্তি দিবেন এরপর নিজ কৃপা অনুযায়ী তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সুতরাং প্রত্যেকের ওপর আবশ্যক তাওবাহ্ করা। কেননা শাস্তির আশংকা বিদ্যমান। এরপর হতে পারে আল্লাহ তাকে শর্তহীনভাবে ক্ষমা করবেন আবার হতে পারে তাকে শাস্তি দেয়ার পর ক্ষমা করবেন।
আর ইবনুল কইয়্যিম সূরা আয্ যুমার-এর আয়াতটি তাওবার সাথে শর্তযুক্ত হওয়ার প্রতি মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন তিনি ‘‘আল জাওয়াব আল কাফী’’ গ্রন্থের ১৬ পৃষ্ঠাতে বলেছেন। মাদারিজুস সালিক্বীন-এ (১ম খণ্ডে ৩৯৪ পৃষ্ঠাতে) নিশ্চয়ই এ আয়াতটি তাওবাহকারীদের ব্যাপারে এবং আল্লাহর বাণী إِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِه ‘‘নিশ্চয়ই শির্কের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।’’ তাওবাহকারী ছাড়া অন্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেউ ঐ দিকে গিয়েছেন যে, আয়াতটি মুত্বলাক বা বাঁধনমুক্ত। ‘আল্লামা আল কানূজী আল ভূপালী ফাতহুল বায়ানে (৮ম খণ্ডে ১৬৬ পৃষ্ঠাতে) বলেন, আর হক হল, আয়াতটি তাওবার সাথে শর্তযুক্ত নয়, বরং তা মুত্বলাক বা বাঁধনমুক্ত। ইমাম শাওকানীও এ মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন তিনি ফাতহুল কাদীরে বলেন, (৪র্থ খণ্ড- ৪৫৬,৪৫৭ পৃষ্ঠা) ألف এবং لام বহুবচনে পরিণত হয়েছে। ألف ও لام যে ذنوب শব্দের উপর প্রবেশ করেছে মূলত তা ذنوب শব্দের জাত বুঝানোর জন্য, যা ذنوب শব্দের এককসমূহের পরিব্যাপ্তকে আবশ্যক করছে। সুতরাং ‘‘তা’’ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক গুনাহ যা-ই হোক না কেন ক্ষমা করবেন- এ কথাকে শক্তিশালী করছে। তবে কুরআনী ভাষ্য যা বর্ণনা করছে তা ছাড়া। আর তা হল (অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শির্ক করার গুনাহ ক্ষমা করেন না তবে এ ছাড়া অন্য যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’’- সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮। এ আয়াতে উল্লেখিত শির্ক ক্ষমা করেন না। এর অর্থ হলো শির্ক গুনাহ তাওবাহ্ ছাড়া ক্ষমা করেন না। অতঃপর তিনি প্রত্যেক গুনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে বান্দাদেরকে যে সংবাদ দিয়েছেন তাতে যথেষ্ট হননি বরং একে তিনি তার جميعا উক্তি দ্বারা গুরুত্বারোপ করেছেন। শাওকানী বলেন, এ আয়াত এবং আল্লাহর إِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ এ বাণীর সমন্বয় বিধান হল, শির্ক ছাড়া যত গুনাহ আছে সকল গুনাহ আল্লাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করেন। আর তা নিশ্চয়ই আমাদেরকে আল্লাহর দেয়া সংবাদ যে, তিনি সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন- এ সংবাদটুকু আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করার ইচ্ছা করেন উপর প্রমাণ বহন করছে। এ কথা বলা এর সম্ভব হওয়ার উপর ভিত্তি করছে। আর এটি আবশ্যক করছে যে, আল্লাহ তিনি প্রত্যেক মুসলিম অপরাধীকে ক্ষমা করবেন। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকে দু’ আয়াতের মাঝে মতবিরোধ অবশিষ্ট থাকল না। তিনি বলেন, যদি এই মহাশুভ সংবাদ তাওবার সাথে সংযুক্ত থাকত তাহলে তাওবার অধিক ক্ষেত্র থাকত না। কেননা মুসলিমদের ঐকমত্যে মুশরিক যে পরিমাণ শির্ক করে তা আল্লাহ তার তাওবাহ্ করার কারণে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮) সুতরাং ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তাওবাহ্ করা যদি শর্তযুক্ত হত তাহলে শির্কের ব্যাপারে আলাদা ভাষ্য আনার কোন প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা থাকত না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই আপনার প্রভু মানুষদেরকে তাদের অন্যায়ের ব্যাপারে ক্ষমাকারী।
ওয়াহিদী বলেন, তাফসীরকারকগণ বলেন, নিশ্চয়ই এ আয়াতটি এমন এক সম্প্রদায়ের ব্যাপারে যারা ভয় করেছিল যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাদের ঐ সকল গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে না যা তারা শির্ক, মানুষ হত্যা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শত্রুতা পোষণ করার মতো বড় বড় গুনাহ করেছে।
ওয়াহিদী আরো বলেন, আল্লাহর এ বাণী (অর্থাৎ- ‘‘আর তোমরা তোমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ কর তোমাদের কাছে শাস্তি আসার পূর্বে, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না’’- সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৪) এসেছে। এতে এমন কিছু নেই যা তাওবার মাধ্যমে প্রথম আয়াতের গন্ডিবদ্ধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। বরং এ আয়াতে যা আছে তার চূড়ান্ত পর্যায় হল, নিশ্চয়ই তিনি তাদেরকে ঐ মহা শুভসংবাদের মাধ্যমে শুভসংবাদ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে কল্যাণের প্রতি এবং অকল্যাণকে ভয় করার প্রতি আহবান করেছেন।
مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ অর্থাৎ- দুনিয়ার শাস্তি। অর্থাৎ- হত্যা, বন্দী, কঠোরতা, ভয়, দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে শাস্তি। পরকালের শাস্তি উদ্দেশ্য নয়। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, আয়াতটি দু’টি উক্তির সম্ভাবনা রাখছে তবে আয়াতের বাচনভঙ্গি ইবনু কাসীর এবং তার সমর্থকগণ যা বলেছেন তাকে সমর্থন করে। পক্ষান্তরে ইমাম শাওকানী ঐ বাচনভঙ্গির অপব্যাখ্যাতে যা উল্লেখ করেছেন তাতে স্পষ্ট কৃত্রিমতা রয়েছে। তবে আমার কাছে প্রণিধানযোগ্য উক্তি হল মুসলিমদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা তাওবার সাথে শর্তযুক্ত নয়, বরং তা তাওবাহ্ এবং স্বেচ্ছাধীন উভয়ভাবে ক্ষমা করা হবে।
(وَلَا يُبَالِىْ) অর্থাৎ- কাউকে তিনি পরোওয়া করেন না, কেননা আল্লাহর ওপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। একমতে বলা হয়েছে, তিনি তার প্রশস্ততা করুণা থাকা এবং তার পরোওয়া না থাকার কারণে সকল গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে তিনি কাউকে পরোওয়া করেন না। আহমাদ তার বর্ণনাতে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন আর তা হল (إنه هو الغفور الرحيم) এ বর্ণনা থেকে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হল (ولا يبالى) উক্তি কুরআনের আওতাভুক্ত ছিল, এজন্য মাদারিক গ্রন্থকার এ আয়াতের অধীনে এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিরাআতে (يغفر الذنوب جميعا ولا يبالى) অংশটুকু বলেছেন। কারী বলেন, তা আরো সম্ভাবনা রাখছে যে, তা আয়াতের আওতাভুক্ত ছিল, অতঃপর তা রহিত করা হয়েছে এবং আয়াতের তাফসীরস্বরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরফ থেকে অতিরিক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
২৩৪৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৪৯
وَعَن ابْن عَبَّاس: فِىْ قَوْلِه تَعَالٰى: (إِلَّا اللَّمَمَ) قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنْ تَغْفِرْ اَللّٰهُمَّ تَغْفِرْ جَمَّا وَأَىُّ عَبْدٍ لَكَ لَا أَلَمَّا. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ. وَقَالَ: هٰذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর কালামের এ বাণী, ‘‘ইল্লাল্লামামা’’ অর্থাৎ- ‘‘সগীরাহ্ গুনাহ ছাড়া’’। এক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! যদি তুমি ক্ষমা করো, ক্ষমা করো বড় গুনাহ। কেননা এমন কোন বান্দা আছে কি, যে সগীরাহ্ গুনাহ করেনি। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব)[১]
(قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি সগীরাহ্ গুনাহ থেকে মুক্ত না এর সমর্থন, (إِنْ تَغْفِرْ اَللّٰهُمَّ تَغْفِرْ جَمَّا) অর্থাৎ- অনেক বড় (وأى عبد لك لا ألما), অর্থাৎ- কোন বান্দা নিষ্পাপ নয়। পংতিটি উমাইয়্যাহ্ বিন আবিস্ সালত-এর জাহিলী যুগে যে ‘ইবাদাতগুজার ছিল, পুনরুত্থানে বিশ্বাসী ছিল ইসলামী যুগ পেয়েছিল তবে ইসলাম গ্রহণ করেনি। তার কবিতা বিভিন্ন উপদেশাবলী ও বাস্তবতাকে শামিল করার দরুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবিতাকে ভালবাসতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবিতাংশকে উচ্চারণ করার দরুন তা হাদীসে পরিণত হয়েছে। وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْبَغِيْ لَه (সূরা ইয়াসীন ৩৬ : ৬৯) আল্লাহর এ বাণীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবিতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে আর তা দ্বারা উদ্দেশ্য কবিতা তৈরি করা আবৃত্তি করা নয়। আর এটিই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ- আপনার ব্যাপার হল বড়, অনেক গুনাহসমূহ ক্ষমা করা, উপরন্তু ছোট গুনাহসমূহ ক্ষমা করা। কেননা ছোট গুনাহসমূহ থেকে কেউ মুক্ত থাকতে পারে না। আর নিশ্চয়ই তা পুণ্য কর্মের মাধ্যমে মোচন হয়ে যায়।
ইমাম ত্বীবী বলেন, হে আল্লাহ! আপনার মর্যাদা হল বড় বড় গুনাহ থেকে অনেক গুনাহ ক্ষমা করা। পক্ষান্তরে ছোট অপরাধসমূহ আপনার দিকে সম্বন্ধ করা হয় না, কেননা তা থেকে কেউ মুক্ত নয়, নিশ্চয়ই তা কাবীরাহ্ গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মোচন হয়ে যায়।
২৩৫০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫০
وَعَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: يَقُولُ اللّٰهُ تَعَالٰى يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُ فَاسْأَلُونِى الْهُدٰى أَهْدِكُمْ وَكُلُّكُمْ فُقَرَاءُ إِلَّا مَنْ أَغْنَيْتُ فَاسْأَلُونِىْ أُرْزَقْكُمْ وَكُلُّكُمْ مُذْنِبٌ إِلَّا مَنْ عَافَيْتُ فَمَنْ عَلِمَ مِنْكُمْ أَنِّىْ ذُو قُدْرَةٍ عَلَى الْمَغْفِرَةِ فَاسْتَغْفَرَنِىْ غَفَرْتُ لَه وَلَا أُبَالِىْ وَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَاٰخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوْا عَلٰى اَتْقٰى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِىْ مَا زَادَ فِىْ مُلْكِىْ جَنَاحَ بَعُوْضَةِوَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَاٰخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوْا عَلَى اشْقٰى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِىْ مَا نَقَصَ ذٰلِكَ مِنْ مُلْكِىْ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ. وَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَاٰخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوْا فِىْ صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلَ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْكُمْ مَا بَلَغَتْ أُمْنِيَّتُه فَأَعْطَيْتُ كُلَّ سَائِلٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذٰلِكَ مِنْ مُلْكِىْ إِلَّا كَمَا لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ مَرَّ بِالْبَحْرِ فَغَمَسَ فِيهِ إِبْرَةً ثُمَّ رَفَعَهَا ذٰلِكَ بِأَنِّىْ جَوَادٌ مَاجِدٌ أَفْعَلُ مَا أُرِيدُ عَطَائِىْ كَلَامٌ وَعَذَابِىْ كَلَامٌ إِنَّمَا أَمْرِىْ لِشَىْءٍ إِذَا أَرَدْتُ أَنْ أَقُولَ لَه (كُنْ فَيَكُونُ). رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের সকলেই পথহারা, কিন্তু তারা ছাড়া যাদেরকে আমি পথ দেখিয়েছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে পথের সন্ধান চাও, আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। তোমাদের সকলেই অভাবগ্রস্ত, তারা ছাড়া যাদেরকে আমি অভাবমুক্ত করেছি। অতএব তোমরা আমার কাছে চাও আমি তোমাদেরকে রিযক দান করব। তোমাদের সকলেই পাপী, তারা ছাড়া যাদেরকে আমি নিরাপদে রেখেছি। অতঃপর তোমাদের যে বিশ্বাস স্থাপন করে, আমি ক্ষমা করে দেয়ার শক্তি রাখি, সে যেন আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো, আর (এ ব্যাপারে) আমি কারো পরোয়া করি না। যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত, তোমাদের জীবিত ও মৃত তোমাদের কাঁচা ও শুকনো (শিশু ও বৃদ্ধ) সকলেই আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরহেজগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর হয়ে যায়, তথাপিও তা আমার সাম্রাজ্যের একটি মাছির পালক পরিমাণও বাড়াতে পারবে না।
আর যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ, জীবিত ও মৃত, কাঁচা ও শুকনো সকলেই আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতভাগ্য ব্যক্তির অন্তরের মতো এক অন্তর হয়ে যায়, তাও আমার সাম্রাজ্যের একটি মাছির পালক পরিমাণও কমাতে পারবে না। তোমাদের প্রথম ও শেষ, জীবিত ও মৃত, কাঁচা ও শুকনো সকলেই যদি এক প্রান্তসীমায় জমা হয়, এরপর তোমাদের প্রত্যেকে তার ইচ্ছানুযায়ী আমার কাছে চায় (প্রার্থনা করে)। আর আমি তোমাদের প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে (প্রত্যাশা অনুযায়ী) দান করি, তা আমার সাম্রাজ্যে কিছুমাত্র কমাতে পারবে না। যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের কাছে গিয়ে যদি ওতে একটি সুঁই ডুবিয়ে ওঠায়। এটা এ কারণে যে, আমি বড় দাতা, প্রশস্ত দাতা; আমি যা ইচ্ছা তাই করি। আমার দান হলো, আমার কালাম মাত্র। আমার শাস্তি হলো, আমার হুকুম মাত্র। আর আমি কোন কিছু করতে চাইলে শুধু বলি, ‘হয়ে যাও’, তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। (আহমদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[১]
(إِلَّا مَنْ أَغْنَيْتُ) অর্থাৎ- আর ধনী ব্যক্তিও প্রত্যেক মুহূর্তে আবিষ্কার এবং সাহায্য দানের মুখাপেক্ষী হওয়ার দরুন মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ থেকে অমুখাপেক্ষী হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর আল্লাহ ধনী এবং তোমরা দরিদ্র।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮)
(إِلَّا مَنْ عَافَيْتُ) অর্থাৎ- নাবী এবং ওয়ালীদের মধ্য থেকে আমি যাকে রক্ষা করেছি সে ছাড়া। আর এটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, عافية বলতে গুনাহ থেকে নিরাপদে থাকা। আর গুনাহ থেকে নিরাপদে থাকা নিরাপত্তাসমূহের মাঝে সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ।
হাদীসটিতে কেবল ঐ ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য عافيت বলা হয়েছে যে, গুনাহ অস্তিত্বগত রোগ এবং তার সুস্থতা হল, গুনাহ থেকে ব্যক্তিকে আল্লাহ রক্ষা করা। অথবা কর্মের মাধ্যমে তোমাদের প্রত্যেকেই পাপী আর প্রত্যেকের পাপ তার স্থান অনুপাতে তবে ক্ষমা, রহমাত এবং তাওবার মাধ্যমে আমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছি সে ছাড়া।
(وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ) অর্থাৎ- তোমাদের যুবক এবং বৃদ্ধরা অথবা তোমাদের মাঝে জ্ঞানী এবং মূর্খ অথবা তোমাদের মাঝে আনুগত্যশীল এবং অবাধ্য। একমতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত শব্দদ্বয় দ্বারা সমুদ্র এবং স্থল, অর্থাৎ- সমুদ্র এবং স্থলের অধিবাসী। অথবা সমুদ্র এবং স্থলে বৃক্ষ, পাথর, মাছ এবং সকল প্রাণী থেকে যা কিছু আছে সব যদি এক হয়ে যায়।
একমতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত শব্দদ্বয় দ্বারা মানুষ এবং জিন উভয় উদ্দেশ্য হতে পারে আর তা ঐ অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে, তিনি জিনকে আগুন থেকে এবং মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর প্রথম অনুচ্ছেদে আবূ যার (রাঃ)থেকে বর্ণিত হাদীসে যে جنكم وإنسكم বর্ণনা এসেছে তা একে সমর্থন করছে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, উল্লেখিত শব্দদ্বয় পূর্ণাঙ্গ আয়ত্ব সম্পর্কে দু’টি্ ভাষ্য। যেমন (অর্থাৎ- ‘‘আর্দ্র, শুষ্ক সব কিছু আল্লাহর কিতাবে স্পষ্টভাবে লিখা আছে’’- সূরা আল আন্‘আম ৬ : ৫৯) আল্লাহর এ বাণীতে গন্ডিবদ্ধ।
(اجْتَمَعُوْا عَلٰى اَتْقٰى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِىْ) উল্লেখিত বাক্যাংশে أشقى বলতে অভিশপ্ত ইবলীস।
(بِأَنِّىْ جَوَادٌ) অনেক দানকারী। আর আহমাদের ৫ম খণ্ডে ১৭৭ পৃষ্ঠাতে এবং তিরমিযীতে এর পরে (واجد) আছে। আর واجد বলতে ঐ সত্তা যিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তিনি সাধারণ সর্বপ্রাপক কোন কিছু তার হাত ছাড়া হয় না।
(عَطَائِىْ كَلَامٌ وَعَذَابِىْ كَلَامٌ) অর্থাৎ- ‘‘আমার দান কথা বলা মাত্র, আমার শাস্তি কথা বলা মাত্র’’- এ বাণীর ব্যাখ্যা।
কাযী বলেন, অর্থাৎ- আমি শাস্তি অথবা দান হতে বান্দার নিকট যা পৌঁছাতে চাই সেক্ষেত্রে আমি ক্লান্তি এবং ‘আমাল চর্চা করার মুখাপেক্ষী নই, বরং তা অর্জন ও পৌঁছানোর জন্য সে ব্যাপারে কেবল ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট।
২৩৫১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫১
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ أَنَّه قَرَأَ ﴿هُوَ أَهْلُ التَّقْوٰى وَأَهْلُ الْمَغْفِرَةِ﴾ قَالَ: قَالَ رَبُّكُمْ أَنَا أَهْلٌ أَنْ أُتَّقٰى فَمَنِ اتَّقَانِىْ فَأَنَا أَهْلٌ أَنْ أَغْفِرَ لَه. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدَّارِمِىُّ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন তিনি (আল্লাহ তা‘আলার) এ আয়াত পড়লেন, ‘‘হুওয়া আহলুত্ তাকওয়া- ওয়া আহলুল মাগফিরহ্’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ হলেন ভয়ের অধিকারী ও মাগফিরাত করার মালিক)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের রব বলেন, আমি লোকের ভয় করার অধিকারী। তাই যে আমাকে ভয় করল, আমি তাকে মাফ করারও অধিকারী। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[১]
(أنا أهل أن اتقى) আহমাদ, ইবনু মাজাহ (فلا يجعل معى إلها أخر) এ অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন। ইবনু মাজাহ অপর বর্ণনাতে আছে, (أن اتبى فلا يشرك بى غيرى)।
(فَأَنَا أَهْلٌ أَنْ أَغْفِرَ لَه) অর্থাৎ- যে আমাকে ভয় করে চলবে তাকে। আহমাদ এবং ইবনু মাজাতে আছে, (فمن اتقى أن يجعل معى إلها أخر فأنا أهل أغفر له) ইবনু মাজার অপর বর্ণনাতে আছে, (وانا أهل لمن اتقى أن يشرك بى أن أغفر له) আর এটি আল্লাহর (إن الله لا يغفر أن يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء) এ বাণীকে শামিল করছে।
২৩৫২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫২
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: إِنْ كُنَّا لَنَعُدُّ لِرَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فِى الْمَجْلِسِ يَقُولُ: «رَبِّ اغْفِرْ لِىْ وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ» مِائَةَ مَرَّةٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একই মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসতিগফার একশ’বার গণনা করতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ‘‘রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ‘আলাইয়্যা ইন্নাকা আন্তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’ (অর্থাৎ- হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার তাওবাহ্ কবূল করো। কেননা তুমি তাওবাহ্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী।)। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[১]
এ বাণী অবলম্বনার্থে বলছেন। হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষমা প্রার্থনা করা দু‘আ শব্দের মাধ্যমে ছিল। বিদ্বানগণ এটিকে (استغفر الله) উক্তিকারীর উক্তির উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা যদি সে ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে উদাসীন থাকে বা প্রস্ত্তত না থাকে তাহলে তার ক্ষমা প্রার্থনা মিথ্যায় পরিণত হবে যা দু‘আর বিপরীত। কেননা কখনো দু‘আতে সাড়া দেয়া হয় যখন তা সময়ের অনুকূলে হয় যদিও তা উদাসীনতার সাথে সম্পন্ন হয়। এভাবে বিদ্বানগণ উক্তি করেছেন। আর এটি ঐ অবস্থার উপর নির্ভর করছে যে, উক্তিকারীর উক্তি (استغفر الله) খবর বা সংবাদ এবং তা অনুসন্ধানমূলক হওয়াও জায়িয। আর বাহ্যিকভাবে তাই বুঝা যাচ্ছে। আর সহীহ হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ) বর্ণিত হয়েছে। হ্যাঁ, এ উক্তিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যান্যদের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হবে। লাম্‘আহ্-তে এভাবে আছে।
(إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ) উভয় শব্দের মধ্যে আধিক্যতার অর্থের সমাবেশ আছে আর এটি আহমাদ এবং তিরমিযীর শব্দ এবং আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ এবং ইবনুস্ সুন্নীতে الغفور এর পরিবর্তে الرحيم শব্দ আছে। নাসায়ী ও ইবনু হিব্বান-এর এক বর্ণনাতেও এভাবে এসেছে।
২৩৫৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৩
وَعَن بِلَال بْنِ يَسَارِ بْنِ زَيْدٍ مَوْلَى النَّبِىِّ ﷺ قَالَ: حَدَّثَنِىْ أَبِىْ عَنْ جَدِّىْ أَنَّه سَمِعَ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: «مَنْ قَالَ: أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ غُفِرَ لَه وَإِنْ كَانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ لَكِنَّه عِنْدَ أَبِىْ دَاوُدَ هِلَالُ بْنُ يَسَارٍ وَقَالَ التِّرْمِذِىُّ: هٰذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ থেকে বর্ণিতঃ
বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। যে ব্যক্তি বলল, ‘
‘আস্তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি’’
(অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।)।
আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন, যদিও সে যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে যেয়ে থাকে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ। তবে আবূ দাঊদ বলেন, বর্ণনাকারীর নাম হলো হিলাল ইবনু ইয়াসার। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[১]
ইমাম নাবাবী (রহঃ) কিতাবুল আযকার-এ রবী' বিন খয়সাম থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রবী‘ বিন খায়সাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন (استغفر الله) এবং (اتوب اليه) না বলে, কারণ যদি সে তা না করে তাহলে তা পাপের কাজ ও মিথ্যায় পরিণত হবে। বরং সে বলবে (اللهم اغفرلى وتب على) অর্থৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার ওপর তাওবাহ্ কবূল কর।
নাবাবী (রহঃ) বলেন, আর এটি যা তিনি তার (اللهم اغفرلى وتب على) উক্তি থেকে বলেছেন তা ভাল। পক্ষান্তরে (استغفر الله) অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি- এ কথা বলার অপছন্দনীয়তা এবং তাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে আমরা একমত নই। কেননা (استغفر الله) এর অর্থ হল আমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি বা অনুসন্ধান করছি। এতে কোন মিথ্যার আশ্রয় নেই। এ ধরনের মত প্রত্যাখ্যানকরণে যে ব্যক্তি এ হাদীসটি বলবে, (استغفر الله الذى لا اله الا هو الخ ‘‘আমি ঐ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই যিনি ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই ..... শেষ পর্যন্ত’’) অর্থাৎ- বিলাল বিন ইয়াসার-এর ঐ হাদীস যার ব্যাখ্যাতে আমরা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি।
হাফেয বলেন, এ আলোচনা ছিল (استغفر الله الذى لا اله الا هو الحى القيوم) এ শব্দের ব্যাপারে। পক্ষান্তরে (اتوب اليه) এর ক্ষেত্রে তাই উদ্দেশ্য যা রবী‘আহ্ উদ্দেশ্য করেছেন; অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সে মিথ্যা বলল আর তা এভাবে যে, ব্যক্তি যখন (اتوب اليه) বলবে অথচ পৃকতপক্ষে সে তাওবাহ্ করবে না। রবী‘আহ্-এর কথা প্রত্যাখ্যানকরণে রবী‘আহ্-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করাতে দৃষ্টি দেয়ার আছে। আর তা এজন্য যে উক্তিকারী (اتوب اليه) থেকে তাওবাহ্ করা এবং তাওবার শর্তসমূহ সম্পন্ন করা উদ্দেশ্য নেয়াও জায়িয আছে। আরো সম্ভাবনা আছে, রবী‘আহ্ উভয় শব্দের সমষ্টিকে উদ্দেশ্য করেছেন বিশেষভাবে (استغفر الله)-কে উদ্দেশ্য করেননি। তখন তার সম্পূর্ণ কথা বিশুদ্ধ হবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞাত। এরপর হাফেয হালাবিয়াত থেকে সুবকী-এর কথা উল্লেখ করেছেন আর তা ২৩৫৮ নং হাদীসের ব্যাখ্যাতে উল্লেখ করা হয়েছে (من الزحف), অর্থাৎ- জিহাদ এবং যুদ্ধে শত্রুর সাক্ষাৎ থেকে। যদিও সে কাবারীহ্ গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাকে। কেননা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালয়ন করা কাবীরাহ্ গুনাহ। এ ব্যাপারে আল্লাহ উল্লেখিত আয়াত দ্বারা ধমক দিয়েছেন- وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللّٰهِ অর্থাৎ- ‘‘আর সেদিন যে ব্যক্তি পৃষ্ঠপদর্শন করে পলায়ন করবে যুদ্ধ কৌশল বা স্বীয় কেন্দ্রস্থলে স্থান করে নেয়া ব্যতীত সে আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করবে’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ১৬)।
২৩৫৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৪
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِى الْجَنَّةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَنّٰى لِىْ هٰذِه؟ فَيَقُولُ: بِاِسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ». رَوَاهُ أَحْمَدُ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হলো? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে। (আহমাদ)[১]
২৩৫৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৫
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَا الْمَيِّتُ فِى الْقَبْرِ إِلَّا كَالْغَرِيقِ الْمُتَغَوِّثِ يَنْتَظِرُ دَعْوَةً تَلْحَقُه مِنْ أَبٍ أَوْ أُمٍّ أَوْ أَخٍ أَوْ صَدِيقٍ فَإِذَا لَحِقَتْهُ كَانَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَإِنَّ اللّٰهَ تَعَالٰى لَيُدْخِلُ عَلٰى اَهْلِ الْقُبُورِ مِنْ دُعَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ أَمْثَالَ الْجِبَالِ وَإِنَّ هَدِيَّةَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ الْاِسْتِغْفَارُ لَهُمْ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মৃত ব্যক্তি হলো পানিতে পড়া ব্যক্তির মতো সাহায্যপ্রার্থী। সে তার পিতা-মাতা, ভাই-বন্ধুর দু‘আ পৌঁছার প্রতীক্ষায় থাকে। তার কাছে যখন দু‘আ পৌঁছে, তখন তার কাছে সারা দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে এ দু‘আ বেশি প্রিয় হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াবাসীদের দু‘আয় কবরবাসীদেরকে পাহাড় পরিমাণ রহমত পৌঁছান এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়্যাহ্ (উপহার) হলো তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়া। (বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান)[১]
(أَوْ صَدِيقٍ) আর এটা এমন কতিপয়ের সাথে নির্দিষ্ট যার কাছ থেকে সাহায্যের আশা করা যায় এবং অন্য অপেক্ষা যার কাছ থেকে অধিক দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনার আশা করা যায়। অন্যথায় হুকুম ব্যাপক। যেমন হাদীসের শেষে বলেছেন। অন্যান্য হাদীসসমূহে ولد এর উল্লেখ থাকার কারণে এ হাদীসে তা উল্লেখ করা হয়নি।
(أَمْثَالَ الْجِبَالِ) অর্থাৎ- ঐ দু‘আকে যদি আকৃতি দেয়া হয় তাহলে তা দয়া ও ক্ষমার পাহাড়সদৃশ হবে।
২৩৫৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৬
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «طُوبٰى لِمَنْ وَجَدَ فِىْ صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى النَّسَائِىُّ فِىْ «عَمَلُ اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ
আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৌভাগ্যবান হবে সে, যার ‘আমালনামায় ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়া বেশি পাওয়া যাবে। (ইবনু মাজাহ। আর ইমাম নাসায়ী তাঁর ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ্ ‘‘একদিন ও একরাতের ‘আমাল [কাজ]’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।)[১]
(اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا) ত্বীবী বলেন, যদি বলা হয় (طوبى لمن استغفر كثيرا) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করবে তার জন্য طوبى। কথাটি এভাবে কেন বলা হয়নি? আর এভাবে পরিবর্তন করে কেন বলা হল? আমি বলব, এটি ঐ ব্যাপারেই একটি ইঙ্গিতসূচক বিষয় ফলে তা দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সাথে অর্জন হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। কেননা ক্ষমা প্রার্থনাকারী যখন তার ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান না হবেন তখন তার ক্ষমা প্রার্থনা নিরর্থক হবে তখন সে তার ‘আমালনামাতে তার বিপক্ষে দলীল এবং তার প্রতিকূল হয় এমন বিষয় ছাড়া আর কিছুই পাবে না। ত্ববারানী আওসাত গ্রন্থে যুবায়র বিন ‘আও্ওয়াম থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার ‘আমালনামা তাকে আনন্দ দিক সে যেন তার ‘আমালনামাতে ক্ষমা প্রার্থনাকে বৃদ্ধি করে। হায়সামী বলেন, এর সানাদের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য বায়হাক্বীও একে বর্ণনা করেছেন। মুনযিরী বলেন, এর সানাদে কোন দোষ নেই।
২৩৫৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৭
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ يَقُولُ: «اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ الَّذِينَ إِذا أحْسَنُوْا اِسْتَبْشَرُوْا وَإِذَا أَسَاؤُوْا اِسْتَغْفَرُوْا». رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِىُّ فِى الدَّعَوَاتِ الْكَبِيْرِ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো যারা ভাল কাজ করে খুশী হয় ও মন্দ কাজ করে ক্ষমা চায়। (ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী- দা‘ওয়াতুল কাবীর)[১]
(اِسْتَبْشَرُوْا) অর্থাৎ- ভাল বিদ্যা ও ভাল ‘আমালের তাওফীক পেয়ে তারা আনন্দিত হয়।
আল্লাহ বলেন, قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا
অর্থাৎ- ‘‘(হে নাবী!) বলুন, তারা যেন আল্লাহর রহমাতে তথা কুরআন ও তার অনুগ্রহের প্রতি আনন্দিত হয়।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ৫৮)
(وَإِذَا أَسَاؤُوْا) আর বিদ্যা ও ‘আমালে যখন ঘাটতি করে, অর্থাৎ- মন্দ বিদ্যা অর্জন ও মন্দ কাজ করে। (اِسْتَغْفَرُوْا) বাহ্যিকভাবে বিপরীতে যা বলা দরকার তা হল, (واذا اساؤا حزنوا) অর্থাৎ- যখন তারা মন্দ কর্ম করে চিন্তিত হয়। তা না বলে এ ধরনের বলার কারণ মূলত ঐ দিকে ইঙ্গিত করার জন্য যে, শুধুমাত্র চিন্তিত হওয়া কোন উপকারে আসে না। চিন্তা কেবল তখনই উপকারে আসে যখন পাপী ঐ পাপ হতে ক্ষমা প্রার্থনা করে যা গুনাহের উপর স্থায়ী হওয়াকে দূরীভূত করে। এভাবে মিরকাতে আছে।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যখন তারা ভাল কাজ করে আনন্দিত হয়। অর্থাৎ- যখন তারা নিষ্ঠার সাথে কোন ভাল কাজ করে, অতঃপর সে কাজে তাকে বদলা দেয়া হয়, ফলে সে জান্নাত লাভ করে আনন্দিত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, وَأَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ অর্থাৎ- ঐ জান্নাতের ব্যাপারে তোমরা খুশি হও যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে’’- (সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ৩০)। এটি ইঙ্গিতসূচক বাণী।
(وَإِذَا أَسَاؤُوْا اِسْتَغْفَرُوْا) অর্থাৎ- তাদেরকে ধীরে ধীরে পাকড়াওয়ের মাধ্যমে কষ্ট দিবেন না। পক্ষান্তরে যারা নিজেদের মন্দ কর্মকে ভাল মনে করে তারা এক সময় ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهٗ سُوْءُ عَمَلِهٖ فَرَاٰهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللّٰهَ يُضِلُّ مَنْ يَّشَآءُ অর্থাৎ- ‘‘যার কাছে তার মন্দ কর্মকে চাকচিক্য করে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা ভাল মনে করে তাহলে তার জানা উচিত আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন’’- (সূরা আর ফা-ত্বির ৩৫ : ৮)।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন জাতিকে শিক্ষা দেয়ার্থে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার আবশ্যকীয়তার দিকে দিক নির্দেশনা দেয়ার্থে। অন্যথায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল উত্তম ব্যক্তিদের অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।
২৩৫৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৮
وَعَنِ الْحَارِثِ بْنُ سُوَيْدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللّٰهِ بْنُ مَسْعُودٍ حَدِيْثَيْنِ: أَحَدُهُما عَنْ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ وَالْاٰخِرُ عَنْ نَفْسِه قَالَ: إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرٰى ذُنُوبَه كَأَنَّه قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرٰى ذُنُوبَه كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى انْفِه فَقَالَ بِه هَكَذَا أَىْ بِيَدِه فَذَبَّه عَنْهُ ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُوْلُ: «اَللهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ الْمُؤْمِنِ مِنْ رَجُلٍ نَزَلَ فِى ارْضٍ دَوِيَّةٍ مَهْلَكَةٍ مَعَه رَاحِلَتُه عَلَيْهَا طَعَامُه وَشَرَابُه فَوَضَعَ رَأْسَه فَنَامَ نَوْمَةً فَاسْتَيْقَظَ وَقَدْ ذَهَبَتْ رَاحِلَتُه فَطَلَبَهَا حَتَّى اِذَا اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْحَرُّ وَالْعَطَشُ أَوْ مَا شَآءَ اللّٰهُ قَالَ: أَرْجِعُ إِلٰى مَكَانِى الَّذِىْ كُنْتُ فِيهِ فَأَنَامُ حَتّٰى اَمُوْتَ فَوَضَعَ رَأْسَه عَلٰى سَاعِدِه لِيَمُوتَ فَاسْتَيْقَظَ فَإِذَا رَاحِلَتُه عِنْدَه عَلَيْهَا زَادُه وَشَرَابُه فَاللّٰهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ مِنْ هٰذَا بِرَاحِلَتِه وَزَادِه». رَوٰى مُسْلِمٌ الْمَرْفُوْعَ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مِنْهُ فَحَسْبُ وَرَوَى البُخَارِىُّ الْمَوْقُوْفَ عَلَى ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَيْضًا
হারিস ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) আমাকে দু’টো কথা বলেছেন- একটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে, আর অপরটি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, মু’মিন নিজের গুনাহকে মনে করে সে যেন কোন পাহাড়ের নীচে বসে আছে, যা তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে। অপরদিকে গুনাহগার ব্যক্তি নিজের গুনাহকে দেখে একটি মাছির মতো, যা তার নাকের উপর বসল, আর তা সে হাত দিয়ে নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিলো।
এরপর তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় সে লোকের চেয়ে বেশি আনন্দিত হন, যে লোক কোন ধ্বংসকারী মরুভূমিতে পৌঁছেছে, আর তার সাথে তার বাহন রয়েছে, যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সেখানে সে জমিনে মাথা রাখল ও কিছুক্ষণ ঘুমাল। অতঃপর জেগে দেখল তার বাহন পালিয়ে গেছে। সে তা খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে গরম ও তৃষ্ণা এবং অপরাপর দুঃখ-বেদনা যা আল্লাহর মর্জি তাকে দুর্বল করে ফেলল। তখন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, আমি যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে (আমৃত্যু) শুয়ে থাকব। সুতরাং সে সেখানে গিয়ে নিজের বাহুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, যাতে সে মৃত্যুবরণ করে।
হঠাৎ এক সময় জেগে দেখে তার বাহন তার কাছে, বাহনের উপর তার খাদ্য-সামগ্রীও আছে। তখন সে তার বাহন ও খাদ্য-সামগ্রী ফেরত পাওয়ার আকস্মিকতায় যেরূপ খুশী হয়, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় এর চেয়েও বেশি খুশী হয়। (ইমাম মুসলিম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে শুধু মারফূ‘ অংশ এবং ইমাম বুখারী ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে মাওকূফ ও মারফূ‘ উভয় অংশ বর্ণনা করেছেন)[১]
(كَأَنَّه قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ) ‘‘যেন সে এমন এক পাহাড়ের নীচে যা তার উপর ভেঙ্গে পরার আশংকা করে’’। ইবনু আবী জামরাহ্ বলেন, ভয় করার কারণ হল, মু’মিন ব্যক্তির অন্তর আলোকিত। সুতরাং সে যখন তার নিজ থেকে এমন কিছু দেখতে পায় সে যার আশংকা করে যে আশংকার কারণে তার অন্তর আলোকিত হয় তখন সে বিষয়টি তার কাছে বড় মনে হয়। পাহাড়ের সাথে উপমা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে হিকমাত হল, পাহাড় ছাড়া অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞ বিষয় থেকে কখনো মুক্তি লাভের উপায় অর্জন হয় কিন্তু পাহাড়ের ক্ষেত্রে তা হয় না। পাহাড় যখন কোন ব্যক্তির ওপর পতিত হয় তখন স্বভাবত ব্যক্তি তা থেকে মুক্তি পায় না। সারাংশ হল মু’মিন ব্যক্তি তার ঈমানী শক্তির কারণে তার ওপর ভয় প্রাধান্য পায়। ফলে শাস্তির আশংকা থেকে সে নিরাপদে থাকে না। আর এটি হল মু’মিন ব্যক্তির অবস্থা। সর্বদা সে ভীত থাকে ও সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সে তার ভাল কর্মকে ছোট মনে করে এবং ছোট পাপ কর্মের কারণে ভয় করে। কারী বলেন, এটি এমন এক উপমা যার অবস্থাকে পাপের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ব্যক্তি মনে করে যখন সে পাহাড়ের নিচে থাকবে তখন তার ধ্বংস আছে, পাহাড়ী ধ্বংসের ব্যাপারে সে ভয় করে। সুতরাং হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, মু’মিন ব্যক্তি চূড়ান্ত ভয় এবং গুনাহ থেকে চূড়ান্ত সতর্কতার মাঝে অবস্থান করে।
(يَرٰى ذُنُوبَه كَذُبَابٍ) ইসমা‘ঈলী বর্ণনাতে আছে, (يرى ذنوبه كأنها ذباب)
(عَلَى انْفِه) অর্থাৎ- তার গুনাহ তার কাছে সহজ ব্যাপার, ফলে গুনাহের ব্যাপারে সে এ বিশ্বাসে পরোওয়া করে না যে, ঐ গুনাহের কারণে বড় ধরনের কোন ক্ষতি হতে পারে। যেমন মাছির ক্ষতি তার কাছে সহজ ব্যাপার।
(ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ) জামি‘উল উসূল এবং তারগীবে এভাবেই এসেছে। বুখারীতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীস মারফূ' হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু সংঘটিত হয়নি।
(اَللهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ) অর্থাৎ- বান্দা অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে আনন্দিত হন।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, পাপীর অবস্থার ধরনকে যখন চিন্তা করা হবে ঐ আংশিক ধরনের সাথে তখন তা ঐ দিকে ইঙ্গিত করবে যে, আশ্রয়স্থল হল তাওবাহ্ করা এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অর্থাৎ- তখনই দু’ হাদীসে মারফূ ও মাওকুফ দু’ হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন হবে। এটা বুখারীর শব্দ। মুসলিমে আছে, (لله اشد فرحا بتوبة عبده)।
(الْمُؤْمِنِ) এ শব্দটি মুসলিমের বৃদ্ধি, এটি বুখারীতে নেই। (نزل) এটা বুখারীর বৃদ্ধি, মুসলিমে নেই।
(فِى ارْضٍ دَوِيَّةٍ مَهْلَكَةٍ) অর্থাৎ- دوية তৃণলতামুক্ত মরুভূমি। ইবনুল আসীর বলেন, الدو অর্থ মরুভূমি। আর ياء সম্বন্ধ করার জন্য এসেছে।
(فَأَنَامُ حَتّٰى اَمُوْتَ) অর্থাৎ- অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বাহন আমার কাছে ফিরে না আসে। আর জীবনের দিক অসম্ভব মনে করে এবং বাহন ফিরে আসা থেকে নিরাশ হয়ে ব্যক্তি যা উল্লেখ করেছে তা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছে। الذى كنت فيه فأنام থেকে শুরু করে হাদীসের শেষ পর্যন্ত মুসলিমের শব্দ এবং قال ارجع إلى مكانى فرجع فنام نومه ثم رفع رأسه فإذا راحلته عنده এ অংশটুকু বুখারীর। আর তিরমিযীতে আছে,
قال ارجع إلى مكانى الذى اضللتها فيه فأموت فيه فرجع إلى مكانه فغلبته عينه فاستيقظ فاذا راحلته عند راسه، عليها طعامه و شرابه وما يصلحه.
অর্থাৎ- লোকটি বলল, আমি আমার ঐ স্থানে ফিরে যাব যেখানে আমি ঐ বাহনটিকে হারিয়েছি, অতঃপর সেখানে মৃত্যুবরণ করব। এরপর লোকটি তার ঐ স্থানে ফিরে গেলে তার চক্ষু তার ওপর বিজয় লাভ করল। এরপর ঘুম থেকে জেগে হঠাৎ তার কাছে তার বাহন উপস্থিত পেল যার উপর তার খাদ্য, পানি এবং যা তার কল্যাণে আসে এমন কিছু রয়েছে। আহমাদেও এভাবে এসেছে। আর হাদীসটিতে আল্লাহর এ বাণীর দিকে ইঙ্গিত আছে- إِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহকারীদেরকে ভালবাসেন’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২২২)। আর নিশ্চয়ই তারা তাদের সম্মানিত, দয়াময়, করুণাশীল পালনকর্তার কাছে মহা স্থানে আছে।
সতর্কতাঃ মুসলিম বারা এর হাদীস থেকে এ হাদীসে মারফূ'- এর কারণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন এবং তার হাদীসের শুরু হচ্ছে,
كيف تقولون فى رجل انفلتت عنه راحلته بأرض قفر ليس بها طعام ولا شراب وعليها له طعام وشراب فطلبها حتى شق عليه فذكر معناه.
অর্থাৎ- ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কেমন বল? যাকে ছেড়ে তার বাহন তৃণলতাহীন ভূখণ্ডে পলায়ন করেছে। যেখানে কোন খাদ্য নেই, পানীয় বস্ত্ত নেই, এমতাবস্থায় সেই বাহনের উপর আছে তার খাদ্য, তার পানীয় বস্ত্ত। সুতরাং লোকটি তার বাহনের অনুসন্ধানে চলল। পরিশেষে লোকটির ওপর নিজ অবস্থা কঠিন আকার ধারণ করল, এরপর হাদীসটির বাকী অংশ অর্থগতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনু হিব্বান এ হাদীসটিকে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে সংক্ষিপ্তভাবে সংকলন করেছেন। সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লোকটির আনন্দের কথা উল্লেখ করল, এমতাবস্থায় যে লোকটি তার হারানো বস্ত্ত খুঁজে পায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (لله اشد فرحا) অবশ্যই আল্লাহ এর অপেক্ষাও বেশি আনন্দিত হন। (আল হাদীস) হাফেয একে ফাত্হ-এ উল্লেখ করেছেন।
(رَوٰى مُسْلِمٌ الْمَرْفُوْعَ) অর্থাৎ- হাদীসে মারফূ‘টি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
(وَرَوَى البُخَارِىُّ الْمَوْقُوْفَ عَلَى ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَيْضًا) আর তা হল, ان المؤمن হাদীসটি শেষ পর্যন্ত।
সারাংশ নিশ্চয়ই মারফূ', হাদীসটি বুখারী, মুসলিমের ঐকমত্যে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে মাওকূফ হাদীসটি বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
২৩৫৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৫৯
وَعَنْ عَلِىِِّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ الْمُفْتَّنَ التَّوَّابَ
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ওই মু’মিন বান্দাকে ভালবাসেন, যে গুনাহ করে তাওবাহ্ করে।[১]
(التَّوَّابَ) অর্থাৎ- অধিক তাওবাহকারী এবং আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। আর তা কেবল তাওবার দৃষ্টিকোণ থেকে। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, ফিতনাতে পতিত পরীক্ষিত ব্যক্তিকে আল্লাহ গুনাহের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, এরপর পাপী তাওবাহ্ করলে, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করলে আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করেন। মানাবী বলেন, এটা এ কারণে যে, তা আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়ন, তাঁর মহত্ত্বের প্রকাশ ও তাঁর রহমাতের প্রশস্ততার স্থান।
ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) বলেন, ফিতনায় পতিত অধিক তাওবাহকারী ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি গুনাহের ফিতনাতে পতিত হওয়া মাত্রই তা থেকে তাওবাহ্ করে। কুরতুবী বলেন, এর অর্থ হল, যার থেকে বারংবার গুনাহ এবং তাওবাহ্ সংঘটিত হয়, যখনই সে গুনাহে পতিত হয় তখনই তাওবাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। কারী বলেন, المفتن অর্থাৎ- পাপ, উদাসীনতা অথবা সার্বক্ষণিক আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হওয়া থেকে ছিন্ন হওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক হারে পরীক্ষিত হয়। এটা এ কারণে যে, যাতে সে অহংকার এবং প্রতারণার মাধ্যমে পরীক্ষিত না হয়। যা গুনাহসমূহের মাঝে সর্বাধিক গুনাহ এবং সর্বাধিক দোষ।
গুনাহে পুনরায় প্রত্যাবর্তন সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে হাদীসটি স্পষ্ট। যে ব্যক্তি তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পূর্বোক্ত গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন না করাকে শর্ত করেছে এবং বলেছে যদি ব্যক্তি পূর্বোক্ত গুনাহের দিকে ফিরে যায় তাহলে তার তাওবাহ্ বাতিল। এ হাদীসটিতে তাদের উক্ত শর্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে কি গুনাহের দিকে কখনো প্রত্যাবর্তন না করাকে শর্ত করা হবে? নাকি এটা কোন শর্ত না? অতঃপর বলেছেন, তাওবাহকারী যখন গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে তখন স্পষ্ট হবে তার তাওবাহ্ বাতিল বিশুদ্ধ না। অধিকাংশগণ ঐ মতের উপরে যে, এটি কোন শর্ত না। তাওবার বিশুদ্ধতা কেবল গুনাহ থেকে সরে আসা, তার ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া এবং বারংবার প্রত্যাবর্তন বর্জনের ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করার উপর নির্ভর করে। অতঃপর তাওবাহ্ যদি মানুষের অধিকারের ব্যাপারে হয় তাহলে কি সে অধিকারের ব্যাপারে দায়মুক্ত হতে হবে? এক্ষেত্রে বিশদ ব্যাখ্যা আছে। অচিরেই আল্লাহ চাহেতো তা উল্লেখ করব।
অতঃপর তাওবাহ্ করাবস্থায় পূর্বের গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন না করার উপর দৃঢ়তা ব্যক্ত করা সত্ত্বেও যদি প্রত্যাবর্তন করে তাহলে সে ঠিক ঐ ব্যক্তির মতো যে নতুনভাবে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে এবং তার পূর্বোক্ত তাওবাহ্ বাতিল হবে না। আর মাস্আলাটি মৌলিকতার উপর নির্ভরশীল। আর তা হল, নিশ্চয়ই বান্দা যখন কোন গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার পর ঐ গুনাহের দিকে আবারও প্রত্যাবর্তন করবে এমতাবস্থায় কি তার নিকট ঐ গুনাহের পাপ প্রত্যাবর্তন করবে যা থেকে সে তাওবাহ্ করেছিল? এরপর যদি সে ঐ গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তার উপর স্থির থেকে মারা যায় তাহলে কি সে প্রথম গুনাহ এবং পরবর্তী গুনাহের উপর উভয় গুনাহেরই শাস্তিযোগ্য হবে? নাকি পূর্বের গুনাহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল হয়ে যাবে । তাকে কেবল পরবর্তী গুনাহের শাস্তি দেয়া হবে? এ মৌলিকতার ক্ষেত্রে দু’টি উক্তি আছে। এরপর দু’টি উক্তিকে তিনি বিস্তারিতভাবে তার কিতাবের ১ম খণ্ডে ১৫২-১৫৬ পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। সুতরাং কেউ চাইলে তা অধ্যয়ন করতে পারে।
২৩৬০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬০
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: «مَا أُحِبُّ أَنَّ لِى الدُّنْيَا بِهٰذِهِ الْاٰيَةِ ﴿يَا عِبَادِىَ الَّذِينَ أَسْرَفُوْا عَلٰى أنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا﴾ الْاٰيَةَ» فَقَالَ رَجُلٌ: فَمَنْ أَشْرَكَ؟ فَسَكَتَ النَّبِىِّ ﷺ ثُمَّ قَالَ: «أَلَا وَمَنْ أَشْرَكَ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘ইয়া- ‘ইবা-দিয়াল্লাযীনা আসরফূ ‘আলা- আনফুসিহিম, লা- তাকনাত্বূ ......’’ (অর্থাৎ- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমাত হতে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)। এ আয়াতের পরিবর্তে সারা দুনিয়া হাসিল হওয়াকেও আমি পছন্দ করি না। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। অতঃপর তিনবার করে বললেন, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে তার ব্যাপারেও।[১]
ইমাম শাওকানী বলেনঃ কুরআন কারীমের এ আয়াতটি সর্বাধিক আশাপ্রদ আয়াত। কেননা এতে সর্বাধিক শুভসংবাদ রয়েছে। প্রথমত আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে তার নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ يَا عِبَادِىَ ‘‘হে আমার বান্দাগণ!’’ এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন। এরপর বলেছেন যে, যারা অধিক বাড়াবাড়ি করেছে এবং অধিক পরিমাণ গুনাহতে লিপ্ত হয়েছে তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের তাঁর রহমাত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। অতএব যারা গুনাহ করেছে তবে বাড়াবাড়ি করেনি তাদের প্রতি নিরাশ না হওয়ার বাণী আরো অধিক কার্যকর।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রকারের গুনাহ ক্ষমা করবেন’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)। এতে বুঝা গেল যে, গুনাহের ধরন যাই হোক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করেন। তবে আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আল্লাহ তা‘আলা শির্ক গুনাহ ক্ষমা করেন না’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। এ শির্ক গুনাহকারী ব্যক্তি যদি তাওবাহ্ করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে তাহলে তিনি তাও ক্ষমা করেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)।
(فَقَالَ رَجُلٌ: فَمَنْ أَشْرَكَ؟) ‘‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে তাকে কি ক্ষমা করা হবে?’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বললেনঃ (أَلَا وَمَنْ أَشْرَكَ) ‘‘হ্যাঁ, যে শির্ক করেছে তাকেও তিনি ক্ষমা করবেন (যদি সে তাওবাহ্ করে)।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিও لَا تَقْنَطُوْا مِن رَّحْمَةِ اللّٰهِ ‘‘তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।
২৩৬১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬১
وَعَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ اللّٰهَ تَعَالٰى لَيَغْفِرُ لِعَبْدِه مَا لَمْ يَقَعِ الْحِجَابُ. قَالُوا: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَمَا الْحِجَابُ؟ قَالَ: أَنْ تَمُوتَ النَّفْسُ وَهِىَ مُشْرِكَةٌ
رَوَى الْأَحَادِيْثَ الثَّلَاثَةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِىُّ الْأَخِيرَ فِىْ كِتَابِ الْبَعْثِ وَالنُّشُوْرِ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত (আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে) পর্দা না পড়ে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! পর্দা কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তির মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করা।
উপরোক্ত তিনটি হাদীসই বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ, আর শেষ হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন ‘‘কিতাবিল বা‘সি ওয়ান্ নুশূর’’-এ।[১]
(وَمَا الْحِجَابُ؟) ‘‘পর্দা কি?’’ অর্থাৎ- আল্লাহর রহমাত ও বান্দার মাঝে কিভাবে পর্দা পতিত হয় যাতে তার গুনাহ ক্ষমা করা বন্ধ হয়ে যায়।
(قَالَ: أَنْ تَمُوتَ النَّفْسُ وَهِىَ مُشْرِكَةٌ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন ব্যক্তি যখন শির্কে লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে’’। অর্থাৎ- শির্ক গুনাহ করার পর তাওবাহ্ না করেই মারা যায় তখন তার মাঝে এবং আল্লাহর রহমাতের মাঝে পর্দা পড়ে যায়, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তখন আর তার গুনাহ ক্ষমা করেন না। শির্কের অনুরূপ সকল প্রকার কুফরী গুনাহ, অর্থাৎ- বান্দা যদি কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পর তা থেকে তাওবাহ্ না করে মারা যায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন না।
২৩৬২
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬২
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «مَنْ لَقِىَ اللّٰهَ لَا يَعْدِلُ بِه شَيْئًا فِى الدُّنْيَا ثُمَّ كَانَ عَلَيْهِ مِثْلَ جِبَالٍ ذُنُوبٌ غَفَرَ اللّٰهُ لَه». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ كِتَابِ الْبَعْثِ وَالنُّشُوْرِ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কাউকেও আল্লাহর সমতুল্য মনে না করে মৃত্যুবরণ করবে, তার পাহাড় পরিমাণ গুনাহ থাকলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন। (বায়হাক্বী ‘‘কিতাবিল বা‘সি ওয়ান্ নুশূর’’-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)[১]
(كَانَ عَلَيْهِ مِثْلَ جِبَالٍ ذُنُوبٌ غَفَرَ اللّٰهُ لَه) ‘‘তার ওপর পাহাড় পরিমাণ গুনাহ থাকলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন’’। অর্থাৎ- আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। যেমন- আল্লাহ বলেনঃ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَن يَّشَآءُ ‘‘শির্ক ব্যতীত অন্য গুনাহ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)।
ত্ববারানীতে বর্ণিত, নাহ্ওয়াস ইবনু সাম্‘আন (রাঃ) বর্ণিত হাদীসও অত্র হাদীসকে সমর্থন করে। তাতে আছে ‘‘যে ব্যক্তি শির্ক না করে মৃত্যুবরণ করবে তার জন্য আল্লাহর ক্ষমা বৈধ হয়ে যাবে’’।
২৩৬৩
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৩
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: اَلتَّائِبَ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيمَانِ وَقَالَ تَفَرَّدَ بِهِ النَّهْرَانَىُّ وَهُوَ مَجْهُولٌ. وَفِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ رَوٰى عَنْهُ مَوْقُوفًا قَالَ: النَّدَمُ تَوْبَةٌ والتَّائبُ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ হতে তাওবাহকারী ঐ ব্যক্তির মতো যার কোন গুনাহ নেই। (ইবনু মাজাহ।)
আর বায়হাক্বী শু‘আবূল ঈমান-এ বলেন, নাহরানী এটা একাই বর্ণনা করেছেন, যদিও তিনি মাজহূল ব্যক্তি। আর শারহুস্ সুন্নাহ্’য় ইমাম বাগাবী এটাকে মাওকূফ [‘আবদুল্লাহ-এর কথা] হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি [‘আবদুল্লাহ] বলেছেন, ‘‘অনুশোচনাই হলো তাওবাহ্, আর তাওবাহকারী হলো ঐ ব্যক্তির মতো যার কোন গুনাহ নেই’’।)[১]
(كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه) অর্থাৎ- ক্ষতি সাধন না হওয়ার ক্ষেত্রে বেগুনাহ ব্যক্তির মতো। সিনদী বলেন, এর বাহ্যিক দিক হল গুনাহকে তওবাহকারীর ‘আমালনামা থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে অথবা শাস্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে গুনাহমুক্ত ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
ইমাম ত্বীবী বলেন, এটা হল, আধিক্যতা স্বরূপ অপূর্ণাঙ্গকে পূর্ণাঙ্গের সাথে মিলিয়ে দেয়া অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন বলা হয়, যায়দ সিংহের মতো। কেননা কোন সন্দেহ নেই যে, তাওবাহকারী মুশরিক ব্যক্তি গুনাহমুক্ত নাবীর মতো না।
ইবনু হাজার আসকালানী এ কথার পেছনে ঐ কথা টেনেছেন যে, যার কোন গুনাহ নেই- এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি গুনাহের সম্মুখীন হবে তবে গুনাহ থেকে তাকে সংরক্ষণ করা হবে। সুতরাং এ ধরনের তাশবীহ থেকে নাবী এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বের হয়ে গেছে, এ ধরনের তাশবীহ বা সাদৃশ্য দ্বারা তারা উদ্দেশ্য না।
কারী বলেন, সুতরাং মতানৈক্য শাব্দিক। যে ব্যক্তি গুনাহ করে তা থেকে তাওবাহ্ করবে এবং যে ব্যক্তি মূলত গুনাহ্ই করবে না এদের দু’জনের ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন যে, এদের দু’জনের মাঝে কে উত্তম? লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, এর দৃষ্টিকোণ বিভিন্ন ধরনের।
ইবনুল কইয়্যিম মাদারিজুস্ সালিক্বীনের ১ম খণ্ডে ১৬৩ পৃষ্ঠাতে বলেন, অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়নি এমন আনুগত্যশীল ব্যক্তি কি ঐ অবাধ্য ব্যক্তি হতে উত্তম, যে আল্লাহর কাছে প্রকৃত তাওবাহ্ করেছে? মোটকথা এ তাওবাহকারী কি এ অবাধ্যতায় লিপ্ত না হওয়া ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম? এ ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে। অতঃপর একদল অবাধ্যতায় লিপ্ত না হওয়া ব্যক্তিকে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে বিশুদ্ধ তাওবাহকারী ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে তারা দলীল দিয়েছেন এরপর তা উল্লেখ করেছেন যার সীমা দশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এরপর ইবনুল কইয়্যিম বলেন, একদল তাওবাহকারীকে প্রাধান্য দিয়েছেন যদিও এ দল প্রথম ব্যক্তির অধিক পুণ্যের অধিকারী হওয়াকে অস্বীকার করেনি। তারাও এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রমাণ স্বরূপ তা উল্লেখ করেছেন যার পরিমাণও দশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় সে আলোচনা এখানে ছেড়ে দেয়া হল। মাস্আলাটি অতি সূক্ষ্ম ও মহৎ মাস্আলাহ্। সুতরাং ব্যক্তির উপর আবশ্যক মাদারিজ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করা যাতে এ ব্যাপারে তার নিকটে অন্য একটি মাস্আলাহ্ স্পষ্ট হয়ে যায়। সে ব্যাপারেও মতানৈক্যকারীরা মতানৈক্য করেছেন। আর তা হল বান্দা যখন গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করবে তখন সে কি ঐ মর্যাদার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে গুনাহের পূর্বে যে মর্যাদার উপর ছিল, যে মর্যাদা থেকে তার গুনাহ তাকে নামিয়ে দিয়েছে? নাকি প্রত্যাবর্তন করবে না?
ইবনুল কইয়্যিম মাদারিজুস্ সালিক্বীনে ১ম খণ্ড- ১৬১ পৃষ্ঠাতে বলেন, একদল বলেন, সে তার পূর্ব মর্যাদায় ফিরে যাবে। কেননা তাওবাহ্ তার গুনাহকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল করে দিবে এবং গুনাহকে এমন করে দিবে যেন গুনাহ ছিল না। মর্যাদার কারণে ব্যক্তির পূর্বের ঈমান ও সৎ ‘আমালকে দাবী করা হবে। সুতরাং ব্যক্তি তাওবার কারণে পূর্বের মর্যাদায় ফিরে আসবে। তারা বলেন, কেননা তাওবাহ্ একটি মহা পুণ্য এবং সৎ ‘আমাল। সুতরাং ব্যক্তির গুনাহ যখন ব্যক্তিকে তার মর্যাদা থেকে নামিয়ে দিয়েছিল এখন তাওবার কারণে তার পুণ্য তাকে সে মর্যাদায় আরোহণ করাবে। আর এটা ঐ ব্যক্তির মতো যে ব্যক্তি কোন কূপে পতিত হল, এমতাবস্থায় তার একজন দয়ালু সাথী আছে সে তার কাছে একটি রশি ফেলল, ফলে কূপে পতিত ব্যক্তি সে রশি ধরে তার স্বস্থানে উঠে আসলো। এভাবে তাওবাহ্ হল সৎ ‘আমাল যা এ সৎসাথী এবং দয়ালু ভাইয়ের মতো। একদল বলেন, সে তার পূর্বের অবস্থা ও মর্যাদায় ফিরে যেতে পারবে না, কেননা সে গুনাহতে থেমে ছিল না, সে গুনাহতে আরোহণ করছিল। সুতরাং গুনাহের কারণে সে নিম্নের দিকে যাবে।
অতঃপর বান্দা যখন তাওবাহ্ করবে তখন ঐ গুনাহের পরিমাণ কমে যাবে, যা তাকে উন্নতির দিকে আরোহণে প্রস্ত্তত করবে। তারা বলেন, এর উদাহারণ হল একটি পথে একই ভ্রমণে ভ্রমণকারী দু’ব্যক্তির ন্যায় যাদের একজনের সামনে এমন কিছু জিনিস উপস্থিত হল যা তাকে পেছনের দিকে ফিরিয়ে দিল অথবা তাকে থামিয়ে দিল এমতাবস্থায় তার সাথী অবিরাম চলছেই। অতঃপর যখন এ ব্যক্তি তার সাথীর প্রত্যাবর্তন ও বিরতি কামনা করল এবং তার সাথীর পেছনে চলল, কিন্তু কোন মতেই তার সাথীকে পেল না। কেননা যখনই সে একধাপ ভ্রমণ করে তখন তার সাথী আরো একধাপ এগিয়ে যায়। তারা বলেন, প্রথম ব্যক্তি সে তার ‘আমালসমূহ এবং ঈমানের শক্তিতে ভ্রমণ করে। যখন সে বেশি ভ্রমণ করে তখন তার শক্তিও বৃদ্ধি হয় এবং ঐ থামা ব্যক্তি যে ভ্রমণ থেকে বিরত ছিল তার থেমে থাকার কারণে তার ভ্রমণ ও ঈমানের শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
(تَوْبَةٌ) এর অর্থ হল, নিশ্চয়ই লজ্জিত হওয়া তাওবার একটি বড় অংশ এবং তাতে স্বভাবত তাওবার অবশিষ্ট অংশগুলোকে আবশ্যককারী। কেননা লজ্জিত ব্যক্তি স্বভাবত বর্তমানকালে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে ভবিষ্যতে ঐ গুনাহতে প্রত্যাবর্তন না করার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করে আর এ অনুসারে তাওবাহ্ পূর্ণতা লাভ করে। তবে ঐ ফরযসমূহের ক্ষেত্রে ছাড়া যা পূরণ করা আবশ্যক। তখন ফরযসমূহের ক্ষেত্রে তাওবাহ্ ফরযসমূহ আদায় করার মুখাপেক্ষী হবে। অন্যথায় বান্দার অধিকারসমূহের ক্ষেত্রে তাওবাহকারী বান্দার অধিকারসমূহ ফেরত দেয়ার এবং লজ্জিত হওয়ার মুখাপেক্ষী হবে। এ উক্তিটি সিনদী করেছেন।
কারী বলেন, (النَّدَمُ تَوْبَةٌ) অর্থাৎ- তাওবার সর্বাধিক বড় রুকন হল লজ্জিত হওয়া। কেননা পাপ কাজ বর্জন করা এবং তার দিকে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করার মাধ্যমে তাওবার অবশিষ্ট রুকনগুলোকে এর উপর ধার্য করা হয়। আর সম্ভব অনুযায়ী বান্দার অধিকারসমূহের ক্ষতিপূরণ দেয়া, ঠিক ঐ রুকন যেমন হাজ্জের রুকনসমূহের ক্ষেত্রে ‘আরাফায় অবস্থান করা তবে তা পূর্ণাঙ্গভাবে বিপরীত। আর অবাধ্য কাজের ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হল সেটি অবাধ্য কাজ, এ দৃষ্টিকোণ থেকে লজ্জিত হওয়া অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে না।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, বিদ্বানগণ তাওবার সংজ্ঞার ক্ষেত্রে মতানৈক্য করেছেন। অতঃপর তাদের কেউ বলেছেন, নিশ্চয়ই তা হল লজ্জিত হওয়া। কেউ বলেন, নিশ্চয়ই তা হল পুনরায় অবাধ্যতায় জড়িত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করা। কেউ বলেন, তা হল গুনাহ থেকে সরে আসা। তাদের কেউ আবার তাওবাকে তিনটি বিষয়ের মাঝে একত্র করেন আর তা হল তাওবার মাঝে পূর্ণাঙ্গ তাওবাহ্। হাফেয এবং অন্য কেউ বলেন, তাওবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে গুনাহ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে ব্যক্তি লজ্জিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া কেননা লজ্জা গুনাহ থেকে সরে আসা এবং পুনরায় সে গুনাহতে লিপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্তকে আবশ্যক করে- এ বিষয় দু’টি লজ্জা থেকেই সৃষ্টি হয়। এ দু’টি লজ্জার সাথে কোন মৌলিক বিষয় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই হাদীসে এসেছে, (النَّدَمُ تَوْبَةٌ) আর এটি ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীস কর্তৃক একটি হাসান হাদীস।
(والتَّائبُ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه) অর্থাৎ- বান্দা যখন বিশুদ্ধ তাওবাহ্ করবে তখন সে গুনাহ থেকে ঐ দিনের ন্যায় বের হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। ইমাম হাকিম তার কিতাবের ৪র্থ খণ্ডে ২৪৩ পৃষ্ঠাতে সংক্ষিপ্তভাবে একে সংকলন করেছেন, অর্থাৎ- (والتَّائبُ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه) এ অংশটুকু ছাড়া।
২৩৬৪
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৪
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَمَّا قَضَى اللّٰهُ الْخَلْقَ كَتَبَ كِتَابًا فَهُوَ عِنْدَه فَوْقَ عَرْشِه: إِنَّ رَحْمَتِىْ سَبَقَتْ غَضَبِىْ «وَفِىْ رِوَايَةٍ» غَلَبَتْ غَضَبِىْ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মাখলূকাত (সৃষ্টিজগত) সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিলে একটি কিতাব লিখলেন, যা ‘আরশের উপর সংরক্ষিত আছে। এতে আছে, আমার রহমত আমার রাগকে প্রশমিত করেছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমার রাগের উপর (রহমত) জয়ী হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)[১]
কারী বলেন, (لَمَّا قَضَى اللّٰهُ الْخَلْقَ) অর্থাৎ- যখন আল্লাহ সকল সৃষ্টিজীবের সৃষ্টিকে নির্ধারণ করলেন, অস্তিত্বসমূহের প্রকাশ সম্পর্কে ফায়সালা দিলেন অথবা যখন আল্লাহ অঙ্গীকার গ্রহণের দিন সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টি করলেন অথবা তাদেরকে সৃষ্টি করতে শুরু করলেন।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, বুখারীর এক বর্ণনাতে তাওহীদ পর্বে আল্লাহর বাণী, وَيُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفْسَهٗ (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ২৮) এ অধ্যায়ে এসেছে, (لما خلق الله الخلق) অর্থাৎ- আল্লাহ যখন সকল সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টি করলেন। এভাবে আহমাদ এবং মুসলিমের এক বর্ণনাতে এবং তিরমিযীতে এসেছে, (ان الله حين خلق الخلق) অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন সকল সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টি করলেন। আর বুখারী ও মুসলিমের এক বর্ণনাতে আছে, (كتب فى كتاب) অর্থাৎ- লাওহে মাহফূযে মালায়িকাহকে (ফেরেশতাগণকে) অথবা কলমকে লিখতে নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে। আর একে সমর্থন করছে ‘উবায়দাহ্ বিন সামিত-এর (اول ما خلق الله القلم) অর্থাৎ- সর্বপ্রথম আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এ হাদীস, অর্থাৎ- ‘আরশ এবং পানি ছাড়া অন্য যা কিছু আছে তার দিকে সম্বন্ধ করে। এরপর আল্লাহ কলমকে বললেন, তুমি লিখ তখন কলম কিয়ামাত পর্যন্ত যা হবে তা লিখতে শুরু করল। আরো সমর্থন করছে (جف القلم بما هو كائن إلى يوم القيامة) অর্থাৎ- কিয়ামাত পর্যন্ত যা হবে সে সম্পর্কে অথবা লেখা সম্পর্কে কলম শুকিয়ে গেছে। এ হাদীস তিরমিযী এবং ইবনু মাজাহতে (كتب بيده على نفسه) এসেছে। অর্থাৎ- তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতির দাবী অনুযায়ী নিজের ওপর তা আবশ্যক করে নিয়েছেন। এখানে আল্লাহ যে কিতাব শব্দের উল্লেখ করেছেন তা মূলত তাঁর সাহায্যার্থে নয়। কারণ তিনি তা ভুলে যায় না, কেননা এ সব থেকে তিনি পবিত্র। তার নিকট কোন কিছু গোপন নয়। আর তা কেবল শারী‘আতের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে এমন সৃষ্টি দায়িত্বশীল মালায়িকাহর (ফেরেশতার) কারণে। অতঃপর যদি বলা হয়, কলম প্রতিটি জিনিসকে লিখে রেখেছে এ সত্ত্বেও আলোচনাতে এ বিষয়টি নির্দিষ্ট করার কারণ কি? ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, এতে যেই পূর্ণাঙ্গ আশা রয়েছে তা এবং নিশ্চয়ই তার রহমাতে প্রতিটি জিনিসকে পরিব্যাপৃত করে নিয়েছে তা প্রকাশ করার জন্য এ নির্দিষ্টতা। যা অন্যান্য বিষয়ের বিপরীত।
(فَهُوَ) অর্থাৎ- ঐ কিতাব যা লিখিত অর্থে ব্যবহৃত। একমতে বলা হয়েছে, তার বিদ্যা অথবা তার আলোচনা। (عِنْدَه) অর্থাৎ- সাধারণ অর্থ তার নিকটে। তবে এখানে এর অর্থ তাঁর নিকটে তথা স্থান উদ্দেশ্য নয় বরং তাঁর মর্যাদা উদ্দেশ্য, কেননা তিনি শুরু বা প্রারম্ভের লক্ষণ থেকে পবিত্র।
(فَوْقَ عَرْشِه) সকল সৃষ্টিজীব থেকে সুরক্ষিত, অনুভূতি থেকে দূরে। হাফেয বলেন, এখানে عند এর অর্থ ‘স্থান’ হবে না বরং তা সৃষ্টিজীব থেকে পূর্ণাঙ্গ গোপন হওয়ার দিকে ইঙ্গিত, তাদের অনুভূতিশক্তি থেকে দূরে। এতে বিষয়াবলীকে মর্যাদা দানের ব্যাপারে মহা সম্মানের ব্যাপারে সতর্কতা রয়েছে।
ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, الكتاب দ্বারা দু’টি বিষয়ের একটি উদ্দেশ্য আর তার একটি হল সম্পন্ন করা যা আল্লাহ সম্পন্ন করেছেন। যেমন তাঁর বাণী, كَتَبَ اللّٰهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِيْ অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ সম্পন্ন করে দিয়েছেন বা রায় দিয়েছেন, অবশ্যই আমি এবং আমার রসূলগণ বিজয় লাভ করবে’’- (সূরা আল মুজাদালাহ্ ৫৮ : ২১)। অর্থাৎ- ঐ বিষয়টি সম্পন্ন করে তিনি বলেছেন। আর রসূলের উক্তি (فوق العرش) এর অর্থ হল তার নিকটে আছে তার জ্ঞান, তিনি তা ভুলেন না এবং পরিবর্তনও করেন না। যেমন আল্লাহর বাণী, ‘‘কিতাবে রয়েছে আমার প্রভু পথভ্রষ্ট হন না এবং ভুলেও যান না’’- (সূরা ত্ব-হা- ২০ : ৫২)। পক্ষান্তরে লাওহে মাহফূয, যাতে রয়েছে সৃষ্টির প্রকারসমূহের বর্ণনা, তাদের বিষয়াবলী, তাদের মৃত্যু নির্দিষ্ট সময়, তাদের রিযক ও তাদের অবস্থাসমূহের বর্ণনা। আর (فَهُوَ عِنْدَه فَوْقَ عَرْشِه) এর অর্থ হল, তাঁর জিকির ও তাঁর জ্ঞান এবং ব্যাখ্যা ক্ষেত্রে এ প্রত্যেকটি বৈধ। একমতে বলা হয়েছে, আল্লাহ এর ক্ষেত্রে (عند) এর সুপরিচিত ‘‘স্থান’’ অর্থ নেয়া অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহর ক্ষেত্রে (عند) এর অর্থ ঠিক সেভাবে গ্রহণ করতে হবে যেভাবে তার সাথে মানানসই বা এর অর্থ তাঁরই দিকে সোপর্দ করতে হবে। ‘উবায়দল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, এটা এমন এক বিষয় যে ব্যাপারে চুপ থাকা বাঞ্ছনীয়। সুতরাং এ খবর সম্পর্কে আমরা বলব, তবে এর ধরন বর্ণনা থেকে আমরা বিরত থাকব। কেননা তার মতো কোন কিছু নেই। সুতরাং উত্তম হল বরং সুনির্দিষ্ট হল, বিষয়টিকে তাঁর বাহ্যিকতার দিকে ঘুরিয়ে দেয়া এবং কোন ধরনের পরিবর্তন না করা।
(سَبَقَتْ غَضَبِىْ وَفِىْ رِوَايَةٍ غَلَبَتْ غَضَبِىْ) দ্বিতীয় বর্ণনাটি শুধু বুখারীর, তিনি এটা সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কিত অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের শব্দ (تغلب) এভাবে বুখারীতে আল্লাহর বাণী, (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ২৮ আয়াত) وَيُحَذِّرُكُمُ اللهُ نَفْسَهٗ এ অধ্যায়ে এসেছে।
কারী বলেন, (غَلَبَتْ غَضَبِىْ) অর্থাৎ- আমার রহমাত আমার রাগের উপর বিজয় লাভ করেছে। এর উদ্দেশ্য হল, আমার রহমাতের প্রভাবসমূহ আমার রাগের প্রভাবসমূহের উপর বিজয় লাভ করেছে, এটি এর পূর্ববর্তী অংশের ব্যাখ্যা। উদ্দেশ্য হল, রহমাতের প্রশস্ততা, তার আধিক্যতা এবং তা সমস্ত সৃষ্টিকে শামিল করে নেয়া এমনকি যেন তা অগ্রগামী ও বিজয়ী যেমন একজন ব্যক্তির স্বভাব বৈশিষ্ট্যের মাঝে যখন দয়ার পরিমাণ অধিক হয় তখন সে ক্ষেত্রে (غلب على فلان الكرم) অর্থাৎ- অমুকের উপর দয়ার দিক প্রাধান্য পেয়েছে- এ কথা বলা হয়। অন্যথায় আল্লাহর (رحمة) অর্থাৎ- দয়া, এবং (غضب) অর্থাৎ- রাগ। দু’টি আলাদা বৈশিষ্ট্য যা আল্লাহর পুণ্যদান ও শাস্তিদান ইচ্ছার দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। আর তাঁর গুণসমূহের ব্যাপারে তাদের একটিকে অপরটির উপর বিজয় লাভের বর্ণনা করা হয় না। তা কেবল আধিক্যতার পদ্ধতিতে রূপকতার জন্য ব্যবহার করা হয়।
আর (سَبَقَتْ رَحْمَتِىْ) এর অর্থ ক্রোধের উপর রহমাতের আধিক্যতার জন্য পণ করা। যেমন বলা হয়, (تسابقتا فسبقت احداهما على الأخرى) ঘোড়া দু’টি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হল, অতঃপর দু’টির একটি অপরটির উপর অগ্রগামী হল।
লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, ওটা এজন্য যে, কেননা আল্লাহর রহমাতের প্রভাবসমূহ তাঁর উদারতা এবং অনুগ্রহ সকল সৃষ্টিজীবকে ব্যাপক করে নিয়েছে আর তা সীমাবদ্ধ নয় যা غضب তথা ক্রোধের প্রভাবের বিপরীত। কেননা তা কিছু কারণবশত কতিপয় আদম সন্তানের ওপর প্রকাশ পেয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ- ‘‘আর যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গণনা কর তোমরা তা পরিসংখ্যান করতে পারবে না’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ১৮)। তিনি আরো বলেন, অর্থাৎ- ‘‘আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছা তাকে পৌঁছিয়ে থাকি, এবং আমার রহমাত প্রতিটি জিনিসকে পরিব্যাপৃত করে নিয়েছে’’- (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৫৬)। আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আর আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের অন্যায়ের কারণে পাকড়াও করতেন তাহলে জমিনের উপর কোন প্রাণী ছেড়ে দিতেন না’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৬১)। সুতরাং তিনি তাঁর রহমাতকে তাদের মাঝে অবশিষ্ট রাখবেন এবং বাহ্যিকভাবে তাদেরকে দান করবেন ও তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন, এজন্য তাদেরকে দুনিয়াতে পাকড়াও করবেন না। সুতরাং এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রহমাত তাঁর عضب এর উপর অগ্রগামী।
২৩৬৫
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৫
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِنَّ لِلّٰهِ مِائَةَ رَحْمَةٍ أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ وَالْبَهَائِمِ وَالْهَوَامِّ فَبِهَا يَتَعَاطَفُوْنَ وَبِهَا يَتَرَاحَمُوْنَ وَبِهَا تَعْطُفُ الْوَحْشُ عَلٰى وَلَدِهَا وَأَخَّرَ اللّٰهُ تِسْعًا وَتِسْعِينَ رَحْمَةً يَرْحَمُ بِهَا عِبَادَه يَوْمَ الْقِيَامَةِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার একশটি রহমত রয়েছে, তন্মধ্যে মাত্র একটি রহমত তিনি (দুনিয়ার) জিন্, মানুষ, পশু ও কীট-পতঙ্গের জন্যে অবতীর্ণ করেছেন। এই একটি রহমত দিয়ে তারা পরস্পরকে স্নেহ-মমতা করে, এ রহমাত দিয়ে তারা পরস্পরকে দয়া করে। এর দ্বারাই বন্য প্রাণীরা এদের সন্তান-সন্ততিকে ভালবাসে। আর অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমাত আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দিয়ে তিনি কিয়ামাতের দিন তাঁর বান্দাদেরকে রহম করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[১]
جعل الله مائة جزء فأمسك عنده تسعة وتسعين جزءا وانزل فى الأرض جزءا واحدا فمن ذلك الجزء يتراحم الخلق حتى ترفع الفرس حافرها عن ولدها خشية ان تصيبه
অর্থাৎ- আল্লাহ রহমাতকে একশতটি অংশে বিভক্ত করেছেন, অতঃপর তার কাছে তিনি ৯৯ টি অংশ অবশিষ্ট রেখেছেন জমিনে মাত্র একটি অংশ অবতীর্ণ করেছেন, অতঃপর ঐ একটি অংশের কারণে সৃষ্টিজীব একে অপরের প্রতি দয়া করে থাকে। এমনকি ঘোড়া তার খুরকে তার সন্তান থেকে দূরে রাখে এ আশংকায় যে, তা তার সন্তানের গায়ে লেগে যাবে।
আর বুখারীতে আবূ হুরায়রাহ থেকে সা‘ঈদ মাকবূরীর সানাদে ‘রিকাক’ অধ্যায়ে আছে,
(ان الله خلق الرحمة يوم خلقها مائة رحمة فأمسك عنده تسعة و تسعين رحمة وأرسل فى خلقه كلهم رحمة واحد)
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ যে দিন রহমাতেকে সৃষ্টি করেছেন সেদিন একশতটি রহমাত সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাঁর কাছে নিরানববইটি রহমাত মজুদ রেখেছেন এবং একটি রহমাত তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টির মাঝে অবতীর্ণ করেছেন।
(أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً) এক বর্ণনাতে (وارسل فى خلقه كلهم رحمة واحدة) এসেছে। কারী বলেন, রহমাত অবতীর্ণ করা এমন এক উপমা যা ঐ দিকে ইঙ্গিত করছে যে, তা স্বভাবজনিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা আসমানী বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত যা সৃষ্টির যোগ্যতা অনুযায়ী বণ্টিত।
(وَأَخَّرَ اللّٰهُ) ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ অংশটুকুকে (انزل منها رحمة) এর উপর সংযোজন করা হয়েছে এবং আল্লাহর পরকালীন রহমাতের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য স্পষ্টকরণ স্বরূপ লুকায়িত বিষয়কে প্রকাশ করা হয়েছে। এক বর্ণনাতে আছে, فأمسك عنده আর সুলায়মান-এর হাদীসে আছে, وخبأ عنده
(يَوْمَ الْقِيَامَةِ) জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে এবং পরে। এতে মু’মিন বান্দাদের ওপর আল্লাহর প্রশস্ত অনুগ্রহের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। আরো ঐ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তিনি অনুগ্রহকারীদের মাঝে সর্বাধিক অনুগ্রহকারী। ইবনু আবী হামযাহ্ বলেন, হাদীসে মু’মিনদের ওপর আনন্দের প্রবিষ্টকরণ আছে। কেননা স্বভাবত নাফসকে যা দান করা হয় সে ব্যাপারে নাফসের আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করবে যখন প্রতিশ্রুত বিষয়টি জানা থাকবে। হাদীসটিতে ঈমানের ব্যাপারে এবং আল্লাহর সঞ্চিত রহমাতের ক্ষেত্রে সুপ্রশস্ত আশার ব্যাপারে উৎসাহ রয়েছে।
২৩৬৬
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৬
وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْ سَلْمَانَ نَحْوُه وَفِى اٰخِرِه قَالَ: «فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ أَكْمَلَهَا بِهٰذِهِ الرَّحْمَةِ
য় সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল রহমত দিয়ে তাকে পূর্ণতা দান করবেন।[১]
(بِهٰذِهِ الرَّحْمَةِ) অর্থাৎ- যা তিনি পিছিয়ে রেখেছেন তা দিয়ে। পরিশেষে যা একশত রহমাতে পরিণত হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাঁর মু’মিন বান্দাদের প্রতি তিনি দয়া করবেন।
২৩৬৭
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৭
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ مَا عِنْدَ اللّٰهِ مِنَ الْعُقُوبَةِ مَا طَمِعَ بِجَنَّتِه أَحَدٌ وَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ مَا عِنْدَ اللّٰهِ مِنَ الرَّحْمَةِ مَا قَنَطَ مِنَ جَنَّتِه أَحَدٌ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে কি শাস্তি রয়েছে মু’মিন বান্দা যদি তা জানত, তাহলে কেউই তাঁর জান্নাতের আশা করত না। আর কাফির যদি জানত আল্লাহর কাছে কি দয়া রয়েছে, তাহলে কেউই তাঁর জান্নাত হতে নিরাশ হত না। (বুখারী, মুসলিম)[১]
(مَا قَنَطَ مِنَ جَنَّتِه) অর্থাৎ- মু’মিনদের মধ্য থেকে কেউ জান্নাতের আশা করতো না। অর্থাৎ- কাফির দূরের কথা কোন মু’মিনই জান্নাতের আশা করত না। এ অংশে আল্লাহর শাস্তির আধিক্যতার বর্ণনা রয়েছে যাতে মু’মিন ব্যক্তি তাঁর আনুগত্যের কারণে বা তাঁর রহমাতের উপর নির্ভর করে ধোঁকায় না পড়ে ফলে নিজেকে নিরাপদ ভাববে অথচ আল্লাহর কৌশল থেকে একমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া কেউ নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না।
(مَا قَنَطَ مِنَ جَنَّتِه أَحَدٌ) অর্থাৎ- কাফিরদের থেকে কেউ নিরাশ হত না, উপরন্তু মু’মিনদের থেকে কেউ। ত্বীবী বলেন, হাদীসটি আল্লাহ তা‘আলার দয়া এবং কঠোরতা দু’টি গুণের বর্ণনা সম্পর্কে। অতঃপর আল্লাহর গুণাবলীর যেমন সীমাবদ্ধতা নেই, তাঁর গোপন করা গুণাবলী কেউ জানতে পারে না। এমনিভাবে তাঁর শাস্তি এবং তাঁর রহমাত, যদি ধরে নেয়া হয় নিশ্চয়ই মু’মিন ব্যক্তি তার গোপন করা কঠোরতা সম্বন্ধীয় গুণের ব্যাপারে অবহিত হয়েছে অবশ্যই তখন ঐ গুণ থেকে এমন কিছু প্রকাশ পাবে যা ঐ সমস্ত ধারণা থেকে নিরাশ করবে ফলে তাঁর জান্নাত সম্পর্কে কেউ লালায়িত হবে না।
হাদীসটির সারাংশ হল, নিশ্চয়ই বান্দার উচিত হবে সৌন্দর্যমণ্ডিত গুণাবলী গবেষণার মাধ্যমে এবং কঠোরতা গুণাবলী পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আশা এবং ভয়ের মাঝে থাকা। লামআত গ্রন্থকার বলেন, হাদীসটির বাচনভঙ্গি দয়া এবং ক্রোধ এ দু’টি গুণ বর্ণনার জন্য এবং এ দু’টির গোপনীয়তা পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে না পারার বর্ণনা করা। ঐ সমস্ত মু’মিনগণ যারা আল্লাহর রহমাতের বাহ্যিক রূপ সম্পর্কে অবহিত তারা যদি জানত আল্লাহর কাছে কি পরিমাণ কঠোরতা আছে তাহলে তাদের কেউ জান্নাতের আশা করত না। এভাবে কাফিরদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ- তারা আল্লাহর দয়ার কথা বলতে পারলে তাঁর জান্নাত পাওয়া থেকে নিরাশ হত না। এটা আল্লাহর রহমাত তাঁর ক্রোধের উপর অগ্রগামী হওয়ার পরিপন্থী নয়।
২৩৬৮
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৮
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: الْجَنَّةُ أَقْرَبُ إِلٰى أَحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِه وَالنَّارُ مِثْلُ ذٰلِكَ. رَوَاهُ البُخَارِىُّ
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত তোমাদের কারো জন্য জুতার ফিতা হতেও বেশি কাছে, আর জাহান্নামও ঠিক অনুরূপ। (বুখারী)[১]
(وَالنَّارُ مِثْلُ ذٰلِكَ) অর্থাৎ- তা তোমাদের কারো জুতার ফিতা অপেক্ষাও তার কাছাকাছি।
কারী বলেনঃ উল্লেখিত বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত, অর্থাৎ- জুতার ফিতা অপেক্ষা কাছাকাছি হওয়ার দিক দিয়ে জাহান্নাম জান্নাতের মতো। সুতরাং অল্প কল্যাণ সম্পাদনের ব্যাপারে কেউ যেন বিমুখ না হয়। হয়ত অল্প কল্যাণই ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর রহমাতের কারণ হবে এবং অল্প অকল্যাণকর ‘আমাল থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ও যেন অমনোযোগী না হয়। হয়ত কখনো অল্প অকল্যাণকর কাজে আল্লাহর ক্রোধ থাকবে। কোন ব্যক্তি জান্নাতে ও জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হল, সৎ ‘আমাল ও অসৎ ‘আমাল আর তা ব্যক্তির জুতার ফিতা অপেক্ষাও অধিক নিকটবর্তী। কেননা ‘আমাল তার পাশেই থাকে এবং তার মাধ্যমেই তা সম্পাদিত হয়। ইবনু বাত্তাল বলেন, হাদীসটিতে এ বর্ণনা রয়েছে যে, নিশ্চয়ই আনুগত্য জান্নাতে পৌঁছায় এবং অবাধ্যতা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে। নিশ্চয়ই পাপ এবং পুণ্য কখনো অধিকতর হালকা হয়ে থাকে তখন ব্যক্তির উচিত হবে অল্প কল্যাণকর কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে এবং অল্প অকল্যাণকর কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে অবহেলা না করা। কেননা সে ঐ পুণ্য কর্মের ব্যাপারে জানে না যার কারণে আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন এবং ঐ পাপের ব্যাপারেও সে জানে না যার দরুন আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত হবেন। ইবনুল জাওযী বলেন, হাদীসটির অর্থ হল, নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ নিয়্যাত ও আনুগত্যমূলক কাজের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করা সহজ। এভাবে প্রবৃত্তির অনুকূল এবং অবাধ্যকর কাজের মাধ্যমে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।
২৩৬৯
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৬৯
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «قَالَ رَجُلٌ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ لِأَهْلِه وَفِىْ رِوَايَةٍ أَسْرَفَ رَجُلٌ عَلٰى نَفْسِه فَلَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ أَوْصٰى بَنِيهِ إِذَا مَاتَ فَحَرِّقُوهُ ثُمَّ اذْرُوا نِصْفَه فِى الْبَرِّ وَنِصْفَه فِى الْبَحْرِ فَوَ اللهِ لَئِنْ قَدَرَ اللّٰهُ عَلَيْهِ لَيُعَذِّبَنَّه عَذَابًا لَا يُعَذِّبُه أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ فَلَمَّا مَاتَ فَعَلُوْا مَا أَمَرَهُمْ فَأَمَرَ اللّٰهُ الْبَحْرَ فَجَمَعَ مَا فِيهِ وَأَمَرَ الْبَرَّ فَجَمَعَ مَا فِيهِ ثُمَّ قَالَ لَه: لِمَ فَعَلْتَ هٰذَا؟ قَالَ: مِنْ خَشْيَتِكَ يَا رَبِّ وَأَنْتَ أَعْلَمُ فَغَفَرَ لَه». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন এক ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে বলল, কোন সময় সে কোন ভাল কাজ করেনি। আর এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি নিজের ওপর অবিচার করেছে। মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে নিজের সন্তান-সন্ততিকে ওয়াসিয়্যাত করল, যখন সে মারা যাবে তাকে যেন পুড়ে ফেলা হয়। অতঃপর মৃতদেহের ছাইভস্মের অর্ধেক স্থলভাগে, আর অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর কসম! যদি তিনি (আল্লাহ) তাকে ধরতে পারেন তাহলে এমন শাস্তি দিবেন, যা দুনিয়ার কাউকেও কক্ষনো দেননি। সে মারা গেলে তার সন্তানেরা তার নির্দেশ মতই কাজ করল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সমুদ্রকে হুকুম করলেন, সমুদ্র তার মধ্যে যা ছাইভস্ম পড়েছিল সব একত্র করে দিলো। ঠিক এভাবে স্থলভাগকে নির্দেশ করলেন, স্থলভাগ তার মধ্যে যা ছাইভস্ম ছিল সব একত্র করে দিলো। পরিশেষে মহান আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এরূপ কাজ করলে? (উত্তরে বললো) তোমার ভয়ে ‘হে রব!’ তুমি তো তা জানো। তার এ কথা শুনে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১]
বুখারীর অন্য বর্ণনাতে আছে, (ذكر رجلا فيمن سلف أو فيمن كان قبلكم) অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক লোকের উল্লেখ করেছেন যে অতীত হয়ে গেছে অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের মাঝে। ত্ববারানীতে হুযায়ফাহ্ এবং আবূ মাস্‘ঊদ এর হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, (انه كان من بنى اسرائيل) নিশ্চয়ই লোকটি ছিল বানী ইসরাঈল গোত্রের। আর এ কারণেই বুখারী বানী ইসরাঈলের আলোচনায় আবূ সা‘ঈদ, হুযায়ফাহ্ এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছে, এ লোকটির নাম ছিল জুহায়নাহ্। সুহায়লী বর্ণনা করেন তার কাছে এসেছে লোকটির নাম হুনাদ।
(خَيْرًا قَطُّ) অর্থাৎ- ইসলামের পরে সৎ ‘আমাল। মুসলিমের এক বর্ণনাতে এসেছে, (لم يعمل حسنة قط) সে কখনো ভাল কাজ করেনি। বাজী বলেন, স্পষ্ট যে, যে ‘আমাল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পর্ক রাখে সেটাই প্রকৃত ‘আমাল। যদিও রূপকভাবে ‘আমালকে বিশ্বাসের উপর প্রয়োগ করা সম্ভব। এ লোকটি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার ব্যাপকতা যে, কোন পুণ্যকাজ করেনি এ থেকে উদ্দেশ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে ‘আমাল। হাদীসটিতে কুফরীর বিশ্বাস সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি, এ হাদীসটি কেবল ঈমানী বিশ্বাসের উপর প্রমাণ বহন করছে। তবে লোকটি তার শারী‘আত থেকে কোন কিছুর উপর ‘আমাল করেনি। অতঃপর লোকটির কাছে যখন মরণ উপস্থিত হল তখন সে নিজ বাড়াবাড়ির ব্যাপারে ভয় করল, অতঃপর সে তা পরিবারকে তার দেহ জালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিল।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, আহমাদ-এর এক বর্ণনাতে (দ্বিতীয় খণ্ডে ৩০৪ পৃষ্ঠা) এসেছে, তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের মাঝে এক লোক ছিল যে একমাত্র তাওহীদ তথা আল্লাহ একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া ছাড়া কোন ভাল ‘আমাল করেনি।
(أَسْرَفَ رَجُلٌ عَلٰى نَفْسِه) অর্থাৎ- অবাধ্যকর কাজে বাড়াবাড়ি করল। এটা মসলিমের শব্দ এবং বুখারীতে আছে, (كان رجل يسرف على نفسه) অর্থাৎ- লোকটি তার নিজের উপর বাড়াবাড়ি করত। বুখারীতে হুযায়ফার হাদীসে আছে, (انه كان يسيئ الظن بعمله) অর্থাৎ- লোকটি তার আমালের মাধ্যমে মন্দ ধারণা করত। বুখারী, মুসলিমে আবূ সা‘ঈদ-এর হাদীসে এসেছে, (فإنه لم ييترأ عند الله خيرا فسرها قتادة لم يدخر) অর্থাৎ- সে আল্লাহর কাছে কোন ভাল কাজ করেনি। কাতাদাহ্ এর ব্যাখ্যা করেছেন ‘‘সঞ্চয় করেনি’’ বুখারীতে হুযাইফার হাদীসের শেষে এসেছে। ‘উকবাহ্ বিন ‘আমর (আবূ মাস্‘ঊদ) বলেন, আমি তাঁকে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি লোকটি কবর খুড়ত (অর্থাৎ- কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তিরদের কাফন চুরি করত)।
(فَلَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ) এখানে মৃত্যুকে তার নিকটবর্তী অবস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা ঐ অবস্থাতে তার কাছে যা উপস্থিত হয়েছে তা মৃত্যুর আলামাত উপস্থিত হয়েছে; স্বয়ং মৃত্যু না।
(أَوْصٰى بَنِيهِ) এটা মুসলিমের শব্দ। বুখারীতে আছে, অতঃপর তার কাছে যখন মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার সন্তানদেরকে বলল। বুখারীতে আবূ সাঈ‘দ-এর হাদীসে আছে, অতঃপর তার কাছে যখন মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার সন্তানদেরকে বলল, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল, ভাল পিতা। সে বলল, শেষ পর্যন্ত।
(إِذَا مَاتَ فَحَرِّقُوهُ) এটা মুসলিমে আছে আর বুখারীতে আছে, فأحرقوه অর্থাৎ- الإحراق থেকে। এখানে বাচনভঙ্গির দাবী এভাবে বলা, আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে দিবে। তবে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এভাবে বলা হয়েছে।
(نِصْفَه فِى الْبَرِّ وَنِصْفَه فِى الْبَحْرِ) এবং বুখারীতে হুযায়ফার হাদীসের বানী ইসরাঈলের আলোচনার শুরুতে আছে, আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার জন্য অনেক লাকড়ি জমা করবে এবং তাতে আগুন জ্বালাবে এমনকি আগুন যখন আমার গোশতকে খেয়ে নিবে, আমার হাড্ডি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, অতঃপর তা জ্বলে উঠবে তখন তোমারা তা নিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করবে এরপর এক বাতাসযুক্ত দিনের অপেক্ষা করবে (অর্থাৎ- প্রবল বায়ুর) অতঃপর তা দরিয়াতে নিক্ষেপ করবে। (আল হাদীস) আর রিকাক অধ্যায়ে আবূ সাঈ‘দ-এর হাদীসেও আছে, আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে দিবে এমনকি যখন আমি কয়লাতে পরিণত হব তখন আমাকে তোমরা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবে। রাবীর সন্দেহ এক্ষেত্রে লোকটি فاسحقونى অথবা فاسهكونى বলেছে।
অতঃপর যখন প্রবল বায়ু প্রবাহের দিন হবে তখন তোমরা তা তাতে নিক্ষেপ করবে এভাবে লোকটি তার সন্তানদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করল। বাজী বলেন, এটা দু’ভাবে হতে পারে। দু’টির একটি হল, আল্লাহর ধরা থেকে সে মুক্তি পাবে না। এ বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও পলায়নের মাধ্যমে যেমন ব্যক্তি সিংহের সামনে থেকে পলায়ন করে এ বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও যে, সে দৌড়িয়ে সিংহ থেকে পলায়ন করতে পারবে না তবে সে এটা তার চূড়ান্ত সম্ভব অনুযায়ী করে থাকে।
দ্বিতীয়টি হল, এটা স্রষ্টার ভয়ে করে থাকে এবং বিনয় ও এ আশায় করে থাকে যে, এটি তার প্রতি রহমাতের কারণ হবে এবং সম্ভবত এটি তার ধর্মে শারী‘আতসম্মত ছিল।
(لَا يُعَذِّبُه أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ) এ হাদীসটি জটিলতা সৃষ্টি করেছে, কেননা লোকটির কাজ এবং উক্তি পুনরুত্থান ও জীবিত করার উপর আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে স্পষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি করছে। আর আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে সন্দেহ করা কুফর। আর লোকটি হাদীসের শেষে বলেছে তোমার ভয়ে এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। অথচ কাফির ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না এবং তাকে ক্ষমাও করা হবে না। এখানে হাদীসটির ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে। একমতে বলা হয়েছে, (قدر) শব্দটি তাশদীদ ছাড়া সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত এবং এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী, وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُه অর্থাৎ- ‘‘আর আল্লাহ যার ওপর রিযককে সংকীর্ণ করে দেন’’- (সূরা আত্ ত্বলা-ক ৬৫ : ৭)। অপর বাণী যা এ ধরনের বাণীসমূহের একটি। আর তা হল, অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ যদি তার ওপর সংকীর্ণ অবস্থা করেন এবং কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে হিসাব নেন’’- (সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ৮৭)।
একমতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ- যদি আল্লাহ তার ওপর শাস্তি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে قدر শব্দটির راء বর্ণে তাশদীদ ও তাশদীদ ছাড়া উভয়ভাবে পড়া যায়। উভয় ক্ষেত্রে অর্থ এক, অভিন্ন, অর্থাৎ- আল্লাহ যদি তার ওপর শাস্তি ধার্য করেন তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তি দিবেন। তবে এটিও অর্থগতভাবে পূর্বের মতো যা মূলত বাচনভঙ্গির অনুকূল নয়। যদিও এটি আহমাদ-এর চতুর্থ খণ্ড- ৪৪৭ পৃষ্ঠাতে মু‘আবিয়াহ্ বিন হুমায়দাহ্-এর হাদীসে এসেছে এবং ৫ম খণ্ড- ৩-৪ পৃষ্ঠাতে এসেছে, আর তা এভাবে, ‘‘অতঃপর তোমরা বাতাসের মাঝে আমাকে ছেড়ে দিবে যাতে আমি আল্লাহ থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি তাঁর ধরা হতে মুক্তি পেতে পারি।’’ আর অদৃশ্য হওয়ার এ বর্ণনাটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, তার উক্তি (لئن قدر الله عليه) তার বাহ্যিকতার উপর প্রমাণ বহন করছে এবং লোকটি তার নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমতা প্রত্যাহারের উদ্দেশ্য করছে। এ সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির ক্ষমার ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন।
সুতরাং এমন একটি দিক অবশ্যই থাকা চাই যার মাধ্যমে লোকটি ঈমানদার হওয়ার ব্যাপারে উক্তি করা সম্ভব। অতঃপর একমতে বলা হয়েছে, লোকটির এ ধরনের নাসীহাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সন্তানেরা যদি আমার অংশগুলোকে স্থলে এবং জলে এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় যে, তাতে সে অংশগুলো একত্র করার কোন পথ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা থাকবে যে, লোকটি মনে করেছে তখন তাকে একত্র করা অসম্ভব আর ক্ষমতা অসম্ভবতার সাথে সম্পর্ক রাখে না। আর এ কারণেই লোকটি বলেছে যদি আল্লাহ তার ওপর ক্ষমতা খাটান, এতে ক্ষমতা অস্বীকার করা বা ক্ষমতার ব্যাপারে সন্দেহ করা আবশ্যক হচ্ছে না। সুতরাং এ কারণে কাফির হয়ে যাচ্ছে না, অতএব কিভাবে তাকে ক্ষমা করা হবে এ ধরনের কথা বলারও কোন সুযোগ নেই। লোকটি যা অস্বীকার করেছে তা হল সম্ভব বিষয়ের উপর ক্ষমতা। লোকটি অসম্ভব নয় এমন বিষয়কে অসম্ভব মনে করেছে যে ব্যাপারে তার কাছে কোন প্রমাণ সাব্যস্ত হয়নি যে, তা জরুরীভাবে দ্বীনের সম্ভব বিষয়। প্রথমটিকে অস্বীকার করা হয়েছে দ্বিতীয়টিকে না। একমতে বলা হয়েছে, লোকটি ধারণা করেছিল যখন সে এ কাজ করবে তখন তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, তাকে জীবিত করা হবে না এবং শাস্তিও দেয়া হবে না। পক্ষান্তরে তার لئن قدر الله এবং فلعلى اضل الله উক্তি উচ্চারণ করার কারণ হল, সে এ ব্যাপারে মূর্খ ছিল। তার ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে এতে কি সে কাফির হয়ে যাবে নাকি হবে না? উত্তর- তার অবস্থান আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারীর বিপরীত।
ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, লোকটি পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেনি, লোকটি কেবল অজ্ঞ ছিল ফলে সে ধারণা করল তার সাথে যদি এ আচরণ করা হয় তাহলে তাকে জীবিত করা হবে না এবং শাস্তিও দেয়া হবে না। সে কেবল আল্লাহর ভয়ে এটি করেছে- এ স্বীকৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির ঈমান প্রকাশ পেয়েছে।
(فَأَمَرَ اللّٰهُ الْبَحْرَ فَجَمَعَ مَا فِيهِ وَأَمَرَ الْبَرَّ فَجَمَعَ مَا فِيهِ) অর্থাৎ- লোকটির অংশসমূহ থেকে। বুখারীর অন্য বর্ণনাতে আছে, অতঃপর আল্লাহ জমিনকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তুমি তার থেকে যা তোমার মাঝে আছে তা একত্র কর, অতঃপর তাই করলে লোকটি সুপ্রতিষ্ঠিত হল। বুখারীতেই আবূ সা‘ঈদ-এর হাদীসে আছে, অতঃপর আল্লাহ বললেন, হও তখনই লোকটির পুড়ে ফেলা অংশগুলো একত্রিত হয়ে মানবে রূপ নিল। হাফেয বলেন, আবূ ‘আওয়ানাহ্-এর সহীহাতে সালমান ফারিসীর হাদীসে আছে, অতঃপর আল্লাহ তাকে বললেন, হও অতঃপর তা চোখের পলকের ন্যায় দ্রুত হয়ে গেল।
(ثُمَّ قَالَ لَه: لِمَ فَعَلْتَ هٰذَا؟) অর্থাৎ- অতঃপর আল্লাহ লোকটিকে বললেন, তুমি এটা কেন করেছ? অর্থাৎ- লোকটি উপদেশবাণী থেকে যা উল্লেখ করেছে তা। অন্য এক বর্ণনাতে আছে, তুমি যা করেছ সে ব্যাপারে কোন জিনিস তোমাকে উদ্ভুদ্ধ করেছে? (قال من خشيتك رب) বুখারীতে হুযায়ফার হাদীসে আছে, সে ব্যাপারে একমাত্র তোমার ভয়ই আমাকে উদ্ভুদ্ধ করেছে। (وانت اعلم) অর্থাৎ- আপনি অধিক জানেন যে, এটা কেবল আপনার ভয়ের জন্যই করেছি।
ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, এটা ঈমানের ব্যাপারে দলীল। কেননা ভয় মু’মিন ছাড়া কারো সৃষ্টি হয় না বরং বিদ্বান ব্যক্তিরই কেবল ভয় সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই ‘আলিমরাই কেবল আল্লাহকে ভয় করে’’- (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ২৮)। যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে না তার দ্বারা আল্লাহকে ভয় করা অসম্ভব। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন : আমি বলব, ভয়-ভীতি ঈমানের আবশ্যকীয়তার অন্তর্ভুক্ত। আর ঐ ব্যক্তি এ কাজ যখন আল্লাহর ভয়ে করেছে, সুতরাং তখন ব্যক্তির ঈমানের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া আবশ্যক।
(فَغَفَرَ لَه) ‘‘আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’’ লোকটিকে ক্ষমা করা হয়েছে কেবলমাত্র আল্লাহকে পূর্ণাঙ্গভাবে ভয় করার কারণে, কেননা ভয় করা সুউচ্চ স্থানের অন্তর্ভুক্ত এবং তা যখন তাওবার চূড়ান্ত স্তরের উপর প্রমাণ বহন করেছে যদিও তা মৃত্যুর আলামাত প্রকাশ পাওয়ার অবস্থায় অর্জন হয়েছে তথাপিও তা সমস্ত গুনাহসমূহ মোচনের কারণে পরিণত হয়েছে এবং সকল গুনাহ ক্ষমা হওয়ার মাধ্যমে হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে অংশীস্থাপন করার গুনাহ ক্ষমা করবেন না, এ ছাড়া অন্য যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। ইতোপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে যে, আল্লাহর ভয় ঈমানের আবশ্যকতার অন্তর্ভুক্ত।
২৩৭০
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৭০
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَدِمَ عَلَى النَّبِىِّ ﷺ سَبِىٌّ فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنَ السَّبِىِّ قَدْ تَحَلَّبَ ثَدْيُهَا تسْعٰى إِذا وَجَدَتْ صَبِيًّا فِى السَّبِىِّ أَخَذَتْهُ فَأَلْصَقَتْهُ بِبَطْنِهَا وَأَرْضَعَتْهُ فَقَالَ لَنَا النَّبِىُّ ﷺ: أَتُرَوْنَ هٰذِه طَارِحَةً وَلَدَهَا فِى النَّارِ؟ فَقُلْنَا: لَا وَهِىَ تَقْدِرُ عَلٰى اَنْ لَا تَطْرَحَه فَقَالَ: «اَللّٰهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِه مِنْ هٰذِه بِوَلَدِهَا. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এলো। তখন দেখা গেল, একটি মহিলার বুকের দুধ ঝরে পড়ছে, আর সে শিশু সন্তানের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ বন্দীদের মধ্যে একটি শিশু দেখতে পেল। তাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে সে দুধ পান করাল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমাদের কি মনে হয় এ মহিলাটি স্বীয় সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? উত্তরে আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! কক্ষনো না। যদি সে নিক্ষেপ না করার সামর্থ্য রাখে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অবশ্যই এ মহিলার সন্তানের প্রতি মায়া-মমতার চেয়ে বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার মায়া-মমতা অনেক বেশি। (বুখারী, মুসলিম)[১]
(قَدْ تَحَلَّبَ ثَدْيُهَا) অর্থাৎ- নিজ সন্তান সঙ্গে না থাকায় দুধের আধিক্যতার কারণে স্তনের দুধ বয়ে যাচ্ছিল। হাফেয বলেন, সন্তানকে দুধ পান করানোর জন্য প্রস্ত্তত।
(تسْعٰى) শব্দটি (السعى) থেকে, অর্থাৎ- মহিলাটি তার সন্তানের অনুসন্ধানে দৌড়ে যাচ্ছিল। এক বর্ণনাতে আছে যা ابتغاء থেকে এসেছে অর্থ, অনুসন্ধান করা। ‘ইয়ায বলেন, তা ধারণা মাত্র আর বুখারীর বর্ণনাতে السعى থেকে যে تسعى এসেছে তা সঠিক। তবে ইমাম নাবাবী (রহঃ) এভাবে পর্যালোচনা করেছেন যে, উভয় বর্ণনাই সঠিক, তাতে কোন সন্দেহ নেই, মোট কথা মহিলা দৌড়াচ্ছিল ও তার সন্তানকে অনুসন্ধান করছিল।
কুরতুবী বলেন, تسعى বর্ণনার উত্তমতা ও স্পষ্টতা কারো কাছে গোপন নয়। তবে تبتغى বর্ণনার একটি বিশেষ দিক আছে, তা হল মহিলাটি তার সন্তানকে অনুসন্ধান করছিল। এখানে কর্ম সম্পর্কে জানা থাকার কারণে তা বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনাকারী ভুল করছে না।
(أَخَذَتْهُ فَأَلْصَقَتْهُ بِبَطْنِهَا) ‘‘মহিলাটি শিশুকে স্বীয় পেটের সাথে মিলিয়ে নিন’’। হাফেয বলেন, এখান থেকে কোন কিছুকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। ইসমা‘ঈলী-এর বর্ণনা যা প্রমাণ করছে। আর তার শব্দ হল, মহিলাটি যখন বাচ্চা পেল তখন তাকে নিয়ে দুধ পান করালো। অতঃপর আরেকটি বাচ্চা পেল তাকে ধরে নিজ পেটের সাথে মিলিয়ে নিল। হাদীসটির বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা গেল, নিশ্চয়ই মহিলাটি তার শিশুকে হারিয়ে ফেলেছিল এবং স্তনে দুধ জমা হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অতঃপর যখন কোন শিশু পেয়েছিল হালকা হওয়ার জন্য তাকে দুধ পান করিয়েছিল, অতঃপর যখন নিজ সন্তান বাস্তবে পেয়েছিল তখন তাকে জড়িয়ে ধরেছিল এবং সন্তান পাওয়াতে আনন্দের কারণে এবং সন্তানের প্রতি চূড়ান্ত ভালোবাসার কারণে তাকে নিজ পেটের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিল।
(وَهِىَ تَقْدِرُ عَلٰى اَنْ لَا تَطْرَحَه) অর্থাৎ- স্বেচ্ছায় কখনো তাকে নিক্ষেপ করবে না। কারী বলেন, এখানে واو বর্ণটি অবস্থা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর একে এখানে ব্যবহারের উপকারিতা হল, মহিলাটি যদি নিরুপায় হয়ে যায় তাহলে সে তার সন্তানকে নিক্ষেপ করবে। তবে আল্লাহ নিরুপায় থেকে পবিত্র, সুতরাং তিনি কখনো তার বান্দাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না।
(لله) এখানে শুরুতে যবর বিশিষ্ট লামটি তাকীদ তথা গুরুত্ব বুঝানের জন্য এসেছে, ইসমাঈলী বর্ণনাতে কসম দ্বারা আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাতে আছে, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আল্লাহ আরো দয়ালু ..... শেষ পর্যন্ত। (بعباده من هذه بوالدها) অর্থাৎ- মু’মিনদের প্রতি অথবা মুত্বলাকভাবে সকলের প্রতি। হাফেয বলেন, এখানে العباد দ্বারা যেন ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে ইসলামের উপর মারা গেছে। ইমাম আহমাদ, হাকিম সহীহ সানাদে আনাস থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা এই, আনাস বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একটি দল এবং পথে একটি শিশুর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতঃপর মা যখন সম্প্রদায়কে দেখলেন তখন তার সন্তানের ব্যাপারে তিনি আশংকা করলেন অথবা সম্প্রদায়ে মাড়ানোর ব্যাপারে তিনি আশংকা করে দৌড়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলেন এবং বলতে লাগলেন, হে আমার ছেলে! হে আমার ছেলে! এ বলে মহিলাটি দৌড়াল এবং সন্তানকে ধরল। এরপর সম্প্রদায় বলল, হে আমার রসূল! এ মা এমন নয় যে, সে তার ছেলেটিকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে। তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহও তার বন্ধুকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না। ‘বন্ধু’ শব্দ দ্বারা বিশ্লেষণ করাতে কাফির ব্যক্তি বেরিয়ে যাবে, এভাবে কাবীরাহ্ গুনাহে জড়িত হওয়ার পর তাওবাহ্ করেনি এমন ব্যক্তি থেকে যাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে প্রবেশ করানোর ইচ্ছা করেন। শায়খ আবূ মুহাম্মাদ আবূ হামযাহ্ বলেন, العباد শব্দটি ব্যাপক এবং এর অর্থ দ্বারা মু’মিনগণ নির্দিষ্ট। এর সমর্থনে আল্লাহর বাণীঃ অর্থাৎ- ‘‘আর আমার দয়া প্রতিটি জিনিসকে পরিব্যাপৃত করে নিয়েছে অচিরেই আমি সে দয়া ঐ সকল লোকদের জন্য লিখে রাখব যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৫৬)
অতএব রহমাতটি কার্যকারিতার দিক থেকে ব্যাপক, কিন্তু যার জন্য লিখা হয়েছে তার জন্য নির্দিষ্ট। অতঃপর ইবনু আবূ হামযাহ্ উল্লেখ করেন এ বাণী, অর্থাৎ- রহমাতের ব্যাপকতার সম্ভাবনা প্রাণীকুলের মাঝেও বিরাজ করছে। এ মতটিকে ‘আয়নী প্রাধান্য দিয়েছেন যেমন তিনি বলেন, স্পষ্ট যে, রহমাত ঐ ব্যক্তির জন্য ব্যাপক যার হুকুম গত হয়ে গেছে। রহমাতের একটি অংশ যে কোন বান্দার জন্য এমনকি প্রাণীকুলের জন্য। আর তা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর এ হাদীস অনুযায়ী (وانزل فى الأرض جزءا واحدا الخ) অর্থাৎ- আর রহমাত থেকে একটি অংশ জমিনের মাঝে অবতীর্ণ করেছেন আর ঐ অংশের সৃষ্টিজীব একে অপরের প্রতি দয়া করে থাকে।
ইবনু আবূ হামযাহ্ বলেন, হাদীসটিতে এমন বিষয়ের মাধ্যমে উদাহরণ দেয়া হয়েছে, মূলত ঐ জিনিসের যথার্থ পরিচিতির জন্য ঐ উদাহরণ দ্বারা বুঝা যায় না। আর উদাহরণটি যার জন্য পেশ করা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে আয়ত্ব করা যায় না। কেননা আল্লাহর রহমাত জ্ঞান দ্বারা অনুভব করা যায় না। এ সত্ত্বেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত মহিলার অবস্থার মাধ্যমে শ্রোতা ব্যক্তিদের উপমাটি পেশ করেছেন।
২৩৭১
মিশকাতুল মাসাবিহ
অধ্যায় : পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ
হাদীস নং : ২৩৭১
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «لَنْ يُنْجِىَ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُه» قَالُوا: وَلَا أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ؟ قَالَ: «وَلَا أَنَا إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِى اللّٰهُ مِنْهُ بِرَحْمَتِه فَسَدِّدُوْا وَقَارِبُوْا وَاغْدُوْا وَرُوْحُوْا وَشَىْءٌ مِنَ الدُّلْجَةِ والقَصْدَ الْقَصْدَ تَبْلُغُوْا». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকেই তার ‘আমাল (‘ইবাদাত-বন্দেগী) মুক্তি দিতে পারবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকেও না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকেও নয়। অবশ্য যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে নেন। তবুও তোমরা সঠিকভাবে ‘আমাল করতে থাকবে ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে। সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতে কিছু ‘আমাল করবে। সাবধান! তোমরা (‘ইবাদাতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে। তাতে তোমরা তোমাদের মঞ্জীলে মাকসূদে পৌঁছে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)[১]
কাযী ‘ইয়ায বলেন, সমন্বয়ের দিক হল নিশ্চয়ই হাদীসটি আয়াতের মাঝে যা সংক্ষেপিত তার ব্যাখ্যা করেছে। আর নিশ্চয়ই ‘আমালের তাওফীক পাওয়া, আনুগত্যের দিক নির্দেশনা পাওয়া আল্লাহর রহমাতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রতিটি ক্ষেত্রকে ‘আমালকারী তার ‘আমালের মাধ্যমে লাভ করতে পারেনি।
ইবনুল জাওযী বলেন, এ থেকে চারটি উত্তর অর্জন হচ্ছে।
প্রথমত ‘আমাল করার তাওফীক লাভ আল্লাহর রহমাতের অন্তর্ভুক্ত। যদি আল্লাহর পূর্বোক্ত রহমাত না থাকত তাহলে ঈমান এবং ঐ আনুগত্য অর্জন হত না যার মাধ্যমে মুক্তি অর্জন হয়।
দ্বিতীয়ত নিশ্চয়ই মুনীবের প্রতি বান্দার কল্যাণ হচ্ছে, বান্দার ‘আমাল তার মুনীবকে লাভ করবে। সুতরাং তিনি প্রতিদানের মাধ্যমে বান্দার ওপর যাই নিয়ামত দান করেছেন তা তাঁর অনুগ্রহের আওতাভুক্ত।
তৃতীয়ত কতিপয় হাদীসে এসেছে, খোদ জান্নাতে প্রবেশ আল্লাহর রহমাতের মাধ্যমে এবং জান্নাতের স্তরসমূহের বিন্যাস ‘আমালসমূহের মাধ্যমে।
চতুর্থত নিশ্চয়ই আনুগত্যের ‘আমালসমূহ অল্প সময়, পক্ষান্তরে তার পুণ্য শেষ হওয়ার নয়। সুতরাং ঐ পুরস্কার যা বদলার ক্ষেত্রে শেষ হওয়ার না, তা ‘আমালের মুকাবালাতে কৃপাপ্রদর্শনের ক্ষেত্রেও শেষ হওয়ার না।
কিরমানী বলেন,بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ আল্লাহর এ বাণীতে الباء অক্ষর কারণসূচক অর্থ বর্ণনার জন্য নয়, বরং সাথে অথবা সাথী অর্থ বুঝানোর জন্য, অর্থাৎ- তোমাদেরকে যে জান্নাতের অধিকারী করা হয়েছে সঙ্গ বা ঘনিষ্ঠতা স্বরূপ। অথবা মুকাবালার জন্য ব্যবহৃত। যেমন দিরহামের বিনিময়ে আমি বকরী দান করেছি এবং এ শেষটির ব্যাপারে শায়খ জামালুদ্দীন বিন হিশাম আল মুগনী গ্রন্থে দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন। অতঃপর তিনি ১ম খণ্ডে ৯৭ পৃষ্ঠাতে বলেন, الباء অক্ষর মুকাবালার জন্য ব্যবহার আর তা বিনিময়সমূহের উপর প্রবেশ করে যেমন (اشتريته بألف) অর্থাৎ- আমি তা এক হাজার এর বিনিময়ে ক্রয় করেছি এবং (كا فأت احسانه بضعف) অর্থাৎ- আমি তার ইহসানের বিনিময় বহুগুণে দিয়েছি। ‘আরবদের এ কথার সমর্থনে কুরআনের আয়াত ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ অর্থাৎ- ‘‘তোমরা যা করতে তার বিনিময় স্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ কর’’- (সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ৩২)। আমরা এ الباء অক্ষরকে কারণসূচক الباء হিসেবে সাব্যস্ত করিনি, যেমন মু‘তাযিলাহ্ সম্প্রদায় বলেছে (কেননা তারা বলে থাকে সৎ ‘আমাল জান্নাতকে ওয়াজিব করার কারণ) যেমন সকল আহলুস্ সুন্নাহগণ বলে থাকেন কেউ কখনো তার ‘আমালের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, কেননা দাতা কখনো বদলার ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও কিছু দিয়ে থাকে যা السبب এর বিপরীত যা السبب তথা কারণ ছাড়া পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, باء এর দু’টি সম্ভাবনাময় অর্থের মতানৈক্যের কারণে দলীলসমূহের মাঝে সমন্বয় সাধনকরণে হাদীস ও আয়াতের মাঝে কোন বিরোধ নেই।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, এ ব্যাপারে ইবনুল কইয়্যিম পূর্বেই মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন হাফেয বলেন, (مفتاح دار السعادة) কিতাব থেকে তার আলোচনা বর্ণনা করা হয়েছে।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, আয়াত এবং হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধনে আমার কাছে আরেকটি দিক স্পষ্ট হচ্ছে আর তা হল হাদীসটিকে ঐ দিকে চাপিয়ে দেয়া যে ‘আমাল, যেহেতু সেটা এমন ‘আমাল যা জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘আমালকারীর কোন উপকারে আসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তা গ্রহণযোগ্য ‘আমাল না হবে। আর তা যখন এমনই তখন গ্রহণের বিষয় আল্লাহর কাছে ন্যস্ত। আর তা কেবল আল্লাহ যার থেকে ‘আমাল গ্রহণ করবেন তার জন্য আল্লাহর রহমাতের মাধ্যমে অর্জন হবে।
এ উত্তরটির সারাংশ হল, হাদীসটিতে গ্রহণযোগ্যতা মুক্ত ‘আমালের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে পক্ষান্তরে আয়াতে গ্রহণযোগ্য ‘আমালের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। আর ‘আমালের গ্রহযোগ্যতা কেবল আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ হয়ে থাকে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ আয়াতসমূহের অর্থ হল জান্নাতে প্রবেশ ‘আমালসমূহের কারণে। আয়াতসমূহ ও হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন এভাবে যে, ‘আমালসমূহের ক্ষেত